ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৪+৫

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৪+৫
মৌমি দত্ত

– কি হলো ইনায়াত?? হুডি খুলো!! আমি কখনো তোমাকে দেখিনি ইয়ার। লজ্জা না পেয়ে,,হুডিটা খুলো ব্রো।
ইনায়াত কুলকুল করে ঘামতে লাগলো। মাথার হুডিটা আরো আলতো টেনে ধরাতে তার মুখের অংশটা আরো অন্ধকার হয়ে এলো। হাতের কাছে থাকা পানির গ্লাসটা এক নিঃশ্বাসে শেষ করে দিলো সে। আফিম ভয় পেয়ে গেলো ইনায়াতের এমন অস্থিরতা দেখে।
– হেই!! কুল ডাউন। লাগবে না হুডি খোলা। এতো অস্থির হওয়ার কি আছে??
এই যাত্রায়ও আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলো ইনায়াত।

৪ দিন পর অফিস এসে অনেকটা ফাইল জমা দেখলো ইনায়াত আফিমের টেবিলে। সবগুলো নিয়ে আফিমের কেবিনের সোফায় বসলো। এক এক করে সব দেখতে লাগলো। আবার ঘড়ির দিকেও খেয়াল রাখছে ক্রমশ। আফিম এখন একটা মিটিং এটেন্ড করছে। আফিম ঠিক ১২ টায় মিটিং থেকে বের হবে। আর মিটিং থেকে বের হয়েই আফিম সবার প্রথমে এক কাপ রঙ খাবে,,, কোন চিনি ছাড়া। যেটা বানিয়ে দেয় ইনায়াত নিজেই। এই রঙ চায়ের অভ্যেস নতুন আফিমের কাছে। ইনায়াত অনেক ভালো চা বানায় বিভিন্ন জিনিস যেমন,, এলাচ,,তেজপাতা,, চাপাতা,, আদা,, লেবু,, চিনি দিয়ে। এই চাটা অসাধারণ লাগে আফিমের।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ঠিক ১২ টা বাজতেই ইনায়াত দেখলো আর শুধু ২ টা ফাইল বাকি। চেক করে রাখা ফাইলগুলো টেবিলে সাজিয়ে রেখে চলে গেলো কেবিনের কোণায় রাখা ইলেক্ট্রিক চুলোর কাছে। চা বানানোর জন্য পানি ফুটতে দিয়ে ওখানে দাঁড়িয়েই হাতের ফাইল চেক করতে লাগলো। চা বানাতে বানাতে একটা ফাইল চেক করা শেষ হয়ে গেলো তার। তখনই রুমের দরজা খুলে বিরক্তি নিয়ে প্রবেশ করলো আফিম। ইনায়াত দ্রুত এক কাপ চা ঢেলে নিয়ে আসলো আফিমের টেবিলের কাছে। আফিম ততোক্ষনে গায়ের কোট খুলে মাটিতে ছুড়ে মেরেছে। টাইটা গিয়ে জায়গা করেছে টেবিলের কলমদানীতে। আর শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে বসে আছে চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে। আফিম বিরক্তি নিয়েই চায়ের কাপ তুলে নিলো। রুমের এসি বাড়িয়ে দিলো এক হাতে। তারপর চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ফুঁ দিয়ে চায়ে একটা চুমুক দিলো। মুহুর্তেই কপালের ভাঁজ কিঞ্চিত কমে আসলো আফিমের। ভ্রু কুঁচকে থাকা অবস্থায় ঠোঁটের এক কোনা বেঁকিয়ে মৃদু হাসলো আফিম। তা দেখে ইনায়াতও মুচকি হাসলো। তবে মাস্কের জন্য তা চোখে পড়লো না আফিমের। ইনায়াত মাটি থেকে কোট তুলে সোফায় রাখলো ভাঁজ করে। কলমদানী থেকে টাই নিয়ে কোটের উপরেই রাখলো। বাকি থাকা একটি মাত্র ফাইল সোফায় বসে চোখ বুলাতে লাগলো।

চায়ের কাপ শেষ করতে করতে মাথার বিরক্তির রেখা একদম ভ্যানিস হয়ে গেলো আফিমের। চাটা খেলেই নিজেকে কেমন তরতাজা অনুভব করে সে। মনটা ফুরফুরে লাগে। হাতের শেষ ফাইলটা শেষ করে টেবিলে এনে গুছিয়ে রাখলো ইনায়াত।
– স্যার!! একটু আগে মিটিংয়ে কোন প্রব্লেম হয়েছে কি??
– হুম। প্রজেক্টের সাইট দেখাতে নিয়ে যেতে হবে ওদের। ল্যাপটপে দেখে নাকি ডিল ফাইনাল করবে না ওরা।
– ডিলটা তো অনেক দরকার স্যার। অনেক লাভজনক।
– হুম। তাই আগামী কাল তুমি আর আমি যাবো।
– ওকে স্যার!! আপনি আমাকে টাইম বলে দিন। আমি নোট করে নিচ্ছি।
– কালকে আমরা ১০ টায় বের হবো। কয়েকটা দিন থাকতে হবে আমাদের ওখানে। হোটেল বুক করে নাও। আর ৩ দিন পরের রিটার্ন টিকেট বুক করো। ওকে??

– ওকে স্যার!! হয়ে যাবে।
– আর হ্যাঁ,,, মা আর বাবা ফিরছে কালকে। তাই সার্ভেন্টদের বলে দিও।
– ওকে স্যার!!
– আর হ্যাঁ!! রাতের জন্য তানিয়াকে বুক করো।
এতোক্ষন সব ঠিক চললেও এখন নাক মুখ কুঁচকে এলো ইনায়াতের। বুক কিসের জন্য কর‍্যে বলেছে তা ভালোই জানা তার।
– কিন্তু স্যার!! মিস তানিয়া তো,,
আফিম ইনায়াতের কথার মাঝেই বললো,,
– ইউ ইডিয়ট!! আমার জন্য না। তোমার জন্য বুক করো ভালো অংকের টাকা দিয়ে। রাতটা এঞ্জয় করার পাশাপাশি ডিলও সাইন করিয়ে নিও। আমি চাই ও যেন আমার মডেল হিসেবে সাইন করে। একবার সাইনটা করলেই ওকে আমি বুঝিয়ে দেবো আফিম আহসান কি জিনিস!!

ইনায়াত নাক মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে ও বললো,,
– স্যার!! আমার জন্য কিভাবে?? আপনি অন্য কোন আইডিয়া বলুন না।
আফিম ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইনায়াতের দিকে।
– এই!! তোমার মেয়ে ভালো লাগে না??
– স্যার!! আমার মেয়ে ভালো লাগবে কেন??
ইনায়াতের কথা শুনে তড়াক করে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আফিম।
– হোয়াট!! আর ইউ গে?? এতোদিন বলোনি কেন তুমি গে??
এমন কথা শুনে যেন ইনায়াতও চমকে তাকালো আফিমের দিকে।
– না না স্যার!!! ছি!! আমি গে টে না।
– তাহলে সমস্যা কি??

আফিম চেয়ারে বসতে বসতে বললো। ইনায়াত কি বলবে ভাবতে লাগলো। হঠাৎ মাথায় যা এলো তাই বলে ফেললো,,
– স্যার!! পার্টসে প্রব্লেম চলছে।
আফিম পানির গ্লাস নিয়ে পানি খাচ্ছিলো। ইনায়াতের কথা শুনে ফুউউ করে সব পানি ফেলে দিলো।
– হোয়াট!!
ইনায়াত নিজের উপরেই নিজে রেগে গেলো। আর কোন কথা পেলো না সে?? এখন আর কি করার?? ইনায়াত তাই বাধ্য হয়েই বললো,,
– হ্যাঁ স্যার!! পার্টসে প্রব্লেম চলছে।
আফিম হালকা খুক খুক কেশে গলা পরিষ্কার করলো। এদিক ওদিক তাকালো অস্থির ভাবে। টেবিলে হাত টাওয়ারের মতো উঁচু করে তার উপর মুখের ভর দিয়ে গম্ভীর দৃষ্টিতে বললো
– গার্লফ্রেন্ড জানে??
– ওরও পার্টসে সমস্যা স্যার।

তাড়াহুড়ায় মাথায় যা এলো এবারও তাই বলে ফেললো ইনায়াত দ্রুত। ইনায়াতের কথা শুনে হাতের ব্যালেন্স হারিয়ে ধুপ করে পড়তে পড়তেও পড়লো না আফিম। নিজেকে সামলে নিলো কোনভাবে। ইনায়াত আর কিছু না বলে লজ্জায় মাথা নিচু করে বের হয়ে এলো কেবিন থেকে।
– স্টুপিড নাকি ইডিয়ট তুই?? এই উত্তর কে দেয় নিজেকে বাঁচাতে??
কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে বসলো ইনায়াত। আর কেবিনের ভেতর বসে থাকা আফিম কিছুক্ষন কেবিনের দরজার দিকে তাকিয়ে বললো,,,
– স্টুপিড নাকি ইডিয়ট তুই আফিম?? এই প্রশ্নগুলো কে করে কৌতুহলী হয়ে??
দুই প্রান্তের দুইটি মানুষের বুলি তো একই হলো। এখন সামনে কি হবে??

রানা অনেক কষ্টে লুকিয়ে একটা বডিগার্ডের ফোন চুরি করে নিলো। বডিগার্ডটা ওয়াসরুমে যাওয়ার আগে ফোন টিপছিলো। তাড়াহুড়ায় মোবাইলটা ওয়াসরুমের বাইরে থাকা ছোট টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো ওয়াসরুমের ভেতর। রানা সেই ফোনটাই নিয়ে নিয়েছে। নাম্বার মুখস্ত রাখার অসাধারণ এক প্রতিভা আছে রানার ছোট থেকেই। এস.এ’র খাস মানুষ আর রাইট হ্যান্ড কালামকে কল লাগালো রানা দ্রুত নাম্বার তুলে।
এস.এ,, আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাদশাহ যে বিদেশবিভুঁইয়ে নিজের ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে সবার মাঝে। চরিত্রহীন,, নেশাখোড় সে। তবে ন্যায়ের জন্য কাজ কর‍তে গিয়ে তার পা পিছায় না। এস.এ’কে নেহায়েত খাস মানুষরা ছাড়া আর কারোর দেখার সুযোগ হয়নি। খাস মানুষ না হলেও একটা বিজনেসের ঝামেলার জন্য এস.এ’কে দেখবার সুযোগ ইরশাদের হয়েছিলো। আর রানা সবসময় ইরশাদের সাথে থাকে বলে তারও হয়েছিলো।
দুইবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো কামালের। ফোন রিসিভ করেই কামালের প্রশ্ন,,,
– হ্যালো?? কে??
– কামাল বলছেন কি??

রানার আওয়াজ চিনতে পারলো না কামাল। চেনার মতো কোন ব্যাপারও নেই। তাই হয়তো কিছু সেকেন্ড সময় নিলো রানার প্রশ্নের উত্তর জানাতে।
– হ্যাঁ কামাল বলছি। আপনি কে??
– আমি ইরশাদ মির্জার পিএ রানা খন্দকার বলছি।
কিছু সেকেন্ড চুপ থেকে আবারও রানা মুখ খুললো।
– কি চায়??
– সাহায্য চাই। এস.এ’র সাহায্য দরকার খুব।
– আর সাহায্য কেন চায়??
– ওহ শিট!! ওরা আসছে। আপনি একটু তাহজিব খানের বাড়িতে ঢুকে কোনমতে আমার সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করুন। সবটাই লুকিয়ে করবেন কিন্তু। প্লিজ,, সাহায্য দরকার খুব করে।
কারোর পায়ের আওয়াজ পেয়ে উপরের কথাগুলো এক শ্বাসে বলেই ফোন কেটে দিলো রানা। কললিস্ট থেকে নাম্বার ডিলিট করে মোবাইলটা একই জায়গায় রেখে কয়েক পা এগিয়ে হাঁটা দিলো। একটু যেতে না যেতেই মুখোমুখি হলো তাহজিব আর কিছু গার্ডের। গার্ডদের সাথে কথা বলতে বলত্র এদিকটায় আসছিলো তাহজিব। রানাকে এখানে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।
– তুই এখানে?? কি করছিস??

রানা নিজেকে একদম শান্ত দেখানোর চেষ্টা করলো। যদিও মনের মধ্যে ভয়ে তার ঝড় তুফান চলছে। অবশ্য শান্ত দেখাবার নাটকটা সফলও হলো তার।
– আপনার কাছে যাচ্ছিলাম। মামনির খোঁজ পেলেন কিছু?? এমন দেশের পরিস্থিতি আর মেয়েটা কোথায় না কোথায় আছে!! ভালো আছে তো মামনি??
রানা সুযোগ বুঝে ঠিক তাহজিবের দূর্বল জায়ায় আঘাত হানলো। আঘাতটা কাজেও দিলো। মুখ শুকিয়ে গেলো তাহজিবের। মাথা বাচ্চাদের মতো দুইদিকে নাড়িয়ে নাবোধক উত্তর জানালো সে। যার অর্থ খোঁজ পায়নি কোন।
– আমার চাঁদকে ভালো রাখবে আল্লাহ। আমার মোনাজাতের দাম দেবে আল্লাহ আশা রাখি।

এতোটুকু বলেই শুকনো মুখেই চলে গেলো তাহজিব সামনের দিকে। গার্ডসরাও পিছু পিছু চলে গেলো তার। রানা তাহজিব যাওয়ার আগে তার কথাগুলো শোনার পাশাপাশি চোখের কোণে চিকচিক করতে থাকা জল আর চোখের নিচে পড়ে যাওয়া কালি খুব ভালো করেই দেখেছে। তাহজিব জায়গাটা ছেড়ে চলে যেতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো রানা মাথা নিচু করে। যে দীর্ঘশ্বাসের মাঝে লুকিয়ে ছিলো অসহায়ত্ব,, ক্লান্তি,, তাহজিবের প্রতি মায়া,, আর মালিকের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। তবে একটা জিনিস রানা মনে প্রানে বিশ্বাস করে। তাহজিব খান অনেক খারাপ তা ঠিক। কিন্তু সে যে ইনায়াতকে ভালোবাসে না তা বিশ্বাসযোগ্য না। কেননা এই ছেলেটা সারা দিন রাত শুধু ” চাঁদ ” নাম জপে বেড়ায়। মোনাজাতে কান্না করে আল্লাহর কাছে। খেতে বসলেই আনমনা হয়ে ভাবে চাঁদ কি খাচ্ছে। এসব কিছু রানা নিজের চোখে দেখে। চাঁদের জন্য কাঁদতে পারে যে ছেলে,, সে ছেলে আর যাই হোক। ” ভালোবাসে না ” এমন মিথ্যে অপবাদ নেওয়ার মতো মানুষ না তাহজিব। হয়তো ইনায়াতকে পেলে সে সব খারাপ কাজ ছেড়ে ভালো হয়ে যাবে। কে জানে!!
রানার মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে তাহজিবের জন্য। মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেটার বুকে ইনায়াতকে তুলে দিয়ে বলতে,,, ” যাও বাবা!! সুখে থাকো দুজন “। কিন্তু তা কখনোই সম্ভব না। কারণ সে ইনায়াতের বাবা নয়। আর সে যে তার মালিকের বিশ্বস্ত। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রুমে এসে খাটের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো এই অসময়ী বিকেলে শুয়ে আছে ইরশাদ সাহেব। যে লোক কাজ ছাড়া কিছু বুঝতো না। সে এখন ক্লান্ত হয়ে বিছানায় দিন কাটায়। ভাগ্যের কি নির্মম উপহাস!! জানলার ধারে গিয়ে এসবই ভাবতে লাগলো রানা।

তাহজিব বাগানে বসে আছে। রানার একটু আগের বলা কথাটা তার বুকের মাঝে হাহাকার বাড়িয়ে দিলো দ্বিগুন। আসলেই তো!! ” মেয়েটা ভালো আছে তো,, কি খাচ্ছে,, কোথায় থাকছে,, সুস্থ ও নিরাপদ আছে তো?? ” এসব প্রশ্ন যে কিলবিল করে মনের ভেতর তাহজিবের। বুক ফেঁটে যায় তার। রাতের বেলা ঘুম হতে চায় না দুঃস্বপ্নের জন্য। মনে হয় মেয়েটা হয়তো ভালো নেই,, বিপদে আছে। হয়তো আসলেই মেয়েটা পালিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ফিরে আসতে চেয়েও পারছে না।
এসব কথা মাথায় আঘাত করলেই ভেঙ্গে পড়ে তাহজিব। বারবার মনে হয়,, একটু এই প্রাণ টা শেষ হয়ে যাক। এতোদিন একজন নামকরা মাফিয়া হিসেবে খুব ভালোই গর্ব করতো তাহজিব। কিন্তু এখন ঘেন্না হয় তার নিজেকে দেখলে। সে মাফিয়া বলেই তো ইনায়াত তাকে ভয় পেয়ে পালিয়েছে। এমন মাফিয়া হয়েও তো সে ইনায়াতকে খুঁজে পাচ্ছে না,, নিজের করতে পারছে না। এমন মাফিয়া হয়ে কি লাভ আর?

এইসব কথা সুর্যাস্ত দেখতে দেখতে ভাবছে তাহজিব মন দিয়ে।
– কোথায় আছো চাঁদ আমার?? আমার রাণী?? তুমি ফিরে এসো একবার। অনেক ভালোবেসে বুকে আগলে রাখবো তোমায়। ভালোবাসি চাঁদ। এই পৃথিবীতে তুমিই একমাত্র মানুষ বা তুমিই একমাত্র জিনিস যা আমার ভালোবাসা পেয়েছে,, মনের দখল পেয়েছে।
বিড়বিড় করে কথাগুলো বলেই চোখ বন্ধ করে নিলো তাহজিব। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা নোনা জল। যেখানেই সে কোন কিছু সুন্দর দেখে,, সেখানেই সে তার চাঁদের ছোঁয়া পায়। মনে হয় এই সুন্দর জিনিসটাই তার চাঁদ।
তাহজিবের পাগলামী,,, এস.এ নামক চরিত্রের আগমন,,, আফিমের অগোছালো জীবন,,,আর ইনায়াতের একাকীত্বতা আর ক্লান্তি,,, সব মিলিয়ে গল্প কোনদিকে মোড় নেবে??

অফিস শেষ করে প্রতিদিনকার মতো আফিমকে নিয়ে ইনায়াত আফিমের বাসায় গেলো। তবে আজকে আফিম কোন মেয়েকে রাত কাটানোর জন্য ডাকেনি দেখে ইনায়াত খুশী খুব। যদিও সকালে বলেছিলো তানিয়ার কথা। তবে তা সম্পূর্ন রাগের মাথায়। ব্যবসায়ে আঘাত লাগলে খুব চটে যায় আফিম। আর বর্তমানে অসাধারণ সুন্দরী এক মডেল ও সবার প্রিয় চেহারা মিস তানিয়া দিলশাদ্। তানিয়ার সাথে বিছানা পর্যন্ত একটা ভালোই সম্পর্কে দিন কাটাচ্ছিলো আফিম কয়েকদিন। হঠাৎ তানিয়ার মাথায় ভুত চাপলো মিসেস আহসান হবার। তাই আফিমকে সে ফোর্স করতে লাগলো। আফিম তো আফিমই,, তাই তানিয়াকে কাছে ডেকে নেওয়া বন্ধ করে দিলো। এরপর থেকে তানিয়া কোন ডিল সাইন করছে না আর আহসান ইন্ডাস্ট্রির মডেল হিসেবে। বিষয়টাতে কোন যায় আসতো না আহসানের প্রথম দিকে। কিন্তু বর্তমানে একটা ডিল এসেছে যার জন্য তারা তানিয়াকে বা তানিয়ার মতো ফেইস চাইছে।
– ইনু!! আজকে আমার আড্ডা দিতে মন চাইছে। চলো আড্ডা দিই।

ইনায়াত এতোক্ষন মনে মনে এতোসব ভাবনায় ডুবে ছিলো। কিন্তু আফিমের কথা শুনে আফিমের দিকে ড্যাবড্যাব তাকিয়ে রইলো। ইনায়াতের মুখের ডিরেকশন দেখে আফিম বুঝে নিলো ইনায়াত তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কিন্তু আফিম চূড়ান্ত বিরক্ত। মাথায় হুডি টানা আর মুখে মাস্ক থাকায় মুখটার এক্সপ্রেশন জানা যায় না ইনায়াতের। তাই বুঝাও যায় না সে নীরব থেকে কি বুঝাতে চাইছে।
– দেখো ইনায়াত!! হয় প্রশ্নের ঝটাপট উত্তর দিবে কোন এক্সপ্রেশন দেওয়া ছাড়া। আর নয়তো মুখে মাস্ক আর মাথায় হুডি দিবে না। তুমি চমকালে,, ধমকে ভয় পেলে,, তোমার মাথাব্যাথা করলে বা যাই হোক,, তুমি চুপই থাকো। আমি তোমার মুখও দেখতে পারিনা যে বুঝবো। অনেক ইরিটেটিং ব্যাপার এটা!!!
ইনায়াত নিজের ফাঁটাফাঁটা চোখ ছোট করে তাকিয়ে ভুলে মেয়েদের স্বরেই বললো,,
– এহহহ!! সব কিছুতে বড়লোকের বাচ্চাগিরি!!

আফিম চমকালো। খোদ ইনায়াতও চমকে গেলো আর ভয়ও পেলো। এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো আর রুমে দীপ হাতে ট্রেতে করে কফি নিয়ে ঢুকলো। আফিম আর ইনায়াত সেদিকে খেয়াল দিলো না। তারা একে অপরের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকতে ব্যস্ত। দীপের মোবাইলে হঠাৎই একটা গান বেজে উঠলো। আজকে ভুল করে সাইলেন্ট করা হয়নি তার। এটার তার গার্লফ্রেন্ডের কলে বিশেষভাবে সেট করা রিংটোন।
” এ কি হলো,, কেনো হলো,, কবে হলো,, জানিনাতো,,
শুরু হলো,, শেষ হলো,, কি যে হলো জানিনাতো ”
আফিম আর ইনায়াত ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো দীপের দিকে। দীপ রীতিমতো ঘামছে ভয়ে। কে জানে চাকরিটা থাকবে কিনা!!
– ডিয়ার দীপ!! এটা কি ছিলো??
আফিম হাসি হাসি মুখে প্রশ্ন করলো। দীপ ভয়ে ভয়ে এক হাতে ট্রে ধরে রেখে অন্য হাতের উল্টোপিঠে কপালের ঘাম মুছলো। কাঁপা কন্ঠে কোনরকমে তুতলিয়ে বললো,,
– স্যার!! রিংটোন।

– ওটা আমিও জানি দীপ। কিন্তু কে সেই ভাগ্যবান যার নাম্বারে এমন রিংটোন দেওয়া??
দীপ মাথা নিচু করে অস্বস্থি ও লজ্জামাখা কন্ঠে আবারও বললো,,
– স্যার!! এমন রিংটোন বৌ বা গার্লফ্রেন্ড ছাড়া আর কার জন্যই বা দেওয়া যায়?? আমার তো বৌ নেই। গার্লফ্রেন্ডকে দিয়েছি এই অধিকার তাই।
আফিম ভ্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। একদিকে কানে মেয়ের আওয়াজ ভেসে আসছে,, অথচ ইনায়াত ছাড়া কেও নেই আর রুমে। এর উপরে দীপের এমন তিক্ত সত্য কথা এই মূহুর্তেই বলা যেন সে নিতে পারছে না। হাতের ইশারায় কফি রেখে যেতে বললো আফিম। দীপও দ্রুত কফির ট্রে রেখে রুম ত্যাগ করলো। গার্লফ্রেন্ডকে গিয়ে এখন সামাল দিতে হবে।
আফিম আবারও চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইনায়াতের দিকে। ইনায়াত নিজের হুডি আরেকটু টেনে দিয়ে মাস্ক ঠিক করে গলার স্বর ছেলেদের মোটা করে বললো,,

– স্যার!! আপনি কি আজও কোন মেয়ে এনেছেন??
হঠাৎ এমন এক প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো আফিম।
– আইই গাধা ছেলে!! মেয়ে আনলে কি আমি তোমার সাথে আড্ডা দিতাম??
– না মানে স্যার!! মেয়ের আওয়াজে কেও কিছু একটা বললো শুনলাম তো!!
– তুমিও শুনেছো?? আমি ভাবলাম তুমি বলেছো।
– না না স্যার!! আমি কেন মেয়ের স্বরে কথা বলবো?? আমি কি মেয়ে নাকি??
আফিম চিন্তিত মুখে কিছু একটা ভাবতে চাইলো। কিন্তু মাথায় ভাবনা চিন্তা আসতে চাইছে না তার। আর ইনায়াত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ভাগ্যিস মাথায় হঠাৎ পল্টি খাবার কথাটা এলো। নিজেকে নিজে বাহবা দিলো বুদ্ধিমান বলে মনে মনে।

ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো ইনায়াত। প্রতিদিন গলা মোটা করে কথা বলা,, উইগ আর মাস্ক পড়ে থাকা। এসব তার মধ্যে অনেকটা বিরক্তির সৃষ্টি করেছে। নিজের আসল স্বত্তা লুকিয়ে রাখার থ্রকে বিরক্তির আর কষ্টের কি হতে পারে কারোর কাছে?? অতি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে সে ডিনার গরম করে নিলো। একটা মেয়ে এসে প্রায়ই তাকে রান্না করে দিয়ে যায়। আর যেদিন আসে না সেদিন নুডুলস,, পাস্তা আর ওটস খেয়ে রাত পার করে ইনায়াত। এমন জীবন হয়তো সে দুঃস্বপ্নেও পার করবার কথা ভাবেনি। খাওয়াদাওয়া শেষে ছোটখাটো একটা ব্যাগপ্যাকে নিজের জিনিস ভরতে লাগলো ইনায়াত। সকাল ৭ টার ফ্লাইট!! আফিমকে গিয়ে ডেকে,, রেডি করিয়ে,, ব্রেকফাস্ট করিয়ে ডিলের জন্য রওনা দিতে গিয়ে সে যে খুব ক্লান্ত হয়ে যাবে তা জানা আছে ইনায়াতের। তাই দ্রুত হাতের সব কাজ সেড়ে ঘুমোতে গেলো সে।
সহজ সরল এই মেয়েটি হয়তো জানেওনা তার জীবনের সবটাই খুব দ্রুত কল্পনাতীত ভাবে বদলে যাবে। আর তার সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোও বদলাবে খুব করে। এতো কিছু অজানার মাঝে একটি কথা তার জানা আছে। তা হলো কালকে লাবিবা আসছে। তার মানে আবারও সে অনেক হাসিখুশী একটা সময় কাটাতে পারবে।

ভোরে এলার্ম পড়তেই ইনায়াত দ্রুত উঠে পড়লো। স্নান করে,, চুল শুকিয়ে নামাজ পড়ে নিলো। এরপর একটু শুয়ে থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে ছেলে ছেলে সেজে নিলো। কাঁধে ব্যাগপ্যাক ঝুলিয়ে মুখে মাস্ক পড়ে বের হয়ে নিলো দ্রুত।
আফিমের বাসায় এসে জানতে পারলো আফিম প্রতিবারের মতো ঘুম। আর লাবিবা ও জোসেফ দুপুর হতে হতে চলে আসবে বলে দীপকে জানিয়েছে।
– দীপ,, আর্লি ব্রেকফাস্ট রেডি করে ট্রলিতে দাও। আমি ততোক্ষনে স্যারের ব্যাগ প্যাক করে দিচ্ছি। ব্যাগ প্যাক করে ডাকবো স্যারকে।
– ওকে ইনায়াত স্যার!!

ইনায়াত দ্রুত পায়ে উঠে গেলো সিড়ি বেয়ে। আফিমের রুমের দরজা খুলে দেখলো আফিম বুকের উপর ভর দিয়ে অগোছালো হয়ে শুয়ে আছে। ইনায়াত শব্দ যাতে বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে কাবার্ড খুলে ট্রলি বের করলো। তারপর ট্রলিতে কাপড়চোপড়,, পার্ফিউম,, ম্যাচিং ঘড়ি,, সানগ্লাস নিয়ে নিলো। সবধরনের সব কিছু নেওয়ার পর কাবার্ডের সব জিনিস গুছিয়ে রাখতে শুরু করলো আবারও। তখনই ধীর আওয়াজে দীপ দরজা খুলে ট্রলি নিয়ে এলো রুমের ভেতর। ট্রলিটা রেখেই সে চলে গেলো। ইনায়াত সবটা গোছগাছ করে আফিমের কাছে গিয়ে প্রতিদিনের মতো ঠেলাঠেলি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু করলো।

– স্যার!! স্যার বিজনেস ডিল আছে,,, ৭ টায় ফ্লাইট!! স্যার!!! ও স্যাররররর!!
– ইউ আর ফায়ার্ড ইনু,,, ইউ আর রিয়েলি ফায়ার্ড।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুমিয়েই বললো আফিম।
– স্যার!! আবারও একই কথা?? তাহলে আমারও একই কথা। ফায়ার্ড ওয়াটার্ড,, আগুন,, পানি সব পড়ে করবেন। তার জন্য অন্তত পক্ষে ঘুম থেকে উঠেন স্যার!!!!
আফিম লাফিয়ে উঠে বসলো তড়াক করে।
– হোয়াট ইজ ইউর প্রব্লেম ইনু?? কেন এতো বিরক্ত করো??
– স্যার!! ৭ টা বাজে ফ্লাইট!!
– তো?? একটু লেইট হলে কি সমস্যা?? কেন এতো কাজ করো ইয়ার!! তোমার কাজ দেখতে দেখতে আমার বিরক্তি ধরে গেছে। মাঝে মাঝে ফাঁকি দেওয়াও তো শিখো ইয়ার!!

আফিম হাই তুলতে লাগলো। ইনায়াত বিরক্তিতে আফিমকে মনে মনে কল্পনায় গালাগাল দিয়ে নিলো,, মেরে নিলো ঢিসুম ঢিসুম। মন শান্ত করে ইনায়াত টাওয়েল নিয়ে ধরিয়ে দিলো আফিমের হাতে। আফিম সেটা নিয়ে হেলতে দুলতে চলে গেলো ওয়াসরুমে।
একে বারে ফ্রেশ হয়ে স্নান শেষে টাওয়েল পড়ে এলো আফিম অভ্যেসবশত। আর ইনায়াতও কাপড় খাটে রেখে দিয়েছিলো। আফিম বের হতেই ইনায়াত মাথা নিচু করে নিলো। আফিম তা দেখে চোখ ঘুড়িয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে রেডি হয়ে নিলো কাপড়চোপড় পড়ে। ইনায়াত ততোক্ষনে একটা প্লেইটে দুটো স্যান্ডউইচ তুলে নিলো। আর সাথে এক বাটি স্যুপ তো আছেই।
আফিম সম্পূর্ন রেডি হয়ে নিজের রুমেই ব্রেকফাস্ট শেষ করলো। এরপর দুজনেই বের হয়ে এলো রুম থেকে। আফিম প্রথম নামছে আর ইনায়াত আফিমের লাগেজ নিয়ে পিছনে পিছনে নামছে। আফিম খুব কমই ড্রাইভ করে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। ইনায়াত আফিমের লাগেজ ডিক্কিতে রেখে এসে সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে উঠে বসলো। আফিম পিছনে বসেছিলো। ইনায়াতকে সামনে উঠতে দেখে আফিম গলা ছেড়ে কাশলো।

– ইনু!! পিছনে এসো!!
ইনায়াত অবাক হলো। ইনায়াতের বিষ্ময়ের কারণ বুঝলো আফিম। ইশারা করলো হাত দিয়ে পিছনে গিয়ে বসতে। ইনায়াতও কি করবে আর?? বসের হুকুম মেনে পিছনে গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে বসলো সেও। গাড়ি চলতে শুরু করলো। আফিমকে আজকে একদম আনমনা দেখাচ্ছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে সে একমনে নিশ্চুপ হয়ে।
– ইনায়াত!! আমার কখনো ফ্রেন্ড ছিলো না বলেই জানে সবাই। তবে সত্যি বলতে গেলে কি দীপ,, বাবা আর মা ভালোই জানে আমার ফ্রেন্ড ছিলো কি ছিলো না। আমার না খুব ভালো তিনটা ফ্রেন্ড ছিলো। হারিয়ে গেছে আমার থেকে তারা তিনজনেই কোন এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে। এরপরেই আমি এমন মদখোর,, মেয়েবাজ,, রুড হয়ে গেছি। আমি কিছু ঘটনার কারণে কাওকে কখনো কাছে ঘেষতে দিইনি বন্ধুত্বের জন্য বা কোন সম্পর্ক তৈরির জন্য। বাট যদি সত্যি বলি তাহলে তোমাকে আমি আমার বন্ধুর মতো দেখি এখন। এই একটা কারণেই হয়তো আমি আজ অবধি তোমার একাডেমিক যোগ্যতা যাচাই করিনি,, তোমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বা পাস্ট লাইফ নিয়েও মাথা ঘামাইনি।

এটুকু বলেই থামলো আফিম। দৃষ্টি তার এখনো জানালার বাইরের চলন্ত সব দৃশ্যে। ইনায়াত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আফিমের দিকে। আফিমের মুখ না দেখা গেলেও গলার স্বরে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কতোটা আবেগ নিয়ে কথাগুলো বলছে আফিম। আফিমকে এমন আবেগী কখনো কেও দেখেছে বলে মনে হয় না ইনায়াতের। আফিম আবারও বলতে শুরু করলো,,
– তুমি আমার বয়সে ছোট!! বাট নিজেকে আমার বন্ধু ভাবতে পারো। আমার সাথে ফর্মালিটিস করো না কখনো। আর দয়া করে বিশ্বাস ঘাতকতা করোনা। বিশ্বাসঘাতকতা আমার সবথেকে বেশি ঘৃণার ও রাগের কারন।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১+২+৩

ইনায়াত মাথা নিচু করে নিলো। সে তো বিশ্বাস ঘাতকতাই করছে। ইনায়াত অন্যায় করেছে তার বাবার ও রানা আংকেলের সাথে। তাহজিব নামক বিপদের কাছে তাদের একা ফেলে চলে এসেছে ভীতুর মতো। অন্যায় সে করছে লাবিবার সাথে যার মাঝে সে মায়ের মমতার পরশ পেয়েছে। অন্যায় সে করছে জোসেফের কাছে। যে সবার কাছে মিটিংয়ে ও পার্টিসে ইনায়াতকে নিজেরি দ্বিতীয় ছেলে বলে পরিচয় দেয়। আর?? আর অন্যায় করছে আফিমের সাথে। আফিম তাকে বিশ্বস্ত ভেবে তাকে নিজের কাছ ঘেষতে দিয়েছে। কারণ সে ছেলে। আফিম যদি কখনো জানে একটা মেয়ে মিথ্যে নাটক করে এতোটা কাছে ছিলো। তাহলে সহ্য করতে পারবে আফিম?? আফিম মেয়েদের প্রতি প্রচুর আবেগহীন,, যেন কোন পাথরের টুকরো। তাদের সাথে মদ খাওয়া,, বিছানা গরম করা পর্যন্তই সীমিত সব সম্পর্ক। বন্ধুত্ব,, সম্পর্ক,, তাও কোন মেয়ের সাথে। তা যেন আফিম কল্পনাও করতে পারে না। কি হবে যদি সে জানে ইনায়াত একটা মেয়ে,, ছেলে না।

এয়ারপোর্টে গিয়ে সব নিয়ম কানুন মেনে আফিম আর ইনায়াত প্লেইনে উঠলো। কথাগুলো বলতে পেরে আফিম খুব হালকা বোধ করছে।
আফিম আর ইনায়াত প্রায় ৪৫ মিনিট পর অন্য একটা শহরে ল্যান্ড করলো। কে জানে এই শহর কি কামাল দেখাবে নিজের!!
ব্লাস্ট আসছে পরের পর্বে পাঠকরা। তৈরি তো আপনি?? দেখা যাক ইনায়াত,, আফিমের জীবন কোনদিকে মোড় নেয়। আর তাহজিবের এতোটা ভালোবাসা কি বৃথা যাবে??
আর রিয়েক্ট দিন দিন কম হচ্ছে। এমন হলে রাগ করবো আপিরা আর ভাইয়ারা। আর হ্যাঁ,, আবারও বলছি আমি সকালে গল্প দিই। আমার গল্প আপাতত কোনদিন মিস যায়নি। আর আল্লাহ চাইলে যাবেও না মিস। পাশে থাকবেন,, ভালো থাকবেন।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৬+৭

1 COMMENT

Comments are closed.