ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৬+৭

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৬+৭
মৌমি দত্ত

– মিলাদ পড়াবো,, সব ব্যবস্থা কর আসিফ।
তাহজিব নিজের খাস লোক,, রাইট হ্যান্ড আসিফকে বললো ড্রয়িং রুমে ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে। রানা তখন সে পথ দিয়েই রুমে যাচ্ছিলো। বিকালের দিকে রানা এস.এ’র রাইট হ্যান্ডকে কালামের সাথে দেখা করেছিলো। বডিগার্ডের রূপ ধরে এসেছিলো কামাল। কামালকে সবটা বলে তাহজিবের সর্বনাশ আর ইতি করবার চুক্তিপত্রে নিজ হাতে সই করে এসেছে রানা। মিলাদ পড়ানোর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো রানা।
– স্যার!! মিলাদ কেন??

– আমার চাঁদকে না কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা আসিফ। ওর জন্য মিলাদ দিবো। আমি বেঁচে আছি ওর অপেক্ষায়। আমি মাফিয়া এটা কি আমার অপরাধ?? এই পথে যেচে কে আসে বলো!! আমার চাঁদ আমাকে দেখলো না,, জানলো না,, বুঝলো না একটুও। আমার না খুব কষ্ট হয় আসিফ। জানো?? আমার মা খুব ভালো একজন মা ও স্ত্রী ছিলো। কিন্তু আমার বাবা?? সে ছিলো পশু,, জানোয়ার!! অনেক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রেখে আমার মায়ের উপর ঘরে অত্যাচার চালাতো রুম বন্ধ করে। বাবার দেওয়া আঘাতগুলোর আওয়াজ যখন মায়ের চিৎকার আর হাহাকার,, আর্তনাদের সাথে মিশে আসতো কানে। শিউরে উঠতাম আমি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একদিন মাকে এতোই মারধর করলো রাগ ঝাড়তে। মা আর রুম থেকে বের হলো না। খুব ছোট ছিলাম আমি,, বয়স ছিলো ৭। গুটিগুটি পায়ে রুমে গিয়ে দেখলাম মা রক্তাত্ব পড়ে আছে মেঝেতে। মা প্রায়ই সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হযে যেতো। আমি ভেবেছিলাম এবারও তাই হয়েছে। অনেক ডাকলাম প্রতিবারের মতো মাকে। কিন্তু মা না আর কখনো উঠেনি। আমার জীবনের প্রথম অন্যায় আর খুন করেছি ৭ বছর বয়সে,, আমার বাবাকে নিজ হাতে খুন করেছি। যখন দেখলাম নতুন বিয়ে করে আনা স্ত্রীকেও সে কদিন যেতে না যেতেই অত্যাচার শুরু করলো। এরপর আস্তে আস্তে কখন যে এই জগতে চলে আসলাম আমি নিজেও জানিনা। আমার কি ভালো লাগে এতো রক্ত ঝড়াতে?? আমি কি জেনে শুনে,, ইচ্ছে করে এসেছিলাম এই পথে?? একটা পরিবার,, একটু ভালোবাসার আশা আমি কেন করতে পারিনা??

চুপ হয়ে গেলো তাহজিব। চোখ বন্ধ করতেই একফোঁটা জল টুপ করে পড়লো। হাতের ইশারায় আসিফকে বের হয়ে যেতে বললো। আসিফ অসহায় চোখে একবার তাকিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে নিলো। এরপর বেরিয়ে গেলো। রানা সেখানেই মূর্তীর মতো দাঁড়িয়ে রইলো। তাহজিবের সাথে কি ভালোবাসা না পেলে অন্যায় হবে না?? রানা পিছু ফিরে দেখলো হুইলচেয়ারে বসে থাকা ইরশাদও স্তব্ধ হয়ে গেছে তাহজিবের গল্প শুনে। রানা কিছু বললো না। হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে গেলো রুমে।

হোটেল বুক করাই ছিলো দুজনের জন্য। দুজনের জন্য প্রথমে আফিম এক রুম বুক করেছিলো। ভেবেছিলো দুজনেই ছেলে মানুষ,, প্রব্লেম হবে না। কিন্তু ইনায়াত যেন রীতিমতো হাত পা ছুড়ে কান্না করে দিয়েছিলো হোটেল রিসেপশনে। তাই বাধ্য হয়ে আরেকটা রুম নিলো আফিম বিরক্ত হয়ে। ইনায়াত আর আফিম যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আফিম ফ্রেশ হয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো নরম বিছানা পেয়ে।
– একি!! স্যার এখনো তাড়া দিলো না কেন??
ইনায়াত ছেলেদের উইগটা সেট করার জন্য হাতে নিয়েই বললো নিজেকে নিজে। ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে ছোটখাটো একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো ইনায়াত।
– আমার ক্লিপ আর দুইটা কোথায়??

উইগটা দুইদিকে দুইটা করে ববিপিন,, মোট চারটাপিন দিয়ে আটকে রাখে ইনায়াত। কিন্তু এখন দুইটা ক্লিপ সে ড্রেসিং টেবিলে পেলো না। পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজলো। কিন্তু সেখানেও কোথাও নেই। মনে করার চেষ্টা করলো রুমে এসে সে কি করেছে। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে পুরো উইগটা এক টানে খুলে নিলো ইনায়াত। এরপর আস্তে আস্তে হাই তুলতে তুলতে ক্লিপগুলো মুঠো করে খুলে টেবিলের উপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে কিছুক্ষন বসে সে এখনই তো এলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে। আরো একবার পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজলো সে।

আফিমের ঘুম হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই হালকা হয়ে ভেঙ্গে গেলো। আফিম আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে হাত ঘড়িতে টাইম দেখলো। টাইম দেখে আতকে উঠলো আফিম। সাইটে যাওয়ার টাইম তো হয়ে এলো।
– ইনায়াতের মতো পাংচুয়্যাল একটা ছেলে কিভাবে এতো বড় ভুল করলো?? ওহ শিট!!
মোবাইল হাতে নিয়ে ইনায়াতের নাম্বার ডায়েল করলো আফিম। পুরো ঘর অগোছালো করবার মাঝখানে ফোন বেজে উঠাতে ভয়ে লাফিয়ে উঠলো ইনায়াত। মোবাইলের কাছে গিয়ে দেখলো স্ক্রিনে নাম জ্বলজ্বল করছে ” বস “। শুকনো একটা ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নিয়ে কল রিসিভ করলো ইনায়াত। গলার স্বর কোনমতে ছেলেদের মতো মোটা করার চেষ্টা করলো অন্যবারের মতো। কিন্তু নার্ভাসনেসের কারণে হলো না আর।

– হ্যা,, হ্যালো??
ফোনের অপরপাশে রিসিভ হতেই ইনায়াতের কিছুটা চিকল মেয়েলি আর কিছুটা মোটা,, কেমন যেন বিদঘুটে স্বর শুনলো আফিম। ভ্রু কুঁচকে একবার নাম্বার দেখলো,, ঠিক নাম্বারে ডায়াল করেছে কিনা। ইনায়াতের নাম্বারেই ডায়াল করেছে দেখে ফোন আবার কানে ধরে বললো,,,
– ইনায়াত?? তোমার গলা এতো বিদঘুটে শুনাচ্ছে কেন?? এনিথিং রং?? কোন সমস্যা হয়েছে??
ইনায়াত আর কিছু না বলে ফোনটা খট করে কেঁটে দিলো। কোনমতে কাঁপা হাতে মেসেজ করে জানালো সে আফিমের রুমে যতো দ্রুত সম্ভব আসছে। অসহায় ভাবে হাতে থাকা দুইটা ক্লিপের দিকে তাকালো ইনায়াত।

– এখন এই দুইটা দিয়েই কাজ সাড়তে হবে। ইশশ!! গাধামী করে ক্লিপ কেন যে আনলাম না।
দুইদিকে দুইটা ক্লিপ লাগিয়ে উইগ পড়ে নিলো ইনায়াত। কিন্তু শুধুমাত্র দুইটা ক্লিপের জন্য উইগটা মজবুত ভাবে এঁটে বসলো না। ইনায়াত কিছুক্ষন খাটে বসে লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে ত্যাগ করলো। এরপর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। নিজেকে শান্ত করে হুডি টেনে মুখে মাস্ক পড়ে ফাইলপত্র নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। আফিমের রুমের দরজার সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে নক করলো।
আফিম এতোক্ষন মোবাইলে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করছিলো। একগাঁদা ম্যাসেজ আর পোস্ট আফিমের নামে। সব জায়গায় একটাই প্রশ্ন,,

” নামকরা মডেল ও এক নাম্বার ব্যবসায়ী আফিম আহসান কবে বিয়ের পিরিতে বসছেন?? তিনি কি কোন সম্পর্কে কমিটেড?? ”
আফিম বাঁকা হেসে মোবাইল পকেটে পুরতেই দরজায় টোকার আওয়াজ শুনে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলে ইনায়াতকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলো। নিচে গাড়ি পার্কিং লটে দাঁড়িয়েই ছিলো। ব্যাকসিটে গিয়ে বসে পড়লো আফিম। ইনায়াতও শান্তির নিঃশ্বাস নিলো এই বুঝতে পেরে যে আফিম সন্দেহ করেনি বা বুঝেনি। ইনায়াতও ব্যাকসিটে বসলো। দুজনেই ব্যবসায়ীক জিনিসপত্র আলোচনা করতে করতে রাস্তা পার করলো।

ডিলটা সফল ভাবেই সাইনিং হয়েছে। পুরো জায়গাটা দেখবে বললেও আসলে তারা দেখেনি। যে ডিলটা হতে তিনদিন লেগে যেতো। সেই ডিলটা শুধুমাত্র ৩ ঘন্টায় হয়ে গেছে বলে আফিমের মন অনেক ভালো। অবশ্য ইনায়াত আসার পর থেকে আফিম একপ্রকার ফাঁকিবাজ হয়ে গেছে। আফটার অল ইনায়াত আসার পর তার তেমন কাজ করবার প্রয়োজনই পড়েনি। ডিল শেষ করে আফিম আর ইনায়াত বাইরেই খাওয়া দাওয়া করে এখন হোটেলে এসেছে।
– ইনু,,, রুমে গিয়ে রেস্ট করো। আর আমিও রুমে যাই।
– স্যার!! ড্রিংক্স কম করবেন প্লিজ!!

ইনায়াতের কথায় মৃদু হাসলো আফিম। এরপর নিজের রুমে ঢুকে গেলো। আফিমের দুই রুম পর থাকা ইনায়াতের রুমে ইনায়াত ঢুকে গেলো। রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়েই ইনায়াত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,,,
– আল্লাহ বাঁচিয়েছে। উইগটা যদি নড়ে যেতো তাহলে কি যে হতো!!
এই বলেই উইগটা সাবধানে খুলে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলে রেখে ইনায়াত চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
আফিম রুমে ঢুকেই ফ্রেশ হয়ে নিলো দ্রুত। ওয়াসরুম থেকে বের হতে না হতেই বেজে উঠলো মোবাইলের রিংটোন। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ” মা ” লেখা নাম আর লাবিবার ছবি। আফিম মুচকি হেসে কল রিসিভ করলো।

– হ্যালো মা!!
– আমার সোনা বাবা!! কেমন আছিস তুই??
– ভালো মা!! তোমরা এসে পৌছেছো??
– হ্যা বাবা!! মাত্র লাঞ্চ করলাম দুজনে। ইনায়াত কেমন আছে রে??
– ভালো আছে মা।
– তোরা কবে আসবি বল তো?? ডিল সাইন হতে কদিন লাগবে??
– মা! ডিলটা সাইন হতে দুয়েকদিন লাগতো। কিন্তু আমাদের কোম্পানীর ভালোই নামডাক থাকায় তারা আজকেই ডিল সাইন করে ফেলেছে।

– বাহ!! খুব ভালো। চলে আয় না বাবা!! খুব মিস করছি ইনায়াতিকে।
– সিরিয়াসলি মম?? তুমি তোমার ছেলেকে কল দিয়ে বলছো অন্য কাওকে মিস করার কথা??
– উফফ!! ফাজলামো করিস না তো। তোর জন্য তো আমরা আছি। আর ছেলেটার কেও নেই। ও তো তোর ছোট ভাইয়ের মতো।
– নো নো মম!! নট এট অল। আমি কাওকে আমার ভাই বানিয়ে আদরের ভাগ কমাতে চাইনা। তাই ও আমার পিএ আর ফ্রেন্ড হিসেবেই ভালো আছে।
– ফ্রেন্ড??
– ও কিছুনা মা!! আমি রাখছি বাই। ২ দিন পর চলে আসবো।
– বাই,, ভালো থাকিস।
ফোনটা কেটেই আফিম মুচকি হাসলো। ইনায়াত ছেলেটা আসলেই ভালো। কিছুক্ষন ভাবনার জগতে বিচরন করে ইনায়াতকে কল করলো।

বেচারি ইনায়াত তখন সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে মেয়েদের ঢিলাঢালা পোশাক পড়ে। হুডি তোলা পোশাক পড়ে এই কিছুক্ষন কাটিয়েই সে বিরক্ত। সবে সে বালিশে মাথা রাখলো তখনই ইনায়াতের ভাষায় তার বজ্জাত মোবাইল হাম্বা হাম্বা করতে শুরু করলো। ইনায়াত কাঁদো কাঁদো মুখ করে বিড়বিড় করে বললো,,
– এই মোবাইল আমারে এতো যে ক্যান ভালোবাসে?? একটু শান্তিতে ঘুমাইতে গেলেই কান্দে। ধ্যাত!!
কোনমতে জোড় করে উঠে মোবাইল হাতে নিতেই দেখলো আফিমের কল। ইনায়াত হালকা কেশে একবার হ্যালো বলে ভয়েসটা মোটা করে নিলো।
– হ্যালো স্যার!! কোন সমস্যা??
– জলদি প্যাকিং করো ইনু। আমরা এখনই ফিরছি।
– কিইই?? কিন্তু আমাদের ফ্লাইট তো পরশুদিনের। কেমনে ফিরবো??
– টিকেট বুক করো। আচ্ছা আমিই বুক করে নেবো। তুমি আর্লি প্যাকিং করে রিসেপশনে যাও। আজকে ফিরে মাকে সারপ্রাইজ দেবো।

– ওকে স্যার!!
ইনায়াত ফোন কেটে নিজের সব বিরক্তি নিমিষেই ঝেড়ে ফেললো। একটা ছেলে তার মাকে সারপ্রাইজ দিতে যদি এতো কিছু করে। সে সামান্য জার্নি করে নেবে বলে নিজেকে বুঝালো। জলদি ছেলেদের পোশাক নিয়ে ঢুকে গেলো ওয়াসরুমে। ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে কোনভাবে দুটো ক্লিপ দিয়ে উইগ আটকালো। আগের বারের মতোই উইগটা নড়বড়ে রইলো। তবে ইনায়াত পাত্তা দিলো না।
– আগের বার যখন খুলেনি। এবারও খুলবে না।
নিজেকেই নিজে বুঝিয়ে ব্যাগে সব জিনিসপত্র ভরে নিলো ইনায়াত। সম্পূর্ন রেডি হয়ে মুখে মাস্ক পড়ে মাথায় হুডি টেনে চললো আফিমের রুমে।

আফিমের রুমে গিয়ে দরজায় টোকা দিতেই বিষন্ন মনে আফিম দরজা খুললো। আফিমের গলার আওয়াজ একটু আগেও কি খুশী খুশী ছিলো। এখন আবার কি হলো বুঝলো না ইনায়াত।
– কি হয়েছে স্যার??
– প্লেইনের আর্জেন্ট কোন টিকিট নেই। কোথায় ভাবলাম মাকে সারপ্রাইজ দেবো।
ইনায়াতেরও মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ইনায়াত সোফায় বসে কিছুক্ষন ভাবতে লাগলো। হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেলো।
– স্যার!! বাসে যাই??
ইনায়াতের কথা শুনে খালি মুখেই বিষম খেলো আফিম। রাগী চোখে নিজেকে সামলে বললো,,
– আফিম আহসান যাবে বাসে?? নো ওয়ে!!
ইনায়াত মুখটা চুপসে ফেললো। লাবিবার সাথে দেখা করবার জন্য সেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। এখন বাসে আফিম যাবে না। তার মানে দেখাও হবে না। হঠাৎই তার মাথায় আরেকটা বুদ্ধি এলো।
– স্যার!! ট্রেইনে যাবেন?? স্পেশাল বগি করে??
আফিম কিছুক্ষন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। এরপর মিষ্টি হেসে বললো,,
– চলো,,,,

দুজনেই চলে এলো স্টেশনে। টিকেট বুক করে নিয়েছে রাত ৮ টার। এখন বাজে ৭ টা। দুজনে ভাবলো একটু ঘুরাঘুরি করবে। লাবিবার জন্য এখানকার বেশ কয়েকধরনের খাবার কিনে নিলো ইনায়াত নিজের পাওয়া বেতন দিয়ে। আফিম রাগারাগি করলো তবে ইনায়াত শুনলো না। জোসেফের জন্য অনেক ধরনের মিষ্টির প্যাকেট কিনে নিলো ইনায়াত মনে করে। দেখতে দেখতে সময় হয়ে গেলো প্রায়। আফিম আর ইনায়াত এসে স্টেশনের একটা বেঞ্চে বসলো। তখনই ইনায়াত ভাবলো পানির বোতল কিনে নেওয়া দরকার। সাথে কিছু খাবার। তাই ইনায়াত উঠে দাঁড়ালো।

– একি?? কোথায় যাচ্ছো??
– স্যার!! পানি আর খাবার কিনে রাখতে। আপনার যদি ক্ষিদে পায়??
– লাগবে না বসতো।
– আরেহ না স্যার!! ট্রেইনে উঠলে আর কেনা যাবে না।
ইনায়াতের জেদ দেখে আফিম বললো,,
– আচ্ছা যাও।
ইনায়াত চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আফিম ডাক দিলো।
– ইনায়াত শুনো!!
– জ্বী স্যার!!
– টিকেট কোথায়??
– স্যার,, আমার কাছে,, পকেটে। কেন??
– টিকেট আমাকে দিয়ে যাও। লাইফে ফার্স্ট টাইম যেবার নীলার সাথে,,
কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো আফিম মুখ ভার করে। ইনায়াত দাঁড়িয়ে রইলো আফিমের কিছু শুনার আশায়। আফিম হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে বললো,,

– আমি টিকেট হারিয়ে ট্রেনে হেনস্তা হতে চাইনা৷ ওখানে ভীর বেশি। টিকেট দিয়ে যাও।
– স্যার আমি সামলে নেবো।
– না ভাই। আমি রিস্ক নিতে চাই না।
ইনায়াত আর কিই বা করবে?? টিকিট দুটো দিয়ে দিলো আফিমের হাতে। আর চলে গেলো দোকানে। ইনায়াতের দেওয়া দুটো টিকেট দেখে অবাক হলো আফিম। বিরক্ত হয়ে বললো,,
– উফফ!! ছেলেটা এতো লাজুক কেন?? একটা পুরো বগীতে আমি একা যাবো নাকি?? এতো লজ্জা যে আমার সাথে যেতে পারবে না?? পাগল কোথাকার!!
ইনায়াতের সাধারণ সিটের টিকেটটা বল বানিয়ে ছুড়ে দিলো আফিম হাওয়ায়। বাতাসে উড়ে তা কোথাও একটা চলে গেলো। কোথায় গেলো তা জানার চেষ্টা না করে আফিম মোবাইলে স্ক্রল করতে লাগলো।

ইনায়াত জিনিসপত্র কিনে ফিরে আসলো। কিছুক্ষন সেখানে বসে দুইজন ব্যবসা নিয়ে ডিসকাস করলো। ট্রেনও চলে এলো কিছু সময়ের মধ্যে। ইনায়াত আর আফিম নিজেদের সব জিনিসপত্র এক কুলিকে দিয়ে উঠালো ট্রেইনে। সব জিনিস আফিমের স্পেশাল বগিতে রাখালো কুলিকে দিয়ে।
কুলিকে টাকা দিয়ে ইনায়াত মৃদু হেসে নিজের ব্যাগ কাঁধে তুলে নিয়ে বললো,,
– স্যার আমার টিকেটটা দিয়ে দিন। আমিও সিটে বসে যাবো।
– আমি তো তোমার টিকেটটা ফেলে দিয়েছি।
– কিইইইইইই???
আফিমের হাসিমুখের এই কথা শুনে চিৎকার করে উঠলো ইনায়াত। আফিম সিটে বসেছিলো। ইনায়াতের চিৎকার শুনে তড়াক করে দাঁড়িয়ে পড়লো।
– স্যার আমি যাবো কেমনে??
ইনায়াত কাঁদো কাঁদো হয়ে প্রশ্ন করলো।
– কেন,, আমার সাথে বগিতে!!
ইনায়াতের চোখ বিষ্ময়ে ইয়া বড়বড় হয়ে গেলো যা দেখতে পেলো না আফিম। ইনায়াত কিছুক্ষন নিজের টিকেটের জন্য শোক প্রকাশ করলো। এরপর ভাবলো ” কি আর হবে,, উনি তো জানেন আমি ছেলে!! এখানেই করে যেতে হবে,, “। ঘুমাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আফিমের অপজিট সিটে বসলো ইনায়াত। আফিম কানে হেডফোন গুজে দিয়েছে ইতোমধ্যে। ইনায়াতকে সে অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না। ইনায়াত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো পলকহীন আফিমের দিকে। ট্রেইন ছেড়ে দেওয়ার কিছুক্ষন পরেই ইনায়াত হাই তুলতে রাখলো ট্রেইনের দুলুনির কারনে। আফিম তা লক্ষ্য করলো। ব্যাগ থেকে মদের বোতল বের করতে করতে আফিম বললো,,
– ইনু,, ঘুমিয়ে পড়ো। তোমাকে টায়ার্ড দেখাচ্ছে।

অনেক চেষ্টা করে নিজের চোখ খোলা রেখে ঘুম ভাগানোর চেষ্টা করলো ইনায়াত। কিন্তু পারলো না। আবার ঘুমালেও সমস্যা। অসহায় ভাবে মাথা তুলে উপরের বাংকের দিকে তাকালো।
– ওখানে ঘুমাবো??
নিজেকেই নিজে মনে মনে প্রশ্ন করলো ইনায়াত। পরক্ষনেই প্রশ্নটা ঝেড়ে ফেললো মন থেকে। উচ্চতায় ভয় আছে ইনায়াতের। নিজের বসে থাকা সিটের দিকে একবার তাকালো। ঘুমকে বাঁধা দেওয়া আর সম্ভব না তার। তাই আল্লাহর নাম করে দোয়া দুরুদ পড়ে মুখের হুডি ভালো করে টেনে দিয়ে মাস্ক ভালো করে পড়ে নিয়ে ধুপ করে ব্যাগের উপর মাথা রেখে পা টেনে ঘুমিয়ে পড়লো ইনায়াত।
ইনায়াতের কান্ড দেখে মুচকি হাসলো আফিম। মদের বোতলের ঢাকনা খুলতে গিয়েও খুললো না।
স্পেশাল বগি হওয়ায় ফ্যান থাকলেও তা চলছে খুব ধীমি। মোবাইল টিপতে থাকা আফিম লক্ষ্য করলো ইনায়াত বারবার এদিক ওদিক করছে। ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন তাকিয়ে আফিম মৃদু হাসলো,,
– ডাফার একটা!! কোথায় জানলা খুলে,, হুডি মাস্ক ছাড়া ঘুমাবে৷ তা না!! এখন গরমে ছটফট করছে।
আফিম মোবাইল পকেটে ভরে জানলা খুলে দিলো। এক ঝাঁক বাতাস ছুঁয়ে গেলো আফিমের চোখ মুখ। আফিম বাঁকা হাসলো।

ঘন্টাখানেক ঘুমানোর পর ইনায়াত আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠলো। চোখের সামনে আফিমকে বসা দেখে মৃদু হাসল আর বললো
– হ্যালো স্যার
হাই তুলতে অভ্যেসবশত মুখে হাত লাগিয়ে চমকে উঠলো ইনায়াত। মৃদু স্বরে চিৎকার করে বললো,,,
– একি!! আমার মুখ খোলা কেন?? আমার মাস্ক কোথায়??
ওহমাইগড!!! আব তেরা কেয়া হোগা ইনায়াত?? হুহাহাহাহা!! বাই দা সমুদ্র,,, রিয়েক্ট কম হলো কেন?? গল্প কি অফ করে দিবো ভাইয়া ও বোনেরা?? রিয়েক্ট কমেন্ট আর শেয়ার করেন।
– তোমার মাস্ক আর উইগ আমার কাছে মিস্টার ইনায়াত!! উপস,, সরি,, মিস বা মিসেস ইনায়াত।
ফাঁটাফাঁটা চোখে ইনায়াত তাকিয়ে রইলো আফিমের দিকে। আফিম সব জেনে গেছে এটা মানতে যেন বড্ড কষ্ট হচ্ছে ইনায়াতের।
– বুঝতে পারছো না কি হলো বা কিভাবে হলো?? তাহলে চলো,, ফ্ল্যাশব্যাক দেখে আসি,,
ফ্ল্যাশব্যাক,,,

– এই ছেলেটার এতো কিসের লজ্জা আমি বুঝি না?? লজ্জা থাকবে মেয়েদের। গাধার মতো যদি মুখে মাস্ক আর মাথায় হুডি লাগিয়ে ঘুমায় তাহলে এসি রুমেও গরমে ঘামাবে।
আফিম এসব বলতে বলতে এগিয়ে গেলো ইনায়াতের দিকে। ইনায়াতের মুখের মাস্ক খুলে নিলো। ইনায়াতের মুখের মাস্ক খুলতেই ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠলো আফিমের।
– ওহ মাই গড!! ইনুকে তো দেখতে জান্নাতী হুরপরীদের থেকেও বেশি সুন্দর। এরকম মেয়েলি দেখতে বলেই মেবি ও লজ্জা পায় মুখ দেখাতে।
এসব ভেবেই পেট চেপে হেসে ফেললো আফিম। এরপর হাসতে হাসতেই ইনায়াতের হুডি ধরে টাব মেরে খুলতেই হা হয়ে গেলো আফিমের মুখ। ইনায়াতের হুডি খুলে গেছে। কিন্তু তার সাথে আফিমের হাতে উঠে এসেছে ইনায়াতের উইগ।
– হোয়াট দা হ্যাল!!!

মৃদু চিৎকারেই বলে উঠলো আফিম। ইনায়াত হালকা বিরক্ত হয়ে অন্য পাশে ফিরে গেলো,, আফিমের দিকে পিঠে দিয়ে। ইনায়াতের কালো লম্বা চুলগুলো কাটা দিয়ে খোপা করে বাঁধা। অবিশ্বাস্য চোখে সেকেন্ড খানেক তাকিয়ে রইলো আফিম। এরপর শুকনো একটা ঢোক গিলে খোপাটাও টেনে খুলে নিলো। সাথে সাথেই ইনায়াতের লম্বা লম্বা চুলগুলো ট্রেইনের। মেঝেতে গিয়ে পড়লো। আফিম কাঁপা কাঁপা পায়ে ধুপ করে নিজের সিটে বসে পড়লো। এক এক করে মিলে যেতে লাগলো এই কঠিন অংকের সমীকরণ।
( ইনায়াতের মাস্ক আর হুডি খুলতে না চাওয়া)
( কখনো মদ বা সিগারেট না খাওয়া)
( মেয়েদের প্রতি কোন আগ্রহ না দেখা)
( খালি গায়ে আফিমের দিকে না তাকানো)
( গতকালকে হঠাৎ শোনা ঐ মেয়ের গলার স্বর)
– ইনায়াত একটা মেয়ে??
নিজেকেই নিজে বিড়বিড়িয়ে প্রশ্ন করলো আফিম

বর্তমানে,,
ইনায়াতের অবস্থা বুঝতে পেরে আফিম উঠে এসে ইনায়াত মুখের সামনে চুটকি বাজালো। ইনায়াত হকচকিয়ে তাকালো সেকেন্ড খানেক। এরপর অপরাধবোধে মাথা নিচু করে ফেললো। তখনই আফিম একদম ইনায়াতের দিকে ঝুঁকে এসে ইনায়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,
– লিসেন বেবী ডল!! আমার চরিত্রটা অনেকটাই লুস!! ঢিলা ঢালা আরকি!! এখন এই পুরো বগীতে আমি আর তুমি একা। আমার শক্তির সাথে তুমি পেরে উঠবে না যদি আমি তোমাকে কাছে টেনে নিতে চাই।
এটুকু শুনেই ঝট করে তাকালো ইনায়াত আফিমের দিকে। ইনায়াতের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না সবটা। আফিম ডেভিল হেসে বললো,,
– তবে তুমি বেঁচে যেতে পারো!! যদি তুমি আমাকে সবটা ক্লিয়ারলি বলো!!
আফিম এটুকু বলে উঠে দাঁড়ালো। নিজের সিটে গিয়ে স্টাইল নিয়ে বসলো। ইনায়াত কিছুক্ষন আফিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখে জল জমতে লাগলো ইনায়াতের। তবে আফিম তা পাত্তা দিলো না। ইনায়াত মাথা নিচু করে বলতে শুরু করলো তার ভয়ংকর অতীতের কথা।

– আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস টেনে উঠেছি। সেদিন ছিলো আমাদের স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাচে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমি। অনুষ্ঠান শেষে একা একা ফিরছিলাম। কখনো কোন বন্ধু বান্ধবী রাখিনি আমি। কারণ বাবা নিষেধ করেছে। আমার বাবা নামকরা ব্যবসায়ীদের একজন,, ইরশাদ মির্জা। বাবা ছাড়া আমার আর কেও নেই। মা ছোটবেলায় মারা যায়। তাই বাবার সব কথাই আমি মেনে চলি। সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে। গাড়িতে চড়তে ভালো লাগে না আমার। সিম্পলভাবেই চলতে ভালো লাগে। যেমন,, ফুচকা খাওয়া,, রিক্সায় ঘুরা ইত্যাদি। সেদিন একা একা ফিরবার পথে তুমুল বৃষ্টি শুরু হলো। শর্টকাটে ঢুকে পড়লাম ইচ্ছে করেই।

বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে তাই। আর শর্টকাট রাস্তায় গাড়ি চলাচল হয় না,,, করে না কেও। দুইদিকে ভালো করে চেয়ে দেখে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম নিজের মতো করে। খেয়ালই করিনি কখন সেখানে দানবটা চলে এসছে। তাহজিব খান,,, আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন নামকরা মাফিয়া। হঠাৎ একটা মানুষ চোখে পড়তেই চমকে উঠেছিলাম খুব। দ্রুত পা চালিয়ে চলেই আসবো। কিন্তু তখনই মানুষটা পথ আটকে দিলো। কিছুই বললো না মুখে। শুধু কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে সড়ে দাঁড়ালো পথ থেকে। সেকেন্ড দেরি না করে পা চালিয়ে চলে এলাম বাসায়। কিন্তু আমার ভাগ্যতে তাহজিব নামের কালো ছায়া পড়েই গেলো। প্রতিদিন স্কুল গেইটের সামনে ঢুকবার সময় আর বের হবার সময় তাকে জিপে বসে থাকতে দেখতাম। স্কুলের টিচাররা,,,

কোচিংয়ের স্যাররা আমাকে ভয় পেতো। উঠতি বয়সী ছেলে মেয়ে সবাই,, তাই কৌতুহলও বেশী। আস্তে আস্তে সবার মাঝে ছড়িয়ে গেলো আমার সাথে তাহজিব খানের সম্পর্ক আছে। কেও কেও এই গল্পটার ভালো একটা সুন্দর দিক বানাতো। কেও কেও খুব বিচ্ছিরি ভাবে বর্ণনা করতো। এভাবেই সহ্য করতে লাগলাম স্কুল পার হয়ে কলেজ শেষ করা পর্যন্ত। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই আর থাকতে না পেরে আমি বাবাকে সবটা জানালাম।

এটুকু বলেই থেমে মুখ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো ইনায়াত। আফিম চোখ বন্ধ করে রাখলো সেকেন্ড খানেক। এরপর পানির বোতল নিয়ে ইনায়াতের পাশে গিয়ে বসলো। ইনায়াত নিজের পাশে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করে চোখ খুলে তাকালো। আফিম পানির বোতল এগিয়ে দিলো। ইনায়াত পানির বোতল থেকে কয়েক ঢোক পানি পান করলো। পানি খেয়ে ইনায়াত যেন কান্নায় ফেঁটে পড়লো। আফিম ইনায়াতের এক হাতের উপর নিজের হাত রেখে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বললো। ইনায়াত শান্ত হতে পারলো না। তবুও বলতে লাগলো।

– বাবা সবটা দেখে নেবে বললো। বাবা আর তাহজিব বাবার অফিসে দেখা করলো। কি কথা হয়েছে জানা সম্ভব ছিলো না কেননা আমাকে নেওয়া হয়নি। তবে বাবা বাসায় এসে জানালো তাহজিব বাবার গায়ে হাত তুলেছে। মানুষটাকে ভয় লাগতো। এখন আরো বেশি ভয় আর ঘৃণাও লাগে। এরপরের দিন কোন কারণ ছাড়াই পার্কে গেলান ঘুরতে। কেননা আমি জানি পার্কেও সে অপেক্ষা করবে। সত্যি সত্যি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম তাহজিবকে। আমি ভেবেই এসেছিলাম কি করবো না করবো আজকে। তাই এগিয়ে গেলাম তাহজিবের দিকে। তাহজিব প্রচন্ড অবাক হয়েছিলো আমাকে তার দিকে আগাতে দেখে। আমি এগিয়ে তাহজিবের জীপে উঠে বসলাম। সেও অবাক হয়ে উঠে বসলো। আমি তাকে বললাম যেখানে ইচ্ছে সেখানে যেতে। উনি আমাকে নিয়ে গেলেন উনার বিশাল বাসায়। এরপর পাগলের মতো আমাকে দেখাতে লাগলেন সব রুম,,, আমার জন্য সাজানো রুম,, ফটোগ্রাফার দিয়ে লুকিয়ে তোলা আমার ছবি। এরপর,,,,

ইনায়াত চুপ করে গেলো। আফিম উৎসুক চোখে তাকিয়ে রইলো। না পারতে আফিম জিজ্ঞেস করলো,,
– এরপর কি ইনায়াত??
– আমাকে রুমে বন্দী করে কাজী ডাকিয়ে আনলেন। আমার বাবা নাকি ভালো মানুষ না। আমাদের বিয়ে না হলে আমার বাবা নাকি আমারই ক্ষতি করবে। এমনই সব উল্টোপাল্টা কারন দেখিয়ে আমাকে বিয়ের জন্য জোড় জবরদস্তি করতে লাগলেন। নিজের ভয় আর রাগের জন্য আমি তাকে চড় মেরে বসলাম। ওটাই আমার ভুল ছিলো মেবি। আমাকে নিজের রুমেই বন্দী করে রাখলো সে। বাবা আর বাবার পিএ রানা আংকেলকে তুলে আনা হলো। আমাকে শাস্তি স্বরুপ উনি নিজের সাথে রাখতো। যদিও কখনো স্পর্শ করেনি উনি। এরই মাঝে উনাকে দেশের বাইরে যেতে হলো কোন কাজের জন্য। উনি দেশের বাইরে গেলেন। আর এও বলে গেলেন ,,, ফিরে এসে আমার বাবার সত্যি নাকি আমাকে দেখিয়ে দেবে আর আমাকে বিয়েও করে নেবে। জোচ্চোর কোথাকার!!
কান্না থেমে গিয়ে রাগে ফোসফাস করতে লাগলো ইনায়াত। আফিম নিজের মুখ চেপে ধরলো দুই হাত দিয়ে।

– বাবা আর রানা আংকেল আমাকে পালাতে সাহায্য করলো। এখানে রানা আংকেলেরই একটা দুতলা বাসায় উঠলাম। আংকেল টাকা পাঠালো কিছু। তবুও জব একটা খুঁজতে লাগলাম। তাহজিবের ভয় এই শহরেও পিছু ছাড়লো না। নিজের মেয়ে হয়ে জন্মানোটা অভিশ্বাপ মনে হলো। তাই এখানে যেদিন আসলাম,, সেদিন থেকেই ছেলের রূপে চলাফেরা করি। এরপর আপনার সাথে দেখা। বাবা আর রানা আংকেলের সাথে যোগাযোগ হয়নি আর। জানিনা তাহজিব তাদের কি অবস্থা করেছে এতোদিনে। কিন্তু আমি বাবার মাথা ছুঁয়ে বলেছি আমি আর তাহজিবের সামনে পড়বো না। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবোই।

এটুকু বলেই ইনায়াত কাঁদতে লাগলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। আফিম কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ইনায়াতকে এক টানে বুকে এনে ফেললো। কান্নায় ব্যস্ত ইনায়াতের হুশ হলো না। উল্টো আফিমের বুকের গুটিশুটি হয়ে মুখ গুঁজেই কাঁদতে লাগলো।
– কান্না করছো কেন ইনায়াত?? যা হওয়ার হয়ে গেছে!! এখন তো আর তুমি তাহজিবের কাছে নেই। চিন্তা করো না,,, কেঁদো না। আমি আছি তো। আমি আছি তোমার সাথে। তোমার সাথে আমি নীলার মতো কিছু হতে দেবো না। কখনোই না,,, আই প্রমিজ।
কান্নায় ব্যস্ত ইনায়াত হয়তো খেয়ালই করেনি আফিমের বলা কোন কথা।

মিনিটখানেক সেভাবে থাকার পর ইনায়াত শান্ত হতেই বুঝতে পারলো সে কি করছে। তড়াক করে লাফিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে বসলো ইনায়াত।
– আই এম সরি স্যার!! আমি অসহায় ছিলাম বলেই এতো বড় একটা মিথ্যে নিয়ে আপনাদের সাথে থাকতে হলো। এছাড়া আমার কোন কুমতলব ছিলো না।
আফিম নিজের সিটে গিয়ে বসলো। ইনায়াত একবার গম্ভীর মুখে থাকা আফিমের দিকে তাকিয়ে জানলার দিকে তাকালো। রাতের জন্য কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। জানলার দিকে তাকিয়ে আনমনেই বললো,,

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৪+৫

– আমার মায়ের ভালোবাসা আমি পাইনি৷ লাবিবা আন্টির মাঝে আমি মায়ের মমতা ও স্নেহ পেয়েছি। জোসেফ আংকেল আমাকে নিজের ছেলে বলে পরিচয় দিয়েছে। অথচ তাদের সাথে আমি এতো বড় একটা অন্যায় করেছি। যদিও কোনটাই ইচ্ছে করে নয়। তবে অন্যায়ই তো। চিন্তা করবেন না স্যার!! আমি আজকে গিয়ে সবটা সত্যি বলে দিয়ে অন্য শহরে চলে যাবো। আই প্রমিজ।
উইমা!! ইনায়াতকে তো দেখে নিলো আফিম!!

এখন কি আফিমের কালো নজরের শিকার হবে ইনায়াত?? নাকি গল্পের নতুন কোন মোড় আসতে চলেছে?? আর তোমাদেরকে অনেক ভালোবাসা আপি আমাকে এতোটা সাপোর্ট করার জন্য। সাথে থেকো এভাবেই সবসময়। আমি সবসময় চেষ্টা করবো তোমাদের মনে এইভাবে জায়গা ধরে রাখার। বাই দা সমুদ্র,, ধামাকা এখনো শেষ হয়নি কিন্তু। আর হ্যাঁ!! ” নীলা কে,, আফিম আগে থেকে বাজে বলা হয়েছে শুরুতে তাহলে এখন কেন ভালো দেখাচ্ছি,,, তাহজিব ইরশাদের ক্ষতি করেছে কেন,,, ” এইসবগুলোর উত্তর পাবে আপু ও ভাইয়ারা। এত্তোগুলো ভালোবাসা তোমাদের জন্য।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৮+৯