ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১০+১১

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১০+১১
মৌমি দত্ত

এস.এ চলে যাবার পর হুশ ফিরলো রানার। ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে সে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
– না,, না। আমার তাহজিব আর ইনায়াত মামনিকেও জানাতে হবে। আমি ইনায়াত মামনিকে বাঁচাবোই।
রানার পিছনেই হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে বসেছিলো ইরশাদ তা রানা খেয়াল করেনি। ইরশাদের মুখে বাঁকা হাসি। হুইলচেয়ার ঠেলে আরো কাছে নিয়ে গেলো রানার। এরপর রানাকে আগাম কোন বার্তা না দিয়েই ফেলে দিলো ছাদ থেকে। রানা শেষ চিৎকার দিয়ে উঠলো। তবে রক্ষা হলো না। নিচে পড়ে গেলো মুখ থুবড়ে। আর সেকেন্ডের মাঝেই রক্ত গড়িয়ে আশপাশ লাল হতে লাগলো ক্রমশ।
গভীর ঘুমে থাকা তাহজিবের কানে কারোর আবছা চিৎকার ভেসে আসলো। তবুও হাজার চেষ্টা করেও কোনভাবে নিজের ঘুম ভাঙ্গাতে পারলো না। আবারও ডুবে গেলো গভীর ঘুমে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলো ইনায়াত। এরপর খানিকক্ষন শুয়ে থাকলো। সাতটা বাজতেই বাগানে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করলো বেশ কিছুটা সময়। আর ৮ টা বাজতেই অভ্যেসবশত দ্রুতপায়ে চলে গেলো আফিমের রুমে। আজকে যে শুক্রবার তা মাথা থেকেই চলে গেছে ইনায়াতের। অবশ্য মাথায় থাকবেই বা কেমনে??? কালকের সব প্যাঁচাল মাথায় ঘুরছে তার এখনো। আফিমের রুমে গিয়ে দেখলো আফিম বিছানায় নেই। ভ্রু কুঁচকে এলো ইনায়াতের। চোখ কচলে আবারও দেখতেই দেখলো বিছানা খালি।
– স্যার আবার কবে থেকে নিজে নিজে উঠা শুরু করলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইনায়াত মাথা না ঘামিয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে গিয়ে দেখলো লাবিবা খুব খুশী মনে নাস্তা বানাচ্ছে নিজ হাতে রান্নাঘরে। ইনায়াত গিয়ে সালাম দিলো। লাবিবাও সালাম ফেরত দিলো।
– কি ব্যাপার আন্টি?? তুমি আজকে এতো খুশী কেন?? কোন বিশেষ দিন আজকে??
লাবিবার খুশী মুখ দেখে প্রশ্নটা করে ইনায়াত গ্লাসে পানি ঢেলে নিলো।
– আজকে আফরা আসবে তো ওর ট্রিপ থেকে।
মৃত মানুষ আসবে কথাটা হজম করার জন্য স্বাভাবিক কোন ব্যাপার না। ইনায়াতেরও হজম হলো না। সবেমাত্র একটু করে পানি মুখে নিয়েছিলো। লাবিবার কথা শুনে গলায় আটকে গেলো পানি। খুকখুক করে কাশতে লাগলো ইনায়াত৷ লাবিবা দ্রুত দৌড়ে এসে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো,, মাথায় ফুঁ দিয়ে দিলো।

– কি করিস এসব?? পানিও গলায় আটকায় নাকি কারোর??
– তুমি কি বললে আন্টি?? আ,আআফরা আপি আসবে?? কিন্তু কিভাবে সম্ভব?? আফরা আপি তো সুইসাইড,,,
লাবিবা ইনায়াতের কথা শেষ করতে না দিয়েই হো হো করে হেসে ফেললো।
– আচ্ছা তুই এখানে চেয়ার একটা নিয়ে বোস। আমি সব বলছি তোকে।
নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে ইনায়াত দ্রুত একটা চেয়ার এনে বসে পড়লো ভালো মেয়ের মতো। ইনায়াতের এমন চঞ্চলতা দেখে লাবিবা হেসে পরোটার রুটি বেলতে বেলতে বলা শুরু করলো।

– কাল তো রাত হয়ে যাওয়ায় তোকে পুরোটা বলাই হয়নি। এখন বলি শোন। আমার মেয়েটা তো আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। নিজের কলিজার বোনকে হারিয়ে আফিম কেমন যেন হয়ে গেলো। কারো সাথে কথা বলে না। সারাদিন পড়ালেখা নিয়ে পড়ে থাকে। দিন কাটতে লাগলো আর ও কঠিন হতে লাগলো ক্রমশ। আজ থেকে বছর তিন বা চার আগের কথা। আফিম তখন নতুন নতুন বিজনেসে তোর জোসেফ আংকেলকে সাহায্য করা শুরু করেছে। তখনকার সময়ের কথা,, একদিন রাতে একটা ডিল কমপ্লিট করে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলো আফিম। হঠাৎই ওর গাড়ির সামনে একটা মেয়ে এসে পড়লো। আফিম গাড়ির থেকে নেমে দ্রুত সামনে গিয়ে দেখলো একটা ১৭/১৮ বছর বয়সী মেয়ে পড়ে আছে ওর গাড়ির সামনে।

মাথায় আঘাত পেয়েছে রাস্তার পাথরে। আফিম দ্রুত ঐ মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ওখানে গিয়ে মেয়েটার ট্রিটমেন্ট করা শেষে জানা গেলো যে,, মেয়েটার মুখে বেশ কয়েকবার ব্লেড দিয়ে কেটে কেটে দেওয়া হয়েছে,, ৩/৪ জন মিলে টানা ২/৩ দিন পর্যন্ত ধর্ষন করেছে আর তাছাড়াও শারীরিক ভাবে আরো অত্যাচার করা হয়েছিলো ঐ মেয়ের উপর। মেয়েটার চেহারা বিভৎস হয়ে গেছিলো। তাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে আফিম আগপিছ না ভেবেই নীলার চেহারা মেয়েটাকে দিয়ে দিলো প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে। মেয়েটার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন মেয়েটার থেকে জানা গেলো যে কলেজ থেকে ৪ দিনের জন্য পিকনিকে এসেছিলো সবাই।

একটা স্যার কাজের নাম করে দল থেকে আলাদা করে দেয় মেয়েটিকে। আর জঙ্গলে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখে। এরপর প্রতি রাতে ৩ জন স্যার মিলে মেয়েটাকে পালা করে বেশ কয়েকবার করে ধর্ষন করতো প্রতিদিন। মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করলে জানা যায় আফরোজা সুলতানা। আফরোজার মধ্যে নীলাকে দেখতে পায় আফিম। ফলস্বরুপ মেয়েটাকে নিজের বোনের মতো সেবা যত্ন করে। মেয়েটার পরিবার বলতে শুধু তার বিবাহিত বড় ভাই যে আফরোজা ধর্ষিত হয়েছে জেনে মেনে নিতে অস্বীকার করে। আফিম মেয়েটাকে এখানেই নিয়ে আসে। আফরোজা হয়ে যায় আফরা।

মন দিয়ে শুনছিলো ইনায়াত সবটা। লাবিবার পরোটার সব রুটি বেলা শেষ। এখন তাওয়ায় ওগুলো তৈরি করে নিলেই হবে। ইনায়াতের মনে প্রশ্ন উশখুশ করছে। লাবিবা ইনায়াতের মুখ দেখেই তা বুঝতে পারলো।
– আফরার বয়স ২১ বছর,, অনার্সে পড়ে। বন্ধুদের সাথে ১ মাসের ট্রিপে গেছিলো যেদিন তুই আফিমকে ঘায়েল অবস্থায় পেলি সেদিন। নীলার মতো আফরাকেও হারাতে চায় না আফিম। তাই সবসময় নজরবন্দী করে রাখে। এমনকি আফরার সম্পর্কে কাওকে জানতেও দেয়নি যে আফিমের বোনও।

আড়াল থেকেই প্রটেক্ট করে যেন মোক্ষম জায়গায় হুটহাট সেভ করা যায় সমস্যা হলেই। এইবার একপ্রকার কথা কাটাকাটি করেই গেছে আফরা ট্রিপে। তাই আফিম এই ৩ সপ্তাহ ওকে একটাও কল দেয়নি। আফরাও কম জেদি না। ও নিজে থেকে কল দেয়নি। তবে মজার বিষয় কি জানিস?? আফরা এক মাস শেষ হবার আগেই আজকে ফিরে আসছে দুটো কারণে। এক আফিমকে ছাড়া ওর ভালো লাগছে না। আর দুই হলো পরশুদিন আফিমের জন্মদিন। আর আফিমও দেখলাম আজকে সকাল সকাল উঠে গেছে। তার মানে আফরার খবর ও কাওকে না কাওকে দিয়ে ঠিক রাখিয়েছে। নাহয় আজকেই কেন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলো ও??
ইনায়াত হেসে ফেললো মুচকি মুচকি। ইনায়াত আর লাবিবা মিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করে ফেললো। লাবিবার ভালোই লাগলো। ইনায়াতকে তার খুব ভালো লাগতো ছেলে হিসেবেই। এখন মেয়ে হিসেবেও তাই ভালো লাগছে।

সকাল সকাল তাহজিবের ঘুম ভাঙ্গলো আসিফের হাকডাকে। মাথা ভার হয়ে আছে তার। কোনমতে আবছা ভাবে চোখ খুলে বুঝলো আসিফ দাঁড়িয়ে আছে চিন্তিত মুখে।
– কি ব্যাপার আসিফ??
ঘুম ঘুম কন্ঠে জানতে চাইলো তাহজিব।
– রানা মারা গেছে স্যার!!
তাহজিবের এতোক্ষনের ঘুম ছুটে গেলো এই সাধারণ শব্দগুলো দিয়ে বুনা ছোট বাক্যটি শুনেই। তড়াক করে উঠে বসতে গিয়ে মাথায় ব্যাথা তীব্র ভাবে অনুভব হতেই মাথা চেপে ধরলো তাহজিব। আসিফ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে তাহজিবকে ধরলো। তাহজিব নিজের দিকে পাত্তা না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
– কোথায় ওর লাশ?? মারা গেলো কিভাবে??
ড্রয়িং রুমে আসতে আসতে জিজ্ঞেস করলো তাহজিব।

– স্যার!! বাড়ির পিছন দিকে মাটিতে পড়ে ছিলো। বাড়ির দাড়োয়ান প্রথম দেখেছে। পরে আপনার কাছে এসে ডাকাডাকি করেছে সে। কিন্তু আপনি নাকি গভীর ঘুমে ছিলেন। এমনকি বাড়ির প্রতিটা গার্ডসদেরও মাত্র খানিক আগে মেরেধরে ঘুম থেকে জাগানো হয়েছে।
বিশাল বড় ড্রয়িং রুমের মাঝ বরাবর শুইয়ে রাখা হয়েছে রানার লাশ। তাহজিব এসে রানার লাশের পাশে বসে ভালো করে চেক করলো হাত পা। চোখ আর মুখের পজিশনও চেক করলো। লাশের মুখে কাপড় দিয়ে টেনে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
– দাফনের ব্যবস্থা করো।
একটা বডিগার্ডের দিকে তাকিয়ে বললো তাহজিব। এরপর আসিফের দিকে তাকিয়ে বললো,,,
– বাড়ির পিছনের দিকে লাশ পাওয়া গেছে কথাটা মানানসই না। মুখ থেতলে গেছে একদিকে। মাথার সামনের একদিকে সাইডে চোট লেগেছে। তার মানে উপর থেকে পড়েছে। উপর থেকে মানে,,,,
তাহজিব চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবলো। এরপর বললো,,

– ছাদ!! আসিফ ছাদে চল।
তাহজিব আর আসিফ দৌড় লাগালো ছাদে। ছাদে এসে তাহজিব ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সবটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
– লাশ কোনদিকে পাওয়া গেছে??
– ওইদিকটায় স্যার!!
তাহজিবকে নিয়ে এগিয়ে গেলো আসিফ সেদিকটায়। তাহজিব কিছুক্ষন মন দিয়ে সবটা পর্যবেক্ষন করলো। পরক্ষনেই ভ্রু কুঁচকে আসলো তাহজিবের।
– সুইসাইড?? নাকি কেও ধাক্কা দিয়েছে?? ধাক্কা কে দেবে?? ইরশাদ?? কিন্তু রানা তো ইরশাদের বাধ্যগত ছিলো অনেক। তাহলে ইরশাদ ওকে মারবে কেন??
এই কথাগুলোই আসিফকে শুনিয়ে বলছিলো তাহজিব।

– ও তোমার কাছে ছুটে যাচ্ছিলো ইনায়াতের ঠিকানা বলতে। যাতে আমার হাত থেকে তুমি ওকে বাঁচিয়ে নিতে পারো। আমার বাধ্যগত হলেও ও আমার আসল রূপ জানতো না বলেই আমার সাথে ছিলো তাহজিব।
তাহজিব আর আসিফ নিচের দিকেই তাকিয়েছিলো। তখনই শুনলো কথাগুলো ইরশাদের কন্ঠে। দুজনেই ঘুরে পিছনে তাকালো আসিফ কিছুই বুঝলো না। আর তাহজিব অবাক।
– রানা কিছুই জানতো না??
– উহু!! রানা কিছুই জানতো না। তুমিই ভেবেছো ও জানে,, আর জেনে শুনেই ইনায়াতকে দূরে পাঠিয়েছে তোমার থেকে।
রাগে হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে নিলো তাহজিব। পরক্ষনেই চোখ খুলে ইরশাদের দিকে তাকিয়ে বললো,,
– তোর খেলা একদিন না একদিন শেষ হবেই ইরশাদ। একবার আমার চাঁদকে খুঁজে পাই। তারপর আমি ওকে সব সত্য দেখাবো।

সকাল সময় সাড়ে ৯ টা বাজে প্রায়। আফিম অন্য শুক্রবারগুলো ওয়ার্কআউট করে কাটায়। কিন্তু আজকে সে একরাশ বিরক্তি নিয়ে পেপার উলটো করে মুখের সামনে ধরে বসে আছে। তার দুটো কারণও আছে। ইনায়াত মেয়ে হওয়ার কারণ লাবিবার সাথে সখ্যতা আরো দশগুণ বেড়ে গেছে। তাই দুজনেই পুরো ঘর ঘুরে ফিরে আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছে। আর আড্ডাতেই তারা ক্ষান্ত থাকেনি। আড্ডার মাঝখানে লাবিবা আফরার আসার উপলক্ষে শাড়ি চেঞ্জ করে এক কালারের একটা শাড়ি পড়েছিলো সবুজ রঙ্গের সিল্কের। তা দেখে ইনায়াত সুন্দর বলেছে। তাতে খুশীতে গদগদ হয়ে লাবিবা ইনায়াতকে শাড়ি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। আর তখন থেকে ইনায়াত গোলাপী কালার সিল্কের শাড়ি,, কালো ব্লাউজ পড়ে,, হাতে কাঁচের চুড়ি,, কানে দুল,, কপালে টিপ,, চোখে মোটা করে কাজল আর আইলাইনার পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাবিবার সাথে পুরো ঘর। তাতেও মন ভরেনি লাবিবার। তাই নিজের অনেক বছরের পুরনো একজোড়া নুপুর ছিলো যা ছেলে বৌয়ের জন্য রেখেছিলো। ছেলের বিয়ের কোন মতিগতি তো নেই। তাই লাবিবা সেগুলো ইনায়াতকে পড়িয়ে দিলো।

কিছুক্ষন আগে ফ্রেশ হয়ে আফিম স্টাইল নিয়ে টিশার্ট ঠিক করতে করতে নামছিলো। তখনই নুপুরের ছুমছুম আওয়াজ আর খিলখিল হাসির আওয়াজ শুনে শেষ সিড়িতে এসে পা থমকে গেলো আফিমের। ঘাড় ঘুড়িয়ে ডাইনিং টেবিলে তাকাতেই হার্টবিট যেন মিস গেলো কয়েকটা। এক গোলাপী জান্নাতী হুরকে যেন ঘুরঘুর করতে দেখছে সে লাবিবার পাশে। বেহায়া চোখ দুটো সেদিকেই কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। পরবর্তীতে লাবিবা আর ইনায়াত যখন আফিমের দিকে তাকালো। তখন একপ্রকার লজ্জা পেয়েই আফিম বিরক্তি নিয়ে নিচে নেমে এসে সোফায় বসলো। তখনই ইনায়াত এসে দাঁড়ালো কফি হাতে আফিমের সামনে। আফিম মুখের সামনে পেপার ধরে পেপার পড়ছিলো।
– স্যার! আপনার কফি নিন!!

ছেলেদের মতো মোটা মোটা ভাব ছাড়া মেয়েলি স্বরে এতো মিষ্টি করে বলে এই ছোট্ট কথাটা অনেক বিশাল মনে হলো আফিমের। পেপার নামিয়ে ইনায়াতের দিকে তাকিয়ে কফিটা নিয়ে নিলো হাত বাড়িয়ে। ইনায়াত আড্ডা মিস যাচ্ছে বলে আর না দাঁড়িয়ে চলে যেতে লাগলো লাবিবার কাছে। আফিম মাথা নামিয়ে পেপার নিতে যাবে তখনই ইনায়াত আবার কি ভেবে পিছু ফিরে ডাকলো।
– স্যার শুনছেন??
বুকের ভেতর কিছু একটা ধুপ করে উঠলো। আফিম এক ঝটকায় চোখ তুলে তাকালো।
– ব্রেকফাস্ট কি এখন করে নেবেন?? আংকেল নাকি পরে করবে। আইসক্রিম আর মিষ্টি কিনতে গেছে। আন্টি আর আমিও পরেই করবো।

আফিমের কানে আর মস্তিষ্কে কথাটা ঢুকলেও ভালো করে প্রভাব ফেললো না। আফিম আগপিছ না ভেবে মাথা নাড়িয়ে দ্রুত না বললো। যেন ইনায়াত উত্তর পেয়ে দ্রুত চোখের সামনে থেকে বিদায় হয়। ইনায়াত বিদায় হলোও। কিন্তু ইনায়াত চলে গেলো বলেই যেন আফিম অপমানিত বোধ করলো খুব। তখন থেকে আফিম বিরক্ত হয়ে আছে মুখের সামনে পেপার উলটো করে ধরে আছে। একবার ইচ্ছে করছে পেপার নামিয়ে কি নিয়ে আড্ডা চলছে তা গিয়ে জানুক লাবিবা ও ইনায়াতের কাছে,, আড্ডায় যোগ দিক। পরক্ষনে নিজেই নিজেকে শাসাচ্ছে।
আফিমের দ্বিতীয় বিরক্তির কারণ তার কলিজাটা এখনো এলো না কেন?? কল করে খোঁজ খবর না নিলেও,, বাবা মায়ের সামনে আফরাকে নিয়ে কথা না বললেও ঠিকই লোক লাগিয়ে রেখেছিলো আফরার পিছনে। মেয়েটা যে চঞ্চল। সেই লোকই জানিয়েছে আফরা আজকে ফিরছে।

পা টিপে টিপে জোসেফ আর আফরা ঘরে ঢুকছে। জোসেফ সবে আইসক্রিম আর মিষ্টি নিয়ে এসেছিলো সদর দরজার কাছে গাড়ি থেকে নেমে। তখনই দেখলো পা টিপে টিপে ঢুকছে আফরা ঘরে। কি কারণ তা ভালোই জানা আছে জোসেফের। নিঃসন্দেহে এতো আয়োজন সব আফিমকে চমকে দেওয়ার জন্য। তাই মেয়ের কাজে বাঁধা না দিয়ে বাপ মেয়ে দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় সাবধান করে পা টিপে টিপে ঢুকছে। ডাইনিংয়ে আড্ডা তখনও চলছিলো লাবিবা আর ইনায়াতের। তখনই সেখানে উপস্থিত হলো আফরা আর জোসেফ। জোসেফকে দেখেই দীপ এসে হাতের জিনিসপত্র শব্দহীন নিয়ে গেলো। আফরা তো এসেছিলো আফিমকে চমকে দিতে। ঘরে এসে লাবিবার সাথে আড্ডা দিতে থাকা,, লাবিবার শাড়ি ও জিনিসপত্র পড়ে সাজা একটা মেয়েকে দেখে চমকালো নিজেই।

– এই মেয়েটা কে?? ভাইয়া আমাকে ফেলে বিয়ে করে ফেলেছে।
জোসেফের মাথায় চাপলো দুষ্টু বুদ্ধি। ছেলে মেয়েদের সাথে তিনি প্রায়ই হাসি ঠাট্টা করেন। তাই তিনি মুচকি হেসে বললেন,,
– বিয়ের ৩ সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ইনায়াতই তো এখন আফিমের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব করে দেয়।
আফরা খুশীতে ” ইয়াহু ” বলে লাফিয়ে উঠলো। আফরার আওয়াজ শুনে লাবিবা,, ইনায়াত আর সোফায় বসা আফিমও সেদিকে তাকালো। বোনকে দেখে সব অভিমান আর রাগ মূহুর্তেই ভুলে গিয়ে ছুটে আসলো আফিম বোনের কাছে। কিন্তু আফরা এক ছুটে গেলো ইনায়াতের কাছে। ইনায়াতকে ধরে ঘুরতে লাগলো চরকির মতো।
– ওহ আমার পিচ্চি কিউটি পরী টাইপের এঞ্জেল ভাবী!!!!!! আমি অনেক অনেক অনেক হ্যাপি তোমাকে ভাবী হিসেবে পেয়ে। অনেক হ্যাপী আমি।

একপর্যায়ে হাঁফিয়ে গিয়ে থামলো আফরা মাতায় হাত চেপে। ইনায়াতের ও মাথা ঘুরাচ্ছে। আফরা গিয়ে লাবিবার হাত চেপে ধরলেও ইনায়াত পড়ে যাচ্ছিলো ব্যালেন্স না রাখতে পেরে। আফিম কাছে থাকায় ইনায়াতের হাত টেনে পড়া থেকে বাঁচালো। আফরা তা দেখে সিটি বাজাতে শুরু করলো। সবাই সবভুলে তার দিকে তাকালো।
– আয়হায়!! ক্যায়া প্যায়ার হ্যায়!!
ইনায়াত আর আফিম বোকা বনে গেলো। এক লাগে দুইজন দুইজনের থেকে ছিটকে সড়ে দাঁড়ালো।
– প্যায়ার আর স্যারকে??? হোয়াট??
মনে মনে বললো ইনায়াত ফাঁটা ফাঁটা চোখে তাকিয়ে আফিমের দিকে তাকিয়ে। আফিমও বড় বড় চোখে ইনায়াতের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,,

– প্যায়ার আর এই মেয়েকে?? ননসেন্স!!
একটা শুকনো ঢোক গিললো আফিম।
ইনায়াত আর আফিমের সুর একই,, ছন্দ একই?? কিন্তু পথ?? পথ কি একই নাকি ভিন্ন?? গল্পের আগে আগে জানা যাবে। তাহজিব হোক বা আফিম যার ভালোবাসায় জোড় থাকবে সেই পাবে ইনায়াতকে।
আজকে আফিমের জন্মদিন। দেখতে দেখতে দুইদিন কেটে গেছে। সময় আসলেই খুব চঞ্চল। তাই কোনদিকে যে কেটে যায় বুঝে উঠা যায় না। গতকাল রাত থেকে ইনায়াত এখানে। পুরো ঘর সাজানো,,, ইনভিটেশন কার্ড ঠিকানা মতো পাঠিয়ে দেওয়া,,, কেক থেকে শুরু করে সবটাই সে নিজে তদারকি করছে। অন্যান্য বার জোসেফ সবটা তদারকি করে,, এবার ইনায়াত করছে।

অবশ্য আফিম এসবের কিছুই জানেনা। জন্মদিন নিয়ে মাতামাতি তার ভালো লাগে না। তাই সে ঘুমিয়ে আছে। কেননা আজকে অফিস বন্ধ দিয়েছে জোসেফ সাহেব। লাবিবা ছেলের জন্য নিজ হাতে রান্নাবান্না করছে আর আফরা সাজগোজ করছে। আপাতত ছোট্ট একটা কেক বানিয়েছে সে প্রতিবছরের মতো। তাই দিয়ে সবার আগে উইশ করবে আফিমকে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে আফরা আনমনা হয়ে গেলো। ভেসে উঠলো খুব প্রিয় একটি মুখ। যে মানুষটার সাথে তার দেখা হয়েছে শুধু কিছু সেকেন্ডের জন্য রাস্তায়। সব ভাবনা ঝেড়ে আবারও সাজগোজে মন দিলো। জোসেফ বের হয়েছে কিছু কাজে।
ইনায়াত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব তদারকি করছে। তখনই আফরা কেক নিয়ে এলো ইনায়াতের কাছে। ইনায়াতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

– ভাবী,, চলো। ভাইয়ার আছে যাই।
– আবারও ভাবী আফরা আপু?? আমার তো এখনো এইচএসসির রেজাল্ট দেয়নি। কতো বাচ্চা একটা মেয়ে। আর আমাকেই কিনা তোমার জ্বালাতে হবে।
– অলেলে আমার কিউট ভাবীটা। প্রথম দেখে যখন ভাবী ডেকেছি তখন সারাজীবন ওটাই ডাকবো। এবার চলো তো।
আফরা হাতে কেক নিয়ে হেসে আগাচ্ছিলো। পিছনে ইনায়াত আসছিলো। আফিমের ঘরের কাছে এসে আফরা চিৎকার করে উঠলো মৃদু স্বরে।
– ওহ শিট!! আমি ক্যান্ডেলস ভুলে গেছি।
আফরা দ্রুত ইনায়াতের হাতে কেক ধরিয়ে দিয়ে বললো,,

– তুমি যাও না ভাবী। আমি আসছি ক্যান্ডেলস নিয়ে।
আফরা দৌড়ে চলে গেলো। নিচে গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বেঁধে দিলো।
– তোমাদের এক করতে গিয়ে আমাকে আর কি কি করতে হবে ভাবী ও ভাইয়া!!
কাঁথা মুড়ি দিয়ে আবারও ঘুম দিলো আফরা সাজগোজ নিয়েই।

ইনায়াত কেকটা নিয়েই বোকার মতো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। এরপর কি করবে ভেবে না পেয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আফিমের রুমে। আফিম ফ্রেশ হয়ে টাওয়েল পড়ে মাথা মুছতে মুছতে সবে বের হয়েছিলো। তখনই চোখের সামনে ইনায়াতকে দেখে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে এলো। ইনায়াত মেয়ে এটা জানবার পর ইনায়াতের কাছে সে তেমন থাকে না। ইনায়াতকে নিজের জিনিসপত্র ছুঁতে দেয় না,, খেয়াল রাখতে দেয় না। ইনায়াতকে দেখলেও তার বিরক্ত লাগে খুব। এখন আবার সকাল সকাল কেক হাতে ইনায়াতের রিমে আসা আফিমের আদিখ্যেতা মনে হলো। আফিম হাতের টাওয়েলটা ছুড়ে মারলো খাটে। স্বভাববশতই ইনায়াত দ্রুত কেকটা টেবিলে রেখে ভেজা টাওয়েল তুলে নিতে গেলেই আফিমের মাথার রাগ অত্যন্ত বেড়ে গেলো। আফিম ইনায়াতের হাতের বাহু চেপে ধরে টেনে নিজের আছে আনলো।

– হোয়াট?? কি চাও তুমি?? টাকা পয়সা?? নাকি অন্যকিছু লাগবে?? কি চাও তুমি??
ইনায়াত কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। হা করে তাকিয়ে রইলো।
– স্যার!! আর ইউ অলরাইট?? কি বলছেন আপনি??
– আমি ঠিক আছি। বাট তুমি ঠিক নেই। কেন ঘুরঘুর করছো আমার সামনে?? কি ভাবছো তুমি?? আমার মনে জায়গা করে নেবে?? আমার আম্মু,, আর দুই বোন ছাড়া কোন মেয়ে আমার মাঝে জায়গা করতে পারবে না। আন্ডারস্ট্যান্ড?? তুমি কি ভেবেছো?? আমি বুঝি না তোমাদের মতো চিপ ক্লাস মেয়েদের কাজগুলো?? অনেক ভালোই বুঝি। নিশ্চয় এভাবেই করে ঐ তাহজিব নাকি কি নাম,, ঐ ছেলেকে বশ করেছো তুমি। তাইতো পিছে ঘুরছে। এখন আর ঐ ছেলেকে মনে ধরছে না বলে পালাচ্ছো। ভালোই জানি তোমাদের মতো মেয়েদেরকে।

ইনায়াত চোখ বন্ধ করে নিলো ব্যাথায়,, অপমানে আর লজ্জায়। একটা মেয়ের কাছে সব থেকে বেশি মূল্যবান তার ইজ্জত আর সম্মান। আফিম ইনায়াতকে চোখ বন্ধ করে শান্ত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইনায়াতের বাহু আরো খামচে ধরলো। একপর্যায়ে ছুড়ে দিলো ইনায়াতকে। ইনায়াত মাটিতে পড়েও শান্ত হয়ে কিছু সেকেন্ড বসে রইলো।
– ঐ!! শেষ?? নাকি ন্যাকা কান্নার নাটক এখনো স্টার্ট করোনি?? আর্লি শেষ করো আর যাও এখান থেকে। তোমার মুখ আমি দেখতে চাইনা। বুঝেছ?? তোমার মতো চিপ মেয়েরা আমার সাথে একটা সম্পর্কই রাখে আর তা হলো আমাকে খুশী করা। গেট আউট!!
ইনায়াত ধীর পায়ে উঠে দাঁড়ালো। নিজের মাথা নিচু রেখেই বললো,,

– শুভ জন্মদিন স্যার!!
এতোকিছু বলবার পরেও ইনায়াত শুভেচ্ছা জানাচ্ছে বিষয়টা যেন হজম হচ্ছে না আফিমের। ইনায়াতকে ডেকে কিছু বলতে যাবে ততোক্ষনে মাথা নিচু রেখেই চলে গেলো ইনায়াত নিচে। ইনায়াত নিচে আসতেই দেখলো লাবিবা জোসেফের সাথে কথা বলছে। ইনায়াত সেদিকে এগিয়ে গেলো।
– স্যার!! আমার একটু ছুটি লাগবে।
ইনায়াতের হঠাৎ এমন কথা শুনে চমকে উঠলো লাবিবা আর জোসেফ।
– স্যার মানে?? আংকেল থেকে স্যার কবে হলাম??
– না মানে,, অফিসের কথা বলছি তো। তাই আর কি!!
– এটা কোন কথা হলো?? কয়দিনের ছুটি লাগবে নিয়ে নে।
ইনায়াত উত্তরে মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ বের হয়ে এলো দরজা দিয়ে। জোসেফ আর লাবিবা হা হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো। তখনই হাতে কেক নিয়ে আফিম রাগে ফোসফোস করতে করতে নেমে এলো। কেকটা এনে ধুপ করে টেবিলের উপর রাখলো। তা দেখেও অবাক হলো জোসেফ আর লাবিবা।

– কি হলো আফিম?? তোর মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন??
জোসেফ জানতে চাইলো। লাবিবা কেকের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো,,
– ওমা!! আফরা আর তুই কেক কাটিসনি?? আমি তো ভাবলাম কেক কাটা হয়ে গেছে তাই ইনায়াত চলে গেছে। মেয়েটা এতোকিছু করলো আর মেয়েটাকে আটকাতে পারলিনা??
আফিম অবাক জোসেফ আর লাবিবার দিকে তাকিয়ে আছে।
– আমি কিছু বুঝলাম না!! এইবছরও কি আফরা কেক বানিয়েছে??
– হ্যাঁ তো!! ও তো ইনায়াতের সাথে তোর রুমের দিকে গেছিলো। কোথায় ও??
আফিমের মুখ হা হয়ে গেলো। ও ভেবেছিলো কেক ইনায়াত বানিয়েছে। মাথাতেই আসেনি যে কেক আর কেও না প্রতি বছরের মতো আফরা বানিয়েছে।
– ওহ শিট!!
আফিম মাথা চেপে বসে পড়লো ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টেনে।

তাহজিব খাটে আধশোয়া হয়ে কফির কাপে শেষ চুমুক দিলো। সে নিজের রুমে বসে আছে এখন । সবে মাত্র কানে হেডফোন গুঁজে মাথা এলিয়ে দিলো চোখ বন্ধ করে তাহজিব। গান ছাড়তে যাবে তখনই ব্যালকনিতে কিছু একটা আওয়াজ হলো। ভ্রু কুঁচকে এলো তাহজিবের। কান খাড়া করে রইলো। ব্যালকনি বেয়ে কারোর হাত উঠছে। তাহজিবের চোখ ছোট ছোট হয়ে এলো। তবে এমন ভাণ করলো যেন তার চোখ যায়নি ব্যালকনির দিকে। ব্যালকনি টপকে একটা কেও ভিতরে ঢুকলো। এরপর পা টিপে টিপে রুমের ভেতর এলো একটা ১৫/১৬ বছর বয়সি মেয়ে। পড়নে একটা কালো ফুলহাতা টিশার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স। চুলগুলো পনিটেইল করে উঁচু করে বাঁধা। ফর্সা গায়ের রঙ,, হালকা সবুজ চোখের মণি,, ঠোঁটের উপর ছোট্ট একটা তিল। দেখতে জ্যান্ত পুতুল মনে হচ্ছে মেয়েটাকে। খুব বেশি হলে হয়তো ক্লাস টেনের স্টুডেন্ট হবে বুঝা যায়। মেয়েটাকে দেখেই তাহজিব চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভাণ করলো। মেয়েটা তাহজিবের কাছে এগিয়ে এসে হালকা ঝুঁকে দেখলো তাহজিব ঘুম কিনা।

– যাক বাবা!! ভাগ্য আজকে অনেক ভালো। প্রতিদিন ভোরেই যা একটু ঘুমাও দুই এক ঘন্টার জন্য। বেশিক্ষন থাকতেও পারিনা। গত ৩ দিন তো আসতেও পারিনি জ্বর ছিলো বলে। বাই দা সমুদ্র,, আমাকে মিস করেছো তুমি?? অবশ্য করবে কিভাবে?? তোমার লাইফের ভেতর যে একটা পিচ্চি জোড়পূর্বক প্রবেশ করে ফেলেছে তা তুমিও জানোনা। ধ্যাত!! আব্বু কেন যে তোমাকে এতো ভয় পায়!! আর তোমার রাগটাও একটু বেশি। নাহয় কোন একদিন সামনে টপকে পড়তাম।
কথা বলতে বলতে মেয়েটা খাটে উঠে তাহজিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। তাহজিবের অনেক আরাম লাগলো। কিন্তু মেয়েটার কথা শুনে অবাকের চূড়ান্তে পৌছে গেছে সে। এই মেয়ে কি বলছে এসব?? তার মানে কি এই মেয়ে প্রায়ই আসে তাহজিবের রুমে তাহজিব ঘুম থাকা অবস্থায়?? আর মেয়েটার বাবাই কে??

– জানো!! ঐদিন না তোমার এখানে এসেছিলাম জ্বর শরীর নিয়ে। আসার সময় প্রতিবারের মতো ধমকধামক দিয়ে এক কন্সটেবলকে এনেছি। কিন্তু আমি না এখানে উঠবার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেছি গো। গত ৩ টা রাত তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোও হয়নি। পাক্কা দুই সপ্তাহের অভ্যেস তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানো। এর মধ্যে অনেক দিন বাইরে ছিলে,, অনেকদিন ঘুমাওনি। কিন্তু আমি এসেছি। আমার কাজের প্রতি আমি অনেক সিরিয়াস। আফটার অল পুলিশ কমিশনারের মেয়ে বলে কথা। আচ্ছা জামাই!! তুমি এত্তো সুন্দর আর কিউট কেন?? আমার পড়তে বসলে,, গিটার বা আর্টের ক্লাসে গেলে মাথায় চিন্তা ঘুরে তোমাকে নিয়ে। আচ্ছা!!

ইনায়াত আপু কি ফিরে আসবে?? তাহলে তো তুমি উনাকে বিয়ে করে ফেলবে!! আমার কথা তুমি জানো না,, জানবেও না। কি সুন্দর ব্যাপার না!! জেনে শুনে কাওকে কষ্ট দিলে পাপ হয়। তুমি তো আর জানো না আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই আমি কষ্ট পেলেও তোমার পাপ হবে না। বুঝলে জামাই!! আর আমার কি?? আব্বু তো বলে,, ” রুহি!! ঔষধ খা!! নাহলে তুই হারিয়ে যাবি!! “। আমি তাই তো ঔষধ খাইনা। যাতে করে আমার রোগটা আমাকে মেরে ফেলে। তাহলে গল্পের শেষে হ্যাপি এন্ডিং হবে। তাই না জামাই??
মেয়েটা নিজের মতো করে কথা বলেই যাচ্ছে। তাহজিবের হাত দুটো সড়িয়ে বুকে জায়গা করে নিয়ে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটা চুপ করে। মেয়েটা শুয়ে পড়তেই তাহজিব ধপ করে চোখ খুললো।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ৮+৯

– পুলিশ কমিশনার আরভিদ খানের মেয়ে রুহি খান?? মেয়েটা সামনের বছর এস.এস.সি দেবে না?? হ্যাঁ,, আরভিদ সাহেব তো বলেছিলো সেদিন। উনার মেয়ে এতো ধানি লঙ্কা তা তো বলেনি। কি বলে দুই সপ্তাহ আমার ঘরে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়েছে?? আর কি রোগের কথাও বললো মনে হয়!! কি রোগ আছে মেয়েটার??
মনে মনে নিজেকে নিজে বললো এসব তাহজিব। হঠাৎই তাহজিব বুঝলো রুহির গা গরম আর ভারী নিঃশ্বাস পড়ছে। অর্থাৎ রুহি ঘুমিয়ে পড়েছে আর জ্বরও এসছে আবার। তাহজিব ধীরে ধীরে সড়ে উঠে পড়লো। রুহির দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে পুলিশ কমিশনার আরভিদ খানকে কল লাগালো। ফোন রিসিভ হতেই অপরপাশ থেকে আরভিদ বলে উঠলো,,

– হ্যালো স্যার!! কিছু বলবেন স্যার?? কিছু লাগবে আপনার??
– না শ্বশুরমশাই!!
দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে জবাব দিলো তাহজিব। আরভিদ সাহেব যেন আকাশ থেকে পড়লেন!!
– এঁহ স্যার!!
– আপনার মেয়ে কোথায় আরভিদ সাহেব??
– কেন স্যার!! স্কুলে!! এতো সকালে স্কুলেই তো যায় বাচ্চারা।
– অহ!! তা স্কুল কি আমার ঘরে??
– আমি বুঝলাম না স্যার??

তাহজিব সবটা খুলে বললো আরভিদ সাহেবকে। আরভিদ সাহেব ঘাবড়ে গেলেন।
– স,,স্যার!! আ,আ,,আমি আ,স,ছি স্যার,,, বা,,বাচ্চা মেয়ে। ভুল করে ফেলেছে মাফ করে দিন। মা মরা মেয়ে স্যার!! এমনিও বেশি দিন বাঁচবে না। ওকে মারবেন না স্যার!! আমি এক্ষুনি আসছি।
আরভিদ সাহেব ফোন কেঁটে থানা ছেড়ে গাড়িতে উঠলেন তাহজিবের বাসার উদ্দেশ্যে। আর তাহজিব ফোন সেভাবেই কানে ধরে ভাবছে আরভিদের বলা কথাগুলো।
সরি কারেন্ট ছিলো না,,, তাই লেইট হলো গল্প দিতে। জ্বর,, দুর্বলতা আছেই। তবুও চিন্তা নেই। গল্প মিস যাবে না। দিতে একটু লেইট হতে পারে।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১২+১৩