তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১০

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১০
সুরাইয়া আয়াত

‘হু ইউ অশান্তি আফুসোনা? ‘
কথাটা বলতে বলতে আয়াশ ঘরের ভিতর ঢুকলো, আয়াশের এমন প্রশ্নে নূরের নিজেরই খানিকটা মতিভ্রম হলো। কয়েক সেকেন্ড এর জন্য বুঝে উঠতে পারলো না যে কি বলা উচিত তার। এই অশান্তি নিজেকেই এতো সুন্দর ভাবে খুঁজছে তাও মার খাওয়ার জন্য?

নূরের থেকে জবাব এলো না কোন, আয়াশ বলল,
‘হাতে যে ফুলদানি টা নিয়ে ছুঁড়ে মারার প্ল্যান করছো সেটা যেখান থেকে তুলেছো সেখানেই রেখে দাও। ওটা ভাঙলে তোমার খবর আছে! ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই অশান্তি কি তাকে হুমকি দিচ্ছে? মনে মনে ভাবলো যে কি এমন হয়ে যাবে এটা ভাঙলে। আহামরি তো কিছু নয়। সে মনস্থির করলো যে এটা সে ভেঙেই ছাড়বে তবে তার আগে বলল,
‘ হিরে যহরত দিয়ে তো বানানো নয়, এখন আমার ভীষন রাগ লাগছে, আপনি আর কিছু বলতে আসবেন না আমাকে। ‘
আয়াশ নূরের কোনরূপ রাগের তোয়াক্কা না করে বলল,
‘ ওটা আমার মা নিজের হাতে বানিয়েছেন। তাই ভালোই ভালোই বলছি সেটা রেখে দাও। নাহলে তোমার জীবনে অমাবস্যা-পূর্ণিমা সবকিছু নামিয়ে আনার দায়িত্ব আমার। ‘

নূর আর দ্বিতীয় বার কিছু ভাবলো না, সুড়সুড় করে ফুলদানি টা গিয়ে টেবিলের ওপর রাখতে গেল, তবে রাখার আগে ফুলদানি টা বেশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো, মাটি দিয়ে তৈরি, তাতে খুবই সূক্ষ আর নিখুঁত কারুকার্য। এটা দেখলে কোন সাধারন মানুষের কাজ বলে মনে হবে না, এই কাজে খুবই পারদর্শী না হলে কেউ এতো সুক্ষ কাজ করতে পারবে না।

নূর তা রেখে দিল। এই ফুলদানিটা এক কথায় চমকপ্রদ, রঙ বিন্দু মাত্র নষ্ট হয়নি আর কারুকার্য এতো নিখুঁত যে চোখে ধরার মতো, কই এতদিন তো এটা তার চোখে পড়েনি। কেন পড়েনি? তাহলে প্রতিটা ডিজাইন খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতো সে।
এখন এই ফুলদানি আর কিছুক্ষণ আগে পাওয়া সেই চিঠি, এই দুটি নূরের মধ্যে কৌতুহল জাগিয়ে দিল আয়াশের মায়ের সম্পর্কে জানার।

তবে আয়াশকে সে ভ্রুনাক্ষরেও জিজ্ঞাসা করবে না কারন সে তো আয়াশের ওপর রাগ করেছে।
নূর পুনরায় জামা কাপড় গোছাতে শুরু করলো, ওয়াড্রবের পুরো একটা দিক খালি করে সে নিজের জামাকাপড় রেখেছে, আয়াশ দেখেও কিছু বলেনি।
নূর খেয়াল করলো আয়াশ ওয়াশরুম থেকে ফিরে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো, নূরের অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো। মনে মনে প্রশ্ন করতে লাগল, ‘এই অশান্তির কি আমার জীবনে কলকাঠি করা ছাড়া অন্য কোন কাজ নেই? ‘

প্রায় আধা ঘন্টা ধরে সবকিছু গোছগাছ করার পর নূর নিজেও বিছানায় গা এলালো, আয়াশ অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে, তাদের মধ্যে প্রায় দুই হাত সমান দূরত্ব। নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তার জীবনটাও যে স্টার জলসার ধারাবাহিক সিরিয়াল গুলোর মতো নাটকীয় হয়ে যাবে তা কে জানতো। নূর চোখ বন্ধ করলো। আজ তার মা কে তার খুব মনে পড়ছে। আচ্ছা উনি কেমন দেখতে ছিলেন? ওনাকে হাসলে কেমন লাগতো? আর রাগলে?

এই বাসায় কথা বলার মতো নূরের কেউ নেই, বিকাল হলে মায়ার সাথে টুকিটাকি কথা বলে ফোন করে, আর বাসায় যতক্ষন রহিমা খালা কাজ করেন ততক্ষণ ওনার সাথে কথা বলেন। আয়াশের ভাইয়া ভাবীর ও কোন খোঁজ নেই। নূর বাসার সামনের বাগানটায় এসে হাটাচলা করতে লাগলো, সাওনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা সে মন থেকে মেনে নিতে পারছে না কোনমতে, আজ তিনদিন হলো সে আয়াশের আছে কথা বলছে না, আয়াশও তার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করছে না। মাঝে মাঝে তার চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাই তবুও কাঁদতে ইচ্ছা করে না। তক্ষনই মনে পড়ে যে কার জন্য কাঁদবে সে?

রহিমা খালাকে সেদিন কথা কথায় জিজ্ঞাসা করেছিলেন নূর, আয়াশের মায়ের সম্পর্কে, তবে তার থেকে খুবই কম কিছু কিন্তু ইনট্রেস্ট্রিং একটা জিনিস তিনি জানতে পারেন,
‘আয়াশের মা তিনি টেরাকোটা নিয়ে অনেক চর্চা করতেন,তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে। মৃৎশিল্পে পারদর্শী ছিলেন। তবে আয়াশের মা বাংলাদেশের কোন অঞ্চল থেকে বড়ো হয়েছিলেন? আয়াশের বাবা তিনি কখনোই তার এই আর্টকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পারমিশন দেননি। আর তিনি হিন্দুধর্মের ছিলেন, সেটাও জানলো নূর। ‘

নানাবিধ প্রশ্ন জাগছে নূরের মনে, তবে আয়াশকে জিজ্ঞাসা করলে আয়াশ কখনোই তাকে জবাব দেবে না।
নূর নীচ থেকে উপরের ঘরের দিকে তাকালো, কোনার দিকের ঘরটার জানালা সবসময়ই বন্ধ থাকে, ওই ঘরে আয়াশের বাবা থাকেন। কাল সন্ধ্যাবেলা নূর একবার সাহস দেখিয়ে ওনার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিল কারন আগের বার সম্ভবত উনি নূরকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন আর আয়াশ তাকে বলতে দেইনি।

তবে এবারও শেষ রক্ষা হয়নি। ওনার সাথে দেখা করার পূর্বেই কোথা থেকে আয়াশ এসে নূরকে টেনে নিয়ে চলে আসে, এবারের মতো সে আবারও অসফল হয়। ঘরে টেনে এনে আয়াশ তাকে কড়া ভাষায় জানিয়েছে সে যেন আর এমন দুঃসাহস না দেখায়। নূর বুঝে উঠতে পারে না কি এমন হয়ে যাবে তার বাবার সাথে দেখা করলে, তিনি তো সে বাড়িরই একজন। এই গোটা পরিবার একটা গোলক ধাঁধার মতো, এই পরিবারের স্বল্প সংখ্যক মানুষগুলোকে নূর বুঝে উঠতে পারে না কোনমতে।

আর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যার আযান দেবে। রহিমা খালা একটু পর আসবেন এসে রাতের খাবার বানিয়ে আর বাকি কাজ সেরে চলে যাবেন। নূর এদিক ওদিক হাটতে লাগলো, আজকাল সে খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারে তার যাওয়ার জায়গাটা খুবই সিমীত, দিনদিন তার আপনজনের পরিধি কমে আসছে, এই যেমন এই বাসায় তার হাটা চলার জায়গাটাও সিমীত, বাসার গেট থেকে ঘর অবধি। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো নূর। সাথে সাথে কল এলো তার ফোনে। ফোনের স্ক্রিনে বাবা নাম ভেসে আসছে। নূর আর কিছু না ভেবে ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে আরাফাত সাহেব বললেন,

‘কাজ হয়েছে? ‘
নূর রেগে গিয়ে জবাব দিল,
‘তুমি আমাকে আর ফোন করবে না। আর তুমি যা চাও আমি তা কখনোই করবো না। ‘
আরাফাত সাহেব রেগে বললেন,
‘ভুলে যাস না আমি তোর বাবা। ‘
‘বাবা? নিজেকে কিভাবে বাবা হিসাবে দাবী করো তুমি? যে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে নিজেকে বাবা বলে দাবী করে সে কখনোই বাবা হতে পারে না। ‘

‘মনে নেই কি বলেছিলাম আমি? আমার কাজ সম্পূর্ণ করে দিলেই তোর মা কে তুই পেয়ে যাবি। তো তুই কি করবি দেখ। তোর মা নাকি বাকি সব। যে মা কে পাওয়ার জন্য তুই দিনের পর দিন ছটফট করেছিস, সেই মা। ‘
নূরের চোখ ছলছল করে উঠলো নিমেষেই, বেশ চিৎকার দিয়ে বলল,
‘আমি বিশ্বাস করি না তোমার কথা, তুমি একটা মিথ্যাবাদী। তুমি আমার মা কে এতো বছর আমার থেকে দূরের সরিয়ে রেখেছো। ‘

কথাটা বলে নূর ফুঁপিয়ে কে্ঁদে উঠলো,
নূরের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে উনি বলে উঠলেন,
‘কথা বলবি তোর মায়ের সাথে? তুই চাইলেই কিন্তু তোর মায়ের সাথে কথা বলা সম্ভব। ‘
নূর এবার কঠিন স্বরে বলল,

‘আমি দেখা করতে চাই। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না। তুমি তোমার নিজের কার্য সিদ্ধির জন্য যা কিছু করতে পারো। ‘
আরাফাত সাহেব একটু ভাবুক হয়ে বললেন,
‘সেটা তখনই সম্ভব যখন তুই আমাকে ঠিকঠাক খবর জোগাড় করে দিতে পারবি। ‘
নূর চোখ মুছে বলল,

‘আমি ওনার সাথে দেখা করতে গেছিলাম, কিন্তু দেখা হয়নি। ‘
‘কেন? দেখা হয়নি মানে টা কি? উনি তো আর ব্যারিস্টার নয় যে দেখা করার জন্য এপয়েন্টমেন্ট লাগবে। একই বাসায় থেকে এখন আমাকে কাহিনী শোনানো হচ্ছে? ‘
‘কাহিনী যদি আমি তোমার মতো বানাতে জানতাম। তুমি আমার মা কে জিবীত রেখেও মরে দিয়েছো তাহলে বলো কাহিনী টা কে ভালো বানায়? ‘

আরাফাত সাহেব রাগে ফুঁসতে থাকলেন কেবল, কোন কথা বললেন না। নূর সত্যিটা ওনার থেকে লুকিয়ে গেল, নূর বলল,
‘আমি ওনার সাথে দেখা করতে গেছিলাম কিন্তু উনি বাসায় ছিলেন না, এমনকি এখনও বাসাতে নেই। ‘
‘কোথায় আছে মেহেরব? সে অসুস্থ অবস্থায় বাসা ছেড়ে যাবে কোথায়? ‘
‘উনি বেশিই পাগলামো করছিলেন পরশু তাই ওনাকে হসপিটালে রেখে এসেছেন বাসার সবাই মিলে। ‘
আরাফাত রেগে বললেন,

‘আমি কিছু শুনতে চাই না, যে করেই হোক কাগজটা আমার চাই, এনি হাও। ‘
আর কোন কথা না শুনে উনি ফোনটা কেটে দিলেন। নূর স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো। সে ওনাকে বলতে চাইনি যে আয়াশ তাকে ওনার আছে দেখা করতে দিতে চাইনি নতুবা তিনি আরও কিছু সন্দেহ করে আয়াশের ওপর নজরদারি শুরু করার কথা বলতেন তখন নূরকে সর্বদা আয়াশের সাথে থাকতে হতো, নূর তা কিছুতেই চাই না, সে যেচে বারবার নিজের জীবনে অশান্তি কে আহ্বান করতে চাই না।

তবে নূরের কাছে এখন সবটাই স্পষ্ট যে তার বাবা কেন আয়াশের সাথে তার বিয়ে দিয়েছে আর কেনই বা আয়াশের সাথে এতো ভালো ব্যাবহার করেন। সত্যি বলতে উনি একজন নীচ মনের মানুষ তা উনি বারবার নূরের সামনে তার প্রমাণ দিয়েছেন। নূর ফোনটা রেখে বাসার দিকে যেতে নিল তখনই পিছন থেকে শুনতে পেলো,
‘হেই আফুসোনা, এবার তোমাকে আমার থেকে কে বাঁচাবে? ‘
নূর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আয়াশ, তার হাতে দুটো কাগজ। সে ভ্রু কুঁচকে তাকালো,

‘মানে? ‘
‘মানের মানে মধুচন্দ্রিমা। ‘
নূর কথা বুঝতে পেরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,
‘নাহ। ‘
আয়াশও মুচকি হেসে বলল,
‘হ্যাঁ। ‘

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৯

গল্পটাতে অনেক সাসপেন্স আছে। আসলে যেটা ভাববেন সেটা তো হবেই আর তার সাথে আরও অনেক কিছুই হবে যেগুলো জানলে অবাক টবাক লাগবে আর কি😇

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১১