তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১১

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১১
সুরাইয়া আয়াত

‘আপনি ঠিক কি মতলবে এই চক্রান্তটা করলেন বলতে পারেন? ‘
আয়াশ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
‘চক্রান্ত মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই আফুসোনা। ‘
নূর ঝাড়ি দিল,
‘বুঝতে পারছেন না নাকি বোঝার চেষ্টা করছেন না কোনটা বলুন তো। ‘
আয়াশ না বোঝার ভান করে বলল,
‘ কোনটা বোঝাতে চাইছো বলতো। ‘

‘আপনি আমাদের হানিমুনের প্ল্যান করলেন কেন সেটা বলতে পারবেন? আপনার আর আমার মাঝে তেমন কোন সম্পর্ক নেই যে হানিমুন যাবো। ‘
আয়াশ এবার পুরো শার্টটা খুলে নূরের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, আয়াশের শরীর থেকে এক অদ্ভুত সুবাস তার নাকে ভেসে আসছে, বড্ড আকর্ষণীয় সেই স্মেল। নূর নিজেই খানিকটা পিছিয়ে বলল,
‘মেইনটেইন ডিসটেন্স। ‘
‘আমরা কি লকডাউনে আছি? ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘বলতে পারেন। তবে এই লকডাউন কেবল আমার আর আপনার মাঝের। এবার বলুন টিকিট কেটে আনলেন কেন? আপনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন একবারও যে আমি যেতে চায় কি না। ‘
আয়াশ নিজেও এক পা পিছিয়ে গেল তবে নিস্তব্ধ। তাকে কোন উত্তর দিতে না দেখে নূর বলল,
‘আপনি চুপ করে আছেন কেন? কিছু জিজ্ঞাসা করেছি আমি আপনাকে! ‘

আয়াশ এখনও চুপ হয়ে আছে দেখে নূর ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না বিষয়টা। এবার ঝাড়ি দেওয়ার মতো করে বলল,
‘কি হল চুপ করে আছেন যে? কিছু জিজ্ঞাসা করলাম যে আপনাক। ‘
আয়াশ ইশারা করে কিছু বোঝাতে চাইলো তাকে, তবে নূর বুঝতে না পেরে আরও খানিকটা রেগে বলল,
‘সমস্যা কি আপনার? কথা বলছেন না কেন? ‘
আয়াশ মুখ খুলে বলল,

‘ এক্ষুনি তো তুমি বললে আমাদের মাঝে লকডাউন চলছে, আমি আমার মুখ আর শরীর নিয়ে আপাতত কোয়ারেনটাইন এ আছি। কথা বলা নিষেধ। আমার ঘরে আমি একাই লকডাউন পালন করবো। তুমি দেখো অন্য কোন ঘর ফাঁকা আছে কি না। ‘
নূর বিছানার ওপর থেকে বালিশ নিয়ে ছুঁড়ে ফেলল আয়াশের দিকে।

‘আপনাকে কিছু বলায় ভুল। ‘
আয়াশ মুচকি হাসছে। আয়াশ হাসতে হাসতে নিজের ল্যাপটপ টা খুলে বসতেই নূর আবার রেগে গেল।
‘বলুন আপনি এসব কেন করছেন? ‘
আয়াশ কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল,
‘কোন সব আফুসোনা? ‘
‘কোন সব মানে! আপনি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছেন কেন? আমাদের মাঝে তেমন কোন সম্পর্কই নেই। তবে? ‘

আয়াশ ল্যাপটপটা বন্ধ করে, খুব ধীর পায়ে নূরের কাছে এগিয়ে গেল, নূরের ভ্রু কুঁচকে এলো। নূরের মুখের ওপর গড়িয়ে পড়া চুলগুলো আয়াশ অতি সযত্নে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বলল,
‘সম্পর্ক না থাকলেও সেই রকম সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যই তো এতো কিছু আফুসোনা। কেন তুমি খুশি না? ‘
নূর আয়াশকে সজোরে ধাক্কা দিতেই আয়াশ খানিকটা পিছনে সরে গেল।
‘কি হয়েছে আফুসোনা রেগে যাচ্ছ কেন? ‘

‘ দেশের বাইরে প্ল্যান করলেন কেন হঠাৎ? তাও আবার শান্তিনিকেতন। কেন ঘোরার জন্য সেখানেই কেন? ‘
‘কেন শান্তিনিকেতন খারাপ জায়গা নাকি যে যেতে আপত্তি করছো তুমি, তাছাড়া সেখান থেকে আমরা কলকাতা থেকেও ঘুরে আসবো। তাহলে সমস্যা কি? ‘
নূর বিড়বিড় করে বলল,
‘ সমস্যা তো আপনি নিজেই। আমার জীবনের একমাত্র অশান্তি ।’
নূর না যাওয়ার বাহানা করে বলল,

‘ সরি আমার পাসপোর্ট নেই। ‘
‘কিন্তু তোমার ভাবীকে বলে যে আমি কালকেই সন্ধাতে তোমার পাসপোর্ট আমার হাতে পৌঁছে গেছে। আবার নতুন বানাবে নাকি? ‘
নূর থতমত খেয়ে গেল। রেগে বলল,
‘ইউ আর টু মাচ। আপনি সত্যিই একটা অশান্তি। ‘
কথাটা বলতে নূর চলে যেতে নিলেই আয়াশ বলল,
‘হেই আফুসোনা বললে না তো হু ইজ অশান্তি। আমিও তাকে দেখতাম। আমার আফুসোনার একমাত্র অশান্তি বলে কথা। ‘

ভাবী তুমি আমার পাসপোর্ট ওনাকে পাঠিয়েছো?
‘হ্যাঁ, আয়াশ ভাই বললেন যে তোমরা নাকি ইন্ডিয়া যাবে ঘুরতে তাই তো দিয়ে দিলাম। তাছাড়া ভাইয়া তোমার হাসবেন্ড তাই তোমাকে না জানিয়ে তাকে পাসপোর্ট দেওয়ার কথা দুইবার ভাবিনি। ‘
তাই বলে ভাবী তুমি ওনাকে দিয়ে দিবে আমাকে না জানিয়ে? ‘
নূরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে মায়া চুপ হয়ে গেল। অপরাধীর মতো স্বরে বলল,
‘ কেন কোন সমস্যা হয়েছে? আমি ভাবলাম ভাইয়ার এমন কাজে তুমি সারপ্রাইজ ই হবে তাই আমি আর ভাবিনি। সরি নূর আমি বুঝতে পারিনি তুমি রাগ করবে। ‘

মায়ার কথা শুনে নূরের মনে হলো যে তার মায়ার সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। নূর সামাল দিতে বলল,
‘না ভাবী তেমন কিছু হয়নি। তুমি মন খারাপ করো না। আমি এমনি বলছিলাম। এখন হঠাৎ এতো দূর ট্যুর এ যাবো তাই ভাবছিলাম আর কি। সেসব বাদ দাও। তোমার শরীর ঠিক আছে? ‘
‘হ্যাঁ শরীর ঠিক আছে। তোমার ভাইয়া পরশু চলে যাবে চিটাগাং। তুমি একটু আসবে। তোমার ভাইয়া দেখা করতে চাইছিল তোমার সাথে। ‘

‘আচ্ছা ভাবী আমি আসবো। ‘
‘আয়াশ ভাইয়াকেও নিয়ে এসো।’
‘নাহ ওই অশান্তির যাওয়ার দরকার নেই, আমি একাই যাবো। ‘
মায়া হাসলো, ‘ভাইয়া কি আজকাল বেশিই বিরক্ত করে নাকি? ‘
নূর লজ্জায় পড়ে গেল। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না, সে কোনভাবেই চাই না তাদের মাঝেকার এমন মনোমালিন্যর কথা কেউ জানুক, তাই নূর মায়াকে অবধি কিছুই জানায়নি।

‘নাহ তেমন কিছু না, এমনি বলছিলাম আর কি। আচ্ছা ভাবী তুমি রেস্ট নাও আমার একটু কাজ বাকি আছে আমি রাখছি। ‘
নূর ফোন কেটে দিল। কাল সে বাসায় যাবে আর তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করবে তার মা কোথায় আর কেনই বা উনি এতদিন তার মা কে লুকিয়ে রেখেছেন।

ফোনটা রেখে নূর পিছন ঘুরতেই দেখলো আয়াশ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে সবে গোসল করে বেরিয়েছে। তার মুখের ওপর কিছু চুল আছড়ে পড়ছে, তার শরীরে জলবিন্দু তার সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে তার এক মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে।
আয়াশ টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
নূর দৃষ্টি সরিয়ে চলে যেতে নিলেই আয়াশ তার পথ আটকালো, নূর অন্য দিক দিয়ে যেতে গেলেই সেদিক দিয়ে আয়াশ পথ আটকালো। নূর বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে বলল,

‘সমস্যা কি আপনার? বারবার আমার পথ আটকাচ্ছেন কেন? ‘
‘আমার বউ আমি পথ আটকাতেই পারি। ‘
‘ আমি আপনার বউ না। আর এভাবে কিছু না পরে আমার সামনে এসে দাঁড়াবেন না। ‘
‘কেন এভাবে দেখে কি আর নিজেকে সামলাতে পারো না? চোখ টিপ মেরে আয়াশ উত্তর দিল। নূর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ আপনার মুখে কি কিছু আটকায় না? যা নয় তাই বলে চলেছেন। সরুন সামনে থেকে। ‘
আয়াশ আর কিছু বললো না সরে গেল তার সামনে থেকে।
নূর যেতে যেতে থেমে গেল। আচমকা বলে উঠলো,

‘আমি ভার্সিটি যেতে চাই, আমার ক্লাস গুলো মিস হয়ে যাচ্ছে। ‘
আয়াশ বলল,
‘আমার ক্লাস গুলো আগে কমপ্লিট করো তারপর ভার্সিটির ক্লাস। ‘

আয়াশের কথা শুনে নূর আর কিছু বলল না, নূর চলে গেল নিরবে। আয়াশ তাকে এই মুহুর্তের জন্য সিরিয়াসলি নিল না। নূর জানে এই মুহূর্তে তার সাথে তর্ক করলে কাজের কাজ কিছুই হবে না উপরন্তু কথায় কথা বাড়বে। নূর নীচে গেল, সন্ধ্যা সাতটা বাজে, রহিমা খালা একা একা খাবার বানাচ্ছেন। নীচে যেতেই দেখলো আরাফাত সাহেব সোফাতে বসে আছেন একা, আর সামনে চায়ের কাপ আর মিষ্টি। ওনাকে দেখতেই নূরের শরীর জ্বালা দিয়ে উঠলো যেন। তবে মনে মনে আর এক ভয় পেলে যে এখন যদি উনি আয়াশের বাবার সাথে দেখা করতে চান আর নূর যে তাকে মিথ্যা বলেছেন তা খুব সহজেই প্রমাণ হয়ে যাবে। তখন ওর মায়ের সাথে দেখা করার আর কোন সুযোগ থাকবে না তার কাছে।

কথাটা ভেবে নূর ভাবলো সে আয়াশকে গিয়ে সবটা বলবে, এমনিতেও পরে যদি আয়াশ এসবের জানতে পারে তখন এক কুরুক্ষেত্র বাধাবে সে তা নূর আর বুঝতে বাকি রাখে না, এতদিনে আয়াশকে এটুকু চিনেছে সে।
নূর দ্রুত তার ঘরের দিকে যেতে গেল তখনই আরাফাত সাহেব মিষ্টি স্বরে ডেকে উঠলেন,
‘ এই তো আমার নূর মা চলে এসেছে। ‘

নূর ধীর পায়ে নীচে নামলো। রহিমা খালা খুব তোড়জোড় সহকারে খাবার বানাচ্ছেন। নূর গিয়ে ওনাকে বলল,
‘তুমি কেন এখানে এসেছো? ‘
‘আমার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি আর আমি আসতে পারি না বুঝি আমার মেয়েকে দেখতে? ‘
নূর বুঝে উঠতে পারলো না উনি এমন কেন করছেন, খানিকটা জোর গলায় বলল,
‘আমি তোমাকে আমার বাবা মানি না। ‘

তার এই কথাটা শোনার পরপরই আয়াশের দাদীমা বললেন,
‘তুমি আর শোধরালে না, নিজের বাপের সাথেও এমন ব্যাবহার করো তাহলে আমারাই বা ভালো ব্যাবহারের আশা রাখি কি করে। ‘

আচমকা আয়াশের দাদীমাকে দেখে নূর চমকে গেল। উনি না বলেছিলেন যে এই বাসায় আর কক্ষনো আসবেন না, তাহলে? নূরের ভ্রু কুঁচকে এলো, কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। উনি আরাফাত সাহেব কে বললেন,
‘আপনার মেয়ের বড্ড কথা, এসেই আমার নাতিকে বশ করে ফেলেছে একদম। ‘
নূর তার বাবার পতিক্রিয়া দেখার জন্য ওনার দিক তাকাল, ওনাকে দেখে মনে হলো না একবারও যে উনি এসব কথা বিশেষ কিছু গায়ে মাখছেন, উনি এসেছেন ওনার ধান্দায়। নূরকে যাচাই করার জন্য উনি দেখতে এসেছেন মেহেরব সাহেব বাসায় আছেন কি।

আয়াশ নীচে নেমে এলো,
‘আঙ্কেল কেমন আছেন? ‘
‘এই তো বাবা ভালো। তার বাবার সাথে অনেক বছর দেখা হয়না, তাছাড়া ও অসুস্থ তাই রংপুর থেকে ফেরার পথে ভাবলাম দেখা করে যায়।
আয়াশ বলল,

‘আপনার দুর্ভাগ্য কি জানি না, বাট বাবা তো বাসায় নেই। বাবা একটু বাইরে আছে। ‘
নূর হয়তো এমন শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না, সে নিজেও হয়তো বিশ্বাস করে উঠতে পারলো না, খানিকটা কেঁপে উঠলো সে। আয়াশের মুখের দিকে থমথমে দৃষ্টিতে চেয়ে সেও তাল মিলিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ, বাবা তোমাকে বলেছিলাম তো যে উনি বাসায় নেই। ‘
আয়াশ বলল,

‘আঙ্কেল আপনি রাতে ডিনার না করে যাবেন না। আফুসোনা একটু রুমে আসো তো আমার শার্ট টা খুঁজে পাচ্ছি না, খুঁজে দাও তো। ‘
নূর আর কথা বাড়ালো না, আয়াশের পিছুপিছু গেল, সে যাওয়া মাত্রই আয়াশের দাদীমা নূরের বাবাকে বললেন,

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১০

‘ আপনার মেয়ে বড্ড অবাধ্য। তাছাড়া গহনা গাটিও তো দিয়ে পাঠাননি। ‘
এই বলে নূরের নামের গীবত গাইতে শুরু করলেন তিনি, আরাফাত সাহেব ও শুনতে লাগলেন যদিও এতে ওনার যায় আসে না।

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১২