তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১২

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১২
সুরাইয়া আয়াত

আরাফাত সাহেব চলে গেছেন। আয়াশ খাটে হেলান দিয়ে ফোন দেখছে। নূর জামা কাপড় ভাজ করছে একে একে। মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো
‘আয়াশ কি কোনভাবে আরাফাত সাহেবের কারসাজি জানতে পেরেছে? নাহলে নূর মিথ্যা অনুমান করে যে কথাটা বলেছিল তা সঠিক মুহূর্তে এতোটা সত্য হিসাবে কিভাবে বেরিয়ে আসে। ‘

নূরের আসল কথাটা জানা দরকার। নূর আমতা আমতা করে জিজ্ঞাসা করলো,
‘আচ্ছা আপনার বাবা এখন কোথায়? ‘
আয়াশ ফোনে মনোযোগ দিয়ে বললেন,
‘কেন? ‘
‘না মানে এমনিই, আপনি তো বাবার সামনে বললে যে উনি বাসাতে নেই তাই জিজ্ঞাসা করছিলাম। ‘
‘হুম বলে তো ছিলাম। ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটা বলে আয়াশ পুনরায় নিস্তব্ধ। আয়াশ কি কোনভাবে তাকে কথাটা বলতে চাইছে না? তাই কি তার এই নিরবতা, নতুবা আয়াশ তো চুপ থাকার মানুষ না।
নূর কন্ঠে খাদ নামিয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো,
‘উনি ঠিক কোথায় গেছেন? ‘
‘বাবাকে আমি হসপিটালে রেখে এসেছি। ট্রিটমেন্ট চলছে। ‘

নূর খানিকটা অবাক হলো, এ তো তার কথার সাথে হুবহু মিলে গেল। তাহলে কি আয়াশ কোনভাবে সবটা জানতে পেরেছে তাই তাকে এখন মতিভ্রম করার চেষ্টা করছে?
নূর ভাবলো তাদের দুজনের মাঝের সম্পর্কটা আর পাঁচটা হাজব্যান্ড ওয়াইফের মতো না হলেও আয়াশকে তার সবটা জানানো উচিত কারন এর মধ্যে আয়াশের বাবা জড়িয়ে আছেন। পরে আয়াশ জানতে পারলে যদি বড়ো কোন ঝামেলা হয়। নূর ভাবলো সে এক্ষনই সবটা জানিয়ে দেবে, পরক্ষণে মনে হলো সে সত্যিই যদি আয়াশ কিছু না জানে আর কোয়েনসিডেন্টালি যদি সবটা মিলে যায়।

নূর জানাবে কি জানাবে না তা ভাবতে ভাবতেই আয়াশের দাদীমা এলেন,উনি আসতেই নূরের মুখ চুন হয়ে গেল, কারন উনি যা বলেন তা বলতে দুইবার ভাবেন না।
উনি এসে আয়াশকে বললেন,
‘দাদুভাই আমি তোর বউরে নিতে আইসি। ‘
কথাটা শুনে আয়াশ আর নূর একে অপরের দিকে তাকালো। নূর ওনাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

‘কিন্তু আমি তো কালকে আমার বাসায় যাবো। ‘
‘অতো বাপের বাসায় যাওয়া লাগবো না। তোমার বড়ো ভাবীর শরীর খারাপ , তুমি গিয়ে তার সেবাযত্ন করবা। ‘
নূর থমথমে স্বরে বলল,
‘দাদীমা আমার ভাইয়া কালকে চিটাগাং চলে যাবে, আমি ভাবীকে বলে দিয়েছি যে আমি কালকে যাবো। আর উনিও তো যাবেন। ‘

আয়াশের দিকে তাকিয়ে বলল নূর, যাতে আয়াশ তার কথাতে সম্মতি জানায়।
নূর চাইলো যে আয়াশ কিছু বলুক। দাদী আয়াশের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলেন, উনিও বোধহয় আয়াশ কি বলে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
আয়াশ নূরকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
‘কই তুমি তো আমাকে যাওয়ার জন্য বলোনি। তুমি তো বললে তুমি একাই যাবে। আমার তাহলে যাওয়ার কথা আসছে কোথা থেকে। ‘

আচমকা আয়াশের এমন কথা শুনে নূরের সমস্ত আশা ভরসা যেন মাটিতে মিশে গেল, ওর গলা ধরে এলো,
‘আপনিই তো আমাকে দিয়ে আসবেন। তাহলে তো আপনার ও যাওয়ার কথা তাইনা। আপনি একটু দাদীমাকে বলুন। ‘
শেষের কথা গুলো বলার সময় নূরের গলা ধরে এলো। আয়াশ বলল,
‘আমি তোমার ড্রাইভার না নিশ্চয়ই। ‘

আয়াশের এতোটা বলা অবধি দাদী বলে উঠলেন,
‘তুমি কি আমার নাতিডারে তোমার চাকর পাইসো সে সব কথায় উঠবে আর বসবে। আর কোন কথা না তুমি এখনই যাইবা আমার সাথে। ‘

তার নিজের স্বামী ও তার আপন নয়, যখন তাকে তার হয়ে কথা বলা উচিত তখনই আয়াশ ওর বিপরীতে চলে যায়। নূরের চোখে জল সমুদ্রের তপ্ত রোদে জ্বলে ওঠা বালুকার মতো চিকচিক করে উঠলো নিমেষেই, আর কয়েক পলক ফেললেই তা গাল বেয়ে চিবুক অবধি গড়িয়ে পড়বে।
নূর আর কথা বাড়ালো না, ব্যাগ গোছানোর জন্য পা বাড়াতে গেলেই আয়াশ বলল,
‘ দাদী আমি ওকে নিয়ে কালকে যাবো, কালকে ওকে ওই বাসায় দিয়ে আসবো তুমি চিন্তা করো না। । ‘
‘কেন আজ গেলে সমস্যা কি? ‘

‘সমস্যা নয়, আসলে আজ আমার শরীরটা খারাপ, তাই আজকে থাক, কাল আমি সুস্থ হলে ড্রাইভার দিয়ে আমি ওকে পাঠিয়ে দেবো। ‘
উনি ভ্রু কুঁচকে মুখ বাকিয়ে বলল,
‘আচ্ছা। কালকে আবার ইচ্ছা করে দেরি করিও না। আয়াশ আমি আজকে আসি। সাবধানে থাকিস। আর দাদু ভাই আমি তোর শ্বশুর কে বলেছি যেন পরের বার মেয়েকে সোনা দানা দিয়ে ভরিয়ে পাঠায়, যতোই হোক আমাদের বাড়ির একটা সম্মান আছে। ‘

আয়াশ মাথা নাড়ালো। উনি বেরিয়ে গেলেন। উনি বেরিয়ে যেতেই নূর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো বেশ শব্দ সহকারে, কান্নার জেরে নূরের সমস্ত শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার। কোন শব্দই যেন আর তার কান অবধি যাচ্ছে না, যতোটা অপমানিত হওয়া যায় নূর হয়েছে। নূরের চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছে, নূর রাগে দুঃখে ঘৃনায় ব্যাগ গোছাতে লাগলো, আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূরকে ব্যাগ গোছাতে দেখে আয়াশ বলল,

‘তুমি তো আমাদের একবার ও বলোনি আফুসোনা যে তুমি আমার সথে যেতে চাও। ‘
নূর কোন কথা বলছে না, তার চোখ এর জলে সামনের দৃশ্য সবটাই ঝাপসা হয়ে হয়ে আসছে। সে আয়াশের কথার জবাব দিচ্ছে না, চুপচাপ শুনছে আর ব্যাগ গোচাচ্ছে। বলার মতো সত্যিই কি আর কিছু অবশিষ্ট আছে?
আয়াশ ও নিশ্চুপ। নিজের বউকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে সে নিশ্চয়ই এখন পৌশাচিক আনন্দ উপভোগ করছে।
নূর ব্যাগ গুছিয়ে এসে বিছানার একপাশ বরাবর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো, এখনও তার দিক থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে অথচ আয়াশ নিবর। এ রাত খুবই দীর্ঘ হতে চলেছে নূরের জন্য।

এভাবেই ঘড়ির কাটা একের পর এক ঘর অতিক্রম করতে লাগলো আর রাত ও বাড়তে লাগলো।
আয়াশ একপলকে চেয়ে আছে নূরের দিকে, নূরের চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু আয়াশ হাত দিয়ে মুছে দিল, আয়াশ হাসতে লাগল, তারপর বলল,
‘এবার কি আমি এভাবেই সারারাত তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি আফুসোনা? ‘

‘ভাবী অসুস্থ তাই ভাবীর একটু ঠিকঠাক দেখাশোনার দরকার তাই দাদীমা তোমাকে নিতে এসেছিল। ‘
আয়াশ ড্রাইভ করছে আর নূর তার পাশে বসে আছে, সে নিশ্চুপ। কাল থেকে নূর নির্বাক হয়ে গেছে যেন। নূর ভাবলো সে এরপর সে আর কখনোই আয়াশের কাছে ফিরবে না, যেখানে তার সম্মান নেই সেখানে তার থাকা বৃথা।
নূর আয়াশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘ আপনাকে আমি হয়তো এতদিন অনেক বিরক্ত করেছি। আজকের পর থেকে আপনাকে আর বিরক্ত করছি না। ‘
আয়াশ হাসতে হাসতে বলল,
‘কেন একেবারে চলে যাচ্ছো নাকি? ‘
নূর অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল, সে এবার কথায় নয় সবটা কাজেই করে দেখাবে। তার নিস্তব্ধতায় সাড়া দিয়ে আয়াশ বলল,

‘ভাবী আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে, তারপর তোমাকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে আফুসোনা, যদি ভাবো যে আমার থেকে পালাবে তো তা আমি কখনোই হতে দেবো না। ‘
নূর একরাশ বিতৃষ্ণা নিয়ে বলল, ‘আচ্ছা আপনার সাথে
আমার কোন জন্মের শত্রুতা নেভাচ্ছেন আপনি বলতে পারেন? আপনার তো আমি কোন ক্ষতি করিনি।
আচমকা আয়াশ গাড়ি থামালো বড়োসড়ো এক ব্রেক কষিয়ে,

‘ আমি অন্য কোন জন্মে বিশ্বাসী নয়, আমার কাছে এই একটাই জন্ম, এই জন্মের শত্রুতা এই জন্মেই মেটানো ভালো, পরের জন্মের জন্য রেখে কি লাভ। আর তুমি আমার কোন জন্মেরই শত্রু নও, তুমি তো আমার আফুসোনা আর আমি তোমার অশান্তি। ‘
নূরের কাছে আর জবাব দেওয়ার মতো কিছু রইলো না। এই লোক এতো সহজ ভাষার মানুষ নন।
‘রাতে আমি নিতে আসবো। যাও। ‘

নূর গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো তার বাসার সামনে এনে গাড়ি থামিয়েছে আয়াশ। নূর খানিকটা অবাক হলো তবে কিছু বলল না, এরপর কি হবে আর কি ভেবে আয়াশ তাকে এখানে দিয়ে গেছে নূর তা সত্যিই জানে না। নূর ব্যাক সিট থেকে ব্যাগ বার করতে গেলেই আয়াশ গাড়ি স্টার্ট দিল,

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১১

‘উহুম। আমি যখন বলেছি রাতে নিতে আসবো তো তুমিও রাতে আমার সাথেই ফিরে যাবে। বাই আফুসোনা। ‘
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল। নূর আয়াশের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো, ধরা গলায় বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘আপনাকে আমার জীবনে আর চাইনা আমি, আপনি আমার জীবনের চূড়ান্ত অশান্তি। আমি মুক্তি চাই। I hate you, as much you hate me. ‘

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৩