তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৩

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৩
সুরাইয়া আয়াত

নূরকে তার নিজের বাসার সামনে নামিয়ে চলে গেছে আয়াশ। নূর এক দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বাসার ভেতরে ঢুকলো। বাসায় ঢুকে কাউকে দেখতে না পেয়ে খানিকটা অবাক হলো। মায়া আর নওসাদের নাম ধরে বেশ কয়েকবার ডাকাডাকি করার পরও কাউকে দেখতে পেলো না। তাহলে কি তারা বাসায় নেই? কিন্তু কাল রাতেই যে মায়া তাকে ফোন করে বলল নওসাদ রাতে চিটাগাং ফিরে যাবে তবে তাই ওকে এ বাসায় এসে একবার ঘুরে যেতে, কিন্তু এখন তারা কোথায়?

নূর বাসায় কারোর একবিন্দু পদধ্বনি ও শুনতে পেলো না, না পেরে উপরে গেল, হতে পারে তারা উপরে আছে।
উপরে গিয়ে তার নিজের ঘর সহ নওসাদের ঘরে তালা দেওয়া দেখে নূর অবাক হলো। অর্থাৎ সত্যিই কেউ বাসায় নেই।
তাহলে এখন কি সে ফিরে যাবে? যাওয়ার পূর্বে ভাবলো মায়াকে একটা কল করবে। কল করলেও মায়া বা নওসাদ দুজনের কেউ ই ফোন ধরলো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নূর নিজের ঘরের দিকে তাকালো, নিজের ঘরটাতে বড্ড ঢুকতে ইচ্ছা করছে তার। নূর দরজাটা খুলতে গেলেই পিছন থেকে কেউ প্রবল শক্ত হাতে তার চুলের মুঠি গোছা করে ধরে টানতে টানতে নীচে নিয়ে এলো, নীচে নামতে নামতে সে বুঝে গেল তিনি আর কেউ নয় নূরের বাবা।

নূর ওনার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে উনি আরও খানিকটা জোর করে ধরলেন তার চুলের মুঠি। শক্ত হাতের বাধন ছাড়াতে নূর সক্ষম হলো না কোনরকম। ব্যাথায় তার গলার স্বর ও বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।
উনি নীচে নেমে নূরকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ছুড়ে ফেললেন এমন ভাবে যেন সে কোন বস্তা সহ আবর্জনা।
নূরের চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেল নিমেষেই।

নূর উঠে দাঁড়ালেই উনি একটা চড় বসিয়ে দিলেন নূরের গালে। নিমেষেই নূরের শরীরটা ঝাঁকুনি দিয়ে কেঁপে উঠলো। আচমকা এমনটা হবে সে কিছুতেই কিছু আন্দাজ করতে পারেনি। তবে সে বুঝে উঠতে পারছে না তার ভুলটা কোথায়। এটা নতুন নয়, এর আগেও আরাফাত সাহেব তাকে মেরেছে।
উনি চিৎকার দিয়ে বললেন,

‘অন্যের ছেলের সাথে ফস্টিনস্টি করতে লজ্জা করে না? একসাথে এক ঘরে সময় কাটাতে গিয়ে একবার ও মনে হলো না আমার আর তোর ভাইয়ার একটা সম্মান আছে। ‘
নূর ঝাপসা চোখে ওনার দিকে তাকালো। উনি কি যা তা বলে চলেছেন। সে কোনরকম বোঝার চেষ্টা করে বলল,
‘মুখ সামলে কথা বলো বাবা। নিজের বাবা হয়ে মেয়ের নামে এমন কটু কথা বলতে তোমার মুখে বাধছে না। ‘
উনি এবার রেগে গিয়ে নূরকে টেনে বাসা থেকে বার করে দিয়ে বললেন,

‘ সাওন আমাকে একটু আগে ফোন করে সবটা বলেছে। তুই যে তার সাথে এক ঘরে সময় কাটিয়েছিস সে কথা সে আমাকে বলেছে। আর আগের দিন তোর কারনে সে এক্সিডেন্ট করেছে, তোর ভাবনা ভেবে। দুধ দিয়ে বাড়িতে সাপ পুষে রেখেছি আমি। এখন সে যদি একথা সবাইকে জানায় তবে আমার আর তোর ভাইয়ার মান সম্মানের কি হবে ভাবছিস? ‘
‘যেটা সত্যি সেটা কখনো বিশ্বাস করোনি তুমি, যেটা মিথ্যা সেটাই সবসময় বিশ্বাস করতে তোমার কোন সমস্যা নেই! আর সে তোমাকে এটা বলেনি যে সে আগে থেকেই বিবাহিত ছিল। আর হ্যাঁ তার সাথে আমার তেমন সম্পর্ক কখনোই গড়ে ওঠেনি যে বিছানা অবধি চলে যাবো। সে মিথ্যা কথা বলেছে। সে আমাকে ঠকিয়েছে। ‘

কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলে উঠলো নূর, আজ এতো বড়ো অপবাদ তার গায়ে লেগে গেল। আরাফাত সাহেব কোনকিছুই বিশ্বাস করতে নারাজ, উনি কুকুরের মতো করে নূরকে বাসা থেকে তাড়াতে চাইলেন, নূরের কোন কথা শুনলেন না।

‘ এই ন্যাকা কান্না আমার সামনে করে লাভ নেই। তোর মতো নষ্ট মেয়েকে আমি আমার মেয়ে বলে মানিনা। যে কাজটা করতে বলেছি সেটা কর তাহলে আয়াশের সাথে সংসার করার মতো অবস্থায় থাকবি নয়তো সে রাস্তাও আমি বন্ধ করে দেবো। ‘
নূর চোখ মুছে বলল,
‘আমিও আর তোমার কোন কথায় বিশ্বাস করছি না। আগে আমার মায়ের সাথে তুমি দেখা করাও নয়তোবা আমি কোন কিছুই করবো না যা তুমি চাও। ‘

আরাফাত সাহেব পুরনায় নূরের গায়ে হাত তুলতে যাবেন তার আগেই নূর বেরিয়ে গেল সেখান থেকে। কাঁদতে কাঁদতে সামনের রাস্তা সম্পূর্ণ রুপে ঝাপসা হয়ে আসছে তার কাছে। না জানে কি পাপ সে করেছিল যার দরুন এমন ঘটনা ঘটে চলেছে তার জীবনের সাথে আর সাথে জুটছে নানা মিথ্যা অপবাদ।

আর সাওন! সে কেন এমন মিথ্যা বলল, সে কেন এভাবে তার ক্ষতি করার জন্য পিছে পড়ে আছে।
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো নূর। তক্ষনই ফোন করলো মায়া, নূর চোখটা মুখে কন্ঠস্বর স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল,
‘হ্যাঁ ভাবী বলো। ‘

‘আরে নূর তুমি আসছো? আর বলো না। সাওন কেমন পাগলামি করছিল হসপিটালে, তাই আমি আর তোমার ভাইয়া সেখানে গেলাম। কেউ ওর ফোনটা ওকে দিয়েছিল আর হাতে ফোন পেয়ে আমাকে ফোন করে উল্টোপাল্টা কথা শোনাচ্ছে, আমাকে ফোন করে বলে তার সাথে তার নিজের বিয়ে করা বউ প্রতারনা করেন, ওর বাচ্চাটাও রাখেনি, আরও কি সব বলছিল, তোমাকে নিয়েও বলল যে তুমি নাকি ওর সাথে ছলনা করেছো। আমি ওর কথায় গুরুত্ব দিইনি। তাই তো তোমার ভাইয়া আর আমি জলদি গেলাম। ওর মানসিক অবস্থা আচমকা এমন অবনতি ঘটছে কেন বুঝছি না। ডক্টর ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে আপাতত।’

নূরের চোখ থেকে অশ্রু গড়ালো, আর বেশিক্ষণ ফোন ধরে থাকলেই তারা সহজেই বুঝে যাবে সে কাঁদছে। নূর কোনরকম হ্যাঁ না তে জবাব দিয়ে কল কেটে দিল, কাটার আগে জানালো যে সে আজ আসতে পারবে না, আর আরাফাত সাহেব ও হয়তো সে ভুল কখনোই করবেন না এটা বলে যে নূর সেখানে এসেছিল।

নূর রিক্সা ধরে বাসায় গেল। দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে বিছানায় পড়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। এ ভাবে কি সত্যিই বাঁচা যায়? তার বেঁচে থাকার কষ্টটা না ঢের বেশি বলে মনে হতে লাগলো তার কাছে। হৃদয়টা ক্রমশ ভারী হয়ে আসছে, এ কেমন জীবন কাটাচ্ছে সে? যেখানে আছে বাবার হাতের মার আর হুমকি, অন্যের থেকে পাওয়া নষ্ট চরিত্রের ট্যাগ আর নিজের স্বামীর থেকে পাওয়া মনোমালিন্যতা আর দূরত্ব।

কাঁদতে কাঁদতে নূর কখন ঘুমিয়ে পড়লো তার নিজেরই খেয়াল নেই।
ঘুম ভাঙলো আয়াশের ডাকে।
‘এই যে আফুসোনা, শুনছেন? ‘
আয়াশের কন্ঠস্বরে নূর ধড়ফড়িয়ে উঠলো। নিজেকে ঠিক করে আয়াশের দিকে তাকালো, তার চোখ মুখের অবস্থা দেখে আয়াশের ভ্রু কুঁচকে এলো। নূর জলদি বিছানা ছেড়ে নেমে ওয়াশরুমে গেল। আয়াশ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে, দুই মিনিট পর নূর বেরিয়ে আসতেই আয়াশ প্রশ্ন করলো,

‘তোমাকে না আমি বললাম রাতে নিতে যাবো। তুমি চলে এলে কেন? ‘
নূর মুখ মুছতে মুছতে ভাঙা কন্ঠে জবাব দিল,
‘বাসায় কেউ ছিল না। ‘

নূর চলে যেতে নিলেই আয়াশ তার পথ আটকে দাঁড়ালো, নূরের মুখটা একবার এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে বলল,
‘ঘুমের ঘোরে মশা তোমার গালে চুমু দিয়ে লাল করে চলে গেছে আর তুমি টের পেলে না? ‘
নূর গালে হাত দিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো যে সত্যিই তার গালটা লাল হয়ে আছে। আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। এতো কাছ থেকে আয়াশ সে দাগ দেখে তার বুঝে যাওয়ার কথা তবে সে পিঁপড়ের অজুহাতে কথাটা বলল কেন নূর বুঝলো না। নূর আয়াশের দিকে ঘুরে তাকিয়ে চলে যেতে গেলেই আয়াশ বলল,

‘তোমার পড়শোনার ইচ্ছা ছিল না সেটা আগে বললেই পারতে। তাহলে আমাকে এতো কষ্ট করতে হতো না। ‘
নূর রেগে গেল, কারন সে খুব স্পষ্ট ভাবেই আয়াশকে জানিয়েছে যে সে ভার্সিটি যেতে চাই। জবাব দিল,
‘আমি কি চাই সেটা আপনাকে বলেছিলাম আমি। ‘
‘হ্যাঁ বলেছিলে ঠিকই কিন্তু এদিকে নিজের বাবাকে দিয়ে ভার্সিটি থেকে নাম তুলে দিয়েছ সেটা তো বলোনি। ‘
নূর এবার আর অবাক না হয়ে পারলো না।

‘মনে? ‘
আয়াশ নূরের হাতে কয়েকটা কাগজ ধরিয়ে বলল,
‘কালকে থেকে ভার্সিটি যাবে, আমি দিয়ে আসবো। আর পারলে নিয়েও আসবো। ‘
নূর কাগজ গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো, কিন্তু আয়াশের বলা কথাটা বুঝতে পারলো না সে কি বোঝাতে চলছে।
‘কিন্তু আপনি কিছুক্ষণ আগে ওটা কি বললেন? ‘

‘তোমার সেমিস্টার ফি বাকি ছিল, সেটা তোমার বাবা ক্লিয়ার করেননি কারন তুমি তাকে নাকি জানিয়েছো তুমি পড়াশোনা করতে চাও না। আর সেম ফি ছাড়া তুমি এক্সামে বসতেও পারবে না সেটা খুব ভালো করেই জানো। ‘
নূর অবাক হলো না আর, তার বাবাকে সে এমন কিছুই বলেননি, উনি নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করেছেন যাতে নূরের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় আর ওনাকে কোনরকম কোন টাকা ব্যায় না করতে হয়।
নূর আর কিছু বললো না, গলা ধরে আসছে তার, আয়াশ তার নাম হয়তো পুনরায় লিখিয়ে এসেছে তবে তাতে কি আদতেও কোন লাভ হবে? ‘

‘এতোটা করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ, তবে সেম ফি না দিলে সবটাই বৃথা। হ্যাঁ আমিই বাবাকে বলেছিলাম যে আর পড়তে চাইনা। ‘
আয়াশকে কিছু বুঝতে না দেওয়ার চেষ্টায় নূর তা বলল।

‘আমি টাকা পে করে এসেছি। জব পেয়ে ইন্টারেস্ট সহ টাকা রিটার্ন করো তাহলে হিসাব বরাবর। আপাতত কালকে থেকে ভার্সিটি যাবে আর এপ্লিকেশন দিয়ে এক সপ্তাহের ছুটি চেয়ে আনবে। আমরা হানিমুন যাবো। বাই। ‘
নূর কিছু বলতে পারল না আর, একদিক থেকে আয়াশ তাকে উপকৃত করেছে।

আচমকা আয়াশ ফিরে এসে নূরের একটা গালে আলতো করে কামড়ে দিয়ে বলল,
‘আমার আগে তোমার ওই গালে অন্য কেউ কামড় দিয়ে চলে যাবে নট টলারেবল। ‘
নূর আহাম্মক এর মতো চেয়ে রইলো আয়াশের দিকে। এ অশান্তি চায় টা কি?

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১২

মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। গল্প লিখতে পারছি না, আর না দিতে পারছি কোন কাজে মনোযোগ। ভুল ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৪