তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৫

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৫
সুরাইয়া আয়াত

‘আমাকে একটা সাহায্য করবেন? ‘
‘হুম বলো। ‘
আয়াশ সম্মতি দিতেই নূর ঠিক কি ভাবে কথাটা শুরু করবে বুঝতে পারছে না, আর তার বাবার কুকির্তীর কথায় বা আয়াশকে সে কি ভাবে বলবে?

নূরের আচমকাই মনে এল তার বাবার বলা কথাটা, উনি বলেছিলেন যে একমাত্র যদি সে আয়াশের বাবার কাছ থেকে কাগজটা চুরি করতে পারে তবেই নূরকে তার মায়ের সাথে দেখা করতে দেবেন আরআফাত সাহেব। যদিও আরাফাত সাহেবের কথাটা কতোটা সত্য নূরের তা জানা নেই তবুও নিজের মা কে এক পলক দেখার আশায় নূর কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘আপনাকে যদি বলি যে আপনার থেকে আমি কোন কথা লুকিয়েছি, আপনার অজান্তে আপনাকে আর আপনার পরিবারকে আমি বিট্রে করার চেষ্টা করেছি তাহলে আপনি কি আমাকে আপনার বাসা থেকে তাড়িয়ে দেবেন? ‘
কথাটা শোনা মাত্রই আয়াশ আলতো করে নূরের গলার অগ্ৰভাগ চেপে ধরে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘কেন তুমি আমাকে বিট্রে করবে কেন? সে অধিকার আমি তোমাকে দিয়েছি? ‘
আচমকা এমন কিছু হওয়াই নূর চমকে উঠলো তবে আয়াশ তার গলাটা ততোটাও শক্ত করে চেপে ধরেনি যে তার নিশ্বাস আটকে আসে। নূর ভয় পেয়ে গেল, এই মানুষটাকে সে কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারছে না, এই তো একটু আগেও তার সাথে ভালো ব্যাবহার করছিল তাহলে এখন?
আসলে কেউ ই কখনো বিট্রে করলে তা সহ্য করতে পারে না, আয়াশের ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটাই।
খানিকটা ভয় পেয়ে নূর কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘না আমি কথার কথা বলছিলাম আর কি? ‘

তার কথা শুনে বেশ উচ্চস্বরে আয়াশ হেসে উঠলো, নূর নিজের গলায় হাত দিয়ে দেখতে লাগলো, সত্যিই যদি এখন সে তার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে যদি তার গলাটা চেপে ধরতো তবে এতক্ষনে হয়তো তার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেত, ভেবেই শিউরে উঠলো নূর।
আয়াশ নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়লো কোন কথা না বলে। এভাবেই অনেকটা সময় নিস্তব্ধতায় কাটলো, নূরের মাথায় কেবল একটা কথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো যে সে কিভাবে তার মায়ের সাথে দেখা করবে।
আচমকা আয়াশের কন্ঠস্বরে মতিভ্রম দূর হলো,

‘ ঘুরতে যাবো, তোমার কি কোন কিছু কেনাকাটার আছে?’
নূর মাথা নাড়ালো, যার অর্থ তার কিছুর প্রয়োজন নেই।
নূরের সমস্ত ভয় কাটিয়ে তাকে আরও খানিকটা জড়োসড়ো করে দিতে আয়াশ বলল,
‘ তোমার থেকে হাজবেন্ড এর অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারি তবে তোমার দরকারী জিনিস গুলো থেকে তোমাকে বঞ্চিত করবো না। ‘

কথাটা বলে আয়াশ একহাতে বালিশ নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। নূর আয়াশের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো।
আয়াশের কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে ভাবতে লাগলো সবকিছু। সে তো আসলেই এখনও আয়াশকে মেনে নিতে পারেনি। যখনই মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে তখনই আয়াশ নিজের আসল সত্তা’অশান্তি’ র ন্যায় সব কাজকর্ম করে। তাই আয়াশের প্রতি নূরের জড়তা কখনোই কেটে উঠলো না। নূর পাশ ফিরে ঘুমাতে লাগলো। সবকিছুর মাঝে কেবল একটা মাত্রই আকাঙ্খা তার, তার মা কে একটি বারের জন্য দেখা।

পরক্ষণেই মনে হলো তার বাবা তো তাকে মিথ্যাও বলতে পারে, সে তার বাবাকে খুব ভালো ভাবেই চেনে, তিনি হয়ত নিজের কাজ হাসিলের উদ্দেশ্যে নূরকে ব্যাবহার করছেন।
এমন হাজারো কল্পনা জল্পনা তার মাথায় ঘুরতে লাগলো, এভাবেই কখন যে তার চোখে একরাশ ঘুম ভার করে এলো তা সে বলতে পারে না। আর আয়াশ? সে রাতে কখন ফিরেছে? তা ও নূর জানতে পারলো না।

দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ, সবকিছুই বেশ স্বাভাবিক ভাবেই চলছে, আজ রাতে তাদের ফ্লাইট। জানার মধ্যে কেবল জানে যে কোথায় যাবে, আয়াশের এক কথার উত্তর শান্তিনিকেতন, এর থেকে আর বেশি কী জানে না। তাছাড়া কলকাতা আর ওপার বঙ্গ সম্পর্কে অল্পবিস্তর ধারনা ছাড়া তার কিছুই নেই।
নূর ট্রলি গুছিয়ে অনেক আগেই বসে আছে। তার আগে যা কেনা ছিল তাই নিয়েই যাচ্ছে।

বিছানায় বসে পা দোলাতে লাগলো নূর। বাসায় সে আর আয়াশ ছাড়া কেউ নেই। রহিমা খালাকে ছুটি দিয়েছে বেশ কয়েক দিনের জন্য। আয়াশের বাবাও চিকিৎসার জন্য বাসায় নেই। নূর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর দেখছে, কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। যেদিকে তাকায় সেদিকেই চার দেওয়াল, তা ভেদ করে মানুষ দেখার জো নেই। নূর বিছানা থেকে নেমে দূরে জানালার দিকে তাকালো, আকাশে হালকা মেঘ, পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাবে যাবে তার অগ্ৰিম আভাস, পাখিদের ঘরে ফেরার পালা, রাত দশটায় তাদের ফ্লাইট, এখন বাজে ছয়টা। বলতে গেলে রেডি হয়েই দাঁড়িয়ে আছে সে।

আচমকা বিছানার ওপর কিছু রাখার শব্দ পেতেই নূরের ঘোর ভাঙলো। পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখলো আয়াশ দাঁড়িয়ে রয়েছে আর বিছানার ওপর শপিং এর বেশ কয়েকটা ব্যাগ, নূর ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে এরপর আয়াশের দিকে তাকিয়েই রইলো, এই মানুষটাই কেবল তার দৃষ্টির মধ্যে পড়ে, বাকি ধরা ছোঁয়াতে আর কাউকে পাই না সে। এখন ভার্সিটিও বন্ধ।
‘তোমার শপিং। নিজে থেকে তো কিছু চাইলে না তাই আমাকেই পছন্দ করে আনতে হলো। ‘
‘আপনি কেন এনেছেন এগুলো? ‘

আয়াশ ভ্রু কু্চকালো। ‘মানুষ শপিং কেন করে? ‘
‘আমার কিছু দরকার হতো না। ‘
আয়াশ আর কথা বাড়ালো না, ওয়াশরুম চলে গেল অদ্ভুত এক মুখভঙ্গি করে। বার হয়ে এসে দেখলো নূর বিছানার ওপর বসে আছে, জিনিস গুলো ঠিক আগের মতোই বিছানার ওপর।
আয়াশ বেশ রাসভারী কন্ঠে বলল,
‘পছন্দ হয়নি? ‘
নূর জবাব না দিয়ে জিনিসগুলো ব্যাগে গোছাতে লাগলো, জামা গুলোর ভাজ ঠিক আগের মতোই, নূর একটিবার ও তা খোলেনি।

‘পছন্দ হয়েছে। ‘
আয়াশ নিজে রেডি হতে শুরু করলো, সম্ভবত তারা একটু পরই বার হবে।
আয়াশ শার্টের বোতাম লাগালে নিলেই নূর প্রশ্ন করলো,
‘আচ্ছা আপনি এই ঘুরতে যাওয়ার বাহানাটা কেন করলেন তার জবাব টা কি সরাসরি আমাকে দেবেন? ‘
আয়াশ কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল। আয়নায় নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কেন ঘুরতে যেতে পারিনা? ‘

নূর ও আয়নার দিকে তাকিয়ে আয়াশকে বলল,
‘আপনি চাইলেই নিজে যেতে পারতেন, কিন্তু আমাকে নিয়ে যাওয়ার কারন? ‘
আয়াশ হাসলো। আর কোন ভনিতা না করে জবাব দিল।
‘দেখো এত হেয়ালি করতে আমারও আর সত্যিই ভালো লাগছে না, আসলে,,
নূর আয়াশের মুখের কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলল,
‘হ্যা বলুন তাহলে কি? ‘
‘আমি আমার মা কে খুঁজতে যাচ্ছি।’
নূর অবাক হলো, তার সাথে জবাব দিল,
‘মানে? উনি তো মারা গেছেন। ‘

‘হ্যাঁ সে তে মারা গেছেন ই। আসলে আমার বাবা আমার মা কে অনেক ভালোবাসেন। মা ছেড়ে যাওয়ার পর উনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাছাড়া আমিও মা কে অনেক মিস করি। আর আমার মায়ের বাবার বাড়ি হলো কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবার। আমার কখনোই সুযোগ হয়নি সেখানে যাওয়ার। তাই সেখানে গিয়ে সবটা এক্সপ্লোর করতে চাইছি আর কি। সাথে একটু ঘোরাও হয়ে যাবে। ‘

আয়াশ বাকা হাসলো। নূরের যেন তার এ কথা বিশ্বাস হলো না কোনরকম।আয়াশ যে সবসময় তাকে সত্যি কথা বলে তা নূর কখনোই বিশ্বাস করে না। এই লোকের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সবসময় কিছু না কিছু চলতেই আছে তা নূর বেশ ভালো ভাবেই উপলদ্ধি করতে পারে। তাই আয়াশের সহজ ভাবে বলা কথাটা তার বিশ্বাস হলো না একেবারেই। বেশ রেগে বলল,
‘আপনি একাই তো যেতে পারতেন, আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ‘
‘আফুসোনা যে তার অশান্তি কে ছেড়ে কখনোই ভালো থাকতে পারে না। ‘

নূর ঝাড়ি মেরে বলল,
‘আপনি একটা যা তা। ‘
‘আই নো। ‘
আয়াশ হাসতে লাগলো, আয়াশ বিড়বিড়িয়ে বলল,
‘তুমি না গেলে যে আমার ষোলো আনাই বৃথা আফুসোনা।
নূর নিজের মতো গোছগাছ করতে দেখে আয়াশ বলল,
‘তোমার বাবার সাথে দেখা হলো শপিং মল এ। একটা আন্টির সাথে ঘুরছিলেন। ‘
কথাটা শুনে নূরের ভীষনরকম রাগ হলো। বিড়বিড়িয়ে বলল,

‘আবার সেই ওই মহিলা। সেই মহিলা যে আর্থিক ভাবে ওনাকে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে সেটা কি উনি বোঝেন না? এটা ছাড়া বাকি সবই বোঝেন তবে উল্টো। ‘
নূর আয়াশকে কিছু একটা বুঝিয়ে দিতে বলল,
‘উনি আমার এক ফুপি হন। উনি আমেরিকায় থাকেন, কয়েকদিন এর জন্য বাংলাদেশ এসেছেন। ‘
‘তাই? ‘
‘জ্বি। কেন আপনার সন্দেহ আছে? ‘
‘কিন্তু আমি তো জানি সেই মহিলার নাম নিরুপমা, উনি একজন সাইকোলজিস্ট। আর সম্পর্কে আমারও ফুপি হন, বাসা গুলশান ১ এ। ‘

নূর চমকে গেল। কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। তবে সেই মহিলার হাবভাব নূরের একদম সুবিধার লাগে না। তার বাবা ওনার কাছে আগে যেতেন চেকআপ করাতে তারপর দুজনের সম্পর্ক গভীর হয় আর মেলামেশা বাড়ে। উনি যে তার বাবার সাথে এক নাম হীন সম্পর্ক গড়ে তুলে ওনাকে সর্বশান্ত করে তুলছেন তা নূর বেশ বুঝতে পারে। নূর রেগে বলল,
‘তাহলে বলবো, আপনার ওই ফুপির স্বভাব চরিত্র মোটেই ভালো না। ওনাকে বলবেন আমার বাবার থেকে দূরে দূরেই থাকতে। ‘

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৪

কথাটা বলে আয়াশের দিক থেকে কি পতিক্রিয়া আসতে পারে নূর জানে না তই কোনরকমে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে। আয়াশ হাসতে হাসতে বলল,
‘সরি আফুসোনা, আই কান্ট ডু ইট বাট ইউ আর টু মাচ ফানি। হা হা। ‘

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১৬