তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ২

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ২
সুরাইয়া আয়াত

আয়াশ সেই গেছে ফেরার নামমাত্র নেই তাতে নূরের বিন্দুমাত্র চিন্তার লেশমাত্র নেই, তবে বিয়ের প্রথম রাতেই স্বামী স্ত্রী কে ঘরে একা রেখে কোথাও চলে গেছে সে কথা পাঁচ কান হলে তখন খানিকটা চিন্তার বিষয়।
ঘুম ভাঙলো ভোরের দিকে, ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে আশপাশ টা দেখে নিতেই এবারও আয়াশকে চোখে পড়লো না নূরের। পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিতেই সম্ভবত বাইরের দিক থেকে একটা আওয়াজ এলো,

‘কি আফুসোনা আমাকে এতো মিস করছো যে চারিদিকে তোমার চোখ আমাকেই খুঁজছে। ‘
মুহূর্তেই নূরের চোখের ঘুম উবে গেল, খানিকটা হতচকিত ভাব নিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমেও রুমের কোথাও আয়াশের টিকি টির ও দেখা পেল না। বিড়বিড় করে বলল,
‘বড়োই অদ্ভুত লোক তো। ‘
‘হ্যাঁ অদ্ভুত, শুধু তোমার জন্যই তো। ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পুনরায় আওয়াজ আসতেই নূর আর কৌতুহল সামলাতে পারলো না , বাইরের দিকে যেতে নিলেই কেউ হাতটা ধরে টেনে নিল, হঠাৎ এমন কিছুর জন্য নূর প্রস্তুত ছিল না হয়তো। কারোর বাহুডোরে নয় বরং এবারও দেওয়ালের সাথে তাকে চেপে ধরলো আয়াশ,
নূর ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করলো,
‘সবসময় দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেন কেন? পাগল আপনি? ‘
আয়াশ নূরকে ছেড়ে দিয়ে হাসতে লাগলো, নূর বিরক্ত হয়ে হাত ডলা দিতে দিতে ঘরের মধ্যে ঢুকতেই পিছু পিছু আয়াশ এলো।

নূর আর না ঘুমিয়ে ওর ট্রলি থেকে একটা চুড়িদার বার করতে নিলেই আয়াশ জিজ্ঞাসা করলো,
‘ কি করতে চলেছো এখন? ‘
‘গোসল করবো। আপনার কোন সমস্যা?’
‘আমাদের মাঝে কি কিছু হয়েছে?’
নূর চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। এই লোক তাকে পরিকল্পিত ভাবে লজ্জায় ফেলার চেষ্টা করছে, নূর আয়াশের কথা উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলেই আয়াশ পিছন থেকে নূরের. হাত ধরে আটকালো।
নূর রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো, তার ভাষায় লোকটি একজন অসহ্যকর মানুষ।

‘ চাইলেই কিছু করা যেতে,,,! ‘
বাকি কথা বলতে যাবে তার পূর্বেই নূরের উত্তর,
‘ আপনি না বললেন আপনার থেকে ডিসটেন্স মেইনটেইন করে চলতে। তাহলে এতো কাছে আসতে চাইছেন কেন? ‘
‘এমন বলেছিলাম? ‘
‘ কেন আপনার মনে পড়ছে না? ‘

‘আয়াশ এবার নূরের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো, নূর ব্যাথায় খানিকটা কুঁকিয়ে উঠলো, বুঝে উঠতে পারলো না যে এই কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যে সে কি অপরাধ করে ফেলেছে। এ যে সাইকো।
‘হাত ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি। ‘

আয়াশ হাত ছেড়ে সোজা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো বিনা বাক্য ব্যায় করে এমন একটা ভাব করে যেন কিছুই হয়নি। নূর বুঝে উঠতে পারছে না আয়াশ তার থেকে চায় টা কি। সে একবার বলে তার থেকে দূরে সরে যেতে আবার পুনরায় সে নিজেই দূরে সরিয়ে দেয়।
নূর হাতের দিকে তাকালো, হাতটা লাল হয়ে আছে। নূরের চোখটা নিমেষেই ছলছল করে উঠলো, কোথাও গিয়ে তার শান্তি নেই। নূরের মনে পড়ে গেল দুইদিন আগের কথা। যেদিন তার বাবা তার গায়ে হাত তুলেছিল।
দুইদিন পূর্বে,,,

‘ভাবী, বাবা আবার কি কাজ করতে লেগেছে? উনি হঠাৎ হঠাৎ এমন পাগল হয়ে ওঠে। ‘
মায়া করুন স্বরে বলল,
‘আমি ওনাকে কখনো বুঝি না। ভালোই তো থাকেন হঠাৎ হঠাৎ কি হয় বোঝা মুশকিল। সকালে তোমার ভাইয়াকে ফোন করে উল্টোপাল্টা বলেছেন, তোমার ভাইয়া রাগ করে এ সপ্তাহে আর বাসায় ফিরবে না। ‘
মায়ার কাধে হাত রেখে বলল,

‘মন খারাপ করো না, আমি দেখছি বাবা এমন কেন করছে। আজ আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেই ছাড়বো। ‘
নূর যেতে নিলেই মায়া হাত ধরে আটকালো,
‘নাহ তুমি কোথাও যাবে না। এখানেই থাকো, তোমাকেও উল্টো কথা শুনিয়ে দেবে তখন তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে। ‘
নূর সে আশঙ্কা করে আর এগুলো না সেদিকে তবে অশান্তির ঝড় উঠতেও বেশি দেরি হলো না। আরাফাত সাহেব নিজেই বেরিয়ে এলেন।
গুমোট কন্ঠে বললেন,

‘এখানে কি কথা হচ্ছে শুনি? বলেছি না আমার কাজের সময় বিরক্ত না করতে। ‘
মায়া খানিকটা থতমত খেয়ে বলল,
‘আসলে বাবা আপনার ছেলে বলছে সে এ সপ্তাহে বাসায় ফিরবে না তাই আর কি। ‘
উনি হাত নাড়িয়ে বললেন,
‘তাকে আর ফিরতে হয় না, তুমিও পারলে তোমার বাবার বাসায় চলে যাও কয় দিনের জন্য সাথে এই মেয়েকেও নিয়ে যাও। ‘

নূরকে উল্টোপাল্টা বলে তা নূর মেনে নেয় তবে তার বোন সমতুল্য মায়ার সাথে উনি এতোটা কঠোর ব্যাবহার করছেন তা নূর মানতে পারলো না। না পেরে এবার বলে উঠলো,
‘বাবা তোমার সমস্যা কি বলতে পারবে? ‘
‘সমস্যা মানে? ‘
‘না মানে হঠাৎ হঠাৎ এমন ব্যাবহারের কারন কি? ভাবীকেও যা নয় তাই বলে দিচ্ছ, ভাইয়াকেও এতো অপমান করেছো। আমার কথা না হয় বাদ ই দিলাম। ‘
উনি রেগে বললেন,

‘তার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো? তোমার মুখ থেকে আমি কিছু শুনতেই চাই না। ‘
‘তুমি একাই ডক্টরের কাছে যাবে নাকি আমি নিয়ে যাবো তোমাকে কোনটা? যেটা তোমার ভালো মনে হবে। ‘
‘তুমি আমাকে পাগল বলতে চাইছো, তোমার এতো বড়ো সাহস হয় কি করে। ‘
কথাটা বলে উনি নূরকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দিলেন, নূরের হাতটা খানিকটা মচকে গেল, ব্যাথায় বেশ খানিকটা কাতরে উঠতেই উনি হাত ধরে দরজার বাইরে বার করে দিয়ে বললেন,

‘বাসা থেকে বার হও। ‘
মায়া চেয়েও কিছু করতে পারছে না, এই বাড়িটাকে তার সংসার কম, সার্কাস বেশি মনে হয়।
নূর হাতের দিকে তাকালো, তার হাতটা ব্যাথায় নাড়াতে পারছে না সে।
তার বাবা তাকেই এখনও তার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে করে, একথা হাজার বার শুনতে শুনতে এখন এ নিজেও মেনে নিয়েছে যে হয়তো সে নিজেই দোষী। নূর বাসায় প্রবেশ করলো পুনরায়। এটা নতুন নয়, এমনটা অনেক বারই হয়েছে। নূরের চোখদুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো অশ্রুবিন্দুতে। মায়া তাকে নিয়ে সোফাতে বসালো, মায়ার কাধে রেখে নূর একটাই কথা বলল,

‘ভাবী, কোথাও কি শান্তি কিনতে পাওয়া যায় গো? আমাকে একটু শান্তি কিনে দেবে?’
নূর ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো, দুইদিন আগেকার ব্যাথা এখনও কমেনি, ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট এর অভাবে ব্যাথা এখনও কমেনি, নূর ইচ্ছা করেই কিছু লাগাইনি হাতে, যদিও মায়া তার খেয়াল রেখেছিল। ভেবেছিল নতুন বাসায় এসে হয়তো একটু শান্তি খুঁজে পাবে সে, কিন্তু বাইরের কতোটা সুখ আছে জানে না, তার ঘরের মাঝেই তো একটা জলজ্যান্ত অশান্তি। আয়াশ নামক অশান্তি।

নূর জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল, বেরিয়ে এলো বেশ কয়েকক্ষন বাদে। বেরিয়ে আসতেই খানিকটা টাস্কি খেলো আয়াশকে দেখে, সে তার পরনের ব্ল্যাক শার্টটা খুলে বিছানায় রেখেছে, যার দরুন তার উন্মুক্ত শরীর নূরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে রিতিমত। নূর দেখেও না দেখার ভান করলো। লক্ষ করলো আয়াশ একটা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরে নিয়েছে এতক্ষণে। নূর নিজের কাজে মনোযোগ দিলো, ঘড়ির দিক তাকিয়ে দেখলো সাড়ে ছয়টা বাজে। সে এতোটা সময় ওয়াশরুমে পার করে দেবে ভাবতে পারেনি। কথাটা ভাবতেই বিড়বিড় করে বলল,

‘ওয়াশরুমে অন্তত এই অশান্তি নামক মানুষ টা নেই। ‘
নূর একটা ভালো নাম উদঘাটন করেন, যা হলো অশান্তি। আজ থেকে সে আয়াশকে ‘অশান্তি’বলেই সম্মোহন করবে।
নূর কি করবে বুঝতে না পেরে আয়নায় নিজেকে খানিকক্ষণ দেখতে লাগলে আয়াশ পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ইটস সো হট। ‘

নূর চোখ বড়ো বড়ো করে আয়নার দিকেই আয়াশকে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো।
নূরের চাহনি দেখে আয়াশ বলল,
‘চলো আফুসোনা। নিজেকে অনেক দেখে ফেলেছো। ‘
বলে নূরের হাতটা ধরতেই নূর বললো,
‘কোথায় যাবো?’

আয়াশ জবাব দিল না, হাতটা ধরে বাইরে বার করে আনলো। নূর বুঝে উঠতে পারলো না সে কোথায় যাচ্ছে, এই লোক ও কি তাকে এখন অপমান করে বাসা থেকে বার করে দেবে নাকি? সেটা হলেও মন্দ না তার কাছে, এবার এমন কিছু হলে ও বাসা ছেড়ে সত্যিই বেরিয়ে যাবে যেদিকে দুচোখ যায়।
আয়াশ হাতটা ধরে একটা রুমের সামনে গেল, রুমের দরজা খোলা। আয়াশ হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে যেতেই দেখলো বিছানায় একজন শুয়ে আছেন তার বাবার বয়সী লোক, তবে রুম টা হসপিটালের রুমের থেকে কম কিছু না। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তিনি অসুস্থ।

নূর আয়াশের দিকে তাকালো। কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই আয়াশ বলল,
‘উনি আমার বাবা। ‘
নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, ওনার কথা নূর তার বাবার মুখে অনেকবার শুনেছে, তারা দুজন যে বেশ ভালো বন্ধু তা নূর জানতো, তবে ইনি এতো অসুস্থ থেকে সত্বেও তার বাবা কখনো দেখতে আসেননি আয়াশের বাবাকে, এমনকি খোঁজ ও নেননি, তবে শুনেছিল যে উনিও তার বাবার সময়কার একজন বিজ্ঞানী ছিলেন, স্ত্রী মারা যাবার পর উনি পাগল হয়ে যান শোকে।

নূর জানে যে তার বাবা নিত্যান্তই স্বার্থপর একজন মানুষ। তা আগে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারে।
নূর গিয়ে ওনাকে সালাম করতেই উনি ফিসফিস করে বললেন,
‘ তুমি এখানে থেকো না মা। চলে যাও যতো দ্রুত পারো। ‘
ওনার কথা শুনে নূর অবাক হলো, ও বুঝে উঠতে পারলো না যে উনি কি বোঝাতে চাইছেন।
তবে পিছন থেকে আয়াশ ওর হাতটা টেনে বলল,

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ১

‘ও কোথাও যাবে না, ও শুধু আমার কাছেই থাকবে। ‘
কথাটা বলে আয়াশ তার হাত ধরে বেরিয়ে গেল , নূর আহাম্মকের মতো চেয়ে রইলো। ঘরে নিয়ে গিয়ে তাকে বিছানায় বসিয়ে একটা মলম নিয়ে আয়াশ তার হাতের কাছে বসলো। এই অশান্তি এখন কি নতুন কি অশান্তি করতে চলেছে তার সাথে?

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৩