তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৩

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৩
সুরাইয়া আয়াত

হাতটা ধরে টেনে এনে বিছানায় বসালো আয়াশ। নূরের কপাল কুঁচকে এলো এই অশান্তি তার সাথে কি করতে চলেছে তা দেখার জন্য।
আয়াশ ব্যাথা কমানোর মলমটা এনে নূরের হাতটা ধরে মলমটা লাগাতে নিলেই নূর হাত সরিয়ে নিল।
আয়াশকে রাগীরাগী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখেই নূর ঝাড়ি দিয়ে বলল,

‘কোন দরকার নেই। আমি ঠিক আছি। আপনাকে আমার বিষয়ে এতো কিছু ভাবতে হবে না। এমনিতেও যা ভাবছেন আমাকে নিয়ে তাতে আপনার প্রতি আমার অকৃতজ্ঞতার ঋণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, তাই আর না প্লিজ। ‘
আয়াশ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
‘আচ্ছা এরকম ব্যাপার! ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নূর প্রত্যুত্তরে উত্তর দিল না কোন। আয়াশ বাকা হেসে এবার নূরের ব্যাথা পাওয়া হাতটার সেই অংশে পুনরায় চাপ দিতেই নূর ব্যাথায় খানিকটা কুঁকিয়ে উঠলো। হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও সফল হলো না, আয়াশ শক্ত করে তার হাতটা ধরে রেখেছে এখনও।
ব্যাথায় চোখে জল জমে এল, নিমেষেই চোখ ছলছল হয়ে গেল, তবুও সে হাত ছাড়তে নারাজ। না পেরে নূর কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলতে বাধ্য হলো,

‘প্লিজ ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি। ‘
আয়াশ হাত ছাড়লো না। নূরের চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে, আয়াশ সেদিকে তাকিয়ে হাসলো, নূর ঝাপসা দৃষ্টিতে হাসতে দেখলো, নিরবে কান্নাটা এবার ঠোঁট ফুলিয়ে কান্নায় পরিবর্তিত হলো। আয়াশ হাতটা ছেড়ে খুবই সাধারন একটা অঙ্গভঙ্গি করে উঠলো যেন সে কিছুই জানে না ,আর এই মুহূর্তে সে কি কি করেছে।
নূর হাতটা ছাড়িয়ে হাতে ফু দিতে লাগলো।

‘কি, তুমি যে বললে হাতে ব্যাথা নেই। ‘
নূর হাতে ফু দিতে দিতে কান্না করতে করতে বলল,
‘আপনি এমন নির্দয় মানুষ কেন? জেনে বুঝে হাতটা চেপে ধরলেন। জানেনই তো হাতে ব্যাথা। ‘
‘আমি কি করে জানবো? ‘
নূর ভেজা চোখ রাগী ভাবে তাকালো,

‘আপনি জানেন না? আমি ভাবীকে বলতে শুনেছি, সে আপনাকে বলেছে, আর না বললে আপনার জানার কথাও না কারন আপনি সে ধরনের মানুষ ও নন যে সকলের খোঁজ খবর রাখবেন। ‘
‘আচ্ছা তাই! ‘
নূর ঝাড়ি দিয়ে, ‘জ্বি।’
আয়াশ এবার তার কোলের ওপর হাতটা টেনে মলমটা লাগাতে লাগাতে বলল,
‘তা ব্যাথায় যখন, ভালোই ভালোই মলমটা লাগাতে চাচ্ছিলাম তখন লাগাতে দিলে না কেন? য্যাইসা কারনি ব্যাইসা হি ভারনি। ‘

কথাটা বলে আয়াশ হেসে মলমটা লাগালো। নূর আয়াশের মুখ এর দিকে তাকালো, এখনও নির্দয়ের মতো হাসছে সে, নূরের ইচ্ছা হলো তাকে এক ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিক, কিন্তু সে শক্তি বা বল কোনটাই তার মাঝে নেই, আবার এমন কিছু করলে সে যদি আবার হাতটা চেপে ধরে, তখন হয়তো তার এমন অবস্থা হবে যে তার হাতটাই অকেজো হয়ে যেতে বসবে এই অশান্তি নামের লোকটির জন্য। কোথাও না কোথাও রাগটা সমস্ত শরীর জুড়ে চেপে ধরলেও এটা ভেবে ভালো লেগেছে যে তার ভাবীর কথা শুনে হলেও সে যত্ন সহকারে তাকে মলম লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল।

মলমটা লাগিয়ে আয়াশ তাতে টাইট করে ব্যান্ডেজ বেধে দিয়ে চুপচাপ বিনা বাক্য ব্যায় করে সেখান থেকে চলে গেল।
নূর হাতটা ধরে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এই লোক তার কাছে ভারী অদ্ভুত একজন। ঘুমে নূরের চোখ ঢলে আসতে চাইলো, বসে বসে খানিকটা ঝিমুনি আসতে নিলেই কেউ একজন অত্যন্ত ঝাঝালো কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

‘আসতে না আসতেই কি এমন বলে বশ করেছো আয়াশকে যে সে আজ দাদীকে অবধি কথা শুনিয়ে দিয়েছে। উনি বাসার মুরব্বী, ওনার ওপর কেউ কথা বলার সাহস দেখায় না, আজ তোমার জন্য উনি বাসা ছেড়ে চলে যেতে চাইছে।
এতো স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে সেই বউটি এতো কিছু অনর্গল ভাবে বলে গেলেন যার সবটা নূরের মাথার উপর দিয়ে যেতে লাগলো, এ বাসায় একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই রয়েছে।

নূর জানার চেষ্টায় বলল,
‘কি বলেছেন উনি? ‘
‘কি বলেছেন জানো না? আয়াশ ওনাকে প্রশ্ন করেছে যে কেন উনি তোমাকে গহনা নিয়ে এতো কিছু শুনিয়েছে। তুমি আসতে না আসতেই তার কান ভাঙানি দিতে শুরু করেছো! ‘
নূর আয়াশের এমন কাজে কোন অন্যায় দেখলো না বরং মনে মনে খুশি হলো, সাথে আয়াশের উপর থেকে সব রাগ ভ্যানিশ হয়ে গেল। বউটির কথা অনুযায়ী, স্বামী তার স্ত্রীর হয়ে কোন কথা বললেই তাকে তাবিজ করা হয়ে যায়। নূরের ভীষন বলতে ইচ্ছা করলো,

‘আপনি যখন এমনটাই ভাবেন তার অর্থ আপনার স্বামী কখনো তার স্ত্রীর অপমানের বিরুদ্ধে কথা বলে না। আচ্ছা তাহলে আপনি এমন একটা কাপুরুষ এর সাথে থাকেন? ‘
কথাগুলো গলা অবধি এসেও আটকে গেল।
উনি নূরের নিস্তব্ধতায় তাকে আরও কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই নীচ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যেতেই উনি দাঁত কিড়কিড় করে বললেন,

‘ আজ যদি দাদী বাসা ছেড়ে চলে গেছেন তো দেখো। ‘
কথাটা বলে উনি চলে গেলেন।
অন্যকে অপমান করে কথা বলতে মানুষ দুটো বার ভাবে না, তবে নিজে অপমানিত হয়ে গেলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে, আর দোষটা হয় যে সদা সত্যবাদী ভালো মানুষ তার ওপর।

নূর ও নীচে গেল, দেখলো আয়াশ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িতে লোকজন নেই বললেই চলে, হাতেগোনা ছয় কি সাত জন, কাজের লোক মিলিয়ে। এ মহিলা নিজে থেকেই একটা গন্ডগোল পাকাতে চাইছেন তা নূর এতক্ষণে নিশ্চিত।
নূর গিয়ে আয়াশের পাশে দাঁড়ালো। আয়াশ যেন নূরকে দেখেও না দেখার ভান করলো এমন, যেন সে এসবের কিছুই যানে না, যা করেছে নূর।

মধ্যবয়স্ক মহিলাটি চলে যেতে চাইছেন না ঠিকই তবে যাওয়ার নাটক করছেন, কারন একবার যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে তারপর কথা ঘুরিয়ে আরও দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছেন। উনি নূরকে সকলের সামনে অপমান করতে চাইছেন।
আচমকা আয়াশ নূরের হাতটা ধরে বলল,
‘আফুসোনা ঘরে চলো, ব্যাগ গোছাবে তুমি। ‘
আয়াশের এমন কথা শুনে নূর সহ সকলেরই মনে হলো যে আয়াশ তাকে তার বাসায় ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছে।
মহিলা কটকট করে বললেন,
‘যা ওকে রেখে আই, এমন বউ আর ঘরে আনবিনা, আমি তোর জন্য বড়োলোক বাপের মেয়ে দেখে আবার বিয়ে দেবো আহানের মতো। ‘

কথাটা শুনে বউটি বেশ আপ্লুত হলেন কারন মহিরাটি ওনার কথায় বলতে চাইছেন, আর ওনার বাপের বাড়ি থেকে প্রচুর সোনা দানাতে ভরিয়ে দিয়েছেন।
আয়াশ আর কারোর কথার তোয়াক্কা না করে নূরকে নিয়ে উপরে চলে গেল। নূর বুঝে উঠতে পারলো না তার দোষটা কোথায়, বিয়ে হতে না হতেই তার ডিভোর্সের কথা। আয়াশকে মানতে না পারলেও এই বিচ্ছেদের বিষয়টা নূরের মনে দাগ কেটে গেল। নূরের বুকের ভিতর দিয়ে অভিমান আর খারাপ লাগার মিশ্র অনুভূতি বয়ে গেল।
আয়াশ ঘরে এনে দরজা আটকে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,

‘ ব্যাগ গোছাও জলদি। তোমার বাসায় যাবো এখন আমারা দুজনই। ‘
নূর অনেকক্ষণ আয়াশের দিকে নিষ্পলক ভাবে চেয়ে রইলো, কথাটা সত্যি, মেয়েদের নিজের ঘর বলতে কিছু হয় না।
আপনা আপনিই চোখ দিয়ে জল গড়াতেই, আয়াশ তা দেখিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, যাওয়ার আগে বলে গেল যে যত দ্রুত সম্ভব সে যেন ব্যাগ গোছায়।

একবুক অভিমান নিয়ে নূর ব্যাগ গোছাতে শুরু করলো, যত জিনিস সে এনেছিল সবকিছু সে গোছাতে শুরু করলো, যখন তার আর এ বাড়িতে থাকায় হবে না, আয়াশ তাকে দিয়ে আসছে তখন তার এ বাসায় একটা সুতো অবধি রাখা বৃথা।
নূরের ব্যাগ গোছানো হতেই আয়াশ রুমে ঢুকলো, এতো বড়ো ব্যাগ দেখে প্রশ্ন করলো,
‘ওই বাসায় কি তোমার একটাও পোশাক নেই? এতো গুছিয়ে নিয়ে যাচ্ছো কেন তবে? ‘
নূর কাঁদোকাঁদো স্বরে বলল,

‘আপনি তো আমাকে ওই বাসায় রেখে আসতে যাচ্ছেন, আর হয়তো কখনো ফিরিয়েও আনবেন না তখন আমার কোন অস্তিত্ব এ বাসায় রেখে কি লাভ। ‘
আয়াশ এবার নূরের দিকে এগিয়ে গেল, ট্রলিটা পা দিয়ে ধাক্কা মেরে এক পাশে গিয়ে বলল,
‘কেউ বললেই তোমাকে আমি ছেড়ে দেবো এমনটা কখনও ভেবো না, তোমাকে যখন আমার ছাড়ার ইচ্ছা হবে তখনই ছেড়ে দেবো, তার আগে নয়, এখন চলো। দুই দিন আমার বড়োলোক শ্বশুর এর বাসা থেকে হনিমুন করে আসি। ‘

আয়াশের কথায় নূর সম্পূর্ণ রুপে বোকা বনে গেল। চুপচাপ আয়াশের সাথে যেতে লাগলো। নীচে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলো সকলের মুখে হাসি। নূর চোখ নামিয়ে নিলো। বুঝলো যে এই বাসায় কেবল একটা অশান্তি নামের মানুষ নেই। অশান্তি টু দি পাওয়ার টু, থ্রি, আর ফোর ও আছে।

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ২

এর পরের পর্ব থেকে খানিকটা রহস্য থাকবে। কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন। এক্সাম ছিল তাই গল্প দিতে লেট হলো।

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৪