তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৬

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৬
সুরাইয়া আয়াত

নূর অবাক হয়ে চেয়ে রইলো আয়াশের যাওয়ার পানে। যতোই চেষ্টা করছে আর বারবার ব্যার্থ হচ্ছে এই অশান্তি কে বোঝার জন্য। মাঝে মাঝে সে নিজেই বেকুক হয়ে যায় তার সাথে ঘটে যাওয়া এমন ব্যাবাহারে, বুঝে উঠতে পারে না ঠিক তার ভুলটা কোথায়।

নূর মেঝের দিকে তাকালো, পুরো মেঝেতে ভাত তরকারি ছড়ানো। এখন এগুলো কি তাকেই পরিষ্কার করতে হবে? কথাটা ভেবে তার গায়ে জ্বর নেমে এল যেন। এমনিতেই সারদিন শরীরটা ভালো যায়নি তার ওপর এই অশান্তি তার শারিরীক অশান্তিকে দ্বিগুণ করে দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নূর বিছানা থেকে নামলো সাবধানতা অবলম্বন করে, কাঁচের প্লেটটা ভেঙে কাঁচ ছড়িয়ে গেছে চারিদিকে, অসতর্কতায় পা কেটে যাওয়ার সম্ভবনায় বেশি।
নূর মেঝেতে পা ঠেকাতেই তার ভাবী ছুটে এলো, বেশ দূর থেকেই হাক দিয়ে বলল,
”নূর তুমি ঠিক আছো?’
নূর অবাক হয়ে চেয়ে রইলো, তাহলে আওয়াজটা কি বাইরে অবধি গেছে? নূর উত্তর দিল,
‘হ্যাঁ ভাবী ঠিক আছি। কিন্তু। ‘

মায়া নূর এর প্রশ্ন শেষ হওয়ার পূর্বেই ঘরে প্রবেশ করলো, উত্তরে জানালো,
‘আরে আয়াশ ভাই তো বলল যে খেতে খেতে তোমার হাত থেকে প্লেটটা পড়ে গেছে। সেটা শুনেই তো আমি ছুটে এলাম। ‘
নূরের শরীর জুড়ে রাগ চেপে ধরলো। কত সহজে আয়াশ ঘটনাটা পাল্টে দিয়ে ওর নামে দোষ দিয়ে দিল, ইচ্ছা করছে সামনে থাকলে তাকে দু ঘা মে*রে তবেই শান্তি পেত সে।

এখন কথার বিপরীতে সত্যতার জবাব পেশ করা মানে যেচে ঝামেলার আগমন ঘটানো।
‘হ্যাঁ ভাবি, হাতটা কাঁপছিল, পড়ে গেছে হাত থেকে। ‘
মায়া কাচের টুকরো গুলো তুলতে তুলতে বলল,
‘নিজে যখন পারছিলে না

তখন নিজের জামাইকে বলতে, এমনি সময় তো এহেম এহেম। ‘
মায়া দুষ্টু হাসি হাসলো। মায়ার এমন ইঙ্গিতে বলা কথাগুলো সবসময় অস্বস্তি তে ফেলে যদিও তার আর আয়াশের মাঝের সম্পর্কটা এতোটা সুসম্পর্ক নয়।
নূর কথা ঘোরাতে বলল,

‘ তুমি দাঁড়াও, আমি তোমাকে সাহায্য করি। ‘
‘একদম না। তুমি অসুস্থ, ভাইয়া তোমার জন্য মেডিসিন আনতে গেছেন ফার্মাসি থেকে। তুমি বসো। ভাইয়ার ভালোবাসায় একেবারে সুস্থ হয়ে উঠবে দেখো। ‘
নূরের একথা শুনে নূর অন্য এক কিছু ভাবতে লাগলো, আর সম্ভবত মায়াও তাকে ঋনাত্মক ইঙ্গিতে তা বোঝাতে চাইছে।
নূর তুমুল অস্বস্তি সহকারে বলল,

‘ভাবী তুমিও না। আমি হেল্প করছি। ‘
মায়ার একটা ধমক তাকে চুপ করানোর জন্য যথেষ্ট। নূর চুপ হয়ে গেল একদম। মায়া মেঝে থেকে সব পরিষ্কার করতে করতে বলল,
‘সাওন তোমার জন্য একটা ড্রেস এনেছে। ও ইন্ডিয়া ঘুরতে গেছিল, সেখান থেকেই এনেছে। তোমার বার্থ ডে তে দিতে ভুলে গেছিল তাই। ‘

নূর বিড়বিড় করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘বার্থ ডেট টা আদেও মনে রেখেছিল কি? ‘
‘কিছু বললে? ‘
‘নাহ ভাবী। তুমি এই সময় এতো বেশি কাজ করবে না। বললাম আমাকে করতে দাও। ‘

‘আবার মুরব্বীদের মতো কথা। আমার সবে তিনমাস, এখন এগুলো করা যাবে, আরও কয়েক মাস পর আর করতে পারবো না চাইলেও তাই করতে দাও, তারপর ভাতিজি হলে হয়তো তোমাকেও হাতে হাতে কাজ করে দিতে হবে। ‘
নূর মায়া দুজনেই হাসলো। মাঝে মাঝে মনে হয় মায়া আর তার ভাইয়া ছাড়া এই পৃথিবীতে তার কোন শুভাকাঙ্ক্ষী নেই। তাই ই বেশ।

মায়া বেরিয়ে গেল। নূরের রাতের খাবার এর দফারফা।
তবে মায়ার বলা কথাটা নূরের মাথায় চিন্তার এক রুপ. দিয়ে গেল। আয়াশ কি করতে ফার্মেসি তে গেছে? মায়া যে কারনটা বুঝিয়ে গেছে সে কারনটা যদি হয় তাহলে সারা রাত সে দরজাই খুলবে না।
কথাটা বলে নূর দরজা আটকাতে গেলেই আয়াশ হাত দিয়ে দরজা বন্ধ থেকে আটকালো।
নূর ভড়কে গেল নিমেষেই। বুঝে উঠতে পারলো না এত অল্প সময়ের মধ্যে সে কি করে ফিরে এল, সে যতদূর জানে তার বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ফার্মেসি।

আয়াশ হাত দিয়ে আটকে রাখার পরও নূর দরজা বন্ধ করতে চাইলো, আয়াশ ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘আমাকে ভিতরে যেতে দাও নাহলে আজ তোমাকে আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। ‘
নূর কথাটা শুনে আরও বল প্রয়োগ করে নূর দরজা দিতে চাইলেই নূর বলল,
‘আপনি ফার্মেসি তে কেন গেছিলেন? ‘

‘দরকার ছিল, আগে ঘরে ঢুকতে দাও। ‘
দরজায় বল প্রয়োগ করে খোলার চেষ্টা করে বলল আয়াশ। নূর দরজা খুলতে নারাজ।
‘ঢুকতে দেবে কি না? ‘
‘না, আপনি যে কাজে গেছিলেন সেটা বাইরে ফেলে আসেন। ‘

আয়াশ আর কথা বাড়ানো না, এবার গায়ের জোরে দরজা ফেলতেই নূর ছিটকে দূরে পড়ে গেল। আয়াশ ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা আটকে দিয়ে নূরের দিকে একবার তাকিয়ে বলল, ‘ননসেন্স। ‘
কথাটা বলে আয়াশ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। নূর একা একা ফ্লোর থেকে উঠলো, তার কোমরে লেগেছে। সে কথা না বাড়িয়ে আর দাঁড়ালো না রুমের ভিতর, নূর বাইরে বেরিয়ে বড়ো বারান্দার ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।

বাইরে শিরশিরে বাতাস বইছে, বৃষ্টি নামবে বোধহয়। আকাশ গুমসে আছে, বাতাসে এক ভ্যাপসালো অনুভূতি। বাড়ির পাশের কৃষ্ণচুড়া কাছে কুঁড়ি ধরেছে, সে ফুলের সুবাস খানিকটা বিদঘুটে লাগলেও তার জীবনের থেকে তো বিদঘুটে নয়। নূরের চোখের কোনা বেয়ে আসা নোনাজল মুছলো। মাঝে মাঝে ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না আসছে।

মাতৃস্নেহ না পাওয়ার মতো আর নিজের মায়ের মৃতু্্্যর কারন হওয়ার মতো কষ্ট যখন সে এ জীবনে সহ্য করে নিয়েছে তখন বাকি সব কষ্ট তার কাছে তুচ্ছ মাত্র। তবুও বাহ্যিক কষ্ট গুলো মাঝে মাঝে কষ্ট দিলে আর সহ্য করা যায়না, চোখ এর একধার বেয়ে আপনা আপনিই নোনাজল গড়িয়ে আসে।

সে অনেকক্ষণ যাবৎ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল নিরবতা সহকারে। আয়াশ দিব্যি ঘরের এসি র ঠান্ডা বাতাসে ঘুমাচ্ছে, তাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে সে একটি বারও তাকে তোলার জন্য হাত বাড়ায়নি।
মাঝে মাঝে মনে হয়, আজ তার মা বেঁচে থাকলে হয়তো এই পৃথিবীর যাবতীয় সুখ তার কাছে থাকতো।
কিছুখন নিরব থাকার পর তার শরীর ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা সাওনের কন্ঠস্বর শুনে নূর কেঁপে উঠলো, ছিটকে সরে দাঁড়ালো নিমেষেই।
সাওন হাসলো,

‘কি এখন বুঝতে পারছো তো ওই স্টুপিড টাকে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড়ো বড়ো ভুল করেছো। ‘
নূর রাগী রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।
‘মুখ সামলে কথা বলো সাওন। হি ইজ মাই হাজবেন্ড। ‘
‘ওহ প্লিজ নূর, আর হাসতে পারছি না আমি।’
নূর মুখ ফিরিয়ে নিল তার দিক থেকে।

‘স্টপ ইট নূর। আপু আমাকে সব বলেছে। তোমার বাবা তোমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে। ‘
‘মোটেও না, আমি নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছি। ‘
সাওন রাগে হাত চেপে ধরলো আচমকা।
‘ সাট আপ। আমি যেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম অমনি টাকা পয়সা ওয়ালা একটা ছেলের গলায় ঝুলে পড়লে। তুমি তো আমার সাথেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলে আমার টাকা পয়সা দেখে। তোমার মতো মেয়েরা শুধু টাকার পিছনে ছোটে। ‘
কতো সহজে সাওন বলে ফেলল কথাগুলো। নূর এর চোখ বেয়ে নোনাজল গড়ালো, বলার মতো কথা আর তার মুখ দিয়ে বার হলো না।

নূরকে কাঁদতে দেখে বলল,
‘তোমার এই কুমিরের কান্না তোমার হাজবেন্ড এর সামনে করো। আমার সামনে না। আমার জানা আছে তার মতো মেয়েরা ঠিক কি কি করতে পারে। ‘
নূর চলে যেতে নিলেই সাওন পিছু ডাকল।

‘চাইলে এখনও সময় আছে, আমার কাছে ফিরতে পারো। অনেক আদর করবো। ‘
নূরের চোখ বেয়ে অনবরত জল গড়াচ্ছে। সে আর প্রতিবাদ করবে না কোনরকম।
আয়াশ নূরের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর মুখে এক বোকা বোকা হাসি। নূর থতমত খেল বেশ। তাহলে এবারও কি আয়াশ সবটা শুনেছে।

‘আফুসোনা তুমি বাইরে কি করছো?’
‘আপনি এখনও ঘুমাননি? ‘
‘তুমি তো জানো তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না। একা কিভাবে ঘুমাই বলো। ‘

নূর পিছু ঘুরে সাওনের দিকে তাকালো, সে ইতিমধ্যে রেগে বম হয়ে গেছে হয়তো। নূর বুঝতে পারলো যে আয়াশ কেবল সাওনকে দেখানোর জন্য এমনটা করছে কিন্তু তার ব্যাবহার গুলো এতো নিঁখুত হয় যে সাওনকে সে বুঝতে দেয় না যে এগুলো সবই তার ইচ্ছাকৃত। সাওনের ভাষায় সে একটা ননসেন্স, সেটা সে ইচ্ছাকৃতভাবে দেখাতে চায় তা হয়তো এখনও বুঝে উঠতে পারে নি। এই অশান্তি যে এতো শান্ত নয় তা নূর ছাড়া কেউ ভালো জানে না। নূ্র আরও কিছু বলতে যাবে আয়াশ নূরকে চুপ করিয়ে বলল,

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৫

‘শ্ আর কোন কথা না। ‘
নূরকে পাঁজাকোল করে ধরে নিয়ে গেল আয়াশ, নূর সাওনের মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে দিল। সাওন দাঁত কিড়কিড় করে বলল,
‘আই উইল সি ইউ। ‘

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৭