তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৮

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৮
সুরাইয়া আয়াত

শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নূর, নিজেকে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘুরে দেখছে, বেশ মানিয়েছে তাকে শাড়িটাতে। আয়নায় চোখ যেতেই দেখলো আয়াশ দরজার কাছে থেকে তাকিয়ে থেকে দেখছে। নূর সরে এলো আয়নার সামনে থেকে, হ্যান্ড ব্যাগটা গোছানোর কাজ করতে নিলেই আয়াশ বলল,
‘ জলদি নীচে এসো, সাওন অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। ‘

আয়াশের মুখ থেকে সাওনের নাম শুনে নূরের কেমন একটা মনে হলো। আয়াশ অনেক সহজ ভাবে কথা বলছে তার সাথে। নূর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই আয়াশ বেরিয়ে গেল। নীচে গিয়ে নূর দাঁড়াতেই দূর থেকে মায়া তাকে লক্ষ করতেই তার দিকে ছুটে এলো,
‘এই শাড়ি টা কবে কিনেছো ননদিনী? ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়ার মুখে এমন কথা শুনে নূর আকাশ থেকে পড়লো যেন। তার জানামতে এই শাড়ি তাকে মায়া দিয়েছে। থতমত খেয়ে বলল, ‘কেন তুমিই তো শাড়ি টা আমার ঘরে রেখেছিলে। ‘
‘যাহ, কি যে বলো না তুমি। আমি কেন রাখবো। আমি তো সাওন যেটা দিয়েছেন ওটা দিতে গেছিলাম। ওটা পরলে না যে। ‘
নূর আয়াশের দিকে তাকালো, জামাটারা কথা মনে পড়তেই নূর রেগে গেল। আয়াশ এখন এমন একটা ভাব করছে যেন সে এসবের কিছুই জানে না, এটা নূরের রাগের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিল। তবে শাড়িটা কে রাখলো?

মায়া বলল, ‘আয়াশ ভাইয়া দিয়েছে হয়তো। ভাইয়া দেখছি ভীষন রোমান্টিক, বউকে হুঠহাঠ সারপ্রাইজ দিয়ে দেন। ‘
নূর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মুচকি হাসলো, এর থেকে বেশি কিছু তার করনীয় নেই।
‘আচ্ছা ভাবী আসছি। ভাইয়া আসলে কল করো। ‘
‘হ্যাঁ সাবধানে যাও।’

নূর এগোতেই দেখলো আয়াশ বেরিয়ে গেছে। এখন সাওনকে মুখোমুখি হওয়ার পালা। নূর বেরিয়ে দেখলো সাওন গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। নূর যেতেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো সে, তার উপহার স্বরূপ দেওয়া থ্রি পিতা পরেনি দেখে মাথায় রাগ চড়ে গেল নিমেষেই। রাগে দাঁত কিড়কিড় করে বলল, ‘বুঝলাম যে তোমার নিজের সংসার টিকিয়ে রাখার ইচ্ছে নেই। তুমিও তাহলে এখন চাইছো যে তোমার আর আমার কথাটা আমি সবাইকে জানিয়ে দিই।’

নূরের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো সাওন। নূর ঝাড়ি দিয়ে সাতটা সরিয়ে বলল,
‘যা ইচ্ছা করো, আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার। ‘
কথাটা বলে নূর পিছনের সিটে গিয়ে বসতেই সাওন নূরের হাত ধরে টেনে হিছড়ে গাড়ি থেকে বার করে সামনের সিটে বসার জন্য জোর জবরদস্তি করতে লাগলো, নূর ব্যাথা পাচ্ছে। এটা তো সে সাওন নয় যাকে নূর এতদিন ধরে চিনতো, বিগত কয়েকমাসে তার স্বভাব চরিত্রের এতো পরিবর্তন নূর হজম করতে পারছে না। নূর দেখলো আয়াশ দূরে দাঁড়িয়ে তার বাবার সাথে কথা বলছে। ঘটনাটি আয়াশের দৃষ্টিগোচর হওয়ার থেকে ভালো সে সাওনের কথাতে তার পাশে বসুক। নূর বসলো, সাওনের মুখে বিজয়ের হাসি।

নূরের চোখ ছলছল করে উঠলো নিমেষেই, সাওন তার পাশে বসে একের পর এক কটূ কথা শোনাচ্ছে আর সে বোবা হয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর আয়াশ এলো গাড়ির কাছে, নূরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘আফুসোনা বেরিয়ে এসো।’
নূর কিছু বলবে তার পূর্বে সাওন বলল, ‘কেন ও যাবে কেন? ‘
সাওনের কন্ঠস্বর শুনে আরাফাত সাহেব বলেন,

‘ওর ভাইয়া বাসায় ফিরবে আর পনেরো মিনিটের মধ্যে, ওকে আজ যেতে হবে না। তুমি বরং আয়াশের সাথে যাও। ‘
নূর আয়াশের দিকে তাকালো। আয়াশের চোখে আজ কেন জানি না বিশ্বাসের ইঙ্গিত পাচ্ছে সে। নূর বেরিয়ে বাসার দিকে হাটা দিল। আয়াশের কাধে হাত রেখে আরাফাত সাহেব বললেন,
‘সাবধানে যাও বাবা। ‘
আয়াশ মাথা নাড়ালো। সাওন রেগে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

এদিকে বাসার ভিতরে ঢুকে চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসে পড়লো নূর। সবার থেকে এমন ব্যাবহার সে আর মেনে নিতে পারছে না। একদিকে তার নিজের বাবা, অন্যদিকে আয়াশ আর একদিকে সাওন। নূর আধশোয়া হয়ে বিছানায় শুয়ে রইলো। নূরকে ফিরে আসতে দেখে মায়া এগিয়ে এলো তার দিকে, শুয়ে থাকতে দেখে চিন্তিত স্বরে বলল,
‘কি হয়েছে নূর? শরীর ঠিক আছে? তুমি ওদের সাথে গেলে না কেন? ‘

মায়াকে দেখে নূর উঠে বসলো। নূরের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো অশ্রুবিন্দুতে।
মায়া কপালে হাত ঠেকিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বোঝার চেষ্টা করলো। ‘জ্বর তো নেই। তাহলে অন্য কোন সমস্যা ? ‘
নূর মায়াকে আচমকা জড়িয়ে ধরলো, মায়া অবাক হলো বেশ। সচরাচর নূর এমন করে করে না।
নূর আপনা আপনিই সরে এলো কিছু সেকেন্ড পর, তখনই বাইরে থেকে আওয়াজ এলো,
‘বাহ, ভাবী ননদিনীর ভাব এমন জমে গেছে যে তারা আমাকেই ভুলে গেছে। ‘

মায়া আর নূর সেদিকে তাকালো। নূরের ভাইয়া নওশাদ দাঁড়িয়ে রয়েছে, এক হাতে ট্রলি ও অন্যহাতে ছোট ব্যাগ।
নওশাদকে দেখে মায়া ছুটে গেল, জড়িয়ে ধরলো তাকে, আজ প্রায় একমাস পর সে বাসায় ফিরেছে। নূর গিয়ে তার ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলো। নওশাদ দু হাতে দুজনকে আগলে নিল ছোট বাচ্চাদের মতো।
একজন স্ত্রীর কাছে তার স্বামী হয় তার কাছে সবচেয়ে বড়ো আপনজন, আর একটা বোনের কাছে তার ভাই হয় এক বিরাট ছত্রছায়া। নূর তার বাবার ভালোবাসা না পেলেও তার ভাইয়ার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়নি, নওশাদ সর্বদা তাকে আগলে আগলে রেখেছে।

নওশাদ তাদের দুজনের হাত ধরে সোফাতে বসালো। মায়া ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আর নওশাদ তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। তাদের দুজনের একা সময় করে দিতেই নূর সেখান থেকে উঠে কিচেনে গেল, নওশাদের জন্য জুস বানাতে। গিয়ে দেখলো মায়া জুস বানানোর অর্ধেক কাজ করেই ফেলেছে। নূর জুসটা নওশাদের হাতে দিল, তারা তিনজন মিলে গল্প করতে গেলে গেল। কথার মাঝে মাঝে মায়া আয়াশকে নিয়ে নানাবিধ কথা বলে নূরকে লজ্জা দিচ্ছে, নূর ও কিছু বলতে না পেরে বিধায় হাসছে।

তাদের কথার মাঝে হঠাৎ নূরের ফোনের রিঙ বেজে উঠতেই নূর কল ধরলো, আয়াশ ফোন করেছে। এই মুহূর্তে তার সাথে ওর কথা বলার ইচ্ছা না থাকলেও মায়া কে ফোন করেছে জিজ্ঞাসা করতেই নূর ফোনটা ধরল।
‘জ্বি বলুন। ‘
‘আফুসোনা জলদি আসো, সাওন এক্সিডেন্ট করেছে। ‘
‘কি বলছেন আপনি? আর কিভাবে হল? ‘
নূরকে এভাবে কথা বলতে দেখে নওশাদ ও মায়া দুজনেই কৌতূহল সহ জিজ্ঞাসা করতে লাগল,
‘কি হয়েছে? ‘

নূরের কানে যেন তাদের করা প্রশ্নটা গেল না।
‘আপনি এখন কোথায়? আর সাওন কোথায়? ‘
‘আমি সাওনকে নিয়ে হসপিটাল যাচ্ছি। তোমরা দ্রুত এসো। ‘

কথাটা বলে আয়াশ কেটে দিল। কল কাটতেই নূর তাদেরকে জানাতেই তারা তিনজন বেরিয়ে গেল হসপিটালের উদ্দেশ্যে। মায়া কান্না কাটি করতে লাগলো। তার বাড়ির সকলে হসপিটালে উপস্থিত। আই সি ইউ এর সামনে দাঁড়িয়ে সবাই সাওনের সুস্থতার দোআ করতে লাগল। নূরের মাঝেও এক অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল, যে সাওন হয়তো তার কারনেই এমনটা করেছে।

নূর চেয়ারে বসে আছে। নওশাদ মায়াকে জড়িয়ে রেখেছে পাশ থেকে, তার প্রেশার লো, যখন তখন মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারে, আর এই অবস্থায় তা মা আর বেবির দুজনের জন্যই ক্ষতিকর।
নূর আশেপাশে আয়াশকে কোথাও দেখতে পেলো না।

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৭

চেয়ার ছেড়ে উঠে এপাশ ওপাশ তাকাতেই দেখলো আয়াশ একজনের সাথে কথা বলছে, লোকটাকে দেখে কোনভাবেই নূরের ডাক্তার অথবা হসপিটালের স্টাফ মনে হলো না। নূর অনেকক্ষণ যাবৎ তাদেরকে দেখতে লাগলো। তারপর নওশাদ তাকে ডেকে উঠতেই সে সেদিকে ছুটে গেল। মায়া জ্ঞান হারিয়েছে।

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ বোনাস পর্ব