তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ বোনাস পর্ব 

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ বোনাস পর্ব 
সুরাইয়া আয়াত

সারাদিনের অনেক ধকলের পর রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বিছানায় গা এলিয়েছে নূর। মায়া অসুস্থ তাই নওশাদ তাকে তার বাবার বাসায় রেখে এসেছে। কারণ সকালে নূর আর আয়াশ বেরিয়ে গেলে তারপর নওশাদ নিজেও তার শ্বশুর বাড়ি যাবে। আজ রাতে আরাফাত সাহেব রংপুর গেছেন তার বিশেষ কাজে। তাই বাসা পুরোপুরি খালি থাকবে।
সবুজ রঙের ডিম লাইটের মৃদু আলোতে নূরের চেহারায় এক মায়াবী ভাব ফুঁটে উঠছে, সারাদিনের ধকলের পর একটু বিশ্রাম না নিলে দূর্বল হয়ে পড়বে সে।

চোখে ঘুম এসেও যেন আসতে চাইছেনা বারবার। মাথায় হাজারো প্রশ্নের ঘুরপাকে তার চোখ এর ঘুম উড়ে গেছে নিমেষেই। হাজারো প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার তার মাথায় ঘুরছে ‘আয়াশের কোন চোট লাগেনি কেন? ‘
যদিও এর উত্তর আয়াশ সকলকে দিয়েছে।
হসপিটালে,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া জ্ঞান হারানোর পর নওশাদ তাকে বেডে শুইয়ে দিয়েছে, সে আপাতত ডাক্তারি চিকিৎসাধীন। নূর মায়ার হাত ধরে তার পাশে বসে রইলো, নূর যেতেই নওশাদ বাইরে বেরিয়ে এলো, আয়াশকে ফিরতে দেখে নওশাদ খুবই নম্র সুরে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ভাই এক্সিডেন্ট হলো কিভাবে? ‘

বাইরের সব কথায় নূরের কানে আসছে। নূর আয়াশকে বলতে শুনতে পেলো।
‘আসলে ভাইয়া মাঝ রাস্তায় সাওন ভাই বলে উঠলেন যে ওনার মাথায় কেমন ব্যাথা করছে। আমি তা শুনে একটা ফারৃমেসির সামনে গাড়ি দাড় করাতে বললাম ওনাকে। আমি মেডিসিন আনতে গেলেই দেখলাম চারিদিক থেকে লোকজন ছুটছে একদিকে। পরে মেডিসিন নিয়ে ফিরলে দেখলাম গাড়ি আর জায়গায় নেই, উনি বোধহয় গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরতে চাইছিলেন, আর তখন গাড়ি ঘোরাতে গিয়ে তাল সামলাতে না পেরে গাছের সাথে ধাক্কা দেন। ‘

নওশাদ আয়াশের কাধে হাত রেখে বলল,
‘ধন্যবাদ তোমাকে, তুমি ঠিক সময়ে খবর টা না দিলে, ‘
আয়াশ ওনার হাতের ওপর হাত রেখে বলল,
‘মানবতা নামক জিনিসটা এখন মরে যায়নি ভাইয়া। তাছাড়া ওনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আমি তার সাথেও এমনটাই করতাম। ‘

ভাবনা থেকে ফিরে এলো নূর। আয়াশের মুখ থেকে কথাটা শোনার পর তা ৮০ শতাংশ বিশ্বাস হলেও বাকি ২০ শতাংশ অবিশ্বাস তার মনে জন্মাচ্ছে, কারন এই লোক যা ইচ্ছা হয় তাই করে তাই সাওনের সাথে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনা অবাক কিছু নয়।

নূর দীর্ঘশ্বাস ফেলল, আচমকা কেউ তার হাতের ওপর স্পর্শ করতেই নূর কেঁপে উঠলো। পাশ ফিরে তাকাতেই আয়াশকে দেখে খানিকটা শান্ত হলো। নূর জ্বীন ভূতে বেশ ভয় পায়, আচমকা শরীরে স্পর্শ করলে তাই এমন ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

নূর উঠে বসতে যাবে, আয়াশ তাকে উঠতে দিল না। আচমকা আয়াশ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেই নূরের শরীরটা নিস্তেজ হয়ে আসার উপক্রম। এ স্পর্শে যেন সে সবকিছু ভুলে গেছে, তার কন্ঠ দিয়ে কোন স্বর আসছে না। এমন এক অনুভূতি কাজ করতে লাগলো তার মাঝে।
আয়াশ ক্রমাগত তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো, নূর ও আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে। একরাশ ঘুম নূরের চোখে ঢলে আসতে চাইছে তবুও নূর কথা বলার চেষ্টা করে বলল,

‘ আপনি ঠিক আছেন? ‘
আয়াশ জবাব দিল না, সে কেবল মুচকি হাসলো। নূর ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বলল,
‘আপনি হাত সরান প্লিজ। আমার ঘুম আসছে। আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই। এভাবে ঘুম পড়ানোর চেষ্টা করবেন না। ‘

আয়াশ নূরের কোন কথায় শুনলো না। তার হাতটা নূরের মাথা থেকে সরছেই না।
আয়াশ কিছুক্ষণ পর বলে উঠলো,
‘শাড়িটাতে তোমাকে এতোটা মানাবে জানলে সেই শাড়ি আমি আগেই কয়েকশো টুকরো করে ফেলতাম। ‘
নূরের চোখ বুজে আসতে চাইলো। ঘুম ঘুম চোখে কেবল একটা কথায় বলল
‘ওটা আপনি দিয়েছেন? ‘

আয়াশ নূরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘নারীদের বেশি সুন্দর করে সাজতে নেই। তাতে যে একটা পুরুষ তার মাঝে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, নিজের অনুভূতি গুলোর সামাল দিতে পারে না, নিয়ন্ত্রণ থাকে না তাদের আবেগ।
এন্ড আই হেইট ইউ। তাই এতো সুন্দর করে সাজবে না। ‘

আয়াশের বলা শেষের কথাগুলো বোধহয় নূরের কান অবধি পৌছায়নি, নতুবা তার এই কথাগুলোতে তার হৃদয়টা ঠিক কতোটা ক্ষতবিক্ষত হতো সেটা হয়তো বোঝানো মুশকিল।
একটা নারী কখনোই তার পছন্দের অথবা অপচ্ছন্দের পুরুষের থেকে তার নিন্দা শুনতে পারে না।
নূরের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয় হয়তো।

আয়াশ এবার নূরের মাথা থেকে হাত সরালো। বেশ অনেকক্ষণ চেয়ে রইলো তার দিকে। আপনা আপনিই বলে উঠলো,
‘তোমাকে আমি ঠিক করে দেখতে পাচ্ছি না। এটা তো ঠিক না আফুসোনা। ‘
আয়াশ মেঝে থেকে উঠলো, জানালার কাছে দাঁড়িয়ে পর্দাটা সরাতেই জোৎস্না রাতের চাঁদের আলো নূরের মুখের আর শরীরের ওপর পড়ে তাকে আলোকিত করে দিল যেন। আয়াশ পুনরায় মেঝেতে বসে নূরের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো,

মুচকি হেসে বলল,
‘এবার তোমাকে সুন্দর লাগছে আফুসোনা।’
আয়াশ নূরের মুখের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো আঙুল দিয়ে আকিবুঁকি করতে করতে বলল,
‘তুমি হয়তো জানো না আফুসোনা, আমি ঠিক কতোটা পাগল। নাহ তোমার জন্য না। নিজের উদ্দেশ্যে হাসিল করার জন্য পাগল। তবে আমার সাফল্যের এক বিরাট অংশ নিয়ে যে তুমি জড়িয়ে আছো, আর তোমাকে কেউ কষ্ট দিলে আমি কি করে তা সহ্য করি বলো। তার তো শাস্তি পাওয়া উচিত।

তোমাকে কষ্ট দিলে শুধু আমিই দেবো। আর ভালোবাসলেও আমি বাসবো। কোন সাওন না। নাহ, ভালোবাসবো কি করে! আমি তো কাউকে ভালোবাসতেই পারি না। শাফিয়াত আয়াশ কাউকে ভালোই বাসতে পারে না। তুমি আবার আমার প্রেমে টেমে পড়ে যেও না প্লিজ, আই নো আমি গুড লুকিং আর হ্যান্ডসাম। তোমার সাওনের থেকে তো হ্যান্ডসাম সেটা তো মানো।
ও তোমাকে কেড়ে নিতে চাইলেই আমি দিয়ে দেবো? এতোটাও গ্ৰেট আয়াশ নয় আর হবেও না কখনো। আই কান্ট শেয়ার ইউ উইথ এনিওয়ান। ইউ আর জাস্ট মাইন, ওনলি মাইন। ‘

কথাটা বলে নূরের হাতের ওপর ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে কামড় দিয়ে উঠতেই নূরের ঘুম ভেঙে গেল, ধড়ফড় করে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। জানালার দিকে তাকাতেই দেখলো পর্দাটা খোলা চাঁদের আলো ঘরের ভিতরে প্রবেশ করছে।

নূর কেঁপে উঠলো। চাঁদের আলোতে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাতে দাঁতের দাগ স্পষ্ট। হাতটা ধরে পাশে তাকাতেই দেখলো আয়াশ তার দিকে ড্যাপড্যাপ করে চেয়ে আছে। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূর চমকে উঠলো, সাথে খানিকটা চিৎকার ও দিয়ে উঠলো। আয়াশ হাসছে, নূর ভয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে খানিকটা দূরে সরে যেতে নিলেই আয়াশ বলল,

‘আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করো না আফুসোনা। যেখানে যাবে আমাকেই পাবে। কজ মাই আইস আর অলওয়েজ অন ইউ। তোমার ছায়া হয়ে গেছি বলতে পারো। ‘
মাঝরাতে আয়াশের থেকে এমন কথা শুনে নূর বারবার কেঁপে উঠছে, চিৎকার দিয়ে উঠবে সে সাহস ও তার নেই। তার মাথায় কেবল একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,

‘এই অশান্তি কে কি ভূতে ধরলো মাঝরাতে? ‘
হাতের দিকে কামড়ের দাগটা আর একবার ভালো ভাবে দেখে নিল। হাতটা জ্বালা করছে হাতটা ঝাড়ি দিয়ে মনে সাহস সঞ্চয় করে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতেই আয়াশ আবার জোরে হেসে উঠলো, নূর পুনরায় ভয়ে পিছিয়ে গেল। আয়াশ তাকে ইচ্ছা করে ভয় দেখাচ্ছে।

নূর কাঁপা কন্ঠে সুরা পড়তে লাগলো, আয়াশ এবার বিছানা ছেড়ে নেমে নূরের সামনে গিয়ে নূরকে কোলে তুলে বলল,
‘এবার আমি এই জানালার বাইরে দিয়ে হেটে বাতাসে হাটবো। তোমাকে এভাবে কোলে নিয়ে থাকতে থাকতে যদি আমার হাত ব্যাথা হয়ে যায় তো ফেলে দিয়ে আমি একা হাটবো, আর যদি তেমন না হয় তোমাকে নিয়েই হাটবো। হা হা হা। ‘
বলে নূরকে কোলে তুলে নিতেই নূর ভয়ে কেঁদে ফেলল উচ্চস্বরে। আয়াশ ঠোঁট চেপে হেসে বলল,

‘ আমি কিন্তু হাটা শুরু করছি। এই এক পা, দুই পা।’
নূর এবার গলা ছেড়ে কান্না করলেই আয়াশ বলল,
‘ এখন কিন্তু আমরা কিন্তু বাতাসে হাটছি।’
নূর আয়াশের বুকে মুখ লুকিয়ে অনবরত কান্না করতে লাগল। আয়াশ এবার বলল,

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৮

‘এবার আমি তোমাকে ফেলে দেবো। ‘
নূর আর কিছু ভাবতে পারলো না, আয়াশ নূরকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই দেখলো তার আর সাড়া শব্দ নেই, কান্নার আওয়াজটাও নেই। নূর জ্ঞান হারিয়েছে। আয়াশ নূরের গালে হাত রেখে ডাকলো,
‘এই আফুসোনা চোখ খোলো। আমি তো মজা করছিলাম। ‘

তুমিই আমার প্রিয় নেশা সিজন ২ পর্ব ৯