তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৪ || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৪
Suraiya Aayat

সকালবেলা হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অসস্তিকর অনুভূতি হতেই আরুর ঘুমটা ভেঙে গেল,,,,নিজেকে যেন অন্য মানুষের সাণ্নিধে্্য অনুভব করতে কষ্ট হচ্ছে না, ওর সন্দেহটাই কি তাহলে সত্তি তা বোঝার জন্য যখন পাশ ফিরল তখন দেখল আরিশ ওর পাশে শুয়ে আছে ৷ হঠাৎ আরুর মনের মধ্যে খটকা হতেই আরু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল , নিজেকে সম্পুর্ন অগোছালো লাগছে, কালকে রাতে যে সমস্ত গয়না গুলো ও পরে ছিল সেগুলো আর নেই গায়ে ৷ এই মুহূর্তে ওর কি করা উচিত আরূ ভুলে গেছে ৷

আরিশকে কোনরকম ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই অবাক হল, যেমন অবস্থায় ও জ্ঞান হারিয়েছিল তেমনটা এখন আর নেই, চুল গুলো খোলা , লেহেঙ্গার ওড়নাটা ও আর নেই , হাতের সমস্ত চুড়িগুলো আর নেই , গলায় বিশালাকৃতির যে অর্নামেন্টস গুলো ছিল সেগুলোর কোন চিহ্ন নেই , আর একটা আচড়ের দাগ ও আছে , আরূ একটা শুকনো ঢোক গিলল, হঠাৎ গলায় আচর দেখতেই আরূর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো, তারমানে ওর ঘুমের সুযোগ নিয়ে আরিশ ওর উপর নিজের অধিকার কাটিয়েছে , কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতেই নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না , আরিশের কাছে গিয়ে ঘুমন্ত আরিশকে একটা চর মারলো ৷

আরিশ চড় খেয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে চোখ বন্ধ রেখেই আরুকে বলল,,,
__” সকাল সকাল রোমান্সটা অনেক রকমের হয় আরুপাখি , তবে তুমি যে এই পদ্ধতিটা অবলম্বন করবে তা যদি আমি আগে জানতাম না তাহলে কালকে রাতে আরো বেশি বেশি করে রোমান্স করে নিতাম ৷( আরুকে রাগানোর জন্য মিথ্যা কথা বলল)
রাগে ঘৃণায় আরুর চোখে জল চলে এলো, আরূর চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়তেই আরিশ চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__” কাঁদছো কেন?”
আরূ এবার আরিশের কাছে গিয়ে আরিসের জামার কলার ধরে বলতে লাগলো,,,
__” আমার আর কত দুর্বলতার সুযোগ নিবেন আপনি ? আপনি একটা মানুষ নাকি নরপশু কোনটা?”
আরিস আরূর হাতটা ছাড়িয়ে বলল,,,,
__” আমি কিছু করিনি , মজা করছিলাম , দেখছিলাম যে তুমি কিভাবে রিয়েক্ট করো ৷ ভোরের দিকে তোমার গলার হারের একটা অংশ ছিড়ে গায়ে তোমার গলায় আছড়ে গেছে তাই খুলে দিয়েছি ৷”
কথাটা শোনার সাথে সাথে আরূ রেগে গিয়ে আবার সপাটে আরেকটা চড় মারল ৷
আরিশ এবার রক্ত চক্ষু নিয়ে আরুশির দিকে তাকিয়ে আছে , বারবার একই জিনিস ঘটছে ওর সাথে ৷ রেগে গিয়ে আরুকে বলল,,,,

__” একই জিনিসের রিপিটেশন টা বড্ড একঘেয়েমি আরুপাখি, ট্রাই সামথিং নিউ , আই মিন চড়ের বদলে একেবারে চাকুটা পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে শেষ করে দিলেই তো পারো ৷”
কথাটা শোনার সাথে সাথেই আরুর এবার কিঞ্চিৎ খারাপ লাগা কাজ করলো ৷ মানুষটা বয়সের দিক থেকে কিছুটা হলেও ওর থেকে বড় , তাছাড়া এটা নিয়ে প্রায় তিন থেকে চারবার আরিশকে চড় মারল আরু, এটা কোন ভাবেই ভদ্রতার খাতিরে শোভা পায় না তবুও মানুষটা ওর সাথে একৈর পর এক যা করে চলেছে তাতে আরূ আর নিজেকে আটকে রাখতে পারছে না ৷
আরু কিছু বলছে না চুপচাপ হয়ে রয়েছে, আরিস আরূর পাশ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল…..

আরিসের এমনটা ব্যবহারে আরুর এবার রাগ আর অনুশোচনার সংমিশ্রনের অনুভূতি হতে লাগলো ৷
সত্তিই তো শারিরীক আঘাত ছাড়াও তো মুখের কথাতে মানুষকে আঘাত করা যায় কিন্তু তা যে আরু পারে না, পারলে হয়তো এতদিনে আরিশের মনটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিত ৷ কেন নিজের মাঝে এই বদঅভ্যাসগুলো আনতে পারে না আরু !এই কথাটা ভেবে বিছানায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল ৷
আরিস ওয়াশরুম থেকে জোর গলায় চেঁচিয়ে বলল,,,

__” আরুপাখি রুমের ভিতর কি বন্যা হয়েছে যে বন্যার জল ওয়াশরুমে চলে আসছে ৷ দেখোতো আটকানো যাই কি !”
বন্যার জল কথাটা শুনে আরু প্রথমে অবাক হয়ে গেল তারপর বুঝতে পারল যে আরিশ মজার ছলে বলেছে কথাটা , তা শুনে খানিকটা রেগে গেল আরু, রেগে গিয়ে বলল,,,,,
__” অভদ্র মানুষের যে এটাই স্বভাব , মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলতে তাদের দ্বিধা হয় না ৷ মিস্টার অভদ্র ৷”
মিস্টার অভদ্র কথাটা শুনে আরিশ ওয়াশরুম থেকে মুখ বের করে বলল,,,,
__” উইইমা টুইটুই, আমি মি:অভদ্র?৷ বউ ভালোবেসে দিয়েছে নামটা ৷ ”
__”লজ্জা করে না আপনার?”
__”লজ্জা সেটা আবার কি জিনিস?খাই নাকি গায়ে মাখে গো??”
আরূ বিরক্ত হয়ে হাতের পাশে থাকা টাওয়ালটা ছুড়ে মেরে রূম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
আরিশ তোয়ালেটা ধরে বলল,,,,
__” তোমাকে রাগানোর অনেক বেনিফিট আছে, টাওয়ালটাই আমি চাইছিলাম ৷?”

__”সাবধানে যাস আর পৌঁছে একটা ফোন করিস , আর বেশিদিন থাকবি না কিন্ত তাড়াতাড়ি চলে আসবি, তোর জন্য মন খারাপ করবে খুব ৷”
আরূ একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল,,,,
__” চিন্তা করো না ফুপি ,তুমি সাবধানে থেকো ৷”
আরূ একবার সানার দিকে তাকালো ,সানার মনটা খারাপ তবে কারণটা আরূ জানে না , এমনিতেই সানা খানিকটা চাপা স্বভাবের কিছু বলতে চায় না তাই আরূ ও সানার মন পড়ে বুঝে উঠতে পারেনা যে ঠিকই হয়েছে , তবুও এই মুহূর্তে সানাকে খুব হতাশ লাগছে দেখে আরূ সানার কাছে গিয়ে মুচকি হেসে সানার গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল,,,,,
__” এইযে সানা বাবুই আসছি ৷”
সানা মুচকি হেসে বললো,,,
__” সাবধানে যাস….”

আরিশ গাড়িতে বসে আছে ,সানগ্লাসটা খানিকটা ঠিক করে নিয়ে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বলে উঠলো,,,,
__” এত লেট হচ্ছে কেন তাড়াতাড়ি এসো…”
অনিকা খান মুচকি হেসে বললেন,,,,,
__” ওই দেখ আরিশ তোকে ডাকছে , তারাতারি যা, আর দেরি করিস না ৷ আর শোন ছেলেটা কোথাও গিয়ে থাকেনা তবে তুই থকতে বললে 2 দিন অন্তত থাকবে, তাই ওকে একটু মনিয়ে নিস ৷”
__” আচ্ছা ৷”
আরু সকলের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো…..
বাড়ি থেকে গাড়িটা খানিকটা দূরে যেতেই আরিশ গান চালিয়ে গানের ভলিয়্যুমটা বাড়িয়ে দিতেই আরূ বিরক্ত হয়ে গেল কারণ গানটা তীব্রভাবে কানে বাজতে লাগলো, গানটাও অত্যন্ত বিরক্তিকর লাগছে ৷

__” মুন্নি বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে ৷”
গানটার সাথে সাথে আরিশ তাল মিলিয়ে বলছে,,,,,
__” মুন্না বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে ৷”
আরুকে রাগিয়ে দিতেই বলল গানের ভলিউম টা বাড়িয়ে দিল, আরিশ,,
__” গানটা থামান আমার বিরক্তি লাগছে ৷”
আরিশ চুইংগাম চিবোতে চিবোতে বলল,,,,
আচ্ছা I have 1 question ! বলি?”
__” কি??”

__” তোমাকে ভালোবাসতে গেলে চড় খেতে হয়, সত্যি কথাটাও যদি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে বলি তাহলেও তোমার সহ্য হয়না ৷ আচ্ছা কবে থেকে আমরা ঠিক করে প্রেম শুরু করবো তুমি একটু বলবা?”
__” আমার অসমাপ্ত প্রেমটা আপনি সফল হতে দিলেন কই, তা তো আপনি,,,,,,”
কথাটা বলার সাথে সাথে আরিশ জোরে ব্রেক মেরে গাড়িটা থামিয়ে আরুর মুখটা চেপে ধরে বলল,,,,
__” তার কথা মনে পড়লে খুব ভালোবাসা জাগে মনে তাইনা ? খুব ভালোবাসো তাকে তাইনা !”
আরু ভয়ে মাথা নাড়াতে লাগলো,,,,,,
হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আরিশ আরুকে ছেড়ে দিল,,,,,

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৩

আরুর চোখমুখে আতঙ্ক, মানুষটা মাঝেমাঝে এতটা ভয়ংকর রুপ ধারন করে যে নিজেকে হেল্পলেস মনে হয় আরুর ৷ একমাত্র এই স্বভাবটার জন্যই হয়তো মানুষটাকে আজো ভালোবেসে উঠতে পারেনি আরু ৷
আরু ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না, হাঠাৎ আরিশ গাড়ি start দিতেই আরু চোখ বন্ধ করে মাথাটা সিটের সাথে এলিয়ে দিলো ৷
আরিশ ও চুপচাপ আছে, আরিশের মনে যে একটা দযকা হাওয়া বইছে সেটার আভাস আরু পাচ্ছে ৷ মানুষটা কেন ওকে অন্য মানুষের সাথে ভাবার কল্পনাও করতে পারে না সেটা আরু আজো বুঝে উঠতে পারে না, তাহলে কি আরুকে হারিয়ে ফেলার ভয়টা আরিশের মনে তীব্র আর সেই কারনেই কি এত মিথ্যা অপবাদে আরুকে নিজের করে পাওয়া ?
কথাগুলো আরুর মাথায় বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে ‌৷

আরুর বাড়ির সামনে আরুকে দিয়ে নামিয়ে আরিশ কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই আরু কিছু একটা ভেবে বলল,,,,
__” চলে যাচ্ছেন কেন আপনার তো থাকার কথা!”
আরিশ চোখের সানগ্লাসটা খুলে পকেটে রেখে বলল ,,,,
__” অনেকদিন নিজেকে অগোছালো হয়ে খেলা হয়না, সুস্থভাবে থাকলে অবশ্যই আসবো,চিন্তা করো না, আর আজকে তো ফাল্গুনের প্রথম দিন তোমার কি মনে নেই ?”
ফাল্গুন কথাটা শুনে আরুর বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷
আরু কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,,,,

__” এসব ফাল্গুন টাল্গুন ছাড়ুন ,আপনি আমার সাথে আসুন ৷”
__” সরি বউ তোমার এই কথাটা রাখতে পারলাম না ৷”
__” কোথায় যাবেন আপনি ?”
__” চিন্তা নেই দিনশেষে তোমার কাছেই ফিরে আসবো ৷’
কথাটা বলে আরিশ গাড়ি নিয়ে চলে গেল….
আরিশ চলে যেতেই আরূ একটা শুকনো ঢোক গিলল কারণ আজকেও একটা রক্তারক্তির খেলা হতে চলেছে আর যেখানে আরিশ বারবার নিজের কাছে হেরে গিয়ে রক্তাক্ত হয় ৷

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ৩ পর্ব ৫