তোলপাড় পর্ব ২৩+২৪+২৫

তোলপাড় পর্ব ২৩+২৪+২৫
শান্তনা আক্তার

আহসান গাড়ি থেমে নেমে বলল,গাড়িতে উঠছো না কেন?কি প্রবলেম?
রিমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে জবাব দিল,আমি আপনার গাড়িতে চড়ে যাবনা বাজারে।
-দেখ আমার কিন্তু আর সহ্য হচ্ছে না।একে বাজারে যাওয়ার জন্য কনভিন্স হয়েছি তার উপর তোমার এই আরেক ঝামেলা।
-আমি কোনো ঝামেলা করছি না।আমি জাস্ট বলেছি আপনার গাড়িতে আমি যাবনা।
-গাড়িতে যাবে না তো কি আমার কোলে বসে যাবে(দাঁত কিরমির করে)
-আমি কি তাই বলেছি একবারও!আমি আপনার গাড়িতে যাবনা কারণ আমি চাই আমরা আব্বুর সাইকেলে চড়ে বাজারে যাব।
-হোয়াট!ফান ছাড়ো আর গাড়িতে গিয়ে বোসো।
-আমি মোটেও ফান করছি না।করার ইচ্ছেও নেই।আমি সিরিয়াস।

-সাইকেল কি তুমি চালাবে?আমি এই গরমে সাইকেল চালাতে পারবো না।আমার দ্বারা এই সিলি কাজ সম্ভব না।জাস্ট ইম্পসিবল।
রিমি ওর দুই হাত বুকের সাথে বেধে বলল,তা কেন পারবেন?বড়লোক বাপের ব্যাটা যে আপনি।সাইকেল চালালে প্রেস্টিজ প্লাস্টিক হয়ে যাবে তো।লোক সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না।শরীরে দাগ কেটে যাবে।লাটসাহেব একটা হুমহ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-তুমি যা খুশি বলো আই ডোন্ট কেয়ার।আমি বাজারে যেতে পারলাম না সরি।এই বলে গেটের ভেতর ঢুকে গেল আহসান।
রিমি ভেঙিয়ে বলল,যান যান।আপনি আবার এসেন বলতে আমাকে ভালো মানুষ হতে সাহায্য করবে তো রিমি!তখন দেখেন আমি কি বলি।ভালো মানুষ হতে চাইলে বিলাসিতা ত্যাগ করতে হয়।সেটা আপনি কখনোই পারবেন না।একদমই অসম্ভব কাজ এটা আপনার জন্য।আহসান বেশি দূর আর যেতে পারলো না,পুনরায় পিছিয়ে এলো।তারপর বললো,আমি যাচ্ছি চলো।আহসান কথাটা এক প্রকার বাধ্য হয়ে বললো।ও না পারছে রিমিকে না করতে,আর না পারছে নিজের মর্জি মতো চলতে।রিমি ওর বাবার সাইকেলটা এনে বলল,নিন সাইকেল।আহসান একবার সাইকেলের দিকে তাকাচ্ছে,আরেকবার রিমির দিকে তাকাচ্ছে।বেচারার অবস্থা পাউরুটির জ্যামের মতো হয়ে গেছে।দুকুলেই সংকট।চাপা ওকে পড়তেই হবে।

রিমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,তাড়াতাড়ি করুন সময় তো আর বসে থাকবে না আমাদের জন্য।আহসান অসহায়ের মতো সাইকেলে চড়ে রিমিকে বেশ রেগেমেগে বলে,ওঠো।রিমি সাইকেলের পিছনে বসতেই আহসান সাইকেল চালাতে শুরু করে।রিমি ডান বাম বলে বাজারের রাস্তা দেখিয়ে দেয়।বাজারে পৌঁছে ওরা প্রথমে সবজির দোকানে গেল।গিয়েই রিমি একটা টমেটো হাতে নিয়ে বলল,চাচা টমেটোর কেজি কত?
দোকানদার উত্তর দিল,২৫ টেকা কিলো।

রিমি চোখ বড় বড় তাকিয়ে বলল,বললেই হলো ২৫ টাকা কিলো!২০টাকার এক টাকাও বেশি দেব না।২০ টাকা কিলো হলে ৩ কিলো নেব।দোকানদার বলল,আইচ্চা নেন তাইলে।এরপর রিমি আলুর কেজি কত জিজ্ঞেস করল।দোকানদার বলল ২০ টাকা কেজি।রিমি বলল ১৮ টাকার এক টাকাও বেশি দেবে না।এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল।আহসান এসব দেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,ডিসগাস্টিং তুমি ২-৫ টাকার জন্য ঝামেলা কেন করছো?আমি দাম দিয়ে দিচ্ছে তুমি যা লাগবে নিয়ে নাও তবে বার্গেনিং ছাড়া।
-আপনি কি বলছেন হুম?২-৫ টাকা কি টাকা না?যেটা সঠিক দাম আমি সেটাই বলেছি।শুধু শুধু ২টাকা বেশি কেন দেব?

আর আপনাকে দাম দিতে হবেনা।আম্মু যত টাকা দিয়েছে ওই দিয়েই সব সদাই কিনে আরও টাকা বেঁচে যাবে।আপনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন তো।আহসান আর কিছু বললো না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে রিমির কান্ডকারখানা দেখে গেল।রিমি একটার পর একটা সবজি নিচ্ছে।তবে দরকষাকষি করে।সবজি নিতেই বেশ খানিক সময় ব্যয় হয়ে গেল।তারপর ওরা মাছের দোকানে গেল।সেখানে গিয়ে আহসান ওর পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখে চেপে ধরল।রিমি মাছ দেখছিল এমন সময় আহসান রিমির এক হাত টেনে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে বলল,এই তুমি আমাকে এখানে কেন এনেছো?কি বিচ্ছিরি স্মেল এখানে।আমি আর এক মুহুর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।

-আচ্ছা আপনি এখানেই দাঁড়ান তাহলে।আমি মাছটা নিয়ে নেই তারপর আর থাকতে হবে না এখানে।আমরা চলে যাব।আর কিছুসময় ম্যানেজ করে নিন প্লিজ।
-ওকে ডু ফাস্ট।রিমি মাছ কিনে আহসানের দিকে আসছিল কি একটা ছেলে ইচ্ছে করে রিমির সাথে ধাক্কা খেল।রিমি ছেলেটির দিকে তাকাতেই ছেলেটা হাসি দিয়ে বলল,একা একা বাজার করতে এসেছো বাবু!কথাটা বলার সাথে সাথে রিমি ছেলেটার গালে কষে এক চড় বসিয়ে দিল।সাথে সাথে আশেপাশের সব মানুষ এসে ভীড় জমিয়ে দিল।আহসান ভীড় দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসলো।রিমি ছেলেটিকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে।ছেলেটিও যা নয় তাই বলছে।

আহসান ভীড় এড়িয়ে রিমির কাছে গিয়ে বলল,এসব কি করছো তুমি? সামান্য দামের জন্য লোকটার সাথে ঝগড়া করছো কেন?
-আমি ঝগড়া করছি না এই ছেলেটা আমার সাথে ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়েছে।তার উপর বাবুও বলেছে আমাকে।রিমি কথাটা শেষ করার পর পরই ছেলেটা বলে ওঠে,আপনি তো নাইকা পরীমণি তাই আপনাকে দেখে লোকে ইচ্ছে করে ধাক্কা খাবে তাইনা?
-একে মেয়েদের হ্যারাস করা তারপর উচ্চগলায় কথা বলা তাইনা এই বলে আহসান ছেলেটাকে লাথি চড় মারতে শুরু করলো।কিছু লোক আহসানকে ঠেকিয়ে ফেলায় ছেলেটা এক দৌঁড়ে পালিয়ে গেল।আহসান রিমিকে ঝাড়ি দিয়ে বলল,হয়েছে বাজার?রিমি মাথা ওপর নিচ ঝাকিয়ে হ্যাঁসূচক উত্তর দিল।তারপর বাজারের ব্যাগগুলো সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে আহসান রিমিকে নিয়ে সাইকেল চালাতে শুরু করে।বাসার বেশ কাছে চলে এসেছে এমন সময় আহসানকে সাইকেল থামাতে বললো রিমি।

-একটু সাইকেলটা থামাবেন প্লিজ?
আহসান সাইকেল থামিয়ে বলল,আবার কি হয়েছে?
-ওইযে ছোলাবুটওয়ালা।আমি যখনই এই রাস্তা দিয়ে যাই ছোলাবুট খাই ই খাই।
আহসান সাইকেল থেকে নামতে নামতে বলল,তুমি যে আর কি কি দেখাবে আমায়।রিমি ডোন্ট কেয়ার ভাব করে ছোলাবুটওয়ালাকে ছোলাবুট বানিয়ে দিতে বলল।আহসান সাইকেল স্ট্যান্ডে লাগিয়ে রিমির পাশে এসে দাঁড়ালো।রিমি স্পষ্ট বুঝতে পারছে আহসানের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।রিমি ছোলাবুট খেতে খেতে আহসানকে জিজ্ঞেস করলো,আপনি খাবেন?আহসান সোজাসাপ্টা বলল না,আমি এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খাইনা।তবে রিমি যে নাছোড়বান্দা।সহসে ছাড়বার পাত্রী নয়।

-খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।ওপ্স আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আপনি তো লাটসাহেব এসব কি আর আপনাদের মতো মানুষের পেটে হজম হবে!রিমির কথাটা যেন আহসানের একদমই পছন্দ হলো না। আহসান বেশ রাগিসুরে বলল,আমাকেও একটা বানিয়ে দিন এই ছোলা না কি যেন।রিমি আহসানের চোখ লুকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে।আহসান ছোলাবুট মুখে দিতেই ওর সব রাগ নিমিষেই উবে গেল।গপগপ করে সবটা খেয়ে ফেলল।যতক্ষণ ওর পেটে জায়গা ছিলো ততক্ষণ খেয়েই গেল।রিমি শুধু আহসানের খাওয়া দেখে গেল এক ধ্যানে।রিমির কাছে আজ আহসানকে এখন একটা সাধারণ মানুষই মনে হচ্ছে।ওর একটুও মনে হচ্ছে না যে আহসান অহংকারী দাম্ভিক একটা লোক।

আহসান খাওয়া শেষ করলে রিমি এক বোতল পানি এনে আহসানের দিকে এগিয়ে দিল।আহসান পানিটার দিকে তাকিয়ে আছে।তা দেখে রিমি বলে ওঠে,এটা বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলাম আমি।বাহিরের কাঁচা পানি আপনাকে দেব এতটা খারাপ আমি নই বুঝলেন?আহসান কিছু না বলে পানিটা খেয়ে নিল এক নিশ্বাসে।আহসান বিল মিটিয়ে আবারও রিমিকে নিয়ে সাইকেল চালাতে লাগলো।ওদিকে দুটো চোখ এখনো ওদের দিকে চেয়ে আছে।পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে বলতে শুরু করলো,স্যার ওরা মাত্র ছোলাবুট খেয়ে বাড়ির দিকে গেল।ওপাশের লোকটি ফোন কেটে দিয়ে হুংকার দিয়ে বলে ওঠে,কিহহহহ!তুমি এতটা নিচে নেমে গেছ আহসান?প্রথমে ওই আনহাইজেনিক পরিবেশে বাজারে গেলে আর তারপর সেই পরিবেশের খাবারও খেলে

?নাহ এভাবে চললে তুমি পুরোপুরি বিগড়ে যাবে।আমাকে ইমিডিয়েটলি কিছু একটা করতে হবে নইলে তুমি তোমার স্ট্যাটাস ভুলে যাবে।ওই মেয়েটার ভাইরাস তোমার শরীরে সংক্রমণের আগেই আমি ওকে তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দেব।আর এটা এই রঞ্জিত তালুকদারের প্রমিজ রইলো নিজের কাছে।কথাটা বলে টেবিলে থাকা কাগজপত্র এক থাবায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলল।

আহসান সন্ধ্যার দিকে একটা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেয়ে নিল।যেহেতু বাহিরের খাবার ও কখনো খায়না ভালো রেস্টুরেন্ট ছাড়া।তাই হঠাৎ খাওয়ায় বদহজম হয়ে গেছে।ডক্টর হওয়ায় নরমাল যেকোনো রোগ ব্যাধির ট্যাবলেট সবসময় ওর কাছে মজুদ থাকে।আহসান কিছুক্ষণ ধরে রুমের পাইচারি করছিল অমন সময় রিমি রুমে আসলো।এসেই বলল,এভাবে আন্সারদের মতো হাটছেন কেন?অবশ্য তারা যদি এভাবে হাটাচলা করতো তাহলে তো কাজই হতো।এতো চোরের উৎপাত বাড়তো না।আহসান পুরো চটে যায় রিমির কথায়।
-তুমি সবসময় বেশি কথা না বলে থাকতে পারো না তাইনা?মুখ এতো বেশি কেন চলে?

-আমি বললেই বেশি বেশি হয়ে যায় আপনার কাছে।যাজ্ঞে আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে এসেছি।বাজারে যাওয়ায় বিকেলে দিতে ভুলে গিয়েছিলাম।এই বলে কফির মগটা এগিয়ে দিল রিমি।
-নিয়ে যাও এখন আমার কিছু খেতে বা পান করতে ইচ্ছে করছে না।কিসব খাইয়ে দিলে আমায়!এখন এসিডিটি হয়ে গেছে আমার।
-কি!আমি খাইয়েছি?গেলার সময় মনে ছিলো না?আমি একটু টেস্ট করার মতো খেতে বলেছিলাম,আর আপনি ছোলাবুট শেষ করে আরও ৫-৬ বার নিয়ে খেলেন।পরাপর খেয়েই গেলেন দম নেওয়া ছাড়া।ভাত খাওয়ার মতো পেট ভরে খেলেন আপনি।এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছেন?আপনি মাত্রাতিরিক্ত খেয়েছেন বলে এই হাল হয়েছে।এইসব তেলে ভাজাপোড়া খাবার প্রয়োজনের বেশি খেলে এসিডিটি তো হওয়ারই কথা।আহসান রিমির কথায় চুপসে গেল।কিছু বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলল।তবুও আমতা আমতা করে বলল,হয়েছে হয়েছে এখন আমি ভুক্তভোগী তাই এতো কথা শোনাতে হবে না।

-কথা শোনানোর কাজ করলে কি করবো আমি?আচ্ছা সরি আর থ্যাংকস ও।
আহসান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,থ্যাংকস কেন?
-বাজার করতে সাহায্য করলেন আর ওই বদমাশ লোকটাকে উত্তমমাধ্যমে দিলেন তাই।
-তোমার থ্যাংকস আমার লাগবে না।এরই মাঝে আহসানের ফোন বেজে উঠল।আহসান ফোনের স্ক্রিনে রঞ্জিতের নাম দেখে রিসিভ করে বলল,বলো বাপি!

-তুমি এখনো ওই বাড়িতে কেন?আমি এটা একদমি আশা করিনি।আমি ভেবেছিলাম তুমি সেখানে দু মিনিটও থাকতে পারবে না।তুমি সত্যিই খুব বেশি বিগড়ে গেছ।আই কান্ট আন্ডার্স্ট্যান্ড তুমি ওইরকম মিডিলক্লাস একটা ফ্যামিলির সাথে কিভাবে থাকছো?(কথাগুলো একনাগাড়ে বলে ফেলল রঞ্জিত)
-বাপি কি হয়েছে বলোতো!আমরা তো আগামীকাল আসছি তাইনা।
-নো ওয়েজ।তুমি আজ রাতেই চলে আসবে আমি আর কিছু জানি না এই বলে ফোন কেটে দিল রঞ্জিত।
-হ্যালো বাপি,বাপি।ওহ নো কল কেটে দিল।

রিমি এতোক্ষণ আহসানের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছিল আর বোঝার চেষ্টা করছিল।কিন্তু তেমন কিছুই বুঝতে পারলো না।ব্যাপারটা জানতে আহসানকে জিগ্যেস করে,কি বলেছেন আপনার বাপি?
আহসান ফোনটা পকেটে পুরতে পুরতে বলে,আজ রাতেই বাড়ি ব্যাক করতে বলেছে।
-আজ রাতেই?কেন আমাদের তো আগামীকাল যাওয়ার কথা ছিলো।মনে হচ্ছে হসপিটালে জরুরি কোনো কাজ আছে তাইনা?
-না সেরকম হলে প্রথমেই বলতো আমাকে।
-তাহলে?

-আই ডোন্ট নো।তুমি সবকিছু গুছিয়ে ফেল আমরা কিছুক্ষণ পরই বেরুচ্ছি।
-এটা কিভাবে সম্ভব বলুন?আম্মুর শরীর ভালো নেই।তাছাড়া আব্বুও বাড়িতে নেই।এমতাবস্থায় আম্মুকে একা রেখে যাই কি করে?
-কেন,কি হয়েছে তোমার মায়ের?
-হাটুতে ব্যাথা।কদিন ধরেই কাতরাচ্ছে।
-আগে কেন বলোনি আমায়?আমি একটা স্প্রে অর্ডার দিচ্ছি সেটা লাগালে কাল সকালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে তোমার মায়ের হাটুর ব্যাথা।

-তাহলে তো খুবই উপকার হয়।কিন্তু তাও আমি আম্মুকে এভাবে একা রেখে যেতে পারবো না।আপনি যেতে পারেন আমি কাল নাহয় দুদিন পর আসছি।আসলে আম্মু যে দাঁড়িয়ে রান্না করবে তাও পারছে না।তাইতো আমি রান্না করছি।হায় হায় আমিতো রান্না চাপিয়েছি সেই কখন আমি রান্নাঘরে গেলাম এই বলে দৌঁড় লাগালো।
এদিকে আহসান চিন্তায় পড়ে গেল।বুঝতে পারছে না ও কি করবে।ওর বাপির কথা রাখবে নাকি এখানে থাকবে।আহসান ফোন বের করে অপাকে কল লাগানো।দু তিনবার রিং বেজেই রিসিভ হলো।

-কি এখন মনে পড়েছে মমকে?শ্বশুরবাড়ি রসের হাড়ি কথাটা মিললো তো!
-তুমি থাকো তোমার কথায়।আমি যে এখানে কতো বড় বিপদে ফেঁসে গিয়েছি।
-কেন?কেমন বিপদ বাধিয়েছিস তুই?
-অলওয়েজ আমিই প্রবলেম ক্রিয়েট করি তাইনা?আমি কিছুই করিনি।
-তো কে করেছে?
-বাপি।

-তোর বাপি কি করবে?উনি হসপিটালে কাজ করছে।
-বাপি আজ রাতের মধ্যেই বাড়িতে যেতে বলেছে।এদিকে রিমির মা অসুস্থ তাই ও বলছে যেতে পারবে না নাকি।
-কিন্ত তোদের তো আগামীকাল আসার কথা।কি হয়েছে বেয়ানের?
-বাপি তো আজই যেতে বলেছে।আর এই বেয়ানটা কে হুম?
-উফ ছেলে আমার বেয়ান চেনে না!আমি তোর শ্বাশুড়ি মায়ের কথা বলেছি।ওনার কি হয়েছে?
-ওহ,,হাটুতে পেইন।আর রিমির বাবাও এখানে নেই গ্রামে গিয়েছেন।

-তাহলে রিমি থাকুক তুই চলে আয় তবে কাল সকালের দিকে।রাতটা থাক।
-বাপি তো মানবে না।তুমি প্রতিবারের মতো বাপিকে কনভিন্স করিয়ে নাওনা প্লিজ।
-আমি প্রতিবার খুব বকা খাই আর পারলাম না বাবা।সরি রে।
-প্লিজ মম শুধু আজ রাতটা প্লিজ।ভালো মম আমার।
-আচ্ছা দেখছি আমি।
-লাভ ইউ মম উম্মাহহহ।

রাতে খাবার খেয়ে আহসান ও রিমি রুমে আসলো।রুমে আসতেই রিমির মনে পড়ে সেই বিষয়টা।রিমি আহসানকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি এখন বাড়ি যাবেন?
-না কাল সকালে যাব।তুমি স্প্রেটা তোমার মায়ের হাটুতে লাগিয়েছো তো?
-হুম,তো কিভাবে রাজি হলো আপনার বাপি?
-জানি না মম দেখবে বিষয়টা।আমি এখন চিল করে ঘুমাবো।এই বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
রিমি মনে মনে ভাবছে,ওনার বাপি যেই মানুষ!এই কদিনে বেশ বুঝলাম উনি মানুষটা তেমন সোজা নন।ছেলের থেকেও দশহাত উপরে।এতো সহজে কিভাবে মেনে নেবে?
বাসায় এসেই রঞ্জিত অপাকে জিজ্ঞেস করল,আহসান কখন এসেছে?
অপা বিছানা ঠিক করতে করতে বললো,আসেনি তো?
রঞ্জিতের হাসিমুখটায় যেন নিমিষেই অন্ধকার নেমে আসলো।সে গম্ভীর গলায় বললো,আসেনি মানে?

-আমি বলেছি রাত করে আসতে হবেনা সকালে আসিস তাই।
-তুমি বলার কে যেখানে আমি আসতে বলেছি?(চোখ রাঙিয়ে)
-রিমির বাবা বাড়িতে নেই আর ওর মা নাকি অসুস্থ তাই আসতে না করেছি।তবে সকালে চলে আসবে রাগ করো না।
-আমার কথার কোনো দামই নেই দেখছি এই বাড়িতে।
-তুমি সিচুয়েশনটা বোঝো প্লিজ।আমি খাবার লাগাচ্ছি তুমি খেতে এসো এই বলে বেরিয়ে আসে অপা।অপা বেরিয়ে গেলে রঞ্জিত খাটে মারলো এক ঘুষি।তারপর বলল,আমি তোমাকে ছাড়বো না রিমি!নিজ হাতে শাস্তি দেব তোমায়।এমন শাস্তি দেব যে তোমার রুহু অবধি কেঁপে উঠবে।রঞ্জিত রাগে রীতিমতো কাঁপছে।চোখও অগ্নিমূর্তি হয়ে গেছে।

পরেরদিন সকাল সকাল হসপিটালের কাজ সেড়ে বাসায় চলে আসে রঞ্জিত।তার নিয়ত আজ যদি আহসান না আসে তাহলে একটা তুলকালাম কান্ড বাধাবে সে।ওদিকে নাজমুল গ্রাম থেকে ফিরে আসায় রিমিও নিশ্চিন্ত হয়ে আহসানের সাথে রওয়ানা দিয়েছে।তাছাড়া আম্বিয়ার হাটু ব্যথা বেশ কমে গিয়েছে আহসানের দেওয়া স্প্রে লাগিয়ে।রিমি মুখ গোমরা করে আহসানের ব্যাক সিটে বসে আছে।আহসান গাড়ি চালাচ্ছে।আহসান look mirror এর দিকে তাকিয়ে রিমির মুখটা দেখে নিচ্ছে সময় পেলে।আহসান রিমির মন খারাপের কারণ বুঝতে পারছে।তারপরও আহসান রিমিকে জিজ্ঞেস করল,মন খারাপ কেন?
রিমি বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,না মন খারাপ না।

-সেটা তোমার ফেস দেখলেই বোঝা যাচ্ছে যে মন খারাপ কিনা।
রিমি ওর কপালটা কিঞ্চিৎ ঘুচিয়ে আহসানের দিকে তাকালো।
-বুঝতে যখন পারছেন তাহলে জিজ্ঞেস করার কি আছে?
-আমি তেমন ভালো করে বোঝাতে পারি না।তবে এতোটুকু বলতে পারবো যে মেয়েদের আসল বাড়ি হচ্ছে তার শ্বশুরবাড়ি।বাবার বাড়িতে সে দুদিনের আশ্রিতা মাত্র।আমরা যদি কোথাও বেড়াতে যাই

সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে ইচ্ছে হয়না।সেটা অপরুপ সুন্দর স্থানই হোকনা কেন দিন শেষে ওই নিজের বাড়ির কথায় মনে পড়বে।ঠিক সেভাবে মেয়েদের যতই বাবার বাড়ি আপন মনে হোক না কেন তাদের আসল বাড়ি তার শ্বশুরবাড়ি।আর মেয়েদের কাছে তার নিজের বাবা মা যতই আপন হোকনা কেন তারা কখনোই তাদের বাবা মায়ের সম্পদ নয়।মেয়েরা তার স্বামী শ্বশুরবাড়ির সম্পদ।তাই বলে এই নয় যে তার নিজের বাবা মাকে ত্যাগ করতে হবে।তাই যদি হতো তাহলে একটা প্যারেন্টস কখনোই তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অন্যের ঘরে পাঠাতেন না।আসলে মেয়েদের পানির মতো সচ্ছল হতে হয়।পানি যে পাত্রেই রাখা হোকনা কেন ঠিকই সেই পাত্রের আকার ধারণ করবে।মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই গুন প্রযোজ্য।বুঝলে কি?রিমি হা হয়ে আহসানের দিকে তাকিয়ে আছে।আহসান যে এভাবে ওকে শান্তনা দেবে তা ওর কল্পনার ও অনেক দূরে।রিমি সত্যি ভাবতে পারেনি আহসান ওকে এমন কিছু বলবে।রিমি যেন ফ্রিজড হয়ে গেল আহসাননের যুক্তি শুনে।

-এভাবে তাকিয়ে থাকলে রাস্তার সমস্ত গাড়ি সহ ট্রাফিক পুলিশ তোমার মুখের মধ্যে ঢুকে যাবে।আহসানের এমন উদ্ভট কথায় রিমি ভাবনার সুতো কেটে বাস্তবে ফিরে আসল।রিমি অবাক চোখে আহসানকে বলল,আপনি তো একটা বদরাগী মানুষ।আপনি এসব কিভাবে জানলেন?

আহসান সামনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।তারপর বলল,বাহিরের টা দেখে জাজ করা যতটা না ইজি,তার থেকে কয়েক মিলিয়ন টাফ কারো ভেতরটা জাজ করা।রিমি হয়তো কিছু বুঝেছে নয়তো বোঝেনি।এরপর আর কোনো কথপোকথন হয়নি ওদের মাঝে।রিমি কিছু বলেনি সাথে আহসানও।আহসান একেবারে ওদের বাড়ির সামনে গিয়ে ব্রেক কষলো।তারপর রিমিকে নেমে পড়ো বলে গাড়ি থেকে নামলো।ওয়াচম্যানকে জিনিসপত্র ওদের রুমে পাঠিয়ে দিতে বলে বাড়ির মধ্যে ঢুকে গেল।গিয়েই রঞ্জিতের মুখোমুখি হলো আহসান।

রঞ্জিত আহসানকে হঠাৎ এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে যে কতদিন পর দেখলো ছেলেকে।আহসান ওর বাপির এমন কার্যে গুরুতর অবাক হলো।আহসান ওর বাপির পেছনে হাত রেখে বলল,হোয়াট হ্যাপেন্ড বাপি?রঞ্জিত আহসানকে ছেড়ে দিয়ে বলল,তুমি জানো না মাই সন,আমি এই দুদিন তোমায় কতটা মিস করেছি।আমার কাছে মনে হয়েছিল তুমি আবারো আমাকে একা ফেলে অস্ট্রেলিয়ায় চলে গিয়েছো।কথাটা বলে চোখের পানি মুছে নিল রঞ্জিত।
-তুমি যে কি বাপি!আমি কোথাও যাইনি তোমাকে ছেড়ে। আর যাবও না।
-আই নো মাই সন।যাই হোক তুমি ওই ডিসগাস্টিং মেয়েটাকে রেখে এসে ভালো করেছো।এখন একটু শান্তি মতো বাঁচতে পারবে কদিন।

-আমি ওকে সাথে করেই এনেছি বাপি।রিমি ভেতরে আসছো না কেন?রিমি এতোক্ষণ বাড়ির ভেতর ঢুকেনি।তার প্রধান কারণ রঞ্জিত।রিমি জানে রঞ্জিত ওকে একটুও সহ্য করতে পারেনা।তাই তার মুখোমুখি হতে চায়নি ও।ভেবেছিল রঞ্জিত চলে গেলে ভেতরে যাবে কিন্তু আহসান ডাকছে বলে না চাইতেও ভেতরে যেতে হলো।রিমি গিয়ে আহসানের পাশাপাশি দাঁড়ালো।রিমিকে দেখা মাত্র রঞ্জিতের শরীরের সব রক্ত মাথায় চড়ে গেল।

-আহসান তুমি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও এই কথাটা বলে সেখান থেকে চলে আসেন রঞ্জিত।আহসান ওর রুমে চলে যায় আর রিমি রান্নাঘরের দিকে যায়।রিমি যা ভেবেছিল তাই।অপা রান্না করছে আর সম্পা তাকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে।রিমি গিয়ে পেছন থেকে অপার চোখ ধরে নিল আর সম্পাকে কিছু বলতে না করলো।
অপা রিমির হাত দুটো ছুৃঁয়ে বলে,কে রে?নিশ্চয়ই রিমি!রিমি অপার চোখ থেকে হাত সরিয়ে আনলো।

-ধুর তুমি বুঝে গেলে।
অপা হাসতে হাসতে বললো,আমি সব বুঝি হুম।কখন এলি?
-এইতো কিছুক্ষণ হলো।
-তাহলে যা ফ্রেশ হয়ে নে।
-ওকে কিন্তু আমার ভাই ওরফে দেবরজিটা কই?আমি আসবো শুনে তো খুব খুশি হয়েছিল।বলেছিলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।এতোক্ষণ হলো এসেছি এখনও সামনেই আসলো না,আর ও নাকি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে হুহ!(অপাকে কিছু বলতে না দিয়ে একনাগাড়ে বলে ফেলল)

-তা না রে।ছেলেটা সত্যি খুব এক্সাইটেড ছিলো তোর আসা নিয়ে।কিন্তু ওর বাবা তৎক্ষণাৎ ওকে বাড়ি যেতে বলেছিল তাইতো চলে গেল এইতো এক ঘন্টা খানেক আগে।
-ও,কিছু সমস্যা হয়েছে নাকি ওদের বাড়িতে?
-না আসলে অন্তু নিউ ফ্যাক্টরি ওপেন করছে আজ।তাই জিসানকে যেতে বললো।
-অন্তু মানে?কে উনি?
-আমার ভাই।জিসানের বাবা।
-ও বুঝলাম।জিসান মনে হচ্ছে এবার কাজে হাত দেবে।

-হুম ঠিক।ভাইটা আমার আর কতো খাটবে বল?জিসানের মা মারা যাওয়ার পর অনেক বড় ঝড় গিয়েছে ওর উপর দিয়ে।জিসান ও বিজনেস দুটো একা হাতে সামলেছে।আমি বলেছি জিসান কে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে।কিন্তু না উনি ছেলের মুখ না দেখলে থাকতেই পারবেন না।আচ্ছা কথা পরে হবে তুই যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।(খুনতি নাড়িয়ে বলল)
-আচ্ছা বাবা আচ্ছা।এই বলে রিমি উপরে চলে আসলো।গিয়ে দেখলো আহসান রেডি হচ্ছে।রিমি আহসানের কাছে গিয়ে বললো,আপনি রেডি হয়ে কোথায় যাবেন এখন?
আহসান শার্ট ঠিক করতে করতে বললো,হসপিটাল ছাড়া আর কোথায়?

-তাই বলে এখন?
-পেসেন্ট তো আর সময় দেখে আসেনা!তাই এখন আর তখন নেই।
-ওও হুম তাও ঠিক।আচ্ছা আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি এই বলে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু আহসান ডাক দিল।
-রিমি একটু শুনবে?
রিমি থেমে গিয়ে বললো,জ্বি বলুন।
-তুমি আমাকে টাইটা বেঁধে দাওনা খুব লেট হয়ে গিয়েছি আমি।মমকেই বলতাম কিন্তু মম এখন বিজি আছে মেবি। নইলে তোমাকে বলতাম না।

-টাই টা দিন এতো কিছু না বললেও চলবে।
আহসান আর কিছু না বলে রিমির হাতে টাইটা দিল।রিমি আহসানের গলা অবধি পৌঁছাতে পারছিল না।এই দেখে আহসান একটু ঝুকে গেল।এবার রিমি টাইটা সুন্দর করে পড়িয়ে দিতে পারলো।টাই পড়ানো শেষে আহসান আনমনে ভাব করে বললো,তোমাকে আজ আমার বউ বউ লাগছে।আহসান কথাটা বলেই জিভে কামড় বসিয়ে দিল।
রিমি কি জানি কি ভেবে মাথা নিচু করে ওয়াশরুমে চলে গেল।তাই দেখে আহসান বাকা হেসে বলল,মানুষ ঠিকই বলে লজ্জা নারীর ভূষণ।

আমি কি করলে মেয়েটাকে আমার ছেলের জীবন থেকে সরাতে পারবো?কি করতে যে ওই মেয়েটার সাথে ছেলের বিয়ে দিয়েছিলাম!এখন নিজেকেই ভুগতে হচ্ছে।এভাবে কিছুই মেনে নেওয়া যায়না আমি আজই আহসানের সাথে কথা বলবো।এই বলে আহসানের নাম্বারে কল দেয় রঞ্জিত।আহসানকে দ্রুত ওর ক্যাবিনে আসতে বলে কল কেটে দিল।আহসান ক্যানটিনে বসে খাবার খাচ্ছিলো এমন সময় রঞ্জিতের কল আসলো।তাই খাবার রেখে ছুটে গেল রঞ্জিতের ক্যাবিনে।গিয়ে দেখলো রঞ্জিত কপালে আঙুল ছুঁইয়ে বসে আছে।

-এনি প্রবলেম বাপি?আর ইউ ওকে?আহসানকে দেখে রঞ্জিত কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো,হুম অনেক বড় প্রবলেম হয়ে গেছে।
আহসান চেয়ারে বসতে বসতে বলে,কি প্রবলেম?
-তুমি ওই মেয়েটাকে এখনি ডিভোর্স দিয়ে দাও।যেহেতু মেয়েটাকে তুমি একটুও সহ্য করতে পারো না।তাই আমি চাইনা মেয়েটার জন্য তোমার কোনো প্রবলেম হোক।
-বাপি তুমি এসব কি বলছো বলোতো?তুমি রিমির কথা বলছো?
-ওকে ছাড়া আর কাকে ডিভোর্স দিতে বলবো?তুমি আমাকে বলেছিলে না ওকে তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স দিতে চাও?
-হুম বলেছিলাম কিন্তু তারপর তুমিই তো বলেছিলে ২-৩ মাস যাক তারপর।তুমি বলেছিলে এখন না,এখন ডিভোর্স হলে চারিদিকে আমাদের ফ্যামিলি নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে যাবে!

-বলেছিলাম,তবে এখন আমিই বলছি ওকে ডিভোর্স দাও।যা হবে আমি দেখে নেব।
-আগে আমি বুঝতাম না বিষয়টা তাই ডিভোর্স চাইতাম।কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি ডিভোর্স হলে আমাদের ফ্যামিলির উপর নানান প্রেসার পড়বে।যেমনঃমিডিয়া,রিলেটিভ ইত্যাদি নানা কথা বলবে।তাছাড়া তুমি একজন নামকরা ডক্টর।সবাই যদি জানতে পারে তোমার ছেলের ১ মাস বিয়ে হয়েছে কিনা এরই মাথায় ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে।তাহলে তোমার সম্মানটা কোন পর্যায়ে যাবে ভেবেছো একবারও?

তোলপাড় পর্ব ২০+২১+২২

-কিন্ত ওই মেয়েটা মিডিলক্লাস ফ্যামিলির!ওইরকম মিডিলক্লাস ফ্যামিলির মেয়ের সাথে আমার ছেলে!রঞ্জিত তালুকদারের ছেলের বিয়ে হয়েছে এটা কি কম অসম্মানের?
-তুমি আগে ভাবোনি কেন এটা?এসব আগে ভাবা উচিত ছিল বাপি।তুমি নিজেই বলেছিলে রিমিকে যেন আমি বিয়ে করি।স্রুতি যখন পালিয়ে গিয়েছিল সেদিন বিয়েটা নাহয় হতো না আমার।তুমি কেন রিমির সাথে বিয়ে দিতে গিয়েছিলে?তুমি ভুল করেছো এর শাস্তি তুমি রিমি ও তার পরিবারকে কেন দেবে?ওরা তো বলেনি আমার সাথে রিমির বিয়ে দিতে।এখানে তো ওনাদের কোনো দোষ দেখছি না আমি।এখন ডিভোর্স হলে রিমির বাবা মা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না বাপি।তাই এতো বড় শাস্তি তুমি ওদের দিও না।

-তুমি তাহলে রিমিকে ডিভোর্স দেবে না?(গম্ভীরমুখে)
-দেব তবে এখন সঠিক সময় নয়।তুমি আমাকে বুঝিয়ে এখন নিজেই অবুঝ হয়ে গেছো?আর ওরা যে মিডিলক্লাস ফ্যামিলির তা নিয়ে কেউ তো কিছু বলেনি আমাদের।তোমার ফ্রেন্ডস বা আমাদের সকল রিলেটিভিসরা রিমিকে ভালোই বলেছে।আমি তো কারো মুখে শুনিনি এটা বলতে যে রঞ্জিতের পুত্রবধূ মিডিলক্লাস ফ্যামিলির।বরং সবাই বলেছে তোমার ছেলের বউয়ের মতো বউ তারাও চান।বাপি তুমি যে আমাকে ধনী গরিবের তফাত শিখিয়েছো আমি সেই শিক্ষাকে ত্যাগ করলাম আজ।আমি বুঝতে পেরেছি ধনী গরিব বলতে কিছু নেই।ধনীদের অর্থ থাকতে পারে কিন্তু ভালো মন মানসিকতা নেই।যেমন আমার নেই।

-তুমি আর কিছু বলবে?যদি বলা শেষ হয়ে থাকে তাহলে যেতে পারো নিজের কাজে।
-বাপি তুমি রাগ করো আর যাই করো না কেন,উচিত কথাকে পাল্টে দিতে পারবে না এই বলে বেড়িয়ে আসলো আহসান।
-এই আহসানকে তো আমি চিনি না।ও কে?এই আহসানকে আমি এতো আদর দিয়ে বড় করেছিলাম?একটা পিঁপড়া অবধি ওর কাছে ঘেঁষতে দেইনি আর আজ ও কিনা আমায় শিখাচ্ছে!বুঝেছি ওই মেয়েটা ওর মাথায় এসব ফালতু কথাবার্তা ঢুকিয়েছে।আমি নিশ্চিত ওই মেয়েটাই কিছু করেছে।নইলে আমার ছেলে আমাকে এতো বড় কথা শোনাতো না।কখনোই না।আমি প্রতিশোধ নেব।খুব ভয়ংকর প্রতিশোধ নেব।আমার ছেলেকে আবার আমার করে নেওয়ার জন্য যা যা করতে হয় আমি তাই করবো।

তোলপাড় পর্ব ২৬+২৭+২৮