তোলপাড় পর্ব ৫+৬

তোলপাড় পর্ব ৫+৬
শান্তনা আক্তার

মৃদু হাওয়া বইছে।শীতল আমেজে পরিবেশটাও যেন তরতাজা হয়ে উঠেছে।আধার নেমেছে তবে আকাশে কোনো তারা নেই তবুও যেন আকাশ টা ঝলমলে হয়ে আছে।এমন মনোমুগ্ধকর আবহাওয়ায় চুল উড়োতে বেশ লাগছে রিমির।গত ২৪ ঘন্টার সব ক্লান্তি ভুলে প্রাণ ভরে শ্বাস নিচ্ছে ও।কিন্তু কে জানে ওর এই শান্তি ক্ষনস্থায়ী?

-তুমি বেলকনিতে কি করছো এতো রাতে?জ্বর একটু কমেছে কি কেয়ারলেস হয়ে যাবে!
পেছনে তাকাতেই রিমি আহসানকে দেখতে পায়।আহসানকে দেখে ওর এতোক্ষণে জমানো সব আবেগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।রিমি বলে,আপনি কখন এলেন?
-মাত্র।রাত তো ১টা প্রায়,ঘুমাওনি কেন?তোমার শরীর ভালো নেই জানো না!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রিমি হালকা হেসে বলে,ভালো আছি আমি।আপনি যেই মেডিসিনটা দিয়েছিলেন,ওটা নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তো জ্বর চলে গেল।আর তো আসেনি!মনে হচ্ছে আসবেও না।আপনি চিন্তা করবেন না।আমার জন্য আপনাকে বিপদে পড়তে হবে না।
-আর কি বিপদে ফেলবেন আমায়!যতটা ফেলার তো ফেলেই দিয়েছেন।এখন শুধু কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিন বসে বসে।
-আমি কি করেছি বলুন তো?আপনার বাবা আর স্রুতির বাবার সম্মান রক্ষার্থে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি এটা আমার দোষ!নাকি আমি আপনাদের মতো বিত্তশালী পরিবারে থেকে বিলং করিনি,এটা আমার দোষ!কোনটা বলুন?

-আপনি স্রুতির কথাটা আগে থেকে কেন বলেননি যে ওর আফেয়ার আছে?আপনি যদি আগে থেকে বলে দিতেন তাহলে তো এতো কিছু হতো না।না হতো বিয়ের আয়োজন,বিয়ের দিন না পালাতো স্রুতি আর আপনার আর আমার বিয়েও হতো না।আমি আগেই বিয়ে cancel করে দিতাম।তো এই সব কিছুর মূলে আপনিই আছেন।আপনি সব কিছু প্লান করে করেছেন,যাতে আমার মতো বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করতে পারেন।

-ওই ঘুরে ফিরে এক কথা!আপনি বড়লোক আর আমি কাঙালি তাইতো?এতই যখন সমস্যা আমাকে নিয়ে,তাহলে কালই তালাক দিয়ে দিন আমায়।নিয়ে আসুন গিয়ে তালাকনামা।গত রাত থেকে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি আপনার এইসব অপমানজনক বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা শুনতে শুনতে।আমি মানুষ হ্যাঁ!আমার বাবা মা তুলেও বলেছেন আপনি।গরীব বলে কি রাস্তার কুকুরের মতো আচরণ করবেন?না কালই ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত হন আপনি।কথা গুলো বলে ওরনা দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো।
-হুম দেব।খুব শীঘ্রই দেব।কিন্তু এখন নয়,বাপি বলেছে কিছুদিন যাক তারপর।
-ওহ,বাবা ছেলের দেখি আগে থেকেই সব প্লান করা।এসব তাহলে আপনাদের কার্সাজি।আর ব্লেম আসলো আমার ঘাড়ে!বাহ।চমৎকার।

-যা হচ্ছে সব তোমার জন্যই।তুমি সব কিছু বলে দিলে এতো সব করতেই হতো না।আর যা ইচ্ছে ভাবো হু কেয়ারস?এখন রাত হয়েছে গিয়ে শুয়ে পড়ো।
-শুচ্ছি আপনি যান।
-কোথায় শোবে?আজকেও এই বারান্দায়?
রিমি রাগি ভাব করে বলে,হুম।তাছাড়া আর কি আছে আমার কপালে!

-এখানে শুয়ে আবার জ্বর বাধাবে।তারপর আমাকে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে তোমার সেবায় লেগে যেতে হবে।সারাদিন কাজ করি বাড়িতেও কি শান্তি পাবোনা?no ways..তুমি ভেতরে গিয়ে শোও।
-না,আপনি যেভাবে অপমান করে বিছানা থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেনন তা দেখে আমার আর ইচ্ছে নেই।
-বিছানায় কে শুতে বলেছে?তুমি সোফায় শুবে।

-নাহ!ওতো সুখ আমার সইবে না।আমি তো কাঙালি তাই এউ বারান্দার মাটিই যথেষ্ট আমার জন্য।(কান্নাজড়িত গলায়)
-আপনি যাবেন নাকি আপনাকে এখনি আপনার বাবার বাড়ি দিয়ে আসবো?
-বাবা তো রেগে আছে আমার উপর।তাছাড়া আমরা তো কাঙালি।আমাদের সোসাইটিও তাহলে কাঙালি। সো এখন আমাকে বাবার বাসায় দিয়ে আসলে সেখানকার মানুষেরা নানান কথা বলবে আমাকে নিয়ে।তাই আর যাই করুন না কেন এটা করবেন না প্লিজ(হাত জোড় করে)

-করবো না যদি আমার কথা মতো কাজ করো তো।
রিমি কিছু না বলে বারান্দায় পাতা বালিশ চাদর নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।আহসান ও ড্রেস বদলে বিছানায় গা এলিয়ে কিছুক্ষণ ফোন ঘাটে।তারপর ঘুম ঘুম ভাব আসলে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।
ওদিকে ঘুম নেই রিমির চোখে।অনবরত কেঁদে চলেছে চাদরের নিচে মুখ লুকিয়ে।মানুষ কতটা নির্দয় হতে পারে তা ওর জানা ছিলো না।আহসানের মতো লোকের পাল্লায় পড়ে জানতে পারলো।কি জানি আর কতো কি সইতে হবে ওকে?পরস্পরের মধ্যে এতটা দূরত্ব ভেদ করে এক চিলতে ভালবাসার রোদ ওদের মাঝে কখনো কি দেখা দেবে কোনো এক প্রহরে!

এলার্ম বাজার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আহসানের।ঘুম ঘুম চোখে এক হাত দিয়ে এলার্ম অফ করে উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে।আচমকা আহসানের চোখ আটকে যায় বিছানা থেকে কিছুটা দূরে সোফায় শুয়ে থাকা রিমির দিকে।রিমির মুখখানা ভোরের আলোয় রাঙা হয়ে আছে।আলো চোখে পড়ায় পাপড়িগুলো নড়েচড়ে উঠছে ওর।আলো টা যেন রিমির ঘুমে মস্ত এক বাধা।তাইতো কপাল ভাজ করে রেখেছে।আহসান বিষয়টা বুঝতে পেরে জানালার পর্দাটা টেনে দিল।এরপর গুটি গুটি পায়ে রিমির কাছে গিয়ে উবু হয়ে রিমির অবাধ্য চুলগুলো কানের গোড়ায় গুঁজে দেয়।এই প্রথম আহসান রিমিকে এতো কাছ থেকে দেখলো।রিমির দাগহীন ফর্সা মুখটায় এক অজানা মায়া দেখতে পেল।

রিমির কালো জোড়া ভ্রু যেন ওর ফর্সা দীপ্তির সৌন্দর্য্যকে আরো আকর্ষণীয় করে রেখেছে।সাথে ডাগর আঁখি আর তার উপর লম্বা মোচড়ানো পাপড়ি!জাস্ট ওয়াও।আহসান যেন সম্মোহিত হয়ে পড়েছে রিমির রুপে।আহসান আরো একটু ঝুকে গেল।একেবারে রিমির নিশ্বাসের সাথে গিয়ে বারি খায়।রিমির গরম নিশ্বাসের ছোঁয়া পেতেই আহসান আর নিজের মধ্যে থাকতে পারলো না।আহসান হাত বাড়িয়ে রিমির হালকা লাল ঠোঁট জোড়ায় হাত বুলাতে থাকে।করো স্পর্শ অনুভব করতে পেরে লাফিয়ে উঠে পড়ে রিমি।আহসানকে এতটা কাছে দেখে চোখ উল্টে যায় ওর।তারপর ভয়জনিত স্বরে বলে,আ আপনি ক কি করছিলেন?
আহসান রিমির কথায় ঘোড় থেকে বেরিয়ে আসলো।তারপর পরিস্থিতি সামলাতে বলে,তোমার মাথার এখানে রাতে একটা রিপোর্ট রেখেছিলাম সেটা খুঁজতেই এখানে আসা।কোনো প্রকার বিপত্তি ছাড়াই বলে ফেলে।তবে রিমি যেন বিশ্বাস করতে পারলো না আহসানের এক্সকিউজ টা।

-আপনি মিথ্যে কেন বলছেন?আপনি তো এখানে কোনো রিপোর্ট রাখেননি!কি করতে এসেছিলেন তাই বলুন।
আহসান দুম করে উঠে দাঁড়ালো।তারপর রাগান্বিত গলায় বলল,Don’t cross your limits.who the hell are you to ask me questions?Don’t talk rubbish okh?

-চেচামেচি ছাড়া আর কি পারেন আপনি?চেচামেচি করে কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়?না যায়না।So Don’t Shout.
-তুমি কি বলতে চাইছো হুম?আমি মানে আহসান তালুকদার তোমার রুপে মোহিত হয়ে তোমায় টাচ করতে গিয়েছিলাম!সো ফানি হাহাহা,কত বিউটিফুল, সুইট সিক্সটিন,রিচ ফ্যামিলির মেয়ে আমার পেছনে ঘোরে, আর আমি কিনা তোমার মতো একটা মিডিলক্লাস মেয়ের কাছে যাব!তোমার মতো cheap মেয়ে আমার পায়ের ধুলো ছোঁয়ার ও অ্যাবিলিটি রাখো না।

-ব্যাস অনেক হয়েছে।অনেক সহ্য করেছি আমি।আপনি রীতিমতো আমাকে অপদস্ত করে যাচ্ছেন আমি কিছুই বলছি না।আপনি নাকি ধনী!আরে ধনী হলেও আপনার মধ্যে বিন্দুমাত্র শিক্ষা নেই।শুধু দুটো সার্টিফিকেট পেলেই সে শিক্ষিত হয়না মিস্টার।শিক্ষিত হতে হলে সুন্দর বিহেভিয়ার জানতে হয়।

তোলপাড় পর্ব ৩+৪

-ইউ রাস্কেল!চলে যাও আমার চোখের সামনে থেকে(বেশ উঁচু গলায় বলল আহসান)
রিমি হালকা হেসে বলে,আপনাকে বড় বলে বড় সে নয়,লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।রিমি সোফা হতে নেমে আবার বলে,আমি বাহিরে পড়াশোনা করিনি ঠিকই,তবে আমি কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত।শুধু আমি নই।আমার বাবা-মা,আপুও উচ্চ শিক্ষিত।আমি একটা জিনিস খুব ভালো করে জানি জানেন,শিক্ষিত হলেই বেশি রিচ হওয়া যায়না।আবারকেউ কেউ রিচ হলেও তাদের মধ্যে শিক্ষার বিন্দুমাত্র ছিটে ফোঁটাও থাকে না।যতই সে বিশাল ডিগ্রির অধিকারী হোকনা কেন।তার মধ্যে হিতাহিত জ্ঞানই অর্জিত হয়না।

আহসান নিজের রাগকে কাবু করতে না পেরে সজোরে একটা চর লাগায় রিমির গালে।রিমি ছিটকে গিয়ে সোফার উপর পড়ে।এরই সাথে দরজার ঠকঠকানির আওয়াজ বেজে ওঠে।আহসান নিজেকে স্বাভাবিক করে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।আহসান দেখে বাহিরে সম্পা দাঁড়িয়ে আছে কফির মফ হাতে নিয়ে।(অনেকেই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছেন রুমি আর রিমির নাম নিয়ে।তাই কাজের মেয়ের নামটা রুমি বদলে সম্পা দিলাম)। সম্পা রুমে ঢুকবে কি আহসান ওকে বাধা দেয়।

-রুমে ঢুকতে হবে না কফিটা আমাকে দিয়ে চলে যাও।
-আচ্ছা বলে কফির মগটা আহসানের হাতে তুলে দিল।,আপনারে খালা ডাকতে কইছে। কি যেন কইবো কইলো খুবই আজ্জেনড নাকি।
-ওটা আজ্জেন্ড নয়,আর্জেন্ট ওকে!এখন যাও এখান থেকে।
-সেম টু সেম আপনি বুঝতে পারছেন সেইডা হইলেই হইলো।নুতান ভাবি কই?দেখতাছি না।
-বেশি কথা না বলে এখান থেকে যাও বলছি।ঝারি খেয়ে চলে আসে সম্পা।

তোলপাড় পর্ব ৭+৮