তোলপাড় পর্ব ৭+৮

তোলপাড় পর্ব ৭+৮
শান্তনা আক্তার

রিমির ফর্সা গালটা লাল হয়ে আছে।সাথে দুটো আঙুলের ছাপ ও বসে আছে।দাগ ওর খুব অপছন্দের।মুখে সামান্য কিছুর দাগ দেখলে কান্না পায় ওর।আয়নার সামনে গিয়ে একগাদা পাউডার মেখে নিলো।কিন্তু তাও যেন দাগ লুকাতে ব্যর্থ হলো।সম্পা খাবার নিয়ে এসে দেখে রিমি চাপা শব্দে কাঁদছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।সম্পা বড় বড় পা ফেলে রিমির কাছে গিয়ে বলে,ভাবি আপনি কাঁনদেন ক্যান?
সম্পাকে দেখে রিমি তরিঘরি করে চোখ মুছে নিয়ে বলে,কই নাতো।

-আপনি মিছা কথা ক্যান কইতাছেন?
-আমি মিছে কথা কেন বলবো!আজব।
-তাইলে আপনার নাক, মুক, চোখ ফোলা ক্যান হুম?ওমাগো আপনার গালে কিসের দাগ পড়ছে?
-কিছু না বলছি তো। তুমি কিছু মনে না করলে এখন যাও এখান থেকে। আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দাও।
-আমি যাইতাছি খালারে ডাইকা আনি।এই বলে সম্পা চলে যাচ্ছিলো কিন্তু রিমি আটকে নেয়।
-এই না,এটা করবেনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আমি করুম,আপনি আমারে কিছু কইবেন না তাই খালারে ডাকি আনতাছি।
-আচ্ছা যাও বলো গিয়ে।কিন্তু তারপর আমি আর কখনো তোমার সাথে একটা কথাও বলবো না বলে দিলাম।(অভিমানী সুরে)
-তাইলে কন কি হইছে!
-মশা মারতে গিয়ে গালে,রিমিকে আটকে দেয় সম্পা।
-এই পুরাতন বাহানা আর চলে না ভাবি।অন্য কিছু কন।কইলেও কি?আমি তো জানি আপনারে ছোটসাহেব মারছে।
রিমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে,
-তুমি কিভাবে জানলে!

-আমি দরজার বাহিরে থেইকা সব শুনতাছিলাম।আপনারে ছোটসাহেব দ্যাকতে পারেনা তাইনা ভাবি!
-হুম,তুমি তো জানোই আমাদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছে।আচ্ছা ছাড়ো।তুমি বলো উনি কি চলে গেছেন হসপিটালে?
-হুম।আপনি তাড়াতাড়ি খাইয়া নেন।আর প্লেট আমি নিয়া যামুনে।
-আচ্ছা,আর তুমি এই মারার কথাটা মাকে বলোনি তো?
-না বলিনাই।খালা যদি ছোটসাহেবরে বকা দেয় তাহলে হেয় তো আমারে ধরবো আইসা।এই ভয়ে কইনাই।
-ভালো করেছো।

দুপুর বেলা°°°°°
আহসান বাসায় এসেই ল্যাপটপ নিয়ে অনলাইনে হসপিটালের কাজ করতে শুরু করে দেয়।রিমি বসে বই পড়ছিল আহসানকে দেখতে পেয়ে ওর বই পড়ার মুডটাই খুব বেশিই খারাপ হয়ে গেল।রিমি উঠে নিচে যাবে কি আহসান বলে ওঠে,শোনো।
রিমি পিছনে ফিরে তাকায় মুখ ভাড় করে।তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,জ্বি।

-এই ওয়েন্টমেন্ট টা গালে লাগাও।ব্যাথা কমে যাবে।
-আমার কিছু হয়নি এতো ব্যস্ত হবেন না।
আহসান উঠে দাঁড়িয়ে রিমির দিকে তেড়ে যায়।তারপর বলে,আমি যা বলছি তাই করো।ফেসে দাগ একেবারে বসে যাওয়ার আগে ওয়েন্টমেন্টটা লাগিয়ে নাও।
-লাগবে না বলে চলে যেতে নেয় কিন্তু তার আগে আহসান রিমির একহাত টেনে ধরে।রিমি ওর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছে না।

-আমার হাতটা ছাড়ুন আমার লাগছে।
-ছুটাছুটি করলে আরো লাগবে।
রিমি তাও হাত ছাড়াতে ব্যস্ত।আহসান রেগে গিয়ে রিমিকে জোড় করে কোলে তুলে নিল।রিমি আহসানের এরুপ কাজে বেশ অবাক হয়ে গেল।আহসান এরকম কিছু করবে বুঝতে পারেনি ও।আহসান রিমিকে সোফায় বসিয়ে রাগী সুরে বলল,keep silence you damn it.

রিমি জেদ দেখিয়ে উঠে যেতে নিবে তখন আহসান রিমির দু বাহু চেপে ধরে।
-কি করছেন আপনি!যেতে দিন আমায়।
-নড়াচড়া করলে আরেকটা পড়বে কানের নিচে।now finger on your lips!চেচিয়ে বলায় কেঁপে ওঠে রিমি।তারপর স্থির হয়ে যায়।রিমিকে শান্ত হতে দেখে আহসান বলে,That’s like a good girl..তারপর আলতো করে রিমির গালে ওয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিতে থাকে।রিমি এক ধ্যানে আহসানের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কাছে এই আহসানকে খুব অচেনা লাগছে।রিমিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আহসান বলল,

-ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?এখন একটু রেস্ট নাও।ঘুম থেকে উঠে দেখবে পেইন কমে গেছে আর দাগও ভ্যানিশ হয়ে গেছে।
রিমি বাধ্য মেয়ের মতো ঘুমিয়ে গেল।এরপর আহসান স্টাডি টেবিলে গিয়ে পুনরায় নিজের কাজে মন দিল।
সন্ধ্যায় বউ ভাতের অনুষ্ঠান।বাড়িতে বেশ ধুম পড়ে আছে।অপা কোমড়ে আঁচল গুজে সবাইকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে।মাঝে মাঝে ডেকোরেটরস ও কুকদের কাজে হেল্প ও করছে নিজ যথাসাধ্য মতো।রিমি মাঝে মাঝে রুম থেকে বের হয়ে ড্রইং রুমে উঁকি দিয়ে দেখছে।আচমকাই আহসান হুংকার দিয়ে রিমিকে ডাকলো।রিমি ডাক শুনে রুমের ভেতর গিয়ে বলে,আমাকে ডেকেছেন?
আহসান রাগি মুডে রিমির সামনে গিয়ে বলে,আমি সব কিছুতে চুল কেন পাই হুম?ওয়াশরুমে গেলে চুল দেখি,বসে থাকলেও চুল উঁড়ে আসে,এখন আমার চিরুনি টাতেও চুল লেগে আছে কেন?

-আ আ আমার চুল লম্বা তাই হেয়ারফল তো হবেই।তাছাড়া আপনার চিরুনি দিয়ে আমার চুল ভালো করে আঁচড়াতে পারি না।খুব ছোট চিরুনি।তাই আঁচড়াতে গেলে চুল ছিড়ে যাচ্ছে(কাঁপা কাঁপা গলায়)
-ডিসগাস্টিং লাগে আমার এগুলো।তুমি আজই অনলাইন থেকে তোমার যাবতীয় সামগ্রী অর্ডার করবে।আমার জিনিসে একদম হাত লাগাবে না।মনে থাকে যেন!(কর্কশ সুরে)
-জ্বি মনে থাকবে।

-আর বার বার রুমের ভেতর আসা যাওয়া করছো কেন?এক জায়গায় বসে থাকতে পারো না!
রিমি কিছু বলবে কি কেউ একজন এসে ভাবি বলে ওর দু হাত ধরে ঘুরতে লাগলো।রিমি যেন হতভম্ব হয়ে গেল ছেলেটির এরুপ আচরণে।ছেলেটি রিমিকে ছেড়ে আহসানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,হাউ ডু ইউ ডু ব্রো?(লেখিকাঃশান্তনা আক্তার)
-হোয়াট এ প্রেসেন্ট সারপ্রাইজ!জিসান তুই!কখন এলি?মামু কোথায়?

-ওয়েট ব্রো,এতোগুলো questions একসাথে জিগ্যেস করলে কিভাবে আন্সার দেই বল?আমি মাত্র এলাম।ড্যাড আসেনি জরুরি কাজ আছে তাই।এগুলো ছাড় আমি আগে আমার নিউ ভাবির সাথে কথা বলি।What happened ভাবি? আমি তোমাদের বিয়ে attend করতে পারিনি তার জন্য সরি।
রিমি হেসে বলে,সমস্যা নেই।আপনার বাবা মা কেমন আছে।রিমির প্রশ্নে জিসান মুখ কালো করে ফেললো।তাই দেখে রিমি আবার জিজ্ঞেস করে,আমি কি কিছু ভুল বলেছি?
-no no,আসলে আমার মম গত ইয়ার স্ট্রোক করে মারা যান।
-আমি খুবই দুঃখিত।

-তুমি সরি কেন বলছো?তুমি তো আর জানোনা।
-হুম,তো আপনি ওনার মামাতো ভাই তাইতো?!
-ইয়াহ!কিন্তু তুমি আমাকে আপনি করে কেন বলছো?আমি তোমার ব্রাদার ইন ল হই তাই নো আপনি টাপনি।অনলি তুমি।
রিমি মুচকি হেসে বলে ওকে ডান।রিমি আর জিসান একে অপরের সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে।এদিকে আহসান রেগে ফায়ার।আহসান রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কড়া গলায় বলে,তোমরা বাহিরে গিয়ে গল্প করো আমার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।
জিসান বলল,ওকে।ভাবি চলুন আমরা বাহিরে গিয়ে গল্প করি।অনেক কিছু শুনবো গতকালকে কি কি হয়েছে,স্রুতি কি কি কান্ড করেছে। সব শুনবো।(লেখিকাঃশান্তনা আক্তার)

-ওকে চলো।
-এখন গল্প করার সময় নয়।কিছু সময় পর গেস্টরা চলে আসবে।আমাদের রেডি হতে হবে।তুই অনেক দূর থেকে এসেছিস,গিয়ে রেস্ট নে।
বিরক্ত হয়ে বলে আহসান।
-ওকে তাই হোক।

হাফ আওয়ার পর পার্লারের লোকজন এসে রিমিকে সাজানো শুরু করে।আহসান রেডি হয়ে নিচে চলে যায়।সাজানো শেষ হলে রিমিকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়।রিমি ওর ভারী লেহেঙ্গাটা সামলাতে সামলাতে নিচে নেমে আসে।বাড়ি ভর্তি সবাই রিমিকে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।রিমি পিংক কালারের একটা লেহেঙ্গা পড়ে আছে।পিংক ওর ফেভারিট কালার তাই পিংক কালার লেহেঙ্গা চুজ করেছে ও। পিংক লেহেঙ্গার উপর হোয়াইট ও গোল্ড স্টোনের কাজ করা।রিমির চুলের মাঝখানে সিঁতি করে টিকলি দেওয়া।চুলগুলো হালকা কার্ল করে বুকের দুপাশে ফেলে রাখা হয়েছে।মুখে ব্রাইডাল সাজ।

সাথে গাঁ ভর্তি গহনা।একেবারে সেলিব্রিটি নাইকা লাগছে ওকে।সকলে অপা আর রঞ্জিতের কাছে রিমির প্রশংসা করছে।আপনার ছেলের বউ মাশাল্লাহ খুবই সুন্দর,লাখে একটা মেয়ে।একেবারে হাতে তৈরি পুতুল,স্রুতির চেয়ে ওর বান্ধুবি দেখছি বেশি সুন্দর।ভালোই হয়েছে স্রুতি পালিয়েছে।নইলে এতো সুন্দর মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পেতে না।আবার কেউ কেউ তো বলছে আমার ছেলের জন্য যদি এমন একটা বউ পেতাম!এতো এতো কমপ্লিমেন্ট শোনার পরো রঞ্জিত মুখ গোমড়া করেই রেখেছে।আর অপা বিরাট হাসির সহিত সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।(লেখিকাঃশান্তনা আক্তার)

তোলপাড় পর্ব ৫+৬

আহসানের ফ্রেন্ড সব রিমিকে নিয়ে সমালোচনা করছে।কেউ বলছে দোস্ত তোর কপালটাই ভালো,একদম পুতুলের মতো বউ পেয়েছিস।আবার কেউ বলছে,ইয়ার তোর যদি ভুল করে স্রুতির ফ্রেন্ড এর সাথে বিয়ে না হতো তাহলে আমিই স্রুতির ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে ফেলতাম।আহসান যেন ভেতরে ভেতরে রাগে ফুসছে সবার কমপ্লিমেন্ট শুনে।আহসান নিজের মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।কোনো মতে ও নিজের রাগকে আড়াল করে আছে।আহসানের চোখ কান লাল হয়ে আছে।আহসান আর রিমিকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে।

আহসান এতটাই রেগে আছে যে রিমির দিকে ভুলেও তাকাচ্ছে না।রিমি মাঝে মাঝে সকলের দৃষ্টিগোচরে আহসানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে ফেলছে।আহসান ব্লু শেরোয়ানি পড়েছে।হাতে ব্লু ওয়াচ ও চোখে ব্লু গোগালস পড়া সাথে চুল স্পাইক করা।রিমি যেন আবার ক্রাশ খেল সেই প্রথম দেখার মতো।এ নিয়ে দুবার ক্রাস খেল আহসান কে দেখে।প্রথম দিনও রিমি এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে আহসানকে দেখেছিলো।রিমির সেই থেকে আহসানকে দেখছে কিন্তু আহসান মনের ভুলেও রিমির দিকে তাকাচ্ছে না।তাই দেখে রিমির বেশ রাগ হলো।মনে মনে ইচ্ছে মতো বকছে আহসানকে।(লেখিকাঃশান্তনা আক্তার)

-বহুত ভাবওয়ালা তো আপনি!এতো কিসের attitude?সবাই কতো প্রশংসা করছে আমার আর উনি একটাবার তাকিয়েও দেখলোই না আমায়।হুম বুঝেছি উনি তো ভ্যাম্পায়ার,তাই আমার মতো সাধারণ মানুষের দিকে তাকাবে না।এটাই স্বাভাবিক। উনি নিশ্চয়ই কোনো এক ভ্যাম্পায়ারনিকে খুঁজছে।খুঁজলে খুঁজুক আমার কি?আমি ওনার হাত থেকে মুক্তি পেলেই বাঁচি হুহ।

তোলপাড় পর্ব ৯+১০