দুঃখবিলাসী গল্পের লিংক || তানিশা সুলতানা

দুঃখবিলাসী পর্ব ১
তানিশা সুলতানা

স্বামীকে সারপ্রাইজ দিতে স্বামীর অফিসে চলে আসে মাইশা। কিন্তু এখানে এসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যাবে কখনোই চিন্তা করে নি।
অফিসের গেইট দিয়ে ঢুকতে যেতেই দেখতে পায় শিহাব ক্যান্টিনে একটা মেয়ের হাত ধরে খাবার খাচ্ছে এবং মেয়েটাকে খাইয়ে দিচ্ছে। খুনশুটি এবং দুজনের হাসিমুখটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুজনের মধ্যে গভীর কোনো সম্পর্ক আছে।

পায়ের তলার মাটি যেনো নরে ওঠে মাইশার। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে। বুকটা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে৷ হাতে থাকা রিপোর্ট গুলো পড়ে যায়। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। এখুনি ঘুম ভেঙে যাবে এবং স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে যাবে।
চোখ বন্ধ করে চোখ খুলে। কিন্তু স্বপ্ন ভাঙে না। কারণ এটা যে স্বপ্নই নয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে মাইশা। নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা মাত্র। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে “মেয়েটা ওনার বোন। আর কিছুই না”
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো দুজন। বাবা এবং সৎ মায়ের মুখে চুনকালি মাখিয়ে বিয়ের দিন পালিয়েছিলো শিহাবের হাত ধরে। সুখের সংসার গড়েছিলো দুজনে।

দুই পরিবার এখনো তাদের মেনে নেয় নি। তবে শিহাবের মা শিহাবের সাথে কথা বলে। কয়েকবার এসেছিলো তাদের বাড়িতে। মহিলা মাইশাকে একটুও পছন্দ করে না।
খাওয়ার এক পর্যায়ে শিহাবের নজর পড়ে মাইশার ওপর। চমকে ওঠে সে। এই সময়ে এইখানে মাইশাকে একদমই আশা করে নি। খানিকটা ভীতু হয়ে ওঠে শিহাবের মুখখানা।
সে টিস্যু দ্বারা হাত মুছে এগিয়ে যায় মাইশার দিকে। মাইশা মুখখানা দেখে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
“ততুমি এখানে?

একটু হাসার চেষ্টা করে বলে শিহাব।
মাইশা জবাব দেয় না। দুই গাল বেয়ে টপটপ করে কয়েকফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। শিহাব হাত এগিয়ে মাইশাকে ধরতে যায়। দু পা পিছিয়ে যায় মাইশা। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে রিপোর্ট গুলো তুলে নেয়।
ততখনে ইভা নামের মেয়েটা এগিয়ে আসে। মাইশার সামনেই শিহাবের হাত জড়িয়ে ধরে। মাইশার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে

” তুমি এখানে?
মাইশা মাথা নিচু করে ফেলে। এসব দেখার মতো ধৈর্য তার নেই। বিয়ে পরে প্রতিটি মেয়ের অলংকার হচ্ছে তার স্বামী। সেই স্বামীর বাহুডোরে অন্য নারীকে সয্য করার ক্ষমতা কোনো স্ত্রীর নেই।
শিহাব ইভার থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।
“মাইশা এনি প্রবলেম? এখানে চলে আসলে যে?
মাইশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করে

” এই মেয়েটার সাথে তোমার এতো কি সম্পর্ক?
ইভা যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো।
সে ফট করে বলে ওঠে
“আমরা রিলেশনশিপ এ আছি। দুজন দুজনকে ভালোবাসি।

আর একটা সেকেন্ডও দাঁড়ায় না মাইশা। কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় এই জায়গা ছেড়ে। আগেই আন্দাজ করেছিলো মাইশা। গভীর রাত করে বাড়ি ফেরা বা কখনো রাতে বাড়িই ফেরে না শিহাব। মাইশা জিজ্ঞেস করলে জবাব দেয় ” অফিসের কাজ ছিলো”

কতো দিন হয়ে গেলো মাইশার সাথে বসে খাবার খায় না। ভালো করে দুটো কথা বলে না। মাইশা ভেবে নিয়েছিলো হয়ত কাজের ব্যস্ততা। একটা বাচ্চা হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
দীর্ঘ দুই মাস যাবত মাইশা অসুস্থ। জ্বর, মাথা ঘোরা, বমি এসব যেনো লেগেই আছে৷ শিহাবকে বলেছিলো শিহাব হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো চেকআপ করিয়ে নিতে। অভিমানপে মাইশা ডাক্তার দেখায় নি৷
কিন্তু আজকে আর টিকতে না পেরে ডাক্তারের কাছে যায়। এবং জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট। তার মধ্যে নতুন একটা প্রাণ বেড়ে উঠতে।

খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলো মাইশা। সেই খুশিটা ভাগ করে নিতে এসেছিলো শিহাবের সাথে।
কিন্তু
সবার কপালে সুখ হয় না।

সেই দিনও গভীর রাতে বাড়ি ফেরে শিহাব। মাইশা আজকে আর ঘুমায় নি। ঘুম যেনো তার উড়ে গেছে। দরজার কাছেই বসে ছিলো শিহাবের পথ চেয়ে।
শিহাব বাড়িতে ঢুকতেই মাইশা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়
“আমাকে এইভাবে ঠকাতে পারলে তুমি?

কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলে উঠেছে মাইশার। এলোমেলো চুল। অগোছালো শাড়িটা। হাতে এবং মুখে আঁচড়ের দাগ। মাইশা খুব রেগে গেলে নিজেই নিজেকে আঘাত করে। এটা জানা শিহাবের।
শিহাব হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে জবাব দেয়

” ঠকালাম তো? কি করবে? চলে যাবে?
তো যাও না। কে আটকাচ্ছে তোমায়?
আজকে যেনো মাইশার অবাক হওয়ারই দিন। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কাঁদতে যেনো ভুলে গেছে।
“তুমি ছাড়া আমার আর কেউ নেই শিহাব। কি করে পারলে আমার মতে এতিমের সাথে এতো বড় প্রতারণা করতে?
বলতে বলতে শিহাবের দিকে এগিয়ে আসে মাইশা।
শিহাব বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

শার্টের বেতাম খুলতে খুলতে মাইশার দিকে ঘুরে
” ডিস্টার্ব করো না। বের হও রুম থেকে।
মাইশা শিহাবের শার্টের কলার টেনে ধরে। ভয়ংকর দেখাচ্ছে মাইশার মুখখানা
চিৎকার করে বলে ওঠে
“বের হবো না আমি। কি করবে তুমি?

শিহাব ধাক্কা দিয়ে মাইশাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দেয়। তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায় মাইশা। ব্যাথা পায় পায়ে। ব্যাথাকে পাত্তা না দিয়ে বলে ওঠে
” তোমার মা তোমাকে এসব করতে বলেছে তাই না? বেয়াদব মহিলা। ছেলের সংসার ভাংতে উঠেপড়ে লেগেছে। নোংরা মহিলা

শিহাব শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে লাথি মারে মাইশার পেটে। দেয়ালে মাথা লেগে যায়। পেটে হাত দিয়ল ব্যাথায় কুঁকিয়ে ওঠে মাইশা। যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। দুনিয়া যেনো থমকে যাচ্ছে।
“আমার মাকে নিয়ে একটা কথাও বলবি না তুই।

চিৎকার করে বলে ওঠে শিহাব
মাইশা চুপ থাকে না কথা তাকে বলতেই হবে। এভাবে আর কতো দিন? দুই হাতে পেট চেপে ধরে বলে ওঠে
‘বলবোই আমি। নোংরা মা তোমার। ওই মহিলা নিজের মেয়েকে তিনবার বিয়ে দিয়েছে। এখন ছেলেকেও তাই করতে চাচ্ছে। না জানি নিজেও কয় পুরু
বাকিটা শেষ করতে পারে বা মাইশা। শিহাব বেল্ট খুলে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে মাইশাকে। মাইশার আহাজারি কান্না শিহাবের কান ওবদি পৌঁছায় না।

মারতে মারতে অস্থির হয়ে থামে শিহাব।
টেনে হিঁচড়ে মাইশাকে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে। ক্লান্ত মাইশা আহাজারি করে একটাই কথা আওড়াতে থাকে
” আমাকে বের করে দিও না। তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। আমি সারাজীবন তোমার পায়ের কাছে পড়ে থাকবো।
মাইশার কথা কানে তুলে না শিহাব। হাতে পায়ে এক বিন্দু শক্তি নেই শিহাবকে থামানোর। চোখ দুটো লেগে আসছে। শরীর ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগেই। ঠোঁট দুটো নরছে বা আর। র*ক্তে পায়ের পাতা ওবদি ভিজে গেছে।
বাড়ির মেইন গেইট পেরিয়ে রাস্তায় এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

সারাশরীর ব্যাথায় জর্জরিত মাইশা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে মেইন রোডে।
পাষাণ শিহাব চলে যায় তার বিয়ে করা স্ত্রীকে ফেলে। যার গর্ভে বাসা বেঁধেছে তারই অংশ।

দুঃখবিলাসী পর্ব ২