দুঃখবিলাসী পর্ব ২

দুঃখবিলাসী পর্ব ২
তানিশা সুলতানা

মেয়ে বায়না ধরেছে আইসক্রিম খাবে। মেয়ের বায়না কখনোই ফেলে দেয় না আমিনুল ইসলাম। যখন যেটা বলবে তিনি সেটাই হাজির করেন মেয়ের সামনে। রাত দুটো ছুঁই ছুঁই। আমিনুল ইসলামের মেয়ে আয়রার ঘুম ভেঙে যায়। আর ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখেছে সে আইসক্রিম খাচ্ছে।
আমিনুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া মেয়ের এই আবদারে চোখ পাকিয়ে তাকালেও আমিনুল ইসলাম হেসে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কারণ বাড়িতে আইসক্রিম নেই।

পাড়ার দোকানে আইসক্রিম না পেয়ে বাজারের উদ্দেশ্য ছুটেছেন তিনি। তখনই গাড়ির হেডলাইন জ্বলতেই দেখতে পায় রাস্তার মাঝখানে একটা মানুষ পড়ে আছে। বুকটা কেঁপে ওঠে আমিনুলের। গাড়ি ব্রেক করে নেমে পড়ে। মেয়েটার সামনে হাঁটু মুরে বসে নাকের কাছে হাত রাখে। নিঃশ্বাস চলছে। তার মানে এখনো বেঁচে আছে। তার মেয়ের বয়সী মেয়েটা। কোনো কালবিলম্ব না করে কোলে তুলে নেয়। গাড়ির পেছনে মেয়েটাকে শুয়িয়ে দিয়ে কল করে তার ছেলে রিয়াদকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রিয়াদ গেমস খেলা শেষ করে সবেই চোখদুটো বন্ধ করেছিলো। অসময় কল পেয়ে বিরক্ত হয়। বালিশের তলা থেকে বের করে কানে তুলে
“আব্বা জলদি সিটি হাসপাতালে চলে এসো কিছু টাকা নিয়ে।
এক লাফে উঠে বসে রিয়াদ। হাসপাতাল? বাবার কিছু হলো না কি?
” পাপা আর ইউ ওকে?

“আমি ঠিক আছে। একটা মেয়ে অসুস্থ। তুমি এসো। আমি বুঝিয়ে বলছি।
পরপর কল কেটে দেয়। গাড়িতে বসে পড়ে। সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না। গাড়ি স্ট্রাট দিতে গিয়ে মনে পড়ে মেয়ের কথা। ফোনটা আবারও হাতে নেয়। টেক্সট করে মেয়ের নাম্বারে ” সরি মাম্মাম। পাপা তোমার আবদার পূরণ করতে পারলো না”

হাসপাতালের করিডোরে বসে আছে আমিনুল ইসলাম। চিন্তার ভাজ তার কপালে। মেয়েটাকে এভাবে কে মেরেছে? বয়স অল্প। এই বয়সে এতো অত্যাচার। বাবা মা এমনটা করেছেন? নাহহ তারা এমন করবে কি করে? আমিনুল তো জীবনে ছেলে মেয়ের সাথে উচ্চস্বরে কথাই বলে নি। তাই তার ধারনা পৃথিবীর সকল বাবা মা তার সন্তানের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতে পারে না। মারা তো দূরের কথা।
রিয়াদকে দেখা যাচ্ছে। দৌড়ে আসছে। আমিনুল মুচকি হাসে। ছেলে তার বড় হয়ে গেলো দেখতে দেখতে। এই তো এইবার ফাইনাল ইয়ারে উঠবে।

রিয়াদ এসে বাবার পাশে বসে।
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
“কার কি হয়েছে?
” তোমার বোনের জন্য আইসক্রিম কিনতে বেরিয়েছিলাম। তখন দেখলাম রাস্তার পাশে একটা মেয়ে পড়ে আছে। শরীরে তার মারের দাগ। হয়ত কেউ প্রচুর মেরে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে।
রাগ হয় রিয়াদের আবার আফসোসও হয় মেয়েটার জন্য। ইসস অনেকটা মেরেছে বোধহয়।
ভেতরে ডাক্তার চেকআপ করছে। রিয়াদ বাবার কাঁধে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।

খুব ভালো ঘুম হয়েছে শিহাবের। মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। মাইশা ছিলো চোখের কাটা। আবেগের বসে বিয়ে করে নিয়েছিলো মেয়েটাকে। তখন কি দেখে পাগল হয়েছিলো এখনো বুঝতে পারে না শিহাব।
ধুররর আরও একটু দূরে ফেলে দেওয়া উচিত ছিলো। রাস্তায় ফেলে আসলো সকাল সকাল লোক জড়ো হবে। সকলে প্রশ্ন ছুঁড়বে। এই পাড়ার সকলেই চিনে মাইশাকে। বাড়িতেই থাকতো। এ বাড়ি ও বাড়ি টইটই করাই ছিলো তার স্বভাব।

সকালে লোক জড়ো হয়ে শিহাবের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে শিহাব জবাব দিবে “একটা ছেলের সাথে প্রক্রিয়ায় জড়িয়েছিলো। এবং গতকাল সেই ছেলের সাথে ভেঙক গিয়েছিলো। সেই ছেলেটাই হয়ত এমন করে মেরে এখানে রেখে গেছে”

নিজেকে নিজে বাহবা দেয় শিহাব। বাহহ এতো বুদ্ধি তার মাথায়?
বিছানা থেকে নামতেই চোখ পড়ে মেঝেতে। রক্ত পড়ে আছে বেশ খানিকটা। কপালে ভাজ পড়ে শিহাবের। এমন আঘাত তো করে নি যে র*ক্ত ঝড়তে পারে। তাহলে এই র*ক্ত আসলো কোথা থেকে?
না চাইতেও একটু চিন্তা হচ্ছে শিহাবের। কিন্তু সেই চিন্তার রেশ কেটে যায় যখন ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে “সুইটহার্ট” নামটা জ্বল জ্বল করছে। শিহাব মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে।
অশ্লীল আলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়ে প্রেমিকার সাথে।

ডাক্তার যখন বলছে “এখন সে ঠিক আছে। একটুর জন্য তার বাচ্চাটার কোনে ক্ষতি হয় নি”
আমিনুল অবাক হয়। মেয়েটা বিবাহিত? আবার প্রেগন্যান্ট। এই অবস্থায় একটা মেয়ের ওপর এতোটা জুলুম কেউ করতে পারে?
রিয়াদের কপাল থেকে চিন্তার ভাজ সরছেই না। মেয়েটাকে দেখার খায়েশ জন্মেছে তার। দেখতে চায় এক পলক মেয়েটাকে।

ডাক্তারের ভাষ্যমতে মেয়েটাকে এখন বাড়ি নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মেয়েটার বাড়ি কোথায়?
আমিনুল দাঁড়িয়ে যায়। গুটিগুটি পায়ে কেবিনে ঢুকে পরে। তার পেছন পেছন রিয়াদও ঢুকে পড়ে।
মাইশার জ্ঞান ফিরেছে। সে মাথার ওপরে থাকা সাদা দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে আছে। জীবনের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সে।

“মামনি?
শীতল কণ্ঠে চমকে ওঠে মাইশা। দৃষ্টি সরিয়ে তাকায় লোকটার মুখপানে। জীবনে কখনো বাবার মুখে ” মা, মামনি, আম্মু” এসব ডাক শুনে নি। ভালো করে কখনো কথা বলেছে কি না জানা নেই মাইশার।
আমিনুল বসে মাইশার পাশে। রিয়াদ তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে। মেয়েটাকে সে আগেও কোথায় দেখেছে। কিন্তু কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না।

“তোমার বাবা কোথায়?
বাবার নাম কি?
মাইশা সাথে সাথে জবাব দেয় না। একটু সময় নেয়। মনে মনে কয়েকবার আওড়ায় বাবার নামটা। তারপর বলে
” আমাকে একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন আংকেল?
সামান্য একটু থাকার জায়গা।

আমার এই দুনিয়ায় কেউ নেই। স্বামী ছিলো। তিনি গতকাল তাড়িয়ে দিয়েছে।
বলতে বলতে চোখের কুর্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আমিনুল ইসলামের খারাপ লাগে। তিনি নিজেও এতিম ছিলেন৷ এতিম খানায় বড় হয়েছেন তিনি। এবং বর্তমানে বেশ কয়েকটা এতিম খানার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

মাইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তিনি।
“তুমি প্রেগন্যান্ট। এই অবস্থায় কাজ করবে কিভাবে?
” আমি পারবো।
এরপর আর কিছু বলার থাকে নূ আমিনুলের। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জবাব দেয়

দুঃখবিলাসী পর্ব ১

“ঠিক আছে
আর তখনই কেবিনে হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে শিহাব। তেড়ে আসে মাইশার দিকে।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৩