দুঃখবিলাসী পর্ব ৩

দুঃখবিলাসী পর্ব ৩
তানিশা সুলতানা

“মিস্টার শিহাব। আপনি এখানে?
আমিনুল ইসলামের অফিসেই চাকরি করে হিসাব। সম্পর্কে তিনি শিহাবের বস। কোনো ভাবে শিহাবের মা শিরিন বেগম জেনে গিয়েছিলো মাইশা হাসপাতালে আছে। এবং মাইশাকে এডমিন করিয়েছে আমিনুল ইসলাম।
তখনই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শিহাবের। মাইশা যদি তাকে সব কিছু বলে দেয় তাহলে চাকরি চলে যাবে। এতো ভালো চাকরি কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চায় না শিহাব৷ তাছাড়া আমিনুল ইসলাম প্রতিবাদী মানুষ। তিনি মামলা ঠুকে দিবে।

মাইশার চোখে ভয় নেই। অথচ তার ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। মাইশা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিহাবের দিকে। নিজের ভুল বুঝতে পারবে কি শিহাব? এই ছেড়ে যাওয়া ডিভোর্সের যুগে মাইশা চায় তার সংসার বাঁচাতে। তার স্বামীর সাথে থাকতে। সন্তনাকে ভালোবাসার ভালোবাসায় মানুষ করতে।
শিহাবকে চুপ থাকতে দেখে রিয়াদ বলে ওঠে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আপনি কি চিনেন তাকে?
“হ্যাঁ চিনি। স্যার ও আমার বউ।
চোয়াল শক্ত করে ফেলে আমিনুল ইসলাম। রেগে যায় রিয়াদও।
” ওকে এভাবে আঘাত কে করেছে?
শক্ত কন্ঠ আমিনুল এর। শিহাব ঘাবড়ে যায়। মা তাকে পাক্কা খবর দিয়েছে। এখন পর্যন্ত মাইশা কিছুই বলে নি তাদের। তার মানে সুযোগ এখন শিহাবের।

শিহাব জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে ওঠে
“গতকাল বয়ফ্রেন্ডের সাথে ভেগে গিয়েছিলো। আমি অনেকবার আটকানোর চেষ্টা করেছি। পারি নি। তারপর আর খোঁজ নেওয়া হয় নি। হয়ত ছেলেটাই তার এই অবস্থা করেছে।
অকপটে একখানা মিথ্যে বলে ফেলে শিহাব। একটুও জিব্বা কেঁপে ওঠে না তার। মাইশা তাচ্ছিল্য হাসে। কার সাথে সংসার করতে চাচ্ছিলো সে? অভাগীর কপালে সুখ লেখা থাকে না।

আমিনুল ইসলামের বিশ্বাস হবে না হবে না করেও বিশ্বাস হয়ে যায়। কেনোনা শিহাবকে চিনে তিনি চার বছর যাবত। আর মাইশাকে আট ঘন্টার মতো। নিঃসন্দেহে শিহাব সত্যি বলছে।
কিন্তু শিহাবের কথা বিশ্বাস হয় না রিয়াদের। সে ভ্রু কুচকে বলে ওঠে

” আপনি কি করে জানলেন উনি এখানে আছে? এটা তো কারোরই জানার কথা। আমরা কাউকে জানাই নি।
শিহাব ঘাবড়ে যায়। কি জবাব দেবে এখন সে? আমিনুল ইসলামও এবার ভ্রু কুচকে ফেলে। শিহাবের কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামই বলে দিচ্ছে কোনো একটা গন্ডগোল আছে। বিচক্ষণ আমিনুল বুঝতে পারে ছেলেটা ভয় পাচ্ছে। কিন্তু কেনো?
শিহাব আমতা আমতা করতে থাকে।

“বলুন
তাড়া দেয় রিয়াদ।
” আআমার একটা বন্ধু কল করেছিলো আমায়। দেখেছে মাইশাকে এখানে।
আরেকটা মিথ্যে। রিয়াদের সন্দেহ দূর হয় না। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে “কোন বন্ধু? তাকে ডাকুন”
কিন্তু বাবার সামনে এতো কথা বলা ঠিক হবে না। তাই চুপ করে যায়।
আমিনুল ইসলাম মাইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

“তোমার স্বামী সত্যি কথা বলছে?
শিহাব কঠিন দৃষ্টিতে তাকায় মাইশার দিকে। চোখ দিয়েই সে হুমকি দিচ্ছে। সত্যি বললে মেরে ফেলবো তোমায়।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাইশা।
” হয়ত সত্যি বলছে। আমি ঠিক জানি না।

মাইশার এরকম জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারে না রিয়াদ। মেয়েটা ভয় পেয়ে মিথ্যে বলছে চতুর রিয়াদ বুঝতে সময় লাগে না। তবে সে কথা বলে না। চুপচাপ দেখতে থাকে।
শিহাব রিয়াদের দৃষ্টি খেয়াল করছে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। নাহলে বিপদ বাড়বে।
“স্যার ধন্যবাদ আপনাকে। আমার স্ত্রীকে বাঁচিয়েছেন। আমি এবার ওকে নিয়ে যেতে পারি?
আমিনুল জবাব দেয় না। জীবনের কতো কঠিন সময় পার করেছেন তিনি। কিন্তু কখনো দোটানায় পড়ে নি। আজকে কেমন দোটানা কাজ করছে। মেয়েটাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয়। অধিকার নেই।

শিহাব উওরের অপেক্ষা করে না। মাইশার হাত থেকে ক্যানেলো এক টানে খুলে ফেলে কোলে তুলে নেয়। রক্ত উঠে যায় হাতে। মাইশা ব্যাথা পেলেও শব্দ করে না। কারণ মনে যে এর চেয়েও বিশাল ব্যাথা পূষন করে রেখেছে।
চোয়াল শক্ত করে ফেলে রিয়াদ। হাত মুষ্টি বন্ধ করে ফেলে।
শিহাব কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে বলে
” পাপা ছেলেটার কাছে মেয়েটা সেফ নয়।

আমিনুল মুচকি হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“একজন স্ত্রী সব সময় তার স্বামীর কাছেই সেফ থাকে। দেখছো ছেলেটাকে? মেয়েটা পর পুরুষে আসক্ত তবুও কেমন বউকে মেনে নিলো। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা এমনই বাবা।
বাবার কথা ভালো লাগে না রিয়াদের। বাবা ঠিক বলছে না। মানুষ চিনতে ভুল করছে। অতিরিক্ত সরল তার বাবা। জীবন কঠিন পরিস্থিতি পার করেছে। অভাব দেখেছে। কিন্তু কখনো ছলচাতুরী বা দুমুখোসাপের কবলে পড়ে নি। তাই তার অভিজ্ঞতা কম।

মাইশাকে বাড়িতে নিয়ে আসে শিহাব। একটা কথা বলে না সে। মাইশাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
মাইশা শিহাবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কল করে শিরিন বেগম।
শিহাব মুচকি হাসে। কলটা রিসিভ করে

” মা বলো
“তোর বউ প্রেগন্যান্ট।
শিহাব খানিকটা অবাক হয়। মাইশা প্রেগন্যান্ট? অথচ তাকে বললো না?
” শিহাব বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেল
চমকে ওঠে শিহাব।
“কি বলছো মা। আমার অংশ সে।

” দেখ বাবা
আমার কথা না শুনে মাইশাকে বিয়ে করে জীবনে অনেক বড় ভুল করেছিস। এখন এই বাচ্চা দুনিয়াতে এনে দ্বিতীয় ভুল করিস না। মাইশাকে ছাড়তে হলে আগে বাচ্চাটাকে মারতে হবে।
শিহাব জবাব দেয় না।
শিরিন বিরক্ত হয়। তবে নিজের বিরক্ত নিয়ন্ত্রণ করে বলে

“ইভার বাবার কোটিকোটি টাকার সম্পত্তি তোর নিজের দখলে নিতে হবে। এই রকম বাচ্চা ভবিষ্যতে অনেক পাবি। কিন্তু ইভা হাত ছাড়া হয়ে গেলে পাবি না। আমার কথা বুঝতে পারছিস?
শিহাব কিছু একটা চিন্তা করে। তারপর জবাব দেয়

” হ্যাঁ মা বুঝতে পেরেছি। বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেললে এমনিতেই মাইশা আধপাগল হয়ে যাবে। তারপর একটু টর্চার করলে ফুল পাগল হবে। তখন পাবনা ভর্তি করে আমি বিয়ে করবো।
শিরিন মুচকি হাসে। এটাই চাচ্ছিলো সে। আর একটু উসকাতে বলে

দুঃখবিলাসী পর্ব ২

“মাইশার তো কেউ নেই। মে*রে ফেললেও কেউ মামলা করবে না। বা খোঁজ নেবে না। মে*রেই দে। আর কতো অপেক্ষা? ঝামেলা চুকে যাক৷ পাগল হতে সময় লাগবে।
” আহহ মা বুঝতে পারছো না। এখন মেরে দিলে সবাই সন্দেহ করবে। আস্তে ধীরে মা*রতে হবে। যাতে সবাই বুঝে এটা খু*ন নয়।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৪