দুঃখবিলাসী পর্ব ৪

দুঃখবিলাসী পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা

অফিসের একটা ফাইল চুরি হয়ে গিয়েছে। আমিনুল ইসলামের ধারণা মতে কেউ এসেছিলো অফিসে এবং ফাইল চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। সন্দেহের বসে তিনি অফিসের পেছনের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে। হঠাৎ তার নজর পড়ে একটা দৃশ্যর ওপর। ইভা এবং শিহাবের ঘনিষ্ঠ কিছু মুহুর্ত। অফিসে এসব চলছে? অপ্রীতিকর অবস্থায় দুজন। নিজেদের লালসা মেটাতে ব্যস্ত।

অফিসের পেছনের দিকে মানুষ জনের চলাচল কম। ফাঁকা জায়গার সুযোগ নিচ্ছে তারা।
সব কিছু স্পষ্ট হয়ে যায় আমিনুলের কাছে। দুই দুই চার মিলিয়ে ফেলেন তিনি।
চোয়াল শক্ত ওঠে আসে।
শিহাবকে চরম শাস্তি দেওয়ার ফন্দি মনে মনে এঁটে ফেলে। সাথে মাইশাকে সুন্দর একটা ভবিষ্যতের প্ল্যানিংও করে ফেলে
সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে মাইশাকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাইশা শিহাবের প্ল্যানিং শুনে ফেলে। শিহাবের ফোন বাজার শব্দেই সে বুঝতে পেরেছিলো নিখুঁত কোনো পরিকল্পনা করা হবে। এবং হলোও তাই।
দুই হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে ওঠে। মানুষ এমনও হয়? দরজার আড়াল থেকে সরে দাঁড়ায়। দৌড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। ঝর্ণা ছেড়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
ছোট বেলায় মা মারা গিয়েছে মাইশার। মানুষের মুখে শুনেছে মাইশার মাকে তার বাবা খুন করেছে। বাবা কখনো একটুও ভালোবাসে নি মাইশাকে। মাকে কবর দিয়ে তার পরের দিনই বিয়ে করে নতুন মা ঘরে আনে। দাদা দাদি নানা নানু কেউ নেই মাইশার।

এতিম মাইশা বাবা এবং সৎ মায়ের মাইর খেতে খেতে বড় হয়েছে। কলেজে ওঠার পরে পরিচয় হয় শিহাবের সাথে। ভালো লাগা ভালোবাসা খুনসুটি দুষ্টুমিতে দুটো বছর পার করে। একদিন হুট করে এক বুড়ো লোকের সাথে মাইশার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে। বিয়ের দিন শিহাবের হাত ধরে পালিয়েছিলো।
দুই মাস ভালোভাবে সংসার করেছিলো। তারপর থেকেই শিহাব বদলাতে থাকে।

অতীত ভেবে মাইশার কান্নার গতি বেরে যায়। তখন ইচ্ছে করছিলো আমিনুল ইসলামকে সত্যিটা বলে দিতে। কিন্তু পারে নি। যদি তিনি বিশ্বাস না করতো? তখন তো আবার শিহাবের সাথেই ফিরতে হতো। তখন শিহাব মাইশাকে মেরে ফেলতো এটা জানে মাইশা।
নিজেকে শক্ত করার প্রচেষ্টা চালায় মাইশা। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না। নিজের জন্য না হোক বাচ্চাটার জন্য মাইশাকে বাঁচতে হবে। এই নরক থেকে বের হতে হবে।

শাওয়ার শেষ করে বের হয় মাইশ। ব্যাথা কমে নি এখনো। সারা শরীর ব্যাথায় জ্বলে যাচ্ছে।
টাওয়াল দিয়ে চুল পেঁচিয়ে খাটে বসতে যেতেই বাইরে থেকে আওয়াজ পায়। মেয়েলী কন্ঠ ভেসে আসছে। মাইশা ধীরে সুস্থে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ইভা এসেছে। শিহাবের কোলে বসে চুম্বনে ব্যস্ত তারা। মাইশা চোখ বন্ধ করে নেয়। খাটে এসে বসে। দুই চোখ বেয়ে আবারও কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে।

ইভা কেনো এসেছে? নিশ্চয় মাইশার বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ নিয়ে এসেছে। এবার নিশ্চয় খাবারের সাথে মিশিয়ে মাইশাকে খাইয়ে দিবে। আর তার অনাগত সন্তান মারা যাবে।
মাইশা এটা মেনে নিবে?

দীর্ঘ সময় নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরেই শুয়ে পড়ে শিহাব এবং শিহাবের হাতের ওপর মাথা রেখে ইভা শয়।
“জান মেয়েটাকে তাড়াও না।।
শিহাব মাথার ওপরে থাকা সাদা দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবছে সে কিছু
” আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে খুব ভালো হবে তাই না ইভা?
ইভা খুশিতে গদগদ হয়ে জবাব দেয়
“হুমম খুব ভালো হবো।

” আমি মাইশাকে ঠকিয়ে তোমায় শপে নিচ্ছি। তোমার পরে অন্য কারো কাছে যাবো না তার কি গ্যারান্টি আছে?
বাঁকা হাসে ইভা
“মাইশার মতো বোকা নই আমি। তোমার থেকেও বড় খেলোয়াড়। দুর্বল ভেবো না।
শিহাব জবাব দেয় না।

” তোমার সো কল্ড বউকে খাইয়ে এসো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
শিহাব উঠে পড়ে। পরনের কাপড় ঠিক করে কিচেনে চলে যায়। গরম দুধে ঔষধ মিশিয়ে চলে যায় রুমে। ইভা ফোন দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
শিহাব রুমে গিয়ে দেখে মাইশা নেই। ওয়াশরুমের দরজা খোলা। বেলকনিতে চলে যায় শিহাব। সেখানেও নেই মাইশা। টেনশনে পড়ে যায় শিহাব। কোথায় গেলো? পালালো না তো?

পালালে পালাক। এসবে ধার ধারে না শিহাব। কিছু পিকচার কালেক্ট করেছে সে। মাইশা বিষয়ে কেউ কিছু বললে পিকচার গুলো দেখিয়ে দিবে। এবং বলবে অন্য ছেলের সাথে পালিয়েছে।
দুধের গ্লাসটা টেবিলে রাখতেই একটা চিরকুট দেখতে পায় শিহাব। ভ্রু কুচকে চিরকুটটা হাতে নেয়।
“একটুখানি সুখের আশায় ভালোবেসেছিলাম তোমায়। কখনো ভাবি নি এভাবে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিবে।
অভিশাপ দিবো না তোমায়। ভালো থেকো”
চিরকুটরা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে শিহাব। ইমোশনাল কথাবার্তা তার ঠিক ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগে।

হাঁটতে হাঁটতে কতো দূর চলে এসেছে জানা নেই মাইশার। গলা শুকিয়ে গিয়েছে। কাঠফাঁটা রোদ্দুর শরীর পুরিয়ে দিচ্ছে৷ কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। মাথা ঘুরছে। যে কোনো মুহুর্তে পড়ে যাবে এমন অবস্থা।
আর হাঁটতে পারবে না মাইশা। রাস্তার পাশে বসে পড়ে। বড় বটগাছের ছায়াতলে। চোখ দুটো বুজে আসছে। তাকিয়ে থাকা দায়।

কোথায় যাবে? আল্লাহ কি একটা ব্যবস্থা করে দিবে? বাঁচার জন্য একটা রাস্তার সন্ধান দিবে? না কি এখানেই সমাপ্তি ঘটবে মাইশা নামক মানুষটার?
রিয়াদ গাড়ি করে যাচ্ছিলো আয়রার স্কুলে। বাবা ব্যস্ত থাকায় তাকেই যেতে হচ্ছে বোনকে আনতে। হঠাৎ করে চোখ পড়ে মাইশার দিকে। মনের মধ্যে প্রশান্তি বয়ে যয রিয়াদের। এটলিস্ট মেয়েটাকে খুঁজে পেলো। সকাল থেকেই রিয়াদের চিন্তা হচ্ছিলো। ওই লোকটা মেয়েটার কোনো ক্ষতি না করে দেয়।
গাড়ি সাইড করে দাঁড় করিয়ে মাইশার কাছে যায় রিয়াদ।
মাইশা গাছে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।

“হেই মিসেস
শুনতে পাচ্ছেন?
কারো ডাকে পিটপিট করে চোখ খুলে মাইশা। সকালকার সেই ছেলেকে দেখে সোজা হয়ে বসে।
” চলুন আমার সাথে।
মাইশা জবাব দেয় না। এবং এক ফোঁটা নরেও না।
রিয়াদ বুঝতে পারে এভাবে মেয়েটা যাবে না।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৩

“পাপা আপনার জন্য কাজ ঠিক করেছে। আমাদের এতিম খানায় রান্না করবেন। এবং সেখানেই থাকবেন। স্যালারি একটু কম হবে। চলবে?
মাইশার চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। রিয়াদ মুচকি হাসে। গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দেয়।

দুঃখবিলাসী পর্ব ৫