পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১২

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১২
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

কেটে গেছে ২০ দিন।
কাল ছোঁয়ারা বাসায় ফিরবে। তাই আজ সারাটা সময় মিথি এক মুহূর্তের জন্যও ছোঁয়াকে কাছ ছাড়া হতে দিচ্ছে না।
ছোঁয়ার কাকিমা রা নানান রকমের শিতের পিঠা বানাচ্ছে।

সাহেদ চৌধুরী ৩ দিন থেকে ঢাকায় ফিরে গেছিলেন অফিসে তো এতো দিনের জন্যে ছুটি দিবে নাহ। ২ দিন হলো গ্রামে এসেছেন আবার ওদের নিয়ে যেতে।
মিথি আর ছোঁয়া ভাবছে বকুল ফুল কুড়োতে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ, কাল তো চলেই যাবে তাই আজ দুটোয় মিলে যা ইচ্ছে করে নিবে ভেবেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাসার পাসেই একাটা বকুল গাছ রয়েছে, দুইজোন মিলে গছের নিচে বসে বসে ফুল কুড়োচ্ছে আর দুঃখ বিলাস করছে।
মিথি বললো,
কাল চলে গেলে আবার অনেক দিন পরে দেখা হবে তাই না?
হ্যাঁ। তোকে খুব মিস করবো রে মিথি।
তাহলে যাস না প্লিজ থেকে যা আমাদের সাথে আমরা এক সাথে থাকবো স্কুলে যাবো।

ছোঁয়া মন খারাপ করে বললো,
তা কি করে হয় আমি তো আম্মুকে ছাড়া থাকতে পারি নাহ।
ছোঁয়ার কথা সুনে মিথি মন খারাপ করে ফেললো।
ওর মন খারাপ দেখে ছোঁয়া বললো,
আরেহ মন খারাপ করিস নাহ আমি তো আবার আসবো স্কুল বন্ধ দিলেই চলে আসবো। আর আমি যখন আসতে পারবো নাহ তুই চাচ্চুকে বলবি তো আমাদের বাসায় দিয়ে আসবে তারপরে আমরা অনেক আড্ডা দিবো মজা করবো।

মিথি তবুও কিছু বললো নাহ।
ছোঁয়া ওর চুপ করে থাকে দেখে ওর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললো,
কাল চলেই যাবো, এই একটা দিন আছি তুই এইভাবে মুখ গোমরা করে থাকলে করে থাকলে কি আমার ভালো লাগবে বল।
ছোঁয়ার অসহায় কথা সুনে বোধ হয় মিথির মন গললো, ওর দিকে তাকালো। তারপর হেসে ছোঁয়াকে জরিয়ে ধরলো।

দুপুরের খাবার পরিবারের সবাই মিলে একসাথে সম্পন্ন করলো।
সাহেদ চৌধুরী বাবা ভাই দের সাথে ড্রয়িং রুমে বসে কথা বলছে। কাল চলে যাবে তাই সবাই মিলে বসেছে।
আনিতা বেগম তারা তিন জা মিলে নুরজাহান বেগমের ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
বাচ্চারা ঘুমুচ্ছে৷ এই দিকে ছোঁয়া আর মিথি মিলে শাড়িরপরেছে, অগোছালো ভাবে কোনরকম করে। শাড়ি মিথি ওর মায়ের ঘড় থেকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছে। সকালে কুড়িয়ে আনা বকুল ফুল দিয়ে মালা গেঁথেছিলো। ওই গুলা দিয়ে সেজেছে দুই বোন।

ছোঁয়া বললো,
মায়ের ঘর থেকে ফোনটা নিয়ে আসলে ছবি তুলতে পারতাম।
তো যা এখন নিয়ে আয়।
কেমনে যাবো দাদু আব্বু চাচ্চুরা সবাই ড্রয়িং রুমে। দেখে ফেলবে তো চুরি করে শাড়ি পরেছি।
মিথি বললো,
তোর আনা লাগবে নাহ। তুই থাক আমি গিয়ে আনছি পরে সুন্দর করে পিক তুলে দিবি আমায়।

কিন্তু কেমনে আনবি তুই।
মিথি যেতে যেতে বললো দেখিস তুই, বলেই দরজা খুলেই দেখে আনিতা বেগম দাঁড়িয়ে হাতে বিকেলের নাস্তা।
মিথি আনিতা বেগম কে দেখে এক লাফে দরজা থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো।
আনিতা বেগম ভিতোরে ডুকে ওদের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বললেন,
কি সেজেছিস তোরা এইগুলা?

ছোঁয়া বললো,
আম্মু মিথি কাকি মার থেকে শাড়ি আনছে তাই একটু পরতেছিলাম এক্ষুনি খুলে ফেলতাম, বলেই কেবলা মার্কা হাসি দিলো।
আনিতা বেগম দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,
এইগুলা কে সারি পরা বলে নাকি আয় আমি সুন্দর করে পড়িয়ে দিচ্ছি।

মিথি খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
সত্যি কাকিমা। তুমি অনেক ভালো।
আনিতা বেগম মুচকি হেসে ওদের শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিলেন।
সাজানো শেষ হলে ছোঁয়া বললো,
আম্মু তোমার ফোনটা দিবা আমরা পিক তুলবো ছাদে গিয়ে।

আনিতা বেগম বললেন,
আচ্ছা তোরা যা আমি নিচে থেকে ফোন নিয়ে আসছি।
ওদের বাসার ছাদটা অনেক সুন্দর ফুল গাছে ভরপুর।
নানান রকমের ফুল গাছের মধ্যে এসে ওরা ছবি তুলছে।
আনিতা বেগম ফোন নিয়ে ছাদে আসলে তাকে দিয়ে দুইজন একসাথে ছবি তুলেছে। দুইজন একসাথে ছবি তোলা শেষ হতে আনিতা বেগম ফোন ওদেরকে নিয়ে নিচে চলে গেছে।
এখন মিথি ছোঁয়াকে ছবি তুলে দিচ্ছে আবার ছোঁয়া মিথিকে।

ওদের ছবি তোলা শেষ হতে নিচে নামতে যাবে এমন সময় ফোনটা বিকট শব্দে বেযে উঠলো।
ছোঁয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে মাইশার আম্মুর নম্বর। নিশ্চয়ই মাইশা সকল করেছে। সে দ্রুত কল রিসিভ করলো।
ওপাশ থেকে মাইশা বললো,
আসসালামুআলাইকুম।
ছোঁয়া বললো,
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আমি কিন্তু তোর আন্টি না।

তোর কাছে ফোন আমি ভাবলাম আন্টি ধরবে।
হ্যাঁ, তোর কথার ধরন দেখেই বুঝেছি। আম্মু কল ধরবে ভেবেই এতো মিষ্টি করে কথা বলছিলি।
বলতে তো হবেই কারন তোর ছোট ভাইটাকে বিয়ে করবো মিষ্টি করে কথা না বললে তো আর আমাকে ছেলের বউ করবে না।
হুহ বয়েই গেছে তোরে ভাইয়ের বউ করতে।
সে দেখা যাবে এখন বল আসবি কবে?

কাল সকালে এইখান থেকে রওনা দিবো।
অবশেষে আসছিস তবে,, উফ তারাতারি আয় কাল আমি পরশুই তোর সাথে দেখা করতে তোদের বাড়ি যাবো কতদিন দেখা হয় না।
আচ্ছা সকাল সকাল চলে আসবি।
ওকে। আচ্ছা বাই এখন রাখছি।
আচ্ছা।

কান থেকে ফোন নামিয়ে ছোঁয়া মিথির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো মেয়েটা গাল ফুলিয়ে রেখেছে।
ছোঁয়া বললো,
তোর আবার কি হইছে?
নতুন ফ্রেন্ড বুঝি। ওকে পেয়ে ভুলেই গেলি আমায়। কাল বাসাত গেলে তো আর মনেই পরবে নাহ।
ছোঁয়া এতক্ষণে বুঝলো মিথির গাল ফুলানোর কারণ।
তারপরে হেসে বললো,

তোকে কখনো ভোলা যায় বোকা। তুইতো আমার ফ্রেন্ড আবার বোনও। তোকে কখনো ভুলবো না। সবসময় মিস করি।
মিথি বললো,
সত্যি?
তিন সত্যি। এবার চল নিচে।
বলেই মিথির হাত ধরে নিচে নামতে লাগলো।

রাদিফদের পরিক্ষা শেষ হয়েছে চার দিন। এর মাঝে নানু বাড়িতে গিয়ে দুই দিন থেকে এসেছে সে। তার নাকি বাড়ি ছাড়া ভালো লাগে নাহ তাই চলে এসছে। তা ছাড়া এবার সে ক্লাস টেনে উঠবে বই তো আর চেঞ্জ হবে নাহ তাই পড়তে হবে সামনেই এস এস সি এক্সাম।
বাবা বলেছে এসএসসি তে ভালো করলে বাইক কিনে দিবে।
সে বিকেল থেকে ছাদে বসে উলটা পালটা ভেবে চলেছে। কিন্তু তার কিছুই ভালো লাগছে নাহ সুধু ভাবছে কবে স্কুল খুলবে। কেমন জানি খালি খালি লাগছে।
আচ্ছা তার তো আগে কখনো এমন লাগতো নাহ বরং স্কুল বন্ধ দিলে খুশিই হতো তাহলে এখন এমন লাগছে কেনো।

হয়তো আমি বড় হয়েছি তাই এখন ফ্রেন্ড দের মিস করছি ওদের সাথে দেখা করা আড্ডা দেওয়া মিস করছি তাই এমন লাগছে। হ্যাঁ তাই হবে হয়তো নাহয় আর কি।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১১

রাদিফ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৫ টা বাজে।
তারপর ছাদ থেকে নেমে নিচে গেলো। সে বিকেল বেলা প্রতিদিন ফুটবল খেলে। এখন ফুটবল খেলতে যাবে, তারপরে বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরবে।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৩