পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৩

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৩
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

কুয়াশাচ্ছন্ন একটা সকাল,
গ্রামে একটি শীতের সকালের দৃশ্য সত্যিই অপরূপ।
প্রায় আধা ঘন্টা ধরে জানালার কাছে বসে বসে এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছে ছোঁয়া।
মিথি একটু আগেই নিচে গিয়েছে।

সেই ভোর বেলা থেকে দুটোই মিলে গল্প করছে আর শীতের সকাল উপভোগ করছে।
কাল অনেক রাত পর্যন্ত দুটোয় জেগে ছিলো আবার ভোরবেলা থেকে গল্প করছে।
ওদের এত গল্প আসে কোথা থেকে।
ছোঁয়া আর বসে না থেকে উঠে দাঁড়ালো, রেডি হতে হবে।
আনিতা বেগম একটু আগে এসে ওকে তৈরি হতে বলে গেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছোঁয়া ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয় নিলো। সব জিনিসপত্র কালকেই গোছানো শেষ।
ছোঁয়ার রেডি হওয়া শেষ হতেই মিথি এলো রুমে। ও তৈরি হয়ে গিয়েছে দেখে বললো,
বাহ যেই না একটু নিচে গেলাম এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেলি, বাড়ি যাওয়ার এত তারা।
তৈরি তো হতেই হতো, আম্মু দুইবার এসে বলে গেছে তাই আর বকা খাওয়ার আগেউ তৈরি হয়ে নিলাম। এবার চল নিচে যাই।

হ্যাঁ যাবো তার আগে দেখ তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি।
কি আনছিস?
শিউলি ফুল চারা।
এর জন্যই তো নিচে গেছিলাম।
মিথির কথা সুনে ছোঁয়া ভিষণ খুশি হয়ে গেলো। ফুল ওর ভীষণ পছন্দ। এখন এই গাছ নিয়ে সে বাসায় লাগাবে তারপরে যত্ন করে বড় করবে তুলবে।
ছোঁয়া খুশি হয়ে মিথিকে জড়িয়ে ধরলো। তারপরে বললো,
অনেক অনেক থ্যাংকস তোকে।

মিথি বললো,
হইছে এবার চল নিচে সবাই বসে আছে আমাদের জন্য।
ওরা দুজন নিচে গিয়ে দেখলো সবাই টেবিলে বসেছে সকালের নাস্তা করার জন্য।
নুরজাহান বেগম বললেন,
ছোঁয়া আয় তারাতারি আমার পাশে এসে বস। কতো রাস্তা যেতে হবে খেয়ে নে তো দেখি।
ছোঁয়া দাদির পাশে গিয়ে বসলো।
আনিতা বেগম মিথিকে বললেন,
মিথি আয় তুইও এক সাথে বসে পড়।

না কাকিমা আমি পড়ে খেয়ে নিবো।
মিথির কথা সুনে ছোঁয়া মন খারাপ করে ওকে বললো,
একটু পরে তো চলে যাচ্ছি নাস্তাটা নাহয় এক সাথে করি।
ওর কথায় মিথি গিয়ে ছোঁয়ার পাসে বসে পড়লো।
সকালে নাস্তা শেষ করে বাড়ির সবাই মিলে ড্রয়িং রুমে গল্পগুজব করছে।
বাচ্চারা ওদের মত খেলছে।

সাহেদ চৌধুরী ঘড়িতে সময় দেখেলেন ৯ টা বাজে।
তারপরে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
এবার তাহলে বের হওয়া যাক।
উনার কথায় মুহূর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো সবার।
নুরজাহান বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,
হ্যাঁ বাইরে গাড়ি চলে এসেছে বোধহয়।

সাহেদ চৌধুরি উঠে দাঁড়িয়ে লাগেজ নিতে নিতে বললেন,
বের হওয়া যাক তবে নয়তো আবার দেরি হয়ে যাবে।
গেইটের কাছে গাড়ি এসেছে। বাড়ির সবাই গেইট পর্যন্ত এলো ওদের এগিয়ে দিতে।
ছোঁয়া সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিথিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কিছুক্ষণ কান্না করে সবাইকে বলে গাড়িতে গিয়ে বসলো।
যাওয়ার আগে মিথিকে বললো,

খুব তারাতাতি চাচ্চুকে বলেবো আমাদের বাসায় তোকে নিয়ে যেতে।
সাহেদ চৌধুরী আর আনিতা বেগম সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো।
সুফি আর সাফিকে আগেই গাড়িতে বসিয়ে রেখেছিলেন সাহেদ চৌধুরী।
ওনারা গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে সুরু করলো।

ওদের যাওয়ার পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলেন নুরজাহান বেগম।
বিকেল বেলা মাঠে খেলতে যাচ্ছে রাদিফ, পথেই সোহেলের সাথে দেখা।
কিরে রাদিফ মাঠে যাচ্ছিস নাকি?
হ্যাঁ, খেলতে যাচ্ছি। তুই যাবি নাকি?
তো আর কই যাবো এই বিকেল বেলা।
দুই দিন হলো খেলিস নাহ ভাবলাম আজকে যাবিনা।

দুইদিন তো খালামনিদের বাসায় গিয়েছিলাম তাই আসি নাই।
ওহ,, আচ্ছা চল তবে এক সাথেই যাই।
ওকে চল,, এই রাদিফ সাব্বিরের কি খবর রে।
কেনো কথা হয়না তোর সাথে?
দুই দিন আগে হইছলো দেখা তারপরে তো বাসায়ই ছিলাম নাহ।
চল মাঠে দেখা হয়ে যাবে, খেলা শেষ করে আড্ডা দিবোনি।

তা নাহয় দিলাম।
জানিস তো ওর একটা মেয়েকে সেই লাগে।
কি বলিস আমায় তো কিছু বললো নাহ!
বলবে কেমনে তুই ঝারি মারলি ওইদিন।
তাই বলে বলবে নাহ,, আচ্ছা বাদ দে গাঁধাটার আবার কারে ভাল্লাগে?
ওইদিন যে বললো কি জানি নাম মেয়েটার উমম ওহ হ্যাঁ মনে পড়ছে ছোঁয়া…

ছোঁয়া নামটা সুনতেই রাদিফের হাসি হাসি মুখটা নষ্ট হয়ে দেখা দিলো চাপা রাগ।
রাদিফ সোহেলকে উদ্দেশ্য করে বললো,
বাচ্চা একাটা মেয়ের পিছনে না ঘুরে ওরে পড়তে বল ভালো করে।
সোহেল বিরক্ত হয়ে বললো,
আজব তো বাচ্চা মেয়ের পিছে ঘুরবে না তো কি বুড়ো মহিলার পিছে ঘুরবে নাকি ছেলেটার বয়সটা কতো যে বলছিস বাচ্চা মেয়ের পিছে ঘুরে।
তা ছাড়া ও তো পিছে ঘুড়ে নাই সুধু ভালো লাগছে।

তো এই বয়সে ভালোই বা লাগবে কেনো।
ওর কি এটা প্রেম করার বয়স নাকি। যখন বড় হবে তখন গিয়ে করুক প্রেম বাচ্চা বুড়ি যার সাথে ইচ্ছা। এখন এইসব থেকে দূরে থাকতে বল।
তা ছাড়া ভালো লাগছে কারে একটা পিচ্চি মেয়ে,, ওরে দেখলে তো গাল টানটে মন চায় বাচ্চা বাচ্চা লাগে এই মেয়ের সাথে নাকি প্রেম ছোট বাচ্চা লাগে এই মেয়ে রে।
ওরে বল ভালো হইতে বুঝছিস। থাক তোর লাগবে নাহ আমি ধরতাছি আজকে ওরে।
এই বলে হন হন করে হেটে যেতে লাগলো।

সোহেল ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসলো।
সন্ধ্যার দিকে ঘুম থেমে উঠেছে ছোঁয়া। উঠেছে বললে ভুল হবে ওকে এক প্রকার টেনে উঠানো হয়েছে।
বাসায় এসে আগেই বাগানে শিউলি গাছ বুনতে গিয়েছিল। তারপরে কোনরকম সাওয়ার নিয়ে সেই যে ঘুমিয়েছে আর উঠার নাম নেই। খায়নি পর্যন্ত কিছু সেই যে সকালে খেয়েছিলো।
আনিতা বেগম বকতে বকতে কয়েক বার ডেকে গেছে তাও ছোঁয়ার উঠার নাম গন্ধ নেই।
অবশেষে ওকে টেনে তুলেছে।

ঘুম থেকে উঠেও থম মেরে বসে আছে। আনিতা বেগমের বকাবকিতে বিরক্ত হয়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেস হতে।
আনিতা বেগম মনে মনে বললেন,
এই মেয়েকে নিয়ে আর পারিনা আমি,,
ছোঁয়া বের হতেই ওকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিলেন আনিতা বেগম। খাওয়ানো শেষ করে প্লেট নিয়ে চলে গেলেন রান্না ঘড়ে।
ছোঁয়া এখন কি করবে ভেবে পেলো নাহ তাই ড্রয়িং রুমে গিয়ে টিভি ছেরে কার্টুন দেখতে বসে পড়লো।

খেলা শেষে রাদিফ সোহেল সাব্বির বসে আছে মাঠে।
হঠাৎ রাদিফ সাব্বিরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
তুই নাকি ছোঁয়া মেয়েটাকে পছন্দ করিস?
সাব্বির ওর কথা সুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। কপাল কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,

কি আবোল তাবোল বকছিস আমি কেনো ওরে পছন্দ করবো।
রাদিফ কিছু বলবে তার আগেই সোহেল বলে উঠলো,
ওই দিন না বললি তুই,,
সাব্বির বললো,
আরেহ মজা করছিলাম,, এমনিতে মেয়েটা ভালোই কিউট আছে গোলুমোলু কিন্তু আমি অন্য কিছু ভাবি না এমনিতে ভালোই লাগে।
রাফিফ বললো,
ভাবিস নাহ আর ভাববিও নাহ বোন ভাববি, এমন পিচ্চি দেখতে একটা মেয়েকে অন্য কিছু ভাবতে হবে নাহ।
আর কিউট নাকি ওইটা তোরে কে দেখতে বলে।
গোলুমোলু এটা কেমন ভাষা ছি।

সাব্বির কপাল কুচকে রাদিফের দিকে তাকিতে বললো,
আরে আমি তো এমনিতেই বললাম তুই এমন করছিস কেনো।
এমন লাগতেছে যে মেয়েটা তোর বোন।
চুপ কর ছাগল তুই এক কাজ কর ঘাস খা বুদ্ধি হবে।
বলেই রাফিফ রেগে মেগে চলে গেলো।

সাব্বির কপাল কুচকে ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে সোহেলকে বললো,
আমি আবার কি করলাম ও এমন রাগলো কেনো।
সোহেল হাসতে হাসতে বললো,
ওর বোধহয় মেয়েটাকে ভালো লাগে।
সাব্বির অবাক হয়ে সোহেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
মানে,,,
সোহেল বললো,
আমি সিউর নাহ, তবে ওর ব্যবহারে মনে হয়।
দেখলি না ওইদিন কেমন রিয়েক্ট করলো এখন কেমন করলো এটাও তো দেখলি।
আর খেলতে আসার সময় বিকালে ওরে বলছিলাম তোর ছোঁয়ারে ভাল্লাগে,, মামা কেমনে যে তেলে বেগুনে জলছে কেমনে বুঝাই তোরে।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১২

সাব্বির বললো,
বাহ বাহ শেষমেষ আমারে ফাসাইলি। 🙂
আরে বাদ দে এখন আমাদের মিশন বন্ধুর মনের খবর বের করা ওকে,,,
ওকে ডান।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৪