পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৪

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৪
লেখিকা: সুরাইয়া ইসলাম ছোঁয়া

সকাল থেকে অনেক নার্ভাস ছোঁয়া, কারন আজ ওর জেএসসি রেজাল্ট দিবে।
এখন সকাল ৯ টা। ১১ টার পরে ওদের ফলাফল প্রকাশিত হবে।
আনিতা বেগম ছোঁয়ার ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে মেয়েকে ডাকছে,

ছোঁয়া আগে খেয়ে নে তারপরে রুমে দরজা আটকে বসে থাকিস।
খাবো না এখন আম্মু তুমি যাও প্লিজ।
আনিতা বেগম প্রচন্ড বিরক্ত হলেন। সেই কাল থেকে রুম থেকে বের হচ্ছে না, রুমেই খাচ্ছে। আর এখন তো খেতেও চাইছে না।
উফ ভালো লাগে না আর এই যন্ত্রনা। ভুলে রেজাল্ট কি ওর একাই দিবে নাকি।
ভালো করে পড়াশুনা করলে রেজাল্ট এর আগে এমন অবস্থা হয় না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অনিতা বেগম নিজের মতো বকবক করে এইসব বলছিল তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো।
অনিতা বেগম কথা থামিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলেন মাইশা এসেছে।
মাইশা এই প্রথম তোমাদের বাড়িতে এলো। এর আগে সাহেদ চৌধুরীর সাথে দেখা হলেও অনিতা বেগমের সাথে কখনো দেখা হয়নি, তবুও বুঝতে পারলো উনি ছোঁয়ার মা।
বললো,

আসসালামু আলাইকুম আন্টি কেমন আছেন? আমি মাইশা।
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ওহ তুমিই মাইশা! এসো এসো ভেতরে।
মাইশা ভেতরে ঢুকলো।
অনিতা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,
তা কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি।
আব ছোঁয়া কোথায়?
আসলে আজ তো পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে তাই ছোঁয়াকে নিতে এলাম স্কুলে যাবো। ওকে বলেছিলাম তো।

আনিতা বেগম হতাশার নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
আর বলো না সে তো কালকে থেকে বেরই হচ্ছে না ঘর থেকে সকালে খেতে ডাকছি তাও আসছে নাহ।
সেকি আন্টি ওর আবার কি হলো?
তা গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করো ওকে।
তারপর হাতের ইশারায় ছোঁয়ার বেড রুম দেখিয়ে দিয়ে বলল,
ঐ যে ওইটা ওর রুম যাও ভেতরে যাও।
এই বলে তিনি রান্না ঘরে চলে গেলেন নাস্তা আনতে।

মাইশা ছোঁয়া রুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিলো।
দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখে ছোঁয়াকে ডাক দিলো।
এই ছোঁয়া দরজা খোল তাড়াতাড়ি।
বাইশার গলা শুনে চকিতে তাকালো ছোঁয়া। এরপর তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে দেখলো মাইশা দাঁড়িয়ে আছে।
অবাক হয়ে বললো,
তুই এখানে আমার বাসায়!

কেনো আসতে পারি না বুঝি
না না মানে,, যা বাদ দে ভেতরে আয়।
মাইশা রুমের ভেতরে এসে খাটে বসতে বসতে বললো,
তা দরজা আটকে এভাবে বসে আছিস কোন দুঃখে?

অনেক টেনশন হচ্ছে দোস্ত, রেজাল্ট দিবে একটু পরে ভাবতে পারছিস আমি তো টেনশনে মরে যাচ্ছি!
আরে ধুর প্যারা নিস না যা হবার তো হয়েই গেছে এতো চিন্তা করে লাভ আছে।
মাইশার কথায় বিরক্তির শ্বাস ফেললো ছোঁয়া। একটু পরে রেজাল্ট দিবে আর এই মেয়ে নাকি বলছে প্যারা না নিতে।

তুই কবে ফিরে আসছিলি তোরে বলাই ভুল আমার।
আচ্ছা হয়েছে এখন বাদ দে রেডি হ তাড়াতাড়ি।
ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
রেডি হবো মানে কোথায় যাবো তাও আবার এখন একটু পরে না রেজাল্ট দিবে।

আরে বলদ সেজন্যই তো স্কুলে যাবো রেজাল্ট দিবে একটু পর সময় নেই তাড়াতাড়ি রেডি হ।
ছোঁয়া একপ্রকার আতকে উঠে বললো,
কি বলছিস এসব স্কুলে যাবো কখনো না আমি বাসায় বসেই রেজাল্ট জানতে পারবো দরকার নেই ভাই কি না কি রেজাল্ট আসে।
মাইশা এবার বিরক্ত হলো,
আরে ধুর কত মানুষ যাচ্ছে সবাই তো পরীক্ষা দিয়েছে নাকি তুই একা দিছিস।

যাই হইয়া যাক তুই যাই বলোস আমি আজকে স্কুলে যাবো না মানে না।
দোস্ত প্লিজ চল কিছু হবে না চল।
ওদের কথার মাঝে অনিতা বেগম নাস্তা নিয়ে এলেন। সেন্টার টেবিলে নাস্তা রেখে বললেন,
খেয়ে নিয়ে তারপরে গল্প করো তোমরা। আমি যাই রান্নাঘরে একটু কাজ আছে।
এই বলে তিনি উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে গেলেন।
ছোঁয়া রুমে বসে বসে ভয়ে কাপছে, কারনটা হলো একটু আগেই তামিম ফোন করেছিল।
ফোন করে শুধু বলেছে শোয়ার রেজাল্ট পেয়েছে এটা বলেই আর কিছু না বলে কল কেটে দিয়েছে সেই থেকে ছোঁয়া ভয়ে রয়েছে। মনে মনে ভাবছে,

ভালো কিছু করিনি বোধহয়, কারন রেজাল্ট ভালো হলে তো স্যার ফোনেই বলতো।
ছোঁয়ার এসব ভাবনা-চিন্তার মাঝেই কলিং বেল বেঁচে উঠলো।
কলিং বেলের শব্দে ছোঁয়া খানিকটা কেঁপে উঠলো। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে রুমের মধ্যেখানেই বসে রয়েছে।
আনিতা বেগম গিয়ে দরজা খুলে দেখলেন তামিম এসেছে হাতে তার এক বাক্স মিষ্টি।
তামিমের হাতে মিষ্টি দেখে অনিতা বেগম ওকে জিজ্ঞেস করলেন,
কি হয়েছে ওর রেজাল্ট তখন তো কিছু বললে না।

আন্টি মোটামুটি খারাপ হয়নি গ্রেড পেয়েছে ছোঁয়া।
তামিমের কথা শুনে আনিতা বেগমের মুখে হাসি ফুটলো।
সে বললো,
যাক আলহামদুলিল্লাহ।
তোমার ছাত্রী সেই যে দরজা আটকে বসে আছে ভয়ে খোলার নাম নেই। তুমি বসো আমি ওকে ডাকছি।
অনিতা বেগম ছোঁয়ার রুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে বললেন,

ছোঁয়া দরজা খোল, তামিম এসছে তাড়াতাড়ি আয়।
মায়ের কথা শুনে ভয় লজ্জা দুটোই হচ্ছে। তামিমের কাছে পড়ার জন্য কতইনা বকা খেয়েছে, স্যার তাকে সারাদিনই পড়তে বলতো। এখন তো নিশ্চয়ই ফেল করে বসে আছে সে স্যারের সামনে মুখ দেখাবে কি করে স্যার কি বকা দিবে তাকে। এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা করছিলো ছোঁয়া। তার মধ্যে আনিতা বেগম আবার ডেকে উঠলো।
এবার ছোঁয়া গুটিগুটি পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।

আনিতা বেগম মেয়েকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
ড্রয়িং রুমে যা গিয়ে দেখ তামিম বসে আছে যা তোকে ডাকছো ও, তখনই রুমের মধ্যে ফোন বেজে ওঠায় তাড়াহুড়ো করে সে রুমে চলে গেলো।
মায়ের হাসি মুখ দেখে সে কিছুটা ভরসা পেলো।

ছোঁয়া গুটি গুটি পায়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে পৌঁছালো। দেখতে পেলো তামিম শাফির সাথে বসে বসে খেলছে।
তামিমের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো ছোঁয়া।
ছোঁয়াকে দেখে তামিম সাফির সাথে খেলা বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো,বসো।

ছোঁয়া তামিমের বরাবর সিঙ্গেল সোফাটায় বসে পড়লো। কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকার পরও তামিম তাকে কিছু বলছে না।
এবার ছোঁয়া মাথাটা খানিকটা উঁচু করলো, তামিম ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো ফলে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।
এবার তামিমকে প্রশ্ন করলো,
স্যার,, আমার রেজাল্ট কি হয়েছে?

তামিম যেনো এই প্রশ্নটারই অপেক্ষা করছিল,
এতক্ষণে রেজাল্টের কথা মাথায় আসছে তোমার। এতক্ষণ ধরে এসেছি কই একবারও তো জিজ্ঞেস করলে না।
পড়াশোনার প্রতি বিন্দুমাত্র মন নেই এখন রেজাল্ট কি করেছো সেটা জানার আগ্রহ বোধ করছো না বাহ বাহ!!
আসলে স্যার,,,
আসলে নকলে কি আবার,,, আচ্ছা যাইহোক এ গ্রেট পেয়েছো।

তামিমের কথা শুনে ছোঁয়া এক লাফে সোফা থেকে উঠে পড়লো ঠাস করে গিয়ে তামিমের পাশে বসে বললো,
সত্যি বলছেন স্যার পাস করে গেছি!!
তামিম গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বললো,
এই গ্রেট পেয়েছো এতো নাচানাচির কিছু নেই।
আমিতো নাচবোই সে আপনি এখন আমার যাই বলুন। এতক্ষণ চুপচাপ ছিলাম ভেবেছি ফেইল টেইল করলাম কিনা তাই। উফ স্যার আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে।
বলেই খুশিতে লাফাতে লাগলো ছোঁয়া।

তামিম কিছু বলবে তখনই আনিতা বেগম নাস্তা সাথে মিষ্টি নিয়ে এলো।
ছোঁয়া মাকে দেখে লাফানো বন্ধ করে দিলো।
আনিতা বেগম তামিমের সামনে নাস্তা রাখতে রাখতে বললেন,
এতো লাফানোর কি আছে এ প্লাস তো আর পাসনি।
ছোঁয়া মায়ের কথায় বিরক্ত হয়ে বললো,
পাস করেছি এইতো বেশি।

খুন্তিটা নিয়ে এলে বুঝবি কোনটা কম কোনটা বেশি।
উফ আম্মু আজকে অন্তত বকো না। বলে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
আনিতা বেগমও মেয়েকে জড়িয়ে নিলেন। মুখে যাই বলুক তার মেয়ের মোটামুটি রেজাল্টই সে সন্তুষ্ট।
তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। ছোঁয়া মাকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে গেলো দরজা খুলতে। সে জানে এখন তার বাবা এসছে।

দরজা খুলে দেখলো সাহেদ চৌধুরী দারিয়ে আছে হাতে মিষ্টি।
সাহেদ চৌধুরী ভিতরে ঢুকে মিষ্টির বাক্সটা টেবিলের ওপর রেখে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
অভিনন্দন আমার আম্মা জান।
এরপর কপালে চুমু দিলেন।
ছোঁয়াও বাবার বুলে রইলো কিছুক্ষণ।

কিছুক্ষণ পরে সাহেদ চৌধুরী ছোঁয়াকে ছেড়ে দিয়ে তার মোবাইলটা ওর হাতে দিয়ে বললেন,
আম্মু মিথির সাথে কথা বলে নিয়ো। ও তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে সাথে তোমার দাদু চাচ্চুরাও কল দিয়েছিলো।
এতক্ষণে ছোঁয়ার টণক নরলো।
এইরে নিজের টেনশনে ভুলেই গেছি মিথির কথা মাইশার কথা।
বেচারি তখন আমি স্কুলে না যাওয়াতে মন খারাপ করে বাড়ি চলে গেলো আমার তো উচিত ছিলো ওকে কল দেয়া।
এসব ভাবতে ভাবতে ছোঁয়া সাহেদ চৌধুরীকে বললো,

বাবা মিথি কি করেছে?
A+ পেয়েছে মিথি।
ছোঁয়া মিথির রেজাল্ট শুনে খুশি হলো।
আনিতা বেগম বললেন,
আলহামদুলিল্লাহ। এতো অনেক ভালো সংবাদ।
সাহেদ চৌধুরী হাসলেন।
তামিমের পাশে গিয়ে বসলেন। তামিম সাহেদ চৌধুরীকে সালাম দিলো।
সাহেদ চৌধুরী সালামের উত্তর দিয়ে ওর সাথে টুক টাক কথা বলতে লাগলেন।

একটু পরে তামিম বলে উঠলো,
আজ তাহলে আমি আসি।
আনিতা বেগম বললেন,
সে কি আজ দুপুরে না খায়িয়ে ছাড়ছি না তোমায়।
তামিম মুচকি হেসে বললো,
আরেক দিন আন্টি আজ একটু দরকারি কাজ আছে সেটা ফেলেই চলে এসছিলাম ছোঁয়ার রেজাল্ট দেখে।

দরকারি কাজ আছে সুনে আনিতা বেগম আর জোর করেলেন না।
বললেন,
ঠিক আছে সাবধানে যেও।
আচ্ছা আন্টি। এই বলে ছোঁয়ার রুমের দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।
ছোঁয়া ফোন নিয়ে ওর বেলনিতে চলে এসেছে।
প্রথমে দাদু বাড়িতে কল দেই মিথি সহ সবার সাথে কথা বলে নিলো।
এরপরে মাইশাকে কল দিলো।
মায়ের সাথে কাল ফুলিয়ে রেখেছে।

এতো খবে কল দিছিস তুই আমায়।
আরে আমি টেনশনে সব ভুলে গেছি এসব বাদ দে কি হইছে রেজাল্ট বল।
এ গ্রেড।
বাহ দোস্ত আমারও। দেখ কত্তো মিল।
ঢং,,, জানি আমি।
কেমনে?
আমার রেজাল্টের সাথে তোরটাও দেখে নিয়েছি। আর তুই একাটা কলও দিলি নাহ।
ছোঁয়া করুন কণ্ঠে বললো,
সরি দোস্ত টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

আচ্ছা যা এবারের মত মাফ করে দিলাম হুহ্।
ছোঁয়া হাসলো।
মাইশা আবার বললো,
আচ্ছা রাখিরে আম্মু ডাকছে, তোরে পরে কল দিবোনি।
আচ্ছা বাই।
ওকে।
কল কেটে ছোঁয়া রুমে এসে বিছানায় বসলো।
আজ ওর মনটা ফুরফুরে রেজাল্ট ভালো হইছে।
হঠাৎ মনে পড়ল দুইদিন পরেই তো ভর্তি তারপর আবার রেগুলার ক্লাস আগের মতো।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৩

আবার রাদিফের সাথে দেখা হবে। আগের মতো প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখবে। ওর পিছু পিছু সিঁড়ি দিয়ে নামবে। ছুটির পর ও বের হওয়া না পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ভেবেই আবারো মনটা ফুরফুরে হয়ে গেলো।
এসব ভাবতে ভাবতেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো ছোঁয়া।

পূর্ণতায় অপূর্ণতা পর্ব ১৫