প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৬

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৬
ইলমা বেহরোজ

আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানা ছাড়ে নিঝুম।চশমাটা পরে বেরিয়ে আসে বাইরে।ভোরের বাতাস,শুভ্র আকাশ শরীর জুড়িয়ে দিল।উঠোনের পাশে আমগাছ, কাঠাল গাছ, নিম গাছ।ব্রাশ নেই বিধায় নিম গাছের ডাল ভেঙে কাজ চালায়।হালকা ব্যায়াম করে ফ্রেশ হয়।তিতলির রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কৌতূহলবশত তাকায়।দেখে দরজা একটু খোলা।দরজা কি না লাগিয়ে ঘুমিয়েছে?রুমে আছে তো?চিন্তাটা মাথায় আসতেই নিঝুম দরজা ধাক্কা দেয়।বিছানা খালি!নিঝুম ভয় পেয়ে যায়।বাথরুমে খুঁজতে যাওয়ার পথে চোখ পড়ে বারান্দায়।কেউ একজন শুয়ে আছে।নিঝুম দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে।তিতলি ফ্লোরে শুয়ে আছে!হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।নিঝুমের বিরক্ত লাগে কেউ হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমালে।কিন্তু তিতলির বেলায় অন্যরকম মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে, তিতলিকে এভাবেই মানায়।নিঝুম ভাবে,মেয়েটার কি ঘুমে হাঁটার অভ্যেস আছে?নয়তো বারান্দায় এসে ঘুমাবে কেন? সে সাতপাঁচ আর না ভেবে তিতলিকে পাঁজাকোলে নিয়ে আসে রুমে। বিছানায় শুইয়ে দেয়।এরপর নিজ রুমে আসে।বেশ কিছুক্ষণ পর ভদ্রলোক এসে ডাকেন নাস্তার জন্য।নিঝুমকে বলে যান, তিতলিকে নিয়ে ডাইনিং রুমে আসতে।নিঝুম আবার তিতলির রুমে আসে।তিতলি গুটিসুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে।নিঝুম মৃদু কণ্ঠে ডাকে,

— “তিতলি?উঠো।”
সাড়া না পেয়ে নিঝুম তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকে।
— “তিতলি?”
তবুও সাড়া নেই।নিঝুম আলতো করে গালে থাপ্পড় দিয়ে ডাকে,
— “তিতলি?”
তিতলি নিভু নিভু করে চোখ খুলে।ঘুম কাতুরে কণ্ঠে বলে,
— “আমি রাতে ঘুমাইনি অনেক্ষণ।ঘুমাতে দিন।”
— “কেনো ঘুমাও নি?কি করেছো জেগে থেকে?”
— “আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে চুমু দিয়েছি!”
নিঝুম খুক খুক করে কেশে উঠে!কি সাংঘাতিক মেয়ে!কিসব বলছে ঘুমের ঘোরে!নিঝুম শান্তভাবে বলে,
— “তোমার বয়ফ্রেন্ড এখানে কী করে আসবে?তুমি স্বপ্ন দেখেছো।উঠো।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিতলির সাড়া নেই।ঘুমিয়ে গেছে বোধহয়!এইদিকে নিঝুমের খুব ক্ষুধা পেয়েছে।নিঝুম আবার ডাকে।চেষ্টা করতেই থাকে।অনেক্ষণ ডাকাডাকির পর তিতলির ঘুম ভাঙ্গে।কিন্তু বিপত্তি ঘটে অন্য জায়গায়!তিতলি নিজেকে গুটিয়ে রাখছে।লজ্জা পাচ্ছে খুব!নিঝুমের সাথে কথাই বলছেনা।নিঝুম আগামাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।মেয়েটা এতো অদ্ভুত কেন? একেকবার একেক রূপ ধরে।
নাস্তা শেষে আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করে দুজন।এরপর তৈরি হয় ফেরার জন্য।ভদ্রলোক বলেন,
— “দেখা অইবো বেকালো।রোহি আম্মার চিনিপান না’নি?”
নিঝুম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে,
— “জ্বি।আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।আত্মীয় হতে চলেছি।ইনশাল্লাহ একদিন আমি আপনাদের আপ্যায়ন করার সুযোগ পাবো।”
নিঝুমের কথা শুনে তৃপ্তির হাসি হাসে নিঃসন্তান দুজন যুগল।ওরা বিদায় নিয়ে উঠে পড়ে সিএনজিতে।

বাড়িতে ঢুকেই তিতলি অবাক হয় খুব।বাড়ি ভর্তি মানুষ।চোখে কৌতূহল নিয়ে নিঝুমের দিকে তাকায়।
নিঝুম মাথা নামিয়ে আস্তে আস্তে বললো,
— “আজ তো নির্জনের বউ দেখতে যাওয়ার কথা।তাই ফুফি, কাজিনরা এসেছে।”
তিতলি হেসে ছোট করে বলে,
— “ওহ।”
মৌনতা তিতলি আর নিঝুমকে দেখে দৌড়ে আসে।তিতলিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— “তিতলি,মাই ডল!মিস ইউ!অনেক মিস করেছি তোমাকে।”
তিতলি হেসে বলে,
— “মিস ইউ টু।”
মৌনতার উচ্চ কণ্ঠে উপস্থিত সবাই সদর দরজার দিকে তাকায়।আঞ্জুমান হাসি মুখে এগিয়ে আসেন।হাত বাড়িয়ে তিতলিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।এরপর নিঝুমের কপালে চুমু দিয়ে বলেন,
— “সব ঠিক আছে আব্বা?”
— “একদম।”
আঞ্জুমান মুখ গুমোট করে বলেন,

— “আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম আব্বা।”
নিঝুম মা’কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
— “আমরা খুব ভালো ছিলাম আম্মু।”
মৌনতা ফোড়ন কাটে,
— “ভাইয়াকে খুব খুশি খুশি লাগছে কেনো?”
নিঝুম ভড়কে যায়।ইতস্ততভাবে বললো,
— “হেসে কথাতো সবসময়ই বলি!”
মৌনতা দৃঢ়কণ্ঠে প্রতিবাদ করে,
— “না,না আজ চোখে মুখে ঝিলিক মারছে খুশি!”
তিতলি,নিঝুমকে জহুরি চোখে খেয়াল করছেন তিব্বিয়া খাতুন।নিঝুমের বড় ফুফি।উনারা ত্রিশ মিনিট পূর্বে এই বাড়িতে এসেছেন।তাই জানেন না নিঝুম এক রাত-দিন বাড়ি ছিলনা।তিনি এগিয়ে আসেন।আঞ্জুমানকে প্রশ্ন করেন,

— “মেয়েটা কে?”
আঞ্জুমান তিব্বিয়ার উপস্থিতি নিতে পারেন না।এই মহিলার ঠোঁট ভীষণ পাতলা।আঞ্জুমান নিম্ন স্বরে বলে,
— “আমার ভাইয়ের মেয়ে।”
তিব্বিয়া আবারো প্রশ্ন করেন,
— “কোথায় ছিলি নিঝুম?”
নিঝুম কিছু বলার আগে আঞ্জুমান বলেন,

— ” সকালে একটা দরকারে বেরিয়ে ছিলো।কথা পরে হবে।এই নিঝুম তিতলি যা রুমে যা!ফ্রেশ হ!অনেক্ষন বাইরে ছিলি।”
মিসেস আঞ্জুমান একরকম জোর করে নিঝুম,তিতলিকে উপরে পাঠিয়ে দেন।নিঝুমের ফুফিরা ভেল্কিবাজি জানে।যদি জানে নিঝুম তিতলিকে নিয়ে বাইরে ছিল একদিন, একরাত। সারা দুনিয়া ছড়াবে।তিলকে তাল বানাবে।নোংরা নোংরা মানে বের করবে।তাই,তিনি ওদের দুজনকে এখান থেকে সরিয়ে দেন।উনার মতো পজিটিভ তো আর সবাই না।মৌনতা, মোহনা,নির্জন ওদের মাঝে চলছে ফিসফিসানি।মৌনতা বলে,
— “ভাইয়া? দেখেছো?দুজনকে কি খুশি লাগছিল।আর একটা চেঞ্জ, চেঞ্জ ভাব।”
মোহনা চিন্তিত গলায় বললো,

— “সেটাই তো দেখলাম!”
বাতাসে রহস্যের গন্ধ পেয়ে নির্জন বললো,
— “ব্যাপারটা জটিল।খুঁটিয়ে দেখতে হবে।”
চাপা গলায় মৌনতা বললো,
— “জলদি দেখো ভাইয়া।আমি যা ভাবছি তা যদি হয়…..”
মোহনা কথা কেড়ে নেয়,
— “আমি খুব খুশি হবো।”
নির্জন মাছি তাড়ানোর মতো হাত নাড়িয়ে বললো,
— “আরেএ,চুপ কর! আগে আমার বিয়েটা হতে দে তারপর দেখা যাবে।”
— “বিয়েই ঠিক হয়নি।আর বিয়ে বিয়ে করছে হুহ!” মৌনতার কন্ঠে তাচ্ছিল্য!নির্জন মৌনতা মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো,
— “মুখ মুরাস কেন?আরেকবার মুখ মুরাবি তো আবার মাইর খাবি।”
— “একশো বার মুরাবো।”

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৫

কথা ছুঁড়ে দিয়ে মৌনতা দৌড়ে আলতাফের পিছনে লুকায়।মৌনতাকে মারতে না পেরে মোহনার মাথায় থাপ্পড় মেরে দৌড়ে উপরে উঠে যায় নির্জন।মোহনা ঠোঁট ফুলিয়ে তাকায় মৌনতার দিকে।তারপর গটগট আওয়াজ তুলে উপরে উঠে আসে।
আর এদিকে,তিতলি নিজ ঘরে করছে ছটফট! একদিন,রাত ওরা এক সাথে ছিলো অথচ মনে হচ্ছে কতো জনম ছিলো একসাথে!হুট করে যেন বিচ্ছেদ হলো!মানিয়ে নিতে পারছেনা তিতলি।কিন্তু এটাই যে বাস্তবতা!নিঝুম রুমে এসে অনুভব করে কিছু একটা নেই, নেই মনে হচ্ছে।কি নেই সেটা ঠাওর করতে পারছেনা।সে পুরো ঘরের সবকিছু দেখে নেয়।সবই তো আছে!তাহলে কি যেন নেই মনে হচ্ছে কেনো?নিঝুম তোয়ালে নিয়ে সুইমিংপুলের স্বচ্ছ পানিতে নামে।বেশকিছুক্ষণ ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।পরক্ষণে মনে হয়,এটা তো তাঁর গোসলের সময় নয়।

চলে আসে রুমে।কফি বানায়।কফিতে চুমুক দিতে গিয়ে খেয়াল হয়,এমন সময় সে কফি কখনো খায় না।মিউজিক অন করে।দুটো গান শোনার পর মনে পড়ে,সে কখনো মিউজিক শুনে না।অবসর সময় কাটে বই পড়ে বা কবিতা লিখে।সে বুঝে উঠতেই পারছেনা তাঁর হয়েছেটা কি?নিয়মিত রুটিনে ব্যাঘাত ঘটলো কী করে?আশ্চর্য তো!

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ১৭