প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২৮

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২৮
ইলমা বেহরোজ

ভোর রাতে কামরায় ফিরে নিঝুম। তিতলি জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।ঘুমিয়েছে হয়তো!সে কামরার দরজা লাগাতে নেয়,হালকা আওয়াজ হয়।তখনি তিতলি পড়িমরি করে ঠিক হয়ে বসে।নিঝুম এসে বার্থে বসে। তারপর বসা গলায় তিতলিকে বললো,
— “শার্ট টা?”
তিতলি শার্ট এগিয়ে দেয়।নিঝুম শার্ট পরে শুয়ে পড়ে।তিতলি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার বাইরে চোখ রাখে।ল্যাম্পপোস্টের আলো সড়াৎ করে অন্ধকার কামরাটা আলোড়িত করে আবার আবছা অন্ধকারে তলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।সেই সড়াৎ করে আসা আলোতে একটু পর পর নিঝুম তিতলিকে দেখে নিচ্ছে।

— “টুকটুকি?” নিঝুমের নিবিড় কন্ঠ।
তিতলি অবাক হয়।এখানে টুকটুকি কে?
— “আমাকে বলছেন?”
— “আর কে আছে এখানে?”
— “না মানে।টুকটুকি যে বললেন।”
— “বাচ্চাদের টুকটুকিই ডাকা হয়।”
তিতলি প্রসন্ন হাসে।নিঝুম স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
— “তোমার আব্বু বললেন ফিরে গিয়ে তোমার চিকিৎসা করতে।”
তিতলি ভারি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
— “আমার চিকিৎসা? আমার কি হলো ?আমি জানিনা!”
— “কারণে-অকারণে হেঁচকি উঠে আর জ্ঞান হারাও।”
— “এটা তো আমার জন্মগত স্বভাব।রোগ নয়।”
নিঝুম হাসে।তিতলি বুঝে নিঝুম মজা করে বলেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সকালের ঝাপসা আলো ফুটেছে।সিএনজি বাড়ির সামনে এসে থামে।গেইটে দারোয়ান ছিলেন।নিঝুম উনার হাতে তিতলির ব্যাগটা দিয়ে বলে,
— “আমার রুমে নিয়ে রাখুন।”
দারোয়ান চাচার প্রশ্ন,
— “সবাই ঘুমে যে,কলিং বেল চাপুমনি?”
নিঝুম এক সেকেন্ড ভাবে।এরপর বলে,
— “ওয়েট।”
তারপর,মিসেস আঞ্জুমানকে কল করে নিঝুম।প্রথম বার রিং হতেই ফোন রিসিভ হয়।
— “হ্যালো আম্মু?”
আঞ্জুমান বুঝে যান।ছেলে কি জন্য কল করেছে।তিনি বলেন,
— “দরজা খোলাই আছে।চলে আয়।”
নিঝুম হেসে বলে,
— “বাব্বাহ!”
ওপাশ থেকে আঞ্জুমানের হাসি ভেসে আসে।বলেন,
— “ফজরের আযান থেকেই অপেক্ষা করছি তোদের জন্য!”
— “আচ্ছা,আসছি।”

দারোয়ান ব্যাগ নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে যান।আর নিঝুম সিএনজির পিছনের সিটে অর্ধেক মাথা ঢুকিয়ে তিতলিকে পাঁজাকোলে নেয়।তিতলি হালকা নড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।নিঝুম আপনমনে হাসে।আর ভাবে,চুরের মতো রাত জেগে,দিনে মরার মতো ঘুম!
আঞ্জুমান ড্রয়িংরুমেই অপেক্ষা করছিলেন।ছেলের কোলে ঘুমন্ত তিতলিকে দেখে ভয় পেয়ে যান।অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করেন,
— “কি হইছে ওর?”
নিঝুম ফিসফিস করে বলে,
— “আস্তে কথা বলো।ঘুমাচ্ছে।”
আঞ্জুমান ‘থ’ হয়ে যান।জিজ্ঞাসা করেন,
— “রাতে ঘুমায়নি?”
নিঝুম হেসে বললো,
— “না।”

তারপর সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে আসে।নিজ রুমে নিয়ে আসে তিতলিকে।এরপর শুইয়ে দেয় বিছানায়।তিতলি বিছানা পেয়ে কাঁচুমাচু হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।নিঝুম আলমারি থেকে থ্রী কোয়াটার প্যান্ট আর টি-শার্ট নিয়ে বাথরুমে ঢুকে।
আঞ্জুমান দু’প্লেট ভাত নিয়ে আসেন গরু মাংস দিয়ে।তিতলিকে রুমে না পেয়ে ছাদে আসেন।নিঝুমের রুমে এসে অবাক হন।তিতলি নিঝুমের বিছানায় ঘুমাচ্ছে!নিঝুম চুল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।মায়ের হাতে ভাত-মাংস দেখে বিরক্ত হয়।বলে,

— “প্লীজ আম্মু।এখন ভাত খাবোনা।”
আঞ্জুমান সেন্টার টেবিলে দু’প্লেট রেখে বলেন,
— “সারারাত জার্নি করে এসেছিস। এখন ভাত খেয়ে ঘুম দিবি।”
নিঝুম অনুরোধ করে,
— “প্লীজ আম্মু।”
— “সেই কখন ঘুম থেকে উঠে গরম গরম রেঁধেছি কষ্ট করে।আশা করি,কষ্টের মূল্য দিবা আব্বা।”
আঞ্জুমানের ইমোশনাল কথায় না চাইতেও রাজি হয় নিঝুম,
— “আচ্ছা,খাচ্ছি।”
নিঝুম সোফায় বসে।ভাতের প্লেট হাতে তুলে নেয়।আঞ্জুমান প্লেট কেড়ে নেন।নিঝুম মায়ের দিকে তাকায়।আঞ্জুমান নিঝুমের পাশে বসে,তারপর ভাত মাখিয়ে ছেলের মুখে তুলে দেন।নিঝুম হেসে খেতে খেতে বলে,
— “অনেকদিন পর তোমার হাতে খাচ্ছি।”
— “নিজের হাতে খেতে ভালো লাগেনা?”

আরো এক লোকমা তুলে দেন ছেলের মুখে।নিঝুম খেতে খেতে বলে,
— “আমার সব নিজের হাতে করতে ভালো লাগলেও ভাত খাওয়াটা ভালো লাগেনা।”
— “বিয়ে করে নে।তাইলেই হয়।বউ তিনবেলা মুখে তুলে খাওয়াবে।”
নিঝুম সরল স্বীকারোক্তি,
— “হুম, করবো।”
আঞ্জুমানের চোখ মার্বেলের মতো গোল গোল হয়ে যায়।নিঝুমকে যতবার বিয়ের কথা বলেছেন,নিঝুম উপেক্ষা করে গেছে।আর আজ সাথে সাথে বলে বিয়ে করবে!নিঝুম মায়ের চোখের দিকে তাকায়।বলে,
— “কি?খাইয়ে দাও!”
আঞ্জুমান কণ্ঠে কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করেন
— “তোর কি হইছে আব্বা?”
নিঝুম যেনো ভারী অবাক হয়।
— “কি হবে?”
— “এক কথাতেই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলি যে।”

নিঝুম হেসে মাথানত করে।নিজের চুল টানে কয়েকবার।মায়ের দিকে তাকায়।আঞ্জুমান ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করেন।নিঝুমের মুখে লজ্জার আভা ফুটে উঠে।আড়চোখে একবার ঘুমন্ত তিতলিকে দেখে মায়ের চোখে চোখ রাখে।তারপর বললো,
— “প্রেমে পড়ে মানুষ বিয়ের জন্যই।”
আঞ্জুমানের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো।
— “কে সে?” উৎসুক আঞ্জুমান।
নিঝুম চোখের ইশারায় বিছানায় তাকায়।আঞ্জুমান বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়!বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছেন না।তার পছন্দের মেয়ে,ছেলেরও পছন্দ! আঞ্জুমানের কয়েক মুহূর্ত লাগে বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে।তারপর,ভাতের প্লেট রেখে।ছেলের কপাল চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেন।মায়ের কান্ডে নিঝুম হতবাক। আঞ্জুমান আধাখাওয়া ভাতের প্লেট নিয়ে বেরিয়ে যান রুম থেকে।নিঝুম পিছন ডাকে,

— “কই যাচ্ছো আম্মু।আমার পেট ভরে নি তো।”
কিন্তু কে শুনে কার কথা।উত্তেজনায় আঞ্জুমান আগে স্বামীর কাছে আসেন।আলতাফ চৌধুরীর শরীরটা ভালোনা।তাই মসজিদে যাননি।ঘরে নামায পড়ে সবেমাত্র শুয়েছেন।তখনি স্ত্রীর হামলা!ধাক্কিয়ে তুলে শোয়া থেকে।আলতাফ চৌধুরী উঠে বসেন।উত্তেজিত আঞ্জুমান নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলেন,
— “তোমার ছেলে নাকি তিতলিকে পছন্দ করে।বিয়ের জন্য রাজি হইছে।”
— “কোন পোলায়?”
আলতাফ চৌধুরীর বিরক্তিকর কণ্ঠ।
— “কোন পোলা মানে? নির্জনের তো বিয়া ঠিক।দু’দিন পর বিয়ে।তো আর কোন পোলা বাকি?” ঝাঁঝালো স্বর মিসেস আঞ্জুমানের।আলতাফ বিরক্তিতে চোখ বুজে বলেন,

— “ওইতো নিঝু…..”
আলতাফ চৌধুরীর মনে নিঝুম নামটা আসতেই তিনি থমকান।বেড সাইড টেবিল থেকে চশমাটা নিয়ে,চোখে পরেন।স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বলেন,
— “নিঝুম আর তিতলি?”
আঞ্জুমান হেসে মাথা নাড়ান।আলতাফ চৌধুরী জোরে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলেন,
— “আলহামদুলিল্লাহ!বোম্বাই মরিচকে সহ্য করতে হবে না।”
আঞ্জুমান চোখা চোখে তাকান।প্রশ্ন করেন,
— “বোম্বাই মরিচ কে?”
— “আর কে?নিশা।”
তাচ্ছিল্য স্বর আলতাফ চৌধুরীর।আঞ্জুমান জোরে হেসে উঠেন।

নিঝুম কম হলেও পাঁচশত ছবি তুলেছে ঘুমন্ত তিতলির।তারপর,ফোন চার্জে দিয়ে তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় ডাকে,
— “তিতলি? তিতলি? উঠো? তিতলি?”
তিতলি হালকা হালকা নড়ে।ঘুমের মাঝে ঠোঁট নাড়ায়।কিছু একটা বলছে,তবে কি বলছে স্পষ্ট নয়।অনেক ডাকাডাকির পরও যখন উঠছেনা।তখন নিঝুম তিতলিকে পাঁজাকোলে তুলে নেয়।সোফায় এনে বসিয়ে দেয়।তবুও চোখ খুলেনি তিতলি!সারারাত না ঘুমানোর কুফল একেই বলে।নিঝুম তিতলির একদম সামনে এসে বসে।তারপর দু’গালে আস্তে করে দু’টো থাপ্পড় দেয়।এবার,তিতলি নিভু নিভু চোখ খুলে।চোখ খুলে নিঝুমকে দেখে চমকে উঠে।চোখ ঘুরিয়ে রুমটা দেখে সীমাহীন আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে,

— “এটা আপনার রুম না?”
— “মনে হয়।”
হেসে জবাব দেয় নিঝুম।তিতলি ইতস্তত করে ওড়না ঠিক করে বলে,
— “কখন আসলাম?ট্রেন থেকে নেমে একটা সিএনজি তে উঠি।তারপর…তারপর কি হলো?”
নিঝুম ভাতের প্লেট নিয়ে।বললো,
— “তারপর তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।আর আমি কোলে করে আমার রুমে নিয়ে আসি।”
তিতলির চোখ কপালে উঠে।মিনমিনে গলায় বলে,
— “সরি!”
— “সরি?সরি কেনো?”
— “আমার জন্য আপনাকে এতো কষ্ট করতে হলো যে।”
জবাবে নিঝুম হাসে।তিতলি নিঝুমের দিকে তাকায়।টোলপড়া হাসিটা চোখে পড়ে।নিঝুম ভাত মাখিয়ে, বললো,
— “হা করো।”
নিঝুমের কথাতে তিতলির ভাবনার সুঁতো ছিড়লো।তবে,সে হকচকিয়ে যায়।নিঝুম খাইয়ে দিতে চাইছে?সত্যি?নাকি সে স্বপ্ন দেখছে।নিঝুম বলে,
— “কি হলো? হা করতে বলছি!”

নিঝুমের ডাকে আবারো তিতলির ভাবনায় ছেঁদ ঘটে।সে হা করে।নিঝুম তিতলির মুখে খাবার দিতে গেলে অর্ধেকই পড়ে যায়।তিতলির সেসবে খেয়াল নেই।সে দৃষ্টি নিঝুমের দিকে তাক করে রেখেছে।সবকিছু কেমন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।তিতলিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিঝুম ঠোঁট কামড়ে হাসে।তিতলি হৃদপিন্ড কেঁপে উঠে।ভাত মুখ ভর্তি অথচ গিলছেও না,কামড়াচ্ছেও না।বয়স ষোল-বিশ অব্দি বয়সটা মেয়েদের জন্য সর্বনাশা বয়স।এই বয়সের প্রেমে তারা আজীবন পুড়ে!যার প্রেমে পড়ে,তার উপস্থিতি সময়টাকে অসাধারণের চেয়ে অসাধারণ করে তোলে।বিষাক্ত সময়কেও করে তুলে রোমাঞ্চকর। আর সেখানে, তিতলির স্বপ্নের পুরুষ সবসময় পাশে।শুধু পাশে না তার চেয়েও বেশি কিছু দিয়ে যাচ্ছে।তিতলি অবস্থা খুবই করুণ।পা থরথর করে যেন কাঁপছে।খাওয়া শেষে তিতলি কামিজের ওপর দেখে ঝোলমাখা অনেক ভাত।অর্ধেক ভাতই জামার উপর।নিঝুম খাওয়া শেষ করেই বেরিয়ে গেছে।কই গিয়েছে বলে যায়নি।তিতলি শান্ত ভাবে উঠে দাঁড়ায়। কামিজ থেকে ঝেড়ে সব ভাত প্লেটে রাখে।সে ঘোরের মধ্যে আছে।নিঝুমের এতো বাড়াবাড়ি কেন?তাহলে কি সত্যি নিঝুম তাঁকে অন্য চোখে দেখে।তাঁকে ভালবাসে?এর মধ্যেই নিঝুম আসে।তিতলি বলে,

— “তোমার জামা আনতে গিয়েছিলাম তোমার রুমে।গিয়ে মনে হলো,বাড়ি থেকে আনা কাপড়ের ব্যাগটা তো আমার রুমেই আছে।যাও,চেঞ্জ করে আসো।”
তিতলি কাপড় চেঞ্জ করে আসে।নিঝুম একবার তিতলিকে আগাগোড়া দেখে নেয়।তারপর বললো,
— “সরি।কখনো কাওকে খাইয়ে দেইনি তো।তাই….”
— “তাহলে আজ খাইয়ে দিলেন কেনো?”
তিতলি নিঝুমের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো।নিঝুম তিতলির চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে।সে নিজেও জানে না কেন এমন করলো সে।ভালবাসা থেকেই বোধহয় এমন হয়েছে।নিঝুম চোখ সরিয়ে নেয়।দরজা বন্ধ করে বাতি বন্ধ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে।তিতলি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।চলে যাবে? নাকি আবার প্রশ্ন করবে?
ঘরে নিভু নিভু আলো।যে আলোটা আসছে সেটা সকালের হালকা আলো।জানালা,বারান্দার সাদা পর্দা ভেদ করে রুমের ভেতরে ঢুকছে।নিঝুম উপুড় হয়ে কয়েক ক্ষণ শুয়ে থাকে।মনে মনে তিতলিকে কাছে টেনে নেওয়ার সাহস যোগায়।খুব নার্ভাস ফিল করছে সে।তারপর,আধাশোয়া হয়ে বসে।নিজেকে সামলিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

— “এখানে আসো তিতলি।”
তিতলি নিঝুমের ডাকে বিছানার সামনে এসে দাঁড়ায়।বলে,
— “আসছি।”
— “ঘুমাবেনা?”
— “হুম।”
— “তো ঘুমাচ্ছো না কেনো?”
— “দরজা তো লাগিয়ে দিছেন।”
— “আমার রুমে সমস্যা কি?আর বাড়ির সবাই ঘুমে।কেউ দেখতে আসবে না।তুমি আমার নাকি তোমার রুমে।”
— “আপনার বিছানায় আমি ঘুমালে তো আপনি সোফায় চলে যাবেন।আর এতে তো আপনার কষ্ট হবে।”
— “কে বলছে আমি সোফায় যাবো?”
— “তো কি আমি সোফায়?”
— “আমি বলছি?”

তিতলি কিছু বুঝতে না পেরে মাথা নত করে অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে।নিঝুম হাঁসফাঁস করে।এখন সে যে কথাটি বলতে চাইছে, সেটি বলতে গিয়ে গলায় কিছু আটকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।মিনিট দুয়েকে নিজেকে প্রস্তুত করে বলে,
— “আমার বুকে ঘুমালে কি খুব সমস্যা হবে?” নিঝুমের গভীর কণ্ঠ।দ্বিধা ছাড়া সে সহজ ভাবে বলেছে কথাটি।তিতলির বুকে যেন কিছু একটা ধসে পড়ে।হাড়ে হাড়ে শিরশিরানি।মাথা ঘুরিয়ে পড়ার উপক্রম।মনে হচ্ছে,রুমটা ভনভন করে ঘুরছে।
— “হবে সমস্যা?”
আবারো নিঝুমের প্রশ্ন।

তিতলি বাধ্যর মতো নিঝুমের বুকে এসে শুয়ে পড়ে।সে চেয়েছে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে।কিন্তু একটা অদৃশ্য শক্তি নিয়ে এসেছে টেনে।তিতলি আলগা আলগা হয়ে বুকে মাথা রাখে।নিঝুম দু’হাতে বুকের সাথে চেপে ধরে তিতলিকে।চোখ বুজে দুজন।দুজনই দুজনের বুকের ধুক-ধুকানি শুনতে পাচ্ছে।এবং…এবং দুজনই ততক্ষণে জেনে গেছে।দুজন-দুজনকে ভালবাসে!যে অদৃশ্য শক্তি নিঝুমের মনের কথা বের করে এনেছে।যে অদৃশ্য শক্তি তিতলিকে বুকে টেনে এনেছে।সেই অদৃশ্য শক্তিই দুজনকে জানান দিয়েছে,

— “বুঝেছিস ব্যাপারটা?মানুষটি তোকে খুব ভালবাসে।শোন,কান পেতে শোন।বুকের ভেতর তোর নাম।”
নিঝুম বিড়বিড় করে বলে,
— “তোমায় ছাড়া শূন্য ভুবন ঠিক মহাকাশের মতোন!”
তিতলি কাঁপতে থাকে।সে ভাবতে পারেনি নিঝুম তাকে এতো জলদি ভালবেসে ফেলবে।নিঝুম গাঢ় কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
— “যেদিন প্র‍থম জড়িয়ে ধরেছিলে সেদিন কিছু দেখে ভয় পাওনি তাইনা?”

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২৭

তিতলি মাথা নাড়ায়।অনেকক্ষণ কেটে যায়।তিতলির বুকে হুট করে হারানোর ভয় বাসা বাঁধে।নিশার কথা মনে পড়ে।সে নিঝুমকে খামচে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।নিঝুম নিশ্চুপ।সে যেন বুঝে গেছে তিতলির কান্নার কারণ।তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর বলে,
— “কেঁদোনা।কিছু হবে না।”
তিতলি আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।এমনভাবে জড়িয়ে ধরার অধিকার কীভাবে পেয়ে গেল সে?তিতলি ভেবে কূল পাচ্ছে না।

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২৯