প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২১

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২১
ইলমা বেহরোজ

রাত দেড়টা।চারিদিকে সুনসান নীরবতা।ধীরে ধীরে রাত বাড়ছে।শন শন বইছে বাতাস।তিতলির মুখের উপর ছড়িয়ে থাকা কয়টা চুল অবাধ্যের মতো উড়ছে।আকাশে চাঁদ নেই।পৃথিবীতে চাঁদ আলো ছড়াচ্ছেনা।তিতলির মনের আকাশেও চাঁদ নেই।নেই চাঁদের আলো!সে অনেক্ষণ যাবত ছাদের এক কোণে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চোখে নোনা জল।গাল বেয়ে পড়া জল শুকিয়ে যাচ্ছে বাতাসে।সুইমিংপুলের এক পাশে ফুল গাছ অনেক।ফুল গাছগুলোর উল্টোপাশে অনেকখানি জায়গা খালি।এখন নিশ্চয় নিঝুম ঘুমাচ্ছে।তিতলির খুব কষ্ট হচ্ছিলো রুমে তাই পা টিপে এসে এখানটায় দাঁড়ায়।

নির্জন রাতের মধ্যভাগ ছাদে কাটিয়ে দেয়।রোহির সাথে ফোন আলাপে।রোহির সাথে কথা বলতে বলতে ছাদে এসে থমকায়।ফুল গাছের উল্টোপাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে যেন।ওড়না উড়ছে।একটু এগিয়ে এসে ভালো করে খেয়াল করে বুঝে মেয়েটা তিতলি।ফোনের অপর পাশের মানুষটাকে নির্জন ফিসফিসিয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “শুনো,রাখছি।ঘুমিয়ে পড়ো আজ প্লীজ।”
উত্তরে কি বলে রোহি তা না শুনেই সে কল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।নির্জন আরেকটু এগিয়ে এসে হালকা গলায় বললো,
— “তিতলি?কী করছো এতো রাতে?”
তিতলি চট করে ঘুরে দাঁড়ায়।নির্জনকে দেখে ভারি চমকালো।স্তব্ধ হয়ে গেল।অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
নতমুখে অপরাধীর মতো থেমে থেমে সে বললো,
— “কি…কিছুনা ভাইয়া।”
নির্জন তিতলির পাশে এসে দাঁড়ায়।হালকা দূরত্ব রেখে।কিছু মুহূর্ত পিনপতন নীরবতা বিরাজমান করে।তারপর,নির্জন হালকা কেশে রয়ে সয়ে প্রশ্ন করলো,
— “ভালবাসো নিঝুমকে?”
তিতলির হৃৎপিন্ড ধ্বক করে লাফিয়ে উঠলো।বরফ শীতল শরীরটায় হুট করে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। ‘ভালবাসো নিঝুমকে?’ এই একটা প্রশ্ন তিতলির ভেতরটা উথাল-পাতাল করে দিচ্ছে।বাতাসে অস্বস্তি,নিঃশ্বাসে অস্বস্তি।নির্জন আরো একবার কেশে গাঢ় স্বরে বললো,

— “ভালবাসো নিঝুমকে?”
তিতলি ঠাহর করতে পারছেনা কি বলবে সে?জিভ ভারি মনে হচ্ছে।নিঃশ্বাস বন্ধ করে, সে ছোট করে জবাব দেয়,
— “না।”
নির্জন নিচ ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবে।তারপর ঘুরে দাঁড়ায়।দূর আকাশে চোখ মেলে।বলে,
— “আমার প্রেমের বয়স বারো বছর। যখন আমার ষোল বছর তখন থেকে ভালবাসি রোহিকে।রোহির বয়স তখন তেরো।বাচ্চা একটা মেয়ে।আমিও বাচ্চা। কি করে যে কি হয়!ছোটবেলার আবেগ এখনো আমার কাছে নতুন।আঠাশ বছর বয়সে এসেও সেই আবেগ আগের মতোই অনুভব করি।দুজনের বড় হওয়া একসাথে।আমি আমার মতো গড়েছি ওকে,আর ও ওর মতো আমাকে।ওর পাগলামো সহ্য করতে করতে আমি এইটুকু বয়সে এসেছি।”
নির্জন থেমে হাসে।তিতলি অবাক হয়ে তাকায়।কি তৃপ্তি সেই হাসিতে।কত সুখী একটা মানুষ।ছোটবেলার প্রেম এখনো নতুন করে অনুভব করে।নির্জন আবার বলে,
— “রোহি আমার কি আমি আর ওইযে উপর থেকে দেখছেন উনি জানেন।রোহির রাগ-অভিমান-কান্নার আড়ালের ভালবাসাটা দেখে আসছি বারো বছর ধরে।সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি কাউকে দেখলেই বুঝতে পারি তার মনে ভালবাসা আছে নাকি নেই।”

নির্জন এতুটুকু বলে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে।তিতলির দিকে তাকায়।তিতলি মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে।ওর চোখের পাঁপড়ি ভিজে চুবু চুবু হয়ে গেছে।ভালবাসার কথা শুনলে তার বড্ড কান্না পায়।নির্জন আরো একবার জোরে নিঃশ্বাস নেয়।তারপর বলে,
— “তুমি স্বীকার না করলেও আমি বুঝেছি…..”
নির্জন কথাটি শেষ করতে পারলো না তাঁর আগেই তিতলি হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকে।নির্জন এক হাত তিতলির মাথায় রাখে।কোমল কণ্ঠে বলে,
— “কেঁদোনা।আল্লাহ অবশ্যই তোমার জন্য ভালো কিছু রেখেছেন।ভালবাসা জোর করে পাওয়া যায় না।নয়তো নিঝুমকে জোর করে তোমার করে দিতাম তিতলি।”
তিতলি ছলছল চোখে নির্জনের দিকে তাকায়।নির্জন বলে,
— “নিঝুম কেনো কাওকে কিছু বলবো না প্রমিজ।”

তিতলি ঘুরে দাঁড়ায়।প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেয়।ভয় পেয়েছিল,নির্জন যদি সবাইকে বলে দেয়।নির্জন আসল কথাটা চেপে যায়।সে নিঝুমের ব্যবহারে বুঝেছে নিঝুম তিতলিকে ভালবাসে।কিন্তু নিঝুম বুঝতে পারছেনা।ভালবাসা আর ভালোলাগার মধ্যে গড়মিল করে ফেলেছে।তিতলিকে যদি এই কথাটি নির্জন বলতো,তাহলে অনেক অমায়িক অনুভূতি তিতলি মিস করতো।এর চেয়ে,ওরা দুজনকে দুজন সময় করে বুঝে নিক!
নিঝুম বিরক্ত হচ্ছে খুব নিশার ফোনকলে।বার বার কল দিচ্ছে এত রাতে।নিঝুম অনেক্ষণ নিজ রুমে পায়চারি করে।রাগে ওর মাথার রগ দপ দপ করছে।শেষমেশ ভ্রু-কুঁচকে ফোন হাতে তুলে নেয়।রিসিভ করে কল!ওপাশ থেকে সাথে সাথে নিশার গলা,
— “গড!অনেক্ষণ ধরে কল দিচ্ছি।এখন রিসিভ করতে মনে হলো?”
রাগ নিয়ন্ত্রনে রেখে নিঝুম বললো,

— “ঘুমে ছিলাম।”
— “এতো জলদি ঘুমাও।কই আগে তো ঘুমাতে না।”
— “দু’বছরে অনেক কিছু চেঞ্জ হয়েছে নিশা।”
— “হুম।বুঝতে পারছি।”
নিঝুম নিশ্চুপ।নিশার কণ্ঠ ভেসে আসে,
— “আই লাভ ইউ। ”
— “আচ্ছা।”
— “বিরক্ত হচ্ছো?”
— “না ।”
— “ভয়েস শুনে তাই মনে হচ্ছে।”
— “এতো রাতে ঘুম ভাঙ্গলে গলা দিয়ে কি মধু আসে?”
— “এভাবে কেনো কথা বলছো নিঝুম?আগেতো রাতে ফোনে কথা বলতেই পছন্দ করতে।”
— “বললাম না দু’বছরের ব্যবধানে অনেক কিছু পাল্টে গেছে।”
— “সব আমার জন্যই হয়েছে।”
নিশার কান্নামিশ্রিত গলা।নিঝুম বিরক্ত হয়ে কপাল কুঁচকায়।তার হাঁসফাঁস লাগছে।রাগ উঠছে খুব।জিনিষ ভাঙ্গতে ইচ্ছে হচ্ছে।এমন রাগ জীবনেও হয়নি।প্রচুর ঘামছে রাগে।টি-শার্ট খুলে ছুঁড়ে ফেলে সোফায়।নিঝুমের সাড়া না পেয়ে নিশা ডাকে,

— “হ্যালো?হ্যালো?নিঝুম?”
— “হুম বলো?”
— “কিছু বলো?”
— “কি বলবো?”
— “যা ইচ্ছে?”
— “আমার এই নাম্বার কই পেলে?”
— “যাকে ভালবাসি তার নাম্বার জোগাড় করা কি খুব কঠিন?”
— “সেটাই তো কই পেলে?”
নিঝুম কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে সুইমিংপুলের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়।চোখ যায় একটু দূরে।কর্ণে দুজন ছেলে-মেয়েকে দেখে চমকায় সে।
— “কে?” নিঝুমের উঁচু গলা।
নির্জন তিতলি ঘুরে দাঁড়ায়।নিঝুম আরেকটু এগিয়ে এসে ওদের দেখে ভারি অবাক হলো।অবাক হলো নির্জন-তিতলিও।নির্জন হেসে নিঝুমের কাছে এগিয়ে এসে বললো,

— “রোহির সাথে কথা বলতে বলতে ছাদে এসে দেখি তিতলি একা দাঁড়িয়ে আছে।তাই আড্ডা দিচ্ছিলাম।তুই এসে গেছিস আমি যাই।আমার হবু বউটা এতক্ষণে রেগে গরমে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।পানি ঢালি গিয়ে।”
নিঝুমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নির্জন দ্রুত জায়গা ত্যাগ করে।নিঝুম অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সাথে তিতলিও।নিঝুম তো জানতো না তিতলি ছাদে থাকবে।নয়তো টি-শার্ট টা খুলে আসতোনা।এতো রাতে ছাদে কেউ আসে না।নির্জন আসে শুধু।নিঝুমের ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েদের মতো দু’হাতে বুক ঢাকতে।কিন্তু এটা কেমন জানি দেখাবে।
— “হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো, নিঝুম,কথা বলো।হ্যালো,হ্যালো।”
ফোন থেকে মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসছে।তিতলি অস্পষ্ট ভাবে বলে,
— “ফোনে কেউ কথা বলছে।'”
নিঝুমের ভাবনায় ছেঁদ ঘটে।তাড়াতাড়ি ফোনটা কানে ধরে বললো,
— “হ্যালো, নিশা।রাখছি।গুড নাইট।”

নিঝুম কল কেটে ফোন সুইচড অফ করে ফেলে।নিশা নয়তো জ্বালাবে খুব।নিঝুমের মুখে ‘নিশা’ নামটা শুনে তিতলি মাথা নত করে ফেলে।ছাদের দেয়াল খামচে ধরে।ইট-সিমেন্টে তৈরি দেয়ালের সাথে তিতলির কোমল হাতের নখ পেরে উঠেনি।ভেঙ্গে যায়!নিঝুম তিতলির দিকে নিষ্পলকভাবে কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে।মেয়েটার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া।
নিঝুম কোমল স্বরে জিজ্ঞাসা করে,
— “সবকিছু ঠিক-ঠাক আছে তিতলি?”
তিতলি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক বোঝায়।নিঝুম আরেকটু কাছে এসে তিতলিকে ভালো করে দেখে প্রশ্ন করে,
— “মুখটা ওমন দেখাচ্ছে কেনো?”
তিতলি নিশ্চুপ।এখন কথা বললেই নিঝুম টের পেয়ে যাবে সে যে ভেতরে, ভেতরে কাঁদছে।গলা কাঁপছে।নিঝুম গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

— “আন্সার কই?”
তিতলি নিশ্চুপ।নিঝুম থ্রী কোয়াটার প্যান্টের দু’পকেটে দু’হাত রেখে ছাদের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ায়।তার চোখ পাশের বিল্ডিংয়ে তবে মনটা তিতলির কাছে।তিতলি একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।অনেক্ষণ সময় ধরে দুজন শুধু দুজনের নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুনে।চারিদিকে আর কোনো আওয়াজ নেই।তাই একটু দূরে থেকেও একজন আরেকজনের নিঃশ্বাস শুনাতে ব্যাঘাত ঘটেনি।তবে,তিতলি নাক টেনে টেনে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো।কাঁদলে যেমনটা হয়!নিঝুম ভেবে কুল পাচ্ছেনা,কাঁদে কেনো মেয়েটা?পিনপতন নীরবতা কাটিয়ে নিঝুম তিতলির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
— “কী হয়েছে কাঁদছো কেনো?”

তিতলি নিশ্চুপ।নিঝুমের রাগ উঠে।কপাল কুঁচকে চোখ সরিয়ে নেয়।আজব!জবাব দিচ্ছে না কেনো?একটা মানুষ বার বার কিছু জিজ্ঞাসা করছে আর জবাব না দিয়ে একদম স্ট্যাচু।নিঝুম রাগে নিজের পায়ের জোতা খুলে দূরে ছুঁড়ে ফেলে।একটা জুতা সুইমিংপুলের পানিতে পড়ে।তিতলি কান্ডটা আড়চোখে দেখে।নিঝুমের মুখপানে তাকায়।নিঝুমও তখন তাকায়।তিতলি দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়।নিঝুম শান্ত হয়।এরপর শান্ত ভাবে আবার জিজ্ঞাসা করে,
— “আমার সাথে এমন ব্যবহারের মানে কি তিতলি?”
তিতলি যেনো ভারি অবাক হলো।এমন ভাবে তাকায়।বলে,
— “কেমন ব্যবহার করেছি?”
নিঝুম তিতলির একদম কাছে এসে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।তিতলির চোখের সামনে পশম ভর্তি নিঝুমের প্রশ্বস্ত বুক ভেসে উঠে।শরীরের হাড়ে হাড়ে কাঁপন ধরে।শরীরের লোমগুলো শিরশির করে খাড়া হয়ে যায়।নিঝুম কটমট করে ক্রোধ গলায়,চাপা আওয়াজ করে বলে,
— “কখন থেকে এটা-ওটা জিজ্ঞাসা করছি।উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?এটা কেমন ব্যবহার?”
তিতলি মাথা নত করে চলে যেতে নিলে,নিঝুম চট করে তিতলির বাঁ হাতের বাহুতে শক্ত করে চেপে ধরে।তিতলি আর্তনাদ করে উঠে,

— “উউউ,ব্যাথা পাচ্ছি।এতো জোরে ধরেছেন কেনো?”
নিঝুম নিজের ব্যবহারে নিজে চমকে যায়।কি হচ্ছে ওর সাথে? সে তো এমন না!তার মাঝে যেন অন্য নিঝুম বিরাজ করছে।নিঝুম চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে।তিতলিকে ছেড়ে দেয়।তারপর,দ্রুত দূরে সরে দাঁড়ায়।
তিতলির মাথা ঘুরছে।অনেক্ষণ ধরেই মাথা ব্যাথা করছে খুব।আর সন্ধ্যা থেকে জ্বর জ্বর ভাব।অনেক্ষণ কাঁদলে ওর জ্বর উঠে।শরীরটাও দূর্বল লাগছে।একটা ঘোরের মাঝে আছে সে।তিতলির হেঁচকি উঠা আর অজ্ঞান হওয়ার রেকর্ড আছে। জ্বর বাড়লে সেন্সলেস হয়।তিতলি ঘোরলাগা চোখে নিঝুমের দিকে তাকায়।ওর মনে হচ্ছে,সে নেশা করে।আর নিঝুম সেই নেশা,সেই মাদক! হুট করেই কি হলো ওর কে জানে, দৌড়ে এসে নিঝুমকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।নিঝুম হকচকিয়ে যায়।সময়টা থেমে যায়।অস্পষ্ট ভাবে বলে,

— “তিতলি!”
তিতলি নিঝুমের পিঠে মাথা রেখে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে।নিঝুমের পিঠ,হৃৎপিন্ড শিরশির করে উঠে।কিছু মুহূর্ত এভাবে পার হয়।নিঝুম বুঝে উঠতেই পারছে না এমুহূর্তে তাঁর সাথে কি হয়ে গেল।দুজন দুজনকে অনুভব করে ভীষণভাবে।নিঝুম ঘুরে দাঁড়ায়।সাথে সাথে তিতলি বুকে মাথা রাখে।নিঝুমের পিঠ খামচে ধরে শক্ত করে।তিতলির নখ বড় বিধায় নিঝুমের নগ্ন পিঠ হালকা ছিড়ে যায়।নিঝুম তখনো সম্মোহিত।তিতলি মাথা তুলে নিঝুমের মুখখানি দেখে।নিঝুমও তাকায়।তিতলির চোখ দু’টো কেঁদে কেঁদে ছোট হয়ে গেছে।নাকে গালে লালচে ভাব।ঠোঁট,চোখের পাঁপড়ি থেমে থেমে কাঁপছে।কি মায়া মুখটায়!ফর্সা মেয়েরা কাঁদলে মায়াবতী মনে হয়।পুরো মুখ জুড়ে যেন মায়াদের খেলা।তিতলির মনে পড়ে নিশা নিঝুমের গালে চুমু খেয়েছিল।মনে হতেই তিতলির ভীষণ রাগ হয়।নিঝুমের যে গালে নিশা চুমু খেয়েছিল সে গাল ওড়না দিয়ে ঘষতে থাকে।চোখে, মুখে রাগ।নিঝুম নিস্ময়ে হতভম্ব।তিতলি কে মানা করার মতো হুঁশও যেন তার আসছে না।কয়েক সেকেন্ড পর তিতলির মস্তিষ্কের নিউরন গুলো থেমে যায়।তিতলি চোখ বন্ধ করে শরীরের ভার ছেড়ে দেয়।লুটিয়ে পরে নিঝুমের বাহুতে।নিঝুম মৃদু করে চিৎকার করে,

— “তিতলি!”
তিতলির ঝুলে থাকা চুল মৃদু বাতাসে দুলতে থাকে।চেতনা হারিয়েছে সে।নিঝুম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।তারপর,তিতলির কপালে হাত রাখে।অবাক হয়ে বিড়বিড় করে,
— “এতোটা জ্বর!”

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২০

তিতলিকে দু’হাতে টেনে বুকে নিয়ে আসে।তিতলির মুখের স্পর্শ বুকে লাগতেই নিঝুম আরো একবার অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করে।সময়টা আটকে যায়।নিঝুম অনেক্ষণ অনেক মুহূর্ত অপলকভাবে তিতলির বিমর্ষ মুখখানায় চেয়ে থাকে।তারপর…তারপর নিষিদ্ধ মনের নিষিদ্ধ আবদারে তিতলির কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয় নিজের অজান্তে।
এই মুহূর্ত এতোটাই মধুর হবে তা হয়তো চাঁদ আগাম ভবিষ্যৎ বাণীতে শুনেছে।তাই আজ আর চাঁদ উঠেনি।চাঁদেরও যে লজ্জা আছে!নিঝুম-তিতলির ভালবাসার এই ক্ষণ মুহূর্ত সে সম্মুখে দেখতে পারতোনা। ভীষন লজ্জা পেতো!ভীষণ!
নিঝুম নিজের কাজে নিজেই চমকে যায়।কি করলো সে? এই বয়সে এসে এতো আবেগী হওয়া কি মানায়? কেনো এমনভাবে সবকিছু অচেনা হয়ে গেল? কোন অদৃশ্য মায়াজালে সে জড়ালো?

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২২