প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩০

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩০
ইলমা বেহরোজ

নিঝুম কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে আসে।ফোনটা হাতে নেয়।সেই মুহূর্তে আরেকটা টেক্সট আসে।ফোনের স্ক্রিনে দুই লাইনের মেসেজটা স্পষ্ট হয়ে উঠে।না চাইতেও নিঝুম একবার পড়ে ফেলে।রিনি নামে আইডি থেকে মেসেজটা এসেছে।নিঝুমের নামটা চেনা মনে হয়।কয়েক সেকেন্ড ভাবার পর মনে পড়ে।নিশার বেস্ট ফ্রেন্ডের নাম রিনি ছিল।মেসেজটা এমন ছিলো-
“potaite parchish nijhumke?O chara kintoo tor r goti nei jevabei parish pota”

মেসেজটা পড়ে নিঝুমের আগ্রহ জাগে পুরো কনভারসেশন পড়ার।নিশার উদ্দেশ্য জানা যেতে পারে হয়তো।আর কেনোই বা বললো নিশার আর গতি নেই?নিঝুম সোফায় বসে।কিন্তু বিপদে পড়ে, পাসওয়ার্ড নিয়ে।ফোনে কি পাসওয়ার্ড দিছে নিশা তা আল্লাহ তায়ালা জানেন আর নিশা।কিন্তু নিশাকে বললে তো কখনোই পাসওয়ার্ড দিবেনা।পাসওয়ার্ড দিলেও মেসেঞ্জারের এই কনভারসেশন রাখবে বলে মনে হচ্ছেনা।নিঝুম আন্দাজে কয়েকটি পাসওয়ার্ড ট্রাই করে ।কিন্তু লাভ হচ্ছেনা।ততক্ষণে তিতলি এসে পাশে দাঁড়ায়।শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “এমন অস্থির দেখাচ্ছে কেনো আপনাকে?”
— “এটা নিশার ফোন।এই ফোনের পাসওয়ার্ড খোলা জরুরি। কিন্তু পাসওয়ার্ড জানিনা।”
নিঝুমের কণ্ঠ অস্থির বড্ড।তিতলি কিছু একটা ভেবে বললো,
— “উনিতো আপনাকে পছন্দ করে।হয়তো আপনার নামে পাসওয়ার্ড।”
তিতলির কথা যুক্তিসংগত মনে হয়।যেহেতু তাঁর কাছে নিশা ফিরতে চাইছে তাহলে দুইবছর আগের পাসওয়ার্ড ফোনে আবার দিতেই পারে।তাকে দূর্বল করার জন্য হলেও।নিঝুম তাঁর এবং নিশার নামে একবার চেষ্টা করে।সৌভাগ্যবশত কাজ করে।নিঝুম দ্রুত মেসেঞ্জারে ঢুকে।তারপর অন করে রিনি আর নিশার কনভারসেশন কিন্তু বেশিরভাগই ভয়েস কলের।নিঝুম স্ক্রল করে আরেকটু উপরে উঠে।দেখে –

নিশাঃamar r America thaka possible noy.
রিনিঃkno?
নিশাঃFuhad sob jene geche.
রিনিঃki jene geche?
নিশাঃcall a boli?
রিনিঃcourse a achi.chat e bol
নিশাঃaro 2 joner sathe je amr ekta close somporko chilo seta o jene geche.2 din dore khob mardor kore.khun korar homki diyeche.bhojte parchish kmn oboshtay achi ami?
রিনিঃbolechilam tore tkr jonno r kono pola dorishna.fuhader e onk tk ache.dorli toh ekhn bhoj.
নিশাঃoi 2 jon ato boro businesses ar fuhad job kore onner office e.jokon prps korlo matha thik rakhte parini.please bacha ekhn?

রিনিঃami ki kore bachabo?’
নিশাঃbuddi toh de please?
রিনিঃ fuhad vai tore konovabei mene nibena?
নিশাঃkhokonoi na. o already onno meye khuje niche.
রিনিঃuncle er kache ay?
নিশাঃdad na kore diche.social media jane ami husbndr barite. ekhn hut kore chole gele onekdin thakle oneke onk kotha chorabe tai baba chayna tar bari firi.
রিনিঃtui borong deshe chole ay nijhumer kase.
নিশাঃor ki ache je or kache jabo?
রিনিঃ heart er doctor nijhum.or tkr ovab nei.toi konomote just ore pota.ekmatro ekhanei vlo thakbi.pore er cheye best kewre pele chole jaish.apatoto or kase ashroy ney.
নিশাঃdarun idea!tai korte hbe dekhchi.koyek maser jonno orei use korte hbe.
রিনিঃnijhum attto handsome! ami hole sarajiboner jonno rekhe ditam.
নিশাঃhandsome diya ki hobe? tk e sob.
রিনিঃshun?

নিঝুম আর পড়তে পারেনি।ওর মাথার রগ দপদপ করছে রাগে।তিতলিকে উপেক্ষা করে প্রচন্ড আক্রোশে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।তিতলি নিঝুমের এই রূপ দেখে ভড়কে যায়।সে ও আসে পিছন পিছন।নিশা সোফায় বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।দেখে মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা।সালোয়ার -কামিজ পরা।দেখতে ভদ্র মেয়ে মনে হচ্ছে।নিঝুম নির্জনের ফ্রেন্ডরা এসেছে।এছাড়া নানা আত্মীয় তো রয়েছেই।সবার সামনে, নিঝুম নিশাকে টেনে তুলে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।উপস্থিত সবাই সীমা ছাড়া চমকায়।নিশা গালে হাত দিয়ে নিঝুমের দিকে তাকায়।চিৎকার করে উঠে,

— “নিঝুম!”
নিঝুম চোখ কটমট করে বিড়বিড় করলো,
— “প্রস্টিটিঊট।”
অপমানে, ক্রোধে, আক্রোশে নিশার চোখ মুখ লাল হয়ে পড়ে।তাকে পতিতা বলছে?চিৎকারে সে ফেটে পড়ে,
— “মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ নিঝুম!”
নিশা,নিঝুমের চিৎকারে চারপাশ বিকটাকার। নির্জন এগিয়ে আসে।নিঝুমের কাঁধে হাত রাখে।প্রশ্ন করে,
— “কি হইছে ভাই?”
নিশার দিকে ঘৃণিত চোখ নিয়ে তাকায়।তারপর চোখ সরিয়ে আবার প্রশ্ন করে,
— “এই মেয়ে কি করেছে আবার?”
নিঝুম নিশার ফোন নির্জনের হাতে দিতে গেলেই নিশা চিৎকার করে উঠে,
— “আমার ফোন কোন সাহসে হাতে নিয়েছো নিঝুম।আবার তোমার ভাইকে দিচ্ছো।”
নিঝুম চোখ দু’টো বড় করে বললো,
— “চুপ।”

ফোনের পাসওয়ার্ড খুলে নির্জনের হাতে দেয় নিঝুম।নির্জন রিনি আর নিশার কনভারসেশন পড়তে থাকে।নিশা প্রচুর ঘামছে।ফোনে অনেক সিক্রেট ব্যাপার আছে।নতুন আরেকটা ফোন কিনে আজই সব ট্রান্সফার করার কথা ভেবেছিল।কোনটা নিঝুম দেখেছে সেটা বুঝতে পারছেনা।উপস্থিতি সবার চোখেমুখে কৌতূহল।নিশার বুক ধুকধুক করছে।নিঝুমের এতো রাগ সে জীবনেও দেখেনি।আর সেখানে নির্জনের রাগ!নিশা ভাবতে পারছেনা আর।দ্রুত হেঁটে নির্জনের কাছে আসে।কেড়ে নেয় ফোন।নির্জনের চোখ লাল হয়ে গেছে ততক্ষণে।পড়ে ফেলেছে নিঝুমের চেয়েও বেশি অংশ।নিশাকে কাছে পেয়ে আরেক গালে নির্জন থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।নিঝুম, মাহফুজ, আরো দুজন নির্জনকে আটকে ধরে।নির্জন অনবরত বিশ্রি গালাগাল করে যাচ্ছে।নিশা স্তব্ধ।ফোনে তাকিয়ে দেখে রিনি আর ওর কনভারসন!বিড়বিড় করে,

— “ও মাই গড।”
নিঝুম কখনো কারো ফোনে হাত দেয় না।তাই পাসওয়ার্ড আগেরটাই দিয়েছিল।ভেবেছিল আজ বাসায় অনেক মানুষ থাকবে ফোন কারো হাতে পড়বে না।কিন্তু সর্বনাশ হয়েই গেল।একদম নিঝুমের হাতে!উপস্থিতি সবাই তখনো দর্শক।তাঁরা শুধু দেখছে কি হচ্ছে।কিন্তু কেনো হচ্ছে বুঝা মুশকিল!
নির্জন রাগে কটমট করে চিৎকার করে বলে,
— “নষ্টা মেয়ে বাড়ি থেকে বের হইতাছে না কেন? আম্মু বের করো ওরে।নইতো এখানেই খুন করে দেবো আমি।কতবড় খেলবাজ!”

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ২৯

নিশাকে ধরতে পারলে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে এমন অবস্থা।নিঝুম আটকে রেখেছে নির্জনকে।নির্জন রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনা।এই রাগের জন্য জেলেও থেকেছে তিন মাস।নির্জন বন্দী বাঘের মতো ছোটাছুটি করতে থাকে নিশাকে ধরার জন্য।নিশার পা স্তব্ধ। কি করবে বুঝতে পারছে না।পালাতে হবেই।নির্জনের হাতে পড়লে রক্ষে নেই।নিশা দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায়।নিঝুম মৌনতাকে বলে,
— “মৌন পানি নিয়ে আয়।”
মৌনতা দৌড়ে পানি আনতে যায়।তাঁর ভাইয়েরা কেন এমন করলো বুঝতে পারছে না।কি ছিল ফোনে?

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩১