প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩২

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩২
ইলমা বেহরোজ

বর্তমান।
আকাশের অবস্থা থমথমে গুমোট।নির্জন ড্রাইভিং সিটে উঠে বসে।রোহি ছেলেকে কোলে নিয়ে নির্জনের পাশে বসে।আর পিছনের সিটে টুনি নির্জনের মেয়েকে নিয়ে বসেছে।নির্জন গাড়ির দরজা লক করে,স্টার্ট দেয়।গাড়ি চলছে নির্জনের দেওয়া গতিতে।রোহি উদাসীন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে নির্জনের দিকে।সেই রাগী ছেলেটা কত শান্ত আজ!চুপচাপ!সবসময় কি যেন ভাবে।স্বামীর কর্তব্য পালন করে গেলেও তার ভালবাসায় আলগা আলগা ভাব থাকে। কেন এমন হয়েছে নির্জন?নিঝুম আর সে জমজ বলে?একজনের কষ্টে আরেকজন দুমড়ে-মুচড়ে গেছে? দু’ভাই মায়ের পেটে ভাগাভাগি করে জায়গা দখল করে মিলেমিশে থেকেছিল!তাই এখনও বুঝি নিঝুমের কষ্টের প্রভাব,ভাগ এসে নির্জনের দুয়ারে পড়েছে?হয়তো তাই হবে!রোহি চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়।বুক চিঁরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।

নির্জনের এক জোড়া ফুটফুটে সন্তান হয়েছে আজ দশ দিন।নির্জন তার সন্তানদের নিঝুমকে দেখানোর জন্য নিঝুমের ফ্ল্যাটে আসে।বিল্ডিংয়ের সামনে এসে গাড়ি থামায়।দু’ছেলে-মেয়েকে নিজের কোলে তুলে নেয়।তারপর, লিফটে করে চলে আসে ছয় তলায়।নিঝুমের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে এসে শুনতে পায় ভেতরে ভাংচুরের আওয়াজ।নির্জনের হাসিমুখ পাল্টে আসে।রোহির কোলে বাচ্চাদের দেয়।তারপর,দ্রুত হেঁটে এসে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়।ড্রয়িং রুম পেরিয়ে, রুমে ঢুকে দেখে নিঝুম ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র যা আছে সব ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে।নির্জন দৌড়ে এসে নিঝুমকে পিছন থেকে জাপটে ধরে।অস্থির গলার আওয়াজ করে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “কি করছিস ভাই?প্লীজ ভাই আর ভাঙিস না।”
নিঝুম শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে নির্জনকে সরিয়ে দেয়। নির্জন আবার এসে জাপটে ধরে।নিঝুম আবার সরিয়ে দেয়,নির্জন আবার এসে ধরে।অনেকক্ষণ ধ্বস্তাধস্তি করার পর নিঝুম শান্ত হয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে।রাগ-অভিমান নোনা জল হয়ে নিঝুমের গাল বেয়ে পড়ছে।নির্জনের বুক ধ্বক ধ্বক করছে।সেই সাথে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রোহি আর টুনির চোখমুখে ভয়ার্ত ভাব।সম্মুখে যেন কালান্তক ঝড় হচ্ছে।নির্জন ছাড়া কেউ এই ঝড় সামলাতে পারে না। যতবারই নিঝুমের সাথে ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে নির্জনের।ততবারই নির্জন আহত হয়েছে।

আজও ব্যাতিক্রম হয়নি।নিঝুমের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে ভাঙ্গা কাচের উপর নির্জনের হাতের চাপ পড়ে।কেটে যায় অনেকটা। অন্যদিনের মতো প্রথম সেটা নিঝুমই খেয়াল করে। তারপর বসা থেকে উঠে আলমারি থেকে ব্যান্ডেজ ডেটল নিয়ে আসে।নির্জনের পাশে বসে।ব্যান্ডেজ করে দেয় মনোযোগ সহকারে।ব্যান্ডেজ শেষে ডেটল ছুঁড়ে ফেলে দূরে।বিকট আওয়াজ হয়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় ডেটলের বোতল।আওয়াজের তীব্রতা ছিল বেশি।জোড়া বাচ্চা ভয়ে একসাথে কেঁদে উঠে।কান্নার শব্দ নিঝুমের কানে আসতেই ভারী অবাক হয়ে সামনে তাকায়।তার চোখেমুখে কৌতূহল।নির্জন নিঝুমের চোখের ভাষা বুঝতে পেরে নিয়ে আসে বাচ্চাদের।নিঝুমের চোখের সামনে ফ্লোরে বসে।নিঝুম একবার বাচ্চাদের দেখে ভেজা চোখে নির্জনের চোখে চোখ রাখে। নির্জন মাথা নাড়িয়ে বুঝায়,নিঝুম যা ভাবছে তাইই।ঠোঁটে নির্জনের বাবা হওয়ার হাসি।নিঝুমের ঠোঁটেও যেন অনেকদিন পর হাসি ফোটে।নিঝুম বাচ্চাদের গালে হাত রাখে।তারপর গালে গভীর চুমু এঁকে দেয়।মৃদু হেসে বলে,

— “আমি বলছিলাম না?আমাদের সবার টুইন বেবি হবে।দেখলি তো।”
নিঝুমের কণ্ঠটা শান্ত দেখায়।তাই নির্জন খুব খুশি হত।বললো,
— “ওদের নাম কি রাখবো?তোর নাম রেখে দেওয়ার কথা ছিল।”
— “সেকী! এখনও রাখিস নি?”
— “উহু।”
— “আচ্ছা।আমি নাম খুঁজে তোকে টেক্সট করে দেবো।”
ক্ষণ মুহূর্ত সবাই নিশ্চুপ।হুট করে নিঝুম বললো,
— “তিতলি যদি থাকতো।সেদিন যদি বিয়েটা হতো, আমাদেরও এমন টুইন থাকতো! ”
নির্জনের জবাবের আশায় না থেকে নিঝুমই আবার পাগলের মতো হেসে বললো,
— “না না।তিতলি তো নিজেই বাচ্চা।ওর কি বাচ্চা হতো?”
তিতলির নাম যখন এসেছে নিঝুমের পাগলামি বেড়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে।তাই রোহি এগিয়ে এসে বাচ্চাদের নিয়ে যায়।নিঝুমের পাশে নির্জন বসে দেয়ালে হেলান দেয়। বললো,

— “দুপুরে খেয়েছিস?”
নির্জনের জবাব না দিয়ে নিঝুম কান্নামিশ্রিত গলায় বললো,
— “ও কি আর আসবেনা?ও কি জানেনা? ওর ভালবাসার আঙ্গার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে ফেলছে আমার ভেতর-বাহির।আমার…আমার নির্ঘুম রাত আর ভালো লাগে না।”
নির্জন নিঝুমের কাঁধে হাত রেখে কাতর স্বরে বললো,
— “অনেকদিন তো হলো জ্বলছিস।আর জ্বলতে দিস না নিজেকে।”
নিঝুম তাচ্ছিল্য হাসে।বললো,
— “দুনিয়ার বুকে এমন কেনো ড্রাগস নেই যা আমি গত দিনগুলোতে খাইনি।কিন্তু কোনো নেশাই এক সেকেন্ডের জন্য তিতলিকে ভুলাতে পারেনি। বলেছিলাম না? তিতলির মতো নেশাতুর কিছু দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি নেই।বলেছিলাম তো…..”

নির্জন নিশ্চুপ।তার কিছু বলার নেই।নির্জনের চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসছে।রোহির চোখে চোখ রাখে।তারপর আবার নিঝুমকে বললো,
— “তবুও আর কতদিন? তুই তো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিস।দেখ ভাই..”
জবাবে নিঝুমের তীর্যক হাসি।হাঁটুতে মাথা নত করে।সে কাঁদছে।নাক টানছে বার বার।যখন তখন তার কান্না পায়।বুকটা ফাঁকা লাগে খুব।তিতলি নেই।কেউ এসে জ্বালায় না সারাক্ষণ।কেউ এসে বলে না, এই যে ডাক্তার বিকেলে এসেই আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন।নয়তো কিন্তু কামড়াবো। হারিয়ে যাবো। নিঝুমের প্রতীক্ষার সহস্র বছর যেন সেকেন্ডে রূপ নিয়েছে।তিতলি হারাবার পর ক্ষণে ক্ষণে বুঝতে পেরেছে তার জীবনের সূর্য ছিল তিতলি।সূর্যটা ডুবে গিয়ে এখন অমাবস্যা…চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

বিরহে পাগল কাকে বলে?তা নিঝুমকে দেখলে এক পলকে বুঝা সম্ভব!সে আর কবিতা লিখতে পারেনা।অথচ,কত-শত কবিতা শুনাতো প্রেমিকাকে।প্রেমিকার চোখ,ঠোঁট,চুলসহ সবকিছুতে মুগ্ধ হয়ে ধরতো একেকটা কবিতার ছন্দ।কবিতা লিখতে গিয়ে সে এখন ভুলে যায় বানান।যখনি কবিতা লিখতে বসে, লিখে ফেলে প্রেমিকার নাম।যে কবিতা ছিল নিঝুমের প্রাণ,সে কবিতার প্রাণ আজ তার প্রেমিকা। তাঁর লাজুকলতা।

সেই শান্ত-নম্র-ভদ্র ডাক্তার নিঝুম আর নেই।কেউ আর বলেনা ডাক্তার নিঝুম!এখন যে কেউ দেখলে বলে,মাতাল নিঝুম!নষ্ট নিঝুম!বদমেজাজি নিঝুম! এতে নিঝুমের ভ্রুক্ষেপ নেই।অতিরিক্ত ড্রাগ’স সেবনে সে দুবার ছিল হসপিটাল ভর্তি।সেই বলিষ্ঠ-সবল শরীরটাও নেই।শুকিয়েছে অনেক।গাল ভর্তি দাঁড়ি।লম্বা চুল কপাল জুড়ে ছড়িয়ে থাকে।কাটে না অনেকদিন।নিঝুমকে দেখলে যে কারোর মায়া হয়!খুব মায়া হয়।এই দু বছরে পুরো দেশ হয়তো সে ঘুরে ফেলেছে তিতলির খোঁজে।পরিবারের কারোর সাথে নেই কোনো সম্পর্ক।তবে,মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে বোনদের,মা’কে,নির্জনকে। তখন সে সিলেট চলে আসে।নিজের ফ্ল্যাটে পরিবারকে ডাকে দেখা করার জন্য।বাপের বাড়ি ছেড়েছে তিতলি যাওয়ার পর-পরই।এরপরই কিনে ফ্ল্যাট।নির্জন স্বান্ত্বনাবাণী খুঁজে পায় না।তাঁর খুব কষ্ট হয় নিঝুমকে দেখলে।কান্না আসে।জীবনের মোড় এভাবে ঘুরে যাবে কখনো ভাবেনি।নিঝুম কাঁদছে।নির্জনের কান্না পাচ্ছে।কোনোমতে বলে,

— “ভাই কাঁদিস না প্লীজ।”
নির্জনের গলা কাঁপছে।নির্জনের আদুরে গলা শুনে নিঝুমের কান্না বেগ বেড়ে যায়।নির্জনের গাল বেয়ে গলায় এসে নামে জল।নির্জনের চোখের জল দেখে,দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রোহি চাপা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।টুনি এগিয়ে এসে রোহির কোল থেকে ছেলেটাকে নেয়।রোহি আঁচল চেপে ধরে মুখে।কাঁদতে থাকে অনবরত!নির্জন কান্নারত নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে।নিঝুম আর্তনাদ করে উঠে,
— “ভাই!তিতলিরে এনে দে।এনে দে ভাই।ওরে ছাড়া আমার সময় কাটেনা।ও আমাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিছে ভাই।আমি পারছিনা নিজেকে সামলাতে।এনে দে ভাই।প্লীজ এনে দে।আমার তিতলি…ভাই।”

নিঝুমের কান্নার আওয়াজ তীব্র হয়।সেই সাথে বাড়ে নির্জনের কান্নার আওয়াজ।রোহি কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে।রোহিতার কোলের বাচ্চাটা কেঁদে উঠে।টুনি এসে আরেক হাতে আঁকড়ে ধরে আরেকটা বাচ্চাকে।সে ও কাঁদছে।রুম ছেড়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসে।নিঝুম বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে।তাঁর জীবনের ঘড়ির কাঁটা তিতলিতে থেমে গেছে।আর চলে না।নির্জন এক হাতে নিজের চোখ জল মুছে বলে,

— “এনে দেব।তুই শান্ত হ।আর কাঁদিস না।এভাবে মরে যাবি তো তুই।”
নিঝুম নির্জনকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়।বলে,
— “তাই হউক।কেন হচ্ছেনা!”
নিঝুম কান্না থামিয়ে দেয় হুট করে।ফ্লোরে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। সিগারেট আর দিয়াশলাই হাতে তুলে নেয়।নিঝুম বাঁধা দেয়,
— “আর খাস না এসব।কলিজাটা আর পুড়াইস না।”

নিঝুম নির্জনের হাত সরিয়ে সিগারেট জ্বালায়।নির্জন ফ্লোরে থ মেরে বসে আছে।দূরে বসে থাকা রোহির একই অবস্থা।রোহি কারো কান্না সহ্য করতে পারেনা কোনোভাবেই। আর সেখানে আজ দুইটা বছর ধরে পুরো একটা পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যের কান্না দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।যখন সিগারেট ফুরিয়ে আসে নিঝুম উঠে বসে।নির্জনের হাত মুঠোয় নেয়।নির্জন তাকায়।নিঝুম কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু কান্নার জন্য পারছেনা।ঠোঁট কাঁপছে তার।চোখ বেয়ে জল পড়ছে জলপ্রপাতের মতো।নির্জন হা করে তাকিয়ে আছে নিঝুমের মুখপানে।ছোটবেলা একবার এক্সিডেন্ট হয় নিঝুমের।পায়ের উপর রিক্সার চাকা উঠে যায়।প্রচুর রক্তপাত হয়,তবুও নিঝুম কাঁদেনি।সবাই অবাক হয়েছিল।আর আজ দু’বছর ধরে সেই ছেলে কথায় কথায় কাঁদে।নির্জন অপেক্ষার প্রহর গুণছে,কখন নিঝুম কান্না সামলিয়ে কথা বলবে।কিন্তু পারছেনা নিঝুম।নির্জনের হাত ছেড়ে অন্যদিকে ফিরে বসে।ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর জন্য।শ্বাস ছাড়ে নেয় কয়েকবার। তারপর কাঁপা গলায় উদাসীন হয়ে বললো,

— “তিতলির হাসি মুখটা দেখা হয়না কতদিন।দেখা হয় না ওর লাজুক মুখটা।ছুঁতে পারিনা অনেকদিন হলো।কতদিন হলো এসে থ্রেট দেয়না, এটা যদি আপনি না করেন আমি কিন্তু কামড়ে দিবো।”
এইটুকু বলে কান্না ভেজা চোখে তাকায় নির্জনের দিকে।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে আবার বললো,

— “এই দেখ হাতে কামড়ের দাগ।এটা আমার তিতলির দেওয়া।আরো অনেক আছে পিঠে, পায়ে, ঘাড়ে।কিন্তু একটা কামড়ও ভালবেসে দেয়নি জানিস।আমার উপর অভিমান বা রাগ হলেই কিছু বলতে পারতোনা।তাই কামড় বসিয়ে দিতো।রেগে গেলেই কামড়।একটা কামড় দিয়ে কম হলেও দু’মিনিট কামড় দিয়েই ধরে রাখে।”
নিঝুম হো হো করে হেসে উঠে।এরপর আবার বলে,

— “এজন্য আমি ওর নাম দিয়েছিলাম পিশাচ।”
নিঝুম আবার হাসে।রোহি,নির্জন মুগ্ধ হয়ে শুনছে প্রেমের বিরহে উন্মাদ প্রেমিকের প্রেমময় সময়ের কথা।নিঝুম অনেকক্ষণ হাসে।হুট করে মলিন হয়ে আসে মুখটা।নির্জনের দিকে তাকিয়ে কাতর স্বরে বলে,
— “তিতলি কি আর রেগে গিয়ে আমাকে কামড়াবে না ভাই?আমি ব্যাথা পাই খুব।তবুও সহ্য করে নিতাম।এখনো সহ্য করবো।আমার মতো কি আর কেউ সহ্য করবে? করবে না তো।তাহলে আসে না কেন?”

নির্জনের বুকটা ধড়াস করে উঠে।কি বলবে এখন?সেকেন্ড কয়েক ভেবে বলে,
— “তোর বাঁ পাজরের সৃষ্টি যদি তিতলি হয়।তবে,সে ফিরবেই।”
নিঝুম চিৎকার করে উঠে,
— “কেন?কেন তাহলে আল্লাহ প্রেম,ভালবাসা দিলো? যে মেয়ে বাঁ পাজরে বানানো নয়।তার জন্য কেন এতো প্রেম দিলো মনে।কেন?”
নির্জন আবার আঁকড়ে ধরে নিঝুমকে।নিঝুম কাঁপছে,কাঁদছে।কান্নার দমকে শরীর কেঁপে উঠছে।নিঝুম ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় নির্জনকে। বলে,

— “যা।বাড়ি যা।আমি একা থাকবো।”
নিঝুম মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।নির্জন চোখের জল মুছে নিঝুমের পাশে এসে দাঁড়ায়।কাঁধে হাত রেখে বললো,
— “আচ্ছা,আসছি।”
নির্জন যেই না চলে যেতে নিবে।নিঝুম দু’হাতে আঁকড়ে ধরে নির্জনের পা।নির্জন চমকে উঠে।নিঝুম কাঁদতে কাঁদতে বলে,

— “ভাই আমাকে বাঁচা।আমার শূন্য বুকটা ভরিয়ে দে।আমি আমার আগের জীবনটা চাই।আমার তিতলিকে আমার বুকে ফিরিয়ে দে।খুঁজে দে ওরে।আমার বড্ড একা লাগে।খুব কষ্ট হয় বিশ্বাস কর।তিতলির হাতের স্পর্শ কতদিন পাই না।প্লীজ ভাই।নয়তো মেরে ফেল আমাকে।”
নির্জন জোর করে নিঝুমকে পা থেকে ছাড়ায়।তারপর তুলে দাঁড় করায়।একবার বুকে জড়িয়ে, দু’ভাই একসাথে কাঁদে অনেকক্ষণ। তারপর,নির্জন নিঝুমকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
ফ্লোর থেকে কান্নারত রোহিকে তুলে ধরে নিয়ে আসে ড্রয়িংরুমে।রোহি ড্রয়িংরুমে এসেই নির্জনের দু’গালে হাত রাখে।মায়াভরা কন্ঠে বলে,

— “খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার?দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
নির্জন রোহিতার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে।রোহি নির্জনের চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
— “কেঁদোনা।নিঝুম ভাই ঠিক হয়ে যাবে।তিতলি আসলেই ঠিক হয়ে যাবে।তোমার ভাইটা না খুব কাঁদুনে।”
নির্জন মুখ তুলে তাকায়। বলে,

— “মোটেও না।ও এমন ছিলোনা কখনো।তিতলি যাওয়ার আগে কবে ওরে কাঁদতে দেখছি মনে নেই।তিতলি কি করেছে জানিনা।তিতলির বেড়াজালে নিঝুম আজও ডুবে আছে।এতোটা বয়সে এসে এমন উন্মাদ হবে নিঝুম কখনো ভাবিনি জানো রোহি?ওর ব্যাক্তিক্ত,মনোভাবই ছিল অন্য ধাঁচের।এমন উন্মাদ ওকে মানায় না।”

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩১

রোহিতা নির্জনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সামলায়।বেরিয়ে আসে ফ্ল্যাট থেকে।নিঝুম শুয়ে আছে চুপ করে।ছাদের দেয়ালে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে।সাদা দেয়ালে ভেসে উঠে অতীত।ভেসে উঠে সেই রাত!যে রাতে ভালবাসি কথাটা শুনে তিতলি বেঁহুশ হয়ে তাঁর বুকে নেতিয়ে পড়েছিল!

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩৩