প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩৪

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩৪
ইলমা বেহরোজ

ইদানিং মৌনতা বড্ড চুপচাপ থাকে।মোহনা খাবার নিয়ে আসে ঘরে।মৌনতার সামনে খাবারের প্লেট রাখে। তারপর বলে,
— “সারাদিন তো খাস নাই, এখন খা।খেয়ে উদ্ধার কর মা। মানুষের কি আর ব্রেকআপ হয় না শুধু তোর ব্রেকআপ হইছে?”
মৌনতা চোখ গরম করে তাকায়।মোহনা খানিকটা ভয় পেল,ঢোক গিলে বললো
— “আমি কি মিথ্যা বলেছি।”
মৌনতা গর্জে উঠে,

— “আমি কি তোরে বলছি এখানে আইসা সত্য মিথ্যা বলতে?তোরে কে বলছে খাবার নিয়ে আসতে?খাবার নিয়ে এক্ষুনি বেরিয়ে যা রুম থেকে।”
মোহনা কয়েক মুহূর্ত নির্লিপ্ত ভাবে মোহনার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর ধীর পায়ে মৌনতার সামনে এসে দাঁড়ায়। পাশে বসে।তারপর মাথায় হাত রেখে বলে,
— “টেনশন করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মৌনতা ছলছল চোখ নিয়ে মোহনার চোখে চোখ রাখে।নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,
— “কিছু ঠিক হবে না।সব শেষ!তৃপ্ত এতটা নিচ আমি আগে জানতাম না।জানলে কখনো এমন একটা ছেলের হাত ধরতাম না।”
মোহনা আদুরে গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “কাঁদিস না মৌ।কি করেছে তৃপ্ত ভাই?”
মৌনতার চোখের জল মুছে বললো,
— “একটা চিটার ও!শুধু আমার সাথে না,অনেক অনেক মেয়ের সাথে ওর রিলেশনশীপ আছে। সবার কাছ থেকে মিথ্যা কথা বলে টাকা নেয়।চাপা মারে।আমি কয়দিন আগেই ধরতে পারছি।”
মোহনার চোখ কপালে ওঠে!তৃপ্ত ভাই এরকম?মোহনা চিন্তিত ভাবে বললো,
— “তুই ঠিক বুঝেছিস তো?ভুল বুঝছিস না তো?”
মৌনতা খানিকটা রাগী স্বরে বললো,

— “তোর মনে হয় আমি না বুঝে না শুনে কারো নামে এত বড় অপবাদ দিয়ে দিব?”
মোহনা থমথমে গলায় বললো,
— “তা নয়।”
বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা। মৌনতা রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।মোহনা রুম থেকে বেরোবার আগে ফিরে তাকায়। বলে,
— “মৌন খেয়ে নে খাবারটা।খাবারের সাথে রাগ করতে নেই।”
— “শোন?”মৌনতা ডাকে।মোহনা তাকায়।মৌনতা বললো,
— “গত তিন মাস আগে বাবা যে,মানে এক জোড়া জমজ ছেলের কথা বলেছিল আমাদের দুজনের বিয়ের জন্য।”
মৌনতা থামে।আর কথা বলতে পারছে না।মোহনা কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে আসে। বলে,
— “তুই বিয়েতে রাজি?”
মৌনতা মাথা উপর নিচ নাড়ায়।মানে সে রাজি।

” কালতো ছিলাম ভালো
আজ আমার কি হলো
সে কথা কইতে পারি না না না
একেলা রইতে পারি না না না ”
দুপুর তখন তিনটা।নিঝুম হসপিটাল থেকে সবেমাত্র ফিরেছে।রান্নাঘর থেকে গুনগুন আওয়াজ শুনে,সে থমকে দাঁড়ায়।কণ্ঠটা তিতলির মনে হলো।রান্নাঘরের দিকে আসে।যা ভেবেছিল তাই! রান্নাঘরে এসে দেখে তিতলি রান্না করছে মনোযোগ দিয়ে।আর গুনগুন করে গান গাইছে।নিঝুম পিছন থেকে তিতলিত কোমর জড়িয়ে ধরে।কাঁধের উপর চিবুক রাখে।তিতলি চমকে উঠে।পিছনে কে দেখার জন্য মাথা ঘুরাতে চায়, কিন্তু পারেনি। নিঝুম জাপটে ধরে আছে শক্ত করে।নিঝুম ফিসফিসিয়ে বলে,

— “একলা থাকতে হবে না!চলে এসেছি!”
নিঝুমের নিঃশ্বাস তিতলির ঘাড়ে এসে ধাক্কা খায়।
তিতলি শিউরে উঠে। লজ্জায় মাথা নত করে।বলে,
— “ছাড়ুন!”
নিঝুম দুটি ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,
— “আচ্ছা,এখন তো টুনির রান্না করার কথা! তুমি রাঁধছো কেনো?”
— “আপনার জন্য রাঁধছি।আপনার প্রিয় ঝাল চিকেন রোস্ট করছি।তো টুনি কেনো রাঁধবে?”
নিঝুম আরেকটু শক্ত করে কোমর পেঁচিয়ে ধরে দু’হাতে।বললো,
— “হুম।তাই তো।আমার হবু বউ আমার জন্যই তো রাঁধবে।”
এইটুকু বলে তিতলির গালে গাল ঘষে দেয়।তিতলি আর্তনাদ করে উঠে।ধমকের স্বরে বলে,

— “দাঁড়ি ঘষেন কেনো গালে।ব্যাথা পেয়েছি।”
নিঝুম হাসে।তিতলিকে ঘুরিয়ে কোমর পেঁচিয়ে ধরে আর বলে,
— “ঝাল চিকেন রোস্ট আমার পছন্দ কে বললো?”
তিতলি আহ্লাদী কণ্ঠে বললো,
— “আমি চিরুনি অভিযান চালিয়ে জেনেছি।ঝাল চিকেন রোস্ট,ছোলা ডাল উইথ চিকেন আপনি খুব পছন্দ করেন।আর স্ন্যাক্স এর মধ্যে, চিকেন কিমা স্যান্ডউইচ পছন্দ।”
নিঝুম দু’ভ্রু উপরে তুলে বলে,

— “বাব্বাহ!”
— “আস্তাগফিরুল্লাহ।”
চিৎকার শুনে দুজনই হকচকিয়ে গেল।ঘুরে তাকায়।রান্নাঘরের দরজার পাশে টুনিকে দেখতে পায়।তিতলি নিঝুমের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়।নিঝুম হালকা করে হাসে।চলে যাওয়ার আগে টুনির কপালে ঠোকা দিয়ে বললো,
— “আসার সময় পেলিনা আর!”
তিতলি লজ্জায় কুঁকড়ে গেল।টুনি রান্নাঘরে এসে ঢুকতেই তিতলির হেঁচকি উঠে।নিজেই ফিল্টার থেকে পানি নেয়।তারপর ঢকঢক করে রুদ্ধশ্বাসে পানি শেষ করে।টুনির দিকে না তাকিয়ে ঝটপট রান্না করতে থাকে।টুনি টিপে টিপে হাসে অনেকক্ষণ। তারপর বলে,
— “বিয়াডা কইরা লন আফা।তারপর রুমে গিয়া রোমান্স কইরেন।ভাইজানের রুমে ফাকঘর আছে।”
তিতলি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।লজ্জায় কথা আসছেনা গলা দিয়ে। কাজে ব্যস্ত থাকছে।

তিতলি টেবিলে খাবার সাজিয়েছে।আঞ্জুমান খেয়াল করে দেখেন নিঝুম যেখানে বসে সেখানে নিঝুমের সব প্রিয় খাবার।আঞ্জুমান আপন মনে অনেক খুশি হন।বলেন,
— “তিতলি?নিঝুমের জন্যই যখন এতো কিছু রেঁধেছিস।খাবার নিয়ে উপরে যা।নিঝুম নিজের রুমে খেতেই বেশি পছন্দ করে।”

তিতলি মাথা নাড়িয়ে বাধ্যর মতো সব গুছিয়ে নেয়। এরপর বলে,
— “সবার জন্যই রেঁধেছি ফুফি আম্মা।”
তারপর সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে থাকে।পিছন থেকে নির্জন ডেকে বলে,
— “তিতলি,ভাই আমার অন্যের হাতে খেতে বেশি ভালবাসে।”
বলেই নির্জন মুচকি হাসে।সেই সাথে উপস্থিত সবাই।তিতলির হাত কেঁপে উঠে।আরেকটু হলে,প্লেট হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেত।তিতলি বড় বড় পা ফেলে ছাদের দিকে যেতে থাকে।আঞ্জুমান হেসে বলেন,

— “নিঝুমের বিয়ে হবে তাহলে।”
নিঝুম তখন বের হয়েছে মাত্র।তিতলির হাতে খাবার দেখে আবার ঢুকে পড়ে রুমে।তিতলি রুমে ঢুকেই সোফায় বসে।নিঝুমকে তাড়া দেয়,
— “বসুন, বসুন।সেই কখন এসেছেন!এখনো খাননি।”
তিতলি প্লেট হাতে তুলে নেয়।নিঝুম তিতলির পাশে বসে।তিতলি নিঝুমের দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠে,

— “আমি কি দাঁড়িয়ে খাওয়াবো আপনাকে?”
নিঝুম থতমত খেয়ে যায়।সে কখন বললো? দাঁড়িয়ে তাঁকে খাওয়াতে?
— “কখন বললাম?”
ভারি অবাক হবার ভান করে বললো নিঝুম।
— “ডাক্তার কেমনে হলেন আপনি?আপনি আমার চেয়ে কত লম্বা।এভাবে পাশে বসলে সুবিধামত কেমনে খাওয়াবো?এইযে দেখুন,আপনার কাঁধ অব্দি আমার মাথা।ফ্লোরে বসুন।”
— “এ্যাঁ?”
— “হ্যাঁ!বসুন চট করে।”
— “একটু আগে বাইরের জুতা পায়ে এখানে হাঁটাহাঁটি করেছি।বসলে তো প্যান্টে ময়লা লাগবে।”
ভারী করুণ ভাবে বললো সে।

— “ওকে।আমি দাঁড়াই।”
তিতলি দাঁড়াতে নিলে নিঝুম হাতে ধরে ফেলে।হ্যাঁচকা টানে কোলে বসিয়ে দেয়।বলে,
— “এবার ঠিক আছে।”
তিতলি খানিকক্ষণ হাসে।তারপর যত্ন সহকারে খাইয়ে দেয়।নিঝুম খাওয়ার মাঝে কথা বলতে চাইলে,তিতলি থামিয়ে দেয়।যখন খাবার প্রায় শেষের দিকে তিতলি যেই নিঝুমের মুখে খাবার দিতে যাবে নিঝুম তিতলির আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেয়।তিতলি আর্তনাদ করে উঠে।নিঝুমের কোল থেকে সরে যায়।কড়া গলায় বলে,

— “আমি কামড় দিলে সহ্য করতে পারবেন?”
নিঝুম পানি খেতে খেতে বলে,
— “এহ!এইটুকুন মেয়ে কামড়াতে এসেছে।”
— “এইটুকুন হতে পারি।কিন্তু আপনার চেয়ে আমার দাঁতে বিষ বেশি।”
— “মুখ যখন আছে চাপা সবাই মারবে।”
— “তিতলি চাপা মারেনা।”
নিঝুম ভারি অবাক হয়ে বললো
— “তুমিতো বহুত ঝগড়াটে মেয়ে!”

তিতলি আর কিছু না বলে দ্রুত নিঝুমের কাছে আসে।তারপর দাঁতের সবটুকু শক্তি দিয়ে নিঝুমের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।হাতে একদম গভীর দাগ বসে যায়।কিন্তু নিঝুমের কোনো প্রকাশভঙ্গি নেই।সে হাসছে।তিতলি অবাক চাহনিতে নিঝুমের পানে তাকায়।বলে,

— “ব্যাথা লাগেনি?”
— “লেগেছে তো।অবশ্যই লেগেছে।আমি এখন শোধ নিবো।”
— “কিসের শোধ।আপনি কামড় দিয়েছেন।আমিও দিয়েছি।সমান সমান।”
— “আমি আস্তে দিয়েছি।তুমি জোরে দিয়েছো।এখন আরেকটা আস্তে দিয়ে সমান সমান করবো।”
নিঝুমের ঠোঁটে হাসি।অন্যরকম হাসি।তিতলি পিছুতে থাকে।নিঝুম এগোতে থাকে।যখনি পিঠে দেয়াল ঠেকে তিতলি চিৎকার করে উঠে,

— “ফুফিই আম্মা…”
নিঝুমের নজর দরজায় চলে যায়।সেই সুযোগে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তিতলি।নিঝুম পিছনে ডাকে,
— “তিতলি প্লেটগুলো নিয়ে যাও।”
তিতলি রুম থেকে বেরিয়ে উঁচু গলায় বলে,
— “টুনিকে পাঠাচ্ছি।”

তিতলির মনের মন্দিরে প্রজাপতিদের উড়াউড়ি বেড়েছে বহুগুণ।কয়দিনের প্রেমে সুন্দর হয়েছেও বহুগুন।নিঝুম বিকেলে গিয়েছে হসপিটাল।অপারেশনের সময় পড়েছে তখন।তিতলি আবদার করেছিল,বাইকে চড়ে ঘুরার জন্য।নিঝুম জবাবে বলেছিল সন্ধ্যার পর পরই চলে আসবে।সেই সন্ধ্যা থেকে তিতলি রেডি হয়ে বসে আছে।খয়েরী রঙের শাড়ি পরেছে।চোখে কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক।কিন্তু রাত ১০ টা হতে চললো,এখনো দেখা নেই নিঝুমের।অনেকগুলো কল দিয়েছে তিতলি।কিন্তু বার বার ওপাশ থেকে এক কর্কশ কণ্ঠের মহিলা কথা ভেসে আসে।তিতলি রাগে-অভিমানে অনেকক্ষণ কাঁদে।হেঁচকি উঠে।পানি খায়।তারপর,কখন ঘুমিয়ে পড়ে নিজেরও খেয়াল নেই।যখন ঘুম ভাঙ্গে টের পায় কেউ একজন কোলে তুলে নিয়েছে।রুম থেকে বের হয় আগুন্তুক।ভালো করে চোখ মেলে তাকায় তিতলি।দেখে,নিঝুম!তিতলির মনে অভিমানরা এসে ভীর জমায়।নিঝুমের কোলে হওয়ার সুবিদার্থে তিতলি রাগ-অভিমান ঝেড়ে ফেলে নিঝুমের গালে কামড় দিয়ে!নিঝুম থতমত গলায় বলে,

— “হেঁচকি,অজ্ঞান হওয়ার সাথে কামড়ানোর ব্যামো আছে নাকি?”
তিতলি অন্যদিকে মুখ ফিরে বলে,
— “আমাকে যতবার রাগাবেন,কাঁদাবেন।আমি কামড়াবো। ”
— “গুণে,গুণে রাখছি কিন্তু।একদিন উসুল তুলে নিবো।”
ছাদের সিঁড়ি পর্যন্ত আসতে নিঝুম দেখে আঞ্জুমান নামছে।তিতলিকে ছেড়ে দিতে গিয়েও ধরে ফেলে।নিঝুমের চোখ মারবেলের মতো গোল হয়ে যায়।তিতলি সামনে তাকায়।দেখে,আঞ্জুমানকে।তিতলি তাড়াতাড়ি মুখ লুকিয়ে ফেলে নিঝুমের বুকে।নিঝুম মায়ের চোখে চোখ রেখে অপ্রস্তুত হাসে।আমতা আমতা করে বলে,

— “আমি তো নির্জন আম্মু।”
আঞ্জুমান ভ্রু কুঁচকে বিদ্রুপ করে বলেন,
— “আহাম্মক!আমি নির্জন আর নিঝুম চিনি না?”
তিতলির বুক ধ্বকধ্বক করছে।সারা শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে।নিঝুম হালকা কেশে মা’কে বলে,
— “আমি এখন কি করবো?”

আঞ্জুমান ছেলের হাব-ভাব দেখে ভেতরে ভেতরে হাসিতে ফেটে পড়েন।কিন্তু উপরে ভ্রু বাঁকিয়ে জায়গা ত্যাগ করে।আঞ্জুমান যেতেই তিতলি নিঝুমের বুকে কিল-ঘুষি দিতে থাকে।বলে,
— “সন্ধ্যা সময় কই ছিলেন?এখন আসছেন।রাত কয়টা বাজে আল্লাহ মাবূদ জানেন।কি একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।এতো নির্লজ্জ মানুষ হয়।?”
নিঝুম সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে উঠতে বলে,

— “যে প্রেমিক প্রেমিকার জন্য নির্লজ্জ বেহায়া না হতে পারে সে কোনো প্রেমিকই না।”
— “আসছে আমার প্রেমিক।”
নিঝুম জবাবে হাসে।ছাদে এসে সুইমিংপুলের পাশে দুজন পাশাপাশি বসে।চাঁদ উঠেছে গোল থালার মতো।চারিদিক আলোকিত।ধেয়ে আসছে শীতের হাওয়া।তিতলি শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে সারা শরীরে।নিঝুম তিতলির হাতের আঙ্গুলে আঙ্গুল ঢুকিয়ে বলে,
— “ভালবাসি।”
তিতলি নিঝুমের চোখে চোখ রাখে।সে ও জবাবে বলে,
— “ভালবাসি।”

ভালোবাসা তার অন্তর্লীন মাধুর্য নিয়ে চলতে থাকে আঙ্গুলে আঙ্গুলে মাখামাখি করে, হাতে হাত রেখে, উষ্ণতার ভিতর দিয়ে। একজন প্রেমী পৃথিবীর বুকে আসে ভালোবাসারে ভালোবাসিতে। ভালোবাসায় প্রথম ও শেষ সত্য। ধরার মাঝে অধরার হাতছানি। মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে হতে ফুরিয়ে গেল ভালোবাসা ফুরাবেনা। ভালবাসা রক্তের সঙ্গে সদা প্রবাহমান। সব মানুষই ভালোবাসে কাউকে না কাউকে। প্রেমিক তার প্রেমিকাকে নানাভাবে,নানা রূপে ভালবেসে বেসে ভালোবাসার মাধুর্যকে করে তুলে আরো উজ্জ্বল।এই তো নিয়ম।তিতলি উঠে গিয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়ায়।তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ আকাশের দিকে।নিঝুম উঠে আসে।তিতলির পাশে এসে দাঁড়ায়।তিতলি ঘুরে দাঁড়ায়।নিঝুম নিজের দু’হাত তিতলির দু’পাশের রেলিংয়ের উপর রাখে।তিয়লির উপর ঝুঁকে দাঁড়ায়। বলে,

” তোমারেই ভালোবাসিতে চাই
শতরূপে শতবার
হয়তো ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে
নয় হাতে হাত মাখামাখিতে
বা চোখে চোখে কথা বলে
কিন্তু ভালোবাসিতে চাই তোমারেই ”
তিতলি দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে নিঝুমকে। আবেগ মাখা কণ্ঠে সে বললো,
— “এভাবে এতো ভালোবাসবেন না। এত ভালবাসার সইবে না, হারিয়ে যেতে পারি।”
নিঝুমের বুক ধক করে উঠে।
— “কি বলছো? কই হারাবে?কোথাও হারাতে দেবোনা।সারাজীবন ধরে রাখবো এভাবে!”
নিঝুম তিতলিকে বুকে টেনে আনে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।নিঝুমের বুকে ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে।সত্যি যদি হারিয়ে যায়?নিঝুম কাঁপা গলায় বলে,

” প্রেয়সী,
তোমাকে আমার সমস্ত অনুভূতির শিখর দিয়ে আটকে রাখবো।
হারাতে দেবোনা।
যদিও হারিয়ে যাও
ফিরতে হবে আমার বুকেই।”
তিতলি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে,
— “এতো কেনো ভালবাসেন আমায়!হারানোর ভয়টা যে কামড়ে ধরছে।”

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩৩

নিঝুমেরও বুকটা ভারী হয়ে যায়।তিতলিকে নিজের শক্তপোক্ত দু’হাতে আরো জোরে চেপে ধরে বুকের সাথে।যেন এখনি বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবে।আর যেনো বের হতে না পারে।তিতলি কাঁদছে।খুব কাঁদছে।তার খুব কান্না পাচ্ছে।এমন ভালবাসা সে হারাতে চায়না কখনোই।মুখ তুলে তাকায় নিঝুমের দিকে।নাক টানতে টানতে,কেঁদে কেঁদে বলে,

— “একবার ঠোঁট চুমু দিন না!আমার তো কোনো ছোঁয়াচে রোগ নেই।”
তিতলি আদুরে কান্না মাখা কণ্ঠে এমন আবদার শুনে নিঝুম হেসে উঠে।দু’হাতে তিতলির দু’গাল ধরে।তিতলির দু’চোখে অশ্রু।চোখ বুজতেই দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৩৫