প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৪৩

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৪৩
ইলমা বেহরোজ
আলতাফ চৌধুরীর কণ্ঠ শীতল।তিনি তিতলি আর শাহেদকে নিয়ে একটা রুমে বসেন।অনেক কাজ থাকা সত্বেও শাহেদ সেসব ভ্রুক্ষেপ না করে আলতাফের সামনে বসেন।তিতলির বুক কাঁপছে অজানা আশঙ্কায়। আলতাফ চৌধুরী ঝিম মেরে বসে রইলেন অনেকক্ষণ।তিতলি ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বাবার চোখে চোখ রাখে।শাহেদ মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আলতাফের দিকে তাকান।বলেন,
— “কোনো সমস্যা?”
আলতাফ চৌধুরী সাবধানে প্রশ্ন করলো,
— “আমি যদি অনেকক্ষণ সময় নিয়ে একটা গল্প বলতে চাই শুনবি মা? শুনবি শাহেদ?”
বাবা-মেয়ে বুঝে উঠতে পারলো না,এমন একটা দিনে বরের বাবা গল্প বলতে আসে?অনেকক্ষণ সময় নিয়ে? তবুও তিতলি বললো,
— “জ্বি বলুন।”
আলতাফ  দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। শাহেদকে বলেন,
— “শাহেদ তো জানিস,তোর ভাবির সাথে বাল্যকাল থেকে আমার ভাব ছিলো?”
— ‘সে কি আর আমি একা জানি?পুরো গ্রামই জানতো।”
আলতাফ চৌধুরী হাসলেন।তিতলির দিকে তাকান।চোখের চশমাটা ঠিক করে বলেন,
— “নিঝুমের আম্মা আর আমি এই গ্রামেরই ছিলাম।আমার যখন ১২ বছর তখন আঞ্জুর ৭ বছর। তখন থেকে আমাদের মধ্যে ভাব ছিল।আস্তে আস্তে বড় হই।এখনের ছেলে মেয়েরা ১৬-১৭ বছর বয়সেই কলেজে উঠে পড়ে।আর আমাদের সময় ১৮-২০ বছর বয়সে কলেজে উঠা হতো।স্কুলে অনেক বয়সে ভর্তি হতাম।যখন আমি এসএসসি পাশ করি তখন আমার বয়স ছিল ২০। কলেজ পড়ার জন্য ঢাকা আসতে হয়।ঢাকা আসার আগে বুঝিনি আমি আঞ্জুকে ভালবাসি।যখন ঢাকা যাই,তখন খুব মনে পড়তো আঞ্জুকে।কেঁদেছি অনেকবার একটাবার দেখার জন্য।কিন্তু ঈদের আগে সম্ভব ছিলো না গ্রামে আসার।তখন আর্থিক সমস্যা ছিল।চাইলেই পারতাম না চলে আসতে।এক বছর পর গ্রামে পা দেই।সবার আগে আঞ্জুর মুখটা দেখি।ও অপেক্ষা করছিল আমার জন্য।খুশিতে কান্না করছিল আঞ্জুমান।সুতি সালোয়ার কামিজ পরা ছিল।মাথায় ঘোমটা।সেদিন প্রথম, অন্য দৃষ্টিতে দেখেছিলাম আঞ্জুকে।বউরূপে!এরপরদিন ভোরে নদীর ঘাটে দেখা করি।আঞ্জু নাক টেনে টেনে কাঁদছিল।ষোল বছর বয়সী মেয়ে তখন সে।ঝটপট বলে দেই, ভালবাসি ।’
এইটুকু বলে আলতাফ চৌধুরী থামেন।চোখেমুখে ভালবাসার আভা ফুটে উঠেছে। দম নিয়ে আবার শুরু করেন,
— “আমি জানতাম আঞ্জু আমাকে ভালবাসে।ওর কিশোরী মনে প্রেম আছে আমাকে নিয়ে।তাই সেদিন থেকেই শুরু হয় আমাদের পাকাপাকি প্রেম।শহরে গিয়ে টিউশনির টাকায় মোবাইল কিনি।ছোট-ছোট  বাচ্চা পড়াতাম। আঞ্জু ওর দাদার ফোন চুরি করে রাতে আমায় মিস কল দিতো।আমি ঘুরাতাম।বেশ চলছিলো আমাদের প্রেম।প্রেমের ছয় মাস পরই ঝোঁক বসে মাথায়।বিয়ে করবো আঞ্জুকে।গ্রামে চলে আসি।আরমান ভাইজানের কাছ থেকে টাকা নেই।আঞ্জুকে বলি বিয়ের কথা।লুকিয়ে বিয়ে করবো।যখন চাকরি হবে ঘরে তুলে নিবো।আঞ্জু রাজি হয় সানন্দে। শহরে কাজি অফিসে গিয়ে করে ফেলি বিয়ে।সাহায্য করেছিল কয়জন বন্ধু।শাহেদও ছিল।”
আলতাফ থামেন।গলা শুকিয়ে এসেছে।তিতলি মুগ্ধ হয়ে শুনছিল।আলতাফ পানি খেতে চান শুনে রুম থেকে বের হয়ে যায় পানি আনতে।
পানি খেয়ে আলতাফ আবার শুরু করেন,
— “ভার্সিটি ভর্তি হই।পাশাপাশি একটা চাকরি পেয়ে যাই।প্রাইমারি স্কুলে বাংলা শিক্ষক পদে।
শিক্ষকতা কালে একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়।আগুন রূপ ছিল তার।যেকোনো ছেলের চোখ ঝলসে দেওয়ার মতো।আমার চোখও ঝলসে যায়।সেই মেয়ে বয়সে আমার চেয়ে বড় ছিলো তবুও বন্ধুত্ব হয় আমাদের।আঞ্জুর সাথে ফোনে কথা বলা কমিয়ে দেই।যা টাকা ইনকাম হতো, উড়াতে থাকি সুন্দরী ম্যাডামের পিছনে।প্রেমে লিপ্ত হই।বছরে একবার গ্রামে এসে আঞ্জুর বাঁধনে পড়ে যাই।ভালবাসা আর মোহর পার্থক্য বুঝি। আঞ্জু আমার ভালবাসা।নিজেকে নিজের পশু মনে হতে থাকে।গালি দেই নিজেকে।শপথ করি মনে মনে, আর ওই মেয়ের পিছনে ঘুরবো না।কিন্তু শহরে এসে আবার সেই সর্বনাশী সুন্দরীর ফাঁদে পড়ে যাই।আরমান ভাইজান তখন আমার কাছে আসেন।আমার বাসায় মেয়েটাকে দেখে বলেন,বিয়ে করে নিতে।আমিও বিয়ে করে নেই।কেনো করি জানিনা।দুইটা বছর কিসের মাঝে ছিলাম তাও জানি না।আমি যেন কোনো জাদুবলে আটকা পড়ে ছিলাম।তার কথায় একটা ক্যামেরা কিনি।যেখানেই ঘুরতে যেতাম  মেমোরি ভরে ফেলা হতো দুজনের ছবি দিয়ে।”
এইটুকু বলে আলতাফ চৌধুরী আরেকটু পানি খান।ঝিম মেরে কতক্ষণ বসে থাকেন।তারপর তিতলির দিকে তাকান।তিতলি মাথা নিচু করে বসে আছে।আলতাফ চৌধুরী ঠান্ডা গলায় বলেন,
— “জানি তিতলি তোমার এসব শুনতে অস্বস্তি হচ্ছে।হবু শ্বশুরের যৌবন কালের কুকীর্তি কে শুনতে চায়? তবুও আজ আমায় বলতে হবে।তোমায় শুনতে হবে মা।”
তিতলি বিব্রতবোধ করে।কি জন্য এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হলো তাঁর?সে মাথা নিচু করেই থাকে।শাহেদ অভিজ্ঞ চোখে আলতাফ চৌধুরীকে দেখছেন।আলতাফ চৌধুরী শুরু করেন,
— “বিয়ের ২-৩ মাস পরই মনে হলো এই মেয়েকে আমার আর ভালো লাগছে না।এমনকি কোনো মেয়েকেই না।বার বার আঞ্জুর মুখটা চোখে ভাসছিল।প্রতিটি মুহূর্ত যন্ত্রনায় ভুগতে থাকি।যে সুন্দরীকে পেতে আঞ্জুকে অনেক অবেহেলা করেছি, সেই সুন্দরীর রূপও তখন আমার কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে।বার বার মনে হতে থাকে, আমার স্বপ্ন ছিলো আঞ্জুকে নিয়ে একটা সংসার হবে। টুনাটুনির মতো মিলেমিশে থাকবো।কিন্তু সেটা আমার জন্যই হয়নি। নিজেকে নিজেরই খুন করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো বার বার।ডিপ্রেশনে পড়ে যাই।কেমনে এই মেয়েকে ডিভোর্স দেই? আঞ্জু আমার দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনলে কি হবে? মেয়েটা মরে যাবে একদম!একদিন কল করে বলে ফেলি আঞ্জুকে, আমি আরেকটা বিয়ে করেছি।ভুল হয়েছে আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি তোমাকেই চাই। তাকে আমার ভাল লাগে না।
তারপর উত্তরে কিছু বলেনি আঞ্জু।এরপরদিন শুনি,  পোকামাকড় মারার বিষ খেয়েছে আঞ্জুমান।ওই সময়টাতে আমার কি হয়েছিল আমি আজও ব্যাখ্যা করতে পারব না।”
আলতাফ চৌধুরীর গলা কাঁপছে।মাথা নিচু করে কাঁদছেন তিনি।তিতলির বুকটা ভার হয়ে আসে।কান্নারা গলায় এসে থেমে গেছে।অস্ফুটে স্বরে তিতলি বললো,
— “তারপর?”
আলতাফ চৌধুরী চোখের জল মুছে বললো,
— “বেঁচে যায় আঞ্জুমান।কেঁদে ওর দু’হাত ধরে মিথ্যে বলি।”
— “কি মিথ্যে?”
— “বলি, আমি মজা করে এসব বলছি।আরো অনেক কিছুই বানিয়ে বলি।সিদ্ধান্ত নেই, দ্বিতীয় স্ত্রীর পায়ে পড়ে হলেও ডিভোর্স নিবো।ঢাকা এসে মেয়েটার পায়ে পড়ে কাঁদি আমায় ডিভোর্স দিতে।চিৎকার করে বলি, আমার আঞ্জুকে নিয়ে আমি বাঁচতে চাই।আমার আঞ্জুকে নিয়ে সুখে সংসার করতে চাই। মেয়েটা রাজি হয়নি।বলে, ডিভোর্স দিবেনা।তবে,কখনো আমার সামনে আসবে না।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে।দায়িত্বে কখনো কমতি হলে বউয়ের অধিকার নিয়ে সামনে দাঁড়াবে।কোনো কিছুতেই যখন ডিভোর্স দিচ্ছিলো না বাধ্য হয়ে তার শর্ত মেনে নেই।সত্যি সে, দূরে চলে যায়।আঞ্জুকে ঘরে তুলে আনি।গ্রামে চলে আসি।ব্যবসা শুরু করি।সুখে সংসার করি ।সব আবদার পূরণ করি।প্রথম ৩-৪ বছর ভয়ে ছিলাম কখন না সংসারে আগুন নিয়ে আসে ওই মেয়ে।কিন্তু আসেনি।নিঝুম-নির্জন একসাথে আসে।গ্রামে ওদের প্রাইমারি অব্দি পড়িয়ে সিলেট চলে আসি।সিলেট আরমান ভাইজান ব্যবসা করতেন।তাই আমিও এসে ব্যবসা শুরু করি।ব্যবসায় লাভ হতে থাকে ধীরে ধীরে।একসাথে নিজের সংসার,আর সেই মেয়ের চাহিদা ভালোভাবেই চালাতে সক্ষম হই।ছেলেরা কলেজে উঠে,মেয়েরা স্কুলে।তবুও মেয়েটা আমার সামনে আসেনি কখনো।অধিকার চায়নি।কিন্তু,জানো মা? আমি আতঙ্কে ছিলাম সবসময়। এই বুঝি আমার সংসার শেষ হবে। পাপ কখনো ছাড়ে না।এটা চিরন্তন সত্য।৬ বছর আগে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করি অনেক টাকা অফার করি বিনিময়ে ডিভোর্স দিতে।আমায় একটু শান্তি দিতে।কিন্তু দেয়নি।তার কণ্ঠ শুনে বুঝেছি তার সেই সুন্দর যৌবন নেই আর।বয়সের ছাপ পড়েছে।কিন্তু জেদ এখনো আছে।কিছুতেই ডিভোর্স দিবে না।আমিতো তার জীবনও নষ্ট করেছি।’
শাহেদ বিরক্তি নিয়ে বললো,
— “এসব বিয়ের পরও তো শুনাতে পারতি।আজই কেনো? বিয়ের দিনই কেনো?”
আলতাফ চৌধুরী শাহেদের কথার উত্তর না দিয়ে অন্য কথা বলেন
— “যেদিন তোর ভাবি শুনলো তুই আরেকটা বিয়ে করেছিস।তোকে কতো বকেছে!কয়দিন তো সারাদিনই বকেছে।জেসমিন ভাবীর কষ্ট হয় অনেক।কোনো বউই স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না।এমন কত-শত কথা বলতো।তখন আমার ভয়ে বুক কাঁপতো।আমারো যে আরেকটা স্ত্রী আছে!”
অনেক্ষব তিনজনই নিশ্চুপ। তারপর আলতাফ চৌধুরী বললো,
— “গতকাল সকালে একটা কল আসে।আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর কল।দেখা করতে চায়।কলিজা আমার শুকিয়ে আসে।একবার ভাবি,খুন করে ফেলবো মহিলাকে।তারপর নিজেকে ঠান্ডা করে।দেখা করতে যাই।পাশে তার আমার বড় ভাই ছিল।শুনি, সে আমায় ডিভোর্স দিতে চায়!”
তিতলির চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো।খুশিতে ডগমগ হয়ে বললো,
— “আল্লাহ ভরসা! আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছেন।”
আলতাফ চৌধুরীর গাঁট হয়ে বসে থাকেন অনেক্ষণ।তারপর আচমকা তিতলির পায়ের কাছে বসে পড়েন নিস্তেজ শরীর নিয়ে।তিতলি চিৎকার করে উঠতে চাইলে,আলতাফ চৌধুরী বলেন,
— “উঠোনা মা।বসে থাকো।”
— “এভাবে বসেছেন কেনো?”
আলতাফ কাঁপছে। শাহেদ উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
— “আলতাফ কি হইছে তোর? এমন করছিস কেনো?”
আলতাফ মাথা নিচু করে বলেন,
— “কিন্তু আবারো শর্ত দিয়েছে সে।নিঝুমের বিয়েটা ভাঙ্গতে হবে।তোমাকে নিঝুমের থেকে দূরে চলে যেতে হবে।রিদির সাথে নিঝুমের বিয়ে হতে হবে।নয়তো সে সামনে এসে দাঁড়াবে আমার পরিবারের।তার কাছে প্রমাণ হিসেবে,আছে অনেক ছবি আর বিয়ের দলিল।আমার আঞ্জু মরে যাবে…. “
তিতলি স্তব্ধ হয়ে গেল।মেরুদণ্ড বেয়ে যেনো একটা শীতল স্রোত গড়াগড়ি খেলো।শাহেদ হুংকার দিয়ে উঠেন,
— “মানে?কি বলছিস? আমার মেয়েকে বলি বানাবি নাকি?”
— “শাহেদ বিশ্বাস কর আমি জানতাম না রিদি নিঝুমকে ভালবাসে।আর আমারোই আপন ভাই আমায় ছুরি মারবে।”
— “আরমান?তোর বড় ভাই মহিলারে নিয়ে আসছে?”
আলতাফ মাথা নাড়ায়।তারপরই আর্তনাদ করে তিতলিকে বললো,
— “আমার সংসারটা বাঁচাবে মা? আমার আঞ্জুকে বাঁচাবে? এসব জানাজানি হলে,আমার ছেলে-মেয়েরাও ভেঙ্গে পড়বে।আলাদা হয়ে যাবে আমার থেকে।”
তিতলি ঠায় বসে আছে।হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছে দ্রুত গতিতে।শ্বাস বন্ধ কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে সামলিয়ে বললো,
— “আপনার ছেলে আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে না।”
— “রিদি খুব ভালো মেয়ে মা।ও ঠিক সামলে নিবে।”
তিতলি মাথা ঘুরিয়ে যাচ্ছে। বিছানায় সে বসেছিল। তার সামনের টুলে ছিল আলতাফ। সে বিছানার চাদর খামচে ধরে।আলতাফ চৌধুরী তিতলির পা ধরতে গেলে, তিতলি দ্রুত পা তুলে বিছানায়।বলে,
— “প্লীজ এমন করবেন না।”
— “মা আমায় রক্ষা করো? আমার সংসার রক্ষা করো?”
আলতাফ কাঁদছেন।শাহেদ হতভম্ব।কি হচ্ছে? কি হওয়ার কথা ছিল?তিনি স্বার্থপর না।কিন্তু তার মেয়ের সুখ?স্বার্থপর যে হতে হবেই! তিনি বলেন,
— “দেখ আলতাফ তুই ভুল করেছিস।ভুলের শাস্তি পাবি।তার জন্য আমার মেয়ে এতো বড় ত্যাগ করবে না।”
— “আঞ্জু কিছু করে বসলে,তিতলিও যে নিঝুমের সাথে সুখী হবেনা।” আলতাফ চৌধুরীর তরঙ্গহীন স্বর।
— “তবুও,আমার মেয়ে করবে না এতো বড় ত্যাগ।”
আলতাফ চৌধুরী অসহায় দৃষ্টিতে তিতলির দিকে তাকান।তিতলি চাদরের ফুল বরাবর তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে, প্রাণহীন মৃত লাশ বসে আছে।
আলতাফ অনেক্ষণ অপেক্ষা করেন তিতলির উত্তরের জন্য।কিন্তু তিতলি নড়ছে না।তিনি নিরাশ হয়ে উঠে দাঁড়ান।একবার তিতলির দিকে তাকান আরেকবার শাহেদের দিকে।তারপর বেরিয়ে যান।আলতাফ চৌধুরী যাওয়ার কয়েক মিনিট পার হয়।শাহেদ তাকিয়ে আছেন মেয়ের দিকে।কি ভাবছে এতো মেয়েটা? তিনি বলেন,
— “তিতলি? তোর নিঝুমকে ছাড়তে হবে না। বিয়ে হবে তোদের।”
তিতলি প্রানহীন চোখে তাকায় বাবার দিকে।তারপর বললো,
— “সব তো শুনলে? বিয়ে হওয়ার পর কি সুখী হবো আমি বাবা?যখনি পা দিবো ওই বাড়িতে তখন থেকেই ঝড় শুরু।সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।আঞ্জুমান ফুফি সত্যি মানতে পারবেন না এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা। “
— “তুই কি বিয়েটা করবিনা ভাবছিস?”
তিতলি হাসলো। তারপর বললো,
— “আঞ্জুমান ফুফির কাছে যতদিন ছিলাম মনে হয়নি,আমার মা নেই বাবা।”
— “নিঝুম? নিঝুম বিয়ে ভাঙ্গতে দিবে?”
— “ভাঙ্গবো না! পালাবো!”
— “তিতলি?”
— “বাবা।বিয়েটা করে আমি শান্তি পাবো না।সারাজীবন অনুশোচনায় ভোগবো।”
শাহেদ বাকরুদ্ধ। জিভ ভারি হয়ে এসেছে যেন। তিনি কি করবেন?এই বয়সে এসে এ কোন সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে মেয়েকে নিয়ে তলিয়ে যাচ্ছেন!
কিছু ভুল,কিছু পাপ এভাবেই কি সারাজীবন শাস্তি নিয়ে আসে? শ্বাসরুদ্ধকর কষ্ট নিয়ে আসে?আচ্ছা? আলতাফ চৌধুরীর ভুলের মাশুল তিতলিকে কেনো দিতে হচ্ছে?উনার ছেলেকে ভালবাসার জন্য? নাকি আলতাফ চৌধুরীর ছেলে নিঝুমের বুক থেকে তার কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে রক্তাক্ত করার জন্য!এতে আলতাফ চৌধুরীর শাস্তি টা কীভাবে হয়? ছেলের কষ্টেই বাবার কষ্ট!তাই বুঝি এতো প্যাঁচিয়ে কষ্ট আদান-প্রদান  হচ্ছে একজন থেকে আরেকজন?

1 COMMENT

Comments are closed.