প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৫

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৫
ইলমা বেহরোজ

তিতলির বুকে হাতুড়ি পেটা বেড়ে চলেছে।এইটুকু পথ যেনো শেষই হচ্ছেনা।নিঝুমের রুমে দ্বিতীয়বারের মতো যাচ্ছে।গত শনিবার দুপুরের পর থেকে নিঝুমকে আর দেখেনি তিতলি।আজ সোমবার।এক্সাম দিয়ে এসে ঘুমিয়েছে।ঘুম থেকে উঠেছে বিকেলে।এমন সময়ে নিঝুম নিজ ঘরে ব্যাস্ত থাকে।তিতলির চোখ দুটো উদগ্রীব হয়ে আছে নিঝুমকে দেখতে। তাই আর দেরি না করে নিঝুমের কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।মনে মনে নিজেকে প্রবল সাহস দেয়।নার্ভাস হওয়া চলবেনা কিছুতেই।দরজা খোলা ছিল।তিতলি হালকা করে দরজায় টোকা দিয়ে বললো,

— “ভাইয়া, আসতে পারি?”
নিঝুম চোখ তুলে তাকায়।ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললো,
— “হুম আসো।”
— “বসবো ভাইয়া?”
— “এটাও জিজ্ঞাসা করতে হয়?বসো।”
তিতলি সোফায় বসে।নিঝুমের দিকে তাকায়।নিঝুম ডায়রীতে কিছু লিখছে।তার উপর কোনো আগ্রহই নেই দেখছি।তিতলির মন খারাপ হয় খুব।পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে স্পষ্ট করে বললো,
— “আমি এসে কি বিরক্ত করেছি ভাইয়া?”
— “না।আমি কি বলেছি? ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিঝুম উত্তর আর প্রশ্ন ডায়রীতে তাকিয়েই দিলো।তিতলি অপমানে কটমট করে তাকায়।এরপর এক হাত গালে রেখে ভাবে,
— “এতো অবহেলার কি দরকার? আমার উপর কি নজর পড়েনা আপনার? আমি কি এতোটাই খারাপ দেখতে?এতোটাই কুৎসিত।”
মুখে বিনয়ীর সাথে বলে,
— “আমার তো এক্সাম শেষ।আপনার কাছ থেকে একটা বই নিতে আসছিলাম”
নিঝুম লিখাতে মগ্ন থেকেই জবাব দেয়,
— “নিয়ে নাও যেটা ইচ্ছা।”
তিতলির রাগ উঠে।কিন্তু তা প্রকাশ করেনা।তার ইচ্ছে হচ্ছে নিঝুমের চোখ থেকে চশমাটা খুলে চুরমার করে ভেঙ্গে দিতে।আর….আর ডায়রীটা টেনে নিয়ে কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেলতে।কিন্তু সে অধিকার তাঁর নেই।আর এরকম বেয়াদবি মনে আসলেও কখনো সে করে না।সে ভেতরে ভেতরে রাগে ফেটে গেলেও উপরে খুব ঠান্ডা ভাব নিয়ে বুকসেলফের দিকে যায়।একটার পর একটা উপন্যাস দেখতে থাকে।একটা ইংলিশ উপন্যাসে চোখ আটকে যায়। নাম ফিফটি শেইডস অফ গ্রে।বইটা হাতে নিয়ে সোফায় এসে বসে।নিঝুম জিজ্ঞাসা করে,

— “কোনটা নিলে?”
তিতলির বই খুলে জবাব দেয়,
— “ফিফটি শেইডস অফ গ্রে।”
নিঝুম ডায়রী বন্ধ করে।চমকে তাকায় তিতলির দিকে।বলে,
— “বইটা দাও!এটা পড়তে হবেনা।”
— “কেনো ভাইয়া?আমার তো এটাই পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।”
নিঝুম বিছানা থেকে নেমে বলে,
— “এটা বড়দের বই।দাও।’
তিতলি অবাক হয়ে তাকায়।বলে,
— “আমিতো বড়ই।আঠারো বছর।বিয়ের বয়স।”
— “আরো বড় হয়ে পইড়ো।এখন দিয়ে দাও।”
— “না দেবনা।”
— “জেদ করোনা দাও।”
— “আপনি জানেন আমি…আমি বড়দের অনেক উপন্যাস পড়েছি।ইংলিশ উপন্যাস।”
— “তুমি কিনে পড়িও।কিন্তু আমার কাছ থেকে বড়দের বই পড়তে পারবেনা।”
— “কেনো?”
— “বুঝবেনা।দাও বইটা।”

তিতলি নিঝুমের সাথে তাল মিলিয়ে নাছোড়বান্দা গলায় বলে,
— “দেব না।”
— “বইটা দিয়ে দাও।যা চাইবে দেব।”
তিতলি সুযোগটা হাত ছাড়া করতে পারেনি।মুহূর্তে দ্বিগুণ সাহস বেড়ে গেছে।যেকোনো মূল্যে নিঝুমকে পাশে পাশে চাই তার।তিতলি নিঝুমের চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে বলে,
— “সত্যি দেবেন?”
— “হুম দেব।বই দাও।”
— “আমাকে চা বাগান দেখাতে নিয়ে যাবেন?প্লীজজজ।”
নিঝুম তিতলির হাত থেকে চট করে বইটা কেড়ে নেয়।এরপর হেসে বললো,
— “তুমি আসলেই একটা বাচ্চা।এভাবে জব্দ করে বাচ্চারাই আবদার করে।আচ্ছা কাল দুপুরে হস্পিটাল থেকে এসে নিয়ে যাবো।”

নিঝুম বইটা জায়গা রেখে বলে,
— “কি খাবে?অবশ্যই কফি?’
— “হুম।”
— “অন্য বই খুঁজে নাও।আসছি।”
তিতলি মাথা ঝাঁকায়।নিঝুম চলে যেতেই শেলফের দিকে আসে।বাবলি নামের একটা বই বেছে নেয়।বইটা নিয়ে ব্যালকনিতে আসে।ভয়ংকর সুন্দর ব্যালকনি।লতা-পাতার টব ঝুলানো।দু’ কর্ণারে বেতের বল সোফা।মাঝে সেন্টার টেবিল সেটাও বেতের।বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাস সাঁ সাঁ করে আসছে।টবের পাতা মৃদু দুলছে।সেই সাথে তিতলির চুল।ডান পাশের সোফায় বসে তিতলি বই খুলে।তখন নিঝুম আসে।তিতলির দিকে কফি এগিয়ে দিয়ে বলে,
— “তুমি এখানে আর আমি রুমে এসে ভাবি মেয়েটা গেলো কই।”
তিতলি নিঝুম একসাথে হাসলো।নিঝুম নিজের কফিতে এক চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

— “এখন কোন বইটা নিলে?”
— “বাবলি।”
নিঝুম চুলে হাত বুলিয়ে ঠোঁট কামড়ে হালকা হাসে। আর বললো,
— “শুধু লাভ স্টোরি পড়তে ইচ্ছে করে কেনো?”
— “এটা প্রেমের গল্প জানতামনা।”
— “এখন তো জানলে।বইটা রেখে কাঁটাসিরিজ বা মিসির আলী এনে পড়ো।”
তিতলির বলতে দ্বিধা লাগলেও সাহস নিয়ে প্রশ্ন করে,
— “প্রেমের গল্পতে এতো অনীহা কেনো আপনার?”
— “একসময় তোমারও ভালো লাগবেনা। কম বয়সে আমারো অনেক ভালো লাগতো। এখন আর ইন্টারেস্ট পাইনা।”
— “মানে?অল্প বয়সে পড়েছেন।আমারো তো অল্প বয়স।তাহলে আমি পড়ি।”
নিঝুম হেসে উত্তর দেয়,

— “আচ্ছা পড়ো।”
— “কই যাচ্ছেন?”
— “রুমে যাই।তুমি পড়ো।”
— “আমার একা থাকতে ভালো লাগেনা।দু’কর্ণারে তো দুটো সোফা।আপনি ওই কর্ণারে এসে বসেন। আর আপনার কাজ করেন।আমি উপন্যাস পড়ি।”
নিঝুম বাইরের পরিবেশ দেখে বলে,
— “আজকের দিনটা সুন্দর।এখানে বসে কবিতা লিখলে ভালোই লাগবে।আচ্ছা আসছি।”
নিঝুম কবিতা লিখে শুনে তিতলি মুগ্ধ হয়ে থ মেরে থাকে।নিঝুম আসতেই বইয়ে নজর দেয়।নিঝুম তিতলির উদ্দেশ্যে বললো,
— “বইটা রুমে নিয়ে পড়িও।আমার সামনে পড়তে তোমারই অস্বস্তি হবে।লজ্জা পাবে।”
— “আপনার কোনো কথা শুনছিনা।আমি এখানেই পড়বো।’

নিঝুম বুঝে যায় তিতলি আর কথা শুনবেনা।মেয়েটা লাজুক হলে ঘাড়ত্যাড়া।অনেক্ষণ পার হয়ে যায়।বইটা আর পড়তে পারছেনা তিতলি।দু’টি প্রধান চরিত্রের খোলামেলা অনুভূতি বইটায়।তিতলি আড়চোখে নিঝুমের দিকে তাকায়।নিঝুম মনোযোগ সহকারে লিখছে।তিতলির গাল লাল টুকটুকে হয়ে আসে।কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে।কানের লতি গরম হয়ে আসে।শরীরটাও অবশ মনে হচ্ছে লজ্জায়।বইটা চট করে বন্ধ করে দেয়।এতোটা লজ্জা হয়তো পেতোনা যদি নিঝুম পাশে না থাকতো।আবার নিঝুম শুরুতেই না করেছিল বইটা পড়তে।নিঝুম তিতলির দিকে না তাকালেও বুঝতে পারে তিতলি অনেকটা পড়ে ফেলছে এবং লজ্জা পাচ্ছে।এখন সে তাকালে তিতলি হার্ট এ্যটাক করতে পারে।তবুও নিঝুমের মাথায় দুষ্টুমি আসে।ইচ্ছে হয় একবার তাকিয়ে দেখি কি হয়।নিঝুম তাকায় তিতলি চোখ সরিয়ে নেয়।সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।লজ্জাটা স্পষ্ট হয়ে গেছে চোখে,মুখে।লুকানো আর সম্ভব না।মেরুদণ্ড সোজা রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।নিঝুম ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে প্রশ্ন করে,

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৪

— “কি হলো তিতলি?”
তিতলি ঢোক গিলে।দৃষ্টি অস্থির রেখে জবাব দেয়,
— “ফুফি আম্মা ডাকছিলেন।ভুলেই গিয়েছি।আসি…আমি আসি।”
কথা শেষ করেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে পড়ে।নিঝুম দরজার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসতে থাকে।অদ্ভুত মেয়ে।আসে শান্তভাবে।ফিরে যায় ঝড়ের গতিতে।তিতলি রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি পার হয় দৌড়ে।তিতলিকে লজ্জামাখা মুখ নিয়ে দৌড়ে রুমে ঢুকতে দেখে মিসেস আঞ্জুমান সিঁড়িতে থমকে দাঁড়ান।

প্রজাপতি আমরা দুজন পর্ব ৬