প্রণয় আসক্তি সিজন ২ গল্পের লিঙ্ক || লেখিকাঃ মাহযাবীন

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১
লেখিকাঃ মাহযাবীন

“আমি প্রেগন্যান্ট মা।এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তোমরা চাও আমি যেনো আমার স্বামীকে ডিভোর্স দেই?”
মিয়ামি চিৎকার করে উক্ত প্রশ্নখানা করে তার মাকে উদ্দেশ্য করে।চোখমুখজুড়ে বিস্ময় ছেয়ে আছে মেয়েটার।সে ভাবতেই পারছে না তার মা এই পরিস্থিতিতে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছেন। মিয়ামির মা অর্থাৎ মেহরিন বেগম ব্রু কুঁচকে ফেলেন মুহুর্তেই।রাগী কন্ঠে বলে ওঠেন,

-চিৎকার করবি না মিয়ু।আমরা যা বলছি তা সবদিক ভেবেই বলছি।
উত্তর দিতে বিলম্ব হলো না মিয়ামির।একরাশ অভিমান ও ক্ষোভ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো,
-আমার বাচ্চা পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই তাকে তার বাবার আদর থেকে বঞ্চিত করতে চাচ্ছো তোমরা। আর বলছো সবদিক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়ের এ প্রশ্নে মৃদু ঢোক গেলেন মেহরিন বেগম।এক দন্ড নিরব থেকে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠেন,
-ভবিষ্যৎ ভেবেছিস?আজ পরিবারের মাঝে জানাজানি হয়েছে আর্শ ড্রাগ অ্যাডিক্টেড।কাল আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপড়শি এ খবর জানবে।তখন কী হবে?সমাজে মুখ দেখাতে পারবো আমরা? সবাই তোর সন্তানকে দেখে বলবে ঐযে নেশাখোরের সন্তান।এই সমাজ আর্শের সন্তানকে সহজভাবে মেনে নেবে কখনো?ভাব, তোর সন্তান স্কুলে গেলো আর তার সাথে কেউ বন্ধুত্ব করতে চাইলো না,বাবা নেশাখোর বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলো তখন?ভবিষ্যৎ ভেবেছিস একবারো?

মায়ের এমন প্রশ্নে হৃৎপিণ্ডে এক অদ্ভুত পীড়া অনুভব করলো মিয়ামি।এক মুহূর্তের জন্যে ভয়ংকর ভয় জন্ম নিলো তার হৃদয়ে।প্রশ্ন জাগলো, “আসলেই কী আমার সন্তানকে এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কখনো?”
কিন্তু পরমুহূর্তেই সে এ ভয়কে নিজের বিশ্বাস দ্বারা পরাজিত করে দমিয়ে দিলো।বিশ্বাস আনলো স্রস্টার হুকুমে সে পূর্বের ন্যায় আবারও আর্শকে সুস্থ করে তুলবেই।

একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টেড মানুষ ড্রাগ ছেড়ে দিলেও আশংকা থাকে যে সে পূণরায় ড্রাগে আসক্ত হয়ে পরবে।বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়।আর্শের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে।আর এবারও মিয়ামি প্রস্তুত আর্শের হাত শক্ত করে ধরে তাকে সেই আসক্তির অন্ধকার জগৎ হতে ফিরিয়ে এক আলোকিত জীবনে নিয়ে আসতে।
নিজের বিশ্বাসের উপর বিশ্বাস রেখে মিয়ামি বলে উঠলো,

-আমার আর্শ নেশাখোর না, মা।মানুষ অসুস্থ হয় না? অসুস্থ হলে যেমন ট্রিটমেন্ট নিলে মানুষ ঠিক যায় তেমন আর্শও ঠিক হয়ে যাবে।একটু বিশ্বাস রাখ অন্তত নিজের মেয়ের উপর,আমি মিথ্যা বলছি না।আর্শ সত্যিই ঠিক হয়ে যাবে।
এ মুহূর্তে মিয়ামির বলা উক্ত বাক্যগুলো ভীষণ রকমের অযৌক্তিক ঠেকলো মেহরিন বেগমের কাছে।বিরক্ত হলেন তিনি।

ভাবলেন, মিয়ামি আর্শের ভালোবাসায় এতোটাই অন্ধ যে সে সদাসর্বদার ন্যায় এবারও মনকে উপেক্ষা করে মস্তিষ্ক ব্যবহারে অক্ষম হচ্ছে।এমনটা ভাবতেই খানিক রাগও হলো তার।মেয়েকে শাসিয়ে বলে উঠলেন,
-মিয়ু,কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি।আমি ও তোর বাবা এখন থেকে তোকে যা যা বলবো তা তুই শুনবি।
ক্ষোব,অভিমানের সাথে একরাশ রাগও যুক্ত হওয়ায় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো মিয়ামির।নিজেকে যথাসম্ভব সংযত রেখে সে বলে উঠলো,

-স্যরি মা,আমি বাধ্য নাহ।
দৃঢ়তার সাথে উক্ত বাক্যখানা বলে মিয়ামি এগিয়ে যেতে আরম্ভ করলো সদর দরজার দিকে।উদ্দেশ্য নিজের শশুর বাড়ি পৌঁছানো।
মিয়ামি সদর দরজা অব্দি পৌঁছাবার আগেই তার কর্ণকুহরে ভেসে আসে মেহরিন বেগমের কন্ঠস্বর।
মেহরিন বেগম কঠিন স্বরে বললেন,

-তুই যদি এ বাড়ির বাইরে এক পা ও রাখিস তাহলে মনে রাখবি মিয়ু আজকের পর থেকে তোর আর আমাদের সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে।বাপ-মাকে ছেড়ে স্বামীর হাত ধরবি কিনা সে সিদ্ধান্ত এখন তোর।

শীতের সকাল।চারপাশটা কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে।দেখতে,ঘোলাটে সবুজ শ্যামল সতেজ পরিবেশ।গ্রামে শীতের সকালটা ভীষণ বিশেষ অনুভূতি জাগায়।এখানে ঘরে ঘরে সকাল হয় ফজরের আযানের সাথে সাথে।মুসলিম ঘরগুলোয় ইবাদত শেষ হতেই শুরু হয় কোমরে কাপড় বেঁধে সংসারের কাজ।কেউ কেউ ঘর ও উঠান ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করে রান্নাঘরে ঢোকে রাঁধবার উদ্দেশ্যে।আবার কেউ কেউ পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজ রেখে আগেই উনুনে আগুন জ্বালিয়ে রান্নার কাজ ধরে।পরিবারের ছোটরাও সাত সকালে উঠে পরে।মায়ের কাজে সাহায্য করে নয়তো বেড়িয়ে পরে পুরো গ্রাম চরিয়ে বেড়াতে।

প্রায় ২ বছর পর আর্শি নিজের দেশের বাড়ি অর্থাৎ গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে ২ দিন হলো।পুরোনো ছোটবেলার সকল স্মৃতি ও মনোমুগ্ধকর শীতের সকাল কাঁপতে কাঁপতে উপভোগ করছে সে।এইযে দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার মতো ভয়ংকর শীত, এ যেনো এক ভিন্ন রকমের সুন্দর অনুভূতি জাগায় হৃদয়ে।শহরে এমন শীত মিলা অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার।আর তাই-ই যেনো এ শীত গ্রামের পরিবেশকে আরও বিশেষ বানায়।

শরীরে ৩-৪ টা কাপর জড়িয়ে মাটির রাস্তা ধরে একা একাই হাঁটছে আর্শি।তার ও বিহানের দেশের বাড়ি একই গ্রামে।আর্শি শহরে থাকলেও বিহান এ গ্রামেই থাকে।তাই তো গ্রামে আসার পর থেকেই আর্শির হৃদয় ব্যাকুল হয়ে আছে এক নজর বিহানের দেখা পাবার উদ্দেশ্যে।হাঁটার মাঝেই হটাৎ আর্শির মনে হলো এখনই সুবর্ন সুযোগ বিহানের সাথে দেখা করার। যেহেতু সে এখন একা আর হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাইরে অব্দি এসে পরেছে তাই আর কোনো ঝামেলা নেই।

এ বিষয়টি মাথায় আসতেই আর্শি ডায়াল করে বিহানের নাম্বার।ঘুমে বিভোর বিহানের ঘুম ভাঙে ফোনের রিংটোনের শব্দে।আধো আধো চোখ খুলে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই খানিকটা অবাক হয় সে।তৎক্ষণাৎ কল রিসিভ করে কানে তোলে।ফোনের ওপাশ হতে আর্শির চাপা কন্ঠস্বর শোনা যায়।

-আসসালামু আলাইকুম, একটু আসতে পারবেন? ৫ মিনিটের জন্য?
-কোথায়?
-আমার বাড়ির সামনে।
-আচ্ছা।
কল কেটেই হুড়মুড়িয়ে উঠে ওয়াশরুমে ঢোকে বিহান।

“আব্বায় আমার বিয়া ঠিক করছে শীতল ভাই”
সাত-সকালে তাড়াহুড়োয় দাঁত মাজার মাঝেই কুহেলির কন্ঠে উক্ত বাক্যখানা কানে আসে শীতলের।মুহুর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় সে।তাকায় সবে মাত্র তার পাশে এসে দাঁড়ানো কিশোরীর পানে।বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
“তোর বিয়ের বয়স হইছে? সাত-সকালে মজা মারোস?”

কুহেলি নিচের দিকে তাকিয়েই মাথা নাড়ে।নিম্ন কন্ঠে বলে ওঠে,
“শীতল ভাই,আমার না ডর লাগতাছে।কাইল রাইতে আব্বা আম্মারে কইতাছিলো ঢাকা দিয়া পাত্র আইবো আমারে দেখতে।আমার কি বিয়া হইয়া যাইবো শীতল ভাই?”

শীতল সবটা শুনে দু’দন্ড নিরব থেকে আবারও দাঁত মাজায় মনোনিবেশ করে।দাঁত মাজতে মাজতে বলে ওঠে,
“হইতে পারে।হইলে অবশ্য ভালোই হইবো।ঢাকার উচ্চ পদস্থ কোনো এক স্যারই আইবো হয়তো।পেট হইবো ঢামপেট।ঢামপেট মানে বুঝোস?”
প্রশ্ন ছুঁড়ে শীতল তাকায় কুহেলির পানে।কুহেলি নিরব, নির্বাক।তার শান্ত দৃষ্টি হতে চোখ সরিয়ে শীতল নিজেই বলতে আরম্ভ করে,

“আরে ঢামপেট হইতাছে ড্রাম পেট।যেডায় তুই ভালো তবলা বাজাইতে পারবি, বুঝলি?আর চান্দেও মাল থাকবো না।ঐহানেও চাইলে তবলা বাজাইতে পারবি।মানে দুই দুইটা তবলা ফ্রীতে পাইয়া যাবি।আর তোর তো গান বাজনা ভাল্লাগে।মানে সোনায় সোহাগা।তাই ঢাকাইয়া স্যারগো লগে তোর বিয়া হইলে মন্দ হইবো না, হইবো?”
নিরব কুহেলি এবার মুখ খোলে।বলে ওঠে,

“ভালাবাসলে ঢামপেট আর চান্দে মাল না থাকলেও মনে সুখ থাহে।আর যার প্রতি ভালাবাসা থাহে না সে সালমান খান হইলেও মনে সুখ থাহে না।আমি এই বিয়া করতে চাই না শীতল ভাই। আমি যারে ভালাবাসমু আমি তারেই বিয়া করমু।
আফনারে তো আব্বা মেলা ভালো ঠেহে আপনি একটু তারে বুঝাইতে পারবেন আমারে এহন বিয়া না দেওয়ার জন্যি?”
কুহেলির দিকে একবার ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে পুকুরের পানির কাছে গিয়ে বসে পড়ে শীতল।কুলি করে, মুখ ধুয়ে আবারও পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়ায় সে।গলায় ঝুলানো গামছা দ্বারা নিজের মুখশ্রী মুছতে মুছতে সে বলে ওঠে,

“কিরে কেউরে ভালো টালো বাসিস নাকি?”
শীতলের এহেন প্রশ্নে কুহেলি স্তব্ধ রয় কয়েক দন্ড।হাজারো দ্বিধা-দন্ধের মাঝেই সে নিম্ন স্বরে বলে ওঠে,
“না”

এই ছোট্ট উত্তর খানা দিয়ে আর দাঁড়ায় না কুহেলি।দৌড়ে শীতলের দৃষ্টি সীমার আড়াল হয় সে।
কুহেলি সে স্থান ত্যাগ করতেই বিনা শব্দে হেসে ওঠে শীতল।সে জানে কুহেলি মিথ্যে বলার সময় ঠিক এভাবেই অস্থির হয়ে ওঠে।তার অশান্ত চোখের মনি, হাত কচলানোর গতি সবটাই বক্ত্য করে দেয় যে সে মিথ্যে বলছে।

যতটা দ্রুত সম্ভব বিহান এসে হাজির হয় আর্শির বাড়ির ধারের এক পুকুরের সামনে।এসেই কল করে মেয়েটাকে জানায় তার উপস্থিতির খবর।কয়েক মিনিটের মাঝেই হয়তো মেয়েটা চলে আসবে আর তারই অপেক্ষায় প্রহর গুনতে আরম্ভ করলো বিহান।বিহান জানে না কেনো সে মেয়েটার এক ডাকে এভাবে চলে আসলো!কেনো তার মাঝেও মেয়েটাকে দেখার উত্তেজনা!

তার এসবের উত্তর জানা নেই।সে শুধু জানে এ মুহূর্তে তার হৃদয় মেয়েটাকে একটুখানি দেখতে উৎসুক ভীষণ।
১-২ মিনিটের মাঝেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো আর্শি।হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন নিজের গতি বাড়িয়ে ঘোড়ার বেগকেও যেনো হার মানিয়ে দিচ্ছে।”এতো সুন্দর কেনো ছেলেটা?” মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে সে।ছেলেটার গম্ভীর মুখপানে চেয়ে প্রশ্ন করে ওঠে,

“আচ্ছা আপনার মন কী জিম করে?”
এমন এক উদ্ভট প্রশ্ন কর্ণকুহর অব্দি এসে পৌঁছাতেই সামান্য ব্রু কুঁচকে নিজের ডানে ফেরে বিহান।দৃষ্টি রাখে সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা এক রমণীর কৌতূহলী নয়নে।ক’সেকেন্ড নিস্তব্ধ রয় সে।মেয়েটার মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের মাঝে চলা উত্তেজনা লুকিয়ে নেয় মুহূর্তেই।যেনো প্রকাশ করায় কঠিন নিষেধাজ্ঞা।অতঃপর সে মৃদু ব্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ওঠে,

-হু?
জিহ্বা দ্বারা নিজের ওষ্ঠ ভিজিয়ে নিয়ে রমণী বলে ওঠে,
-শুনেছি জিম করলে শরীর শক্ত হয়।এইযে আপনার মন টা পাথরের মতো শক্ত।কি করে হলো? সে কি জিম করে?
সামান্য বিরক্তি বিহানের সমস্ত চোখমুখ জুড়ে ছেয়ে যায়।দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় সে নিজের।স্বাভাবিক কন্ঠে বলে ওঠে,
-হ্যাঁ করে।
-আপনার এই পাথরটা কি একটুও অনুভব করে না যে কেউ একজন অল্প অল্প করে অনেক খানি ভালোবাসা জমিয়েছে ফেলেছে তার জন্য?

-করে না।
-কেনো করে না? আমি ঠিক করে প্রকাশ করতে পারি না সেজন্য নাকি সে অনুভবই করতে চায় না?
-অনুভব করতে চায় না।
-কেনো?
-ভালোবাসা বলে কিছু হয় না।যা হয় তা হচ্ছে মোহ বা মায়া,এসব সময়ের সাথে শেষ হয়ে যায়।
-যে অনুভূতি ৫ বছরে শেষ হয়নি তা আগামীতেও শেষ হবে বলে মনে হয় আপনার?

এ প্রশ্নে বিহান পুরোপুরি তার ডানদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। পূর্ণ দৃষ্টি স্থাপন করে নিজের সামনে থাকা মৃদু সিক্ত হয়ে আসা চোখজোড়ায়।রমণীর চোখমুখ জুড়ে ব্যাকুলতা, পীড়া, অপূর্ণতা, ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতার ছাপ।এই রমনীর হৃদয় পড়তে জানে বিহান।জানে এই মানবীর হৃদয়ে জমে আছে তার জন্য এক সিন্ধু প্রেম।কিন্তু কোথায় যেনো এক কঠিন নিষেধাজ্ঞা।কোথায় যেনো এক কঠিন বারণ,কোথায় যেনো এক তীব্র বাঁধা যা উপেক্ষা করে বিহান পারে না এই রমণীর সবটুকু ভালোবাসা নিজের নামে লিখে নিতে।

বিহান শুকনো গলায় বলে ওঠে,
-আর্শি, না পাওয়া জিনিসগুলোর প্রতি মানুষের প্রবল ঝোঁক কাজ করে।তারা মরিয়া হয়ে ওঠে সেই জিনিসটা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়।যখনই সেই কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা তারা পেয়ে যায় তখনই তাদের মন উঠে যায় সেই জিনিসের প্রতি।আকাঙ্খা মিটে যায়, মন ভরে যায়।তারপর অতি কাঙ্ক্ষিত সেই জিনিসটাই মানুষের সবথেকে অবহেলার জিনিসে পরিণত হয়।
কথাগুলো বলে মৃদু থামে বিহান।ওষ্ঠ ভিজিয়ে পুনরায় বলতে আরম্ভ করে,

-এইযে আমার প্রতি তোমার এতো অনুভূতি, এইযে মাত্রই বললে ৫ বছরেও তোমার অনুভূতি শেষ হয়নি।এর কারণ জানো?কারণ আমি এখনো তোমার প্রাপ্তির তালিকায় যুক্ত হইনি।তাই আমার প্রতি তোমার এতো ঝোঁক।যদি এখন আমি তোমার হয়ে যাই তাহলে দেখবা তোমার এই ঝোঁক কেটে যাবে, অনুভূতি ফ্যাকাশে ও বিবর্ণ হয়ে যাবে।

বিহানের বক্তব্য শেষ হতেই তার শান্ত নেত্র যুগল হতে দৃষ্টি সরায় আর্শি।খোলা অম্বর পানে চেয়ে মনে মনেই বলে ওঠে,
“আপনার এমন চিন্তাচেতনায় আমার ভীষণ অভিমান হয়।আপনি কী তা বুঝতে পারেন?
বুঝতে পারেন আমার হৃদয়ে আপনার নামে জমানো আছে এক অম্বর সমান প্রণয়?আর এ প্রণয়ের আসক্তিতে আমি যে অত্যাসক্ত?

মানুষ গাঁজা খোর হয়,মদ খোর হয়, সিগারেট খোর হয়।আমিও খোর তবে আমি এক অনন্য খোর,আমি বিহান খোর।আপনি কী তা বুঝতে পারেন?”

[গল্পে নতুন চরিত্র শীতল-কুহেলি।এদের পরিচয় দ্রুতই সবাই পাবেন।প্রথম পর্ব পড়ে পাঠক মনে বেশ কিছু প্রশ্ন উদয় হতে পারে অথবা অগোছালো লাগতে পারে।ইন শাহ আল্লাহ, পর্ব বাড়ার সাথে সাথে গল্প টা গুছিয়ে নিবো।
আশা করি,সবাই নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য জানিয়ে আমাকে উৎসাহিত করবেন♥️]

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২