প্রণয়ের বিরহ পর্ব ২৬

প্রণয়ের বিরহ পর্ব ২৬
তাসনিয়া রহমান স্নিগ্ধা

চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে পূর্বের রুমে উঁকি দিলো আয়রা। চারদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিল পূর্ব রুমে আছে কিনা।যখন দেখলো ও আশপাশে কোথাও নেই চুপিচুপি ওর টেবিলের উপর থেকে পেনড্রাইভ টা তুলে নিয়ে আবার রুম থেকে চট করে বেরিয়ে গেল।আয়রা বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই পূর্ব আলমারির আড়াল থেকে বের হয়ে এসে সোফায় আধশোয়া হয়ে বসলো। ঠোঁটের কোণে একটা বিদ্রুপ হাসি ঝুলিয়ে রেখে নিজে নিজেই হাসছে।

‘ তোমার কাজটা আমিই সহজ করে দিলাম মিস আয়রা। দেখি তুমি আর তোমার বস আমাদের নিয়ে কতদিন খেলতে পারো। খেলার দান ঘুরে গেছে ড. শাওন,আর কতদিন এই ভালোর মুখোশ পরে থাকবেন আপনি? একদিন না একদিন আপনার এই ভালোর আড়ালে লুকিয়ে থাকা নোংরা চরিত্র টা ঠিক বেরিয়ে আসবে ঠিক মানুষের সামনে। ততদিন নাহয় শুধু আমরাই খারাপ থাকি!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিজের মনে কথাগুলো বলতে বলতে পূর্ব হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে বারোটার দিকে ঘড়ির কাটা।এক জায়গায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলো সে। এই কয়দিন খুব অলসতা করা হয়েছে কাজের প্রতি, অফিসে যাওয়া হচ্ছে না কয়েকদিন ধরেই।আর স্নিগ্ধার তো কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় পালিয়ে গেছে কে জানে? আম্মা ওকে স্নিগ্ধার খবর বলেনি ঠিকই কিন্তু ওখানে ও তো স্পাই আছে ওর। ওদের থেকে খবর পেয়েছে স্নিগ্ধা একটা লোককে খু*ন করে পালিয়েছে আর আম্মা ঔ ব্যাপারটা গোপন করে রেখেছে। শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে তূর্য কে ডাকলো পূর্ব। দুই মিনিট পরেই তূর্য ওর রুমে ঢুকল।

‘ কি হয়েছে দোস্ত?এনি প্রবলেম?’
‘ হ্যা। তোকে একটা কাজ করতে হবে।'(পূর্ব)
‘ কি কাজ?'(তূর্য)
‘ আম্মার পুরো লাইফ হিস্ট্রি জেনে নে। অতীতের পরিচয়, ওনার যত আত্মীয় স্বজন আছে তাদের সবার লাইফ হিস্ট্রি সবকিছু জেনে আমাকে বলবি। ওকে?'(পূর্ব)

‘ ওকে,বাট হোয়াই?'(তূর্য)
‘ তোকে সেটা এখন না জানলেও চলবে।যা করতে বলেছি তা ঠিকভাবে কর তাহলেই চলবে।যা,আর শোন ড. শাওন আবার শহরে এসেছে।লোক লাগিয়ে ওকে তুলে নিয়ে আয়।ওই বেটা যতদিন বাইরে বাইরে ঘুরবে ততদিন আমাদের সমস্যা বাড়তে বৈকি কমবে না।'(পূর্ব)

‘ হুম।’
বলে তূর্য রুম থেকে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেল। পূর্ব শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে আসছে এমন সময় আয়রা চলে এলো। চোখমুখে চাঁপা ভয় কাজ করছে এখনও, দেখে বুঝা যাচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে আয়রা। সরাসরি পূর্বের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখে পূর্ব বিরক্তি নিয়ে বললো,

‘ কি সমস্যা তোমার? সেদিন আমার গাছ কেটে দিয়েছো,আজ আবার কি কেটে এসেছো বলো?'(পূর্ব)
আয়রা পূর্বের ধমক শুনে কিছুটা সময় নিলো মুখ খুলতে। শুকনো ঢোক গিললো বারকয়েক, পরক্ষণেই মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদতে শুরু করলো। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,

‘ স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করে দিন।আর কক্ষনো এমন মেজর ভুল হবে না আমার।প্লিজ স্যার, আমার সাথে এতো বড় অন্যায় টা করবেন না আপনি।’
পূর্ব দুহাত বুকে ভাঁজ করে রেখে স্টাইল করে দাঁড়াল।ঘুঘু টোপ গিলেছে তাহলে! পেনড্রাইভের মধ্যে এমন কিছু একটা সেট করে রেখেছে পূর্ব যেটা দেখে আত্মরাম খাঁচা ছাড়া হয়ে গেছে আয়রার।স্মীত হেসে পাশ কাটিয়ে চলে গেল পূর্ব। এখন এসব সস্তা সেন্টিমেন্টের কোনো মানেই হয়না।যা করতে বলা হয়েছে ওকে সেটা করলে বাকি কিছু ভেবে দেখা যাবে।

সরাসরি ডিরেকশন দেওয়া হয়েছে আয়রাকে,সে অনুযায়ী কাজ করুক।চুরির ফল হাতেনাতে ভোগ করুক এখন, তাহলেই ওর অনুনয় বিনয় কাজে আসবে নয়ত!যেতে যেতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো পূর্ব, মেয়েটা তখনও সেখানেই বসে আছে। পূর্ব চলে যাওয়ার প্রায় আধ ঘন্টা পর আফসানা চৌধুরী শপিং করে মহুয়া চৌধুরী কে নিয়ে বাসায় ফিরলেন। মহুয়া চৌধুরী ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাই হসপিটালে এডমিট ছিলেন তিন দিন।

আজ রিলিজ করা হয়েছে উনাকে তাই একসাথেই বাসায় এলেন। বাসায় পা রাখতেই গুনগুন করে কান্নার শব্দ পেয়ে দু’জনেই একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। পূর্ব তো এসময় বাসায় থাকার কথা নয় আর তূর্য ও,বউমা ও তো বাসায় নেই তাহলে কাঁদছে কে?ওই মেয়েটা নয়তো? তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে আয়রার রুমের দিকে যেতে আফসানা চৌধুরী থমকে গেলেন। পূর্বের রুমের একটু এদিকে আয়রা বসে বসে কাঁদছে দেখে মায়া হলো উনার।সাতকুলে নাকি মেয়েটার কেউ নেই তাই সেদিন নিজের বোনের মেয়ের পরিচয়ে ওকে বাসায় থাকতে দিয়েছিলেন।

পূর্ব সেদিন থেকে নিয়মিত ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করায় খুব খারাপ লেগেছিল উনার কিন্তু ওকে বাঁধা দেওয়ার মতো কোনো যুক্তি ও ছিল না আফসানা চৌধুরীর কাছে।পাকনামি করে ওর গাছে হাত দেওয়ার শাস্তি পেয়ে গিয়েছিল কিন্তু আজ আবার কি হলো তার? পূর্ব আবার ওকে কিছু করেনি তো? কাঁধে হাত রাখলেন আয়রার। হঠাৎ করেই কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আয়রা চমকে উঠে কান্না বন্ধ করলো। তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে তাকিয়ে দেখে আফসানা চৌধুরী তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে।

‘ কি হয়েছে মা? তুই কাঁদছিস কেন এভাবে, পূর্ব কি আবার আজ তোকে কিছু বলেছে?'(ব্যস্ত হয়ে বললেন আফসানা চৌধুরী)
‘ না খালামণি, উনি আবার আমাকে কি বলবেন? আসলে বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছিল খুব তাই কান্না চলে এলো।খালামণি, আমি এখন আমার ঘরে যাই, শরীরটা দুর্বল লাগছে ঘুমাতে হবে একটু।'(আয়রা)

‘ আচ্ছা!‌ঠিক আছে। তুই বরং একটু ঘুমিয়েই নে এখন,ধকল তো কম যায়নি তোর উপর দিয়ে।'(আফসানা চৌধুরী)
আয়রা মাথা দুলিয়ে সায় দিল। এরপর ধীরে ধীরে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। আফসানা চৌধুরী সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে শাশুড়ির রুমে চলে এলেন। মহুয়া চৌধুরী বেডে আয়োজন করে বসে আছেন, হাতের কাছে পানের বাটা রাখা। আফসানা চৌধুরী পাশে বসলেন।পানের বাটা টা থেকে একটা পান তুলে নিয়ে মহুয়া চৌধুরীর হাতে দিতে দিতে বললেন,

‘ মা, এবার আমাকে আপনি সবকিছু খুলে বলুন প্লিজ! আমি আর আমার দুই ছেলের আর স্বামীর এতো অদ্ভুত ব্যবহার নিতে পারছি না।তারা কেন এমন করছে এখন?আর আমার একমাত্র ছেলের বউ তাসনিয়া ওরই বা কি দোষ বলবেন একটু আমাকে? ওকে কেন পূর্ব এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে,প্লিজ আপনি সবকিছু আমার কাছে খোলাসা করুন!’
আফসানা চৌধুরীর এতো উৎকণ্ঠা দেখেও মহুয়া চৌধুরী তার মুখ খুললেন না।পান চিবোতে চিবোতে শুধু একটা কথাই বললেন,

‘ আর মাত্র কয়েক দিন ধৈর্য ধর বউমা, আস্তে আস্তে সবকিছু তোমার চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।সবে তো শুরু হলো এই অদ্ভুত ব্যাপার গুলোর, খেলা জমতে দাও একটু। এরপর নাহয়!’
আর কিছু বললেন না মহুয়া চৌধুরী।পান চিবোতে লাগলেন আগের মত। আফসানা চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলেন, উনার কথা কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না।

সারাদিন ঘর গোছানোর কাজ করে তিনটার দিকে গোসল করতে হলো।গোসল করার পর একটু বিছানায় গড়িয়ে নিব ভাবছি তখন হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো। ঘুরে দেখি আসিফ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গেই চোখ নামিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

কেন এই মানুষটি আবার আসছে আমার সামনে, পুরোনো ক্ষত টা দগদগে ঘা হয়ে জেগে উঠেছে আবার! সেদিন মায়ের এক কথায় আসিফ ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিল অন্য ঘরে। এরপর আমাদের আর একবার ও না কথা হয়েছে না মুখোমুখি হয়েছি একে অপরের। শুধু আজ সকালে খাবার টেবিলে ও আমার মুখোমুখি বসেছিল, এতেই আমি আর কিছু খেতে পারিনি। টেবিল ছেড়ে উঠে এসেছিলাম কিন্তু এখন?

‘ স্নিগ্ধ পরী!’
আগের মতো সেই মায়া জড়ানো কন্ঠে আমাকে ডেকে উঠলো আসিফ। কেন জানি আর কান্নাটা আটকে রাখতে পারলাম না, দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠলাম আমি।আসিফ দরজা ছেড়ে ভিতরে এসে আমার সামনে বসল। মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দিতে চোখ মুছে দিয়ে বললো,

‘ আমি তো আবার তোমার কাছে এসে গেছি স্নিগ্ধ পরী! তুমি তাহলে কাঁদছো কেন আর আমাকে এভাবে ইগনোর করছো কেন তুমি?ত তুমি কি আবার অন্য কারো হয়ে গেছো ইতিমধ্যেই,হ্যা?’
শেষের কথাগুলো কাঁপা কাঁপা গলায় বললো আসিফ। কান্না বন্ধ করে ওর দিকে তাকালাম। এই মুখটাকে কত মিস করতাম আমি, সেটা আসিফের অজানা ছিল না।সে নিজেই তো আমাকে ছেড়ে!

‘ আমি অন্য কারো হয়েছি কিনা সেটা জানার আগে তুমি আমাকে বলো তুমি আমেরিকা গিয়ে তোমার সেই ছোট বেলার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করোনি? তুমি ই তো আমাকে ছেড়ে হুট করে আমেরিকা চলে গেলে আর সেখানে তোমার ওই গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করে নিলে।কই আমার কথা তো একবার ও ভাবো নি তুমি।'(আমি)

‘ হোয়াট?এসব কি বলছো তুমি স্নিগ্ধ পরী? আমি আমেরিকা গিয়ে বিয়ে করেছি মানে, আর আমার ছোট বেলার গার্লফ্রেন্ড আসবে কোত্থেকে? আমার তো শুধু একজনই আছে আর সেটা হলো তুমি। এইসব কি বলছো তুমি আমার তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।'(আসিফ)

আসিফের কথা শুনে প্রায় ভুত দেখার মত চমকে উঠে ওর দিকে তাকালাম।মা নিজে বলেছিল যে আসিফ আমেরিকা গিয়ে ওর ছোট বেলায় ঠিক করে রাখা মেয়েকে বিয়ে করেছে। তাহলে এখন ও অস্বীকার করছে কেন?

প্রণয়ের বিরহ  পর্ব ২৫

আসসালামুয়ালাইকুম। সবাই বলছেন আমি কালকে দেইনি কেন? বলার ইচ্ছে করছিল না কারণটা তারপরও বলি, আমার কাল হুট করেই নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে খুব আর সেজন্য লেখালেখি তো দূরের কথা ফোন ও ধরতে পারিনি।তবে এখন থেকে যত অসুস্থ ই হইনা কেন নিয়মিত প্রতিদিন রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে গল্প পাবেন।আর সবাই রহস্য জানতে এতো ধৈর্য হারা হবেন না দয়া করে, খুব তাড়াতাড়ি রহস্যের জট খুলা হবে।আর হ্যা,আজকে দুই লাইনের মন্তব্য করে জানাবেন প্লিজ!

প্রণয়ের বিরহ  পর্ব ২৭