প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৯

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৯
লেখিকাঃ মাহযাবীন

“নিশি আপনাকে পছন্দ করে এহসান”
নুইয়ে রাখা মস্তক এবার উপরে তুললো এহসান।হৃদয়ের কোথাও তীক্ষ্ণ সূচালো এক ব্যথা অনুভব করছে সে।তবে এ পীড়া প্রকাশ করতে চাইলো না এহসান।তাই তো নিজের মাথা নুইয়ে রেখেছিলো সে।এরই মাঝে হটাৎ এ কী বললো আর্শি?নিশি পছন্দ করে তাকে?

এহসানের চোখে ফুটে ওঠা প্রশ্ন বুঝলো আর্শি।শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
-আমি নিশির ফ্রেন্ড বলে কথাগুলো বলছি তা ভাববেন নাহ।যেটা সত্যি সেটাই বলবো।নিশিকে আমি চিনি প্রায় ২ বছর হলো।এই ২ বছরে আমি কখনো দেখিনি ওকে কোনো ছেলের প্রতি বিন্দু পরিমাণ ইন্টারেস্ট দেখাতে।ও পড়াশোনায় যেমন ভালো তেমনই এসব প্রেম-ভালোবাসার মামলায় কাঁচা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি ১০০% নিশ্চিত যে ওর আপনাকে পছন্দ করার প্রধান কারণই হলো আপনি মেধাবী ও বিচক্ষণ।সেই সাথে এতোটুকুও জানি যে নিশি অবশ্যই আপনাকে আপনার বাহ্যিক দিকটা দেখে পছন্দ করেনি।কারণ ওর এই ‘গুড লুকিং’ ব্যাপার টায় কোনো আগ্রহ কখনোই ছিলো না।ওর পছন্দের লিস্টে প্রথমেই হচ্ছে ‘মেধা বা বিচক্ষণতা’।আপনার ভদ্রতা,মজা করা স্বভাব, নিজেকে একটু রিসার্ভ রাখা এসবই হয়তো ওর ভালো লেগেছে। আমি যতটুকু ওকে চিনি তাতে আমার মনে হয় ও আপনার বাহ্যিক দিকটা না দেখে আপনার ভেতরটা দেখার চেষ্টা করেছে।আর ট্রু লাভে এটাই তো করে মানুষ, তাই না?
কথাগুলো বলে থামলো আর্শি।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো এহসানের দিকে।এহসান তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুললো তার ঠোঁটে।একটু সময় নিয়ে অস্বস্তি ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,

-কিন্তু আমি নিশিকে ওভাবে দেখিনি আর হয়তো কখনো দেখতেও পারবো না।স্যরি।
নিজের কথা শেষ করে স্থান ত্যাগের জন্য অগ্রসর হলো এহসান।দু’কদম এগোতেই থামতে হলো তাকে।আর্শি তাকে ডেকে বলে উঠলো,
-এহসান?একটু শুনবেন প্লিজ?
দাঁড়ালো এহসান।তবে উত্তর দিলো না কোনো।এহসানের নীরবতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে আর্শি বলে উঠলো,

-আপনি যথেষ্ট স্মার্ট।তাই আপনাকে জ্ঞান দিবো না।শুধু নিজের অনুভব থেকে বলবো, একটা মানুষ তখনই প্রকৃত সুখী হয় যখন তার জীবনে এমন একটা মানুষ থাকে যে তাকে সত্যিকারের ভালোবাসে।আপনাকে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারবে এমন মানুষ আপনার জীবনে থাকলেই একমাত্র আপনি সুখে থাকতে পারবেন।কিন্তু ধরেন আপনার জীবনে এমন কেউ থাকলো যাকে আপনি ভালোবাসেন কিন্তু সে আপনাকে ভালোবাসে না তাহলে কী আদৌও সুখী হতে পারবেন আপনি?
এ প্রশ্নে নিরব রইলো এহসান।উত্তর জানে না সে।জানতেও চায় না।আর এসব কথা তার শুনতে ভালোও লাগছে না।অসহ্য লাগছে।
আর্শি পুনরায় বলে উঠলো,

-যে আপনাকে ভালোবাসে তাকে আগলে নিন।জীবন টা সুন্দর হয়ে যাবে।
এহসান আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না।দ্রুত পদে পা ফেলে এগোলো রান্নাঘরের দরজার দিকে।
দরজা খুলতেই দেখা পেলো নিশির।এহসানকে দেখে ব্রু কুঁচকে এলো নিশির।চোখ-মুখে বিস্ময় নিয়ে সে প্রশ্ন করে উঠলো,
-এহসান ভাই আপনি এখানে?আর্শি কোথায়?

এহসান উত্তর দিলো না।সে অপলক তাকিয়ে রইলো নিশির মুখপানে।তার কানে বাজতে লাগলো আর্শির বলা কথাগুলো।
“আমি গত ৩ বছর ধরে একটা মানুষকে ভীষণ ভালোবাসি।ভীষণ মানে ভীষণ।”
“ধরেন আপনার জীবনে এমন কেউ থাকলো যাকে আপনি ভালোবাসেন কিন্তু সে আপনাকে ভালোবাসে না তাহলে কী সুখী হতে পারবেন আপনি?”

“যে আপনাকে ভালোবাসে তাকে আগলে নিন।জীবন টা সুন্দর হয়ে যাবে।”
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই এহসান নিশিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে উঠলো,
-তুমি কী আমাকে পছন্দ করো?

নিশির মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো।এহসান কি করে জানলো?আর ছেলেটার চোখ এমন লাল হয়ে আছে কেনো?কন্ঠস্বরে এমন রাগী ভাব কেনো?এখন যদি সে হ্যাঁ বলে তাহলে কী এহসান থাপ্পড় মারবে তাকে?
ভয়ে ঢোক গিললো নিশি।উত্তরে তার এখন কি বলা উচিৎ তা নিয়ে ঠিক নিশ্চিত হয়ে উঠতে পারছে না সে।
নিশির চোখে জড়তা দেখতে পেলো এহসান।এ সময় সবকিছুই তার কাছে অসহ্য লাগছে।এর মধ্যে নিশির ভীত চাহনি তার রাগ আরো বাড়িয়ে দিলো।এহসান রাগী কন্ঠে আবারও প্রশ্ন করে উঠলো,

-তুমি কী আমাকে পছন্দ করো? হ্যাঁ অথবা না জলদি বলো।
নিশি এবার আর সময় নিলো না।ভয় চেপে সে তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো,
-হ্যাঁ।

এহসান আর দাঁড়ালো না।বড় বড় পা ফেলে স্থান ত্যাগ করলো।নিশি বুঝলো না তার উত্তরে এহসানের প্রতিক্রিয়া ঠিক কী?ছেলেটা আগে থেকেই রেগে ছিলো,তার উত্তরে কী আরও রাগ বাড়লো নাকি রাগ খানিক কমলো?
হয়তো বেড়েছে নয়তো ছেলেটা এভাবে চলে যেতো না।এমনটা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে এলো নিশির।সে চুপচাপ এক আকাশ মেঘ মনে চেপে রেখে চেয়ে রইলো এহসানের যাবার পানে।
আর্শি বেরিয়ে এলো রান্নাঘর হতে।দরজায় নিশিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আর্শি মনে মনে নিজেকে নিশির প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে নিলো।অতঃপর বলে উঠলো,

-কিরে?এখানে কেন তুই?
-তোর খোঁজেই আসলাম।তুই-ই এহসান ভাইকে বলছিস না যে আমি তারে পছন্দ করি?কেন বললি?এখন সে কি ভাবতেছে আমাকে নিয়ে?আর তুই উনার সাথে রান্নাঘরে দরজা বন্ধ করেই বা কী করতেছিলি?এহসান ভাই এতো রেগে আছে কেন?
-রিলাক্স। কত প্রশ্ন করবি?আসলে এহসান ভাই আমাকে স্যরি বলতে চাইছিলো ঐদিনের জন্য।

তাই দরজা লাগায়ে নিছিলো।কেউ শুনলে কী ভাববে তাই আরকি।তো সে স্যরি বলার পরও আমি তাকে কথা শুনচ্ছিলাম।সেও শুনাচ্ছিলো।ঝগড়া করতে করতে এক পর্যায়ে আমার মুখ থেকে তোর কথাটা বের হয়ে আসে।আই অ্যাম স্যরি দোস্ত। রেইলি স্যরি।
-কাজটা তুই ঠিক করিসনি আর্শি।
বলে আর দাঁড়ালো না নিশি।দ্রুত পদে সেও এ স্থান ত্যাগ করলো।আর্শি চেয়ে রইলো নিশির যাবার পানে।খুব গোপনে এক দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো সে।

নিশিকে বেশ ক’বার স্যরি বলে ফেলেছে আর্শি।সেই সাথে অনেক রকম কথা বলে বিষয়টাকে সহজভাবে নেওয়ার জন্য নিশিকে বড় বড় লেকচারও দেওয়া শেষ তার।কিন্তু এতে নিশির মন খারাপ একবিন্দুও কমলো না।তার ঘুরেফিরে এক কথা, ‘এহসান ভাই কী ভাবলো?’।আর্শি বুঝলো নিশির সময় প্রয়োজন আর তার থেকেও বেশি প্রয়োজন এহসানের সাহায্য।এহসান যদি তাকে ভালো না ও বাসে তবুও তার উচিৎ নিশির জন্য বিষয়টাকে সহজ করে দেওয়া।তার উচিৎ নিশির সাথে একটা সুন্দর কথোপকথনের মাধ্যমে তাকে বুঝিয়ে বলা যে এই ভালোবাসার সম্পর্কটা হওয়া সম্ভব নাহ।আর তারপর সব ভুলে তাদের উচিৎ একে-অপরের সাথে সহজ হয়ে যাওয়া।

এসব ভেবে অবশেষে নিশিকে একা কিছুটা সময় কাটাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো আর্শি।কারণ সে জানে এখন তার কোনো কথা বা কাজ কিছুই নিশিকে স্বস্তি অনুভব করাতে পারবে না।ফলে কোচিং শেষে একাই বেড়িয়ে পড়লো সে।একটি রিকশা নিয়ে তাতে চড়ে বসতেই তার মাথায় এলো এক দুষ্টু বুদ্ধি।
বিহানকে একটু ঈর্ষা অনুভব করালে কেমন হয়?ভাবতেই মৃদু হাসি ফুটে উঠলো আর্শির ঠোঁটের কোণে।সে সময় অপচয় না করে এক খুদেবার্তা পাঠালো বিহানের ইনবক্সে।

-আমাকে আজ একজন প্রপোজ করেছে।
এক্টিভ থাকায় ম্যাসেজ সিন হতে খুব একটা দেরি হলো না।বিহানের তরফ থেকে রিপ্লাই এলো,
-বাহ,কংগ্রাচুলেশনস।
-ফর হোয়াট?
-ফর ইউর রিলেশনশীপ।
-আমি গেছি নাকি সম্পর্কে?
-যাননি কেনো?আপনি তো চান প্রেম করতে।
-আপনি চান যে,আমি রিলেশনশিপে যাই?
-আমার চাওয়া না চাওয়ায় কী আসে-যায়?

-আসে-যায়।বলেন, আপনি চান আমি অন্য কারো হই?আমি অন্য কারো হলে আপনার একটুও খারাপ লাগবে না?
-নাহ লাগবে না।লিসেন,তুমি প্রেম করো বা বিয়ে করো যাই-ই করো আই ডোন্ট কেয়ার।
-ওহ আর আমি গাধার মতো এতোদিন ভেবে আসছি আপনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন।ভালো না বাসলে কেন আমার ভালো-খারাপের দিকে এতো নজর রাখতেন?

কেন শাষণ করতেন?কেন রাত-দিন এক করে আমার সাথে কথা বলতেন?কেন আমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে রাগ করতেন?কেন আমাকে ইচ্ছা করে জেলাস ফিল করায়ে মজা নিতেন?কেন আমি আপনাকে ভালোবাসি জেনেও আমার থেকে দূরত্ব বাড়াননি?কেন নিজের উপর আমাকে এতো অধিকার দিতেন?এসব কেন করতেন?আপনি বলতেন আপনার নাকি প্রেম পছন্দ না কারণ প্রেম বন্ধুত্ব নষ্ট করে।আমিও বোকার মতো ভেবে নিছিলাম এ জন্যই হয়তো আমার সাথে আপনি প্রেমে জড়াননি, আপনি চাননি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হোক।আপনি হয়তো সোজা আমাকে বিয়েই করে নিবেন।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।

কথাগুলো লিখতে লিখতে আর্শি কখন কেঁদে ফেললো তা সে নিজেও জানে না।তার চোখের কোণ বেয়ে শ্রাবণ ধারা বইতে লাগলো।মনে অভিমানের পাহাড় গড়ে উঠলো।এখন শ্বাস টাও যেনো বুকে আঁটকে আঁটকে যাচ্ছে আর্শির।
বিহানের রিপ্লাই এলো,
-অবশ্যই ভালোবাসি।আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ মোর দ্যান আ ফ্রেন্ড বাট নট এজ আ হাসবেন্ড।
এ ম্যাসেজটার দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো আর্শি।নিরব,নিস্তব্ধ হয়ে রইলো সে খানিকক্ষণ।সে বুঝলো না বিহানের এ কথার অর্থ।বুঝতেও চাইলো না সে।রাগে,অভিমানে,দুঃখে যেনো পাথর রূপ নিয়েছে তার হৃদয়।
সময় নিয়ে নিজেকে খানিকটা সামলে নিলো আর্শি।লিখলো,
-আমাদের আর কখনো কথা হবে না বিহান।কখনো নাহ।এটাই আমাদের শেষ কনভারসেশন।

আর্শদের বাড়ি আজ ঝাঁক জমক আনন্দমুখর। উৎসবের ঘ্রাণ বইছে আনাচে-কানাচে।আজ সকালেই ঘরের ডেকোরেশন পুরোটা শেষ করে বেরিয়েছিল আর্শি।বাকি ছিলো শুধু রান্নাবান্নার কাজ,যা সামলে নিচ্ছেন সানিয়া বেগম।আরহান সাহেবও বসে নেই।তিনিও দৌড়োদৌড়ির উপরে আছেন।বাজার করা বা অন্যান্য ঘরের কাজেও সাহায্য করে চলছেন তিনি।এ পরিবারে আজ যেনো সুখের বর্ষণ হচ্ছে।হবেই বা না কেনো?কত প্রতীক্ষার পর আজ এ বাড়ির মেয়ে তার নিজ বাড়িতে ফিরবে।তার সাথে ফিরবে এ বাড়ির প্রথম বংশধর,এ পরিবারের সবার প্রাণ।

এখন মধ্য দুপুর।সময় হয়ে এসেছে আর্শ,মিয়ামি ও তার বাবা-মা চলে আসার।আর্শ যদিও অফিস থেকে আসবে তাই তার একটু দেরি হতে পারে কিন্তু মিয়ামিরা হয়তো এখনই চলে আসবে।এমনটা ভেবে দ্রুত গতিতে হাত চালাচ্ছেন সানিয়া বেগম।
হটাৎ বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে।আরহান সাহেব দরজা খুলতেই দেখা পান আর্শির।মেয়ের শুকনো মুখ দেখে ব্রু কুঁচকে এলো আরহান সাহেবের।তিনি প্রশ্ন করে উঠলেন,

-আশু?ঠিক আছো মা?
-জ্বি বাবা।
-উম,মিয়ুকে কি জানি ডাকো তুমি?কলিজার বান্ধবী না?তা সেই বান্ধবী বাড়ি ফিরতেছে আর তুমি এমন মুখ গোমড়া করে আছো?কারণ কী?
-কিছু না বাবা একটু ক্লান্ত।আচ্ছা মিয়ু এসে পরবে না এখনই? চলো রেডি হই।ফোম স্প্রে,বেলুন এগুলো নিয়ে দাঁড়াতে হবে তো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ির কলিং বেল পুনরায় বেজে উঠলো। আর্শি, সানিয়া বেগম, আরহান সাহেব সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন দরজার ধারে।আর্শি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই একে একে বেলুন ফাটানো হলো, জরির বর্ষণ হলো,ফোম স্প্রে তুষারের ন্যায় উপর থেকে নিচে পরতে আরম্ভ করলো,একটি বাক্য বারংবার প্রতিধ্বনিত হলো,
“ওয়েলকাম হোম,মিয়ু”

মিয়ামি প্রথমে চমকে গেলেও পরমুহূর্তেই মুগ্ধ চোখে অপলক দেখতে লাগলো তার পরিবারের মানুষগুলোকে।তার প্রতি তাদের প্রগাঢ় ভালোবাসাটাকে নিরবে অনুভব করতে লাগলো সে।আবেগাপ্লুতও হলো খানিক।এতো ভালো কেনো এই মানুষগুলো?কেনো তাকে এতো বেশি ভালোবাসে?
ঠিক এ মুহুর্তেই মিয়ামির ফোন বেজে উঠলো।আর্শের নাম্বার থেকে কল এসেছে।সানিয়া বেগম তা লক্ষ করে মিয়ামিকে কল রিসিভ করতে বললেন।মিয়ামি তৎক্ষনাৎ কল রিসিভ করে কানে ধরলো।ফোনের ওপাশ থেকে একজন লোকের কন্ঠ স্বর ভেসে আসছে।লোকটা বলছে,

-হ্যালো, এই ফোনটা যে লোকের তার এক্সিডেন্ট হয়েছে।তাকে আজগর আলী হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।এই লোক হয়তো আপনার স্বামী। দ্রুত হসপিটালে আসুন।
কথাগুলো নিরবে গিললো মিয়ামি।ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো কয়েক সেকেন্ড।মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তার।নিঃশ্বাসও যেনো আঁটকে আঁটকে যাচ্ছে।কানে শুধু বাজতেছে আর্শের বলা কথাগুলো,
“যদি আমি কখনো না থাকি তবুও তুমি বাঁচবে মিয়ু।খবরদার আবেগে ভেসে বাচ্চামি করবে না।আমি না থাকলেও আমার অংশ তো থাকবে তোমার কাছে থাকবে না?ওকে বুকে জড়িয়ে বেঁচে থাকবে তুমি।”
মিয়ামি মিনমিনে স্বরে বলে উঠলো,

“না”
এই একটা শব্দই সে একাধিক বার উচ্চারণ করতে লাগলো।নিজেদের আলাপের মাঝে মিয়ামির এ অস্বাভাবিক আচরণ নজরে এলো সবার।সবাই চিন্তিত ভঙ্গিতে তার দিকে তাকালো,প্রশ্ন করতে আরম্ভ করে দিলো।মিয়ামির কানে যেনো কিচ্ছু গেলো না।সে বিড়বিড়িয়ে ‘না’ বলতে বলতে এক কদম দু’কদম করে পেছাতে আরম্ভ করলো।সবাইকে অবাক করে দিয়ে হুট করে ভারী পেট নিয়ে দৌড়াতে আরম্ভ করলো মিয়ামি।উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,

-আর্শের কিচ্ছু হবে না, কিচ্ছু না।ছোট এক্সিডেন্ট করছে হয়তো।ও ঠিক হয়ে যাবে। একদম ঠিক হয়ে।
কথাগুলো একা একাই পাগলের মতো বলতে বলতে দৌড়াচ্ছে মেয়েটা।তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে সবাই।কিন্তু মিয়ামি ধরা-ছোয়ার বাইরে।মেয়েটা যেনো উন্মাদ হয়ে গিয়েছে।কয়েক সিঁড়ি ঠিকঠাক নামতে পারলেও শেষ সিঁড়িতে এসে পা পিছলে বেসামাল হয়ে পড়ে গেলো মিয়ামি।

পুরো পৃথিবীটা যেনো এ মুহুর্তেই থমকে দাঁড়ালো।একদিকে বাবা হসপিটালে জীবন-মৃত্যুর মাঝে অপর দিকে সন্তানও যেনো একই পথ ধরলো।বাবা,মা,ছেলে সবাই যেনো একই দিনে একই সময়ে একই যুদ্ধে নামলো।জয়ী হবে তো তারা?ফিরবে তো এই পৃথিবীর বুকে? নাকি একই সাথে নিঃশেষ হয়ে যাবে তিনটে প্রাণ?মুছেই কী যাবে এই পৃথিবী হতে আর্শ,মিয়ামি ও তাদের ভালোবাসার এই ছোট্ট অংশটার অস্তিত্ব?

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৮

[এই পর্ব পড়েই আমাকে বকা স্টার্ট কইরেন নাহ💔আমি তো কথা দিছি সমাপ্তি টা সুন্দর হবে।তাই প্লিজ আগামী পর্বের অপেক্ষা করুন।এই পর্ব পড়েই আমাকে বইকেন না।কষ্ট করে আগামী পর্বটা একটু পইড়েন প্লিজ☹️]

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ২০