প্রণয় বিরহ পর্ব ১১

প্রণয় বিরহ পর্ব ১১
অর্ষা আওরাত

সকালের সুন্দর প্রভাত বেলাই ঘুম থেকে ওঠে বাহিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এক তরুনী! মাঘ মাসের শেষের দিক এখনো শীত ভালো করেই জাঁকিয়ে বসেছে বলা যায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেই র্ট টপস এর সাথে জিন্স প্যান্টের উপর দিয়ে গায়ে চাঁদর জড়িয়ে ভালো মতন রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে গেলো এক লম্বা মতন তরুনী!

বাসা থেকে ঘন্টা খানেক এর রাস্তা পাড়ি দিয়ে বেঞ্চিতে বসে আছে কারো জন্য। বারবার হাতে থাকা ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে কখন কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা মিলবে। আধা ঘন্টা সময় অতিরিক্ত অতিবাহিতো হবার পরেও যখন কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা মিললো না তখন বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে যাচ্ছে রাগের কারনে! আর বসে না থেকে তরুনীটি চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়াতেই কেউ তার হাত দু’টি ধরে নিলো!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“তুমি এখন এসেছো?”
আগন্তুকটির চটপটে উত্তর তরুনীর দিকে তাকিয়ে,
–“তুমি তো জানোই তোমাদের ওখানে দেখা করা কতো ঝামেলার! তাই তো তোমার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে এখানে আসা। আর আসতে গিয়ে একটু দেরি হয়ে গেছে।”
-“হ্যাঁ তাও তুমি ঠিক বলেছো। কিন্তু তানভীর আমি এই বিয়েটা কিন্তু শুধু তোমার জন্যই করছি সেটা তো জানো?”
আগন্তুকটি তরুনীকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠলো,
–“হ্যাঁ সেটা তো আমি খুব ভালো করেই জানি।”

শিশিরময় ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে বেশ ভালোই লাগছে। যদিওবা ঠান্ডা শিশিরের পানি গুলো পরম যত্নে আমার পা গুলো ভিজিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তাতেও আমার বেশ আনন্দই লাগছে। বাড়ি থেকে এক ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে অপেক্ষায় আছি আমার প্রানপ্রিয় বান্ধবী লিমাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। লিমা ওদিকে বেড়াতে গেছিলো এই বাস স্টপে নেমে ওদের বাড়ি যাবে।

ওর একা একা ভালো লাগছিলো না বিধায় আমার তলপ পড়লো তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সামনের দিকে হেঁটে একটা বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করছি বাস আসতে আরো বোধহয় মিনিট পনেরো হবে। হঠাৎই চোখ যায় দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দিকে যারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে! অবুঝ মনকে বুঝ দিলাম হয়তো তারা একে অপরকে ভালোবাসে।

কিন্তু না চাইতেও চোখ বারংবার সেদিকেই যাচ্ছে। আরো একবার ভালো করে তাকাতেই মেয়েটির শরীরের গঠন বেশ পরিচিতো লাগছে! ছেলেটির মুখ দেখা যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটি আমার দিকে হওয়ায় চেহারা বোঝা যাচ্ছে না ভালো করে! আরো একটু উঁকি ঝুঁকি মারতেই মেয়েটির মুখ আমার সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠলো। মেয়েটিকে দেখে আমি কিঞ্চিৎ সময় অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছি! এই জন্যই মেয়েটির গঠন এতো পরিচিতো মনে হচ্ছিলো!

মেয়েটি আর কেউ নয় মেয়েটি হলো প্রিমা! যেই প্রিমার জন্য ইহাদ ভাইয়া আজকে আমার সাথে নেই। প্রিমা আপুই ওরকম জিন্স শার্ট প্যান্ট পড়ে বলে আমার অতো চেনা লাগছিলো! কিন্তু মন গহীনে প্রশ্নেরা উঁকি মারছে প্রিমা আপুর বাসা তো এদিক থেকে অনেক দূরে এই সাত সকালবেলা প্রিমা আপু এদিকে এই ছেলের সাথে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছে কেনো? এভাবে তো আর পাঁচটা মানুষ আরেকজনের সাথে এরকম ক্লোজ ভাবে জড়িয়ে ধরে না তাও আবার ছেলেদের? মনের কৌতুহল মেটাতে মুখে মাস্ক পড়ে আর মাথায় ওড়নাখানি ভালো করে টেনে দিয়ে ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম কি বলছে শোনার জন্য!

–“তুমি জানো আমি শুধু তোমার কথায়ই বিয়েটা করছি একমাত্র! নতুবা ওরকম একটা ছেলের সাথে বিয়ে তো দূর আমার একসাথে থাকতেও বিরক্ত লাগে!”
–“হ্যাঁ সবটাই তো আমি জানি। কিন্তু কি করবো বলো? কোনো উপায় নেই যে আর আমাদের কাছে? তোমাকে ওই বাড়িতে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য তো*

আর কিছু শুনবো ঠিক তার আগেই কাঁধে হাত পড়তেই চমকে ওঠি! পিছন ঘুরে দেখি লিমা তার বত্রিশ পাটি দাত বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! কিন্তু আমার তো রাগে সর্বাঙ্গ জ্বলে যাচ্ছে! আর একটুর জন্য শুনতে পারলাম না প্রিমা আপু কেনো ইহাদ ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাইছে! ওদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম কোত্থাও কেউ নেই! না প্রিমা আপু আর না ওই ছেলেটি! তাহলে কি সবটাই আমার মনের ভ্রম ছিলো? আমার ভাবনার মাঝেই লিমা বলে ওঠলো,

–“কিরে জুঁই? আমি এসেছি অথচ তুই চুপচাপ! একটা কথাও বলছিস না? কি ভেবে যাচ্ছিস কখন থেকে?”
লিমার কথা আমি শুনলাম ঠিকই কিন্তু উত্তর দিলাম না। মনে একটাই কথা বাজছে আমি কি তাহলে ভুল দেখলাম? যদি ভুলও দেখে থাকি তাহলে কি আমি তার সাথে সাথে ভুলও শুনলাম? হঠাৎই পায়ে একটা কিছু বিঁধতেই ঝুঁকে দেখলাম প্রিমা আপুর হাতের ব্যান্ড! হ্যাঁ এবার আর আমার কোনো দ্বিধা নেই মনের ভেতর! আমি শিওর ওটা প্রিমা আপুই ছিলো। আর এটাও নিশ্চিত আমি প্রিমা আপু ইহাদ ভাইয়াকে ভালোবেসে নয় কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই বাড়িতে আসতে চাইছে।

মাথায় এক গাদা প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বাড়িতে এসে পৌঁছালাম। বাড়িতেই আসতেই সেহেরিশ ভাইয়া আরাম করে সোফায় করে আপেল খাচ্ছে দেখতে পেলাম! আমাকে দেখে তিনি বলে ওঠলেন,
–“এই সাত সকালবেলা কোথায় যাওয়া হয়েছিলো জুঁইফুল?”

-কেনো জানি এই মুহুর্তে সেহেরিশ ভাইয়ার কথা শুনে আরো রাগ বেড়ে গেলো! কাঠ কাঠ গলায় বলে দিলাম,
–“আপনি আমাকে এসব জুঁইফুল বলে ডাকবেন না তো! আমার নাম জুঁই, জুঁইফুল নয়! আর গেছিলাম বাস স্টপে বান্ধবীকে আনতে। তাতে আপনার কি? আপনি আমাকে এতো প্রশ্ন করছেন কেনো?”
কথা বলা শেষ করে সেহেরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি কেমন নিথর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! কি বললাম তা বুঝতে পেরে নিজের কাছেই নিজে লজ্জায় পরে যাচ্ছি! ওনাকে বললাম,

–“আমার মাথা ঠিক নেই কি বলতে কি বলেছি তার জন্য মনে কষ্টি নিয়েন না সেহেরিশ ভাইয়া।”
–“না মনে কষ্ট না। তোমার বাড়িতে এসেছিলাম মা’কে নিয়ে মা তোমার ঝেঠির সাথে গল্প করতে চেয়েছেন মা’কে তো একা একা আসতে দিতে পারি না তাই আমিও এসেছি সাথে। আর এসে তোমাকে দেখতে না পেয়েই জিগেস করেছিলাম। একটা কথা জিগেস করি উত্তর দিবে?”
আমান অকপটে উত্তর

–“হ্যাঁ বলুন?”
–“তুমি তো আগে এমন মন মরা ছিলে না! আমি তো অনেক বছর ধরেই তোমাদের বাড়িতে যাতায়াত করি বিগতো ক’দিন তুমি যেমন মন মরা হয় আছো একইরকম তো আগে কখনো দেখি নি। তোমার মন খারাপের কারন কি জানতে পারি?”
–কেনো জানি না মানুষটির কথার উত্তর দিতে মন চাইলো তবে মিথ্যা নয় সত্যি।
–“হ্যাঁ মনমরা হয়ে থাকি। কারন প্রণয়ের বিরহে বিলীন হবার যন্ত্রনা যে বড়ো কষ্টের আর সেই কষ্টই আমাকে প্রতিনিয়ত দহনে পোড়াচ্ছে!”

সেহেরিশ ভাইয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। কিছু ভালো লাগছে এখন আর!হাঁপিয়ে যাচ্ছি সবটা সহ্য করতে করতে!
বিকেলবেলা জানলা দিয়ে চোখ পড়লো ইহাদ ভাইয়া বাহিরে আছে। সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়াকে সব সত্যি বলার উদ্দেশ্য চলে গেলাম ভাইয়ার কাছে। আমাকে দেখে ইহাদ ভাইয়া বলে ওঠলো,

–“কিরে জুঁই এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো? আস্তে ধীরে হেঁটে আসতে পারিস না? কিছু বলার জন্যকি এসেছিস?”
–“যখন সকালবেলা বাস স্টপে গেছিলাম লিমাকে আনতে তখনি দেখতে পাই একটা ছেলে আর মেয়ে একে অপরকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।”
–“থাকতেই পারে। হয়তো তারা একে অপরকে ভালোবাসে তাই।”

–“আপনি আমার পুরো কথাটা তো শুনুন, ওই মেয়েটার বিয়ে সামনে। সে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বলছে যে মেয়েটা নাকি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য একটা ছেলে যাকে ভালোবাসে বলে মিথ্যে বলেছে তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে! আর সেই মেয়েটা আর কেউ নয় সে হলো প্রিমা আপু!”
–“জুঁই মানলাম তুই আমাকে ভালোবাসিস। কিন্তু তাই বলে তুই প্রিমার সঙ্গে আমার বিয়েটা ভাঙতে চাচ্ছিস? আমি তো প্রিমাকে ভালোবাসি তাইই প্রিমাকেই বিয়ে করবো। খামোখা আমাদের বিয়ে ভাঙার জন্য এসব করিস না।এতোটা নিচে নেমে যাচ্ছিস কেনো তুই?”

প্রণয় বিরহ পর্ব ১০

–“প্রথমতো আমি আপনাকে ভালোবাসি না ভালোবাসতাম। আর আপনি যখন আমার কথা বিশ্বাস করছেন না তখন মনে হয় না আমি শতোবার বললেও বিশ্বাস করবেন! তাই আমার চুপ করে থাকাই ভালো। সময়ের গতিতে আপনি একদিন বুঝবেন আমি কি আদৌ ভুল বলেছিলাম নাকি আপনি আমাকে ভুল বুঝলেন!”

প্রণয় বিরহ পর্ব ১২