প্রণয় বিরহ পর্ব ১৫

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৫
অর্ষা আওরাত

সকালবেলা খুব আরাম করে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় চারদিকিের কোলাহলে। জানলার পাশ ঘেঁসে বসে রইলাম কিছুক্ষণ যাবত। খোলা আকাশটা দেখতে বড্ড আর্কষনীয় লাগে মাঝে মাঝে। নিচে যেতেই দেখতে পেলাম বাড়ি ভর্তি মানুষ জন! সবাই বোধহয় নতুন বউকে দেখতে ভীড় জমিয়েছে।

প্রিমা আপু আজকে শাড়ি গয়না পড়েই সেজে গুঁজেই বসে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর দুপুর বেলা হতেই প্রিমা আপুদের বাড়ি থেকে আত্নীয় স্বজন আসে তারপর নিয়ম কানুন সেড়ে ইহাদ ভাইয়াকে তার শশুর বাড়ীতে পাঠানো হয়। সঙ্গে আমাকে যেতে বলেছিলো কিন্তু আমি যাইনি। এখন বাড়ি বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে আগের মতন। ছাঁদে বসে আপন মনে পা দোলাচ্ছি আর বাদাম খাচ্ছি তখনি আমার বাদামে ভাগ বসিয়ে আমার পাশে এসে বসলো সেহেরিশ! পাশে এসে বসে বাদামের প্যাকেট থেকে বাদাম মুখে পুরে নিয়ে বসলো জাঁকিয়ে ভাবে! আমি প্রশ্ন করলাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“একি আপনি এখন এখানে? সারাদিন কোথায় ছিলেন একবারের জন্য ওতো দেখতে পেলাম না আজ আপনাকে?”
আমার কথা শুনে সেহেরিশ গালে হাত দিয়ে আমার দিকে কীরকম করে তাকিয়ে আছে। যে তাকানোর মানে আমার মস্তিষ্কে এসে বোধগম্য হচ্ছে না!
–“আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আমার দিকে?”
এবার তিনি মুখ খুললেন,

–“ইদানীং কেনো জানি তোমাকে বড্ড সুন্দর লাগে জুঁইফুল!”
ওনার কথায় আমার লজ্জা পাওয়া উচিত কিন্তু কেনো জানি আমি লজ্জা পেলাম না! আমি উল্টে প্রশ্ন করলাম,
–“আপনি কি আমাকে এখনো ছোটো পেয়েছেন সেহেরিশ ভাইয়া? আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন কেনো?”
–“আরে আরে জুঁইফুল আমি এমনি তোমাকে লজ্জা দিতে চাইছিলাম। দেখতে চাচ্ছিলাম তোমাকে লজ্জা পেলে কিরকম লাগে কিন্তু জুঁইফুল তুমি তো আবার আলাদা লজ্জা শরম নেই বললেই চলে তোমার!”

–“আপনাকে যা জিগেস করেছি বলবেন নাকি আমি উঠে যাবো এখান থেকে কোনটা?”
শেষের কথাটি একটু রাগ করে জোর গলায়ই বললাম। আমার কথার পিঠে উনি বললেন,
–“ইহাদের বিয়ে নিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ ছিলো! তুমি তো জানোই তোমাদের বাড়িতে উপযুক্ত বয়সের ছেলে বলতে ইহাদ আর ইহাদের ভাই ঈশান রয়েছে কিন্তু ঈশানের তো কোনো পাত্তাই নেই সে তো পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত তাই সব কাজের দায়িত্ব ঝেঠু আমার ঘাড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন।”

–“হ্যাঁ ঝেঠু আপনাকে অন্ধের মতন যেমন বিশ্বাস করে তেমনি ভালোওবাসে কিন্তু।”
–“হ্যাঁ তা অবশ্য তোমাদের বাড়ির সকলেই আমাকে একটু আধটু ভালোবাসে। খালি কিছু মানুষ ছাড়া।”
কালকের রুমালের কথা মাথায় আসতেই বলে ফেললাম,
–“আচ্ছা সেহেরিশ ভাইয়া আপনি কালকে ইহাদ ভাইয়ার বিয়ের দিন কি করে বুঝলেন আমার রুমালটির প্রয়োজন? আমি তো আপনাকে বলিনি বলুন?”
আমার কথা শুনে তিনি কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে তারপর বলে ওঠলেন,

–“জুঁইফুল কেউ যদি কাউকে মন থেকে অনুভব করে তাহলে সবকিছুই বোঝা সম্ভব। আর তোমার মনে নেই? তুমিই তো আমাকে সেদিন বলেছিলে তুমি কাউকে ভালোবাসো। আর দুইয়ে দুইয়ে চার হতে বোধহয় আমার কাছে একটু বাকি আছে বুঝেছো? ওই একটু মিলালেই সব হিসেব পরিষ্কার!”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওনি নিজে চলে গেলেন! ওনি চলে যেতেই ভাবনারা মনে এসে উঁকি দিচ্ছে! উনার কথাগুলো কেমন ঝট পাকানো বুঝতে পারছি না কোনো কিছু। দুইয়ে দুইয়ে চার বলতে উনি উনি বোঝালেন আমাকে? এই ব্যাপার নিয়ে যতো তাড়াতাড়ি উচিত খোলসা করে ওনার সঙ্গে কথা বলতে হবে। আর কিছু ভাবার আগেই ছাঁদে এসে উপস্থিত হলেন বৃষ্টি আপু! ডাক পড়লো ওনার সঙ্গে যেতে হবে আমাকে। আমিও কোনো কারন জিগেস করা ছাড়াই উঠে রেডি হয়ে চললাম তার সঙ্গে। কারন বৃষ্টি আপুকে যে আমি অন্ধের মতন বিশ্বাস করি।

হাতে থাকা ঘড়িটিতে চোখ বুলিয়ে দেখলাম প্রায় দশ মিনিট হয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি আপু আমাকে এই রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে সামনের দোকানে পানি খাবে বলে! আপু আমাকে বাহিরে নিয়ে এসেছে কোনো বান্ধবীর থেকে নোট’স নিবে বলে। যাত্রাপথেই পানি পিপাসার কথা বলে ফুটপাতে থাকা দোকানে প্রবেশ করে পানি খাওয়ার জন্য। এতোক্ষণ সময় ধরে আসছে না দেখে আমি পা বাড়ালাম আপুকে দেখার জন্য।

গিয়ে দেখতে পেলাম আপু কোনো একটা ছেলের সঙ্গে কথা বলছে হেঁসে হেঁসে! একটু ভালো করেই তাকাতেই ছেলেটির মুখ দেখতে পেলাম সেই মহাশয় আর কেউ নয় সে হলো নয়ন ভাইয়া! নয়ন ভাইয়ার সাথে আপু কি সুন্দর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছে পানি খাওয়ার নাম করে। আমি পা টিপেটিপে গেলাম আমি আপুর পিছনে তাকিয়ে আছি আমাকে দেখে নয়ন ভাইয়া চুপ করে গেলো আপু নয়ন ভাইয়াকে বলছে,
-“আর কিছু বলবে? জুঁই অপেক্ষা করছে আমাকে যেতে হবে এখন। না হলে পরে হাজার প্রশ্ন জিগেস করবে।”
আমি বললাম,

–“আর কষ্ট করে যেতে হবে না তোমাকে আমিই তোমার টানে চলে এসেছি।”
আমার গলার আওয়াজ শুনে আপু পিছনে ফিরে আমাকে দেখতে পেয়ে চমকে ওঠলো তা বেশ ভালো করেই তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে! আমতা আমতা করে বলে ওঠলো,
–“জুঁই তুই কখন এলি বল? আর আমার টানে মানে কি বলছিস এসব?”
-“আপু আমতা আমতা করো না। আমি কিন্তু সব বুঝি বুঝেছো? তুমি তলে তলে টেম্পু*”
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আপু আমাকে টানতে টানতে ওখান থেকে নিয়ে এনে রাস্তার এক ধারে এসে বললো,

–“এক থাপ্পড় মারবো জুঁই! তুই নয়নের সামনে ওসব কি বলছিলি? ও কি ভাববে বলতো?”
–“এখন নয়ন কি ভাববে তার জন্য তুমি আমাকে থাপ্পড় ও মারবে?”
–“রাগ করিস না। তুই তো জানিসই ও আমাকে ভালোবাসে আমি কিন্তু ওকে*
আপুর মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে এসে বললাম,
-“তুমি ও ভালোবাসো নয়নকে!”

আমার কথায় আপু বিষম খাওয়ার উপক্রম! আপু ঠান্ডা গলায় বলে ওঠলো,
–“আজেবাজে কথা একদম বলবি না। চল এবার বাসায় যাওয়া যাক।”
–“আপু যাকে ভালোবাসো বলে দাও। গোপন করে রেখো না। ভালোবাসা প্রকাশ করার জিনিশ গোপন করার নয়। হয়তো একদিন এই গোপনীয়তার জন্য তুমি তোমার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলবে। তাই বলছি প্রকাশ করে দাও নতুবা আমাকে তো দেখতেই পাচ্ছো? হয়তো এরকম কিছু ঘটে যাবে তখন?”

আমার কথা শুনে আপু থমকে দাঁড়ালো কিছুক্ষণ! তারপর চুপ থেকে কিয়ৎক্ষন পূর্বে বলে ওঠলো,
–“জুঁই ভালোবাসা ভালো কিন্তু সেই ভালোবাসা যদি স্বীকৃতি না পায়? তাহলে যে ভালোর থেকে বড্ড খারাপ হয়ে দাড়াঁয় সেই ভালোবাসা যা সহ্যনীয় নয়। তার থেকে যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতো দে সবকিছু।”

আপুর কথার পৃষ্ঠে আর আমি কিছু বললাম না। আপু বরাবরই বিচক্ষণ। তাই যা বলেছে বা করবে নিশ্চয়ই তা ভেবে চিন্তেই করবে তাই আর কথা বাড়ালাম না। এবার সোজা বাড়িতে চললাম। বাড়িতে পৌঁছুতেই ছাঁদে ওঠে গেলাম একা একা দাঁড়িয়ে খোলা আকাশ অবলোকন করছি। পড়ন্ত বিকেলবেলা ধরনী তার অপরুপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিকে। মনোরম পরিবেশ স্থায়ী হয়েছে তবে সেটা কিছুক্ষণের জন্যই কারন কিয়ৎক্ষন সময় অতিবাহিত হবার পরেই আবার সূর্যাস্ত ডুব দিয়ে বিকেল ঘনিয়ে রাত্রি নামবে। আমি একলা একলা দাঁড়িয়ে আছি ছাঁদের কিনারায় এর মধ্যে দিয়েই এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেলো সাই সাই করে আমার মাথার উপর দিয়ে! কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই পিছন ঘুরে দেখলাম সেহেরিশ! মনে প্রশ্ন উঁকি দিলো এই এতো বেলা অব্দি উনি আমাদের বাড়িতে কি করছে? প্রশ্ন মাথায় আসতেই বলে ফেললাম,

–“সেহেরিশ ভাইয়া আপনি কিছু বলবেন?”
–“জুঁইফুল একটা কথা বলবে? খুব করে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আজকে।”
-“হ্যাঁ বলুন দেখি?”
আমার সম্মতি পেতেই ওনি নিঃসংকোচে বলে ওঠলেন,
–“তোমার কি আমার সঙ্গে কথা বলতে বা আমার উপস্থিতি বিরক্ত লাগে? নিঃসংকোচে বলবে?”
উনার প্রশ্ন শুনে কেনো জানি না ভেবেই হুট করে মুখ দিয়ে বলে ফেললাম,
-“একদমই না! বিরক্ত তো দূর বরং আপনি আমার আশেপাশে থাকলে কেনো জানি আমার এক আলাদা ভালো লাগে!”

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৪

আমার কথা শুনে সেহেরিশ ভাইয়া মুচকি হেসে চলে গেলো! যাওয়ার সময় বলে গেলো,
-“এটুকুই জানার ছিলো আমার জুঁইফুল!”
আমি এক দৃষ্টিতে ওনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি! কি বলতে কি বলে ফেললাম? এখন তো উনি আমাকে কি জানি ভাবছে? কথাবার্তা একটু সাবধানে বলা উচিত ছিলো আমার!

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৬