প্রণয় বিরহ পর্ব ১৮

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৮
অর্ষা আওরাত

বৃষ্টি আপুর রুমের ভেতর যেতেই আমি সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির হলাম বৃষ্টি আপুর কাছে! আপুর কাছে যেতেই আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ যাবত! আপু এতো সাজগোজ করেছে তাও এতো সকালবেলা? আমি কিছু প্রশ্ন করবো এর আগেই আপু ঘরে থাকা পার্লারের মেয়েগুলোকে বাহিরে যেতে বলে দরজা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর,

–“আজকে একটু পরে আমাকে দেখতে আসবে জুঁই! আর সবকিছু ঠিকঠাক মতন হলে আজকেই আমাদের রেজিস্ট্রি হয়ে যাবে।”
আপুর কথা শুনে কি রিয়েক্ট করবো ভুলে গেছি! কাল রাত অব্দিও আমরা একসাথে কতো গল্প করেছি আর আজ এক রাত্রের ব্যবধানেই আপুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! ব্যাপার ক্লিয়ার হতে আমি আপুকে জিগেস করলাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“এসব কি বলছো আপু? তোমার বিয়ে মানে? কই কালকে তো কিছুই জানতে পারলাম না? আজকে এক রাত্রের ব্যবধানে সকালবেলা বলছো তোমার বিয়ে!”
আমার কথা শুনে আপুর মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলো না! সে চুপটি করে আগের ন্যায় বসে রয়েছে। আপুকে কিছু বলবো এর আগেই মস্তিষ্কে এসে ভর করলো একটি কথা আপুর ভালোবাসা? তার কি হবে?

-“আপু সবই বুঝলাম আজকে তোমার বিয়ে কিন্তু তোমার ভালোবাসা সেটা? তার কি হবে বলো? তুমি এই বিয়েতে রাজি হলে কেনো?”
আপু আগের ন্যায় সোজাসাপটা জবাব,

–“ভালোবাসা সেটা প্রকাশ করিনি জুঁই। নয়ন প্রকাশ করেছিলো। আমি জানতাম আমাদের এক হওয়া সম্ভব নয় কারন নয়নের কোনো চাকরি বাকরি কিছুই নেই আর ওরা যথেষ্ঠ গরীব এর মাঝে নয়নের কিছু খারাপ দিকও আছে! কিন্তু তাতে আমার কোনো আপত্তি থাকতো না আপত্তি আছে এই গোটা পরিবারের। তাই তো আমার অনুভুতি আমি মনের কোনে লুকিয়েই রেখেছি কখনো প্রকাশ না করে! আর সেই না প্রকাশ করা অনুভুতি চাপা পড়ে যাবে একদিন সংসারের স্তুপে! আমি জানতাম আমি যদি এখন এগুলো পরিবারের কাউকে বলি কেউই রাজি হবে না। তাই নয়নকে আশার আলো দেখিয়ে নিভিয়ে ফেলার চেয়ে আলোটা না জ্বালানোই উত্তম।”

-“কিন্তু আপু একজনকে ভালোবেসে আরেক জনের সঙ্গে সুখী হবে কি করে তুমি?”
এবার আপু ওঠে দাঁড়ালো রুমের জানলার কাছে গিয়ে আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-“সেই কারনেই আমার প্রণয় শুরু হবার আগেই কিন্তু আমি তা লুকিয়ে রেখেছি জুঁই। যা সম্ভব না তার জন্য মায়াও বাড়ায়নি আমি কোনোদিন।

কিন্তু হয়তো নয়নের জন্য আলাদা কিছু অনুভুতি থাকবে মনের কুঠুরিতে। যতোই হউক জীবনের প্রথম পুরুষ ছিলো সে আমার। কিন্তু এখন এসব বলিস না আর। যা হচ্ছে হতে দে আমাকে নিজের মতন ছেড়ে দে। কাউকে কিছু বলবিও না। বলেও লাভ নেই সিনক্রিয়েট হবে শুধু শুধু কারন এই বাড়ির কেউ আমাদের সম্পর্ক মানবে না। উল্টে নয়নকে অপমানিতো হতে হবে যা আমি সহ্য করতে পারবো না।”

আপুর কথা মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে! সবকিছু এতো সহজে শেষ করে দিবে? আমি বোঝানোর জন্য চেষ্টা করলাম,
-“কিন্তু আপু একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা উচিত নয় কি?”
–“জুঁই কি বললাম? যা হচ্ছে হতে দে আমার কোনো আপত্তি নেই।”

আপুর কথা শুনে কি বলবো বলার কোনো ভাষা নেই! সে বরাবরই এরকম চুপচাপ থাকে সর্বক্ষন। কখনো কোনোকিছু বলেনি মুখ ফুটে। আজ তার ফল ভুগতে হচ্ছে তার নিজের ভালোবাসা দিয়ে! আমি কি করবো আর এখানে? আপুর বলা প্রতিটি কথা যে তিক্ত সত্যি! নয়ন ভাইয়াকে সত্যিই এই বাড়ির কেই মেনে নিবে না। তার অনেক ভালো দিক আছে যা সমাজের চোখে খারাপ দিক হিসবে বিবেচিতো!

মূলত তিনি গরিব দুঃখী মানুষ দের সহোযোগিতা করেন এমনকি সমাজে যাদের নোংরা মহিলা বলে বিবেচিতো তাদেরকেও নয়ন ভাইয়া ভালোর দিকে ফিরিয়ে এনেছে কিন্তু এটা সমাজের চোখে খারাপ! আর সবচেয়ে বড়ো হলো এই সমাজে বেকার যুবকদেরও যে কোনো দাম নেই! সবমিলিয়ে আপু ঠিকই বলেছে নয়ন ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়েটা সম্ভব নয়। আমি আর কিছু না বলে আপুর রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম নিচে। সবাই কতো ব্যস্ত ভঙ্গিতে কাজকর্ম করে যাচ্ছে! আমি গিয়ে সোফায় বসলাম। আমার পাশে এসে সেহেরিশ ভাইয়া বসলো। ওনাকে বসতে দেখেই আমি জিগেস করে ওঠলাম,

-“বৃষ্টি আপুর বিয়েটা কি এভাবে হুট করে হয়ে যাচ্ছে নাকি সবকিছু আগ থেকে ঠিক করা ছিলো? আমি জানি আপনি আগাগোড়া সবটাই জানেন।”
-“হ্যাঁ বৃষ্টির বিয়েটা আরো এক মাস আগেই ঠিক করা ছিলো সামনে ইহাদের বিয়ে ছিলো বলে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এখন ইহাদের বিয়ে শেষ তাই ছেলের বাড়ির লোকেরা তাড়াতাড়ি বিয়ে সেড়ে ফেলতে চাইছে।”

সেহেরিশ ভাইয়ার কথা শুনে কিছু বলতে যাবো এর আগেই দেখতে পেলাম সিঁড়ি বেয়ে উপর থেকে প্রিমা আপু নেমে আসছে। পড়নে তার সেই ওর্য়েস্টান ড্রেস। জিন্স প্যান্ট আর টি শার্ট পড়ে বেরোচ্ছেন তিনি নিশ্চয়ই কোথায় যাবে হয়তো। হাতে মোবাআর পার্সও দেখা যাচ্ছে। উনি নিচে নেমে আসতেই ঝেঠু বলে ওঠলো,
–“প্রিমা তুমি কোথায় যাচ্ছো এতো সকালবেলা? আর এসব কি ড্রেস পড়েছো তুমি? বাড়িতে পড়ো ঠিকআছে কিন্তু বাহিরে গেলে এসব ড্রেস পড়ে যাচ্ছো কেনো?”

ঝেঠুর কথায় প্রিমা আপুর মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলো না। সে আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে ঝেঠুকে উত্তর দিলো,
–“আমার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি আমি। আর হ্যাঁ ড্রেস নিয়ে আপনাদের এতো প্রবলেম কেনো? আমার যা ইচ্ছে আমি তাই পড়বো বুঝেছেন?”

ঝেঠুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিমা আপু হনহনিয়ে চলে গেলো রুম থেকে। প্রিমা আপু যেতেই উপর থেকে ফ্রেশ হয়ে ইহাদ ভাইয়া নিচে নেমে আসলো। ইহাদ ভাইয়াকে দেখতে পেয়ে ঝেঠু বলে ওঠলো,
-“ভারী বিয়ে করেছো ভালোবেসে তুমি! এর জন্য না পস্তাতে হয় একদিন তোমাকে।”

ঝেঠুর কথা যে ইহাদ ভাইয়া বুঝতে পারছে না সেটা তার মুখশ্রীতে বেশ ভালো ভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে! আমি সেদিকে কর্নপাত না করে সেহিরশ ভাইয়ার কথা শুনে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম নয়ন ভাইয়াকে খোঁজার উদ্দেশ্য! ওনাকে তো সবটা জানাতে হবে কি হচ্ছে এখানে?

পরিবার মেনে না নিলে আর একটি মাত্রই রাস্তা অবশিষ্ট আছে দরকার পড়লে সেই রাস্তায় হাঁটতে হবে। আমি অনেক কষ্টে নয়ন ভাইয়ার ঠিকানা জোগাড় করে তাদের বাড়িতে যেতেই দেখলাম তালা ঝুলানো! তালা ঝুলানো দেখে আমার মাথায় বাজ পড়বে এরুপ অবস্থা! এতো কষ্ট করে এই বাড়িতে পৌছুলাম কিন্তু বাড়িতে তালা দেওয়া! আশেপাশের লোকদের থেকে জিগেস করে জানতে পারলাম তারা সপরিবারে কোথাও গিয়েছে আজ দু’দিন যাবত। এখন কি করবো আমি?

এতো কিছু করলাম কিন্তু কোনো কিছুই তো হলো না। হতাশ মন নিয়ে আবারো বাড়িতে গেলাম বাড়িতে যেতেই দেখতে পেলাম এখনো মেহমান আসে নি আর আধাঘন্টার ভিতরে তারা পৌঁছুবে। ক্লান্ত শরীর আর বিধ্বস্ত মন নিয়ে সোফায় বসে পড়লাম! ড্রয়িং রুমে আপাততো বাড়ি সাজানোর লোক ছাড়া আর কেউই নেই। হঠাৎই কেউ মুখের সামনে ঠান্ডা শরবত এনে ধরতেই চোখ খুলে দেখলাম সেই মানুষটি আর কেউ নয় সেহেরিশ ভাইয়া!

-“এতো রৌদ্রে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে আসলে এই ঠান্ডা শরবত টুকু খেয়ে নাও দেখবে ভালো লাগবে।”
আমিও আর কোনো কথা না বলে শরবত টুকু খেয়ে নিলাম। এক রাশ শ্রদ্ধার চোখে তাকালাম মানুষটির দিকে। ঠিক সময়ই সবসময়ই ওনি পাশে থাকেন আমার।”
সেহিরশ বলে ওঠলেন হুট করে,

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৭

-“আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে না থেকে বৃষ্টি আপুর কাছে যাও আপুর এখন তোমাকে প্রয়োজন খুব করে।”
ওনার কথা বলা শেষ হতেই মনে পড়লো সত্যিই তো আমার তো এখন ওখানে যাবার কথা! আমি সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা ধরলাম বৃষ্টি আপুর রুমের উদ্দেশ্য। রুমে গিয়ে দেখি আপুকে লাল রঙের একটি শাড়ি পড়িয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে খুব সুন্দর করে সেজে গুঁজে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমাকে দেখতেই একরাশ মায়া ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আমার দিকে যার অর্থ আমি বেশ ভালো করেই বুঝছি। হইচই পড়ে গেলো নিচে মানে মেহমান চলে এসেছে।

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৯