প্রণয় বিরহ পর্ব ১৭

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৭
অর্ষা আওরাত

দুপুর গড়িয়ে বিকেল আবার বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে পড়েছে তবুও এখনো ইহাদ ভাইয়ার দেখা নেই বাড়িতে! সবাই ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বৃথা। বারবার ফোন বন্ধ বলছে। সবাই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নির্ঘুম কাটছে বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের। আমার মা আর কাকীকে ঝেঠিমা ধমকে একটু আগে রুমে পাঠিয়েছেন।

ইহাদ ভাইয়া যাবার পরপরই ইহাদ ভাইয়ার কথা মোতাবেক প্রিমা আপু এসে ঝেঠিমার কাছে স্যরি বলেছে কিন্তু ইহাদ ভাইয়া যে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে আর ফেরার নাম নেই। সবাই বিষন্ন মন নিয়ে সোফায় বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন ইহাদ ভাইয়া বাড়িতে আসবে। কিছুক্ষন পরেই দরজা খোলার শব্দে সবাই তাকিয়ে দেখে ইহাদ ভাইয়া ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করছে! ইহাদ ভাইয়াকে দেখেই ঝেঠিমা হন্তদন্ত হয়ে ভাইয়ার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“এতোক্ষণ ধরে কোথায় ছিলিস তুই ইহাদ? আর বাড়িতে আসিস নি কেনো?”
ইহাদ ভাইয়া মাটির নিচে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে বললো,
–“এমনি বাহিরে ছিলাম মা। এতো চিন্তা করো না। তোমরা সবাই এখানে নানীমা কোথায়? তাকে দেখতে পাচ্ছি না যে আমি?”
ঝেঠিমা ইহাদ ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো,

–“যার জন্য এতো অশান্তি এতো কিছু আমি তোর নানী মা-কে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে এই বাড়িতে! সে টেলিফোনে বলেছিলো আজকে এসে তার নাতবৌ এর হাতের রান্না খেতে চায় মূলত সেই কারনেই আসা কিন্তু আমি মিথ্যা বলে মা’কে আসতে বারন করে দিয়েছি।”

-ঝেঠিমার বলা প্রত্যেকটা কথাই আমরা জানতাম বিধায় কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া করেনি। কিন্তু ইহাদ ভাইয়ার চোখ মুখে লজ্জার ছাপ বেশ ভালো করেই ফুটে ওঠেছে। ভাইয়া মাথা নিচু করে রেখে বললো,
–“মা তুমি শেষ পর্যন্ত নানী মা’কে আসতে বারন করে দিলে? আর কি বলে বারন করেছো তুমি? প্রিমা কি ক্ষমা চায়নি তোমার কাছে?”

–“শান্ত হয়ে বস। তোর নানী মা’কে বারন করা ছাড়া আর কি উপায় রেখেছো তুমি? আমি বলেছি যে প্রিমার শরীর ভালো নেই পরে একদিন আসতে। আর যা হয়েছে ভালোই হয়েছে বোধহয় কারন তোমার নানী এসে কি দেখতো? তোমার বউ ওর্য়েস্টান ড্রেস পড়ে সারাদিন শুয়ে বসে থাকে বাড়িতে, বড়োদের সাথে তর্ক করে এগুলোই কি দেখতো? তার চেয়ে বরং আমি বারন করে দিয়েছি এটাই ভালো হয়েছে। তোমার পছন্দ, ভালোবাসাকে গুরুত্ব দিয়েছি আমরা কারন তুমি প্রিমাকেই বিয়ে করবে বলে জেদ ধরেছিলে। এখন দেখো জেদের ফল ভোগ তোমাকেই করতে হবে। আর প্রিমা ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু আমার সেই ক্ষমায় কিছু যায় আসে না! এখন এতো রাত্রে তুমি এসেছো এতো কথা না বলে তুমি রাত্রের খাবার খেয়ে নিজের রুমে যাও। জুঁই তুই একটু ইহাদকে কষ্ট করে খাবারটা বেড়ে দিস তোর মা তো ঘুমাচ্ছে আর আমারো আর ভালো লাগছে না আমি নিজের রুমে গেলাম।”

ইহাদ ভাইয়া করুন দৃষ্টি মেলে ঝেঠিমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ঝেঠিমাকে পিছু ডেকে বললো,
-“আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিও মা! আমি নিজের রুমে যাচ্ছি।”
-ইহাদ ভাইয়ার কথা শুনে ঝেঠিমা আমার নাম ধরে ডেকে বললেন,
-“জুঁই ইহাদকে বলে দিস দুপুরেও কিছু খায়নি এখন যেনো না খেয়ে যায়। আশা করি এক কথা আমাকে একবারের বেশি বলতে হবে না।”

-ঝেঠিমার কথা শুনে আমি আর কোনো কিছু না বলে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে গেলাম। অনেক রাত হয়ে গেছে সেই কারনে খাবার গরম করে তারপর খাবার বারতে শুরু করলাম। ইহাদ ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে এসে আমাকে বললো,
–“ভাত একদম অল্প দিবি। বেশি কিছু দেবার দরকার নেই মায়ের কথা রাখতেই খেতে বসা”
আমি কোনো কথা না বলে বেশ অল্প পরিসরেই তার কথা মোতাবেক খাবার বেরে দিয়ে দূরে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এক লোকমা ভাত মুখে পুরে কেমন থম মেরে বসে রইলো ইহাদ ভাইয়া! তার এরুপ মুখশ্রী দেখে আমি কৌতুহল বসতো জিগেস করলাম,

-“ভাত খাচ্ছেন না কেনো? এভাবে বসে রয়েছেন?”
ইহাদ ভাইয়া আমার দিকে করুন দৃষ্টি মেলে বললো,
-“জুঁই আমি কিছু ভুল করলাম প্রিমাকে বিয়ে করে?”
ভাইয়ার এমন কথায় খানিকক্ষণ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে! ইহাদ ভাইয়া আমাকে এসব বলছে? যেই প্রিমার জন্য উনি আমাকে অপমান পর্যন্ত করেছিলো সেই আমাকে এসব জিগেস করছে? আমি তাকে আমার মন কোঠর থেকে যথা সম্ভব মুছে ফেলেছি বললেই চলে তাই এখন এসব কথা বলে মায়া বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই! আমি বলে দিলাম,

–“ভালোবেসে বিয়ে আপনি করেছেন আমি নই! তাই এখন ভুল করেছেন নাকি সঠিক করেছেন সেটা নিতান্তই আপনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমাকে এসব কিছু জিগেস করবেন না।”
আমার বলা কথাগুলো হয়তো ভাইয়া এই মুহুর্তে আশা করেনি। ভেবেছিলো তাকে সহানুভূতি জানাবো আমি। কিন্তু আমার দরকার নেই ওসবের কিছু। আমি ওনার দিকে পানি আর তরকারির বাটিগুলো এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-“আপনি তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। আপনার খাওয়া হলে আমি সবকিছু গুছিয়ে যাবো।”
-“খাওয়ার ইচ্ছে নেই রে জুঁই।”

-আমি কিছু না বলে চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলাম আগের ন্যায়। যার অর্থ হলো উনি খাবে কি খাবে না তাতে আমার কিছু যায় আসে না! হয়তো উনি সেটা বুঝেওছেন তাইতো আর এক গ্রাস খাবার মুখে পুরেই পানি ঢেলে বলে ওঠলেন,
–“মায়ের কথা রাখতে এই দুই গ্রাসই আমার জন্য যথেষ্ট।”

আমি আর কোনো কথা না বলে খাবারের টেবিল গুছিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম ঘুমোবার উদ্দেশ্য! সকাল সকাল নিচে ঝেঠুর হইচইয়ের আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো! কি হয়েছে সেই কৌতুহল জানতেই ফ্রেশ না হয়েই ছুট লাগালাম নিচে ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্য! নিচে যেতেই সুর্দশন মানবের একজোড়া চোখ আমাকে জানান দিলো এই তো সেহেরিশ ভাইয়া! হ্যাঁ ঝেঠু সেহেরিশ ভাইয়াকে উচ্চ স্বরে কিছু বলে বোঝাচ্ছে হয়তো আর সেহেরিশ বাধ্য ছেলের মতন মাথা দোলাচ্ছে! ঝেঠু চলে যেতেই আমি নিচে গেলাম উনার কাছে।

–“কি ব্যাপার বলুন তো? এতো সকাল সকাল আপনি এই বাড়িতে? আর ঝেঠু আপনাকে বকছিলো কেনো?”
আমার কথা শুনে সেহেরিশ ভাইয়া উত্তর দিলো,
-“জুঁই ব্যাপার তো আছেই তাইতো আমি তোমাদের বাড়িতে এসেছি। আর প্রথমতো এতো সকাল নয় ঘড়িতে দেখো সাড়ে আটটা বাজে! কালকে অতো রাত্রে ঘুমাবার কারনে তোমার মনে হচ্ছে এখন ভোরবেলা। ঝেঠু তো আমাকে কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছিলো বুঝলে?”

ওনার সব কথা বুঝেছি কিন্তু আমি যে অতো রাত্রে ঘুমিয়েছি সেটা উনি জানলো কি করে? প্রশ্ন মনে আসতেই উনাকে বললাম,
-“সবই ঠিকআছে কিন্তু আপনি কি করে জানলেন আমি রাত করে ঘুমিয়েছি?”
-“জুঁইফুল আমি সবকিছুই জানি বুঝেছো তুমি? আর কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো তাড়াতাড়ি নিচে তোমার জন্যও কাজ আছে।”

-কাজের কথা বুঝতে পারলাম না কিছু। ওনাকে কিছু জিগেস করবো এর আগেই উনি গায়েব হয়ে গেলেন কারো ডাকে। আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখি পুরো বাড়ি ইতিমধ্যে এই কয়েক মুহুর্তের মধ্যে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়ে গেছে! বুঝতে পারলাম না কোনো কিছু। নিচে যেয়ে মা’কে দেখেই প্রশ্ন করে ওঠলাম,
–“মা নিচে সবাই এতো ফুল দিয়ে সাজিয়েছে কেনো? আর কি হচ্ছে? সকাল সকাল কি শুরু করলে তোমরা? আমাকে একটিবাও ডাকলে না কেনো?”

আমার কথাগুলো বোধহয় মা’কে বিরক্ত করে তুলেছে সেটা মায়ের মুখ চোখ দেখেই বুঝতে পারছি বেশ! মা কাঠ গলায় আমাকে বলে দিলো,
–“তোর এই এতো প্রশ্নের উক্তর আমি দিতে পারবো না। আমার হাতে এখন অনেক কাজ পড়ে আছে। তুই বৃষ্টিকে গিয়ে জিগেস কর? সবকিছু সে ভালো করে জানে।”

মা’য়ের কথা শুনে হাঁটা লাগালাম বৃষ্টি আপুর রুমের দিকে। এর আগে চোখ গেলো ইহাদ ভাইয়ার রুমের দিকে দরজা খোলা রেখেছে বিধায় চোখজোড়া না চাইতেও ওখানে আটকে গেলো! রুমে ভাইয়াকে দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু প্রিমা আপু সে উপুর হয়ে শুয়ে ফোন টিপছে! পরনে তার স্কার্ট আর টি শার্ট। বাড়িতে যে কোনো কিছু হচ্ছে সেদিকে বোধহয় খেয়াল নেই ওনার!

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৬

ওনি সারাদিন খালি ফোন নিয়েই ব্যস্ত আর পরনের কাপড়ের কি ধরন! এতো বড়ো মহিলার কি লজ্জা ও নেই আল্লাহ জানে। আর কোনো কিছু না ভেবে বৃষ্টি আপুর রুমে গেলাম বৃষ্টি আপুর রুমে যেতেই দেখতে পেলাম কতোগুলো মেয়ে এসে আপুকে ঘিরে বসে রয়েছে! বুঝতে পারলাম না কোনো কিছু! সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কি হচ্ছে বৃষ্টি আপুর সাথে? রুমে এতো মানুষ কেনো? আর বাড়িতেই এতো সাজানো হয়েছে কেনো? প্রশ্নের উত্তর পেতে বৃষ্টি আপুর কাছে গেলাম।

প্রণয় বিরহ পর্ব ১৮