প্রণয় বিরহ পর্ব ৬

প্রণয় বিরহ পর্ব ৬
অর্ষা আওরাত

বাড়ির পিছনের দিকে সেই পুকুর ঘাঁটের পাশে আমাকে ইহাদ ভাইয়া টেনে নিয়ে এসেছে। পুকুর ঘাঁটটি একলা আমাদের বাড়ির পিছনের দিকটায় হওয়ায় এখানে কেউ তেমন একটা আসে না। ভাইয়া আমাকে পুকুর ঘাঁট থেকে কিঞ্চিৎ পরিমান দূরে নিয়ে এসে দাঁড় করালো। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ভাইয়া নিজেই বলতে লাগলো,

–“তুই তো বলেছিলি তুই আমাকে ভালোবাসিস তাই না?”
–ভাইয়াা কথা শুনে হকচকিয়ে ওঠলাম কিছুক্ষণের জন্য! ভালো করে লক্ষ্য করলাম ভাইয়ার দৃষ্টি আমার দিকে আবদ্ধ! সেই দৃষ্টি কোমল,শান্ত ভাইয়া কি বলতে চাইছে বা করকে চাইছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি বললাম,
–“আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না তাহলে এসব কথা বলে কি লাভ বলুন তো?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–ভাইয়া এবার কিঞ্চিৎ পরিমান আমার সামনে এগিয়ে এসে আমার হাত দুখানি তার নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো! কি হচ্ছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার! ভাইয়া এরকম ব্যবহার করছে কেনো?
–“দেখ জুঁই আমি তোর সাথে একটু রুডলি ব্যবহার করেছি তার জন্য স্যরি। এখন তুই সেটার রিভেঞ্জ নিস না প্রিমাদের বাড়ি গিয়ে! আমি তোর কাছে অনুরোধ করছি তুই যে আমাকে ভালোবাসিস এ ধরনের কোনো কথাই প্রিমা বা ওদের পরিবারের কাউকে বলে ওখানে সিনক্রিয়েট তৈরী করিস না প্লিজ। তুই যদি সত্যিই আমাকে ভালোবেসেছিলিস তাহলে আমার এই অনুরোধ টা তুই রাখবি বল?”

–এতোক্ষণে বুঝলাম ভাইয়া কেনো আমার হাত ধরে এখানে নিয়ে এসেছে! এখানে এনেছে যাতে আমার জন্য ওনার বিয়েতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে সেটাই সর্তক করতে। আর আমি পাগলের মতন কিসব ভাবছিলাম ভাইয়া হয়তো আমাকে ভালোবাসবে। নিজের ভাবনার কথা মনে পড়তেই বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো! ভাইয়ার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে উল্টোদিক ফিরে বলে দিলাম,

–“আপনি চিন্তা করবেন না। আমার জন্য আপনার বিয়েতে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। আমি আমার ভালোবাসার কথা কিছুই বলবো না কাউকে। আপনি ওগুলো নিয়ে সংকোচে না থেকে নিজের মতন আনন্দ করুন।”
ভাইয়াকে কোনো কিছুর বলার সুযোগ না দিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। সকাল সকাল মনটা বিষিয়ে গেলো একেবারে ভাইয়ার কথা শুনে! সোফায় বসতে না বসতেই সেহেরিশ বলে ওঠলো,

–“কি এমন রাজকার্য করে আসলে যে এভাবে ধপ করে বসে পড়লে রুমে আসতে না আসতেই?”
–“দেখুন সেহেরিশ ভাই আমাকে একটু একা থাকতে দিন। এখন আর দয়া করে কথা বলবেন না। একটু পর ওই বাড়িতে যেতে হবে তাই আমি চাচ্ছি না এখন এই যাওয়ার পথে কোনোরকম ব্যাঘাত ঘটুক।”

আমার কথার পৃষ্ঠে সেহেরিশ ভাইয়া আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ আগের ন্যায়ই বসে রইলেন। হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমার একা থাকাটা এখন কতোটা জরুরী। দুমিনিট এর ভিতরেই বাড়ির সবাই একত্রিত হয়ে নিচে নামলো। সবাই একে একে গাড়িতে ওঠে বসলো। আমি একটু দেরিতে য়াওয়ায় দেখলাম গাড়ির পিছন দিকে আর একটাই সিট ফাঁকা আছে আর পাশেই ইহাদ ভাইয়া বসেছে! এখন আর কোনো উপায় নেই যে অন্য সিটে গিয়ে বসবো তাই বাধ্য হয়েই ভাইয়ার পাশে সিটে বসতে হবে। আমি সিটে বসবো ঠিক এর আগেই ইহাদ ভাইয়া বলে ওঠলেন,

–“কিরে গাড়িতে ওঠবি না? এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে গাড়িতে ওঠবি তো নাকি?”
ভাইয়া কতো সহজেই তার পাশে বসে যেতে বলছে আমায় কিন্তু ওনাকে যে যতোবার দেখি আমি ততবারই আমার পুরনো ক্ষত তাজা হয়ে ওঠে মানুষটি বুঝি তা জেনেও না জানার ভান ধরে থাকে সবসময়! অগত্যা বাধ্য হয়েই ভাইয়ার পাশের সিটেই ওঠে বসলাম। আমি গাড়িতে ওঠতেই গাড়ি ছেড়ে দিলো। পুরো গাড়িতে নজর বোলালাম সেহেরিশ ভাইয়া কোথায় বসেছে দেখার জন্য। কিন্তু কোথাও তার দেখা পেলাম না। হঠাৎই মনে হলো হলো উনিইতো ড্রাইভিং করছে উনি ছাড়া গাড়ি চলবে কি করে? সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেলাম ড্রাইভিং সিটে ওনি বসে গাড়ি চালাচ্ছে আর ওনার পাশে বসে আছে বৃষ্টি আপু! আমাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে ইহাদ ভাইয়া ধমকের সুরে বলে ওঠলো,

–“এদিক ওদিক তাকাচ্ছিস কেনো বারবার? চুপচাপ বসে থাক।”
ভাইয়ার ধমক শুনে তাকানো বন্ধ করে চুপচাপ বসে রইলাম। আমার পাশে ভাইয়া ফোনে ব্যস্ত আছে। এই প্রথমবার ইহাদ ভাইয়ার এতো কাছে এসে বসলাম আমি। ওনার এতো কাছে আছি ভাবতেই এক রাশ ভালোলাগা ছুঁয়ে গেলো মনের অন্তুরজুড়ে। কিন্তু হঠাৎই মনে হলো ওনাকে নিয়ে যতো কম ভাব যায় ততোই মঙ্গল! ওনি আর এখন আমার নেই শুধু এখন কেনো কোনোদিনও আমার ছিলো না আর ভবিষ্যৎেও হবে না!

তৎক্ষনাৎ পুরনো কথা মনে পড়তেই মনের অন্দরমহলে পোড়া দহন শুরু হতে লাগলো! এখন যেই মানুষটা আমার পাশে বসে আছে কিছুক্ষণ পরে সেই মানুষটাই অন্যের হতে চলেছে। কথাগুলো মনে পড়তেই কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে! কেনো জানি কান্নারা দলা পাকিয়ে ভেতর থেকে আসতে চাইছে কিন্তু আমি মাথা নিচু করে সবটা সামলিয়ে যাচ্ছি নিজের মতন করে। গাড়ির ব্রেক কষায় না চাইতেও গিয়ে পড়লাম ইহাদ ভাইয়ার গায়ের উপর!

টাল সামলাতে না পেরে ইহাদ ভাইয়াও আমাকে তার দু বাহু দাড়া আকড়ে ধরেছে! আমি ভাইয়ার অনেকটাই কাছে এসে পড়েছি যে তার নিঃশ্বাস এর শব্দ ও শুনতে পাচ্ছি! এই প্রথম ভাইয়াকে এতো কাছ থেকে দেখে বুকের ভেতর কেমন জানি আলাদা অনুভুতি হচ্ছে। খুব করে ইচ্ছে করছে ভাইয়ার মুখখানি একটু ছুঁয়ে দিই। মনের ইচ্ছে মিটাতে হাতদুটি ভাইয়ার মুখের সামনে নিকেই হঠাৎই ভাইয়া আমাকে সোজা করে বসালেন। ঘটনা বুঝতে পেরে ভাইয়াকে স্যরি বলে গাড়ি থেকে নেমে আসি।

ভাইয়াও আর কিছু না বলে সামনের দিকে হেঁটে যেতে লাগলো। প্রিমা আপুদের বাড়িতে গিয়ে বসলাম সবাই গিয়ে। আমাদেরকে বসিয়ে একটি মেয়ে শরবত আরো নানানরকম নাস্তা এনে দিলো আমি শরবতের গ্লাস হাতে নিলাম। সবাই টুকটাক কথা বলছে প্রিমা আপুর পরিবারের সাথে। কথা বলার এক পর্যায়ে ঝেঠু বলে ওঠলো,
–“আপনারা যদি এবার আপনাদের মেয়েকে আমাদের সামনে আনতেন তাহলে ভালো হতো।”

ঝেঠুর কথা শুনে প্রিমা আপুর আব্বু হাসি মুখ করে সম্মতি জানিয়ে মেয়ের নাম ধরে ডাক দিকেই সিঁড়ি বেয়ে প্রিমা আপুর আগমন ঘটলো ড্রয়িং রুম। তাকে দেখে আমাদের সবার চক্ষু ছানাবড়া এমন অবস্থা! আমি ভালো করে দেখলাম প্রিমার দিকে। মেয়েটির পড়নে জিন্স প্যান্ট আর টির্শাট, জিন্স প্যান্টের আবার হাঁটুর দিকে কোমন ছেঁড়া!

পায়ে হিল পড়া জুতা, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া হাতে কেমন সুতোর মতন কতোকিছু পড়া আছে। গলায় কিসব পেঁচানো চেন পড়ে আছে কতোগুলো! মেয়ের এরম সাজ দেখে আমার বিষম খাওয়ার অবস্থা! কোথায় শাড়ি পড়ে সুন্দর করে সেজেগুজে আসবে আর এই মেয়ে কিনা কিসব ড্রেস পড়ে আছে। সবাই এক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চেয়ে আছে। আমাদের উপস্থিত সকলের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে মেয়েকে এরকস অবস্থায় দেখার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না! সবাই বিস্ময় নিয়েই তাকিয়ে রয়েছে মেয়ের পানে। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিমা নিজেই বলে ওঠলো,

–“হ্যালো এভরিবডি হাউ আর ইউ?”
এই মেয়ে তো দেখছি আদব কায়দা কিছুই জানে না!প্রথমে সালাম দিতে হয় সেটাও বোধহয় জানে না। কি মেয়ে পছন্দ করলো ইহাদ ভাইয়া? এর থেকে তো আমিই ভালো ছিলাম। ঝেঠু ঝেঠিমা তারা মানবে তো এই বিয়ে? আমার ভাবনার মাঝেই ঝেঠু প্রিমাকে কিছু প্রশ্ন করে এবং প্রিমা তার উত্তর দেয়। যদিও বা সেগুলো তেড়া ব্যাকাই!

তারপরেই ঝেঠু প্রিমার বাবাকে বলে বাড়িতে গিয়ে তারা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে। তার পরেই আমরা বাড়িতে যাবার জন্য রওনা দিই। গাড়ির কাছে আসতেই মনে পড়লো আমি ফোনটা ওদের বাড়িতে রেখে এসেছি ফোন আনতে আবারো উল্টোদিক ফিরে যেতেই বাড়ির পাশে দেয়াল ঘেঁষে ইহাদ ভাইয়া আর প্রিমা দু’জন দাঁড়িয়ে আছে! ইহাদ ভাইয়ার কিছু কথা কানে আসতেই শুনতে পেলাম ভাইয়া বলছে,

–“তোমার উচিত ছিলো একটু শাড়ি পড়া প্রিমা। একটু সুন্দর করে কথা বলা।”
–“তো আমি কি করবো ইহাদ? তুমি তো জানোই আমি এরকম। আর তুমি চিন্তা করো না তো ওরা ঠিক আমাদের বিয়েটা মেনে নিবে।”
–“হ্যাঁ আমিও তাই চাই কারন আমি যে তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি।”

তাদের কথার দিকে মনোযোগ না দিয়ে রুমের ভেতর থেকে ফোন নিয়ে আসার পথে না চাইতেও দৃষ্টি আটকে গেলো আবারো তাদের দু’জনের দিকে!এবার ইহাদ ভাইয়া আর প্রিমা খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রয়েছে। ইহাদ ভাইয়া প্রিমার দিকে ঝুঁকে রয়েছে আরো একটু কাছে যেতেই আমি প্রস্থান করলাম ওই জায়গা থেকে! এতোও সহ্য শক্তি নেই আমার নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারোর এতো কাছে নিজের চোখে দেখবো!

প্রণয় বিরহ পর্ব ৫

খুব কষ্ট হচ্ছে ইহাদ ভাইয়ার এতো কাছে প্রিমাকে দেখে কিন্তু সত্যি বড়ই কষ্টকর! না চাইলেও এটাই ঘটবে প্রতিনিয়তো আমার সঙ্গে! সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসলাম ঠিক তখনি আমার ফোন বেজে ওঠলো! স্ক্রিনে জলজল করছে সেহেরিশ নামটি! বোধগম্য হলো না হঠাৎই ওনার ফোন কেনো? আর কোনো কিছু না ভেবে গাড়ির কাছে চলে গেলাম।

প্রণয় বিরহ পর্ব ৭