প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৫

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৫
নিশাত জাহান নিশি

“আমার জন্য আর ভাবতে হবে না তোমার! এতদিন অনেক ভেবেছ৷ এবার আমাকে আমার কথা ভাবতে দাও! আর শুনো? আজকের পর থেকে তোমাদের মতো মেয়েদের উপর থেকে বিশ্বাস এবং ভক্তি দুটোই ওঠে গেল আমার! তোমরা মেয়েরা হলে ছলনাময়ী!

তোমাদের আসল রূপটা যে দেখবে সে মানুষটাই সারাজীবনের জন্য নিঃশেষ হয়ে যাবে! হ্যাঁ আরও একটি ধন্যবাদ পাওনা তুমি। এভাবে আমার জীবনটাকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোজ থমকে দাঁড়ালো! নূরের কথায় হঠাৎ আঁতকে উঠল! নূরের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মূর্তির ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। শেষবারের মতো নূর রোজের দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! সবার সামনে থেকে চাঁদের হাতটি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরল। উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে চাঁদকে নিয়ে বাইকে ওঠে বসল! মুহূর্তের মধ্যে বাইকটি স্টার্ট করে নূর পাথর মূর্তি ধারণ করে থাকা রোজকে উদ্দেশ্য করে অট্ট হেসে বলল,,

“তোমার নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল। নূর আজ থেকে ভুলে যাবে রোজ নামক কেউ তার জীবনে ছিল! যাকে সে পাগলের মতো ভালোবাসত! তার জন্য নিজের মাকে কাঁদিয়েছিল তার মায়ের মনে আঘাত দিয়েছিল। আর একটা কথা তোমাকে এবং তোমাদের মেয়ে জাতির সবাইকে বলতে চাই যদি ভালোবাসে কাউকে সারাজীবনের জন্য শক্তভাবে আঁকড়ে ধরতে না পারো, তবে প্লিজ কাউকে ভালোবেসো না! তাদের মিথ্যে আশ্বাস দিও না। নিজেকে ভালোবাসতে তাদের বাধ্য করো না! প্রেম করার আগে ভেবেচিন্তে করবে। আদৌতে সেই প্রেমকে পরিণয় দিতে পারবে কি-না।”

রোজ অকাতরে চোখের জল ছেড়ে দিলো! উপস্থিত সবাই ব্যথীত নূরের দিকে তাকিয়ে রইল। চাঁদ বিষন্ন দৃষ্টিতে অপলক নূরকে দেখছে। কেউ বুঝতে না পারলেও চাঁদ অন্তত বুঝতে পারছে নূর কতটা আঘাত থেকে রোজকে এই নিষ্ঠুরতম কথাগুলো বলছে! ভেতরে ভেতরে নূর নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। যার আঁচ চাঁদ পাশে থেকে খুব টের পাচ্ছে! ইতোমধ্যেই রেদোয়ান চৌধুরী রাগী ভাব নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে এলেন। বাজখাঁই গলায় বললেন,,

“ছেলেটাকে এভাবে যেতে দিচ্ছেন কেন? ধরুন তাকে। থানায় নিয়ে যান।”
পুলিশ অফিসার এবার ক্ষেপে উঠলেন। রেদোয়ান চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে রূঢ় গলায় বললেন,,

“কোন অপরাধে আমরা ছেলেটাকে থানায় তুলে নিয়ে যাব বলুন? দোষ তো আপনার মেয়েরও ছিল! মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটা ছেলেকে ঠকিয়েছে। সেই ঠকে যাওয়া ছেলেটাকেই আপনি থানায় তুলে নিয়ে যেতে বলছেন? তাছাড়া এখানে দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক। আপনার মেয়েও তো তার দোষ স্বীকার করেছে।

সে জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের এখানে কিছু-ই করার নেই!”
পুলিশ অফিসার উনার কনস্টেবলদের নিয়ে জীপে ওঠে গেলেন! জীপ স্টার্ট করে জায়গা পরিত্যাগ করলেন। রোজ আর এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়ালো না! কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। রোজের মা এবং চাচীরাও রোজের পিছু নিলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বাড়ির মেহমানদের নিয়ে স্টেজে ঢুকে গেল। রেদোয়ান চৌধুরী এবার রাগে ফোঁস করে নূরের দিকে তাকালেন। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,

“তোকে যেন আর কখনো আমার বাড়ির ত্রি- সীমানায় না দেখি!”
নূর অট্ট হাসল! রেদোয়ান চৌধুরীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাইকের হ্যান্ডেলে হাত রাখল! এমন একটা ভাব করল যেন সে কিছুই কানে শুনল না। এতে যেন রেদোয়ান চৌধুরীর রাগ আরও বেড়ে গেল। ক্ষিপ্ত নয়নে নূরের দিকে তাকালো। ইতোমধ্যেই সাদমান ক্ষেপে এলো রেদোয়ান চৌধুরীর দিকে। উনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রুক্ষ গলায় বলল,,

“কেন? এলাকাটা কি আপনার বাপের? যে আমার ফ্রেন্ড আপনার এলাকায় আসতে পারবে না? এতক্ষণ অনেক সহ্য করেছি আপনার অপমান। মুখ খুলে কিছু বলি নি কারণ আপনার ক্ষমতার ভয়ে ছিলাম! এখন দেখলেন তো? একটা মানুষ কতটা সৎ হলে ধান্দা’বাজ পুলিশ অফিসাররাও তাকে ছাড় দিতে বাধ্য হয়?

দোষ তো এখানে আপনার মেয়েরও ছিল। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার ফ্রেন্ডকে ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে ছিল! থানায় গিয়ে কমপ্লেন করলে আমরাও করতে পারি! কিন্তু করব না। কেন বলুন তো? কারণ আমরা আপনার মতো ক্ষমতার বড়াইয়ে চলি না বা আপনার মতো এতটা নিকৃষ্ট মানের নই আমরা!”

রেদোয়ান চৌধুরী রক্তিম চোখে সাদমানের দিকে তাকালেন। আঙুল তাক করে চিৎকার করে বললেন,,
“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুইজ সাদমান। নিজের গণ্ডির ভেতরে থাকার চেষ্টা করো। না হয় এর ফল কিন্তু খুব একটা ভালো হবে না।”

রোজের সব চাচারা অগ্নিশর্মা হয়ে সাদমানের দিকে তেড়ে আসতেই আয়মন সাদমানের পাশে এসে দাঁড়ালো। উদ্বিগ্ন হয়ে সাদমানকে টানতে টানতে নূরের বাইকের দিকে চলে এলো। নমনীয় গলায় রেদোয়ান চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“সাদমানের কথায় কিছু মনে করবেন না স্যার। না বুঝেই অনেক কিছু বলে ফেলেছে সে। আর আমরা চেষ্টা করব অপ্রয়োজনে আপনার বাড়ির ধারে কাছে না ঘেঁষতে!”

সাদমানকে নিয়ে আয়মন দ্রুত বেগে সাদমানের বাইকে ওঠে পড়ল! নূর টগবগে গরম হয়ে বাইক থেকে উঠার পূর্বেই চাঁদ নূরকে থামিয়ে দিলো। নূরের কাঁধে হাত রেখে শান্ত গলায় মিনিমিয়ে বলল,,
“ছেড়ে দিন না প্লিজ। এখানে হাঙ্গামা করে কোনো লাভ নেই। যা হওয়া তা তো হয়েই গেছে। লোকজন হাসিয়ে আর লাভ নেই। রিকুয়েস্ট করে বলছি প্লিজ চলুন।”

নূর দ্বিমত পোষণ করল৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“আর কত ছাড় দিব তাদের? বাপ-মেয়ে মিলে তো আমার জীবনটাকে নরক করে দিলো! আমার বেঁচে থাকার সমস্ত আশা নিভিয়ে দিলো। আমি তো শূণ্য হয়ে গেলাম চাঁদ। একদম নিঃশেষ হয়ে গেলাম।”

“কাউকে আঘাত দিয়ে কেউ কখনো সুখি হতে পারে না নূর ভাইয়া! ধৈর্য্য ধরুন। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই একটি সঠিক পথ দেখাবেন। এখন আল্লাহ্’র উপর ভরসা রেখে এখান থেকে চলুন প্লিজ।”

নূর শান্ত হয়ে এলো। তব্ধ শ্বাস ছেড়ে বাইক স্টার্ট করে দিলো। নূরের বাইকের পেছনে পেছনে আয়মনও তার বাইকটা স্টার্ট করে দিলো। তারা সকলেই জায়গা পরিত্যাগ করল। রোজের বাবা অত্যধিক রাগে গজগজ করে বাড়ির মেইন গেইট লাগিয়ে দিলেন। বাকি মেহমানদের নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলেন।

ঝড়ের বেগে উনি রোজের বেডরুমে প্রবেশ করলেন। বিছানার উপর বসে ডুকরে কাঁদতে থাকা রোজের মুখোমুখি দাঁড়ালেন। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে উনি রোজের গালে ঠাস করে একটি চড় বসিয়ে দিলেন! দাঁত দাঁত চেপে বললেন,,

“ছেলেটা আজ কেন আমার বাড়িতে এলো রোজ? কেন এলাকার সবার সামনে এসে আমার মানসম্মান নষ্ট করল? আমার গেস্টদের সামনে আমাকে ছোটো করল? কেন আমার আনা পুলিশ অফিসার আমার নিজের মেয়ের দিকেই আঙুল তুলল? বল কেন?”

রোজ ফুুঁপিয়ে কেঁদে রেদোয়ান চৌধুরীর দিকে তাকালো। চিৎকার করে বলল,,
“তোমাদের কথা ভেবেই তো আমি নূরের ভালোবাসাকে অস্বীকার করলাম বাবা! তোমাদের মান সম্মান নষ্ট হবে বলেই তো ঐদিন নূরের সাথে পালিয়ে যেতে অসম্মতি জানিয়ে ছিলাম। নিজের সুখকে বিসর্জন দিলাম। আর সেই তুমি কিনা-ই এখন আমার দিকে আঙুল তুলছ? আমার গাঁয়ে হাত তুলছ বাবা?”

“হ্যাঁ আমি আঙুল তুলছি। তোমার দিকে আঙুল তুলতে বাধ্য হচ্ছি আমি। যখন প্রেমটা করেছিলে তখন ভেবে চিন্তে কেন প্রেমটা করো নি? তখন ভাবো নি ঐ মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির ছেলেটার সাথে আমাদের ধনী পরিবারের একদম যায় না?”

“না ভাবি নি তখন! কারণ তখন আমি এতকিছু বিচার বিবেচনা করে তাকে ভালোবাসি নি! নূর এতটাই কোমল মনের মানুষ ছিল যে তাকে ভালো না বেসে থাকতে পারি নি আমি। সেই ভুলের-ই মাসুল দিচ্ছি আমি! প্রতি পদে পদে তোমাদের কাছে এবং নূরের কাছেও হেনস্তা হচ্ছি! গোটা জীবনটাও আমার এভাবেই পস্তাতে হবে বাবা। নূরকে আঘাত করার শাস্তি ভোগ করতে হবে।”

রোজ কাঁদতে কাঁদতে জায়গা পরিত্যাগ করল। রেদোয়ান চৌধুরী রোজের যাওয়ার পথে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন! তবুও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে একরত্তিও নড়লেন না উনি!

ঘড়িতে রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি। নূর, আয়মন এবং সাদমান মিলে বাড়ির ছাদে বসে স্মোকিং করছে! নূর একের পর এক সিগারেটে ফুঁক দিয়ে চলছে। এক প্যাকেট সিগারেট সে প্রায় দশ মিনিটের মধ্যেই সাবার করে নিয়েছে! আয়মন এবং সাদমান অনেক বাঁধা দিয়েও তাকে অতিরিক্ত স্মোকিং করা থেকে আটকাতে পারছে না।

কারো কথার-ই সে তোয়াক্কা করছে না। ক্ষুধার তাড়নায় তার শরীর অনবরত কাঁপছে। শার্টটা যেন গাঁ থেকে যেন খসে পড়ছে৷ চুলগুলো উসকো খুশকো হয়ে মুখের উপর বিশৃঙ্খলভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। চোখ জোড়া লোহিত বর্ণ ধারণ করেছে৷ দেখতে নেশাখোরদের চেয়ে কিছু অংশে কম মনে হচ্ছে না!

আয়মন এবং সাদমান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। এই পর্যায়ে এসে দুজনই বুকের উপর হাত বেঁধে ভগ্ন দৃষ্টিতে নূরের পাগলামি দেখতে বাধ্য হলো! একজন মানুষকে আর কত জোর করে রাখা যায়? বিরক্তি তো সবার মাঝেই কাজ করে! নূরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো আয়মন। তব্ধ শ্বাস ছেড়ে শূণ্যে তাকিয়ে বলল,,

“নূরের অবস্থা দেখে প্রেম করার স্বাদ মিটে গেল আমার! আর কখনও প্রেম করার জন্য মন আমার আঁকুপাঁকু করবে না!”
সাদমান মাথা চুলকালো। গলা ঝেড়ে বলল,,

“আরেহ্ ভাই। পৃথিবীর সব মেয়েরা একরকম হয় না। এমন যদি হতো তবে আমাদের মা, চাচীরা, খালামনিরা, ফুফুরা এতগুলো বছর ধরে আমাদের বাবা, চাচা, আঙ্কেলদের সাথে সংসার করে আসত না। কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেয়েদের জন্য গোটা মেয়ে জাতীর বদনাম হচ্ছে। তবে আফসোস! ঐ খারাপ মেয়েটাই নূরের কপালে জুটেছিল! তবে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ নূরকে ঐ বদ মেয়েটার হাত থেকে রক্ষা করেছে এই অনেক।”

হাতে থাকা সিগারেটের শেষ অংশটি নূর মাটিতে ছুড়ে ফেলল৷ পা দিয়ে সিগারেটটি পিষে দু’হাত দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো সেট করল। কয়েক দফা বিশৃঙ্খল শ্বাস ছেড়ে নূর ছাদের কার্ণিশে হাত রাখল। আক্রমনাত্নক গলায় বলল,,
“আমিও দেখব ঐ রোজ কীভাবে সুখে-শান্তিতে সংসার করে! তার সংসারে যদি আমি আগুন না লাগাই তবে আমার নামও নূর না!”

সাদমান ফিক করে হেসে দিলো! নূরের কাঁধে হাত রেখে অবিশ্বাস্য গলায় বলল,,
“ভাই তোরে আমি চিনি! তুই যে রোজের সংসারে কত আগুন জ্বালাবি তা আমার বেশ ভালোভাবেই জানা আছে। দু’দিন পরেই না? তোর এই জেদটা বরফের মতো গলে যাবে! তারপর সারাক্ষণ রোজ রোজ করবি আর দেবদাস হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবি।”

নূর রক্তিম চোখে সাদমানের দিকে তাকালো। তেজী গলায় বলল,,
“ঐ মেয়ে আমার সাথে মানবতা করেছিল? যে আমি তার সাথে মানবতা করব? নূর এখন পাল্টে গেছে বুঝলি? আগের মতো আর নরম নেই। এবার নূর শক্ত হয়েছে। এতটাই শক্ত হয়েছে যে, রোজ এবার হাজার চেষ্টা করেও নূরকে ভাঙতে পারবে না।”

এরমধ্যেই নীড় ছাদে এলো। অফিসের ফরমাল গেট আপ নিয়েই সে এক ছুটে চলে এলো নূরের কাছে! মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে সে। আর ফিরেই একটু আগের ঘটনা সব সাবরিনা আবরারের মুখ থেকে শুনেছে। তাই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে সে উদ্বিগ্ন হয়ে নূরের কাছে ছুটে এসেছে। নীড়কে দেখামাত্রই তিনজন মাথা নুইয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। এমন ভান ধরল যে, মনে হলো যেন পৃথিবীতে তাদের মতো ভালো মানুষ দুটো নেই! নীড় সরাসরি নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। নূরের দিকে ব্যস্ত গলায় প্রশ্ন ঝুড়ে বলল,,

“মা যা বলেছে সব ঠিক বলেছে নূর? তুই সত্যিই আজ রোজের বাড়ি গিয়ে হাঙ্গামা করেছিলি?”
নূর অপরাধীর ন্যায় মাথা উঁচিয়ে নীড়ের দিকে তাকালো। ক্ষীণ গলায় মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। নীড় চোয়াল শক্ত করল। নূরের দিকে আরও একটু এগিয়ে এসে রূঢ় গলায় বলল,,

“কেন গিয়েছিলি? পৃথিবীতে কী আর মেয়ে মানুষ নেই? ঐ মেয়েটার পিছনেই তোকে পড়ে থাকতে হবে? এত হ্যাংলা কেন তুই হ্যাঁ? লাজ-লজ্জার বালাই মাত্র নেই তোর?”
নূর কান চুলকে আবারও সোজা হয়ে দাঁড়ালো! তবে প্রত্যত্তুরে কিছু বলল না। মৌনতা বজায় রাখল। নীড় কপাল ঘঁষল। তিক্ত গলায় নূরকে সাবধান করে বলল,,

“এরপর থেকে যেন তোর নামে আর কোনো বিচার না আসে আমার কাছে। সাবধান করলাম তোকে। এখনও সময় আছে নিজেকে সংশোধন করে নে। নিজের কথা ভাব। নিজের পরিবারের কথা ভাব। মা এবং বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সব পাগলামি ছেড়ে দে। তাঁরা তোকে এভাবে বিগড়ে যেতে দেখতে পারছে না বিশ্বাস কর। কষ্ট হচ্ছে তাদের। আজ তোর জেদের জন্যই মা এবং বাবা দুজনই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আশা করছি এমনটা যেন আর দ্বিতীয়বার না হয়।”

নূর আবারও মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো৷ মুখ খুলে কিছু বলল না। নীড় শার্টের কলার থেকে টাইটা খুলে শান্ত চোখে নূরের দিকে তাকালো। নরম গলায় বলল,,
“কাল তোর ভাবির বাড়িতে যাবি! আয়মন, সাদমান, চাঁদ, সোহা বাকি যারা আছে তাদের সবাইকে নিয়ে যাবি। কেনাকাটার কিছু ব্যাপার আছে সব বুঝে শুনে আসবি। মনে থাকবে?”

নূর আবারও মাথা দুলালো। নীড় হঠাৎ নূরের দিকে এগিয়ে গেল! আকস্মিকভাবে নূরকে ঝাপটে ধরল। স্নিগ্ধ গলায় বলল,,
“কাল মাহিন আসছে! পাঁচ বছর পর দেশে ফিরছে আমাদের ভাইটা। খুশিতে মনটা ভরে যাচ্ছে। কাল আমরা দুইভাই মিলে কিন্তু মাহিনকে পিক করতে যাব। যাবি তো তুই?”

বিষন্ন মনেও নূরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল! খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বলল,,
“অবশ্যই আমি যাব ভাইয়া। মাহিন আসছে আর আমি যাব না? তা কখনো হতে পারে?”
নূরকে ছেড়ে দাঁড়ালো নীড়। মৃদু হেসে শার্টের বোতম খুলতে খুলতে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। যেতে যেতে পেছন ফিরে নূর, আয়মন এবং সাদমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“ড্রয়িং রুমে চলে আয়। মা খাবার বাড়ছে।”
তিনজনই মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানালো। এর মধ্যেই চাঁদ হাতে করে একটি শুভ্র রঙের গলুমলু বিড়ালছানা নিয়ে ছাদের দিকে হেঁটে আসল! ছাদের দরজার কাছে আসতেই নীড় এবং চাঁদ দুজন মুখোমুখি হয়ে গেল। চাঁদের হাতে থাকা বিড়ালছানাটিকে দেখে নীড় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। উৎকন্ঠিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“তুমি কি এখন এই বিড়ালছানাটিকে নিয়ে ছাদে যাবে?”
চাঁদ আহ্লাদি হয়ে বিড়াল ছানাটির গাঁয়ে একাধিক চুমো খেলো। প্রত্যত্তুরে নীড়কে ব্যস্ত গলায় বলল,,
“হ্যাঁ ভাইয়া। কেন?”
নীড় ব্যতিব্যস্ত গলায় বলল,,

“উঁহু! ভুলেও না। নূরের বিড়ালছানায় এলার্জি আছে!”
সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ চোখ তুলে নীড়ের দিকে তাকালো। আকস্মিক বাঁকা হেসে উঠল! ভ্রু যুগল উঁচু করে মুখে দুষ্টুমির ছাপ ফুটিয়ে বলল,,

“তাহলে তো এখন আমি আরও বেশি করে নূর ভাইয়ার কাছে যাব!”
নীড় অনেক বারণ করা সত্ত্বেও চাঁদ নীড়ের কথা কানে তুলল না। দৌঁড়ে বিড়ালছানাটি নিয়ে নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো! দাঁত কেলিয়ে হেসে নূরের দিকে তাকালো। বিড়ালছানাটিকে দেখা মাত্রই নূর ভড়কে উঠল! চাঁদের সামনে থেকে অনেক খানি বাঁয়ে সরে দাঁড়ালো। উদ্বিগ্ন হয়ে ভীতু গলায় বলল,,

“এই সরো বলছি আমার সামনে থেকে! এই বিড়ালছানা নিয়ে তুমি আমার সামনে আসলে কেন?”
নূরের ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থা দেখে চাঁদ, সাদমান, আয়মন এবং নীড়ও ফিক করে হেসে দিলো! চাঁদ কদাচিৎ হেসে আবারও নূরের দিকে এগিয়ে গেল। বিড়ালছানাটিকে নেড়ে চেড়ে আদর করে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“খালামনি বলল আপনাদের এক্ষণি ডেকে দিতে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।”
নূর নাক সিটকে বিড়ালছানাটির দিকে তাকালো৷ ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে বলল,,

“ডেকে দিবে ভালো কথা। সাথে এই আপদটাকে নিয়ে এলে কেন? তাছাড়া কোথায় পেলে এই আপদটাকে? আগে তো কখনো এই বাড়িতে দেখি নি তাকে।”
চাঁদ নাক ফুলিয়ে নূরের দিকে তাকালো। শক্ত গলায় বলল,,
“আপদ বলছেন কাকে হ্যাঁ? আপদ বলছেন কাকে? জানেন? আমি এই গলুমলু পুচিটাকে কত কষ্ট করে আমার হাতের নাগালে পেয়েছি?”

নূর ভ্রু কুঁচকালো। চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“এই পুচিটা আবার কে?”
“কেন? এই বিড়ালছানাটির নাম! আমি-ই ওর নাম পুচি রেখেছি! কিউট না নামটা?”
“না কিউট না! এই আপদটাকে নিয়ে তুমি এক্ষণি আমার সামনে থেকে বিদায় হবে।”

“উঁহু! বিদায় হলে তো চলবে না। আপনাকেও আমার সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। একসাথে বসে খাবার খেতে হবে।”
নূর রেগে গেল। আঙুল তুলে তটস্থ গলায় বলল,,
“খাব না আমি খাবার। যাও বলছি এখান থেকে!”

চাঁদ তেজী দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। বিড়ালছানাটিকে নিয়ে নূরের আরও পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো! বিড়ালছানাটি এবার ভয়ে কিছুটা ম্যাও করে উঠল। চোখ বড় বড় করে নূরের দিকে তাকালো। তবে হলো এর বিপরীত! বিড়ালছানা কী ভয় পাবে। নূর নিজেই বিড়ালছানার চাহনি দেখে ভয় পাচ্ছে! অতি ভয়ে নূর শুকনো ঢোক গিলল। বিড়ালের গাঁ থেকে বের হওয়া স্মেল যেন নাকে প্রবেশ না করে সেজন্য সে নাক টিপে ধরল। অস্থির দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। চাঁদ একগুঁয়ে গলায় বলল,,

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৪

“খাবার খেতে আসুন বলছি। নয়তো এই পুচিটাকে এক্ষণি আপনার গলায় ঝুলিয়ে দিব! ভাল্লাগবে তখন? মজা লাগবে তখন সর্দি-কাশি নিয়ে ঘরে পড়ে থাকতে?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৬