প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৬

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৬
নিশাত জাহান নিশি

“খাবার খেতে আসুন বলছি। নয়তো এই পুচিটাকে এক্ষণি আপনার গলায় ঝুলিয়ে দিব! ভাল্লাগবে তখন? মজা লাগবে তখন সর্দি-কাশি নিয়ে ঘরে পড়ে থাকতে?”
নূর কটমট চাহনিতে চাঁদের দিকে তাকালো। শার্টের এক অংশ দ্বারা বিস্তীর্ণ মুখের আদল ঢেকে নিলো। শার্টের তলা থেকে তেজী গলায় বলল,,

“এই তুমি কি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছ?”
চাঁদ শীঘ্রই বিড়ালছানাটিকে নূরের মুখের কাছে ধরল! নূরকে ভয় দেখানোর জন্য ছানাটিকে হেলিয়ে দুলিয়ে শক্ত গলায় বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হ্যাঁ করছি! তো কী হইছে হুম? আপনি জানেন? রাতে না খেয়ে থাকাটা যে শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর?”
“ক্ষতি হলে আমার হবে। তোমার কী হুম? আপদটাকে নিয়ে এখান থেকে যাও বলছি।”
“আমার কিছু না বুঝেছেন? হবে তো আমার খালামনির। বেচারি খালামনি! ছেলের জন্য এখনও না খেয়ে উপোস বসে আছে। ভাবছে ছেলের সাথে এক প্লেটে বসে খাবে।”

এতেও তেমন ভাবান্তর হলো না নূরের। সে একই জেদ নিয়ে বলল,,
“আমি খাব না বললাম তো। প্লিজ তুমি যাও এখান থেকে।”

জায়গা থেকে প্রায় এক ফুট দূরত্বে এসে সরে দাঁড়ালো নূর। শার্টের উপর থেকে আড়চোখে বিড়ালটির দিকে তাকালো। বিড়ালটি এখনও চোখ বড় বড় করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে! মূলত চাঁদের অতিরিক্ত হাতাহাতির ফলে বিড়ালটি ঘোর তিক্ততায় রাগে ফুসছে।

এইদিকে নূর ভাবছে বিড়ালটি হয়তো তার উপর রাগে ফুলছে! নূরের ভয়কে আরও প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য চাঁদ বাঁকা হেসে বিড়ালটি নিয়ে আবারও নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। বিড়ালটির পায়ে আস্তে করে একটি চিমটি কাটল! সঙ্গে সঙ্গেই বিড়ালটি প্রখর রাগে ম্যাও করে উঠল।

ঘটনার আকস্মিকতায় নূরের মুখ থেকে শার্টের অংশটি পড়ে গেল! বাতাসের সঙ্গে নূরের মুখে বিড়ালের গাঁয়ের গন্ধ ঢুকে গেল! আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না নূর! ছাদ থেকে এক দৌঁড়ে পালালো! যেতে যেতে তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় বলল,,
“এখন যদি আমার এলার্জির প্রবলেম হয় না? সত্যি বলছি চাঁদ তোমাকে আমি ছাড়ব না! সাথে ঐ আপদটাকেও বাড়ির ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলব।”

আর পিছু ফিরে তাকালো না নূর। এক দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে গেল৷ চাঁদ সহ উপস্থিত বাকি সবাই অট্ট হাসল। নীড় হাসতে হাসতে চাঁদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“চাঁদ তুমি পারো ও বটে। একমাত্র তুমিই পারবে নূরকে জব্দ করতে!”

ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো নীড়। আয়মন এবং সাদমান হাসি থামিয়ে চাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালো৷ দুজনই আহ্লাদি হয়ে বিড়ালছানাটিকে আদর করতে লাগল। আয়মন জিজ্ঞাসু হয়ে চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“আচ্ছা চাঁদ ছানাটিকে পেলি কোথায়?”

চাঁদ বাঁকা হাসল। দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“পাশের বাসার মেইন গেইট থেকে চুরি করেছি!”
ঘটনার আকস্মিকতায় আয়মন এবং সাদমান ভড়কে উঠল! বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। সাদমান মুখটা হা করে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“চুরি করেছ মানে?”
চাঁদ মিটিমিটি হাসল। মাথা চুলকিয়ে ধীর গলায় বলল,,
“নূর ভাইয়ার বাইকে করে যখন আমি বাড়ি ফিরেছিলাম না? তখন পাশের বাসার মেইন গেইটের পাশে বিড়ালছানাটিকে দেখেছিলাম।

তখন থেকেই ছানাটির প্রতি আমার নজর ছিল। এর এক ঘণ্টা পরই আমি জায়মাকে নিয়ে উৎসুক হয়ে আবারও পাশের বাসার মেইন গেইটে যাই! তখনও গিয়ে দেখি বিড়ালটি সে আগের মতোই একই জায়গায় বসে আছে! তাই আর দেরি না করে তখনই সুযোগ বুঝে বিড়ালটিকে নিয়ে আমরা ওখান থেকে পালিয়ে আসি! অনেক কষ্টে তাকে পোষ মানাচ্ছি!”

আয়মন এবং সাদমান দুজন দুজনের মুখ দেখাদেখি করছে। চাঁদের চুরি করার ট্রিক দেখে তারা অবাক হচ্ছে! এভাবে কেউ কারো বাড়ির সামনে থেকে ওপেনলি কিছু চুরি করে আনতে পারে? নিতান্ত সাহস আছে বলেই চাঁদ এই কাজটি করতে পেরেছে। চাঁদ এখনও ইচ্ছেমতো বিড়ালছানাটিকে আদর করে চলছে। আয়মন তখনি সন্দিহান গলায় চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“ছানাটির মালিক যদি বুঝে যান ছানাটিকে তুই চুরি করেছিস তখন?”
চাঁদ মুখটা কুঁচকালো। ভাবশূণ্য হয়ে বলল,,
“ধ্যাত। বুঝবে কীভাবে? চুরি করার সময় তো কেউ আমাকে দেখি নি! মুখে তো ওড়না বাঁধা ছিল আমার।”
আয়মন ভ্রু যুগল সরু করে চাঁদের দিকে তাকালো। উদ্বেগি গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“যদি ঐ বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে তখন?”
চাঁদ এবার শুকনো ঢোক গিলল! তবুও নিজের জেদে অটল থেকে বলল,,
“যাই হয়ে যাক ভাইয়া। এই বিড়ালছানাটিকে কিন্তু আমি কাউকে দিব না বলে দিচ্ছি। চুরিতে ধরা পড়ে গেলে ও না!”
সাদমান চাঁদকে আশ্বস্ত করল। নমনীয় গলায় বলল,,

“আরেহ্..চিল। এই ছানাটিকে তোমার কাউকে দিতে হবে না। একে তুমি নিজের কাছেই রেখে দাও। থোরাই না তুমি চুরিতে ধরা পড়বে। পাশের বাড়িতে তো কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাই নেই!”
তৎক্ষনাৎ চাঁদ দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠল। সাদমানের দিকে উৎফুল্ল দৃষ্টিতে তাকালো। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলল,,
“ধন্যবাদ ভাইয়া। পুচিকে হারানোর ভয় থেকে আপনি আমাকে বাঁচালেন।”

সাদমান হঠাৎ মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো! কিয়ৎক্ষণ একই দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইল! মগ্নতা ভেঙে প্রেমময়ী গলায় বলল,,
“বিড়ালছানাটি না? তোমার মতোই মায়াবী দেখতে চাঁদ!”

সাদমানের দিক থেকে করা উপমাকে চাঁদ তেমন গুরুত্ব দিলো না! বরং স্বাভাবিক ভাবেই নিলো! মৃদু হেসে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। সাদমানের মুগ্ধিত দৃষ্টি এখনও চাঁদের যাওয়ার পথে সীমাবদ্ধ। আয়মন ভ্রু যুগল উঁচু করে সাদমানের দিকে তাকালো। কিছু মুহূর্তের জন্য সাদমানের মুগ্ধিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অতঃপর সন্দিহান গলায় বলল,,

“এই তুই আবার চাঁদের সাথে লাইন টাইন মারার প্ল্যানিং করছিস না তো?”
সাদমান ভড়কে উঠল! ঘটনার আকস্মিকতায় মাথা দুলিয়ে না বুঝালো। আয়মন স্বস্তি পেল। ছাদ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে বলল,,

“আমার বোন কিন্তু। দেখিস আবার, সত্যি সত্যি লাইন টাইন মারতে যাস না!”
সাদমান স্মিত হেসে পেছনের চুলগুলো টেনে ধরল। প্রফুল্লিত গলায় মনে মনে আওড়ে বলল,,
“প্রেম হয়ে গেলে আর কী করার আছে? তবে চেষ্টা করব নিজেকে সামলে নেওয়ার! যদি সামলে না পারি এক্ষেত্রে আমার কোনো দোষ নেই!”

আয়মনের পিছু পিছু সাদমান ও ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো। সোজা বাড়ির ড্রয়িংরুমে চলে এলো। ডাইনিং টেবিলে অনেক আগে থেকেই খাবার সাজিয়ে রেখেছেন সোহানী এবং সাবরিনা আবরার। বাড়ির সব সদস্যরা এসে খাবার টেবিলে বসে পড়ল। নীড় থেকে শুরু করে হাবির আবরার, সাবরিনা আবরার, সোহানী, নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা, রুহি, চাঁদ, আয়মন, সাব্বির, সাদমান। তবে সবার মধ্য থেকে নূর মিসিং!

বেচারা শাওয়ার নিতে ব্যস্ত। বিড়াল ছানাটিকে দেখার পর থেকে গাঁ তার ঘিনঘিন করছে! হাচ্চি-কাশি থেকে শুরু করে মাথাব্যথা অবধি হচ্ছে। মোট কথা এলার্জির প্রবলেম তার এই একটু সময়ের মধ্যেই জোঁ দিয়েছে! সাবরিনা আবরারের কথামতোই নূর শাওয়ার সেরে গাঁয়ে পাতলা একটা টি-শার্ট পড়ে খাবার টেবিলে চলে এলো। ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে খাবার নিয়ে বসে থাকা সবার দিকে ব্যস্ত দৃষ্টিতে তাকালো।

বিশেষ করে চাঁদের দিকে কটাক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! চাঁদের কোলে এখনো বিড়ালছানাটি রয়েছে। ছানাটিকে নিয়েই সে আহ্লাদ করে খেতে বসেছে! প্রচণ্ড জেদ দেখিয়ে নূর আয়মনের পাশের চেয়ারটি টেনে বসল। সবার প্লেটে তরকারি বাড়তে থাকা সাবরিনা আবরারকে উদ্দেশ্য করে তেজী গলায় বলল,,

“আম্মু। তুমি কী এই মেয়েটাকে বলবে বিড়ালছানাটিকে এক্ষণি বাইরে রেখে আসতে? আমার সামনে ছানাটিকে নিয়ে আহ্লাদ না করতে?”
সাবরিনা আবরার দ্বিমত পোষণ করলেন। গলা ঝেড়ে নূরের প্লেটে তরকারি বেড়ে দিলেন। শান্ত গলায় বললেন,,

“এত রাগ করার কী আছে বাবা? একটা বিড়ালছানাই তো। কত কিউট দেখতে ছানাটা বল? কারো ইচ্ছে করবে এই মিষ্টি ছানাটিকে বাইরে রেখে আসতে? তুই এক কাজ কর না বাবা, ছানাটি থেকে দূরে দূরে থাক। তবেই তো সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তোরও এলার্জির প্রবলেম হয় না, আর ছানাটিও আমাদের বাড়িতে থাকতে পারে!”

নূর অসন্তোষ প্রকাশ করল। অভিযোগের স্বরে বলল,,
“তুমিও এখন ঐ মেয়েটির পক্ষ নিয়ে কথা বললে মা?”
চাঁদ ফিক করে হেসে দিলো৷ বাঁকা চাহনিতে নূরের দিকে তাকালো। বিড়ালটির মাথায় হাত বুলিয়ে হাসিমাখা গলায় বলল,,

“আমার খালামনিরও বিড়ালছানা পছন্দ বুঝলেন? এতদিন শুধুমাত্র আপনার জন্য বিড়াল পুষতে পারেন নি! আজ যখন একটা সুযোগ পেয়েছে তখন সেই সুযোগটা হাতছাড়া করবে কেন হুম? মায়ের শখ-আহ্লাদ পূরণ করার ইচ্ছে হয় না নাকি আপনার?”

নূর আর কথা বাড়াল না। রাগে গজগজ করে খাবার মুখে তুলল। না পেরে সে খাবারগুলো চিবিয়ে খাচ্ছে! খাবারের জায়গায় পারছে না সে চাঁদকে আস্ত চিবিয়ে খেতে! নূরের অবস্থা দেখে সাবরিনা আবরার মিটিমিটি হেসে চাঁদের দিকে তাকালেন। চাঁদ চোখ টিপে সাবরিনা আবরারের দিকে তাকালো। নূরকে জব্দ করতে পেরেছে বলে চাঁদ পৈশাচিক হাসল। আড়চোখে নূর দুজনের ভাব দেখছে! ভেতরে ভেতরে জ্বলেপুড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে। উপস্থিত সবাই খাওয়ায় মনযোগ দিলো। নূরকে রাগাতে চাইছে না বলে সবাই হাসি চেপে রাখতে বাধ্য হলো।

পরের দিন।
ঘড়িতে সকাল প্রায় আটটার কাছাকাছি। রাতে ঘুমানোর সময় চাঁদ বিড়ালছানাটিকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েছিল। ছানাটিও বেশ আরাম পেয়ে চুপটি করে চাঁদের বুকের সাথে মিশে ঘুমিয়েছিল! সকাল ঠিক সাতটা বাজতেই সোহানী ঘুম থেকে ওঠে রুমের থাই গ্লাসগুলো খুলে দিয়েছিল।

সেই থাই দিয়ে প্রবেশ করা সকালের মিষ্টি রোদের আলো চাঁদের চোখে-মুখে উপচে পড়তেই চাঁদ ঘুম ভেঙে ওঠে বসল। পিটপিট চাহনিতে তার ডান পাশে তাকিয়ে দেখল নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা, রুহি এখনও নাক টেনে ঘুমুচ্ছে। চাঁদ এবার বিরক্তি নিয়ে বাঁ পাশে তাকাল। মুহূর্তের মধ্যেই চাঁদের বিরক্তিভরা চাহনি সতেজ হয়ে উঠল! বিড়ালছানাটি অর্ধখোলা চোখে চাঁদের দিকে খুব মিষ্টিভাবে তাকিয়ে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ বিড়ালছানাটিকে কোলে তুলে নিলো। আদুরে হয়ে বিড়ালটির গাঁয়ে অসংখ্য চুমো খেয়ে বলল,,

“ওলে আমার পুচি সোনাটা। এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় হুম? মায়া লাগে না বুঝি আমার? তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে হয় না বুঝি আমার?”
ছানাটি আদর পেয়ে ম্যাও করে উঠল। হাত-পা নাড়িয়ে জিভ চাটতে লাগল। ইঙ্গিতে বুঝাতে চাইল তার ক্ষিদে পেয়েছে! চাঁদ তার ইঙ্গিত বুঝল। মুখটা গম্ভীর করে বলল,,
“তোমার ক্ষিদে পেয়েছে পুচি?”

পুচি ম্যাও শব্দে ডেকে আবারও নীল নীল চোখে কাতর দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। চোখের ইশারায় বুঝালো হ্যাঁ, তার ক্ষিদে পেয়েছে! চাঁদ আর বসল না। তাড়াহুড়ো করে পুচিকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। ব্রাশে পেস্ট নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে তড়িঘড়ি করে সোজা বাড়ির ড্রয়িংরুমে চলে এলো। সোহানী এবং সাবরিনা আবরার কিচেনে কাজ করছেন। তাই তারা চাঁদকে ড্রয়িংরুমে আসতে তেমন একটা খেয়াল করেন নি। ব্রাশ করতে করতে চাঁদ বিড়ালছানাটিকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসল। সোহানীকে উদ্দেশ্য করে হাঁক ডাক ছেড়ে বলল,,

“আপু? পুচির ক্ষিদে পেয়েছে। ওকে খাওয়ানোর মতো কিছু আছে কিচেনে?”
সোহানী প্রত্যত্তুর করার পূর্বেই সদর দরজার কলিংবেল বেজে উঠল। চাঁদ বিরক্তি প্রকাশ করল। নাক সিটকে বলল,,
“এই সাত সকাল আবার কে এলো?”

চাঁদ বসা থেকে উঠতে যাবে তখনি সোহানী দৌঁড়ে এলো কিচেন রুম থেকে। চাঁদকে উপেক্ষা করে সদর দরজাটি সে খুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গেই একজন মাঝ বয়সী ভদ্র মহিলা পেরেশান হয়ে সোহানীর সামনে দাঁড়ালো। বেশ উত্তেজিত গলায় বলল,,

“তোমাদের বাসায় একটা সাদা করে বিড়ালছানা এসেছিল মা? কাল রাত থেকে আমার সুমুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না! মাত্র চারমাস চলছে আমার সুমুর। ওর মা ওকে দেখতে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”
চাঁদ দূর থেকে কথাটা শুনতে পেল! মুহূর্তের মধ্যেই সে শঙ্কিত হয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই সে ছানাটিকে নিয়ে ড্রয়িংরুম থেকে দৌঁড়ে পালালো!

সিঁড়ি বেয়ে উঠার পথে হঠাৎ সে নূরের মুখোমুখি হয়ে গেল! নূর ঘুম থেকে ওঠে মাত্র চোখ কচলাতে কচলাতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল। রাতে ঘুম হয় নি তার। রোজের কথা ভাবতে ভাবতে গোটা রাত সে নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে! অতিরিক্ত কান্নার প্রভাবে চোখ জোড়া ফুলে ঢোল হয়ে গেছে।

পূর্ণদৃষ্টিতে সে আশেপাশে তাকাতে পারছে না। রুম থেকে বের হয়ে এসেছে শুধুমাত্র অত্যধিক মাথা যন্ত্রণার কারণে। এক কাপ গরম গরম কফি খাবে বলে। এরমধ্যেই হঠাৎ তার চাঁদের সাথে দেখা হয়ে গেল। চাঁদকে ভয়ার্ত অবস্থায় দেখে নূর এবার পূর্ণদৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। চোখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে ভ্রু যুগল সরু করে চাঁদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী হলো? তোমাকে এত ভয়ার্ত দেখাচ্ছে কেন?”
এরমধ্যেই সোহানীর গলার আওয়াজ ভেসে এলো চাঁদ এবং নূরের কানে! সোহানী ছটফটে গলায় চাঁদকে ডেকে বলল,,
“চাঁদ এদিকে আয়!”

চাঁদ বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে পিছু ফিরে সোহানীর দিকে তাকালো। বিড়ালছানাটিকে ভালোভাবে বুকের মাঝে জাপটে ধরল। করুন দৃষ্টিতে সোহানীর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো! বুঝাতে চাইল সে বিড়ালছানাটিকে দিবে না। সোহানী রেগে উঠল। তটস্থ গলায় বলল,,

“এদিকে আয় বলছি।”
চাঁদ আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। ব্রাশ মুখে রেখে দুহাতে বিড়ালছানাটিকে আঁকড়ে ধরে জায়গা পরিত্যাগ করতেই নূর বাঁকা হেসে পেছন থেকে চাঁদের হাতটি আঁকড়ে ধরল! নূর এতক্ষণে বুঝে গেছে চাঁদ কীসের জন্য এত ছটফট করছে। চাঁদের দুর্বল জায়গা খুঁজে পাওয়া মাত্রই নূর সেই জায়গায় আঘাত করল! বিদ্রুপাত্নক হেসে বলল,,

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৫

“এবার তুমি কী করবে চাঁদ? ঐ আপদটাকে তো এবার তোমার বিদায় করতেই হবে। বুঝতে পারি নি সকাল সকাল ঘুম থেকে জেগে ওঠা-টা আমার লাকি চান্স হয়ে দাঁড়াবে!”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৭