প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৮

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৮
নিশাত জাহান নিশি

“কী ব্যাপার? এখনও ঘুমিয়ে আছো কেন? সকাল কয়টা বাজছে এখন হ্যাঁ? তোমার জন্য কী আমরা নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে বসে থাকব? নীড় ভাইয়ার শ্বশুড় বাড়ি যাব না?”

তৎক্ষনাৎ চাঁদ বিষন্ন মনে মাথা নুইয়ে নিলো। কিয়ৎক্ষণ সে একই নীরবতা বজায় রাখল। নূরের তীক্ষ্ণ ফোঁসফঁঁসানির আওয়াজ চাঁদের কর্ণকুহরে বাজতে লাগল! চাঁদ কিছুটা ভয়ার্ত হয়ে গলা খাদে এনে বলল,,
“আপনারা চলে যান নূর ভাইয়া। আমি কোথাও যাব না!”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নূর তীব্র রাগে চোয়াল শক্ত করল। বিছানায় এক হাঁটু মুড়ে দাঁড়ালো। খড়খড়ে গলায় বলল,,
“নাটক শুরু করছ না? আবার নাটক শুরু করছ? দুইদিন তো ভালোই ছিলা। এখন আবার নাটক শুরু করছ?”
চাঁদ মাথা উঁচিয়ে আহত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। সে বুঝতেই পারছে না নূর কেন এতটা ওভার রিয়েক্ট করছে তার সাথে! মনটা আরও বিষণ্ন হয়ে উঠল চাঁদের। শরীরের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে চাঁদ ধীর গলায় বলল,,

“আমি নাটক করছি না নূর ভাইয়া। সত্যি আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।”
“ইচ্ছে করছে না মানে কী হ্যাঁ? ইচ্ছে করছে না মানে কী? তুমি জানো? তোমার জন্য আম্মু জেদ ধরে বসে আছে! তুমি না গেলে আম্মুও যাবে না। বুঝতে পারছ তো আমি কি একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছি?”

“আমি খালামনিকে বুঝিয়ে বলছি নূর ভাইয়া। আপনি প্লিজ এতোটা হাইপার হবেন না।”
“তোমার বুঝানোর কোনো দরকার নাই। আমি বুঝতে পারছি ঐ বিড়ালটাই হলো সব নষ্টের মূল! সামান্য একটা বিড়ালের জন্য তুমি সকাল থেকে কান্নাকাটি করছ? শুধু তাই নয় খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে রুমে বসে নাটক জুড়ে দিয়েছ? এখন আবার বলছ কোথাও যাবে না। সমস্যাটা কী তোমার হ্যাঁ? সমস্যাটা কী? অন্যের বিড়াল চুরি করে এনে আবার তার উপর অধিকার খাটাচ্ছ?”

চাঁদ বিশৃঙ্খল দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। তবে নূরের কথার বিপরীতে একটা প্রতিবাদও করল না। সত্যিই তার মনটা ভীষণ খারাপ! পুচিকে সত্যিই খুব মিস করছে। এদিকে নূরের খারাপ আচরণেও রীতিমতো বিরক্ত সে! তাই এই মুহূর্তে কারো সাথে ঝগড়া করা বা তর্কে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই সে। বাধ্য হয়ে এবার নূরের কথা মানতে হলো চাঁদের। মাথা নুইয়ে বিষণ্ন গলায় বলল,,

“আপনি যান। আমি রেডি হয়ে আসছি।”
নূর অবাক হলো! চাঁদের দিকে সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কৌতূহলী গলায় শুধালো,,
“এই? তোমার আবার শরীর টরীর খারাপ করলাম না তো?”

চাঁদ বিছানার উপর থেকে ওঠে দাঁড়ালো। এলোমেলো চুল গুলো খোঁপায় বাঁধলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নারত মুখটা দুহাতে মুছলো। অতঃপর ব্যস্ত ভঙ্গিতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। শান্ত গলায় বলল,,
“আপনি যান। আমি রেডি হয়ে আসছি।”

ওয়াশরুমের দরজাটা চাঁদ সশব্দে ভেতর থেকে লক করে দিলো। নূর আবারও অবাক হলো। ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সন্দিহান গলায় বলল,,

“হঠাৎ এত শান্ত হয়ে গেল এই বিচ্চু মেয়েটা? সত্যিই কী বিড়ালটার জন্য জান বের হয়ে যাওয়ার মতো দশা হয়েছে এই মেয়েটার? কী এমন অদ্ভুত শক্তি আছে ঐ বিড়াল প্রাণীর মধ্যে? যা একজন বাচাল, ঝগড়ুটে এবং দুষ্টু ধরণের মেয়েকে এভাবে রাতারাতি পরিবর্তন করে দিতে পারে? কিন্তু আমি তো ঐ বিড়াল প্রাণীর মধ্যে এলার্জি ছাড়া আর বিশেষ কিছুই দেখতে পাই না!”

এসব ভাবতে ভাবতেই ভাবুক হয়ে নূর চাঁদের রুম থেকে বের হয়ে এলো। আকস্মিকভাবেই চাঁদের রুমের সামনে আয়মনের সাথে নূরের দেখা হয়ে গেল। আয়মন ছুটে আসছিল চাঁদকে ডেকে দিতে। এর মধ্যেই নূরের সাথে দেখা হয়ে গেল। তখনি হাঁপিয়ে ওঠা গলায় আয়মন নূরকে শুধালো,,
“কী রে? চাঁদ এখনো রেডি হয় নি?”

নূর বেশ ভাবুক ভঙ্গিতে আয়মনের দিকে তাকালো। প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,
“আচ্ছা ভাই আমি একটা জিনিস বুঝলাম না। বিড়াল প্রাণীর মধ্যে কী এমন ক্ষমতা আছে যা একটা চঞ্চল মেয়েকে রাতারাতি পরিবর্তন করে দিতে পারে? মানে কী একটা অবস্থা ভাই! সেই প্রাণীটার জন্য মেয়েটাকে আবার কাঁদতেও হবে? কেন ভাই? কাঁদার জন্য কী ভালো আর কোনো অপশন নেই? পৃথিবীতে কী মানুষের অভাব পড়ছে? তুই কাঁদলে মানুষের জন্য কাঁদবি। বিড়ালের জন্য কেন কাঁদবি?”

আয়মন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল! উত্তেজিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“চাঁদ কি এখনও কাঁদছে বিড়ালটার জন্য?”
“আরে ব্যাটা শুধু কাঁদছে না। কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলেছে। বিশ্বাস না হলে রুমে গিয়ে দেখে আয়! এই মেয়েরা যে কখন কার জন্য কাঁদবে তুই টের-ই পাবি না। এদের মন বুঝা বড় দায়!”

নূর প্রস্থান নিলো। আয়মন কপাল ঘঁষল। উদ্যোগী গলায় বলল,,
“যা বুঝা যাচ্ছে। চাঁদকে এবার একটা বিড়ালছানা কিনে দিতেই হবে! তাও যদি ওর মনটা একটু ভালো হয়।”

রৌদ্রময় দুপুর। ধরণী জুড়ে সূর্যের প্রখর উত্তাপ। চোখ মেলে তেজস্বী আকাশের দিকে তাকানো যাচ্ছে না পর্যন্ত! চোখ যেন অবিলম্বেই ঝলসে আসছে। আশেপাশেও স্বচক্ষে তাকানো যাচ্ছে না। শরীরের টেম্পারেচার বেড়ে উর্ধ্বগতিতে ছুঁই ছুঁই করছে। অসম্ভব গরমের ভাপে গাড়িতে বসে থাকা সবার অবস্থা প্রায় সূচনীয়!

এসির বাতাসও যেন গাঁয়ে লাগছে না তাদের। রোদের তাপে নাজেহাল অবস্থা সবার। তবুও যেন থেমে যাচ্ছে না মানুষের জনজীবন! চারিদিকে কোলাহল, কলরব, কর্মজীবন, কর্মব্যস্ততা। সড়কে অবাধ্য যানচলাচল, সর্বস্তরের মানুষদের অতিরিক্ত ভীড়। সেই মানুষের শরীরের উত্তাপে যেন আবহাওয়া আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে! পরস্পর একই বিন্দুতে এসে মিলিতে হচ্ছে।

বড় একটি হাইএক্স ভাড়া করেছিলেন হাবিব আবরার। নীড়ের শ্বশুড় বাড়ি যাওয়ার জন্য। সেই হাইএক্সে সাবরিনা আবরার, হাবিব আবরার, নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা, রুহি, চাঁদ এবং সোহানী বসেছে। অন্যদিকে নূর, আয়মন, সাদমান, সাব্বির তাদের বাইকে করে হাইএক্সকে অনুসরণ করছে। সাব্বির একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে! গত দুইদিন যাবত সে তার বন্ধুর বাড়িতে ছিল। ঢাকা এসেছে বলেই বন্ধুর রিকুয়েস্টে বন্ধুর বাড়িতে থাকা!

নূরের বাইকের পেছনে বসেছে আয়মন। সাদমানের বাইকের পেছনে সাব্বির। হেলম্যাট পড়ে থাকায় গরমের ভাগে যেন নূরের মাথা শুদ্ধ পুরো শরীর সিদ্ধ হয়ে আসছে! গরমের তাড়নায় অসহ্য হয়ে নূর রাস্তার পাশ ঘেঁষে বাইকটি দাঁড় করালো। হেলম্যাটটা মাথা থেকে খুলে বাইকের হ্যান্ডেলে রাখল।

তড়িঘড়ি করে বাইক থেকে নেমে ঘামে চুপসে থাকা শার্টের কলারটা ঝাড়লো। এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে নিলো। নাকের ডগায় লেগে থাকা ঘামগুলো টিস্যু দিয়ে মুছলো। উত্তপ্ত শ্বাস ছাড়তেই আয়মন বাইক থেকে নেমে হঠাৎ একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেটটা মুখে নিয়ে আশেপাশে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ব্যস্ত গলায় বলল,,
“একটা ঠাণ্ডা হলে ভালো হতো। যা গরম পড়েছে ভাই! সমস্ত শরীর হিট হয়ে আছে।”

নূর তপ্ত শ্বাস ছাড়ল। আয়মনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। হুট করেই আয়মনের হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটি ছিনিয়ে নিলো। সিগারেটটায় দীর্ঘ এক ফুঁক দিলো। নাক-মুখ থেকে ধোঁয়া বের করে নিঃস্ব গলায় বলল,,
“একটু পর রোজের বিয়ে!”

আয়মন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিলো! বাইকের সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো। নূরের দিকে নির্লিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। হেয়ালি গলায় বলল,,
“তো?”
দুই থেকে তিন টানে সম্পূর্ণ সিগারেটটি শেষ করে ফেলল নূর! রক্তিম দু’চোখে আয়মনের দিকে তাকালো৷ আর্ত গলায় বলল,,

“আমার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে ভাই। ড্রাইভ করার শক্তিটাও অবশিষ্ট নাই!”
নূরের ভেতরের কষ্টটাকে প্রশ্রয় দিতে চাইল না আয়মন! জায়গা থেকে সরে দাঁড়ালো সে। বাইকের হ্যান্ডেল থেকে হ্যালমেটটা হাতে তুলে নিয়ে মাথায় পড়ল। তড়িঘড়ি করে বাইকে ওঠে নূরকে উদ্দেশ্য করে স্থির গলায় বলল,,
“তুই পেছনে বস। আমি ড্রাইভ করছি!”

গড়িয়ে পড়া চোখের জলগুলো মুছে নিলো নূর! এদিক ওদিক অধীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কান্নাজড়িত গলায় বলল,,
“তুই যা। আমি একটু পরে আসছি!”
আয়মন রাগান্বিত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকালো। খড়খড়ে গলায় বলল,,

“এক্ষণি আমার সাথে যাবি কি-না বল? যদি উত্তরটা না হয় তবে কিন্তু আমার কুমিল্লা রিটার্ণ করতে বেশি সময় লাগবে না!”
নূর রুক্ষ দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। চোয়াল শক্ত করে বলল,,
“রিটার্ণ করবি মানে?”

চোখে-মুখে তিক্ততার ছাপ ফুটিয়ে তুলল আয়মন! রাশভারী গলায় বলল,,
“সত্যি বলছি, বসে বসে তোর এসব ফালতু ড্রামা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না! অবুঝের মতো কাজ করছিস তুই। নির্বোধের মতো একটা স্বার্থপর মেয়ের জন্য কাঁদছিস এমনকি তার জন্য অকারণে কষ্টও পাচ্ছিস। যা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না। বিতৃষ্ণা ধরে গেছে সত্যি।”

নূরের ভয়াল শ্বাস আয়মনের কর্ণকুহরে তীক্ষ্ণভাবে বিঁধে যাচ্ছিল! তবুও আয়মন তার জেদ থেকে এক দন্ড নড়ল না। একরোঁখা দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে রইল। নূরের জেদ এবার আয়মনের কঠোর দৃষ্টির কাছে হার মানতে বাধ্য হলো! আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আয়মনের কথা মতো সে বাইকের পেছনে ওঠে বসল! আয়মন স্মিত হাসল! সঙ্গে সঙ্গেই বাইক স্টার্ট করে দিলো। আবারও তারা হাইএক্সের পেছনে ছুটল। নূর মাথা নুইয়ে রোজের জন্য ছটফট করছিল! হাত-পা কচলাচ্ছিল! ভেতরের যন্ত্রণায় জ্বলে পুড়ে সে ছাঁই হয়ে যাচ্ছিল!

প্রায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হাইএক্সটি এসে নূরের শ্বশুড় বাড়ির সামনে থামল। এক এক করে সবাই হাইএক্স থেকে নেমে পড়ল। বাড়ির মেইন গেইটের সামনেই নীড়ের শ্বশুড় বাড়ির লোকজন ভীড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! বিশেষ করে নীড়ের হবু শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী, হবু শালা এবং শালীরা। নীড়ের পুরো পরিবারকে দেখামাত্রই তারা হাসিমুখে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। একে অপরের সাথে কৌশল বিনিময় করল।

সাবরিনা আবরার পালাক্রমে উনার বোনের মেয়েদের সাথে নীড়ের শ্বশুড়বাড়ির প্রত্যেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আয়মন এবং সাব্বিরের সাথেও সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয় পর্ব শেষে এক এক করে সবাই বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। এরমধ্যেই সোহানীর আকস্মিক দৃষ্টি পড়ল বাড়ির ছাদের দিকে! একটি ফর্সা দেখতে মেয়ে ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে তার অবাধ্য জলের আনাগোনা!

দেখতে বড্ড বিষণ্ন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন কত রাত সে ঘুমোয় না। গভীর দুঃশ্চিন্তায় ডুবন্ত সে। সোহানী এবার তৎপর দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকালো। অমনি মেয়েটি তড়িঘড়ি করে জায়গা থেকে সরে গেল! সোহানী এবার অবাক হলো। মেয়েটির যাওয়ার পথে অনেকক্ষণ ধরে একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল৷

অন্যদিকে সাবরিনা আববার সবাইকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন। সবার মাঝে সোহানীকে দেখতে না পেয়ে উনি চিন্তিত হয়ে উঠলেন। সোহানীকে খুঁজতে খুঁজতে উনি বাড়ির আঙিনায় চলে এলেন। একটু দূরে সোহানীকে দেখা মাত্রই উনি স্বস্তির শ্বাস ছাড়লেন। হাত দিয়ে ইশারা করে সোহানীকে কাছে ডাকলেন। উচ্চ আওয়াজে বললেন,,
“কী হলো সোহানী? তুই ঐখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস?”

সোহানীর ধ্যান ভাঙল। ম্লান হেসে সে দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ল। সাবরিনা আবরারের পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলল,,
“কিছু হয় নি খালামনি। আসলে বাড়িটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।”
সাবরিনা আবরার মৃদু হাসলেন। সোহানীর ডান হাতটি মোলায়েম হাতে ধরলেন। কোমল গলায় বললেন,,
“আগে ভেতরে আয়। পরে না হয় পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে।”

সোহানী মিষ্টি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। সাবরিনা আবরারের হাত ধরে বাড়ির ড্রয়িংরুমে ঢুকে পড়ল। নীড়ের শ্বশুড় বাড়ির সবাই ব্যস্ত অতিথি অ্যাপায়নে। চা, শরবত, কফি, কয়েক পদের মিষ্টি এবং নানান ধরনের ফল সাজিয়ে দিলেন সবার সামনে। চাঁদ এখনও মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

ধূসর রঙের কুত্তিটাও যেন তার মন খারাপের সাথে উজ্জ্বলতা বিয়োজন করেছে! সবার মাঝখানে বসে থেকেও তার মন খারাপের বিলুপ্তি ঘটছে না একরত্তিও! অনেকক্ষণ যাবত সাদমান পাশের সোফা থেকে চাঁদকে প্রত্যক্ষণ করছে! উসখুস করছে চাঁদের সাথে দু’দন্ড কথা বলার জন্য! তবে সময় সুযোগ কোনোটাই মিলাতে পারছে না সে।

অন্যদিকে নূর বিষণ্ন মনে মাথা নুইয়ে বসে আছে। আশপাশ ফিরে তাকানোর মন মানসিকতাও তার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। এর মধ্যেই হঠাৎ চাঁদের সেলফোনটি বেজে উঠল। তড়িঘড়ি করে চাঁদ হাতে থাকা সেলফোনটির দিকে উদগ্রীব দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মুহূর্তের মধ্যেই তার চোখ দুটো চড়কগাছ হয়ে উঠল।

রোজের নাম্বার থেকে কল এসেছে! চাঁদ থমকে গেল। নূরের দিকে উদ্বেগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল! আকস্মিকভাবে নূরেরও দৃষ্টি পড়ল চাঁদের দিকে! সন্দিহান হয়ে নূর চাঁদের দিকে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চাঁদ বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো! কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই দ্রুত পায়ে হেঁটে সে বাড়ির আঙিনায় চলে এলো। ব্যাকুল হয়ে কলটি রিসিভ করল। সাথে সাথেই ঐ পাশ থেকে রোজ কান্নাজড়িত গলায় বলল,,

“কেমন আছো চাঁদ?”
চাঁদ শুকনো ঢোক গিলল। কম্পিত গলায় বলল,,
“ভাভাভালো আছি।”
“নূর কোথায় চাঁদ?”
“এই তো এইখানেই আছে। কেন?”

“নূর ভালো আছে তো?”
“এটা তো আমার চেয়ে তোমার ভালো জানার কথা আপু!”
“আমি জানি নূর ভালো নেই! নূর আমাকে ছাড়া ভালো থাকতেই পারে না!”
“এতোই যেহেতু জানো তাহলে ছেড়ে গেলে কেন তখন নূর ভাইয়াকে হ্যাঁ? একটিবার সুযোগ দিতে পারলে না উনাকে?”
“সুযোগ দিলাম তো! নূরকে তো আমি সুযোগ দিয়েই গেলাম!”

“মানে? কীভাবে?”
“একটা রিকুয়েস্ট করব চাঁদ?”
“কী? কী রিকুয়েস্ট?”
রোজ ডুকরে কেঁদে বলল,,
“নূরকে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারবে তো?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৭

চাঁদ তাজ্জব বনে গেল! ঘটনার আকস্মিকতায় শুকনো কাশতে লাগল। কপাল কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে বলল,,
“এসব তুমি কী বলছ আপু? পাগল হয়ে গেছ তুমি? নূর ভাইয়াকে আমি ভালোবেসে আগলে রাখব?”
“কেন পারবে না চাঁদ? আমার নূর কোন দিক থেকে খারাপ? আমি অনেক ভেবে দেখেছি জানো? নূরের জন্য তুমি-ই পার্ফেক্ট!”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৯