প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৯

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৯
নিশাত জাহান নিশি

“কেন পারবে না চাঁদ? আমার নূর কোন দিক থেকে খারাপ? আমি অনেক ভেবে দেখেছি জানো? নূরের জন্য তুমি-ই পার্ফেক্ট!”

মুহূর্তের মধ্যেই চাঁদের সমস্ত শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল! লোমকূপদ্বয় অবিলম্বেই শিউরে উঠল। শিরদাঁড়া বেয়ে উষ্ণ ঘামের লহর গড়াতে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় চাঁদ তার বিস্তীর্ণ মুখমণ্ডল ওড়না দ্বারা মুছে নিলো। জবাবে কী বলবে তা ভেবেই কুল-কিনারা পাচ্ছিল না। এই মুহূর্তে নিজেকে ধাতস্থ করার জন্য চাঁদ দীর্ঘ এক শ্বাস ছাড়ল। কিছুটা দম সঞ্চার করে কাঠ কাঠ গলায় বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আপু আপনি একটু বেশিই ভাবছেন! নূর ভাইয়াকে নিয়ে আমি কখনো এসব চিন্তা আমার মাথাতে-ই আনি নি। না কখনো আনতে পারব! আসলে আমরা বরাবরই বিপরীতধর্মী। ধরতে পারেন আমাদের মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক! সেই রেষারেষির জায়গা থেকে বলছি, আপনি আজ আমাকে এই কথাটা বলেছেন ভবিষ্যতে আর কখনো এই কথাটা মুখেও আনবেন না! ইট’স মাই হাম্বেল রিকুয়েস্ট।”

রোজ কান্না থামালো৷ চোখের জলরাশি মুছে নিলো। হা করে দ্বিরুক্তি প্রকাশ করার পূর্ব মুহূর্তেই আকস্মিকভাবে চাঁদের হাত থেকে নূর ফোনটি কেড়ে নিলো! এতক্ষণ যাবত উভয়ের মধ্যে হতে থাকা কোনো কথাই সম্পূর্ণভাবে না শুনে নূর আচমকা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল! ফোনের ঐ প্রান্তে রোজকে অনুমান করে তুখাড় রাগী গলায় বলল,,

“এই তুমি কল করলা কেন হুম? আমার কাজিনের নাম্বারে কেন কল করলা? কীসের এত ঠেকা পড়ছে তোমার হ্যাঁ? বড়লোক জামাই পাইছ না? বিশাল কোটিপতি তো। বিয়ের পর দেশের সবচেয়ে এক্সপেন্সিভ বাড়িতে থাকবা তুমি! না চাইতেই তোমার চোখের সামনে সব হাজির হয়ে যাবে।

মুখ নেড়ে কিছু চাইতেও হবে না। টাকার উপর ঘুমাবা তুমি বুঝছ? টাকার উপর ঘুমাবা। দামী দামী শপিং কমপ্লেক্সে যাবা। যখন যা চাইবা তাই পাবা। কোনো কিছুরই কমতি থাকবে না তোমার। এরপরেও কেন তুমি কল করলা আমার কাজিনের নাম্বারে হ্যাঁ? কেন কল করলা?”

রোজ শুকনো ঢোক গিলল। মুখ চেপে কান্নায় মশগুল হয়ে উঠল! এই মুহূর্তে বাকরুদ্ধ সে। প্রত্যত্তুর করার মতো জায়গাটুকু অবশিষ্ট নেই তার। নূর হাঁপিয়ে উঠল। অস্থির শ্বাস ফেলে পুনরায় বলল,,

“শুনো একটা কথা বলি তোমায়। বড়লোক জামাই পাইছ খুব ভালো কথা। আমার কোনো আপত্তি নেই এতে। হয়তো তুমি কিছু না চাইতেই সে তোমাকে পৃথিবীর সব সুখ হাতের মুঠোয় এনে দিতে পারবে তবে এই নূরের মতো বিশাল মন নিয়ে সে তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না! শারীরিক সুখ ঠিকই পাবা তুমি। তবে মানসিক সুখ পাবা না! এই নূর ছাড়া মানসিক সুখ তোমাকে এই দুনিয়ার কেউ এনে দিতে পারবে না!”

সঙ্গে সঙ্গেই টুং টুং শব্দে যোগাযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দিলো রোজ! কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। এই মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় নারী বলে মনে হচ্ছে তার। না নূরের মায়া ছাড়তে পারছে, না হাসিমুখে সব মেনে নিতে পারছে! এর মধ্যেই বরযাত্রী চলে এলো।

রোজের সব কাজিনরা এসে রোজকে জোর-জবরদস্তি করে বিয়ের আসরে নিয়ে গেল! রোজের বাবা এবং চাচাদের চাপে পড়ে তাকে নিরুপায় হয়ে বিয়ের আসরে যেতেই হলো। মুখ ফুটে তার ভেতরের অনুভূতি কাউকে প্রকাশ করতে পারল না সে। একরাশ অব্যক্ত যন্ত্রণা নিয়েই তাকে নিয়তিকে মেনে নিতে হলো!

নূর কান থেকে ফোনটি হাতে নিলো। অশ্রুসিক্ত চোখে কিয়ৎক্ষণ ফোন নাম্বারটির দিকে তাকিয়ে রইল। বুকে পাথর রেখে ডান হাতের উল্টো পিঠ দ্বারা গড়িয়ে পড়া চোখের জলগুলো মুছে নিলো। হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চাঁদের দিকে নির্ভেজাল দৃষ্টিতে তাকালো। কপালের ভাজে উদীয়মান তীব্র যন্ত্রণার ছাপ নিয়ে ফোনটি চাঁদের দিকে এগিয়ে দিলো। ব্যথীত গলায় বলল,,

“নাম্বারটা ব্লকলিস্টে ফেলে দাও! আর কখনো যেন রোজের নাম্বার থেকে কোনো কলস না আসে।”
হাত বাড়িয়ে চাঁদ ফোনটি হাতে তুলে নিলো। নূরের কথামতো নাম্বারটি ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো! ঘোর কাটিয়ে এখনো উঠতে পারছে না চাঁদ।

নূর যা বলছে তাই রোবটের মতো বাধ্য হয়ে করে চলছে। চোখের কোণে আবারও অবাধ্য জল জমে এলো নূরের। মনোস্থির করল বাড়ি পরিত্যাগ করার! হাতের কনুই দ্বারা আবারও চোখের জল মুছে নিলো নূর। তড়িঘড়ি করে জায়গা থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই চাঁদ পেছন থেকে নূরের হাতটি টেনে ধরল! নির্ভেজাল গলায় বলল,,

“কোথাও যাবেন না প্লিজ। এখানকার কাজ মিটে গেলে যেখানে খুশি সেখানে যাবেন। কেউ আপনাকে আটকাতে যাবে না। নীড় ভাইয়া কিন্তু আপনার উপর ভরসা করেই আমাদের সবাইকে এখানে পাঠিয়েছে নূর ভাইয়া। প্লিজ উনার ভরসার মান রাখুন। ঘরের ব্যাপারগুলো দয়া করে বাইরে টেনে আনবেন না।”

নূর থমকালো। চাঁদের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনল। ঠাণ্ডা মাথায় সব ভেবে দেখল চাঁদ যা বলেছে আসলে ঠিকই বলেছে। এই মুহূর্তে নূরের কোথাও যাওয়াটা বেমানান। নীড়ের শ্বশুড় বাড়ির লোক কিছু সন্দেহ করতে পারে। নূরকে এবং নূরের পরিবারকে ভুল বুঝতে পারে। নূরকে দায়িত্বহীন ভাবতে পারে। সবকিছু ভেবে চিন্তে নূর এক ঝটকায় চাঁদের হাতটি ছাড়িয়ে দিলো। নাক টেনে চোখের জল মুছে চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়ালো। নিজেকে কিঞ্চিৎ শান্ত রূপে প্রস্তুত করল। স্বাভাবিক গলায় বলল,,

“ঠিক আছি?”
চাঁদ মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। কিয়ৎক্ষণ মৌন দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে রইল। নূরের মন ভালো করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল। আচমকাই বাঁকা হেসে উঠল চাঁদ। দুষ্টুমিপূর্ণ গলায় বলল,,

“এখন আপনাকে দেখতে না পুরো পুচির মতো দেখাচ্ছে!”
নূর কপাল কুঁচকালো। এক ভ্রু উঁচু করে চাঁদের দিকে তাকালো। বিষণ্নতা ভুলে কৌতূহলী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সন্দিহান গলায় বলল,,
“হোয়াট?”

চাঁদ ফিক করে হেসে দিলো। মজার ছলে বলল,,
“ঐ যে নীল চোখ! আমার পুচিরও তো নীল চোখ। আপনাকে দেখলেই এখন পুচির কথা মনে পড়ে যায় আমার! হারিয়ে যাওয়ার জিনিসের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায়।”
নূর খড়তড় দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো! চোয়াল শক্ত করে রাগ প্রকাশ করল। আকস্মিকভাবেই চাঁদের এক কান টেনে ধরল! দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

“কী বললে তুমি হ্যাঁ? আমাকে দেখতে ঐ আপদটার মতো দেখায়?”
অবিলম্বেই চাঁদ চোখ-মুখ খিঁচে নিলো। আর্ত গলায় বলল,,
“আহ্ নূর ভাইয়া। ছাড়ুন, ব্যথা লাগছে।”
নূর তটস্থ গলায় মৃদু চিৎকার করে বলল,,

“ব্যথা লাগার জন্যই তো দিচ্ছি। আর কখনো ঐ আপদটার সাথে আমার কম্পেয়ার করবে? বলো? আর করবে?”
“করব নাআআআ। এবার তো ছাড়ুড়ুড়ুন!”
“যদি করো তখন?”
“করব না বললাম তো।”
“তোমাকে আমি খুব ভালোভাবেই চিনি। ব’দের হাড্ডি কোথাকার। ঠিক করে বলো যদি আবারও একই ভুল করো তখন কী করব?”

“খালামনিনিনিনি দেখে যাওওও। তোমার ছেলে আমার উপর টর্চার করছেছেছে!”
চাঁদের হাঁকডাকে নূর এবার বাধ্য হলো চাঁদের কান ছাড়তে! কিছু মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল যেনো নূরের কানের পর্দা ফেঁটে যাচ্ছিল। তাড়াহুড়ো করে নূর এবার নিজের কানে ধরল! মৃদু আওয়াজে বলল,,
“এই তুমি এত ফাটা বাঁশ কেন হ্যাঁ? কানের পর্দা ফেটে যাচ্ছিল আমার।”

বাঁকা হেসে চাঁদ নূরের দিকে খানিক এগিয়ে এলো। ভ্রু যুগল বার বার উঁচিয়ে নূরের দিকে তাকালো। অবিশ্বাস্যভাবেই নূরের ডান হাতের মাংসপেশিতে চিমটি কাটল চাঁদ! খিলখিলিয়ে হেসে বলল,,
“পুচি! আপনিই হলেন আমার পুচি!”

আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না চাঁদ! ভেংচি কেটে এক দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। পিছু ফিরে দেখল নূর রাগান্বিত দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের ব্যথাযুক্ত মাংসপেশি ঘঁষছে। শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাগে গজগজ করে চাঁদের পিছু পিছু আসছে। বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না চাঁদের আজ খবর আছে! নূর এবার সত্যিই ক্ষেপে গেছে। মুখশ্রীতে রক্তিম বর্ণ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। চাঁদ এবার ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল।

দৌঁড়ে এসে সাবরিনা আবরার এবং হাবিব আবরারের মধ্যখানে বসল! তাদের ছায়ায় নিজেকে আড়াল করল! হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ির সদর দরজার দিকে তাকালো। অমনি দেখল নূরের সামনে সুন্দর দেখতে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে! দুজনই তেরো বাঁকা হয়ে হেলতে দুলতে কথা বলছে!

দেখে মনে হচ্ছে যেনো পৃথিবীতে আর কোনো সুদর্শন ছেলে মানুষ দেখে নি। নূরকেই এই প্রথমবার দেখল! নূর আড়ষ্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। কখন এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসবে সেই চিন্তায় আছে। হাঁটু যেনো কেঁপে কেঁপে উঠছে তার। ঠিক তখনি মেয়ে দুটো থেকে একটি মেয়ে বেশ ভঙ্গিমা করে নূরকে বলল,,

“কেমন আছেন ভাইয়া?”
নূর শুকনো হাসল। মাথা চুলকে ম্লান গলায় বলল,,
“ভালো আছি। আপনি?”
মেয়েটি মৃদু হাসল। পাশের মেয়েটির দিকে তাকালো। অতঃপর আবারও ভ্রু উঁচিয়ে নূরকে লক্ষ্য করে বলল,,
“ভালো আছি। আমাদের চিনতে পেরেছেন ভাইয়া?”

“চিনতে পেরেছি। ভাবির কাজিন।”
মেয়ে দুটোই বেশ হেলতে দুলতে বলল,,
“বাহ্! ব্রেন তো দেখছি খুব সার্ফ আপনার!”

নূর বোকা হাসল। পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে ইতস্তত গলায় বলল,,
“আচ্ছা আমি আসছি এখন। পরে কথা হবে।”
তড়িঘড়ি করে নূর তাদের ডিঙিয়ে এলো!

ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করেই শকুনের দৃষ্টিতে চাঁদকে খুঁজতে লাগল। চাঁদ মিটিমিটি হেসে সাবরিনা আবরার এবং হাবিব আবরারের মাঝখানে লুকিয়ে আছে! নূরকে আড়চোখে দেখছে! তার গতিবিধি লক্ষ্য করছে। সাবরিনা আবরার হঠাৎ লক্ষ্য করলেন চাঁদকে। নীড়ের শ্বাশুড়ীর সাথে মাঝপথে কথা থামিয়ে উনি চাঁদের দিকে তাকালেন। সন্দিহান গলায় বললেন,,

“কী রে? কী হয়েছে? এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কাকে দেখছিস?”
সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ সাবরিনা আবরারের বাহু চেপে ধরল। মিনমিনে গলায় তৎপর ভঙ্গিতে বলল,,
“চুপ করো খালামনি। পুচি আমাকে খুঁজছে!”
সাবরিনা আবরার অবাক হলেন। ভ্রু যুগল কুঁচকে বললেন,,

“পুচি? এখানে পুচি এলো কোত্থেকে?”
“আছে খালামনি। এখানেও একটা পুচি আছে!”
“কে? বলবি তো?”
“কে আবার? তোমার ছেলে!”
“আমার ছেলে? আমার ছেলে পুচি?”

“হ্যাঁ! তোমার ছেলেই পুচি! দেখো না চোখগুলোও পুচির মতো নীল দেখতে! আবার দেখতেও পুচির মতো গলুমলু! ফোঁস ফোঁস করে হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়।”
সাবরিনা আবরার অট্ট হাসলেন। চাঁদের মাথায় গাড্ডা মেরে বললেন,,
“তুই পারিসও বটে চাঁদ!”

এর মধ্যেই নূরের দৃষ্টি পড়ল চাঁদের দিকে! অগ্নিশর্মা হয়ে নূর চাঁদের সোফার দিকে এগিয়ে আসতেই আয়মন নূরকে থামিয়ে দিলো! পাশে সাদমানও এসে দাঁড়ালো। নূরের কানে দুজনই ফিসফিসিয়ে বলল,,
“চল ভাই বাইরে যাই। এখানে বোর লাগছে!”
চাঁদের থেকে রাগান্বিত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো নূর। দৃষ্টি স্থির করল আয়মন ও সাদমানের দিকে। কড়া গলায় তাদের দুজনকে বলল,,

“ভাই তোরা যা। বাইরে তোদের ফিটিং দেওয়ার জন্য মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে!”
সাদমান এবং আয়মন অবাক হলো। নূরের দিকে সমস্বরে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“মানে?”
“যা না যা৷ গেলেই বুঝতে পারবি। আগুন সুন্দুরীরা তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

নূর গটগট করে সোফায় বসে পড়ল! তারা দুজন নির্বোধ চাহনিতে নূরের দিকে তাকালো৷ পিছু ফিরে আবারও দুজন নূরের পাশে বসল। এইদিকে চাঁদ ভয়ে সিঁটিয়ে উঠল! নূরের তেজী দৃষ্টিতে তাকানোর সাহস কুলাতে পারছে না সে। সাবরিনা আবরার বিষয়টা আঁচ করতে পারলেন! তাই গলা খাকিয়ে চাঁদকে বললেন,,
“চাঁদ মা। বোনদের নিয়ে উপরে যা। নীড়ের বউকে দেখে আয়।”

সারবিনা আবরারের অভয় পেয়ে চাঁদ ফট করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো! বুকে সাহস সঞ্চার করে নূরকে ভেংচি কাটল! তড়িঘড়ি করে জায়গা থেকে সরে সোহানী, জায়মা, নাদিয়া, সাদিয়া এবং রুহিকে নিয়ে উপরে ওঠে গেল! নূর রাগে হাত-পা কচলালো! চোয়াল শক্ত করে চাঁদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। খড়খড়ে গলায় আয়মনের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,
“আয়মন৷ তোর বোনকে কিন্তু সাবধান করে রাখবি। আমার পেছনে যেনো ভুলেও লাগতে না আসে।”

আয়মন ভ্রু কুঁচকালো। নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“কার কথা বলছিস তুই?”
“কেন? এক্সপ্লেইন করতে হবে?”
“আলবাদ করতে হবে। বোন তো আমার এখানে অনেকেই আছে।”

“আমি চাঁদের কথা বলছি ভাই! চাঁদের কথা বলছি। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে ঐ বিচ্চু মেয়ে আমাকে পুচি ভাবতে শুরু করল? শুধু তাই নয় ভাই আমার হাতে চিমটিও কেটেছে ঐ মেয়ে। বুঝ কত বড় সাহস তার! ইচ্ছে তো এখনই তাকে গলা টিপে ধরি।”
আয়মন ফিক করে হেসে দিলো! নূরের কাঁধে হাত রেখে মিনমিনে গলায় বলল,,

“চাঁদ ইচ্ছে করে এসব করছে বুঝলি? তোর মাইন্ড অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য! খেয়াল করে দেখ, তুই কিন্তু এখন কিছুটা সময়ের জন্য হলেও রোজকে মনে করা থেকে বিরত আছিস! তার কথা এখন তোর মাইন্ডেই নেই। তুই এখন চাঁদকে কীভাবে হার্ট করবি সেই চিন্তায় আছিস। অন্তত একটা কষ্ট পাওয়া থেকে তুই দূরে আছিস। আর এটাই হলো চাঁদ! অন্যকে মানসিক শান্তি দেওয়ার জন্য তার কোনো তুলনা নেই!”

নূর গভীর মনযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনল। কিয়ৎক্ষণ মৌণ রইল! অতঃপর আয়মনের দিকে ধীর দৃষ্টিতে তাকালো। সন্দিহান গলায় বলল,,
“এসবের মধ্যে থাকলে কী আমি সত্যিই রোজকে ভুলে থাকতে পারব? তাকে ভুলে যাওয়া কী এতই সহজ?”
“কঠিন কিছু নয়। মানুষ চাইলে সব পারে৷ তুইও পারবি। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। তবে তুই পারবি।”
নূর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মাথা নুইয়ে কপালে হাত রাখল। বিড়বিড়িয়ে বলল,,

“যদি সত্যিই পারতাম! সত্যিই যদি তাকে ভুলে যেতে পারতাম! একটু একটু করে যদি তার মায়া কাটিয়ে উঠতে পারতাম।”

অন্যদিকে,
বেশ উৎফুল্লিত মনে চাঁদ, সোহানী, নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা এবং রুহি দুতলায় ওঠে এলো। নীড়ের হবু বউ অর্থাৎ অনুর সাথে দেখা করবে বলে। এই প্রথমবার নীড়ের হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে তারা। তাই খুশিতে ভীষণ উত্তেজিত তারা। সোহানী বেশ উদ্বেলিত হয়ে অনুর রুমের দরজায় দু থেকে তিনটি টোকা দিলো।

ভেতর থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া ঘটল না। না কেউ জবাব দিলো না কেউ দরজা খুলতে এলো! সোহানীসহ বাকি সবাই অবাক হলো। কৌতূহল নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইল। সোহানী চতুর্থ বারের মতো দরজায় হালকা টোকা দিতেই হঠাৎ অনুর কাজিন উৎকণ্ঠিত হয়ে সোহানীর পাশে এসে দাঁড়ালো। চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ নিয়ে সোহানীর দিকে তাকালো। কম্পিত গলায় বলল,,

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ১৮

“আপনারা দাঁড়ান। আমি আপুকে ডেকে দিচ্ছি!”
সোহানী ম্লান হাসল। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো। বিস্ময় নিয়ে চাঁদ হঠাৎ সোহানীর কানে বিড়বিড়িয়ে বলল,,
“কী হলো আপু? কিছুই তো বুঝলাম না। ডাকতে এসেছি আমরা। মাঝখানে থেকে উনি কোথা থেকে এলো?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২০