প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২১

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২১
নিশাত জাহান নিশি

“কী হয়েছে সোহানী? ঐ বাড়িতে সব ঠিকঠাক আছে তো? তোমাকে দেখতে একটু বেশিই সিরিয়াস দেখাচ্ছে।”
সোহানী সেই একই সক্রিয়তা নিয়ে নীড়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে! চোখে-মুখে ব্যাপক রূঢ়তার ছাপ। নীড় এই প্রথম সোহানীকে এতটা কঠোর ভঙ্গিতে দেখছে! তাই স্বাভাবিকভাবেই নীড় বুঝতে পারছে সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটেছে! নীড় আর এক মুহূর্তও ব্যয় করল না। তাৎক্ষণিক রুক্ষ গলায় সোহানীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী হয়েছে সোহানী? বলবে তো? খারাপ কিছু ঘটেছে কি?”
নির্জীবতা ভেঙ্গে সোহানী এবার মুখ খুলল। এই মুহূর্তে নিজেকে চুপ রাখা মানেই হলো খারাপ কিছু ঘটে যাওয়াকে প্রশ্রয় দেওয়া। নির্ভীক হয়ে সোহানী বেফাঁস গলায় বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কিছু হয় নি। তবে ঘটবে হয়তো!”
নীড় হকচকিয়ে উঠল! উৎকণ্ঠিত গলায় বলল,,
“কী ঘটবে সোহানী? একটু ক্লিয়ারলি বলবে তো নাকি?”
সোহানী বিদ্বেষি হয়ে উঠল! সংশয়িত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কখনো জানতে ইচ্ছে হয়নি ভাবি কেন আপনার সাথে কথা বলতে চায় না? বা এর পেছনে কারণটা কী?”
নীড় মাথা নুইয়ে নিলো! অপরাধী ভাব নিয়ে গলা খাদে এনে বলল,,
“একচুয়েলি আমি ভাবতাম যে এই জায়গাটাতে হয়তো আমারই ফল্ট! কারণ, আমি সবকিছু মেন্টেইন করে অনুর সাথে কন্ট্রাক্ট করার সময় খুঁজে পেতাম না! তাই সেক্ষেত্রে কখনো মনে হয় নি অনু কম কথা বলে বিধায় এখানে অন্য কোনো রিজন থাকতে পারে!”

সোহানী বিক্ষিপ্ত শ্বাস ছাড়ল। রোষ সংবরণ করে নিজেকে প্রশমিত করল। নিচু গলায় বলল,,
“সময় করে একটিবার ভাবির সাথে কথা বলে দেখুন। জানতে চান ভাবি আসলে কী চায়। যদি মনে হয় যে আপনাদের মধ্যে মতের অমিল আছে তাহলে প্লিজ ভাবিকে আটকে রাখবেন না!

বিয়েটা করার জন্য জোরও করবেন না। চোখের সামনেই তো দেখছেন নূরের বর্তমান অবস্থা। রোজকে না পেয়ে সে কতটা ভেঙে পড়েছে? মন থেকে আহামরি কোনো অভিশাপ না এলেও রুহের হায় বলে একটা কথা আছে! সেই রুহের হায় যদি একবার রোজের জীবনে পড়ে যায়না? তবে রোজ সারাজীবন মনে প্রাণে চেয়েও সুখি হতে পারবে না! তাই বলছি বিয়ের আগে এই বিষয়গুলো ক্লিয়ার করে নিন। ভবিষ্যতে যেনো কারো পস্তাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।”

সোহানী প্রস্থান নিলো। নীড় আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে সোহানীর যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল! হুট করে নীড়ের মাথাটা ধরে বসল! অত্যধিক যন্ত্রণায় কাতরে উঠল নীড়। কপালটা অনবরত ঘঁষে চোখ-মুখ খিঁচে বিছানার উপর বসল। শারীরিক কোনো যন্ত্রণাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নীড় বিছানার উপর থেকে তার সেলফোনটি হাতে তুলে নিলো।

অতি উদ্বিগ্ন হয়ে অনুর নাম্বারে ডায়াল করল। তিন থেকে চারটি কল বেজে যাওয়ার পর অনু বাধ্য হয়ে ঐ প্রান্ত থেকে কলটি রিসিভ করল! অনুর পাশেই বসে আছে অনুর মা! কটমট দৃষ্টিতে অনুকে ভয় দেখাচ্ছে কলটি রিসিভ করার জন্য। স্বাভাবিক গলায় নীড়ের সাথে কথা বলার জন্য। অনু নিরুপায় হয়ে মুখ চেপে কেঁদে উঠল! তার মায়ের কথা মতো ফোনটি লাউডে রাখল! স্বল্প সময়ের মধ্যে নিজেকে ধাতস্থ করে নরম গলায় বলল,,

“হ্যালো।”
তৎক্ষনাৎ নীড় কপাল থেকে হাতটি সরিয়ে নিলো। স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বিরামহীন গলায় বলল,,
“কেমন আছো তুমি?”
“ভালো আছি। আপনি?”
“কাল রাত থেকে একবারও কল করো নি। কেন জানতে পারি?”

অনু তার মায়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল। জবাবে কী বলবে তা ভেবেই বিভ্রান্ত হয়ে উঠল। মাহফুজা বেগম বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালেন! নীড় যেনো উনার গলার আওয়াজ শুনতে না পারে সেজন্য উনি খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্র আওয়াজে অনুকে বললেন,,

“বল, বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলাম! আপনার পরিবারের লোকজন আসবে বলে কাল থেকেই রান্না-বান্নার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলাম। তাই সময় হয়ে ওঠে নি আপনাকে কল করার।”
অনু গলা ঝাঁকালো। মাহফুজা বেগমের কথা মতো মিথ্যে বলতে বাধ্য হলো! কাঠ কাঠ গলায় তার মায়ের বলা প্রতিটি কথাই নীড়কে বলল! নীড় সন্দিহান হয়ে উঠল। নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুনরায় শুধালো,,

“সত্যি তো?”
“হ্যাঁ। সত্যি!”
নীড় আশ্বস্ত হলো! বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। অনুর দিকে আরও একটি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“তুমি এই বিয়েতে রাজি তো অনু?”

কান্নাসিক্ত চোখে অনু আবারও মাহফুজা বেগমের দিকে তাকালো! উনার তেজস্ক্রিয় দৃষ্টিতে বেশিক্ষণ দৃষ্টি মিলিয়ে রাখতে পারল না অনু! অবিলম্বেই মাথা নুইয়ে নিলো! গলায় খুশির ছাপ যোজন করে মিনমিনে গলায় বলল,,

“হ্যাঁ রাজি।”
“এমনিতে আর কোনো সমস্যা নেই তো?”
“না নেই!”
“পাক্কা?”
“হুম!”
নীড় স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল! খানিকটা উদ্বেলিত হয়ে হাঁফ ছাড়া গলায় বলল,,

“ওহ্ গড বাঁচালে! খুব বড় একটা আঘাত থেকে বাঁচালে। আমার মা-বাবার পছন্দের মেয়ে কখনো ভুল হতে পারে না। তারা যা দেখে তাই সঠিক! আমি এখানে বসে বসে যা ইচ্ছে তাই ভাবছিলাম! ছ্যাঁ! শেম অন মি!”
এই মুহূর্তে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছিল অনুর! তবে পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূলে ছিল যে চুপিসারেও কাঁদতে পারছে না সে! নীড় মৃদু হাসল। সামনের চুলগুলো টেনে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কেমন লাগল আমার পরিবার? আমার মা-বাবা, ভাই-বোনদের?”
“ভালো।”
“আমি আসতে পারি নি বলে তুমি খুব রাগ করে আছো তাই না?”
“হুম!”
“ডোন্ট ওরি। খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে। আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।”

নিরুত্তর রইল অনু। অব্যক্ত যন্ত্রণায় ভেতরে ভেতরে ফুলে ফেঁপে উঠছিল সে! পরিস্থিতির চাপে পড়ে মনের গোপন সত্যিটা নীড়কে প্রকাশ করতে পারছে না বলে মৃত্যুসম কঠিন যন্ত্রণা মনে হচ্ছে তার! আকস্মিকভাবে দেয়াল ঘড়িতে চোখ পড়ল নীড়ের। বিকেল ৫ঃ৩০ মিনিট বাজছে ঘড়িতে। সন্ধ্যে সাতটায় ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে মাহিনকে পিক করে আনার কথা! নীড় এবার ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। শার্টের পেছনের কলার টেনে ধরল। চোখে-মুখে উদ্দীপনার ছাপ ফুটিয়ে বিরামহীন গলায় অনুকে বলল,,

“আমি এখন রাখছি অনু! মাহিনকে পিক করতে এয়ারপোর্ট যেতে হবে এখন। ফিরে এসে তোমার সাথে কথা বলছি কেমন?”
অনু যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচল! মুখ থেকে ওড়নার আঁচলটা সরিয়ে নিলো! উৎফুল্লিত গলায় বলল,,
“ওকে বায়!”
নীড় এপাশ থেকে ফোনটা কেটে দিলো। অস্থির ভাবাপন্ন হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। জলে সিক্ত সামনের চুলগুলো টেনে ধরল। ভাবুক গলায় বলল,,

“ঐদিকে তো সবকিছু ঠিকঠাক-ই আছে। তবে সোহানী হঠাৎ এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথাগুলো বলে গেল কেন? তাহলে কী সোহানী অনুকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছে?”
কিয়ৎক্ষণ নিজের অবান্তর ভাবনা চিন্তায় ডুবে রইল নীড়। কয়েক মুহূর্ত পর নিমগ্নতা ভেঙে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠল। মাথাটা ঝাঁকিয়ে ব্যস্ত গলায় বলল,,

“নূর বোধ হয় এখনো রেডি হয়নি। যাই আগে নূরকে ডেকে আসি।”
রুম থেকে প্রস্থান নিলো নীড়৷ দ্রুত পায়ে হেঁটে নূরের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো। দরজাটা ভেতর থেকে লক করা। নীড় তব্ধ শ্বাস ছাড়ল। দরজায় শক্ত হাতে টোকা মেরে বলল,,
“নূর? এই নূর?”

ভেতর থেকে কোনো জবাব এলো না। নীড় পেরেশান হয়ে আবারও রুমের দরজায় সজোরে টোকা মারল। উঁচু গলায় বলল,,
“এই নূর উঠ। লেইট হয়ে যাচ্ছে তো আমাদের। এয়ারপোর্ট যাবি না?”
তৎক্ষনাৎ রুমের দরজা খুলে আয়মন বের হয়ে এলো৷ নীড়ের দিকে ভেজালময় দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কিছু একটা ভেবে মাথা নুইয়ে পেছনের চুলগুলো টেনে ধরল। তাৎক্ষণিক ভ্রু কুঁচকে নীড় আয়মনের দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“কী রে? কী হয়েছে? নূর কই?”
আয়মন নিচু গলায় বলল,,
“নূর তো ঘুমাচ্ছে ভাইয়া!”
“এখন? এই সময়?”
“হ্যাঁ। আসলে নূরকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি আমি! একটু আগেই রোজের বিয়েটা হলো। খবরটা শুনেই খুব পাগলামি করছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ঔষধটা খাইয়ে দিই!”

নীড় কপাল ঘঁষল। নিরাশ গলায় বলল,,
“আমার এই ভাইটা আর মানুষ হলো না! এতবার পই পই করে বুঝানোর পরেও ভুল-ভাল কাজগুলোই সে বেশি করে করছে। বোধ-বুদ্ধি কিছুই হলো না এখনো। ঠুনকো আবেগ নিয়েই পড়ে আছে!”
আয়মন এখনো মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যাঁ বা না কিছুই বলছে না। নীড় ব্যস্ত দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“সাদমান কই?”
“সাদমান তো বাড়ি গেছে ভাইয়া।”
“কেন? আমাদের সাথে যাবে না?”
“যাবে। সাতটায় আমাদের সাথে এয়ারপোর্ট জয়েন করবে।”

“ওকে। নূরকে ডেকে দে। রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আয় তোরা। আর সাব্বিরকেও ডেকে দে।”
আয়মন পেছনের চুলগুলো চুলকে মুখটা কাচুমাচু করে বলল,,
“কিন্তু ভাইয়া, নূর তো এখনো গভীর ঘুমে। তাকে জাগাব কীভাবে?”
নীড় বাঁকা হাসল! আয়মনের কাঁধে হাত রেখে রসাত্মক গলায় বলল,,
“চাঁদ আছে না? চাঁদকে ডেকে দে। দেখবি এমনি এমনি নূরের ঘুম ভেঙে যাবে।”

আয়মন নির্বোধ ভঙ্গিতে মাথা চুলকালো। নীড়ের যাওয়ার পথে অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ফট করে দরজাটা বন্ধ করে ডেস্কের উপর থেকে পানির পটটা হাতে নিলো। পটের মুখটা খুলে অলস ভঙ্গিতে ঘুমন্ত নূরের চোখে-মুখে পানি ছিঁটাতে লাগল! নূর খানিক কেঁপে উঠল। আবারও হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

এভাবে প্রায় ৩/৪ বার পানি ছিটানোর পরেও নূর পুরোপুরি ঘুম ভেঙে উঠছিল না! চোখ মেলে তাকাচ্ছিল না পর্যন্ত। এই পর্যায়ে এসে আয়মন ক্লান্ত হয়ে উঠল। নীড়ের দেওয়া ট্রিক ফলো করতে বাধ্য হলো! হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চাঁদের রুমে ঢুকে পড়ল। বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে চাঁদ, নাদিয়া, সাদিয়া, জায়মা এবং রুহি ফোনে ফিল্ম দেখছে!

সবার গভীর মনযোগ ফোনের দিকে। তাই রুমে ষষ্ঠ কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছে না তারা। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আয়মন রুমের দরজায় টোকা মারল। অমনি সবাই ফোন থেকে নিমজ্জিত দৃষ্টি সরিয়ে রুমের দরজায় আকস্মিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তাৎক্ষণিক চাঁদ ভ্রু যুগল কুঁচকে আয়মনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,

“ভাইয়া তুমি?”
আয়মন তেড়ে এলো রুমের ভেতর। বিছানার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রুষ্ট গলায় চাঁদকে বলল,,
“আমার সাথে একটু রুমে আয়।”
অতি জরুরি কিছু ভেবে চাঁদ তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। উদগ্রীবতা নিয়ে আয়মনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,

“কিছু হয়েছে ভাইয়া? নূর ভাইয়া ঠিক আছে তো?”
প্রত্যত্তুর করল না আয়মন। সোজা চাঁদের হাত ধরে চাঁদকে নিয়ে নূরের রুমে চলে এলো। রুমের ভেতর চাঁদকে ঢুকিয়ে বিছানায় ঘুমন্ত নূরকে দেখিয়ে বলল,,
“এরে ঘুম থেকে ডাইকা তোল। শালা নইড়া চইড়া আবার ঘুমাইতাছে।”

চাঁদ দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুমে নিমজ্জিত নূরের দিকে তাকালো। কোমড়ে হাত রেখে কপাল কুঁচকালো। শ্লেষাত্মক গলায় বলল,,
“ওমা! এর আবার কী হলো? ম’রা মাছের মতো এভাবে পড়ে আছে কেন?”
“ঘুমের ঔষধ খাইছে। তাই এর এমন বেহাল অবস্থা।”

“এর কী আবার শোক খাইয়া উঠছিল ভাইয়া? বুঝলাম না এই রোজ আপু এরে এত লা’রে কেন?”
আয়মন অট্ট হাসল! হাসতে হাসতে বলল,,
“লাড়ালাড়ি পরে হবে। আগে এরে ঘুম থেকে ওঠা। মাহিনকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট যেতে হবে। আর একটু দেরি হলেই নীড় ভাইয়া ক্ষেপে যাবে।”

“ক্যান ভাই? আর মানুষ পাইলা না এরে জাগানোর? বেছে বেছে আমারেই পাইলা?”
“যা বলছি তাই কর তো। অসহ্য লাগছে। কিছুক্ষণ পর নীড় ভাইয়া এসে আমার সাথে চোট পাট করবে।”
“আরে আমার ভাই, এরে পানি ছিটাইলে তো এ এমনিই উইঠা যায়।”
“ছিটাইছি। ওঠে নাই!”
“বুঝছি। এরে খোঁচাইতে হইব!”

পিঁপড়ের মতো পিলপিলিয়ে হেঁটে চাঁদ নূরের পায়ের কাছে বসল! কদাচিৎ হেসে নূরের পায়ের তালুতে শুড়শুড়ি দিতে লাগল! নূর খানিক নড়ে-চড়ে উঠল৷ ঘুমের মধ্যেই ব্যগ্র গলায় বলল,,
“আয়মনের বাচ্চা! পা ছাড় বলছি। মেইন পয়েন্ট বাঁচাইতে চাইলে এক্ষণি পা ছাড় বলছি!”
আয়মন কপাল চাপড়ালো৷ ক্ষীণ গলায় বলল,,

“শালা। ঘুমের মধ্যেও আমাকে গা’লি গা’লাজ করছে!”
চাঁদ মুখ চেপে হাসল। পুনরায় নূরের পায়ে শুড়শুড়ি দিতে লাগল। জায়গা যেতে ওঠে এসে নূরের হাতেও চিমটি কাটতে লাগল। নূর প্রতিবারই নড়ে-চড়ে ওঠে আয়মনের গুষ্টি উদ্ধার করতে লাগল! চাঁদ এবার বিরক্ত হয়ে উঠল। পিছু ফিরে তিক্ত গলায় আয়মনকে বলল,,

“এভাবে হবে না ভাইয়া। মনে হচ্ছে পুচিকে আনতে হবে!”
আয়মন হকচকিয়ে উঠল! অবাক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,
“মানে?”
চাঁদ ভাবলেশ ভঙ্গিতে আয়মনের দিকে তাকালো। ব্যস্ত গলায় বলল,,
“পাঁচ মিনিট সময় দাও ভাইয়া। আমি আসছি।”

কোনো দিকে কালক্ষেপণ না করেই চাঁদ আয়মনকে পাশ কাটিয়ে এক ছুটে রুম থেকে বের হয়ে গেল! আয়মন বোকা দৃষ্টিতে চাঁদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। মনে মনে আওড়ে লাগল,,
“এই চাঁদ আবার কোন বাঞ্চালী করতে গেল? একটার থেকে আরেকটা শেয়ানা দেখছি!”

হাত গোনা প্রায় পনেরো মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পর চাঁদের উদয় ঘটল! পুচিকে কোলে নিয়ে চাঁদ হাঁপাতে হাঁপাতে নূরের রুমে প্রবেশ করল! চেয়ার থেকে ওঠে আয়মন অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। মুখটা হা করে বলল,,
“তুই সত্যিই পুচিকে আনতে গিয়েছিলি?”

চাঁদ বাঁকা হাসল! পুচিকে কোলে নিয়ে আয়মনকে দিকে এগিয়ে এলো। এক চোখ টিপে আয়মনকে বলল,,
“এবার দেখো নূরের বা’চ্চা কীভাবে ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠে! এরে সোজা আঙুলে ঠিক করা যাবে না বুঝছ? আঙুলটা বাঁকাতে হবে।”

সঙ্গে সঙ্গেই পুচি ম্যাও করে উঠল! চাঁদের মুখটা জিভ দ্বারা চাটতে লাগল। চাঁদের বুকে ছোট ছোট থাবা বসাতে লাগল। তার আচরণ দেখে মনে হচ্ছে যেন চাঁদকে কত কাল ধরে চেনে সে! ভীষণ উত্তেজিত সে চাঁদকে পেয়ে। চাঁদ অতি আদুরে হয়ে পুচির চোখে-মুখে ইচ্ছে মতো চুমো খেলো।

পুচিকে নিয়ে নিঃশব্দে নূরের পাশে এসে বসল। শ্লেষাত্মক হেসে নূরের মুখের উপর পুচিকে বসিয়ে দিলো! অমনি পুচি বড় করে এক হামি তুলল। জিভ দ্বারা নূরের নাকে লেহন করল! শুধু তাই নয় নূরের মুখটাও চাটতে লাগল! ভেজা কিছুর আঁচ পেয়ে নূর তাৎক্ষণিক নড়ে-চড়ে উঠল!

নাকে হঠাৎ পুচির গায়ের গন্ধ প্রবেশ করতেই নূর হকচকিয়ে উঠল। এলার্জির সমস্যা থেকে ঘন ঘন হাচ্চি দিতে লাগল! পিটপিটে চোখে অগ্রে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। পুচি ভয়াল দৃষ্টিতে নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে অগত্যা ম্যাও বলে ডেকে উঠল! শেষ বারের মতো নূরের নাক চেটে দিলো! ঘটনার আকস্মিকতায় নূরের চক্ষুজোড়া চড়কগাছ হয়ে উঠল! শঙ্কিত দৃষ্টিতে পুচির দিকে তাকালো। উঁচু গলায় চিৎকার করে বলল,,

“মামামামামা।”
পুচি ভয়ে লাফিয়ে উঠল! দৌঁড়ে চাঁদের কোলে চলে এলো। ফ্যাল ফ্যাল চোখে নূরের দিকে তাকালো। অতিশয় বিপাকে পড়ে চাঁদের ওড়নার নিচে আশ্রয় নিলো! নূর এক ঝটকায় শোয়া থেকে ওঠে বসল। ঘুমে আবিষ্ট চোখে চাঁদ এবং পুচির দিকে তাকালো। চাঁদ এবং আয়মন খিলখিলিয়ে হেসে উঠল!

তাদের দুজনের হাসি দেখে নূরের মাথায় রক্ত ওঠে গেল! লাফিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো নূর। ভয়াল শ্বাস ছেড়ে কপালের ঘামগুলো মুছল। কটমট দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে আক্রমনাত্নক গলায় বলল,,
“আজ তোমার একদিন কী আমার একদিন!”

নূর আগুনের ফুলকির ন্যায় গরম হয়ে দৌঁড়ে চাঁদের দিকে ছুটে আসতেই চাঁদ পুচিকে কোলে নিয়ে নূরের ঠিক উল্টোদিকে দৌঁড় দিলো! শঙ্কিত গলায় বলল,,
“পুচি রে পুচি পালা। পাগল ক্ষেপছে!”

নূর পিছু ঘুরে চাঁদের পিছু নিতেই আয়মন পেছন থেকে শক্ত হাতে নূরের কোমর জড়িয়ে ধরল। উত্তেজিত গলায় বলল,,
“ভাই প্লিজ থাম। এখন এসব করার সময় নেই। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের। মাহিনকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতে হবে। নীড় ভাই হয়তো রেডি হয়ে আসছে।

এসে আমাদের দুজনকে এই অবস্থায় দেখলে-ই সারা বাড়ি মাথায় তুলবে।”
“তোর বোন যে আমাকে এক্ষণি পাগল বলে গেল শুনলি না কানে? নিজের বেলায় ষোলো আনা না?”
“শুনছি তো। সবই শুনছি আমি। পরে এর বিচার হবে। এখন প্লিজ রেডি হয়ে নে। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।”
“যদি বিচার না করিস তখন?”
“করব, বললাম তো।”

নূর এবার শান্ত হয়ে এলো। শরীরের এনার্জি খুইয়ে হেলেদুলে ওয়াশরুমে প্রবেশ করল। চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। ঘুমের রেশ এখনো পুরোপুরি কাটে নি নূরের। ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে হাঁটছে সে। মাঝে মাঝে হোচটও খাচ্ছে। হাচ্চি কাশিতে ক্রমাগত অতিষ্ট হয়ে উঠেছে!

এলার্জির প্রবলেম তাকে ঘোরতোর ভাবেই চেপে ধরেছে! গাঁয়ে নীল রঙের একটি শার্ট জড়িয়ে নূর আয়মনকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। মনে মনে চাঁদের পিণ্ডি চটকাতে লাগল!

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২০

অন্যদিকে নীড় এবং সাব্বির রেডি হয়ে বাড়ির মেইন গেইটে নূর এবং আয়মনের জন্য অপেক্ষা করছে। ভাড়া করা মাইক্রো নিয়ে তারা বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল।

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২২