প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২৭

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২৭
নিশাত জাহান নিশি

চাঁদের নিঁখোজ হওয়ার খবরটা পুরো বাড়ি ছড়িয়ে পড়ল! সবাই অস্থির হয়ে চাঁদকে খুঁজতে লাগল। সামিয়া আহমেদের মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। এতোদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়েও নিজের কাছে রাখতে পারল না। সবার চোখে-মুখে এখন ব্যাপক দুঃশ্চিতার ছাপ। সবার সাথে সাথে নূরও বেশ উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠল। চাঁদকে ঘিরে খারাপ কিছুর আভাস পেতে লাগল!

বিয়ে বাড়ি মুহূর্তের মধ্যেই মরা বাড়িতে পরিণত হলো! বাড়ির প্রতিটি মানুষের মনে অজানা ভয়, শঙ্কা এবং আতঙ্ক কাজ করতে লাগল। চাঁদ কোথায় যাবে কোথায় যেতে পারে এসব নিয়ে সবার মধ্যে নানান ধরনের জল্পনা-কল্পনা এবং কৌতূহলের সৃষ্টি হলো। বাড়ির মহিলারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে কাঁদতে আরম্ভ করল!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাড়ির ছেলে এবং পুরুষরা মিলে সম্পূর্ণ এলাকাটাও চুষে নিলো। তবে চাঁদকে কোথাও পেল না! সব আশা খুঁইয়ে সামিয়া আহমেদ এবার মেয়ের শোকে অঝরে কাঁদতে আরম্ভ করলেন! সোহানী তার ব্যথীত হৃদয়কে খানিক সামলে নিলো। তার মা’কে জড়িয়ে ধরে শান্তনার স্বরে বলল,,

“কেঁদো না মা। আমরা চাঁদকে ঠিক খুঁজে পাব। এখানেই হয়তো কোথাও আছে চাঁদ। ঠিকভাবে খুঁজলেই পেয়ে যাব। তুমি তো জানোই মা? চাঁদ কতোটা চঞ্চল? হয়তো আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য ইচ্ছে করে পাঁজিটা আমাদের সাথে মজা নিচ্ছে।”
সামিয়া আহমেদও সোহানীকে জড়িয়ে ধরলেন। দ্বিরুক্তি প্রকাশ করে কান্নাজড়িত গলায় বললেন,,

“আমার মন বলছে মা, আমার মেয়েটা বড় কোনো বিপদে পড়েছে! আমি জানি আমার মেয়ে চঞ্চল! তবে এতোটাও ছেলেমানুষ নয় যে, আড়ালে লুকিয়ে থেকে আমাদের সবাইকে বিভ্রান্ত করবে। বিশেষ করে তার মা’কে কষ্ট দিবে। আমি চিনি তো আমার মেয়েকে। খুব ভালো করেই আমার চাঁদকে আমি চিনি।”

ইতোমধ্যেই নীড় অস্থির হয়ে নূর, মাহিন, আয়মন এবং সাদমনের দিকে তাকালো। তাদের প্রত্যেককে লক্ষ্য করে বেশ তৎপর গলায় বলল,,
“আই থিংক এভাবে খুঁজে আর কোনো লাভ নেই। এক্ষণি আমাদের পুলিশ ইনফর্ম করতে হবে।”
সবার মধ্য থেকে আয়মন বেশ পেরেশান হয়ে উঠল। অধীর গলায় বলল,,

“তাহলে আর দেরি কীসের ভাইয়া? চলো আমরা এক্ষণি রওনা হই।”
সবাই প্রস্তুতি নিতে লাগল থানায় যাওয়ার। এরমধ্যেই রুহি ঘর্মাক্ত হয়ে নূরের পাশে এসে দাঁড়ালো। শুকনো ঢোক গিলে নূরের বাঁ হাতটা টেনে ধরল। ব্যগ্র চাহনিতে নূর পাশ ফিরে রুহির দিকে তাকালো। রুহি খানিক উঁকি দিয়ে নূরের কানের কাছে তার মুখটা ঠেকালো। ফিসফিসিয়ে বলল,,

“ভাইয়া? আমি হয়তো জানি চাঁদ আপু কোথায়!”
নূর ব্যাকুল হয়ে উঠল! আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে রুহির দিকে তাকালো। উত্তেজিত গলায় রুহিকে শুধালো,,
“কোথায়?”
“পুচিদের বাসায়!”

“আমরা তো একটু আগেই পাশের বাসা থেকে চাঁদকে খুঁজে এলাম। কই কোথাও তো চাঁদকে খুঁজে পেলাম না।”
“আমি সত্যি বলছি ভাইয়া। চাঁদ আপু পুচিদের ফ্ল্যাটেই আছে! গাঁজাখোর ছেলেটা হয়তো চাঁদ আপুকে আটকে রেখেছে!”
নূর উতলা, উদগ্রীব হয়ে উঠল! চক্ষুজোড়ায় ঘোর আতঙ্ক নিয়ে রুহির দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ে বলল,,
“গাঁজাখোর ছেলেটা মানে?”

রুহি এক এক করে ঐদিনের সব ঘটনা নূরকে খুলে বলল। সব শুনে নূর ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। আর এক মুহূর্ত ব্যয় না করে এক দৌঁড়ে পাশের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো! ঝড়ের বেগে দৌঁড়ে নূর পাশের বাসায় পৌঁছালো। হন্ন হয়ে দুতলায় ওঠে অনবরত পুচিদের ফ্ল্যাটের কলিংবেল চাপতে লাগল। কয়েকদফা বিশৃঙ্খল শ্বাস ছেড়ে ঘাড়ের রাগ টান টান করে তুলল। চিৎকার করে বলল,,

“চাঁ…দ? কোথায় তুমি?”
ঐপাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ এলো না! নূর এবার অধৈর্য্য হয়ে উঠল। ঘামে সিক্ত সামনের চুলগুলো টেনে শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যয় করে দরজায় সজোরে কষে এক লাথ মা’রল! পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করে হাতের কনুই দ্বারাও অনবরত দরজা ধাক্কাতে লাগল। এতেও যেনো কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।

নূরের অবাধ্য হাঁকডাকে পাশের ফ্ল্যাট থেকে লোকজন বের হয়ে এলো! সবাই এসে নূরকে ঘিরে ধরল। কৌতূহলী হয়ে কী হয়েছে জানতে চাইল। নূর জবাবে তাদের কিছু বলল না। শুধু অসহায়ের মতো তাদের কাছে হেল্প চাইল! সবাইকে একসাথে দরজা ধাক্কাতে বলল। ফ্ল্যাটের সমস্ত পুরুষ একজোট হয়ে নূরকে হেল্প করল! সবাই দরজা ধাক্কাতে লাগল।

এরমধ্যে আবার আয়মন, সাদমান, নীড় এবং মাহিনও পাশের বাসায় ছুটে এলো। তারাও পেরেশান হয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগল। চাঁদের নাম ধরে ডাকতে লাগল। ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায়ে এসে ঐদিনের সেই গাঁজাখোর ছেলেটা জনরোষে পড়ে দরজা খুলে দিলো! খালি গাঁয়ে রক্তিম চক্ষু জোড়ায় উপস্থিত সবার দিকে তাকালো! মাতালদের মতো ঢুলতে লাগল। সামনে সবার আক্রোশিত রূপ দেখে ছেলেটি মুহূর্তের মধ্যেই চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,,

“কী হয়েছে? আপনারা এভাবে আমার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন?”
অমনি নূর চোয়াল শক্ত করল! শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যয় করে ছেলেটির তলপেটে জোরে এক লাথ মারল! মৃদু চিৎকার করে বলল,,
“মাদার**। বল চাঁদ কোথায়?”

ছেলেটি তলপেটে হাত রেখে ব্যথায় কুঁচকিয়ে উঠল। এক গজ দূরে ছিটকে পড়ল। মাগ্গো মা বলে এক আর্তনাদ প্রকাশ করল। অমনি সবাই এক এক করে ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ল। সাদমান এবং মাহিন রাগে বোম হয়ে ছেলেটিকে ইচ্ছে মতো মারধর করতে লাগল! নাক-মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল ছেলেটির!

তবুও সে শিকার করছিল না চাঁদ কোথায়? অন্যদিকে নূর, নীড় এবং আয়মন পুরো ফ্ল্যাট তন্ন তন্ন করে চাঁদকে খুঁজতে লাগল। তিন তিনটে রুম পাগলের মতো খুঁজেও তারা চাঁদকে কোথাও দেখতে পেল না! হতাশ হয়ে নূর পরিশেষে শূণ্য আশা নিয়ে কিচেন রুমে ঢুকতেই ফ্লোরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা চাঁদকে দেখতে পেল!

শুভ্র মুখের আদলে কাজল লেপ্টে এক বিদঘুটে অবস্থা চাঁদের! ঘন কালো রেশমি চুলগুলো জট বেঁধে এলোমেলো অবস্থা। হাতে, পায়ে এবং মুখে চড়ের কালসিটে দাগ! চাঁদের এই মুমূর্ষু অবস্থা দেখে নূরের মাথা ঘুরে এলো! চোখ বুজে নিজেকে স্থির করার প্রয়াসে লেগে পড়ল। কয়েকদফা তব্ধ শ্বাস ছেড়ে শরীরে শক্তি যোগাল।

কপাল থেকে বেয়ে পড়া ঘামগুলো মুছল। ধীর পায়ে হেঁটে চাঁদের দিকে অগ্রসর হলো। হাঁটু মুড়ে চাঁদের মুখোমুখি বসল। কম্পিত হাতে চাঁদের থুতনিতে হাত ঠেকাল! অমনি চাঁদের মাথা বেয়ে টুপটুপ করে রক্ত গড়াতে লাগল! সঙ্গে সঙ্গেই নূরের বুকটা কেঁপে উঠল! হাত-পা কেঁপে উঠল! মুখে বাঁধা টেপটা খুলে দিলো। উত্তেজিত গলায় চাঁদের গালে আলতো চাপড় মেরে বলল,,

“চাঁদ? এই চাঁদ? চোখ খুলো। কী হয়েছে তোমার?”
চাঁদের হিতাহিতজ্ঞান লুপ্ত প্রায়। এই মুহূর্তে ধ্যান-জ্ঞান কিছুই কাজ করছে না তার! কেবল নূরের চাপড়ের সাথে তাল মিলিয়ে মাথাটা নিষ্ক্রিয়ভাবে ডান দিক থেকে বাঁ দিকে ঢুলছে! ভয়ে নূরের শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হতে লাগল। খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার ভয়ে অস্থির হয়ে উঠল। তড়িঘড়ি করে জায়গা থেকে ওঠে দাঁড়ালো নূর।

রান্নাঘরের ট্যাব ছেড়ে অধীর হয়ে চাঁদের চোখে-মুখে পানি ছিটাতে লাগল। পাঁচ থেকে ছয়বার একনাগাড়ে পানি ছিটানোর পর চাঁদের জ্ঞান ফিরতে শুরু করল! চোখের পাপড়ি একটু একটু করে নড়তে আরম্ভ লাগল। এরমধ্যেই নূরকে খুঁজতে খুঁজতে আয়মন এবং নীড় কিচেন রুমের দিকে চলে এলো। নূর এবং চাঁদকে ঐ অবস্থায় দেখামাত্রই দুজন দৌঁড়ে এলো তাদের কাছে। চাঁদের নির্জীব অবস্থায় দেখে আয়মন শুকনো ঢোক গিলল। চাঁদের দু’গালে হালকা চাপ দিয়ে বলল,,

“চাঁচাঁচাঁদ? কীকীকী হহয়েছে বোন? চোচোচোখ খুল।”
সঙ্গে সঙ্গেই চাঁদ শুকনো কেশে উঠল! পেটে হাত রেখে সে কাশতে কাশতে দলা মোচড়া হয়ে উঠল! চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে ক্ষুদ্র আওয়াজে বলল,,
“পুপুপুচি!”
নূর যেনো আলোর দিশা খুঁজে পেল! শুষ্ক মুখে ম্লান হেসে বলল,,

“আর ইউ ফাইন চাঁদ?”
চোখ বুজা অবস্থাতেই চাঁদ খুক খুক করে কাশল। ক্ষীণ বলায় বলল,,
“পুচি ভালো নেই! শয়তানটা আমার পুচিকে জানে মে’রে ফেলেছে!”
আয়মন রেগে গেল! তটস্থ গলায় চাঁদকে বলল,,

“কী কখন থেকে পুচি পুচি করছিস হ্যাঁ? নিজের শরীরের কথা না ভেবে তুই পুচির কথা ভাবছিস?”
চোখের পানি ছেড়ে দিলো চাঁদ! কথা বলতে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও চাঁদ চোখ বুজে আর্ত গলায় বলল,,
“আমার চোখের সামনে পুচিকে শয়তানটা মে’রে ফেলেছে ভাইয়া! পুচির মা’কেও মে’রে ফেলেছে! আমার তলপেটে লা’থি মেরে’ছে। দেয়ালের সাথে আমার মাথাটাকে ধা’ক্কা মে’রেছে। হাত-পা বেঁধে আমাকে এখানে ফেলে রেখেছে!

আমি তো এখানে তার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি ভাইয়া। শুধু পুচিকে নিয়ে যেতে এসেছিলাম! ভেবেছিলাম পুচিকে নিয়ে ভাবিদের বাড়িতে যাব। ছেলেটা আমাকে কথা দিয়েছিল পুচিকে আমার সাথে যেতে দিবে। তার কথায় বিশ্বাস করেই তো আমি তার রুমের ভেতর ঢুকতে রাজি হয়েছিলাম ভাইয়া।

আর তখনি ছেলেটি দরজা আটকে আমার সাথে জোর-জবরদস্তি করার চেষ্টা করেছিল! আমার মুখে টেপ বেঁধে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমার সাথে না পেরে সে পুচিকে এবং পুচির মা’কে গলা টি’পে মে’রে ফেলে! আমাকে আ’হত করে কিচেনরুমে বেঁধে রাখে। আমি বুঝতে পারিনি ভাইয়া আন্টি সত্যিই বাসায় নেই! বুঝলে হয়তো কখনো ছেলেটির কথার ফাঁদে পা দিতাম না!”

আয়মন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কান্নাজড়িত চোখে চাঁদের দিকে তাকালো। বুকের ভেতর চাঁদকে চেপে ধরে ভগ্ন গলায় বলল,,
“আল্লাহ্ যা করে ভালোর জন্যই করে চাঁদ। আজ হয়তো পুচির জায়গায় এবং পুচির মায়ের জায়গায় তুই থাকতি! তোর নসিব ভালো ছিল বলেই এই যাত্রায় বেঁচে গেলি।”

চাঁদ ফুফিয়ে কেঁদে উঠল। আয়মনকে জড়িয়ে ধরে বলল,,
“ছেলেটা আজ আমাকে মে’রে ফেললেও হয়তো আমার এতোটা কষ্ট হতো না ভাইয়া! পুচি এবং পুচির মা’কে মে’রে ফেলে ছেলেটা আমাকে নরক যন্ত্রণা দিয়ে গেল। পুচির মুখটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছিনা ভাইয়া! কষ্টে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। পুচিকে আর কখনো দেখতে পারবনা ভেবেই বুকটা ভারী হয়ে আসছে।”

তাৎক্ষণিক নূর জেদী হয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো! আয়মনকে চাঁদের বুক থেকে সরিয়ে জীর্ণ শীর্ণ চাঁদকে বসা থেকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো! নিস্তেজ চাঁদকে টেনে এনে আধমরা হয়ে পড়ে থাকা ছেলেটির সামনে এনে দাঁড় করালো! মাহিন এবং সাদমানকে ঠেলে নূর চাঁদের অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকালো। তেজী গলায় বলল,,

“যতো ইচ্ছে মা’রো ঐ স্ক্রাউন্ডেলটাকে! যতক্ষণ না রাগ শান্ত হবে ঠিক ততক্ষণ মা’রবে। একে মে’রে এরপর হসপিটালে ভর্তি করাব আমরা। প্রয়োজনে একে কবরে পু’তে দিয়ে আসব।”
চাঁদ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। নূরের হাতটা ছাড়িয়ে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল। নূরের দিকে বেদনাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,,

“এই নেশাখোরটাকে মে’রে আর কী লাভ হবে নূর ভাইয়া? আমার পুচিকে তো আমি আর ফিরে পাব না! সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেললাম আমি পুচিকে।”

নূর নির্বিকার নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। একটা ছোটো প্রাণীর উপর চাঁদের এতো স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালোবাসা দেখে নূর থমকালো। সাদমানের চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠল! চাঁদকে এই বিভৎস অবস্থায় একটুও সহ্য করতে পারছেনা সে! কাঁদতে কাঁদতে চাঁদ ব্যথাযুক্ত শরীর নিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফার তলা থেকে নি’হত পুচি এবং পুচির মা’কে টেনে বের করল! হাউমাউ করে কেঁদে চাঁদ পুচি এবং পুচির মা’কে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। আত্নচিৎকার করে বলল,,

“শেষ অবধি আমি তোদের বাঁচাতে পারলামনা রে পুচি! যখন ঐ নরপিশাচটা তোদের গলা টি’পে ধরেছিল না? তখন আমি চেয়েও তাকে আটকাতে পারছিলাম না! বাঁচার জন্য তোরা যতোটা না ছটফট করেছিলি? তার চেয়েও অধিক আমি তোদের বাঁচানোর জন্য মুখে টেপ এবং হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছটফট করেছিলাম! আল্লাহ্’র কাছে প্রার্থণা করেছিলাম শুধুমাত্র একবারের জন্য তোদের বাঁচিয়ে দিতে। আমার কাছে তোদের ফিরিয়ে দিতে।”

চাঁদের হাহাকার দেখে উপস্থিত সবার চোখে জল জমে এলো! আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠল সবাই। নূরের চোখের কোণে জলের আনাগোনা শুরু হতেই নূর হাঁটু মুড়ে চাঁদের মুখোমুখি বসল! আবেগ ধরে রেখে ক্ষীণ গলায় বলল,,
“প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে আরেকটা পুচি এনে দিব!”

চাঁদ ফুঁপাতে ফুঁপাতে কান্নাসিক্ত দু’চোখে নূরের দিকে তাকালো। কান্নায় আবারও ভেঙে পড়ে বলল,,
“জানেন নূর ভাইয়া? যখন ঐ খারাপ লোকটা পুচির গলা টি’পে ধরেছিল না? তখন পুচি আমার দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার জন্য কতো শতো আকুতি প্রকাশ করছিল! ছোটো ছোটো থাবায় আমার কাছে আসার চেষ্টা করছিল! জিভ বের করে মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। কিন্তু ঐ লোকটা নির্মম পিশাচের মতো একটু একটু করে আমার পুচিকে মে’রে দিচ্ছিল!”

মুহূর্তের মধ্যেই চোখ বুজে নিলো চাঁদ! অজ্ঞান হয়ে নূরের বুকে লুটিয়ে পড়ল! নূর হঠকারি দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে তাকালো। কোনোদিকে কালক্ষেপণ না করে চাঁদকে পাঁজা কোলে তুলে নিলো! ফ্ল্যাটের সবাইকে ঠেলে চাঁদকে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে এলো। প্রানপণে দৌঁড়ে চাঁদকে নিয়ে তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

নূরের সাথে সাথে আয়মন এবং সাদমানও রওনা হলো। নীড় এবং মাহিন এই দিকটায় থেকে ছেলেটাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করল। ফ্ল্যাটের লোকজনদের থেকে জানা গেল ছেলেটি মিস শাহেলা আক্তারের দেবর হয়। শাহেলা আক্তার উনার বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছেন তিনদিন হলো।

তাই দেবরকে বাড়িতে রেখে গেছেন বাড়িটা দেখে শুনে রাখার জন্য। ছেলেটি হলো এক নম্বরের গাঁজাখোর এবং নেশাখোর। ছেলেটির ভাই প্রবাসী। মাসে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা ভাইয়ের একাউন্টে পাঠিয়ে দিন দিন ভাইকে বিগড়ে তুলছেন!
চাঁদকে বাড়িতে এনে ডক্টর দেখানো হয়।

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২৬

মাথায় ব্যান্ডেজ এবং কিছু পেইনকিলার দেওয়া হয়। বিয়ের রীতি রক্ষার্থে নীড়ের শ্বশুড় বাড়িতে কেবল আয়মন, সাদমান এবং মাহিন যায়। নূর এবং নীড় বাড়িতে থেকে যায়। মেয়েরা আর কেউ যাওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেনি। সবাই চাঁদকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ২৮