প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৭

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৭
নিশাত জাহান নিশি

“কোথাও যেতে হবেনা তোমাকে। মিষ্টি আমার শরীর ছুঁয়ে আছে! এতোটুকুও বুঝো না তুমি?”
রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে সিক্ত নীড়! তার নিমগ্ন দৃষ্টিজোড়া সোহানীর লজ্জামাখা লাল টুকটুকে মুখশ্রীতে সীমাবদ্ধ। বুঝতে কিছুটা বেগ পেতে হলেও শেষ অবধি সোহানী বুঝতে পেরেছে নীড় কোন জাতীয় মিষ্টির কথা বলতে চেয়েছে! তাই তার লজ্জার মাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেল। তৎক্ষনাৎ নীড়ের নির্লজ্জ চাহনি থেকে তার লজ্জাময় দৃষ্টি সংকুচিত করে নিলো।

অবিলম্বেই মাথা নুয়াতে বাধ্য হলো। নীড়ের উষ্ণ হাতটা এখনও সোহানীর নরম তুলতুলে কোমর ছুঁয়ে আছে! অবাধ বিচরণ চলছে কোমরের সর্বত্র জুড়ে। ক্ষণে ক্ষণে সোহানী তার স্নায়ুতন্ত্রে শুড়শুড়ে এক হাঁসফাঁস অনুভূতি পাচ্ছে। বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার উদ্দীপনায় সে ক্রমাগত মত্ত হয়ে উঠছে। অতি দ্রুত এই দমবন্ধকর অনুভূতি থেকে মুক্তি পেতে চায় সে। এই জড়তা কাটিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে চায়। দ্বিধাময় দৃষ্টিতে সোহানী নীড়ের নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকালো। ক্ষীণ গলায় বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ছাড়ুন প্লিজ। আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।”
নীড় নিরুত্তর। বিষয়টাকে বেশি আমলে নিলো না। সোহানীর আড়ষ্ট দৃষ্টি থেকে মগ্ন দৃষ্টি সরিয়ে সে ডান হাতে থাকা কফির মগটায় লম্বা এক চুমুক দিলো। পর পর কফিতে দুটো চুমুক দেওয়ার পর নীড় পুনরায় আবিষ্ট দৃষ্টিতে সোহানীর দিকে তাকালো। মৌনতা ভেঙে দুষ্টু গলায় বলল,,

“কফিটা আগে শেষ করতে দাও। এরপর দেখছি।”
সঙ্গে সঙ্গেই সোহানীর কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠল! নীড়ের দুষ্টু হাসির পিছনে প্রখর রোমাঞ্চতার আভাস পেল। যা এই মুহূর্তে সোহানীর হৃদয়টাকে ভূমিকম্পের ন্যায় কাঁপিয়ে তুলল। মনে তৈরি হওয়া ভয়-ভীতিকে আরও পাকাপোক্তভাবে তৈরি করে তুলল। দুড়ুদুড়ু বুকে সোহানী নীড়ের দিকে বিমূর্ত দৃষ্টিতে তাকালো। এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য অসহায় ভাব নিলো। কাঠ কাঠ গলায় বলল,,

“এখনি ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি একটু ওয়াশরুমে যাব।”
নীড় চটে বসল। গরম দৃষ্টিতে সোহানীর দিকে তাকালো। তিক্ত গলায় বলল,,
“আমার কাছে এলেই তোমার ওয়াশরুমে পায় না?”
রাগে গজগজ করে সোহানীর কোমরটা ছেড়ে দিলো নীড়! কফির মগটা সশব্দে ডেস্কের উপর রাখল। খিটখিটে মেজাজে বলল,,

“মুডটাই নষ্ট করে দিলো। সবকিছুতেই বেগড়া দিতে হবে এই মেয়েটার।”
সোহানী ভীরু দৃষ্টিতে নীড়ের দিকে তাকালো। ভয়াল গলায় বলল,,
“সত্যিই আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল।”

“অস্বস্তি হওয়ার কারণটা কী হ্যাঁ? অস্বস্তি হওয়ার কারণটা কী? আমি কি তোমাকে কিছু করার উদ্দেশ্যে কোমর পেঁচিয়ে ধরেছিলাম? তোমাকে কাছ থেকে অনুভব করার জন্য-ই ধরেছিলাম। তাছাড়া তুমি না চাইলে আমি কখনো তোমাকে ফোর্স করবনা কিছু করার জন্য। আসার পর থেকেই দেখছি তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকছ। আমার কাছে আসতে ইতস্ততবোধ করছ। যা আমাকে খুব হার্ট করছে। আমি তো নিজ থেকেই তোমার কাছে আসছি তাইনা? তাহলে এখন কেন এত প্রবলেম তোমার হ্যাঁ? আমার কাছে আসতে কীসের এত বাঁধা তোমার?”

সোহানীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। মাথা নুইয়ে সে নাক টানতে লাগল। মনে মনে আওড়ে বলল,,
“একটা মেয়ে এত সহজে তার স্বামীর কাছে ধরা দিতে চায়না নীড়! ছলা-কলা করে স্বামীদের-ই তাদের স্ত্রীদের মানিয়ে হয়। তাদের চাহিদা পূরণ করতে হয়।

আপনি তো অল্পতেই রেগে যাচ্ছেন নীড়। কীভাবে আমার মনের ভাব বুঝবেন বলুন?”
বিষন্ন মনে সোহানী জায়গা থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই নীড় পেছন থেকে সোহানীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল! রাগান্বিত ভাবমূর্তি পাল্টে আহ্লাদী হয়ে সোহানীর পিঠে মুখ ঠেকালো! কোমরে দু’হাত পেচিয়ে সোহানীর কানে আচ্ছন্ন গলায় গুঞ্জন তুলে বলল,,

“মন খারাপ করলে কিন্তু ফার্স্ট নাইটে একটুও ঘুমাতে দিবনা! আমি যেভাবে ধরেছি ঠিক সেভাবেই থাকবা৷ একটুও নড়াচড়া করবানা! যদি এবারও আমার কথার নড়চড় হয়না? তো দেখবা জোর করে কীভাবে নিজের অধিকার বুঝে নিই।”

মুহূর্তের মধ্যেই সোহানীর মনটা শান্ত হয়ে এলো। মনোক্ষুণ্ণতা মিইয়ে প্রফুল্লতায় ভরে উঠল। পরম আবেশে সে চক্ষু জোড়া বুজে নিলো। ম্লান হেসে এক জায়গায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইল। জোর করে সে নীড়কে পেতে চায়না। স্ব-ইচ্ছায় মন থেকে পেতে চায়। নীড়ের কাছাকাছি থাকলে হয়তো সে ইচ্ছেটা খুব শীঘ্রই জাগ্রত হবে তার! সোহানীর নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠল নীড়। ঘাড়ে এক একে করে ভালোবাসার পরশ ছোঁয়াতে লাগল। চোখ বুজে সোহানীকে খুব কাছ থেকে ফিল করতে লাগল।

পুচিকে এইমাত্র কাঁথার তলায় ঘুম পাড়িয়ে এলো চাঁদ। এবার একটু ধীরে-সুস্থে পড়া যাবে। ম্যাথেও ঠিকভাবে কনসেন্ট্রেট করা যাবে। জায়মা অবশ্য অনেকক্ষণ আগে থেকেই ম্যাথ করা শুরু করে দিয়েছে। তবে চার নম্বর ম্যাথটাতে এসে সে আটকে গেছে। ম্যাথটা মিলাতে না পেরে রাগে সে কলম কামড়াচ্ছে। বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরেও ম্যাথটা মিলানোর চেষ্টা করছে। চাঁদ স্কেল টেনে যেই না ম্যাথটা শুরু করতে যাবে অমনি জায়মা চাঁদকে ডাকল। বিরক্তিকর গলায় বলল,,

“চাঁদ শোন না? ম্যাথটা মিলাতে পারছিনা। তুই একটু দেখবি?”
“চাল হাট! আমি তো এখনো আগের ম্যাথগুলাও করতে পারি নাই। তুই আছিস তোরটা নিয়ে।”
“চার নম্বর ম্যাথটা খুব কঠিন রে। আই থিংক আমাদের আয়মন ভাইয়াকে ডাকা উচিৎ।”
চাঁদ উজবুক দৃষ্টিতে জায়মার দিকে তাকালো। প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বলল,,

“পাগল হইছস? রাত কয়টা বাজে দেখেছিস? সবাই এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। তো আয়মন ভাইয়া কি আমাদের জন্য এখনও জেগে থাকবে?”
“তবুও। আয় না একটু দেখে আসি।”
জায়মার আবদারকে চাঁদ আমলে নিলো না। একরোখা গলায় বলল,,

“আরও একটু চেষ্টা কর পারবি। আর এখন না পারলে রেখে দে, সকালে ভাইয়াকে দেখাস।”
“এক্ষণি না করলে সকালে আর ইচ্ছে হবেনা চাঁদ। এমনিতেও আমরা কিন্তু ম্যাথ কম বুঝি। তাই এই বিষয়টাতে জোর দেওয়া খুব-ই প্রয়োজন।

তাছাড়া এখন আমাদের হেলায় একমিনিট নষ্ট করা মানে আগামী পরীক্ষায় ডাব্বা মেরে আসা।”
চাঁদ অপারগ দৃষ্টিতে জায়মার দিকে তাকালো। সত্যিই এখন একমিনিট নষ্ট করা মানে আগামী পরীক্ষায় খারাপ করে আসা। মাথা নাড়িয়ে জায়মার কথায় চাঁদ সম্মতি জানালো। উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে পাশ থেকে সেলফোনটা হাতে তুলে নিলো। আয়মনের নাম্বারে ডায়াল করে জায়মাকে লক্ষ্য করে বলল,,

“দাঁড়া ভাইয়াকে আগে কল দিই। দেখি রিসিভ করে কিনা।”
পর পর চারবার ডায়াল করা হলো আয়মনের নাম্বারে। কিছুতেই ফোনটা তুললনা আয়মন। ঐ পাশ থেকে কোনোরকম সাড়া না পেয়ে চাঁদ এবার নাক-মুখ কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করল। ফোনটা ঝট করে হাত থেকে রেখে দিলো। জায়মার দিকে তাকিয়ে নাক সিটকে বলল,,

“ছাড় তো। নিজে নিজে যা পারিস কর। বেস্ট ফ্রেন্ডসদের কাছে পেয়ে এখন আমার ফোনটা তুলতেও সমস্যা হচ্ছে উনার! না জানি কী কী করে বেড়াচ্ছে তিন শ’য়তান মিলে। একেকটা ব’দের হাড্ডি। মাথা ঠিক থাকেনা তিনজন একসাথে হলে। দেখ ফাঁকা বাড়ি পেয়ে না তিনোটা মিলে বিদেশী ওয়াইন গিলছে!”

জায়মাও নাছোড়বান্দা। চাঁদের কথায় দ্বিমত পোষণ করল সে। ঝট করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। চাঁদকেও টেনেটুনে বসা থেকে দাঁড় করালো! চাঁদের হাত টেনে ধরে জেদি গলায় বলল,,
“চল নিচতলায় হানা দিই! আয়মন ভাইয়াকে ধরে আনি। দেখে আসি তিনোটা মিলে সত্যি সত্যি কী করে বেড়াচ্ছে।”
চাঁদ অবাক হলো। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“আজ তোর কী হইছে একটু বলবি? হঠাৎ পড়ালেখার প্রতি এত ইন্টারেস্ট জেগে উঠল? এমনিতে তো রাতের বেলাও একরত্তি পড়তে বসিসনা তুই! আর আজ কিনা এই মাঝরাতে-ই তোর পড়ার পিনিক উঠল?”
জায়মা মুখটা কালো করে নিলো। মাথা নুইয়ে বিমূর্ষ গলায় বলল,,

“লাস্ট পরীক্ষাটা আমার খারাপ হইছে রে। তাই আগামী পরীক্ষাগুলো খারাপ হোক আমি চাইনা।বাকি চারটা পরীক্ষায় আমি খুব সিরিয়াস। সিরিয়াস মানে সিরিয়াস। আমার সাথে সাথে তোকেও সিরিয়াস হতে হবে।”

চাঁদকে কিছু বলার সময় সুযোগ দিলো না জায়মা। তাকে নিয়ে টেনেটুনে দরজার কাছে চলে এলো। ইতোমধ্যেই জায়মার দৃষ্টি পড়ল চাঁদের ওয়াড্রবের উপর। ডেইরি মিল্ক দুটো এমনি এমনি পড়ে আছে উপরে। দুটো থেকে একটা ডেইরি মিল্কের মুখ খোলা। ক্রিমিনেস বাইরে থেকেই টইটম্বুর! লোভে জায়মার জিভ লকলক করে উঠল! আগপাছ না ভেবে সে অন্য হাত দিয়ে ডেইরি মিল্কটা হাতে তুলে নিলো। টুপ করে ডেইরি মিল্কটা মুখে তুলে সে লোভাতুর গলায় বলল,,

“আহ্! মজা!”
রাগে গজগজ করে চাঁদ জায়মার হাত থেকে ডেইরি মিল্কটা কেড়ে নিলো! কঠিন গলায় বলল,,
“কে না কে দিয়েছে এটা। অমনি তোর জিভ লকলক করে উঠল? না জেনেই খাদকের মতো আচরণ করতে শুরু করলি?”
“যেই দিক। একটু খেতে দে না রে। জিভে জল চলে এলো আমার।”

ডেইরি মিল্কটা বিছানার উপর ছুড়ে মারল চাঁদ! জায়মার হাত ধরে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। রাগে ফোঁস করে বলল,,
“জীবনেও খাস নি নাকি? আঙ্কেল তোকে কখনও কিনে এনে খাওয়ায়নি?”
“ইন্ডিয়ানগুলা তো খাওয়ায় নি! একটু খেলে কী এমন হবে বল তো? একটু দে না, আমি খাব!”

“চুপ থাক। তোর মতো রাক্ষস একটা মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি! এতক্ষণ তো খু্ব পড়ে টড়ে ছিঁড়ে ফেলছিলি। অভার সিরিয়াসনেস দেখাচ্ছিলি! আর এখন খাবারের পিছনে লেগে পড়লি? জোর করে আমাকে পড়ার টেবিল থেকে উঠিয়ে ছিলিনা? এবার তোকেও আমি টানতে টানতে নিচে নিয়ে যাব৷ বাইরে ভূতের কাছে ছেড়ে দিয়ে আসব!”
ভয়ে জায়মা চুপসে গেল! ভূতের কথা শুনতেই তার হরর ফিল্মগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। সর্বাঙ্গ ভয়ে কাঁপতে লাগল। কম্পিত গলায় সে চাঁদকে বলল,,

“চচচল ফিফিরে যাই। ম্যাম্যাম্যাথ করা লালাগবেনা আমার।”
“লাগবে! লাগতেই হবে। তোকে আজ আমি ম্যাথ করা লাগিয়েই ছাড়ব।”
জায়মাকে টেনে-হেছড়ে নিয়ে চাঁদ নিচতলায় নেমে এলো। নির্ভীক হয়ে আয়মনদের ফ্ল্যাটের দরজায় ধাক্কা মারল। অমনি অমনি দরজাটা নিঃশব্দে খুলে গেল! কোনো চোট-পাট করতে হলোনা।

চাঁদ অবাক হলো। তবে ভয় পেল না। উল্টোদিকে জায়মা সাংঘাতিক ভয় পেয়ে গেল। মুখে একহাত চেপে সে পূর্বের তুলনায় ভয়ে আরও বেশি কাঁপতে লাগল। এই মুহূর্তে চাঁদ ভয় পাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখল। বুকে সাহস সঞ্চার করে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল। অমনি অন্ধকারে তাদের চোখজোড়া ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এলো! ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত পুরো ড্রয়িংরুম।

আশেপাশের রুমগুলোতেও আলো বন্ধ। কোথাও কোনো আলোর ছিটিফোঁটা নেই। শুধু হাতের ডান পাশের রুম থেকে আলোর সূক্ষ্মরশ্মি দরজা ভেদ করে ড্রয়িংরুম অবধি বের হয়ে আসছে। আলোর ছটা এতোটাই সূক্ষ্ম যে আশপাশটা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছেনা। শুধু চোখেই খানিক ঠাওড় করা যাচ্ছে।

ভেতর থেকে ঈষৎ গান-বাজনার আওয়াজও ভেসে আসছে। বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলোনা, রুমে টিভি চলছে অথবা ল্যাপটপ চলছে। উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে চাঁদ জায়মার হাতটা ছেড়ে আয়মনের রুমের দিকে রওনা হলো। হনহন করে হেঁটে আয়মনের রুমের দরজায় হাত লাগাল। অমনি দরজাটা ফট করে খুলে গেল! হঠকারিতায় মুখটা হা করে চাঁদ দরজা ঠেলে রুমের ভেতর প্রবেশ করল। অমনি চাঁদের চক্ষুজোড়া লজ্জায় ভেঙে এলো। সঙ্গে সঙ্গেই সে পিছু ঘুরে দাঁড়ালো৷ নাক-মুখ সিটকে বলল,,

“ছিঃ!”
সঙ্গে সঙ্গেই নূর, মাহিন এবং আয়মন ভড়কে উঠল! একেকজন মুভির ঘোর কাটিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। টিভিতে এখনো ইমরান হাশমির কি’সিং সিন চলছে! অস্থির দৃষ্টিতে নূর, মাহিন এবং আয়মন আশেপাশে রিমোটটা খুঁজতে লাগল। কোথাও রিমোটটা খুঁজে না পেয়ে নূর পাওয়ার অফ করা ছাড়াই দৌঁড়ে টিভিটার সুইচ অফ করে দিলো! কম্পিত গলায় চাঁদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“তুতুতুমি এখানে কী করছ?”
ঘৃণায় চাঁদের মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলনা! রুচিতে কুলোচ্ছিল না এই জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার। মুখ ঢেকে সে হন্তদন্ত হয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। নূর মাথায় হাত দিয়ে হতাশ দৃষ্টিতে আয়মন এবং মাহিনের দিকে তাকালো। তারা দুজনও মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে! অনুতাপ অনুশোচনায় ভুগছে। লাজভরা দৃষ্টিতে মাহিন নূরের দিকে তাকালো। নিচু গলায় বলল,,

“তোকে আমি বারণ করছিলাম না? এখন হলো তো?”
নূর বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। রূঢ় গলায় বলল,,
“আমাকে কী বলছিলি হ্যাঁ? কী বলছিলি? আর এখানে খারাপের কী আছে? মুভিই তো দেখছিলাম নাকি? সো এখানে ভালো-খারাপ সিন থাকতেই পারে। ইট’স নরমাল।”

আয়মন কপাল চাপড়ে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। লজ্জায় তার মাথা কাটা গেল। বিমূঢ় গলায় বলল,,
“আর একমাসও আমি চাঁদের মুখোমুখি হতে পারবনা! চাঁদের চোখে চোখ ও মিলাতে পারবনা।”
নূর হন্ন হয়ে চাঁদের পিছু ছুটল। জায়মা এবং চাঁদ এতক্ষণে সদর দরজার দিকে পা বাড়ালো। জায়মা উতলা হয়ে ঐ রুমে কী ঘটেছে তা জানতে চাইল৷ চাঁদ লজ্জায়-ঘৃণায় মুখ খুলে কিছু বলতে পারছেনা জায়মাকে। বাকশক্তি হারিয়েছে সে। অমনি পেছন থেকে চাঁদের হাতটা টেনে ধরল নূর! শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কই যাচ্ছ?”
নূরের দিকে একটি বারের জন্যও ফিরে তাকালনা চাঁদ। নূরের ছোঁয়ায় তার গাঁ টা যেনো রি রি করে উঠল। নূরের হাতটা ছাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠল সে। হাতটা ঝেড়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
“হাতটা ছাড়ুন বলছি।”

“ছাড়ব। তবে এর আগে আমার কথাটা শোনো।”
“আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাইনা।”
“শুনতে হবে। কারণ তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।”
“আপনার মতো খারাপ একটা লোককে নতুন করে আর ভুল বুঝার কী আছে?”

“চাঁদ তুমি কিন্তু আমাকে সত্যিই ভুল ভাবছ। তুমি যা দেখেছ ইট’স নরমাল। প্রতিটা মুভিতেই এমন ভালো-খারাপ অনেক সিন থাকে। আমরাও সেই সিনটাই দেখছিলাম। খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা এই সিনটা দেখছিলাম না। তুমি চাইলেই কিন্তু এটা নরমালভাবে নিতে পারো।”

“আমার কাছে এটা মোটেও নরমাল মনে হয়নি! উল্টো আপনাদের প্রতি খারাপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। এবার হাতটা ছাড়ুন প্লিজ। ফালতু সময় নষ্ট না করে আমাদের পড়তে হবে।”
চাঁদের হাতটা ছেড়ে দিলো নূর৷ ভাবশণ্য গলায় বলল,,
“তোমার চোখে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার মতো সত্যিই কিছু নেই! তুমি আমাকে খারাপ ভাবলেও আমার কিছু আসবে যাবেনা। কারণ, ভালো-খারাপ দুটো মিলিয়েই আমি তোমার!”

শেষের কথাগুলো নূর এতোটাই থমথমে গলায় বলেছিল যে চাঁদের কান অবধি সেই কথাগুলো পৌঁছালো না! গটগট করে চাঁদ জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে জায়মাকে বলল,,
“শখ মিটেছে এবার ম্যাথ করার? আর কখনও চিল্লাবি রাতে-বিরাতে আয়মন ভাইয়াকে ডাকার? তাদের প্রাইভেট টাইমিংয়ে গিয়ে ডিস্টার্ব করার?”

জায়মা এতক্ষণে বুঝে গেছে চাঁদ কেন রিয়েক্ট করে আয়মনের রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিল! তাই সে রাগান্বিত চাঁদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকালো। মুখে হাত গুজে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। দুজনই এবার নিঃশব্দে নিজেদের পড়ার রুমের দিকে অগ্রসর হলো।

নূর অগ্নিশর্মা হয়ে চাঁদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। সশব্দে সদর দরজাটা ভেতর থেকে আটকে দিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে আয়মনের রুমে প্রবেশ করল। রুমের দরজাটাও ভালোভাবে লক করে বিছানার উপর ধপ করে বসল। মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা মাহিনের দিকে আগ্রাসী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। কড়া গলায় বলল,,

“তোর আ’বাল মার্কা পি’নিকের ঠেলায় আজ এতোকিছু ঘটল! বাইরের দরজাটাও লাগাতে ভুলে গিয়েছিলাম আর ভেতরেরটাও। এই একটা ভুলের জন্য আজ কতোবড় একটা ব্ল্যান্ডার হয়ে গেল। চাঁদের চোখে আজীবনের জন্য খারাপ হয়ে গেলাম।”

পড়ার টেবিলে বসে তাশফিয়া আনমনে চোখের জল ছাড়ছে! সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো তাকে বার বার পোড়াচ্ছে! বিশেষ করে চাঁদের রুক্ষতা তাকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে অনেকবার তাশফিয়া চেষ্টা করেছিল চাঁদের সাথে একটিবার যোগাযোগ করার। তবে প্রতিবার চাঁদের নাম্বারটা ব্যস্ত আসছে। জায়মার নাম্বারেও সে অনেকবার ট্রাই করেছিল। অনুরূপভাবে জায়মার নাম্বারটাও ব্যস্ত আসছে! আজ তার একটা ভুলের জন্য এতোদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল! অচিরেই তাদের সম্পর্কের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হলো। সেই কষ্টটা-ই যেনো কিছুতে সামাল দিতে পারছেনা তাশফিয়া। ক্ষণে ক্ষণে মনটা কেঁদে উঠছে তার।

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৬

তাশফিয়ার চাপা আর্তনাদে শোয়া থেকে ওঠে গেল তার মা মিস জেসমিন হক! ঘুম পাতলা হওয়ার দরুন হালকা শব্দেও উনার ঘুম ভেঙে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কান্নায় ভেঙে পড়া তাশফিয়ার নাক টানার শব্দে উনি কাঁচা ঘুম থেকে ওঠে পড়তে বাধ্য হলেন। ঘুমন্ত চোখে তাশফিয়ার দিকে আচ্ছন্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,
“কী রে মা? কী হয়েছে? তুই কাঁদছিস কেন?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৩৮