প্রেম নেশা পর্ব ১০+১১+১২

প্রেম নেশা পর্ব ১০+১১+১২
শান্তনা আক্তার

রাতের বেলা,,
আচ্ছা আপনি যে আমাকে কলেজে ভর্তি করালেন,,,এটা আপনার বাবা মা জানেন তো?
শান্তনার প্রশ্নে মেঘ ফোন টিপা ছেড়ে ওর দিকে তাকায়,,,,

হুম,,,,আমি আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলাম।বলে আবার ফোন টিপায় মনোযোগ দেয় মেঘ।

তারপর কি বলেছে ওনারা?পারমিশন দিয়েছে কি?

দেবে না কেন? বরং মম ড্যাড খুব খুশি হয়েছেন আমার সিদ্ধান্তে।

আপনার বাবা মা খুব ভালো সাথে আপনি ও।

তাই নাকি? কালতো বলছিলে আমি খুব পঁচা,,,আমাকে কার মতো জানি? ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।আমাকে তো দিলদারের মতো দেখতে।

ইয়ে মানে,,,মানে আমি,,,

কিয়ে মানে?

আমি ভুল কি বলেছি বলুনতো?আপনি কি জানেন দিলদার মানে কি?

কি?(ভ্রু কুঁচকে)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দিলদার মানে যার মন বিশাল বড় এবং দয়ালু।

ওহ তাই নাকি?

হুম তাই(বোকা হাসি দিয়ে)

so genius…তবে তুমি এতোটাও জিনিয়াস নও যে এই মেঘকে বোকা বানাতে পারবে।

এমন করছেন কেন?আমি তো জাস্ট ফান করে বলেছিলাম।

তবে আমি ফান হিসেবে নেইনি।তোমার কথায় আমি খুব হার্ট হয়েছি।মেঘ কথাটা বেশ কড়া ভাবেই বলল। এদিকে শান্তনা কান্না করেই দিয়েছে।শান্তনার কান্না দেখে মেঘ উচ্চস্বরে হেসে দেয়।

হাসছেন কেন?(কান্নাজড়িত কন্ঠে)

আরে আমি তো মজা করছিলাম এতোক্ষন।

সত্যি?

হুম সত্যি।

তাহলে ঠিক আছে।

আসলেই তুমি একটা পিচ্চি।

এই যে কান খুলে শুনে রাখুন কাল থেকে আমি কলেজ যাব বুঝেছেন।এখন আমি বড়।

ঠিক আছে। রাত অনেক হয়েছে এবার ঘুমান ম্যাম বলেই আলতো করে শান্তনার নাকটা টেনে দেয়।
সকাল বেলা,,,
পিচ্চি তোমার হয়েছে কি?বার বার বললাম তোমাকে ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে না।কে শোনে কার কথা,,,এখন নিজে লেট করবে সাথে আমারো।

হয়ে গেছে আমার।চলুন?

তোমার জন্য কতটা সময় নষ্ট হয়ে গেলো আমার।

আচ্ছা সরি।কাল থেকে আমি আর ব্রেকফাস্ট বানাবো না।আজকের জন্য মাফ করে দিন প্লিজ।

ওকে এবার চলো।
মেঘ গাড়ি চালাচ্ছে শান্তনা ওর পাশে বসে আছে কি যেন ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে।মেঘ সেটা লক্ষ্য করে।

হাসছো কেন?,,,

…….(শান্তনার কোনোই সাড়া শব্দ নেই)

পিচ্চি?

…….(একই অবস্থা)

পিচ্চি চলে এসেছি আমরা

শান্তনা এতোটাই গভীর চিন্তায় ছিল আছে যে মেঘের কথা ওর কানেই যাচ্ছে না। মেঘ না পেরে জোড়ে ব্রেক কষে।শান্তনাও লাফ দিয়ে ওঠে।

কি হয়েছে?

কি হয়নি তাই বলো? তোমাকে সেই কখন থেকে ডেকে চলেছি কিন্তু তুমি আনসারই দিলে না।তাই এভাবে ব্রেক করতে বাধ্য হলাম।

সরি,,,আসলে আমি খুব এক্সাইটেড আজ তাই আরকি,,,,

ওহ,,,তা কি নিয়ে এক্সাইটেড শুনি?

আজ আমার কলেজে যাওয়ার স্বপ্ন পুরন হতে চলেছে।এটার জন্যই খুব এক্সাইটেড।তাছাড়া সব ফ্রেন্ডরা আবার একসাথে হবো খুব মজা করবো এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে।

গুড,,,,এবার নেমে পড়ো কলেজে এসে গেছি আমারা।শান্তনা গাড়ি থেকে নামা মাত্র দুর থেকে ওর বান্ধবীরা ওকে দেখে দৌড়ে আসে।মেঘ ওদের বায় বলে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
দোস্ত তুই আসলে খুব লাকি(নুশরাত)

কিভাবে?

জিজু তোকে কতটা ভালবাসে।আমার কপালেও যেন এমন একজন হাসবেন্ড জুটে।

তোর কপালে টয়লেট ক্লিনার ছাড়া ভালো কিছু জুটবে না দেখিস।(সুমাইয়া)

আমার কপালে যদি টয়লেট ক্লিনার থাকে তাহলে তোর কপালে চার রাস্তার মোড়ে যেই ভিক্ষুক লোকটা বসে উনি জুটবে।

হয়েছে বাবা থাম এবার রাস্তার মধ্যে কি শুরু করেছিস তোরা।ভেতরে চল?বলে হাটা শুরু করে শান্তনা।

লাভলী না,,, আমি বাবলী না,,,নইরে বিল্লো রানী।খেলি ছিনিমিনি ছিনিমিনি ছিনিমিনি মন নিয়ে ম্যাজিক মামনি। ফেয়ার & লাভলী মেখে আমার চেহেরা নুরানি,,,,খেলি ছিনিমিনি ছিনিমিনি ছিনিমিনি মন নিয়ে ম্যাজিক মামনি,,,,

ওই গান গাওয়া থামালি কেন?

আসলে মিশমি ম্যাম আমি তো আর পারি না।

পারিস না মানে?ওই কলি?

জ্বি ম্যাম।

যাহ ওকে 30 মিনিট কনটিনিওয়াস গুদগুদি করবি।এটাই ওর শাস্তি।

ওকে ম্যাম।

না প্লিজ এমনটা করবেন না মিশমি ম্যাম আমি আর কোনো দিন এই কলেজের ধারে কাছেও ঘেঁষবো না।আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
দোস্ত ওইখানে কি হচ্ছে রে? (কোহিনুর)

চল গিয়ে দেখি(শান্তনা)

উটকো ঝামেলায় গিয়ে কাজ নেই চল আমরা ক্লাসরুমে যাই।(সুমাইয়া)

সুমু ঠিক বলেছে(নুশরাত)

তোরা থাক আমি যাচ্ছি বলে শান্তনা ওইদিকে যায়,,,,ওরা না পেরে শান্তনার পিছু পিছু যায়।
এখানে কি হচ্ছে?

কি হচ্ছে দেখতে পারছিস না?(মিশমি)

এভাবে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে বিরক্ত করতে লজ্জা করছে না তোমার।
মিশমি শান্তনার কথায় প্রচন্ড রেগে যায়।

তোর এতো বড় সাহস তুই মিশমি ম্যমের মুখের উপর কথা বলিশ(জুসি)

আমি কারো মুখের উপর কথা বলছি না।মেয়েটাকে ছেড়ে দাও। চলে যাচ্ছি।

যদি না ছাড়ি তো কি করবি?(কলি)

কলেজ কর্তপক্ষের কাছে তোমাদের নামে কমপ্লেইন দেব।

হা হা হা তুই আমাদের নামে কমপ্লেইন দিবি।তুই জানিস এই কলেজের প্রিন্সিপাল আমার বাপির ফ্রেন্ড হয়(মিশমি)

আমি কিছুই জানতে চাইনা।মেয়েটাকে ছেড়ে দাও আমরা চলে যাব।

দোস্ত চল এখান থেকে(সুমাইয়া)

না আমি মেয়েটাকে না নিয়ে যাবো না।

একদম ঠিক আমরাও যাবো না।(নুশরাত ও কোহিনুর)

তোদের যেতে দিলে তো যাবি।(মিশমি)

দেখো ভালোই ভালোই মেয়েটাকে ছেড়ে দাও বলছি।

আচ্ছা যা ছেড়ে দেব।তবে একটা শর্তে।

কি শর্ত?

তুই যদি কলিকে পাঞ্জায় হারাতে পারিস তাহলে ওকে ছেড়ে দেব।(কলিকে দেখিয়ে)
সবাই কলির আপাদমস্তক দেখছে,,,,
কিহ! এই মস্ত হাতিকে পাঞ্জায় হারাতে হবে(নুশরাত)

কি বললি তুই? ম্যাম দেই দুটো ঘা?(কলি)

দিস আগে ওরা হার মানুক।

আমরা হার মানছি না।আমি রাজি পাঞ্জা লড়তে।

কি বলছিস টাকি?মাথা ঠিক আছে(সুমাইয়া)

ভেবে বলছিস তো(কোহিনুর)

আমার মাথাও ঠিক আছে আর আমি যা বলেছি ভেবেই বলেছি।

তাহলে আর কি।যাহ তোরা প্রতিযোগিতার আয়োজন কর।(মিশমি)
টেবিলের এক পাশে শান্তনা আরেকপাশে কলি বসে আছে।
মিশমি start বলার সাথে সাথেই পাঞ্জা লড়াই শুরু হয়ে যায়,,,,,

একপক্ষ,,,,
শান্তনা,,,,শান্তনা,,,,শান্তনা

অপরপক্ষ,,,,
কলি কলি বলে চেয়ার -আপ করছে।
মিশমি ও তার দলবলদের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি।শান্তনা কলির শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারছে না।সবাই ভাবছে এই বুঝি শান্তনা হেরে যাবে কিন্তু শান্তনার হাত টেবিল ছুই ছুই হতেই ও আবার দাঁড় করিয়ে ফেলে।শান্তনা শক্তিতে না পেরে এবার বুদ্ধি খাটালো।শান্তনা ওর হাতের কব্জিতে বেশি জোড় না দিয়ে একটু মুচরে ওইভাবেই রেখে দেয়।যার ফলে কলি শরিরের সব শক্তি খাটিয়েও শান্তনার হাত নুয়াতেই পারছে না।শেষে কলি আর না পেরে হাত লুজ করে দেয় সেই সুযোগেে শান্তনা কলির হাতের উল্টো পিট টেবিলের উপর ফেলে দেয় এবং শান্তনা জিতে যায়।
সবাই হাত তালি দিতে থাকি।মিশমি ও তার দলবল লজ্জায় লেজ গুটিয়ে পালায়।
দোস্ত তুই জাস্ট গ্রেট(কোহিনুর)
ধন্যবাদ তোমায় আমাকে বাঁচানোর জন্য।(মেয়েটি)।

কোনো সমস্যা নেই।নাম কি তোমার?

পিউ,,,,আর তোমার নাম শান্তনা।

হুম।কাল থেকে আর ওরা তোমাকে জ্বালাতন করবে না।

কাল থেকে আমি আর আসবোই না এই কলেজে।

কেন আসবে না?

ওরা খুব খারাপ আমি আর এখানে থাকতে চাইনা।

এটা কোনো কথা হল? ভয়কে জয় করতে শেখো। যেমন আমি করলাম।

কলি কিছুক্ষণ ভেবে বললো,,, ঠিক আছে।আমি এই কলেজেই পড়বো। তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ডস?(হাত বাড়িয়ে)

ওকে,,,,,,,,,
মেঘ কলেজের গেট থেকে একটু দুরে গাড়ি পার্ক করে দাঁড়িয়ে আছে শান্তনার জন্য। বার বার গেটের দিকে চেয়ে উঁকি দিচ্ছে মেঘ।মেঘের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় দুর থেকে কয়েকজন চেনা মুখ দেখে।শান্তনা তার বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে বলতে কলেজ গেট থেকে বের হচ্ছে।,,,,

মেঘ শান্তনাকে ডাকবে তার আগেই শান্তনা মেঘকে দেখে ফেলে এবং তার কাছে যায় সাথে ওর বান্ধবীরাও।
কেমন আছেন জিজু?(শান্তনার বান্ধবীর)

আলহামদুলিল্লাহ,,,তোমরা?

ভালোই।

শান্তনা তাহলে আমরা যাই কাল দেখা হবে(নুশরাত)

সেকি,,,আমাদের সাথে চল উনি তোদের পৌঁছে দেবেন।

আরে পাগল নাকি তুই?আমরা এক এক জন একেক জায়গায় থাকি,,জিজু কি পুরোদিন আমাদের বাড়ি ড্রপ করে বেড়াবে হুম?(কোহিনুর)

তা ঠিক।তাহলে তোরা যা,,,বায়।

এই হলো আমাদের ফ্রেন্ড দেখলি,,,কিভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছে(সুমাইয়া)

মানে? আমি তো বলেছিলাম আমাদের সাথে চল।তোরাই তো মানা করে দিলি এখন কথা ঘোরাচ্ছিস।

আরে সুমু মজা করছে(নুশরাত)

ওয়েট,,শান্তনা তুমি কি ম্যারিড?(পিউ)

অহ সরি।তোমাকে তো বলাই হয়নি।

আমরা বলে দেব।তুই যা জিজুর জরুরি কাজও তো থাকতে পারে।(কোহিনুর)।শান্তনাকে বায় বলে ওরা চলে যায়।শান্তনা গিয়ে গাড়িতে ওঠে।
ফ্রেন্ডদের পেলে আমাকে তো ভুলেই যাও।
মেঘের এমন কথায় শান্তনা ভরকে যায়।

ভুলে যাওয়ার কথা কেন আসছে?

কিছু না। এনিওয়ে কেমন গেলো কলেজের প্রথম দিন?

খুবই ভালো।আজ আমার একটা নিউ ফ্রেন্ড হয়েছে জানেন।

হুম,,,জানি।

কিভাবে?

মাত্রই তো তুমি বললে। বলে একটা মুচকি হাসি দেয়।

উফফ সব সময় শুধু মজা করা। যাই হোক আজ কি হয়েছে জানেন?

কি হয়েছে?
শান্তনা এক এক করে সব কথা মেঘকে বলল।মেঘ শান্তনার কথা শুনে খুব খুশি হয়।omg তুমি অতো মোটা মেয়েকে পাঞ্জায় হারিয়েও দিলে।(অবাক হয়ে বলল মেঘ) পিচ্চি যে এতোটা ব্রেভ গার্ল জানতাম নাতো।
কিন্তু ওরা যদি তোমার উপর প্রতিশোধ নেয়,,,তখন কি করবে?

প্রতিশোধ নেওয়ার ভয় পেয়ে কি ওদের অন্যায়কে মুখ বুঝে মেনে নেব নাকি?একদমই না।

that’s like a gd girl..একদম ঠিক বলেছো।তবে কোনো সমস্যা হলে আমাকে অবশ্যই বলবে।

ঠিক আছে।তবে মিশমির বাপি নাকি ওই কলেজের প্রিন্সিপালের বন্ধু হয়।এটা বলে হুমকি দিয়েছিল আমাকে।

দেক হুমকি।তুমি চিন্তা করবে না যদি কোনো প্রবলেম হয় আমি গিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলব।

আচ্ছা। এই গাড়ি থামান।

কেন?

ফুচকা!

তো?

আমি খাবো।

একদম না।এসব বাহিরের খাবার খাওয়া চলবে না।

আমি খাবো মানে খাবো।নইলে চলতি গাড়ি থেকে ঝাপ দিবো বলে দিলাম।
মেঘ না পেরে গাড়ি দাঁড় করায় এবং শান্তনাকে নিয়ে ফুচকার দোকানে যায়।
মামা 2 প্লেট ফুচকা দিন তো।বেশি ঝাল বেশি টক দিয়ে দিবেন। আলুটা কিন্ত একটু ভালো করে মেখে নিবেন।

আমি এসব খাইনা। ওকে?

আপনাকে খেতে বলিও নাই।ওকে? আমি একাই খাবো 2 প্লেট। শান্তনা ফুচকা খাওয়া শুরু করে।
বাহ খুব মজা হয়েছে।একটা খেয়ে টেস্ট করতে পারেন কিন্ত।

একটাও না।

আপনার তো আর ঝাল খাওয়ার সাহস নেই।আর আমাকে পিচ্চি বলেন হুহ।

ব্যাপারটা ঝালের নয়,,

তাহলে?

বাহিরের খাবার এটা তাই খাবো না।

হয়েছে,,হয়েছে আমার যা বোঝার আমি বুঝেছি।(বেশ ঠেশ দিয়েই কথাটা বলল শান্তনা)
এদিকে কথাটা মেঘ সিরিয়াস নিয়ে নেয়।এবং শান্তনার হাত থেকে ফুচকার প্লেটটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে।ফুচকাওয়ালা কে আরেক প্লেট ফুচকা বানাতে বলে মেঘ সাথে বেশি ঝাল দিতেও বলে।পরাপর 3 প্লেট ফুচকা খেয়ে নিয়েছে মেঘ।আবার বানাতে বলল।এটা নিয়ে 4টা প্লেট হবে। শান্তনার চোখ সেটা দেখে ছানাবড়া হয়ে গেছে।মেঘের চোখ লাল হয়ে গেছে পানিও পড়ছে টপটপ করে।তাও মেঘ থামছেই না।

প্লিজ আর খাবেন না।আমি মজা করেছিলাম। আমার কথাটা যে আপনি সিরিয়াস নিয়ে নেবেন বুঝিনি আমি।
মেঘ একটার পর একটা ফুচকা খেয়েই চলেছে।শান্তনা এবার জোড় করেই ফুচকার প্লেটটা মেঘের হাত থেকে নিয়ে নেয়।

প্লেট টা দাও বলছি।

না দেব না।আপনার শরির খারাপ করবে।

কিছুই হবে না।

চোখ লাল হয়ে গেছে পানিও পড়ছে চোখ থেকে আর আপনি বলছেন কিছুই হবে না।এবার মেঘের রাগটা কমে যায় এবং সে ঝাল অনুভব করে।

পানি,,,,পিচ্চি পানি দাও
শান্তনা ওর ব্যাগ থেকে পানি বের করে দেয়।পানি খেয়ে মেঘের ঝাল কিছুটা কমে যায়।

এবার ঠিক আছেন তো?

হুম,,,চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমি আবার অফিসে যাবো।
মেঘ রাতে বাসায় এসে দেখে শান্তনা ঘুমিয়ে গেছে।
9টা বেজেছে মাত্র এখনই পিচ্চি ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঘুমোক তাহলে আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই বলে মেঘ ওয়াশরুম চলে যায়।কিছুক্ষণ পরে শান্তনার ঘুম ভেঙে যায়।

ওনার ল্যাপটপ এখানে তার মানে উনি কি চলে এসেছেন।কখন এলেন।(চোখ কচলাতে কচলাতে বলল)

ঘুম থেকে উঠে পড়লে কেন?

একটু আগেই ঘুমিয়েছিলাম।এই সময় ঘুমানোর অভ্যাস নেই তাই ঘুম ভেঙে গেল।আপনি কখন এলেন?আমাকে ডাক দিলেন না কেন?

ঘুমোচ্ছিলে তাই আর ডাকিনি।

ওওও,,,সরি

কেন?

ফুচকার ব্যাপারটা নিয়ে।

আসলে আমি ঝাল খেতে পারি বাট বাহিরের খাবার খাওয়ার হ্যাবিট নেই।বাদ দাও,,,তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি।

কি গিফট ?(অবাক হয়ে)

চোখ বন্ধ করো?

কেন?

চোখ বন্ধ করতে বলেছি তাই করো।
শান্তনা আর কথা না বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।
এবার খোলো।
শান্তনা চোখ খুলে একটা স্মার্ট ফোন দেখছে পায়।

এটা?

পিচ্চির জন্য।

আমার তো ফোন দরকার নেই।

আলবাদ দরকার আছে।তুমি এখন কলেজে উঠেছো কিছু দরকার পরলে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলে জেনে নিতে পারবে।তাছাড়া কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে ফোন দিতে পারবে।আমি তো অফিসে থাকি যদি তোমার ফ্রেন্ডদের তোমাকে প্রয়োজন পড়ে তাহলে তারা তোমাকে ফোন করলেই পেয়ে যাবে।নইলে আমি কখন বাড়ি আসবো কখন তুমি কথা বলবে,, তাইনা?

শান্তনা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,,,তাইতো।কিন্তু খুব দামি মনে হচ্ছে ফোনটা। এমনিতেই আমাকে কলেজে এডমিশন নিয়ে অনেক খরচ হয়ে গেছে এখন আবার ফোন।

তো কি হয়েছে?এর বদলে আমি ওতো তোমার থেকে কিছু চাইবো।

মানে কি চাইবেন?আমার কাছে কি বা আছে?

আছে।এমন একটা জিনিস আছে যেটা কোনো দামি গিফট এর থেকেও মুল্যবান।

কি সেটা?

বন্ধত্ব,,,মন ভালো থাকার উপায়,,,একটু happiness & peace….এসকল কিছু তোমার কাছে আছে।দেবে কি?
শান্তনা কি বলবে বুঝতে পারছে না।

কি ভাবছো?আমি কি তোমার বন্ধু হওয়ার যোগ্য নই?

তা না।

তাহলে কি?

আমি রাজি তবে আমার একটা কনডিশন আছে।

কি কনডিশন?

আপনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলে আমি আপনার বন্ধু হতে পারি।

মানে,, তুমি?

জ্বি,,,আমি রাতে আপনাকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে দেখেছিলাম 2 দিন।

আমি যদি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেই তাহলে তুমি আমার ফ্রেন্ড হবে?

হুম,,,হবো।

তাহলে আজ থেকে ছেড়ে দিলাম।আমাদের ফ্রেন্ডশিপের খাতিরে।

তাহলে আমিও আপনাকে ফ্রেন্ড হিসেবে এক্সেপ্ট করলাম।

সত্যি,,,,!আমাকে কখনো ধোকা দিবে নাতো তোমার বোনের ম,,,,,,মুখ ফোসকে কথাটা বেরিয়ে যায় মেঘের মুখ থেকে।

কি বললেন? আপু আপনাকে ধোকা দিয়েছে।

নাহ কিছু না।

বলুন আমাকে সবটা।

প্লিজ আমি একটু ভালো থাকতে চাই।আমাকে বাঁচতে দাও।শ্বাস নিতে দাও ঠিক ভাবে।আমি পেছোনের কিছুই মনে করতে চাইনা।কথাগুলো বলতে গিয়ে মেঘের চোখে পানি চলে এসেছে। শান্তনা আর কথা বাড়ায়নি এই নিয়ে।

চলুন খেয়ে নিবেন।আমিও খাইনি।

তবে আমি রুমে খেতে চাই।এখন থেকে আমি রুমে বসেই খাবো।নিচে যাবো না।

কিন্তু সবাই কি ভাববে?

যে যা ভাবার ভাবুক।আমার কিছু আসে যায় না।তুমি কি চাও আমি না খেয়ে থাকি?

না তা কেন চাইবো?

তাহলে আমি যা বলছি শুনবে প্লিজ?

ওকে তাই হোক।আমিও তাহলে আজ থেকে আপনার সাথেই খাবো।

তুমি সবার সাথে খেতে পারো সমস্যা নেই।

না,,,বন্ধুত্ব যখন করেছি বন্ধুর পাশে থাকবো না তাহলে এটা কেমন বন্ধুত্ব?

ওকে,,,(হাসি দিয়ে)
ওনার কি হয়েছে?আপু ওনাকে ধোকা দিয়েছে?কিন্ত কেন?আমি এক দিন না একদিন সবটা জেনেই ছাড়বো।কিন্তু উনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন,,,আমি চেষ্টা করবো যাতে উনি হাসি খুশি থাকেন। (মনে মনে বলল)

খাবার আনবে নাকি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে?আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে পিচ্চি।

এইতো যাচ্চি। বলেই শান্তনা নিচে যায়।

শান্তনা নিচে গিয়ে দেখে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।
এসো বউমা তোমাদের জন্যই বসে আছি আমরা।(আজমল সাহেব)

আসলে বাবা,,,শান্তনাকে বলতে না দিয়ে,,

মেঘ কোথায়? (সাহেরা খাতুন)

উনি বলেছেন এখন থেকে রুমেই খাবেন।(মাথা নিচু করে)

মানে?রুমে খাবে কেন?

জানি না মা।আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু কিছু বলেনি।

থাক না সাহেরা পরে মেঘের সাথে ক্থা বলে জেনে নেবো।তুমি তো জানোই মেঘ কতটা জেদি।

কিন্তু আমার ছেলেটা কি খাবে না খাবে।আমার সামনে খেলে একটু বকাঝকা করে নাহয় খাওয়াতাম।

ভাবি আছে তো মাম্মি।কোনো টেনশন নিও না।ভাবি তুমিও ভাইয়ার সাথেই খেও কেমন।

হ্যাঁ তাই করো মা।(আজমল সাহেব)

ঠিক আছে বাবা।
আমি তো তাই করতে চেয়েছিলাম ধন্যবাদ সামিরা(মনে মনে বলল)

ঢং দেখলে গা জ্বলে যায়।আমার মুখ দেখবে না বলে নিচে খেতে আসেনি আমি মনে হয় বুঝি না।তোকে এমন শাস্তি দেব না তোর রুহু অব্দি কেঁপে উঠবে এই বলে রাখলাম(মনে মনে বলল রথি)
মেঘ খাচ্ছে শান্তনা মেঘের দিকে চেয়ে আছে।

না খেয়ে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

আপনি আজ এতো দ্রুত গতিতে কেন খাচ্ছেন?মনে হচ্ছে কতো আপনি দিনের ক্ষুদার্ত।

ঠিক ধরেছো।আমি অনেক দিন ভালো ভাবে খাইনি।

কেন খাননি?

বুকের ব্যাথাটা যে খুব বেশি ছিল।এখন সেটা থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়েছি।তাই ক্ষুধা অনুভব করতে পারছি।

মানে!! আপনার বুকে ব্যাথা?ডাক্তার দেখাননি কেন?

সেটা ডাক্তার দিয়ে যদি কমতো তাহলে এতে গুলো দিন নিদ্রাহীনতার সাথে কাটতো না।

মানে বুঝলাম না।

বোঝার ক্ষমতা হয়নি তোমার।(মৃদু হেসে বলল)

অদ্ভুত আপনি।
সকালে ফজরের নামাজ শেষে বান্ধবীদের সাথে নিজের নিউ ফোন দিয়ে কথা বলে নিল শান্তনা।
তারপর মেঘকে ডাকতে যায়।গিয়ে দেখে মেঘ এখানো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।শান্তনা মেঘের কাছে যেতেই আবারও মেঘের ডান চোখের তিলটা খেয়াল করে।শান্তনার কাছে তিলটা বেশ ভালো লাগে।মন চায় ছুয়ে দিতে কিন্তু সেটা করার দুঃসাহস শান্তনার নেই।তাই নিজের লোভটাকে কোনোমতে সামলে মেঘকে ডাকতে থাকে।
মেঘ ভাইয়া,,,মেঘ ভাইয়া?উঠে পড়ুন অফিস যাবেন না?অনেকবার ডাকার পর শান্তনা মেঘের কানের কাছে ওর মুখ নিয়ে জোড়ে মেঘ ভাইয়া বলে হুংকার দেয় সাথে সাথে মেঘও উঠে পড়ে।

কি সমস্যা হুম?সকাল সকাল কি মেঘ ভাইয়া,,,মেঘ ভাইয়া লাগিয়েছো।বাই দ্যা ওয়ে,,,আমি কি তোমার ভাইয়া লাগি?

তো কি লাগেন শুনি?

এমনিতে তো তুমি আমার বউ লাগো।
বউ নামটা শুনে শান্তনা চোখ বড় বড় করে তাকায়।
না মানে সবার কাছে তো আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ তাইনা? সবার সামনে যদি আমাকে মেঘ ভাইয়া বলে ডাকো তাহলে তুমিই লজ্জায় পড়ে যাবে।

আমি তো আপনাকে ভাইয়াই বলতাম।তবে আপনার কথাতেও লজিক আছে।

আগের কথা বলে লাভ আছে কি?এখন আমরা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি তাই ভাইয়া বলা যাবে না।তাছাড়া আমরা তো ফ্রেন্ড এখন তাই তুমি আমাকে মেঘ বলতে পারো।

আপনার বয়স কতো বলুনতো?
বয়সের কথা শুনে মেঘ কিছুটা থতমত খেয়ে যায়।

প্রেম নেশা পর্ব ৭+৮+৯

কেন বয়স জেনে কি করবে?

আগে বলুন?

26 কেন?

হায় আল্লাহ!

কি হয়েছে কি?

আপনি আমার পুরো 10 বছরের বড় আর আমি আপনাকে নাম ধরে ডাকবো এটা কেমন দেখাবে হুম?

ভালো দেখাবে। ভালবাসা আর বন্ধুত্বে বয়স লাগে না বুঝেছো।মন থেকে ফিল করলেই হয়ে যায়।

কিন্তু,,

কোনো কিন্তু নয়।তুমি আমাকে নাম ধরেই ডাকবে এটাই শেষ কথা।

ওকে মেঘ,,,বলেই হেসে দেয়।

এইতো গুড মেয়ে।তুমি ওয়েট করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।বলে মেঘ ওয়াশরুমের দিকে যায়।

প্রেম নেশা পর্ব ১৩+১৪+১৫