প্রেম নেশা পর্ব ৭+৮+৯
শান্তনা আক্তার
বিকেলে শান্তনা পার্লারের লোকদের আসার পথ চেয়ে বসে আছে।আর মেঘকে একের পর এক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে। পার্লারের লোকেরা কখন আসবে?তাদের ফোন করেছে কিনা?তারা বের হয়েছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
।
বলছি আরেকটি বার ফোন করলেই নয়?
।
দেখো পিচ্চি আমি তাদের বলে দিয়েছি সো তারা আসবে হয়তো জ্যামে ফেসে গেছ। আর এক কথা আর কতো আস্ক করবা শুনি?
।
জিজ্ঞেস কি সাধে করি হুম?আমার মন বলছে তারা আসবে না আর আমি তৈরিও হতে পারব না।
।
তুমি শুধু শুধুই টেনশন করছো পিচ্চি। এমন কিছুই হবে না।
তাই যেন হয়।বাই দ্যা ওয়ে,,,আপনি আমাকে পিচ্চি কেন বললেন? আজ কি শর্ত ছিল আমাদের হুম?
।
আমি তো তোমার ফ্রেন্ডদের সামনে বলিনি।শর্তটা ছিলো তাদের সামনে আমি তোমাকে উল্টো পাল্ট কিছু বলবো না।কিন্তু এটা তো বলিনি কেউ না থাকলেও আমি কিছু বলতে পারবো না। কি তাইত?
।
শান্তনা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,,,তাইতো।
এরই মাঝে কাজের মেয়ে ফুলি দরজায় টোকা দিল।শান্তনা গিয়ে দরজা খুলে দিল।
।
এইডা কি ছুডো ভাবি?
।
কেন কি হয়েছে?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আপনে এহনো রেডি হননাই?বড় ভাবি সেই কহন সুন্দার কইরা সাইজা মুহে মেকাপ মাইখা মেহমান গো লগে কতা কইতাছে।কি যে ভালা লাগতাছে তা কইবার পারুম না।
।
আসলে কি হয়েছে,,, শান্তনার বলার মাঝে মেঘের ফোন বেজে ওঠে। কে ফোন করেছে?
।
পার্লার থেকে। আমি একটু কথা বলে আসছি ওয়েট।
এবার শান্তনার মুখ থেকে চিন্তার ছাপ ছু মন্তর হল।
।
ছুডো ভাবি আপনে কি ভাবতাছেন?
।
কিছু না।সামিরা তৈরি হয়েছে তো?
।
হেয় কহন থেইকা সাজে আর মুছে সাজে আর মুছে।এই পইরযন্ত ১০-১২ বার মেকাপ দিছে আর মুছছে।
হা হা,,,
।
শান্তনা এদিকে আসো তো একটু।
।
হায় হায় ছুডো সাহেব ওতো রেডি হয় নাইকা।
।
আচ্ছা ফুলি আপু তুমি নিচে যাও আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি। ফুলি চলে গেলে শান্তনা দরজা লাগাল।
হুম,,, বলুন? পার্লারের লোকজন চলে আসছে তাইনা?
।
ওরা আসতে পারবে না।
।
কিহ,,,কেন?
যে শাড়ি পড়াতো তার মা খুব অসুস্থ হয়ে যায় ফলে আসতে পারবে না বলে দিয়েছে।আমি তাদের ডাবল টাকা দিতে চেয়েছিলাম কিন্ত উনি বললেন মার থেকে বড় আর কিছু না তার কাছে।আমিও সিচুয়েশনটা বুঝতে পেরে আর কথা বাড়াইনি
।
তাদের কোনো দোষ নেই।সব দোষ আপনার।
।
আমার?
।
হ্যাঁ,,,আপনার।
।
কিভাবে?
।
আপনি যদি আপুর থেকে শাড়ি পড়তে দিতেন তাহলে এতো কিছু হতোই না।এতোক্ষনে আমি রেডি হয়ে যেতাম।এখন আমি কি জবাব দেব আপনার বাবা মাকে। শান্তনা মন খারাপ করে ধপ করে খাটের ওপর বসে পড়ে।
আমি তো আছি তাইনা।
।
আপনি থাকলে কি? আপনি তো আর শাড়ি পড়াতে পারেন না।
।
কে বলেছে পারি না।
।
মানে আপনি শাড়ি পড়াতে পারেন?(চোখ বড় বড় করে)
।
জ্বি ম্যাম।
।
কিন্তু কিভাবে?
।
ইউটিউব দেখে শিখেছিলাম।
।
কিন্তু কেন শিখেছিলেন?
এখন এসব বলার সময় নয়। এমনিতেই দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।Do first….
শান্তনাতো এটা ভেবে ভয় আর লজ্জা পাচ্ছে যে একটা ছেলে তাকে শাড়ি পড়িয়ে দেবে,,,গায়ে টাচ করবে।
।
কি হলো,,,এখনো দাঁড়িয়ে কেন?
।
আসলে আমি,,,,
।
বুঝেছি তুমি ভয় পাচ্ছো,,,তাহলে থাক।আমি তো ভেবেছিলাম চোখ বন্ধ করে শাড়িটা পড়িয়ে দেব কিন্তু তুমি যেহেতু ভয় পাচ্ছো সেহেতু,,,,
।
আরে না আমি যাচ্ছিতো।বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে আসে।সাথে বুকে একটা ওড়না পেচানো। নিন হয়ে গেছে।
পেটের সাইটটা দেখা যাচ্ছে বলে শান্তনা বার বার ওড়না নিচের দিকে টানছে।
থাক আর হেজিটেশন করতে হবে না। আমি চোখ বন্ধ করলাম। এইবার শাড়িটা দাও।(চোখ অফ করে)। শান্তনা শাড়িটা মেঘের হাতে দিল। মেঘ শাড়ি পড়াতে লাগল। সান্তনা চোখ বুজে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ওর পুরো শরিরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে।এই সব কিছুর মধ্যে শান্তনার মেঘের গায়ের সুবাসটা বেশ ভালো লেগেছে।মেঘ একটুও স্পর্শ না করে শাড়ি পড়াচ্ছে।
।
নাও হয়ে গেছে এবার কুচিটা গুজে নাও। শান্তনা কুচিটা গুজে নেওয়ার পর মেঘ তার চোখ খোলে।
কি হয়েছে তো শাড়ি পড়ানো?
।
খুবই ভালো হয়েছে ধন্যবাদ।
।
ঠিক আছে,, তুমি সাজুগুজু করো আমি ততক্ষণে ড্রেস বদলে আসি। নাকি সাজতেও পারো না?
।
এটা পারি।
thank God…..বলেই মেঘ ওয়াশরুমে চলে যায়।
শান্তনা তোমার হয়েছে তো,,,,,,,,মেঘের চোখ আটকে যায় সামনে নীল শাড়ি পরিহিত শান্তনাকে দেখে। সামনের চুল পাফ করে খোপা করা।মুখে হালকা মেকাপ,, গারো লাল লিপ্সটিকের সাথে শান্তনাকে কোনো পরির থেকে কম লাগছে না।আচমকাই মেঘ বলে ওঠে মাশাআল্লাহ,,,,
মেঘের ওভাবে তাকিয়ে থাকায় শান্তনা কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়,,,,মেঘ একটু একটু করে শান্তনার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
।
বলছি নিচে যাবেন,,,,,
শান্তনা পুরো কথা শেষ করার আগেই মেঘ তার একটা আঙুল শান্তনার ঠোঁটে রাখে,,,সাথে সাথে শান্তনার পুরো শরিরে এক অদৃশ্য কম্পনের সৃষ্টি হয়।
হুশ,,,,একদম চুপ। বলেই মেঘ শান্তনার শাড়ির আঁচল টেনে শান্তনার মাথায় দেয়। এবার পিচ্চিকে বউ বউ লাগছে।মিষ্টি একটা বউ।
।
নিচে যাবেন নাকি আমি একাই যাব?(কথা ঘুরিয়ে)
।
হুম চলো। শান্তনা যাবে তখন,,পিচ্চি দাঁড়াও।
।
আবার কি?
আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বললে নাতো?
এতোক্ষনে শান্তনা মেঘকে খেয়াল করলো।মেঘ নেভি ব্লু পাঞ্জাবি পড়েছে তার সাথে চুল স্পাইক করা।শান্তনার কাছে সব থেকে বেশি attractive লেগেছে মেঘের চোখের নিচের তিলটা যেটা আগে কখনো খেয়াল করেনি সে।তিলটার দিকে শান্তনা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। মেঘ গিয়ে তুরি বাজাতেই শান্তনা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে।
।
এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি কিছু বলবেও।
।
কি বলব?
।
আমাকে কেমন লাগছে সেটা।
।
দিলদারের মতো,,বলেই ভো দোঁড়।
পরে দেখে নেব।পালাবে আর কোথায় পিচ্চি?
শান্তনা,,, রথির শাড়ি একই রকম।পক্ষান্তরে, মেঘ সামিররের পাঞ্জাবিও একই। সবাই শান্তনা আর মেঘের জুটিকে বেশি পছন্দ করেছে।তা দেখে রথি খুব রেগে যায় কিন্ত জোড় করে মুখে হাসির রেখা বজায় রাখে রথি।
মেঘ তার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে বিজি মেঘ কেন সবাই যার যার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছে।শান্তনাই একা বসে আছে মনমরা হয়ে।পরক্ষনেই শান্তনার মুখে হাসি ফুটে ওঠে ওর বাবা,, মা,,ভাই আর হারামি বান্ধবীদের দেখে।
।
শান্তনা গিয়ে জিল্লুর রহমান আর মিলি বেগম কে সালাম করে। কেমন আছো আব্বু আম্মু?
।
আলহামদুলিল্লাহ মা,,,তুমি কেমন আছো? জামাই বাবা কেমন আছে?কোথায় সে?
।
আমার সাথেই ছিল।এখন বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।
।
ও আচ্ছা। শান্তনার বাবা মা গিয়ে আজমল চৌধুরী আর সাহেরা খাতুনের সাথে গল্প জুড়ে দেয়।
।
বাবা মাকে পেয়ে আমাদের ভুলে গেলি বলেই
শান্তনার বান্ধবীরা সবাই একসাথে হামলা দেয় ওর উপর। সবাই এসে জড়িয়ে ধরে শান্তনাকে।
এদিকে বেচারি দম নেওয়ার জায়গা টুকু পাচ্ছে না।
কেমন আছিস দোস্ত?(সুমাইয়া বলল)
।
শ্বশুর বাড়িতে প্রথম দিন কেমন কাটল?(নুশরাত বলল)
।
একা দাঁড়িয়ে কেন? জিজু কোথায়(কোহিনুর বলল)
এভাবে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে তারা।
আসছে পেত্নীগুলা। হারামিগুলা আর শুধরাবে কখনো।আরে বাবা আমাকে বলার সুযোগ দিবি নাকি প্রশ্নের দোকান দেওয়ার প্ল্যান তোদের?
।
সরি বাবু বল এবার। (সবাই একসাথে)
।
আমি ভালো আছি,,,তোদের জিজু কোথায় জানি না। আর শ্বশুর বাড়িতে কেমন আছি দেখতেই তো পারছিস।একনাগাড়ে বলল শান্তনা।
।
জিজু কোথায় জানিস না মানে?নতুন বউয়ের পাশে তার বর নেই এটা কেমন কথা।তোর বোনের পাশে তার হাসবেন্ড কি সুন্দর লেপ্টে আছে দেখ।মনে হচ্ছে চোখের আড়াল হলেই যেন রথি আপি হারিয়ে যাবে। বলে সুমাইয়া হেসে উঠে তার সাথে বাকিরাও।
আমাকে খুজছো নাকি সবাই? সবাই মেঘের দিকে তাকায়।
।
জ্বি,,, জিজু সাহেব।আপনি কেমন হুম? বউকে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।(নুশরাত বলল)
।
আমি তো আর পালিয়ে যাইনি।এখানেই তো ছিলাম।আচ্ছা মানলাম আমার ভুল হয়েছে।এখন আপনারাই বলেন এর জন্য আমার কি শাস্তি প্রাপ্য?
।
বেশি কিছু না 30 হাজার টাকা দেন তাহলেই হবে।
।
তুই কিন্তু মার খাবি সুমু(শান্তনা চোখ রাঙিয়ে বলল।)
।
তুমি একটাও কথা বলবে না।এখানে জিজু আর শালিদের মধ্যে ডিল চলছে।মেঘ ভদ্র ছেলের মতো পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে দেয়।কি শালি সাহেবারা এবার হ্যাপি তো।
হুম হ্যাপি নয় অনেক হ্যাপি,,,।তবে ও যেন সব সময় হাসি খুশি থাকে(শান্তনাকে দেখিয়ে) আজকের মতো আপনাকে ছেড়ে দিলাম আর কখনো আমার ফ্রেন্ড টারে একা ছাড়বেন না বলে দিলাম।নইলে এর থেকেও দ্বিগুণ শাস্তি পাবেন বলে রাখলাম (নুশরাত)।
।
আমি সব সময় এই কথাটি মাথায় রাখবো।
।
এইতো আমাদের গুড জিজু(কোহিনুর)।
।
বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে সকল গেস্ট যার যার বাসায় চলে যায়।পুরো অনুষ্ঠানে মেঘ এক বারো মনের ভুলেও রথির দিকে ফিরেও তাকায়নি।রথি এই জিনিসটা ভালো ভাবেই লক্ষ্য করেছে।কিন্তু তাতে তার কোনো ফারাক পরেনি,,, সে এখন এই বাড়ির বড় বউ এটাই তার attitude এর মুল কারন।
মেহমানদের বিদায় জানিয়ে সবাই যার যার রুমে চলে যায়,,।
শান্তনা মন খারাপ করে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ এসে শান্তনার পাশে দাঁড়ায়।কিন্তু শান্তনার কোনো হুশই নেই।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই।
মন খারাপ?
মেঘের গলা শুনে শান্তনা খেয়াল করে মেঘ ওর পাশে দাঁড়িয়ে।
।
আপনি কখন এলেন?
।
এইতো মাত্রই।
।
ওও
।
হুম,,,মন খারাপ কেন?
।
কোথায়? আমার মন খারাপ কেনই বা থাকবে? আমার কি মন বলতে কিছু আছে নাকি।(অভিমানি সুরে)
।
কি হয়েছে বলবে তো?
কিছু হয়নি।বলে রুমে চলে যায়।
।
আমি জানি পিচ্চি,,তুমি কেন মন খারাপ করে আছো। আজ রাতটা যেতে দাও কাল তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
।
।
সামির আমার না খুব headache হচ্ছে।
।
কেন রথি পাখি?
।
জানি না। কিন্তু খুব পেইন হচ্ছে(মাথা হাত দিয়ে)
।
দাঁড়াও আমি বামটা তোমার মাথায় লাগিয়ে নেই তারপর মেসাজ করে দিচ্ছি।সামির আলতো করে খুব আদর করে রথির কপালে মেসাজ করছে।এবার কেমন লাগছে রথি পাখি?
।
খুব ভালো,,,লাভ ইউ সামির।
লাভ ইউ টু।এবার তুমি ঘুমাও।
আমার কেউ নেই দুনিয়ায়।কেউ না।সবাই আমাকে হাতের পুতুল ভাবে।যে যেভাবে চায় সেভাবে আমাকে নিয়ে খেলে।আমার জীবনটা আজ অর্থহীন হয়ে গেছে।এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে শান্তনা।হঠাৎ কি এমন হলো যার জন্য তার মন ভেঙে গেছে।হাসি মাখা মুখটা কিভাবে নিমিষেই হতাশায় পরিনত হল?
কোথায় যাচ্ছেন সুটবুট পড়ে ?(শান্তনা)
।
অফিসে।আজ থেকে জয়েন করব তাই।
।
তাই সেই কখন থেকে তৈরি হচ্ছেন।
।
নিউ বস আমি একটুতো স্পেশাল ভাবে তৈরি হতেই হয়।এনিওয়ে,,,গতকাল রাতে কি হয়েছিল?
কাল রাতের কথা মনে পড়ায় আবার শান্তনার মুড অফ হয়ে যায়। মেঘ ব্যাপারটা বুঝতে পারে।
।
আচ্ছা সরি।জিজ্ঞেস করব না আর। এবার আমি যাই,,,বিকেলে দেখা হবে। বলেই বেরিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু,,,
।
শুনুন,,,
।
কি,,,?
।
অল দ্যা বেস্ট।
thanks পিচ্চি।
বুঝলে তো সাহেরা আমার মেঘের বউ খুব ভালো লক্ষীমন্তর একটা মেয়ে।
।
ভালো তো হবেই।রাজভোজ রান্না করে খাওয়ায় যে তোমাকে।খুব খারাপ হয়ে গেছো তুমি বলি এই বয়সে কম তেলে ভাজা পোড়া যত কম খাবে তানা,,,যেসব খাবার এসিডি তৈরি করে সেগুলোই বেশি খাচ্ছো। এই দুই দিন খাবারে খুবই অনিয়ম করেছো কিছু বলিনি।তবে আর না।এখন থেকে আবার তোমাকে ফুড মেইনটেইন করে খেতে হবে বলে দিলাম।(পান মুখে পুরতে পুরতে বলল সাহেরা খাতুন)
।
আহা নতুন বউমা রাগ করবে তো তাহলে।
।
কোনো রাগ করবে না।আমি শান্তনাকে বলে দেব যাতে কাল থেকে ভাজা পোড়া কম রান্না করে।
শান্তনা মা আমার কথা মানে তার শ্বশুরের কথা শুনবে তোমার না।
।
দেখা যাবে সে কার কথা শোনো।
Dad,,, what are u doing? we are already late….মেঘের ডাকে ঝগড়া থামান তারা।
।
দেখেছো তোমার জন্য আমার ছেলেটার লেট হয়ে যাচ্ছে। বলেই মেঘের কাছে যায়।
দেখি দেখি,,,বাহ এই না হলে আমার ছেলে একদম আমার মতো হয়েছে।
কিভাবে তোমার মতো হলো শুনি? আমার ছেলে তার বাবার মতোই হয়েছে।
।
তোমার মতো হলে পেটুক হয়ে ভুড়ি বেড়ে যেত।কিন্তু আমার ছেলে আমার মতোই বুদ্ধিমান ,,,নিয়মানুবর্তী হয়েছে।
।
কি বললে আমি পেটুক?
।
একদম তাই।
।
আমার ভুড়ি বেড়ে গেছে আমি বুদ্ধিহীন?
।
তা আবার বলতে,,,,
মম ড্যাড আমি কি আজ অফিস যেতে পারবো না।নিশ্চয়ই সবাই নিউ বসকে ওয়েলকাম করার জন্য ওয়েট করছে।তাদের সামনে আমার কি প্রেসটিজ থাকবে বলোতো।
আজমল চৌধুরী ও সাহেরা আর কথা বাড়ায়নি।
অফিসের সবাই ফুল দিয়ে স্বাগতম জানালেন তাদের নিউ বসকে অর্থাৎ মেঘকে।
।
আজ থেকে এই চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানির সকল রেসপন্সিবিলিটি তোমার মাই সন।
I will try my best dad…. মেঘ সবার সাথে introduction করল। তার পিএ মিস টিনার থেকে সব বুঝে নিল।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো।এদিকে মেঘের বাড়ি আসার নামই নেই। রুমের পাইচারি করেই যাচ্ছে শান্তনা।
উনি তো বলেছিলেন বিকেলে চলে আসবেন।কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনোতো এলেন না।
।
কি করছো পিচ্চি?
।
মেঘকে দেখে শান্তনা কিছুটা স্বস্তি পায়।
আপনি না বললেন যে বিকেলে আসবেন।
।
সব কিছু বুঝতে গিয়ে দেড়ি হয়ে যায়।ফার্স্ট দিন আজ একটুতো লেট হবেই তাইনা।
হুম,,,বুঝলাম।কিন্তু খেয়েছেন তো দুপুরে?
।
ক্যানটিন থেকে খেয়েছিলাম।তুমি খেয়েছিলে?
।
হুম,,,,(মাথা নিচু করে)
।
মিথ্যে,,,,আমি ফুলির থেকে শুনিছি তুমি খাওনি।কেন খাওনি সেটাও আমি জানি।
।
কেন খাইনি(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে)
আগে তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলো তারপর বলছি(ফোনটা এগিয়ে দিয়ে)
।
ওরা কেন ফোন দিয়েছে?
।
শুনে দেখো?
।
হ্যালো,,,
।
congratulations দোস্ত(ওপাশ থেকে)
কিসের congratulation?
।
সেটা জিজুর থেকে জেনে নিস আর কাল দেখা হবে বলে কেটে দেয়।একে একে সবাই শান্তনাকে কল দিয়ে congratulations জানায় কিন্তু কেন সেটা কেউই বলেনি।
বুঝলাম না সবাই আমাকে congratulations কেন বলল?
।
কেন বলল?
।
বলল আপনাকে জিজ্ঞেস করতে।
তুমি কাল ওদের সাথে কলেজ যাবে।তাই তোমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে তারা।
।
মানে বুঝলাম না।
।
মানেটা হলো,,,গতকাল ফাংশনে,,,,
দোস্ত আমরা সবাই একই কলেজে এডমিশন নিয়েছি।তুইও সেখানে এডমিশন নে তাহলে আমরা আবার স্কুলের মতো একসাথে হই হুল্লোড় করতে পারবো (সুমাইয়া)
না রে আমার আর পড়ালেখা করা হবে না(উদাস হয়ে বলল শান্তনা)
।
কেন হবে না শুনি? আমারা জিজুর সাথে কথা বলব।(নুশরাত)
।
না,,,একদম না প্লিজ তোরা ওনার সাথে এই নিয়ে একটা কোথাও বলিস না প্লিজ।
।
কিন্তু বললে ক্ষতি কি?(কোহিনুর)
যদি বলিস তো আমি তোদের সাথে আর কখনো কথা বলব না মনে রাখিস।
এইসকল কথা আমি শুনে ফেলি। তারপর রাতে তোমার ফ্রেন্ড সুমাইয়াকে কল করে কলেজের নাম জেনে নেই।আর তোমাকে কিছু বলতে না করি। এরপর অফিসে বসে ওই কলেজে তোমার এডমিশনের জন্য এপ্লাই করি।তুমি সিলেক্টও হয়ে যাও।
।
এতো কিছু করলেন আমার জন্য।শান্তনার চোখ ছলছল করছে খুশিতে।
।
হুম,,,এবার একটু হাসো দেখি।সেই রাত থেকে তো কান্না করে সাগর বানিয়ে ফেলেছো।
।
আপনি কিভাবে দেখলেন?
।
আমি তো তোমার মতো পিচ্চি না।কোথায় কি হয় সব খেয়াল রাখি বুঝেছো।এবার গিয়ে খেয়ে আসো।
না,,,,রাতে।
।
এখনি যাবে।আমার আর তোমার জন্য পকোরা আর এক কাপ কফি করে আনবে।এতোটুকু তো করতে পারবে তাইনা?
শান্তনা একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচে যায়।
পকোরার ঘ্রাণে আজমল চৌধুরী আর ঘরে বসে থাকতে পারলেন না।এক পা দু পা করে রান্না ঘরের দিকে গেলেন।
কি করছো ছোট বউমা?
।
এইতো সবার জন্য পকোরা ভাজছি বাবা।আপনার ছেলে খেতে চাইলো তাই সবার জন্যই বানালাম।শেষ হয়ে এসেছে আপনি বসুন গিয়ে আমি নিয়ে আসছি।
আচ্ছা মা,,,এক কাপ চা হলে আরও ভালো হতো।
।
আমি নিয়ে আসছি।
আজমল চৌধুরী যেই পকোরা মুখে দেবে তার আগেই সাহেরা তার হাত থেকে কেড়ে নেয়।সাথে পকোরার প্লেট টাও।
তোমাকে মানা করার পর আবারও ভাজা পোড়া খাচ্ছো কেন? রাতে এসিডিটির ব্যাথায় নিজেও ঘুমাতে পারো না সাথে আমাকেও ঘুমাতে দাওনা। ছোট বউমা তুমি আর এসব তোমার বাবা কে দিবে না বলে দিলাম।
।
আমি যদি জানতাম বাবার এসিডিটির প্রবলেম হয়,,,তাহলে আমি দিতাম না মা।
এখনতো জেনেছো আর যেন এই ভুল নাহয়। বলে হাতে থাকা পকোরাটা মুকে পুরে নেয় সাহেরা।বেশ ভালোই হয়েছে বউমা।আবার আরেকটা খেতে যাবে তখন সামিরা এসে সাহেরার হাত থেকে পকোরার প্লেট নিয়ে নেয়।
।
পাপা কে মানা করে এখন তুমি নিজেই খাচ্ছো কেন? তোমার ওতো এসিডিটি আছে।
।
একদম ঠিক হয়েছে(আজমল চৌধুরী খুশি হয়ে যান)
।
না মানে,,,আমি তো একটুই খেতাম।তাছাড়া আমার তোর পাপার মতো ওতো সমস্যা নেই।
।
একটুও না। ভাবি তুমি তোমার রুমে যাও।আমি মাম্মি পাপা কে দেখে নিব।
এই নিন আপনার পকোরা আর কফি।(শান্তনা)
এতো দেড়ি কেন?(ল্যাপটপ বন্ধ করে)
।
আপনার বাবা মার ঝগড়া দেখতে দেখতেই দেড়ি হয়ে গেল।
।
মম ড্যাড এমনই।সুযোগ পেলেই ঝগড়া শুরু।
।
বয়স হয়ে গেলে এই ঝগড়াটাতেই প্রেম লুকিয়ে থাকে।
।
তাই? তুমি তো তাহলে অনেককিছু জানো পিচ্চি।
প্রেম নেশা পর্ব ৫+৬
জানি বলেই আমি পিচ্চি তাইনা?
।
তা তো জানি না।
।
তাহলে কি জানেন?
।
খেতে বলেই পকোরা খাওয়া শুরু করল।বাহ খুব ভাল। পিচ্চি মানুষ হয়ে এতো ভালো রান্না কিভাবে পারো?
।
তা তো জানি না।
অবশেষে বাড়ি এসে পৌঁছালাম। রাত হয়ে গেল শপিং করতে গিয়ে তাইনা রথি পাখি।পা টা খুবই ব্যাথা করছে।
আমার কাছে মনে হলো মলে গেলাম আর চলে আসলাম।
।
কিহ! টানা 6 ঘন্টা শপিং করে বলছো মলে গেলাম আর আসলাম।
।
তা নয় কি হুম? আমি সারাদিন শপিং করলেও মন ভরবে না।
।
তোমরা মেয়েরা পারোও।এই যাহ,,,
।
কি হলো?
আজ তো মেঘ অফিসে নিউ বস হিসেবে জয়েন করেছে। যাই গিয়ে কথা বলে আসি।
।
মানেহ! মেঘ অফিসের নিউ বস?
হুম,,,বাবা আজ থেকে অফিসের সব দায়িত্ব মেঘের হাতে তুলে দিয়েছে।
।
মেঘের হাতে মানে? তুমি বড় ছেলে তোমাকে না দিয়ে মেঘকে কেন দিল?
।
আমি তো আমার কাপড়ের ব্যবসার দেখাশোনা করিই।তাছাড়া আমি এটাতে satisfied…অফিসের কাজ আমাকে দিয়ে হবে না।
।
আসলে তুমি বোকা বলেই হাতে থাকা শপিং এর ব্যাগ গুলো নিচে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রথি,,, তোমাকে যে আমি কিভাবে সত্যিটা বলবো আমার জানা নেই। সত্যিটা জানতে পারলে তুমি হয়তো রেগে যাবে।হয়তো অনেক অভিমান করবে। কিন্তু আমাকে যে বলতেই হবে। সঠিক সময় হলে আমি তোমাকে সব কিছু বলে দেব।