প্রেম নেশা পর্ব ৫+৬

প্রেম নেশা পর্ব ৫+৬
শান্তনা আক্তার

তোমাকে এতো দয়ালু হতে কেউ বলেনি ওকে?(মেঘ বলল)

মাথা এক দিকে কাত করল শান্তনা।

আমার আদেশ ছাড়া কাউকে হেল্প করবে না,,,মনে থাকবে?

সেই একইভাবে শান্তনা মাথা কাত করল,,

বোবা নাকি হুম?সেই কখন থেকে মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছো। আরেকবার মাথা নাড়ালে দেওয়ালের সাথে বারি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেব বলে দিলাম।
শান্তনা ভুলবশত পুনরায় মাথা কাত করল।
এবার মেঘের চোখ রাগে লাল হয়ে আসল শান্তনা মেঘের চোখের দিকে তাকাতেই শব্দ করে কেঁদে দেয়।

আল্লাহ গো,,,,আমার কি হবে অ্যাাাাাা এ্যাাাাাাা।আম্মুই আব্বু তোমার মেয়েকে মেরে ফেললো গো।
শান্তনার কান্না দেখে মেঘের সব রাগ হওয়ার সাথে মিলিয়ে যায়।সাথে সাথে মেঘের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ভর করে। মেঘ গিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দেয়।
এবার দেখি পিচ্চি তোমাকে কে বাঁচায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আপনি দরজা কেন লাগালেন।

তোমাকে তো এখন শাস্তি দেব।যাতে না পালাতে পারো তাই দরজাটা লাগালাম।

শাস্তি? কি শাস্তি? ভয়ে শান্তনার গলা শুকিয়ে এসেছে। বেচারি বার বার ঢোক গিলছে।

তেমন কিছু না। জাস্ট মাথাটা ফাটিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখতাম এই আর কি।

ও মাগো। এ কোথায় পাঠিয়েছো তোমার মেয়েটাকে। আমাকে মারবেন না প্লিজ।(কেঁদে+অনুরোধ করে)

তা বললে তো হবে না পিচ্চি।শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।

আপনি না ভালো প্লিজ আমাকে মেরেন না।আমাকে মারলে তো আমি ভুত হয়ে তেঁতুলগাছে বসে থাকবো।তখন আমার ভুত যদি আপনার ঘাড় মটকে লবণ মরিচ মাখিয়ে চেটেপুটে খায়,,,তাহলে কি আপনার ভালো লাগবে বলুন?

খুব ভালো লাগবে।এখন আমি এসব কথা শুনতে চাইনা।তুমি শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও।

আমি মরলে কিন্তু আপনি জেল খাটবেন সাথে জেলের ভাত খাবেন।

এতো সোনায় সোহাগা। আমার ছোট বেলার ইচ্ছে কাউকে খুন করে জেলে বসে ফ্রি ফ্রি খাব।

কিহ,,,,,,আপনার মতো মানুষ আজ প্রথম দেখলাম যে জেলে যেতে চায়।

এতো কথা না বাড়িয়ে শাস্তির জন্য প্রস্তুত হও।বলে মেঘ শান্তনার কাছে যেতেই,,,

ওয়াও কি সুন্দর কবুতর।

কোথায় কবুতর,,,চোখ সরাতেই শান্তনা দৌঁড়ে দরজার কাছে চলে যায়।কিন্তু ছিটকিনি তো খুব উপরে যা শান্তনার নাগালের বাহিরে।

হা হা হা,,মেঘের সাথে চালাকি।এর জন্য এক্সট্রা শাস্তি অ্যাড হলো তোমার punishment note এ।তাও তুমি যদি 10 মিনিটের মধ্যে দরজা খুলে বেরোতে পারো তাহলে তোমার শাস্তি মাফ।
শান্তনা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ছিটকিনি অব্দি পৌঁছানোর।না পেরে ইয়া বড় বড় জাম্প দিচ্ছে,,,তাও কাজ হচ্ছে না।এবার শান্তনার মাথায় অন্য বুদ্ধি আটলো।রুমের আনাচে-কানাচে কিছু খুজছে শান্তনা কিন্তু পাচ্ছেই না।

ধুর বিপদের সময় কিছু মেলা দুষ্কর।

পিচ্চি তুমি কি চেয়ার খুজছো?

শান্তনা মেঘের দিকে তাকাতেই চরম অবাক হয়।মেঘ চেয়ারে বসে আছে যেটা ও এতোক্ষন যাবৎ খুচ্ছিলো।

ওটা আমায় দিন প্লিজ।নাহলে আমি দরজাটা খুলতে পারবো না 10 মিনিটের মধ্যে।

দেওয়ার জন্য তো বেলকনি থেকে এখানে আনিনি।বাই দ্যা ওয়ে,,,,ইউর টাইম ইজ অভার।

এভাবে কিভাবে সময় শেষ আমি মানি না।

না মানলেও এটাই সত্যি।now be ready for ur punishment…..বলে মেঘ এক পা দু পা করে শান্তনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।শান্তনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে এবং মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে।

রথি,,,দেখো মেঘ তোমাকে সেভাবে কিছু বলেনি। তুমি শুধু শুধু রেগে গেলে।

এখন তো তুমি তোমার ভাইয়ের support ই করবে।আমার থেকে বেশি তো তোমার ভাইকে ভালবাসো।

এটা কেমন উদ্ভট কথা বলোতো।এখানে ভালবাসার কথা কেন আসছে? আমি যেটা ঠিক তাই বললাম।

আমি তাহলে ভুল তাইতো? যাও আমার সাথে কথা বলবে না। এই বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় রথি।

আমি ভেবেছিলাম কাল আমরা শপিং এ যাব,,কিন্তু যাকে নিয়ে যাব সেতো আমার উপর রেগে আছে।তাহলে আর যাওয়া হলো না।
শপিং এ যাওয়ার কথা শুনে রথির রাগ নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়।

কে বলেছে আমি রেগে হুম? আমি একটুও রেগে নেই।

তাও তোমার মুডতো ভালো নেই রথি পাখি।তাই থাক আমরা যাব না কোথাও।

আরে না আমার মুড ও ভালো,,দেখো আমি হাসছি।

সত্যি তুমি রেগে নেই?

না একদমই না।তাহলে কাল শপিং যাচ্ছি আমরা।

একদম।আমার রথি পাখির জন্য আমি সব করতে পারি।

লাভ ইউ সামির বলে সামিরকে জাপ্টে ধরে রথি।
শান্তনা অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো।
কারন সামির ওকে কোনো শাস্তি দেয়নি বরং মেঘ শান্তনার দুটো হাত নিজের হাতে নিয়ে আস্তে করে বলে,,,,,Thanks পিচ্চি।

এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে গোটা হাতি তোমার মুখে ডুকে যাবে।
মেঘের এমন কথায় শান্তনা কিছুটা ভরকে যায় এবং চোখ নামিয়ে নেয়।

কিন্ত আপনি আমাকে শাস্তি দেওয়ার বদলে thanks কেন বললেন?

কারন সকালে আমার পাশে থেকে জলপট্টি দিয়ে আমার জ্বর সারিয়ে তুললে তারপর আমার ড্যাডের আবদার রাখলে,,,তাই।

আরে এটা তো আমার দায়িত্ব। তাছাড়া,,,এই আপনি মেডিসিন নিয়েছেন তো জ্বরের?

পরে খেয়ে নেব।

পরে না এখনই।পরে যদি আবার জ্বর আসে তখন?

বলেছি তো পরে।

আপনি ভুলে যাবেন।আমাকে বলুন কোথায় আছে মেডিসিনের বক্স?

এইতো ড্রয়ারের ভেতরে।শান্তনা গিয়ে একটা প্যারাসিটামল আর এক গ্লাস পানি এনে মেঘের হাতে দিল।

নিন আমার সামনে খান।
মেঘ বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নেয়।

পিচ্চি?

হুম,,,

তুমি খুব ভালো।

আর আপনি খুব পঁ,,,,,

ভাইয়া পাপা মাম্মি তোদের নিচে ডাকছেন,,,,আর দিন দুপুরে romance করা বন্ধ কর,,,,এটা শুনে মেঘ গিয়ে দরজা খুললো কিন্তু সামিরাকে পেলো না। তার আগেই পালিয়েছে।

চলে গেছে।হাতে পেলে বোঝাতাম মজা।

পরে বুঝিয়েন,,,এখন চলুন নিচে।(হাসতে হাসতে বলল শান্তনা),,,।

হুম চলো।

গেস্টরুমে সকলে অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে এটা জানার জন্য যে আজমল চৌধুরী সকলকে কি বলতে জরুরি তলব দিলেন।

তো আমি যে জন্য তোমাদের ডেকেছি।

আসলে তোমাদের বাবা আজ,,আর বলতে না দিয়ে।

সাহেরা আমাকে বলতে দাও।

সরি।

আজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে একটা রিসিপশনের অর্গানাইজ করেছি তোমাদের বিয়ে উপলক্ষে।বিয়েটা হুটহাট হয়ে যাওয়ায় কাউকে তেমন জানাতে পারিনি।তাই বউ ভাতের আয়োজন করলাম।এবার তোমাদের মতামত দাও?

আমাদের কোনো প্রবলেম নেই Dad.. তুমি যা ভালো বোঝো তাই করো।

মেঘ একদম ঠিক বলেছে বাবা।

গ্রেট,,খুব মজা হবে।আমি গিয়ে আমার ফ্রেন্ডসদের ইনভাইট করে আসি।বলেই সামিরা চলে যায়।

মেঘ,,,সামির তোমরাও তোমাদের ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করে ফেলো।আমি আর সাহেরা আমাদের সকল ফ্রেন্ডদের বলে দিয়েছি।

কিন্তু Dad এতো কুইকলি সব এরেঞ্জ কিভাবে করব। কোথা থেকে শুরু করবো ভেবে পাচ্ছি না।

সেটার বন্দবস্ত হয়ে গেছে অলরেডি। বলতে বলতে ডেকোরেশন ও রান্নার লোকজন চলে এসেছে। আপনারা কাজ শুরু করে দেন।

ওকে স্যার,,,,তারা যার যার কাজে লেগে পড়ে।

ইউ আর জাস্ট গ্রেট Dad..

thanks my son…আমি তো সব করে ফেলেছি এখন কি তোমাদের ফ্রেন্ডদের দেওয়ার কাজটা করতে পারবে না?

of course পারবো(সামির মেঘ একসাথে)।বলেই তারা তাদের রুমে চালে যায়।
শান্তনা আর রথি সেই থেকে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছিল। শান্তনা আর রথি তাদের ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করতে চায় কিন্তু বলতে সংকোচবোধ করছে।রথি আর শান্তনা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

তোমরা কিছু বলবে মা?

আসলে বাবা আমরাও আমাদের ফ্রেন্ডদের উনভাইট করতে চাই। শান্তনার পেটের ভিতরে থাকা কথাটি মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো।

শান্তনা ঠিক বলেছে বাবা।(রথি)

শিগগিরই যাও। এখনও দাঁড়িয়ে কেন তোমরা।

আজমল চৌধুরীর কথায় শান্তনা আর রথির মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
মেঘ একের পর এক ফোন করেই যাচ্ছে।শান্তনা গুটিগুটি পায়ে মেঘের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।মেঘ ফোনে কথা বলা অবস্থায় শান্তনাকে ইশারা দিয়ে বলে কি হয়েছে?

ফোনটা লাগবে।

ওকে বায় ইয়ার,,,রাইট টাইমে চলে আসিস বলে মেঘ ফোন রেখে দেয়।
এবার বলো?

আপনার ফোনটা একটু দেবেন?

কেন? তোমার ফ্যামিলিকে Dad আগেই আসতে বলে দিয়েছে।

সেই জন্য না। আসলে আমার ফ্রেন্ডদের আসতে বলতাম এই আর কি।

তোমার ফ্রেন্ডসও আছে?

কেন থাকবে না শুনি(এক হাত কোমড়ে গুজে)

আচ্ছা বাবা নাও,,,,বলে মেঘ তার ফোন শান্তনার হাতে তুলে দেয়।

শান্তনা ফোন পেয়েই কল দেওয়া শুরু করে,,,,সুমাইয়া,,,নুশরাত,,,,,কোহিনুর,,,,ইমা একে একে সকলকে ফোন করে জানিয়ে দেয় আসার জন্য।এদিকে মঘ শান্তনার দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে।

যাক বাবা সবাইকে বলা শেষ। আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

মেয়েরা কতো বাচাল তা নিজের চোখে দেখলাম।

কি বললেন?

কি বলিনি তাই বলো? মাত্র ২-৪ জনকে কল দিলে তাও দেড় ঘন্টা ধরে কসটিনিউয়াস কথা বললে।এতোক্ষনে আমি 500 জনকে ইনভাইট করে ফেলতাম।এতো বকবক কিভাবে করো বলোতো?

আপনি যাই বলুন না কেন,আমার তো সবসময়ই ওদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।আর খবরদার যদি ওদের সামনে আমাকে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছেন তো আপনার একদিন কি আমার 24 ঘন্টা।

আচ্ছা ঠিক আছে আজকের জন্য মাফ।

হুম,,,,এই নেন আপনার (হাওয়ায় ভাসিয়ে) তবে মেঘ ক্যাচ ধরে নেয়। বাহ ভালো ক্যাচ ধরেন তো। এবার আমাকে দিন আমি ধরব।

সুযোগ পেলেই পিচ্চিগিরি শুরু তাইনা?

আমি আবার কি করলাম?

এখন আমার ক্যাচিং ক্যাচিং খেলার কোনো ইচ্ছে নেই। অনেক কাজ আছে,,,পিচ্চি কোথাকার।

আপনি খুবই পঁচা,,,খুব বেশিই পঁচা।
ভাবি আসব?

হ্যাঁ,,, এসো না।

কি করছো,,,(রুমে ঢুকতে ঢুকতে)

বসে আছি,,,,তুম,,,

এই নাও তোমার আর ভাইয়ার জামা কাপড়।শান্তনার হাতে দিয়ে।

এইগুলো?

পাপা দিয়েছে। বড় ভাইয়া ভাবিকেও দিয়ে আসলাম মাত্র।

ওও,,,

হুম,,,ভাইয়া কোথায়?

বেলকনিতে যাও পাবে।

আমার কি মাথা খারাপ যে ওর সাথে কথা বলতে যাব।

কেন? কি হয়েছে?

আমাকে পেলে গনধোলাই দিবে তখন কি বলেছিলাম মনে নেই?

ওহহহ,,,,হা হা হা।

তুমি হাসছো? ঠিক আছে হাসো।আমি বরং যাই গিয়ে মুখে একটু ফেসপ্যাক লাগাই। বলে সামিরা চলে যায়। শান্তনা প্যাকেট খুলে জামা কাপড় গুলো দেখছে,,,,
এগুলো কি?(মেঘ)

শাড়ি আর পাঞ্জাবি।

সেটা আমিও দেখছি তবে,,, এখানে কেন?

সামিরা দিয়ে গেল।বলল বাবা দিয়েছেন আমাদের,,আজ অনুষ্ঠানে পড়বো বলে।

ওহহ।

প্রেম নেশা পর্ব ৩+৪

হুম কিন্ত আমি যে শাড়ি পড়তে পারি না। তাইতো চুরিদার পড়েছি।

তো এখন?

আপু আছে তো। আমি ওর কাছ থেকে পড়ে নেব সিম্পল।

একদম না। তুমি ওনার কাছ থেকে শাড়ি পড়বে না।

কেন?

আমি না বলেছি তাই নাহ(ধমক দিয়ে)

তাহলে কে পড়িয়ে দেবে?

বিউটি পার্লারের লোকেরা।

কিন্তু শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার মানেই হয়না।

সেটা তোমাকে ভাবতে বলিনি।কিন্তু তুমি তোমার আপুর কাছে যাবে না শাড়ি পড়তে।

ওকে ওকে,,,, এরপর মেঘ গিয়ে ল্যাপটপ ঘাটতে থাকে।
হঠাৎ কি এমন হয়েছে,,,যার জন্য উনি আপুকে দেখতেই পারেন না। এইতো কদিন আগেও কি সুন্দর সম্পর্ক ছিল তাদের মধ্যে।সবটা কেমন ঘোলাটে লাগছে।কতো কিছু জানার বাকি কিন্তু ওনার কাছে জিজ্ঞেস করলে ধমক খেতে হবে।আপুও কিছু বলতে চায়না।সব প্রশ্নের উত্তর আমাকেই বের করতে হবে (মনে মনে বলল শান্তনা)।

প্রেম নেশা পর্ব ৭+৮+৯